না_চাইলেও_তুমি_আমার পর্ব ১৭+১৮

#না_চাইলেও_তুমি_আমার💞
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_১৭




ও পিছন থেকে বলল,,,ভালোই ভালোই ফোনটা দাও নইলে কিভাবে নিতে হয় আমার জানা আছে।আমি বললাম,,,আঁচল ছাড় সেফটি পিন দেওয়া নেই খুলে যাবে।ও বলল,,,খুলুক।আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।ও বলল,,আমার ফোনটা দেও আমি আঁচল ছেড়ে দেব। আর কিছু না বলে ফোনটা এগিয়ে দিলাম। আমি বললাম,,,ফোনে এমন কি করছো।ও বলল,,প্রেম করছি আমার কাজই তো এটা। আমি মুখটা ছোট করে বললাম,,,আর কতবার মাফ চাইবো আমাকে কি মাফ করা যায় না, পুরোনো সব কিছু ভুলে আমরা কি সব কিছু সুন্দর ভাবে শুরু করতে পারি না।ও আমার কথা শুনে রেগে এক টান দিয়ে আমাকে ওর কাছে নিয়ে ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে বলল,,,,

সব ভুলে যাব কিভাবে আমার কেমন লেগে ছিল জানো, জানো আমি ওই কয়েকটা রাত কিভাবে কাটিয়েছি,আমি শুধু প্রতি টা মুহূর্তে এটা ভেবে কাটিয়েছি যে আমি এমন কি করে ফেললাম,তুমি আমাকে অবিশ্বাস করেছো আমার ভালোবাসার উপর সন্দেহ করেছো, আমাকে এতটা নিচ ভাবো।

কাব্য কথা গুলো বলে আমাকে ওর থেকে এক থাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো, এখন আমার ও কষ্ট হচ্ছে আমার রাগ হচ্ছে, রাগে কষ্টে চোখে অশ্রু জমা হতে লাগলো,আমি কাব্যকে বললাম,,

আমি কি করব আমি সেধে তোমাকে অবিশ্বাস করেছি, ওই দিন রাতে তোমাকে বায় বলে ফোন রাখতে গিয়ে তোমার রুমে রিদি আপুর কথা শুনতে পাই তুমিও রিদি বলে ফোন কেটে দিলে, ওই রাতে আমার একদম ঘুম হয় নিই কতটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম আমি, পরের দিন ভাবলাম তোমাকেও সব জিজ্ঞেস করে একটু শান্তি পাব ওই ক্লাস রুমে গিয়ে দেখি রিদি তোমাকে জরিয়ে ধরেছে আর তুমি ওকে কিছু না বলে ওর মাথায় হাত দিয়ে রেখেছো, আমার ভিতর তখন কতটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো তুমি জানো তাও তোমাকে বিশ্বাস করেছি সব মিথ্যে বলে সামনে এগিয়ে যেতে চেয়েছি, কিন্তু যখন ওই ছবি গুলো রিদি আপু দেখিয়ে কান্না করে বলছিল তোমার থেকে দূরে সরে যেতে তখন আমার কেমন লেগেছিল তা তুমি জানো, আমি কতটা কষ্টে তোমাদের ছেড়ে সিলেটে চলে গিয়ে ছিলাম।

কাব্য আমার কথা শুনে রেগে আমার হাত দুটো দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলতে লাগল,,তাই তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করলেই পারতে, ওই রাতে রিদি হঠাৎ আমার রুমে চলে আসে, পরে আমি তোমার ফোন কেটে ওকে জিজ্ঞেস করি ও এখানে কেন তারপর ও বলল কোন ফাইল দিতে এসেছে, আমি ওর থেকে ফাইলটা নিয়ে ওকে রুম থেকে চলে যেতে বলি, ও বলল,, ঠিক আছে কিন্তু কাল তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।আমি বললাম ঠিক আছে কাল বল এখন যাও, ও চলে গেলো পরের দিন ঐ ক্লাস রুমে হঠাৎ রিদি আসায় চমকে গেলাম ও বলল,,ও নাকি আমাকে খুব ভালোবাসে বলেই কান্না করছিলো , আমি ওকে সুন্দর ভাবে বুঝালাম ফাইনালি ও বলল ও বুঝে গেছে বলে আমাকে জরিয়ে ধরলো হঠাৎ, আমি ওকে সরাতে যাচ্ছিলাম তখন ও বলল লাস্টবারের মতো ও আমাকে জরিয়ে ধরেছে এরপর থেকে আর আমার সামনে আসবে না, ও প্রচুর কান্না করছিলো তাই৷ আমি ওকে মাথায় হাত দিয়ে শান্তনা দিচ্ছিলাম তারপর ওকে বললাম চলে যেতে ও আর কিছু না বলে চলে গেলো, আমি কি জানতাম ও সব প্লেন করে করেছে।আর তুমি এইসব ভেবে আমার থেকে এতটা দূরে সরে গেলে।আমারই ব্যর্থতা আমি তোমাকে আমার ভালোবাসা বুঝাতে পারি নিই।

আমি শুধু চুপ হয়ে ওর কথা ভাবছি যে আমি কতটা কষ্ট দিয়েছি ওকে,আমার হাতে অসম্ভব যন্ত্রণা করছে, ও আমার হাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরায় কাচের চুড়ি গুলো ভেঙ্গে আমার হাতে ঢুকে গেছে, ও আমার দিকে রেগে তাকিয়ে আর জোরে হাত চেপে ধরে বলল,, কিছু বলছো না কেন ইডিয়েট।ওর জোরে ধরায় হাতে আর ব্যথা পেলাম এবার আর সহ্য না করতে পেরে আ করে চিৎকার করে বসলাম,ও আমার এমন চিৎকার দেখে আমার হাতের দিকে তাকালো, তারপর হাতটা ছেড়ে আমাকে বিছানায় নিয়ে বসালো আমার হাত ধরে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল,,,আআআআ,,আই এম সরি, আমি একদম খেয়াল করি নিই খুব ব্যথা করছে, আমাকে মাফ করে দাও আমার একদম খেয়াল ছিল না।

বলেই পাগলের মতো করা শুরু করে দিল তারপর আমার হাত থেকে কাচের টুকরো বের করে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল, আমি শুধু অপলক আখিতে তাকিয়ে আছি, এই মানুষটাকে আমি এত কষ্ট দিয়েছি আর ও আমার সামান্য যন্ত্রণা দেখে এমন পাগলের মতো করছে কিন্তু ও আমার মনের ভিতরের আঘাত গুলো কেন দেখতে পারছে না।

আমাদের বাড়ীতে দুই দিন থেকে আবার কাব্যের বাড়ীতে চলে এসেছি আমি আর কাব্য, রাতে আমি বিছানায় বই পড়তে পড়তে কখন যেন ঘুমিয়ে পরেছি হঠাৎ মাঝ রাতে আমার চোখ খুলে গেলো, মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমি তো বিছানায় শোয়া তাহলে কাব্য কোথা ও কি বাড়ী ফিরে নিই নাকি আমার পাশেই শুয়ে পড়েছে, ডান দিক থেকে বা দিকে তাকিয়ে দেখি বিছানা ফাকা তাই উঠে বসলাম,কাব্য কোথায় ও কি বাড়ী ফিরে নিই, গিয়ে লাইটা জ্বালানি দেখলাম কাব্য নিচে ঘুমিয়ে আছে, কষ্ট করে কেন নিচে শুয়েছে আমাকে বললে তো আমি নিচে নেমে যেতাম। আর কিছু না ভেবে গিয়ে ওর পাশে ওকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম, ফজরের আযানে চোখ খুললো তাকিয়ে দেখি আমি কাব্যের বুক মাথা রেখে আছি, মুখে একটু হাসি নেচে উঠলো, তাড়াতাড়ি উঠে ওযু করে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম তাকিয়ে দেখি কাব্যও উঠে গেছে, ও কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে গেলো, ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে আমাকে বলল,,ওযু তো করেছো সে কখন এখনো নামাজে বসছো নিই কেন।আমি বললাম,, না বসবো তোমার কিছু লাগবে নাকি। ও বলল,,, না আমার কিছু লাগবে না আমি মসজিদে যাচ্ছি।

আমরা আজ বাড়ীতে একা, মানে হলো আমি আর কাব্য।কাব্যের বাবা মা তিন দিনের জন্য দেশের বাহিরে গেছে, আমি বসে বসে পাতা উড়াচ্ছি, বাগানে গাছের পাতা গুলো আধ শুকনো হয়ে ঝরে পড়ছে আর আমি একটা একটা হাতে নিচ্ছি আর ফু দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছি, কিন্তু আজ সব কিছু খুব বরিং লাগছে, আর মিস্টার ডেভিল বারান্দায় বসে ল্যাপ্টব টিপছে, আমি ওর সামনে গিয়ে ল্যাপ্টব বন্ধ করে দিলাম।ও কিছুটা ক্ষিপ্ত নজরে তাকালো আমার দিকে তারও ধমকিয়ে বলল,,,,কি হয়েছে তোমার।

আমি বললাম,,,আমার বাহিরের যাওয়ার মুড হয়েছে চল বাহিরে ঘুরতে যাই।ও বলল,,এতো ইচ্ছে করলে নিজে একা যাও আমাকে কাজ করতে দাও বাবা না আসা পযন্ত অফিস আমাকে দেখতে হবে ডিস্টার্ব কর না।আমি রাগী লুক নিয়ে বললাম,,ওকে ফাইন আমি একাই যাব।

বলে ওর সামনের থেকে রুমে গেলাম, বাহিরে রোদ হওয়ায় ও রুমে এসে বিছানায় বসলো, আমি আলমারির সামনে গিয়ে ওর দেওয়া কালো শাড়িটা বের করলাম, ও একবার আমার দিকে তাকালো তারপর আবার ল্যাপ্টবের দিকে তাকালো।আমি একটু ডং করে ওর সামনে দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে বললাম,,,খাললললললললললললা আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দাও।

কাব্য বিছানায় বসেই দাত কেলিয়ে জোরে হেসে উঠলো ওর হাসির কারণ বুঝলাম না,ভ্রু কুচকে বললাম,,,কি হলো এভাবে হাসছো কেন???ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,তাহলে কি করব খালা আজ সকালে এসে কিছুখন কাজ করে চলে গেছে উনার ছোট মেয়ের জ্বর তাই ভুলে গেছো।আমিও একশ একটা গালি দিলাম নিজেকে তারপর বললাম,,,থাক আমার অন্য শাড়ি পড়তে হবে না যেটা পড়া আছি তাই পড়েই বাহিরে যাব।ও বলল,,কি তুমি এই শাড়ি পড়ে বাহিরে যাবে ওয়াও গ্রেট।

ইচ্ছে করছে গিয়ে ওর মাথাটা ফাটিয়ে দেই ওর জন্য আমার এতো কষ্ট, আর কিছু না বলে ওয়াস রুমে শাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়লাম আজ তো পড়েই ছাড়বো অনেকবার ভিডিও দেখে ফাইনালি শাড়ি পড়তে পারলাম আজ অসম্ভব টা সম্ভব হলো।বাহিরে বের হলাম ও আমাকে দেখে হা হয়েছে আমিও একটু ডং দেখিয়ে সামনের চুল গুলো পিছনে নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে সাজতে লাগলাম, হাতে কালো কাচের চুড়ি পড়ে নিলাম,চুল গুলো ছেড়ে দিলাম কানে ঝুমকা, চোখে কাজল আর মাসকারাও দিয়ে নিলাম,এবার জোরে জোরে ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম,,,আমার লিপস্টিক টা কই পাচ্ছি না কেন?

গাড় করো লিপস্টিক দিয়ে নিলাম তারপর হাতে ব্যাগ নিয়ে নিলাম তারপর হিয়াকে ফোন করে জোরে জোরে বললাম,,,হিয়া শোন আমার ওই ক্যাফেতে দেখা করব হ্যা হ্যা সাথে করে রিফাত তামিম আর আয়ানকেও নিয়ে আসিস।বলেই কাব্যর দিকে তাকিয়ে দেখি কাব্য হা হয়ে তাকিয়ে আছে, আমি একটু ভাব নিয়ে ওকে বললাম,,,আমার আসতে দেরি হবে বায়
#না_চাইলেও_তুমি_আমার💞
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_১৮




দরজা দিয়ে বের হতে যাব ওমনি কাব্য আমার হাত ধরে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো আর বলল,,,বায় মানে কি তুমি এই হুলিয়ায় বাহিরে যাবা তাই না আর আমি যেতে দেব অন্য দিন তো লিপস্টিক পড়তে দেখি না আজ যে লিপস্টিক পড়েছো আবার বলা হচ্ছে রিফাত তামিম আর আয়ানকেও নিয়ে আসছে সাহস হয় কি করে।ওকে বললাম,,,তো কি হয়েছে তুমি তো আর আমাকে নিয়ে যাবে না তাই ফ্রেন্ডের সাথেই যাই আর লিপস্টিক এর কথা কি বলব, ইচ্ছে করলো তাই দিলাম।ও রেগে বলল,,কই আমার সামনে তো কখনো লিপস্টিক দিয়ে বসে থাক না তাহলে বাহিরে যাওয়ার সময় তোমাকে এতো গাড় লিপস্টিক কেন দিতে হবে।

বেশ বুঝতে পারছি জ্বলেছে ইয়া হুু, বললাম,,,, দেখো আমাকে ছাড় আমাকে বাহিরে যেতে হবে। ও বলল,,তা তুমি যেতে পারো কিন্তু তার আগে এই লিপস্টিক মোছো আর ওই ছেলে ফ্রেন্ডরা যেন না যায় ওখানে তাহলে কিন্তু একদম ভালো হবে না।

আমি বললাম,,,ঠিক আছে ছেলেরা যাবে না কিন্তু আমি লিপস্টিক মুছবো না আমি লিপস্টিক পড়েছি তাতে তোমার এতো কিসের সমস্যা। ও বলল,,, আমার এখানেই সমস্যা লিপস্টিক মুছো তারপর যেখানে যাওয়ার যাও।আমি বললাম,,,মুছবো না কি করবা তুমি।

ও আর কিছু না বলে ওর হাতের আঙ্গুল দিয়ে আমার ঠোটের লিপস্টিক মুছে দিতে লাগলো আর ধিরে ধিরে বলল,,আর কখনো আমি ছাড়া কারও সামনে লিপস্টিক দিয়ে যাবা না, কারও সামনে না।

বলেই ধিরে ধিরে আমার দিকে আসতে লাগলো আমি বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে ফেললাম, কিন্তু অনেক খন ধরে কিছু বুঝলাম না তাই চোখে খুলে দেখি ও আবার বিছানায় বসে ল্যাপ্টব টিপছে আর মিটিমিটি হাসছে। মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো ডেভিল কোথাকার। ব্যাগ নিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে পড়লাম, কিন্তু দরজাটা খুলে বাহিরে যেতেই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু।যা বাবা এমন অবেলায় বৃষ্টি হচ্ছে যে।

এখন আমি বারান্দায় বসে বাহিরের বৃষ্টি দেখছি আর কি করার, দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে আসলো কিন্তু এই বৃষ্টি থামার কোনো নামই নেই।ভিতরে কাব্য রেডি হচ্ছে হঠাৎ অফিস থেকে ফোন এসেছে তাই তাড়াতাড়ি রেডি হচ্ছে।আমি ওর কাছে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম,,,তোমাকে যেতেই হবে।ও বলল,,,
– হ্যা
– না গেলে হয় না বাহিরে কত বৃষ্টি আর বজ্রপাত ও হচ্ছে আর বাড়ীতে আমি পুরো একা হয়ে যাব ভয় করে
– আমি কি করব
– তুমি কেমন যেন হয়ে গেছো আমার জন্য তোমার একটুও চিন্তা হয় না
– না হয় না এবার আর আমাকে বিরক্ত কর না যাও এখান থেকে
– যাব না কি করবা, এত বড় বাড়ী আর এখানে বাবা মা আর তুমি আর আমি চারজন ছাড়া কেউ থাকে না,
– তাহলে কি আমি বাহিরের মানুষকে বাড়ীতে এনে রেখে যাব,এর থেকে ভালো বাহিরে একটা বোর্ড লাগিয়ে দেই আমার বউ পাগল যারা যারা চান আমাদের বাড়ীতে থাকতে পারেন
– এখানে এত কথা শোনানের কোনো দরকার আছে প্লিজ যেও না
– ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে এখনি যেতে হবে
– কোন গাধা এমন সময় মিটিং করে
– আমি গাধা হলে তুমি গাধী

বলে বেড়িয়ে চলে গেলো, মনটা পুরো খারাপ হয়ে গেলো ও আমাকে নিয়ে একটুও ভাবে না,একটুও ভালোবাসে না আমাকে, আমাকে নিয়ে ওর কোনো মাথা ব্যথা নেই।বারান্দায় বসে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি সাথে এক কাপ চা হঠাৎ খুব জোরে বজ্রপাত হলো আর সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেলো, আমি পুরো স্থির হয়ে গেলাম, হাত পা কাপছে পুরো অন্ধকার চারপাশ, শুকনো একটা ঢোগ গিলে মোবাইলটার লাইট জ্বালিয়ে চারপাশ দেখতে লাগলাম

মাথায় একের পর এক হরর মুভির সিন গুলো ভেসে উঠছে যদি এখন অন্ধকার থেকে কেউ দৌড়িয়ে এসে আমাকে খেয়ে ফেলে,আর দেড়ি না করে কাব্যকে একের পর এক ফোন দিতে লাগলাম

কিন্তু ও আমার কল বার বার কেটে দিচ্ছে পরে আবারও অনেকবার ফোন করলাম তারপর ও ফোন বন্ধ করে দিল, ভয়ে আমার জান পাখি উড়ে যায় প্রায়, বারান্দায় দাড়িয়েই দেখতে পেলাম দারওয়ান চাচা বাহিরে মাথায় ছাতা ধরে এদিকে থেকে ওদিক হাটছে, যতটুকু সম্ভব ততো জোরে ডাকলাম, কিন্তু উনি শুনতে পেলন না

একটু সাহস দেখিয়ে রুমে ঢুকে মোমবাতি খুজতে লাগলাম, মোমবাতির আলোটা জ্বালিয়ে বা দিকে ঘুরবো কিন্তু মনে হচ্ছে এখনি ভূত টাইপের কিছু একটা চোখে পড়বে, হাত পা কাপছে আমার, ভয়ের চোটে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে টেবিলেও পানির জগ ফাকা দেদদদত

ভয়ে ভয়ে নিচে নামলাম নিচে নামতে কম হলেও আমার দশ মিনিট লেগেছে, আমার এক একটা পা দিতেই মনে হয় এক মিনিট পাড় হয়ে যাচ্ছে, নিচে গিয়ে কিচেনে ঢুকলাম পানি খেয়ে একটু শান্তি পেলাম, গ্লাস রাখতে গিয়ে কিছু একটা হাতে লেগে পড়ে গেলো, নিজে ফেলে নিজেই ভয়ে আতকে উঠলাম, হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার দিকে আসছে ভয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে, যখন আমার কাধে হাত রাখলো ব্যস আমি শেষ আর কিছু মনে নেই।

চোখ খুলে দেখি আমি বিছানায় শোয়া আর কাব্য সামনের সোফায় ল্যাপ্টব টিপছে, আচ্ছা আমি কি মরে গেছি তাই মনে হয় ওই ভূতটা আমাকে গিলে খেয়ে ফেলেছে এখন আমার আত্তা সব দেখছে,

কাব্য নিজের মতো কাজ করছে ওকে দেখে ওর সামনে গিয়ে বলতে লাগলাম,,ওই উগান্ডার হনুমান, নাইজেরিয়ার বানর, লেজ কাটা কুমীর এ্যাটিটিউট এর পাহার, তোমার জন্য আমি মরে গেলাম, আমার একটা ফোন ধরলে কি হতো এখন তুমি আরেকটা কে বিয়ে করবে তারপর সুখে সংসার করবে দেব না করতে, তোমার ওই নতুন পেত্নীর গলা চেপে মেরে ফেলবো, এবং আমি তোমাকে ও মেরে ফেলব শেষ পযন্ত এমন ভাবে প্লেনিং করে ভূত দিয়ে মারলে আমায়।

হঠাৎ কাব্য ল্যাপ্টব থেকে চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাত টান দিয়ে ওর কোলে বসিয়ে দিয়ে রেগে বলল,,আর যদি একটাও ছাগলের মতো কথা বল তোমার খবর আছে।আমি বললাম,,তাহলে কি করব তোমার জন্য যে আমি মরে গেলাম সেটার কি হবে

ও আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বলল,, তাই তুমি মরে গেছো তাহলে তোমাকে আমি ধরেছি কিভাবে আর কি যেন বলছিলে আমি উগান্ডার হনুৃমান,নাইজেরিয়ার বানর, লেজ কাটা কুমীর এ্যাটিটিউট এর পাহার প্লেনিং করে ভূত দিয়ে মেরেছি, এখনো তো মরো নিই আগে গিয়ে ভূতের সাথে প্লেনিং করি তারপর তোমাকে মারব চল এখন আমার সাথে। আমি অবাক হয়ে বললাম,,,কোথায়।ও বলল,,,ভূতের কাছে। বলেই আমাকে টানতে লাগলো আমি এবার কান্না করে দিয়ে বললাম,,,আমি যাব না ভ্যা ভ্যা ভ্যা। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,আর যদি কখনও গাঁজাখুরি কথা বল সত্যি সত্যি ভূতের কাছে দিয়ে আসবো।আমি বললাম,,আর বলব না কিন্তু তখন আমি সত্যিই ভূত দেখেছি আমার কাধে হাত রেখেছে।ও বলল,,আমাকে তোমার ভূত মনে হয়। আমি বললাম,, তুমি ছিলে। ও বলল হ্যা।

তারপর আমরা খেয়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হলাম, আমি ওকে বললাম,,,আচ্ছা কারেন্ট কখন আসবে।ও বলল,, আজ আর আসবে বলে মনে হয় না মেইন অফিসে সমস্যা হয়েছে। আমি ওকে বললাম,,,শোনো। ও বলল
– কি হয়েছে
– আমি উপরে আসি আমার না নিচে ভয় করছে
– না নিচেই থাক
– প্লিজ আমি উপরে আসি
– না বললাম না

আর কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পড়লাম, চোখ বন্ধ করে নিলাম কিন্তু হঠাৎ কেমন ধরনের আওয়াজ আসতে লাগলো ভয়ে উঠে বসলাম, উপরে উঠে কাব্যকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম ও বলল,,,আরে কি করছো ছাড়ো আমাকে।আমি বললাম,,
– না না না না কিছুতেই ছাড়বো না
– ছাড় বলছি
– তোমার আমাকে যত বকার সকালে বকো এখন কিছু বল না আমি ছাড়বো না তোমাকে
– কেন কি হয়েছে
– কিছু খন আগে কেমন যেন শব্দ হচ্ছিল আমার মনে হয় ভূত ডাকছিলো
– ভালো তো তোমার না বাহিরে ঘোরার শখ যাও ভূতের সাথে ঘুরে আসো
– তুমি আসলেই খুব বাজে কিন্তু আমি এখন তোমাকে কিছু বলব না, তুমি যাই বল আমি তোমাকে ছাড়ছি না।

কাব্য আর কিছু বলল না চুপ হয়ে রইলো আর আমি ওকে জরিয়ে ধরে কখন যেন ঘুমের রাজ্য চলে গেলাম।

চলবে,,,,
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
চলবে,,,,,,
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here