নিশির অন্তিম প্রহরে পর্ব -১৫+১৬

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

আজ ইউনিভার্সিটি বন্ধ। আরো একটা ব্যস্ততম সপ্তাহ অতিক্রম করে আজ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো এনাক্ষী। রাস্তার কিনারায় হাঁটছে সে। সময়ের সাথে সাথে শীতের প্রকোপ আস্তে আস্তে কমে আসছে। আপাতত রাস্তার ধারে থাকা গাছগুলো পাতা শূণ্য। কয়েকটা গাছে হালকা থোকা থোকা বরফও জমে আছে। তবে এনাক্ষীর আপাতত এসবে মন নেই। সে গভীরভাবে অন্য চিন্তায় মগ্ন, সম্পূর্ণ মুখশ্রীতে চিন্তার চাপ বিশ্রিত। তার চিন্তার মূল কারণ এখন তাকে একটা পার্ট টাইম জব খুঁজতে হবে। দেগু থেকে সউলে আসার সময় যা ওন এসেছিলো তা প্রায় শেষের দিকে। আজ মূলত সে পার্ট টাইম জবের খোঁজে বেরিয়েছে। অন্যমনস্ক থাকার ফলে এনাক্ষী ট্রাফিক লাইট খেয়াল করেনি। ফলস্বরূপ সবুজ বাতি জ্বালার পরেও সে রাস্তা পার হতে যাচ্ছিলো। আচমকা পেছন থেকে কেউ তার হাতের কবজি ধরে টেনে সাইডে নিয়ে এলো। হাতে টান পড়ায় এনাক্ষী নিজের ভাবনায় ইতি টানলো। ঘাড় গুড়িয়ে দেখলো হান তার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। এনাক্ষীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঝাঁ’ঝা’লো কণ্ঠে সে বললো,

” এইযে ফরেনার ট্রাফিক লাইট সম্পর্কে কি কোন ধারণা নেই? এমন তো না যে দক্ষিণ কোরিয়ার ট্রাফিক লাইটের সিস্টেম আলাদা। গ্রীণ লাইন যে চলমান সেটা কি দেখতে পাওনি? আমি তোমাকে টেনে না আনলে এতোক্ষণে কি হতো চিন্তা করেছো?”

আচমকা হানের ঝাঁ’ঝা’লো কন্ঠে এতোগুলা কথা বলার কারণ এনাক্ষী প্রথমে বুঝতে পারলোনা। কিছুটা সময় নিয়ে ভাবনার পর বুঝতে পারলো এই পুলিশম্যানের ঝাঁ’ঝা’লো বাণীগুলোর কারণ।

” দুঃখিত, আমি অন্যমনস্ক থাকার কারণে খেয়াল করিনি।”

” ঠিক আছে তবে পরবর্তীতে খেয়াল রাখবে। না হলে দুর্ঘ’টনা ঘটে যেতে পারে। এতে তোমার সেই সাথে আমাদের দেশ উভয়েরই সম’স্যা।”

হানের কথা শুনে এনাক্ষী তার অগোচরে ভেংচি কাটলো। সে মাথা নাড়িয়ে একপা এগোতেই মৃদুস্বরে আর্তনাদ করে উঠলো। হান তড়িৎগতিতে পেছনে ফিরে তাকালো৷ এনাক্ষী চোখ মুখ কুঁচকে নিজের পায়ে দিকে তাকালো। বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটা নক ভেঙে গিয়েছে যা থেকে র’ক্ত বের হচ্ছে। এনাক্ষীর এখন নিজের কপাল চাপ’ড়াতে মন চাইছে।

” এই মেয়ে তুমি কি আজ পণ করে বেরিয়েছো যে একটা না একটা দুর্ঘ’টনা ঘটিয়েই শান্ত হবে? নিজের প্রতি কি একটুও দয়া মায়া নেই?”

” এভাবে ব’কছেন কেন? আমি কি আর ইচ্ছে করে ব্য’থা পেয়েছি নাকি? অসাব’ধান’তার কারণে লেগে গিয়েছে।”

” তো অসা’বধান থাকো কেন? রাস্তা কি অসাব’ধানতার সাথে চলাফেরা করার জায়গা? ইডি’য়টে একটা৷ এবার মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে সামনে থাকা মেডিকেল স্টোরে যাও।”

এনাক্ষীর আঙ্গুল এতোটাই ব্য’থা করছে যে পা নাড়াতে ইচ্ছে করছেনা। মনে হচ্ছে পা সরালে আঙ্গুলের ব্যথা সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়বে। তবে এভাবে তো দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। অগত্যা পা জোড়া নিজ স্থান থেকে সরালো তবে পরমুহূর্তে আবারো ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো। এনাক্ষী ঘাড় গুড়িয়ে হানের দিকে তাকালো। তার ব্যথামিশ্রিত মুখশ্রীর দিকে একপলক তাকিয়ে হান চলে গেলো। কয়েক সেকেন্ড পরে নিজের আশেপাশে হানের কোন চিহ্নও খুঁজে পেলোনা এনাক্ষী। তার এধরণের ব্যবহারে এনাক্ষী ভিষণ অসন্তুষ্ট হলো।

” হু…. কতটা হৃদ’য়হীন মানুষ এই পুলিশ। একজন আ’হত ব্যক্তিকে রেখে তিনি চলে গিয়েছেন। এনাকে কে পুলিশের চাকরি দিয়েছে? নাকি পুলিশরাই এরকম হৃদ’য়হীন হয়ে থাকে? হু… হৃদ’য়হীনা মানুষ ইনস্পেক্টর চোই হান সক। ইশ…. ওনার ভবিষ্যত স্ত্রী যে কিভাবে এই মা’য়াদ’য়াহীন মানুষের সাথে থাকবে ঈশ্বর জানেন।” বিরবির করে বললো এনাক্ষী। তার কথায় ব্যঘাত ঘটলো গাড়ির তীব্র হর্নের শব্দে। পেছন ফিরে এনাক্ষী একটা পুলিশের গাড়ি দেখতে পেলো। যার মাথার উপরে নীল-লাল রঙের বাতি জ্বলছে। ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা হান গলা উঁচিয়ে বললো,

” মিস ফরেনার এভাবে তাকিয়ে না থেকে গাড়িতে উঠে বসুন।”

” আমি কেন গাড়িতে বসবো? আমি তো কোন অন্যায় করিনি। আমাকে কেন পুলিশের গাড়িতে বসতে বলছেন?”

” মেডিক্যাল স্টোরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এবার তাড়াতাড়ি উঠে বসো, আমার অনেক কাজ আছে।”

” তো কাজ থাকলে যান না। আমি কি ধরে রেখেছি নাকি।” অন্যদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো এনাক্ষী। কারণ পুলিশের মুখের উপর তার এধরণের কথা বলার সাহস নেই, তারউপর সে আছে ভীনদেশের মাটিতে। এনাক্ষী কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ থাকে পাশে বসে পড়লো। মেডিক্যাল স্টোরে এসে এনাক্ষী নিজের পায়ে ড্রেসিং করে নিলো। হান এনাক্ষীকে আবারো গাড়িতে বসতে বললো। সে থাকে বিল্ডিং এর সামনে নামিয়ে দিয়ে আসবে। অনেকক্ষণটা সময় নিরব থাকার পর সর্বপ্রথম এনাক্ষী কথা বললো।

” ইনস্পেক্টর হান কেইস কি সলভ হয়নি?”

” কোনটা?”

” লি রিনের কেইস। অনেক দিন তো হলো, এখনো কি কিছুই জানতে পারেননি?”

হান হতাশাভরা নিশ্বাস নিয়ে না বোধক মাথা নাড়ালো।

” এখন?”

” চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পর পর দু’টো মেয়ের খু’ন হয়েছে, ভিষণ অস্বাভাবিক ঘটনা। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, বাকিটা গড জানেন।”

এরই মাঝে এনাক্ষীর বিল্ডিং চলে এলো। গাড়িতে থেকে নেমে হানের দিকে এলো।

” ধন্যবাদ ইনস্পেক্টর হান। আমার জন্য আপনার সময় নষ্ট হলো।”

” সমস্যা নেই তবে সাবধানে থাকবে। অনেক অসাবধানে চলাফেরা করো তুমি। আজ না হয় আমি বাঁ’চিয়ে নিলাম পরের বার নাও থাকতে পারি। আসি, সাবধানে চলাফেরা করো কিন্তু ফরেনার।”

হানের কথা বিপরীতে এনাক্ষী হেঁসে হাতের ইশারায় তাকে বিদায় জানালো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছুটা পথ এগোনোর পরে হান সাইড মিররে তাকাতেই দেখতে পেলো এনাক্ষী গেটের সামনে দাঁড়িয়ে একজন পুরুষের সাথে কথা বলছে। তবে তার মুখশ্রী স্পষ্ট বোঝার আগেই তারা অদৃশ্য হয়ে গেলো। হান লুকিং গ্লাস থেকে চোখ সরিয়ে সামনে মনোযোগ দিলো।

গেটের ভিতরে পা বাড়িয়ে এগিয়ে যাবে তার পূর্বে অপর পাশ থেকে গেট মাড়িয়ে ফিলিক্স বেরিয়ে এলো। মিষ্টি হেসে সে এনাক্ষীকে বললো,

” পুলিশের গাড়ি থেকে নামলে যে? কোন অপ’রাধে ধরে নিয়ে গিয়েছে?”

ফিলিক্সের কথা শুনে এনাক্ষী ব্যস্তস্বরে বললো,

” না ধরে নিয়ে যাইনি। পায়ে ব্য’থা পেয়েছি তাই ইনস্পেক্টর হান বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে গিয়েছেন।”

চোখ নামিয়ে ফিলিক্স এনাক্ষীর পায়ের দিকে তাকালো। বাম পায়ে বুড়ো আঙ্গুলটা সাদা ব্যান্ডেজ দ্বারা আবৃত করা। এনাক্ষীর আঙ্গুল দেখে ফিলিক্সের মুখভঙ্গি আপনাআপনি বদলে গেলো।

” এটা কিভাবে হলো এনা? তোমার কি এ’ক্সিডে’ন্ট হয়েছে? আর কোথাও কি লেগেছে?” ব্যস্তভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো সে।

” না এক্সিডেন্টে নয়। হাঁটার সময় অ’সাবধান’তার কারণে নখ ভে’ঙে গিয়েছে।”

উপরিউক্ত কথা বলার দেরি তবে হানের মতো ফিলিক্সের ব’কা দিতে মোটেও দেরি হলোনা। এবার এনাক্ষী খানিকটা বি’র’ক্ত হলো। আবারো বিরবির করে বললো, ” আমি বুঝতে পারিনা সবাই সবসময় একটাই কথা কেন বলে সাবধানে থেকো? একটু অন্যমনস্ক ছিলাম বলে পায়ে লেগে গিয়েছে। এতে কতগুলো বকা শুনতে হলো। আমি কি ইচ্ছে করে ব্য’থা পেয়েছি নাকি?হু…. ব্যথাও পেলাম আমি আর ব’কাও আমাকেই দিচ্ছে। আমার জীবনটাই যাবে অন্যের ব’কা খেতে খেতে। কি কপাল আমার।”

” এইযে বিরবিররাণী আপনার বিরবির কথা শেষ হয়েছে?”

এনাক্ষী আড়চোখে ফিলিক্সের দিকে তাকিয়ে মুখে ভেংচি কাটলো। যা দেখে ফিলিক্স মৃদুস্বরে হেঁসে উঠলো।

” আচ্ছা এনাক্ষী এতো অন্যমনস্ক থাকো কি করে?তুমি আসলেই অসাবধানতার কারণে ব্য’থা পাও নাকি ইচ্ছে করে আমি বুঝতে পারিনা।”

ফিলিক্সের কথা শুনে এনাক্ষী কেন যেন ঘা’বড়ে গেলো। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

” আমি কেন ইচ্ছে করে ব্য’থা পাবো? কিসব বলছো তুমি? তুমি থাকো আমি যাই। আমার পায়ে ব্য’থা করছে।”

আর একমুহূর্ত সময় অপচয় না করে এনাক্ষী একপ্রকার দৌড়ে বিল্ডিং এর ভিতরে চলে গেলো। ফিলিক্স তার হঠাৎ অদ্ভুত আচরণে থতমত খেয়ে গেলো।

চলবে……#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

এনাক্ষী সাইকেল পার্ক করে ইউনিভার্সিটির বিল্ডিং এর ভেতরে যাবে তার আগেই ইয়েজি তাকে টেনে একটা কোণে নিয়ে এলো। এনাক্ষী আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এদিকে কেউ দেখছেনা। সে ঘাড় ঘুড়িয়ে ইয়েজির দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখে মুখে সে স্পষ্ট বিরক্তির চাপ দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু কেন এই বিরক্তি তা এনাক্ষীর বোধগম্য হলোনা। সে মিষ্টি স্বরে ইয়েজিকে প্রশ্ন করলো,

” তুমি কি আমাকে কিছু বলবে ইয়েজি?”

” হুম। তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। তবে তার আগে বলেনি এই কথাগুলো তুমি কাউকে বলবেনা, বিশেষ করে হিতোমিকে। হিতোমিকে আমি অনেক ভালোবাসি, আমি চাইনা সে কোনরকম ক’ষ্ট পাক।”

ইয়েজির কথা বলার ধরণ এবং কারণ কোনটাই এনাক্ষী সঠিকভাবে বুঝতে পারলোনা।

” তুমি কি বলছো? কিছু কি হয়েছে?”

” শোন আমি স্পষ্টভাবে বলি ওই ফ্রান্সম্যানের সাথে তুমি সিনিয়র, প্রতিবেশী কিংবা বন্ধু যেইভাবে তাকে ট্রিট করোনা কেন কিন্তু এরথেকে বেশি কোন কিছুতে যেওনা। এগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এবার তুমি এটাকে অনুরোধ হিসেবে দেখো বা আদেশ এটা তোমার ব্যপার। কিন্তু আমার কথা মাথায় রেখো। তোমার জন্য যদি হিতোমি ক’ষ্ট পাই তাহলে তোমাকে আমি ছেড়ে কথা বলবোনা।”

কথা শেষ করে ইয়েজি ধুপধাপ পা ফেলে ইউনিভার্সিটির বিল্ডিং এর ভিতরে চলে গেলো। এনাক্ষী এখনো থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়েজির কথাগুলো বুঝতে তার কিছুটা সময় লেগেছে। বোঝা পর এনাক্ষী একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ক্লাসের দিকে রওনা দিলো।

দু-তিন দিন ধরে কায়ানের সাথে এনাক্ষীর কোন যোগাযোগ নেই আর না তাদের দেখা হয়েছে। তার কারণ কায়ান সকালে তাড়াতাড়ি অফিসে চলে যায়। সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি ফিরে এলেও তখন এনাক্ষী বাড়িতে থাকেনা, সে যখন ফিরে আসে ততক্ষণে কায়ান ঘুমিয়ে পড়ে। তবে আজ সন্ধ্যায় এনাক্ষী বাহিরে গেলোনা। তার যাওয়া প্রয়োজন কিন্তু তাও সে গেলোনা।

সময় তখন সন্ধ্যা সাতটা বেজে সতেরো মিনিট। কায়ানের দরজায় নক করলো এনাক্ষী। মিনিট কয়েক পর দরজা খুলে গেলো তবে দরজার অপর পাশের ব্যক্তিটিকে দেখে এনাক্ষী উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।

” কায়ান তুমি কি আটা দিয়ে মেকাপ করেছ নাকি? তোমার মেকাপ করার জিনিস প্রয়োজন হলে আমাকে বলতে, আমার থেকে দিতাম। কিন্তু তুমি কিনা শেষ পর্যন্ত আটা ব্যবহার করেছো মেকাপ করতে! দাঁড়াও তোমার একটা ছবি তুলি, ইনস্ট্রাগ্রামে পোস্ট দেবো। নিচে বড় বড় করে লিখে দেবো জার্নালিস্ট কায়ান মল্লিকের নতুন মেকাপ লুক। দেখবে রিয়েক্টের ঝ’ড় উঠে যাবে।”

” বড্ড বেশি কথা বলো এনা। আমি মোটেও আটা দিয়ে মেকাপ করিনি এটা তুমি ভালো করেই জানো। তাও মজা নিচ্ছো কেন?”

” তো কি করবো? তুমিই তো মুখে, চুলে, গায়ে আটা লাগিয়ে বসে আছো। এটা কি আমার দো’ষ?” ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো এনাক্ষী।

” না তোমার দো’ষ নয় আমিই পন্ডিত হয়ে গিয়েছিলাম।”

” কিভাবে হলো এসব? আটা দিয়ে হোলি খেলেছো নাকি?”

” রাতের জন্য রুটি বানাতে গিয়েছিলাম কিন্তু রুটি তো হলোনা বরং সব উল্টোপাল্টা হয়ে গেলো। আটায় মাখামাখি হয়ে ভু’ত হয়ে গিয়েছি।”

কায়ানের কথা শুনে এনাক্ষী ফিক করে হেসে দিলো। ধীর পায়ে রান্নাঘরে দিকে গেলো তবে রান্নাঘরের অবস্থা দেখে তার চোখ জোড়া বড় হয়ে গেলো। পুরো রান্নাঘরের অবস্থা না’জেহা’ল। এখানে ওখানে আটা ছড়িয়ে আছে। চপিং বোর্ডে নানাধরণের সবজি কাটা, যা দেখেই বোঝা যাচ্ছে অপরিপক্ক হাতে কেউ তা কেটেছে। এনাক্ষী ঘুরে কায়ানের দিকে তাকালো। কায়ান অসহায় চোখে তার দিকে তাকালো। তার ইচ্ছে করছে নিজেকে দু’টো থা’প্পড় মারতে কেন যা পারেনা তার করতে গেলো। কায়ানের অ’সহা’য় অবস্থা দেখে এনাক্ষীর মায়া হলো।

” আগে রান্নাঘরটা পরিষ্কার করো, নিজে পরিষ্কার হয়ে এসো। তারপর আমি তোমাকে রান্নায় সাহায্য করছি।”

কায়ান ঝটপট রান্নাঘর এবং নিজেকে পরিষ্কার করে ফেললো। এনাক্ষী কিচেন এপ্রোনটা পড়ে নিয়ে কাজে লেগে পড়লো। কায়ানের অগোছালোভাবে কাটা সবজিগুলো এনাক্ষীর ফেলে দিতে ইচ্ছে করলোনা। তাই সে যতটুকু পেরেছে সবগুলো মোটামুটি ঠিক করে তা দিয়ে সবজি রান্না করলো। আটাগুলোও ঠিকঠাক করে পার্ফেট ডো বানাতে সক্ষম হলো। কায়ান পাশে দাঁড়িয়ে মনোযোগ সহকারে রান্না দেখছিলো তবে আচমকা সে রান্না থেকে চোখ সরিয়ে এনাক্ষীর দিকে তাকালো। রান্নাঘরে থাকা হলুদ বাতির আলোতে এনাক্ষীকে দেখে কায়ানের মনে অদ্ভুত ভালোলাগার স্রোত বয়ে গেলো। হালকা শীত এখনো বিদ্যমান কিন্তু চুলোর কাছে থাকায় এনাক্ষী ঘেমে গিয়েছে। তার সারামুখে ঘামের বিন্দু বিন্দু কণা লেগে আছে। কায়ান রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে একটা রুমাল নিয়ে এলো। এসবে এনাক্ষীর খেয়াল নেই, সে মনোযোগ দিয়ে রুটি গোল করতে ব্যস্ত। আচমকা নিজের মুখমন্ডলে কারে স্পর্শ পেয়ে সে চমকে উঠলো। চোখ তুলে দেখলো কায়ান ধীরে ধীরে তার ঘমার্ক্ত মুখটা যত্ন নিয়ে মুখে দিচ্ছে।

ঘাম মুছে দিয়ে কায়ান এনাক্ষীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ” আমার জন্য তোমার ক’ষ্ট হচ্ছে? তুমি কেন করতে গেলে এসব? আমি বাইরে থেকে খেয়ে আসতাম।”

এনাক্ষী কায়ানের চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। বানানো রুটিটা সেঁকতে দিয়ে প্রতিউত্তরে বললো,

” তুমি আমার বন্ধু। বন্ধুর জন্য এতোটুকু ক’ষ্ট তো করাই যাই। তবে হ্যাঁ এর বদলেও আমার কিছু চাই। দেবে?”

” কি চাই তোমার?” কপাল কুচকে বললো কায়ান। এনাক্ষী চোখ ঘুরিয়ে একপকল কায়ানের দিকে তাকিয়ে পুনরায় রুটির দিকে দৃষ্টি স্হাপন করে বললো,

” তোমাকে চাই।”

এনাক্ষীর কথা শুনে কায়ানের হৃদপিণ্ড ধক করে উঠলো। শুকনো ঢোক গিলে অস্থির কন্ঠে বললো,

” মানে?”

” মানে তোমাকে বন্ধু হিসেবে সবসময় আমার পাশে চাই। এই শহরে তোমাকেই আমি বিশ্বাস করতে পারি।”

” কিন্তু তুমি তো আমার সম্পর্কে ভালো মতো কিছুই জানোনা। তাহলে কিভাবে এতো বিশ্বাস করছো? এমনও তো হতে পারে আমি হঠাৎ করেই তোমাকে খু’ন করে ফেললাম। গায়ে গরম তে’ল ফেলে ঠিক পার্ক জিসুর মতো।”

কায়ানের শেষ কথাটা শুনে এনাক্ষী ঘা’ব’ড়ে গেলো। সে সম্পূর্ণ পেছনে ফিরবে তার আগেই চমকে গেলো। কথা বলতে বলতে কায়ান কখন একদম তার পেছনে চলে এসেছে তা সে খেয়ালই করেনি।

কায়ান এনাক্ষীর মাথায় হালকা করে টোকা দিলো দূরে সরে গেলো।

” ভীতু মেয়ে একটা।”

” শোন তোমাকে মোটেও ফ্রিতে রান্না করে দিচ্ছিনা। এর বিনিময়ে আমি যেখানে যেতে বলবো সেখানে যেতে হবে। কোন বাহানা শুনবো না।”

” রান্না করার বিনিময়ে ঘুরতে যেতে হবে তোমার সাথে?”

” হ্যাঁ তাও যখন বলবো তখন।”

” যদি না যাই?” চোখ জোড়া ছোট বললো কায়ান।

এনাক্ষী চুলা বন্ধ করে কিচেন এপ্রোনটা খুলতে খুলতে জবাব দিলো,

” সমস্যা নেই। তোমার কা’ন ধরে নিয়ে যাবো।”

এনাক্ষীর কথা শুনে কায়ান হা করে তার দিকে তাকালো রইলো।

” তুমি আমাকে কান ধরে নিয়ে যাবে? সত্যি? তুমি জানো আমি তোমার থেকে কত বছরের বড়? কোথায় তুমি পিচ্চি দু আঙ্গুলের মেয়ে আর কোথায় আমি। তোমার তো দেখি অনেক সাহস।”

” জ্বি আমার অনেক সাহস আর বন্ধুত্বের মধ্যে বয়সের কোন পাত্তা নেই। তাই সোজাসুজি যখন যেতে চাইবে না তখন কান তো ধরবো তার সাথে চুলও ধরবো।”

এনাক্ষী ভেংচি কেটে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তবে কায়ান এখনো থ মেরে রান্নাঘরেই দাঁড়িয়ে আছে। সে কেন যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা একটু আগে শোনা কথাগুলো।
.
.

খুশি মনে কায়ানের দরজায় কড়া নেড়েছিলো এনাক্ষী। তবে দরজা খোলার পর অপর পাশের ব্যক্তিটিকে দেখে তার মুখশ্রীতে খুশির পরবর্তীতে অবাকের রেশ ছেঁয়ে গেলো। দরজার অপরপাশে থাকে ফর্সা কোরিয়ান মেয়েটি কোরিয়ান ভাষায় তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

” কে তুমি? কাকে চাই?”

চলবে…..

( আগামীকাল পরীক্ষা থাকার কারণে গল্প দিতে পারবোনা, দুঃখিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here