নিশির সংসার পর্ব ৯

#নিশির_সংসার
#৯ম_পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy

তোর সেই মাদকাসক্ত স্বামী একজনকে খুন করেছে।
ভাইয়ের মুখে কথাটা শুনেই ভয়ে গলা শুকিয়ে যায় নিশিতার।

নিশিতা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে — এসব কি বলছো ভাইয়া?

— হ্যাঁ, আমি ঠিকই বলছি!

— কিন্তু সে কাকে খুন করেছে?

— তার ছোট বোনের স্বামী কে!

নিশিতা এবার এক হাতে মুখের ঘাম মুছে বললো — কি!তার ছোট বোনের বিয়ে হলো কবে,আর সে তার বোন জামাইকেই বা খুন করবে কেনো?

— কয়েকমাস আগেই নেহাল(নিশিতার আগের স্বামী) এর এক বন্ধুর সাথেই নেহালের বোনের বিয়ে হয়েছিল।
নেহালের বোন জামাইও নেহালের সাথে মাদকের ব্যবসা করতো, সেই সুবাদে ব্যবসার খাতির আরও বারাতেই নেহাল তার সাথে ঐ মাদকাসক্ত ছেলেটির বিয়ে দেয়।
কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন পরই নেহাল আর ছেলেটির ব্যবসায়ীক ঝামেলা তৈরি হয় যার ফলে ছেলেটি নেহালের বোনকে মারধর করে আর নেহালের কাছে থেকে টাকা এনে দিতে বলে।
কিন্তু নেহাল ছেলেটিকে টাকা দিবে না বলে জানায়।যার ফলে তাদের মধ্যে এক প্রকার কথা কাটাকাটি হয় যা শেষ পর্যন্ত মারামারি তে গিয়ে পৌছায়,নেহাল রাগের বসে ছেলেটিকে ছুরি দিয়ে পেটের মধ্যে আঘাত করলে ছেলেটি মারা যায়।
এখন বুঝলি তো?

নিশিতা কোনো কথা বলছে না,,এক দৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে।

— কি রে কথা বলছিস না কেনো? কি হলো তর?

— না ভাইয়া কিছুনা।এখন ওরা কে কোথায় আছে?

— নেহাল এখন জেলে আছে,,আর ওর বোন এখন ওদের বাসায়ই আছে।
এবার ওরা ঠিকই বুঝলো অন্যের সাথে অন্যের মেয়ের সাথে যে রুপ আচরন করছে নিজের বোন,মেয়ের সাথে ঠিক তেমনি হয়েছে।

ভাইয়ের সাথে কথা বলার পরই নিশিতার প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হয়,কিছুটা অসুস্থ হয়ে পরে।
তাই নিশিতা নিলয়কে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলে।

নিশিতার ফোন পেয়ে নিলয় সন্ধ্যায় অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় ফিরে আসে।

নিলয় বাসায় এসে দেখল নিশিতা বিছানায় শুয়ে আছে।এমনিতে নিলয় বাসার কলিং বেল বাজাতেই নিশিতা যথাশীঘ্রই দরজা খুলে দেয় কিন্তু আজ নিশিতা না বরং নিলয়ের মা দরজা খুলে দিয়েছে।
নিলয় মায়ের সাথে কথা বলে রুমে এসে দেখে নিশিতা বিছানায় শুয়ে আছে।
নিলয় নিশিতার কাছে গিয়ে কপালে হাত রাখতেই চমকে উঠে।কারন নিশিতার শরীর জ্বরে পুরে যাচ্ছে।

নিলয় আর দেরি না করে বাজারে গিয়ে নিশিতার জন্য ঔষধ নিয়ে আসলো।
বাসায় এসে নিশিতাকে ডাকলে নিশিতা ঘুম থেকে উঠে বলে — আপনি কখন আসলেন?

— এইতো কিছুক্ষন আগেই আসলাম।কিন্তু তোমার যে জ্বর এসেছে তা বলোনি কেনো?

— তখন বললে তো আপনি চিন্তা করতেন আর অফিসের কাজে মন বসাতে পারতেন না,তাই বলিনি!

— শোনো আগে আমার কাছে তুমি তারপর অফিস।এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে আসো একসাথে খাবো।

— কিন্তু একটুপর তো এশার আজান দিবে, আপনি মসজিদে নামাজ আদায় করে আসেন আমিও বাসায় আদায় করে নেই।

নিশিতার কথায় সম্মতি দিয়ে নিলয় মসজিদে চলে গেলো।
নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে নিলয় বাজারের হোটেল থেকে ৩ প্যাকেটে বিরিয়ানি নিয়ে আসলো। ২প্যাকেট রুমে রেখে আরেক প্যাকেট মায়ের রুমে নিয়ে গেলো।
মাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে নিলয় রুমে এসে দেখল নিশিতা গাল ফুলিয়ে বসে আছে!
তা দেখে নিলয় বললো — কি হলো দেরি করেছি বলে আমার উপর রাগ হচ্ছে!

— উঁহু।

নিলয় নিশিতার গাল টেনে দিয়ে বললো — তাহলে এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আছো যে?

— বাসায় খাবার থাকতেও আপনি কেনো আবার বাজার থেকে বিরিয়ানি আনলেন!

— তোমার জ্বর এসেছে, তাই যদি বাসার খাবার না খেতে পারো তাই নিয়ে আসলাম।আর মায়ের শরীরও ভালো না,,তাই এগুলা নিয়ে আসলাম।

— তাই বলে এত টাকা দিয়ে বিরিয়ানি আনবেন!

— কই এত টাকা!সব মিলিয়ে মাত্র ৫০০ টাকা দাম হইছে!

— ৫০০ টাকা তাও আবার মাত্র হয় নাকি,,আপনার একদিনের আয়ের সব তো এই বিরিয়ানি আনতেই শেষ হয়ে গেলো।

— তাতে কি,আয়ই তো করি ব্যয় করার জন্য।
আর পরিবারের জন্য ব্যয় করাতেও সওয়াব আছে।
যে সন্তান তার পিতামাতার ভর পোষন করবে,সেবা করবে এবং নিজ স্ত্রীর ইজ্জতের হেফাজত করবে, তার জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।{মুসলিম শরীফ}

নিলয় এবার নিশিতার নাক টেনে বললো –বুঝলে তো এবার?

— হুম।

নিলয় এবার নিশিতার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো –আর কোনো কথা নয়,এখানে চুপটি করে বসো আমি খাইয়ে দেই।।

নিশিতা চুপচাপ বসে পরলো আর নিলয় নিশিতার মুখে খাবারের লোকমা তুলে দিলো আর নিজেও খেয়ে নিলো।
খাওয়া শেষে নিলয় নিজ হাতে নিশিতাকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিলো।

গভীর রাতে যখন নিশিতার ঘুম ভেঙে গেলো, তখন নিশিতা ঠান্ডা কিছু অনুভব করলো, কপালে হাত দিয়ে বুঝলো কপালে জলপট্টি দেওয়া।
আর পাশে তাকিয়ে দেখল নিলয় নামাজ পরছে।

নিলয় নামাজ শেষে নিশিতার কাছে এসে নিশিতার কপালে হাত দিয়ে বললো — কি জ্বর কমেছে?

নিশিতা মাথা নাড়াল।

— আলহামদুলিল্লাহ্‌,, এবার তাও চিন্তা মুক্ত হলাম!

— হুম,কিন্তু আপনি সারারাত না ঘুমিয়ে আমার মাথায় জলপট্টি দিছেন?

— হুম!

— না ঘুমিয়ে জলপট্টি না দিলেও পারতেন,,এমনিতেও সুস্থ হয়ে যেতাম।শুধু শুধু আপনার ঘুমে কষ্ট হলো।

— উঁহু কোনো কষ্ট হয়নি,,বরং লাভ হয়েছে!

নিশিতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো — লাভ হলো কেমনে?

— যে স্ত্রী তার স্বামীর অনুমতি ব্যতীত স্বামীর সেবা করবে , সে স্ত্রী তার নিজের শরীরের ওজনের সমান সোনা সদকা দান করার সওয়াব পাবে। আর যে স্বামী তার স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত তার স্ত্রীর সেবা করবে, সে স্বামী তার নিজের শরীরের ওজনের সমান সোনা সদকা দান করার সওয়াব পাবে।{আবু দাঊদ শরীফ}

এখন তুমিই বলো এতগুলা সওয়াব কেমনে মিস করি?

নিলয়ের কথা শুনে নিশিতা এবার হেঁসে বললো — রাতে তো সেবা করলেনই,বিরিয়ানি খাইয়ে দিলেন,ঔষধ খাইয়ে দিলেন আবার ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।এখন জলপট্টি না দিয়ে ঘুমালেই পারতেন!

— হুম পারতাম,রাসুল (সাঃ) বলেছেন — জ্বর আসে জাহান্নামের আগুন থেকে,তাই জ্বরকে প্রশমিত কর পানি দিয়ে।

— ওহ,কিন্তু হঠাৎ করে জ্বরটা কেনো যে এলো!

— উঁহু, একথা বলতে নেই।

— কেনো?

— কারন রাসুল (সাঃ) বলেছেন–তোমরা জ্বরকে গালি দিও না।কেননা জ্বর পাপ সমূহ দূর করে।{মিসকাতুল মাসাবিহ :৩৪৬৮}
আর কোনো কথা নয়,এবার উঠে ফ্রেশ হয়ে অজু করে নেও।দুজন মিলে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বো।
কেননা, যে ঘরে স্বামী স্ত্রী এক সাথে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বে,সে ঘরে কোনোদিন অশান্তি হবে না।{বুখারি ও মুসলিম }

নিশিতা অজু করে আসলে
নিলয় আর নিশিতা মিলে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে নেয়।

নামাজ শেষে নিলয় আর নিশিতা বসে কথা বলছে, এমন সময় নিশিতা বললো -; এই আপনি মসজিদে যাবেন না?

— হুম যাবো তো,,

— তাহলে এখানো বসে আছেন কেনো?যান মসজিদে যান।

— আরে এখনো আজান হয়নি,অনেক দেরি আছে। তার চেয়ে তোমার সাথে কথা বলছি এতে করেও সওয়াব হচ্ছে।

— আমার সাথে কথা বললে সওয়াব হবে কেনো!

নিলয় নিশিতার নাক টেনে দিয়ে বলে — তুমি আসলেই একটা বোকা,,বয়ফ্রেন্ডে গার্লফ্রেন্ড একে সাথে কথা বললে যদি গুনাহ হয় তাহলে স্বামী স্ত্রী একে অপরের সাথে কথা বললে সওয়াব হবে না কেনো?
স্বামী স্ত্রী যখন একই বিছানায় শয়ন করে,হাসাহাসি বা খুশির কথা বলে তখন প্রতি মিনিটে এবং স্বামী স্ত্রীর প্রতিটি কথাতে প্রতি সেকেন্ডে স্বামী স্ত্রী উভয়ের আমলনামায় ১০ টি করে নেকি লিখা হয়।{আবু দাঊদ}

— কতো সুন্দর আমাদের ইসলাম,,প্রতিটি ভালো কাজেই কতো সওয়াব। আর বিয়ের ফলে সওয়াবের পরিমান পূর্বের তুলনায় বেরে যায়।

— হুম,স্বামী স্ত্রী যদি দ্বীনদার হয় তাহলেই সওয়াব অর্জন করা সম্ভব।কেননা,রাসুল (সাঃ) বলেছেন — খারাপ সঙ্গী জাহান্নামের কারন হতে পারে।{সহীহ বুখারি ::১৩৬০}

এভাবে কথা কথায় ফজরের সময় হয়ে যায়।নিলয় বেরিয়ে যায় নামাজের উদ্দেশ্যে আর নিশিতা বাসায় নামাজ আদায় করে নেয়।

এভাবেই চলছে নিলয় আর নিশিতার সংসার।

কিন্তু এরই মাঝে একদিন নিলয় অফিসে যাওয়ার পর নিশিতার ফোনে একটি অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে।
কল রিসিভ করে কথা বলার পর একটা কথা শুনে আচমকা নিশিতার হাত থেকে ফোনটি পরে যায়……… ……………………………

চলবে………………………………???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here