নিশির সংসার পর্ব ৭

#নিশির_সংসার
#৭ম_পার্ট
#Shohag_Hasan_Niloy

আপনার আগের স্ত্রী আপনাকে ডিভোর্স দিলো কেনো?

নিলয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো — বিয়ের আগে থেকেই সে ছিল উশৃঙ্খল,, মা বলেছিল বিয়ের পর নাকি সে ঠিক হয়ে যাবে,, ধার্মিক হয়ে যাবে,তাই এই ভেবে আমিও তাকে বিয়ে করে নেই,,কিন্তু বিয়ের পর তার কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না,,সে আগের মতই ছিল,আমি কোনো কাজের কথা বললে,নামাজ, রোজা,পর্দা করতে বললে সে এগুলা কিছুই করতে চাইতো না।আমিও বিভিন্নভাবে তাকে এগুলা করাতে চাইতাম। কিন্তু সে এগুলা ঝামেলা মনে করতো,আমাকে আর আমার কথা নাকি তার সহ্য হয়না,,যার ফলে সে সেচ্ছায় আমার কাছে ডিভোর্স চায়,,আমিও তাকে নিয়ে এই নরকের সংসার করতে চাইনি,তাই আমিও তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেই।

দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ।

নিরবতা ভেঙে নিলয় নিশিতার হাত ধরে বললো — তুমি কি আমার মনের মতন হবে?আমার আদেশ নিষেধ মেনে চলবে?দ্বীনের পথে থাকবে?আমার জান্নাতে যাওয়ার সঙী হবে!

নিশিতা নিলয়ের হাতের উপর হাত রেখে বললো — ইনশাল্লাহ,, আপনি শুধু আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিবেন,,তাহলে আমি সবই করব।

নিশিতার কথা শুনে নিলয় খুশি হয়ে নিশিতার কপালে চুমু দিলো,যার ফলে নিশিতা হালকা কেপে উঠলো।

দুজনের কথাবার্তার মধ্যেই অনেকটা রাত কেটে যায়। যার ফলে রাত ৩ টার দিকে দুজন মিলে তাহাজ্জুদ এর নামাজ পরে।তাহাজ্জুদ নামাজ শেষে নিলয় ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে যায় আর নিশিতা বাড়িতেই ফজরের নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়।

নামাজ শেষে নিলয় যখন বাসায় ফিরল,তখন রুম থেকে কারও মিষ্টি কন্ঠের কুরান তেলাওয়াত শুনতে পেলো।
নিলয় দরজার পাশে দাঁড়িয়ে নিশিতার কুরান তেলাওয়াত শুনলো।কুরান তেলাওয়াত শেষে যখন নিশিতা দরজার দিকে তাকালো তখন নিলয়কে দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে দাঁড়িয়ে নিলয়কে সালাম দিলো নিশিতা।
নিলয় সালামের জবাব দিয়ে বললো — তোমার কুরান তেলাওয়াতের কন্ঠ কিন্তু অসাধারণ।

নিশিতা হেঁসে বলে — আপনি বানিয়ে বলছেন,,অনেকদিন পড়া হয়না,,আজ হঠাৎ আপনার রুমে কুরান দেখে তাই পরে নিলাম।

— উঁহু,আমি মুটেও কিছু বানিয়ে বলছি না, সত্যি তোমার কুরান তেলাওয়াতের কন্ঠ অসাধারণ,, আজ থেকে নিয়মিত তেলাওয়াত করবে আর আমাকেও তোমার মিষ্টি কন্ঠের তেলাওয়াত শুনাবে।আর এইটা শুধু আমার রুম না,,গতকাল থেকে এই রুমটা কিন্তু তোমারও হয়েছে,,তাই আমার রুম বলে অবহেলা না করে নিজের রুম ভেবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবে!

— জি,ইনশাল্লাহ।

— এই যে শুনো,শুধু রুম সাজিয়ে গুছিয়ে রাখলেই হবে না,,আমাকেও রাখতে হবে সাথে এই সংসারটাকেও তুমি তোমার নিজের মতন করে সাজাবে।

নিশিতা অবাক হয়ে বলে — আমি কিভাবে আপনাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবো। আর সংসার সাজানোর জন্য তো মা আছে।

— ইচ্ছা করলেই পারো,,পুরুষেরা সাধারণত অগুছালো হয়ে থাকে কিন্তু একজন নারীই পারে একজন অগুছালো পুরুষকে গুছিয়ে দিতে।তাই আমিও চাই তুমিও আমাকে ভালোবেসে গুছিয়ে দিবে,,আর মায়ের এখন বয়স হয়েছে তাই এই সংসারের দায়িত্ব এখন তোমার?

নিশিতা হেঁসে বললো — ইনশাল্লাহ, তবে আপনাকে আমার পাশে থাকতে হবে?

— ইনশাল্লাহ, আমি সব সময় তোমার সুখে দুঃখে তোমার পাশে থাকবো।

বিকেলের দিকে নিশিতার ভাই আসলো নিশিতা আর নিলয়কে নিতে!

নিশিতার বাসায় গিয়ে যখন নিলয় নিশিতার রুমে ডুকে তখন নিলয় অবাক হয়ে তাকিতে থাকে।কারন নিশিতার রুমটা বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সাজানো,,আর বেশ গুছালো।যার ফলে নিলয় ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখছে।
এমন সময় নিশিতা এসে জিজ্ঞেস করে — কি দেখছেন এমন করে?..

— রুমটাই দেখছি।

— রুম দেখার কি হলো?

— এত সুন্দর করে সাজানো গুছানো রুম কার না দেখতে ইচ্ছে করে।তুমি কি নিজ হাতে সাজিয়েছ এগুলা?.

নিশিতা হেঁসে বলে — জি, আলহামদুলিল্লাহ, আমি নিজেই সাজিয়েছি।আপনার পছন্দ হয়েছে?

— এত সুন্দর করে সাজানো গুছানো রুম কি না পছন্দ হয়ে থাকতে পারে!অনেক পছন্দ হয়েছে,,আমাদের রুমটাও কিন্তু এইভাবেই সাজিয়ে গুছিয়ে তুলবে?

— ইনশাল্লাহ, কয়েকটা দিন যেতে দিন,ধীরে ধীরে সব সাজিয়ে গুছিয়ে আমাদের সংসারটা সুন্দর করে তুলবে!

রাতে নিলয় সবার সাথে কুশল বিনিময় করে রুমে এসে দেখে নিশিতা ড্রেসিং টেবিলে বসে সাজগোছ করতেছে।তা দেখে নিলয়ের ভালো লাগলেও পরে যখন দেখল যে নিশিতা কপালে লাল টিপ পরেছে তখন কিছুটা খারাপ লাগল।তাই নিলয় চুপি চুপি গিয়ে নিশিতাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিশিতার গাড়ে চুমু দিয়ে বলে — তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা কথা বলি?

নিশিতা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে — বলুন,আমি কিছুই মনে করবো না।

— তুমি আজ থেকে আর কখনওই কপালে টিপ পরবা না!

নিশিতা অবাক হয়ে বলে — কেনো?টিপ পরলে কি আমাকে অসুন্দর দেখায়,,আপনার কি টিপ অপছন্দ। তাহলে আমি এক্ষুনি টিপ খুলে ফেলছি।

— না, তেমন কিছু না।

— তাহলে টিপ পরলে সমস্যা কি?

— হযরত ইবরাহীম আঃ কে যখন আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য নমরুদ ৮ মাইলপরিমান জায়গা আগুন জ্বালালো , তখন একটা নতুন সমস্যা দেখা দিল।
আগুনের উত্তাপ এতই বেশি ছিল যে তার কাছে পৌছানো যাচ্ছিল না। তাই একটা চরক বানানো হল যার মাধ্যমে ইবরাহীম (আঃ) কে ছুড়ে আগুনে নিক্ষেপ করা যায়।
কিন্তু রহমতের ফেরেশতা রা চরকের একপাশে ভর করে থাকায় চরক ঘুরানো যাচ্ছিল না।
.
তখন শয়তান নমরুদকে কুবুদ্ধি দিল কিছু নগ্ন মেয়ে(পতিতা) এনে চরকের সামনে বসিয়ে দিতে, কারন এ অবস্থায় ফেরেশতারা থাকতে পারবে না। তাই করা হল এবং ফেরেশতারা চলে গেল, ইবরাহীম (আঃ) কে আগুনে নিক্ষেপ করতে তারা সক্ষম হলেন।
পরবর্তিতে ঐ মেয়েগুলোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান করা হল এবং তাদের মাথায় তীলক পরানো হল। যেটা এখন আমাদের কাছে টিপ নামে পরিচিত।
.
অতএব যারা বলে— মহিলাদের সৌন্দর্য সব জায়গায় এবং এই দোহাই দিয়ে টিপ কে নিজেদের জন্য বৈধ মনে করে।তারা যুগযুগ ধরে নিজেদের কোন পরিচয় বহন করছে তা একবার ভেবে দেখছ ?
.
পতিতার পরিচয় বোঝানোর জন্য যে টিপ ব্যবহার করা হত, তা আজ আমাদের উপমহাদেশে ফ্যাশন! ! তুমি একজন মুসলিম নারী,, এই সত্য কথাটা জানার পর ও কি তুমি তোমার কপালে টিপ পড়বে??
{সূত্রঃ
* তাফসীরে মা-রেফুল কুরআন, হযরত ইবরাহিম (আঃ) মূলগ্রন্থ।
* তাবারী, তারীখ, ১খ, ১২৩-১২৪; ছালাবী}

নিলয়ের কথা শুনে নিশিতা বলে উঠলো — আসতাগফিরুল্লাহ,,আমি তো না জেনে এতদিন টিপ পরে আসছি।

— হুম,এখন তো জানলে,,তাই আজ থেকে আর কখনওই টিপ পরবে না।

— ইনশাল্লাহ,, নিশিতা আগের ভুলের জন্য মনে মনে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

— কি হলো, মন খারাপ করলে?

নিশিতা হেঁসে বললো — উঁহু, মন খারাপ করবো কেনো!

— এই যে টিপ পরতে মানা করলাম তাই।

— আপনি তো আমাকে সুন্দর করে বুঝিয়েই সব কিছু বলেছেন,এতে মন খারাপের কিছুই নেই বরং সুন্দর করে বুঝিয়ে না বললেই মন খারাপ করতাম।

— হুম এটাই স্বাভাবিক। কারন রাসুল (সাঃ) নারীদের কাঁচের গ্লাসের সাথে তুলনা করেছেন, কারন কাঁচের গ্লাস যেমন একটু চাপ পেলেই ভেঙে যায় ঠিক তেমনি নারীকেও বেশি শাসন করলে নারী অবাধ্য হয়ে যায়।তাই রাসুল (সাঃ) নারীদের সাথে কোমল আচরন করতে বলেছেন।

এভাবে কিছুক্ষন দুজনে কথা বলে ঘুমিয়ে পরল।

গভীর রাতে নিলয়ের ডাকে ঘুম ভেঙে যায় নিশিতার।
নিশিতাকে ঘুম থেকে জেগে উঠলে দুজনে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে নেয়।
নামাজ শেষে নিলয় নিশিতাকে বলে — রাসুল (সাঃ) বলেছেন — তিন ব্যক্তিকে দেখে আল্লাহ তায়ালা হাসেন এবং খুশি হন।সেই ব্যক্তি হলো যার একটি সুন্দরি স্ত্রী, সুন্দর স্বামী এবং নরম তুলতুলে বিছানা আছে।কিন্তু সে একসময় মধ্য রাতে জেগে তার সুন্দরি স্ত্রী, সুন্দর স্বামী আর নরম তুলতুলে বিছানা ছেড়ে উঠে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে,,তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের ডেকে বলেন,দেখো আমার বান্দা আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে সে তার ঘুম,সুন্দরি স্ত্রী , সুন্দর স্বামী রেখে উঠে এসেছে।সেসব ব্যক্তিকে দেখে আল্লাহ তায়ালা হাসেন এবং খুশি হন।

নিশিতা শুনে বলে — সুবহানআল্লাহ ,, আমাদের রব আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসেন!

— হুম,,শুধু তাই নয় আল্লাহ তায়ালার হাসির অর্থ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে,রাসুল (সাঃ) বলেন — তোমার রব যদি কোনো ব্যক্তিকে দেখে হাসেন,তাহলে কেয়ামতের দিন সে ব্যক্তি হতে কোনো হিসাব নেওয়া হবে না।সে ব্যক্তিকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রেরন করা হবে।(সুবহানআল্লাহ)

এভাবে গল্প করার পরই ফজরের আজান দিলে নিলয় নিশিতার ভাইয়ের সাথে মসজিদে চলে যায় নামাজ আদায় করতে।

বিকেলে সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে নিলয় ও নিশিতা রওনা দেয় নিলয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে।।

নিলয় আর নিশিতা যখন বাসে বসে আছে তখন ঘটলো এক বিপত্তি…কারন নিলয়ের পেছনের ছিটে বসে আছে নিলয়ের পরিচিত একজন আর অপর পাশে বসে আছে কয়েকজন বখাটে ছেলে……………………………

চলবে………………………………???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here