#নিস্বার্থ ভালোবাসা
#পর্ব:১৯
#লেখিকা:তাসনিম জাহান রিয়া
রিদ ফোনটা রিসিভ করে। একটু পরে ফোনটা ঠাস করে কেটে দেয়। রিদের চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে যায়। চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি ঝরছে। মনে হচ্ছে এই আগুনে যে কাউকে জ্বালিয়ে দিবে। প্রচন্ড রাগের ফলে মুখের রং অগ্নি বর্ণ ধারণ করেছে। যা দেখে শুভ্রতাও ভয় পেয়ে যায়। শুভ্রতা কাঁপা কাঁপা গলায় রিদ জিঙ্গেস করে,
শুভ্রতা: কী হয়েছে?
রিদ: এনা, এনা। ( চিৎকার করে ডাকে)
রিদ বসা থেকে ওঠে চলে যেতে চাইলে। শুভ্রতা রিদের হাত ধরে আটকে দেয় আর রিদের দিকে জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
রিদ: ডক্টর আয়না তোমাকে ফেইক রিপোর্ট দিয়েছিল কার কথায় জানো?
শুভ্রতা: কার কথায়?
রিদ: এনার।
শুভ্রতা: এনা আপু এসব কেনো করাতে যাবে?
রিদ: তোমাকে আর আমাকে আলাদা করতে। এই এনাকে তো আমি ছাড়বো না।
শুভ্রতা: এনা আপু বাসায় নাই। কালকে সকালে বের হয়েছিল এখনো ফিরেনি।
রিদ: বাদ দাও এনার কথা খাবারটা কম্পলিট করো।
শুভ্রতা: খাবো না। ( মুখ ফুলিয়ে)
রিদ:না খেলে কিন্তু কিস করে দিব।
শুভ্রতা: না না আমি খাবো।
রিদ শুভ্রতাকে সুন্দর করে খাইয়ে দেয়। তারপর শুভ্রতা কপালে একটা গভীর কিস করে রিদ।
রিদ: আমি আসছি।
শুভ্রতা রিদের হাতের কাছে শার্ট খামছে ধরে।
রিদ: কী হয়েছে?
শুভ্রতা: আজকে না গেলে হয় না। ( ঠোঁট উল্টিয়ে)
রিদ: কেনো?
শুভ্রতা: আজকে ঘুরতে যাবো।
রিদ: কোথায়?
শুভ্রতা: নদীর পাড়ে দুজন হাতের ওপর হাত রেখে হাঁটবো। আর আজকে সারাদিন তোমার সাথে গল্প করবো আর বিকেলবেলা ঘুরতে যাবো।
রিদ: শুধু গল্প করলেই চলবে রোমান্সটা কে করবে?
শুভ্রতা: ধুর।
রিদ: ধুর বললেই তো হবে না। আমার তো এখন প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
শুভ্রতা: একদম আমার দিকে এগোবে না।
রিদ: তা বললে তো হবে না।
————————————————————–
দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৭ টা মাস। শুভ্রতা ৭ মাসের প্যাগনেন্ট। এই ৭ টা মাসে শুভ্রতার সম্পূর্ণ খেয়াল রেখেছে। শুভ্রতার সব আবদার পুরণ করছে রিদ। অফিসে যাওয়ার আগে আর অফিস থেকে আসার পর শুভ্রতাকে খাইয়ে দেওয়াটা রিদের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনার খবর কেউ জানে না। এনা বলতে যে কেউ ছিল সেটাই অনেকে ভুলে গেছে।
রিদ: শুভি প্লিজ ওঠো।
শুভ্রতা: না আরেকটু ঘুমুবো।
রিদ: ব্রেকফাস্ট করে আবার ঘুমিয়ো।
রিদ শুভ্রতাকে টেনে তুলে। কোলে করে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। শুভ্রতাকে ফ্রেশ করিয়ে আবার কোলে করে এনে বেডে বসায়। রিদ শুভ্রতার মুখে একের পর এক খাবার ঢুকিয়ে যাচ্ছে। শুভ্রতার অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিদের রাগী চোখ দেখে খেয়ে যাচ্ছে। আচমকা শুভ্রতা রিদের শরীরে বমি করে দেয়। রিদ এতো কষ্ট করে এতক্ষণ যা খাওয়ালো সব বমি করে দিয়েছে। রিদ অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছিল শুভ্রতা সব নষ্ট করে দিয়েছে। শুভ্রতা মুখ কাঁচো মাচো করে রিদের দিকে তাকিয়ে আছে। এই বুঝি রিদ তাকে বকা দিলো। শুভ্রতা রিদের মুখের ভঙ্গি দেখে কিছু বুঝতে পারছে না রেগে আছে নাকি। কিন্তু রিদ শুভ্রতার ভাবনাকে ভুল প্রমানিত করে শুভ্রতার গালে আলতো করে হাত রাখে।
রিদ: শুভি তোমার কী খুব কষ্ট হচ্ছে?
শুভ্রতা মাথা নেড়ে না জানায় যার অর্থ তার কষ্ট হচ্ছে না। শুভ্রতা মুখটাকে এখনো আগের মতোই করে রেখেছে।
রিদ: কী হয়েছে শুভি মুখটাকে এমন করে রেখেছো কেনো?
শুভ্রতা: আমি তোমার ড্রেস বমি করে ময়লা করে দিলাম। সরি আমি বুঝতে পারিনি। ( ঠোঁট উল্ঠিয়ে)
রিদ: ধুর বোকা মেয়ে এর জন্য মন খারাপ করার কী আছে? আমি কী তোমাকে বকা দিয়েছি? তুমি এখানে বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ( মুচকি হেসে)
রিদ ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষণের মাঝেই ফ্রেশ হয়ে আসে। পুনরায় অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নেয়। রিদ শুভ্রতার কাছে এসে কপালে একটা গভীর চুমু দেয়।
রিদ: আমি আসছি। সাবধানে থাকবে একা একা ওয়াশরুমে যাবে না মামুনি বা ফুলকে ডাক দিবে। টাইমলি খাবার খাবে।
রিদ শুভ্রতার ঠোঁটে হালকা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে চলে যায়। রিদ চলে যেতেই শুভ্রতা
কতগুলো চকলেট নিয়ে বসে। একের পর এক চকলেট খাচ্ছে। পিছন থেকে কেউ শুভ্রতার মুখে রুমাল চেপে ধরে আর শুভ্রতা সেন্সলেস হয়ে যায়।
——————————————-
রিদ সব কিছু সামলে বাকি কাজগুলো ম্যানেজারকে বুঝিয়ে দিয়ে দুপুরেই বাসায় চলে আসে শুভ্রতাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে। কিন্তু রিদ রিদ নিজেই যে এমন সারপ্রাইজড হয়ে যাবে ভাবতে পারে। রিদ বাসায় এসে বাসার প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় খুঁজেছে কিন্তু শুভ্রতাকে পায়নি। রিদ নিজের রুমে গিয়ে দেখে শুভ্রতার এক পায়ের নূপুর ফ্লোরে পড়ে আছে।
এইদিকে
একটা অন্ধকার রুমে বেডের ওপর অঙ্গান অবস্থায় পড়ে আছে শুভ্রতা।
#নিস্বার্থ ভালোবাসা
#অন্তিম পর্ব
#লেখিকা:তাসনিম জাহান রিয়া
একটা অন্ধকার রুমে বেডের ওপর অঙ্গান অবস্থায় পড়ে আছে শুভ্রতা। ঘরের এক কোণে হাত পা বাধা অবস্থায় অঙ্গান হয়ে পড়ে আছে ফুল।
—————-
রিদ পাগলের মতো করে চিৎকার করে শুভ্রতাকে ডাকছে কিন্তু শুভ্রতার কোনো সারা শব্দ নাই। রিদ তাড়াতাড়ি রুমের সিসিটভি ফোটেজ চেক করে। রুমের সিসিটভি ফোটেজ চেক করে রাগে রিদির কপালের রগ ফুলে যায়। রিদ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে আদ্র শুভ্রতাকে রুমালে ক্লোরোফোম দিয়ে অঙ্গান করে কিডন্যাপ করেছে। রিদ গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। রাস্তা দিয়ে গাগলের মতো গাড়ি ড্রাইভ করছে।
—————————————————–
শুভ্রতার ঙ্গান ফিরেছে। পিট পিট করে চোখ খুলে ওঠে বসে। মাথাটা এখনো বেশ বাড় লাগছে। মাথা চেপে ধরে জায়গাটা চিনার চেষ্টা করছে সে এখন কোথায় আছে। কিন্তু সে জায়গাটা চিন্তে পারছে না। তখনি কেউ দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করে।
শুভ্রতা: কে?
তখনি রুমের লাইট জ্বলে ওঠে। লোকটিকে দেখে শুভ্রতা চমকে ওঠে।
শুভ্রতা: আদ্র ভাইয়া আপনি।
আদ্র: হুম আমি শুভ্রতা।প্লিজ ডোন্ট কল মি ভাইয়া। শুধু আদ্র বলে ডাকো।
শুভ্রতা: আপনি আমাকে কেনো কিডন্যাপ করেছেন?
আদ্র:বিয়ে করতে।
শুভ্রতা: দেখুন আমি বিবাহিত। আমার বিয়ে হয়ে গেছে রিদের সাথে। আমি রিদের বাচ্চার মা হতে চলেছি।
আদ্র: রিদই তো সব প্রবলেম তাহলে ঐ রিদকেই শেষ করে দেই।
শুভ্রতা: দেখুন ভালো হবে না কিন্তু একদম আমার দিকে এগোবেন নাহ।
রিদ দৌড়ে এসে আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে বেড থেকে ফেলে দেয়। রাগে রিদের শরীর থরথর করে কাঁপছে।
রিদ : তোর সাহস হয় কী করে আমার শুভ্রতার দিকে হাত বাড়ানোর?
আদ্র: তুই এখানে কী করে এলি। রাজু, মন্টু
রাত: কেউ আসবে না। সবাইকে মেরে ফেলেছি।
আদ্র: বাহ বাহ সবাই একসাথে। রিদ আর ফুলকে মেরে উপরে পাঠিয়ে দেই।
রিদ: তোকে আমাদের হাত থেকে কে বাঁচাবে?
আদ্র: আগে তো নিজের বোনকে বাঁচা।
রাত গিয়ে আদ্রের কলার চেপে ধরে।
রাত: আমার ফুলকে কেনো তুলে এনেছিস? তোর কথা মতো তো ফুলের কাছ থেকে আমি এতোমাস দুরে ছিলাম তাহলে।
আদ্র: তুই তো ফুলের সাথে গত কিছুদিন ধরে যোগাযোগ করছিস। তুই যদি আমার বোনকে বিয়ে না করিস তাহলে আমি ফুলকে মেরে ফেলবো। যেভাবে এনাকে মেরেছিলাম আমার শুভ্রতার ক্ষতি করতে চেয়েছিল বলে।
রাত: আমার ফুলের যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোকে ছাড়বো না।
আদ্র: ছাড়তে কে বলেছে ধরে রাখ আফটার ওল আমি তোর সালা।
রাত: একদম ফালতু কথা বলবি না। আমার ফুল কোথায় বল?
টিনা: রাত ভাইয়া আপনার ফুল এখানে। একদম ঠিক আছে ফুলের কিছু হয়নি ।
রাত দৌড়ে গিয়ে ফুলকে জড়িয়ে ধরে। নিজের ভালোবাসার মানুষটি অন্য কাউকে জড়িয়ে ধরতে দেখে টিনার বুকটা ছ্যাত করে ওঠে। কিন্তু মুখে কিছু বলে না শুধু নিরবে একটা দীর্ঘশাস্ব ছাড়ে।
আদ্র: টিনা তুই এখানে কী করছিস? ফুলকে কী করছে তোর সাথে? (রেগে)
টিনা গিয়ে আদ্রের সামনে দাঁড়ায়।
টিনা: ভাইয়া তুমি যেটা করছো সেটা অন্যায়। জোর করে কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায় না। জোর করে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেলেও কখনো সুখী হতে পারবে না। তোমার সাথে সে থাকবে ঠিকি কিন্তু সারাজীবন চোখের পানি ফেলবে। এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। ভালোবাসার মানুষকে যে কাছ থেকেই ভালোবাসতে হবে তার কোনো মানে নেই। দুর থেকেও ভালোবাসা যায়। ভালোবাসার মানুষটি যার সাথে সুখী থাকবে তার কাছেই থাকতে দাও। কেনো নিজের ভালোবাসার মানুষের কান্নার কারণ হতে চাইছো। ভাইয়া তোমার ভালোবাসাটা একতরফা কারণ শুভ্রতা আপু রিদ ভাইয়াকে ভালোবাসে। একতরফা ভালোবাসা শুধু কষ্টই দেয় কখনো আনন্দ দেয় না। আমি রাত ভাইয়াকে ভালোবাসি তাই চায় সে ফুল আপুর সাথে ভালো থাকুক। ভাইয়া অনেক করেছো জীবন নিয়ে খেলা। এবার নিজের জীবনটা একটু গুছিয়ে নাও। এনা আপু শুভ্রতা আপুর ক্ষতি করতে চেয়েছিল তা আমি জানি কিন্তু তাই বলে তুমি নিজের হাতে খুন করবে। আমার মনে হয় তোমার পুলিশের কাছে সেলেন্ডার করা উচিত।
সবাই অবাক শুনছে একটা পিচ্চি মেয়ের কথা। কতটা #নিস্বার্থ ভালোবাসা হলে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এভাবে অন্যের কাছে তুলে দিতে পারে। পুলিশ আদ্রকে নিয়ে চলে যায়। টিনা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে শেষবারের মতো রাতকে দেখে নেয়।
রিদ: চলো সবাই বাসায় যায়।
শুভ্রতা:এখন বাসায় যাবো না আমরা ঘুরতে যাব। মামুনি আর বাবাইকে ফোন করে বলে দাও আমরা ঠিক আছে।
রিদ: সবসময় বাচ্চাদের মতো জেদ ভালো লাগে না শুভি।
শুভ্রতা:এ্যাঁ এ্যাঁ তুমি আমাকে বকছো। ( কাঁদতে শুরু করে দেয়)
রিদ: আচ্ছা চলো ঘুরতে যায় আর কেঁদো না।
শুভ্রতা:আমি হেঁটে যাব না।আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।
রিদ শুভ্রতাকে কোলে তুলে হাঁটা শুরু করে। রাতও ফুলকে কোলে তুলে হাঁটা শুরু করে।
সমাপ্ত