কৃষ্ণচূড়ার রং লাল পর্ব ৩০+৩১

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৩০.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
ভয়ংকর দাপুটে হাসির ধমকে সবাই চুপ হয়ে যায়।লোকটার হাসির শব্দ চারপাশে ছড়িয়ে পরছে।কাঠে কাঠে ঘর্ষন লাগছে সেই হাসি।আকাশের মতো চঞ্চল মানুষও চুপ করে গেছে।কি ভয়ংকর ভাবে হাসে!রূমাশ্রী নিজের কান্না থামিয়ে তাকিয়ে আছে লোকটির দিকে।রামিম তাকিয়ে আছে রিভলবারের দিকে।মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছে।কখন যে গুলি ছুড়ে সেই ভয়ে।সবাইকে অবাক করে দিয়ে তুতুল হো হো করে হেসে উঠে।সবাই বিস্মিত চোখে তাকিয়ে তার সে হাসি দেখছে।এতোক্ষণ যার দাপুটে হাসির দমকে সবাই ভীতু হয়ে ছিলো সেও তাকিয়ে আছে তুতুলের দিকে।লোকটিও নিজের হাসি থামিয়ে দিয়েছে।তুতুল হাসতে হাসতে আজকে যেনো মরেই যাবে।সে নিজের অট্টহাসি থামতেই পারছে না।হাসতে হাসতে একবার পিছনে গড়িয়ে পড়ছে তো একবার সামনে ঝুঁকে যাচ্ছে।লোকটি প্রচন্ড বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
“ আপনি হাসছেন কেনো??”

তুতুলের হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।তার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়ছে।কান্নার মতো দেখাচ্ছে।অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে সে বললো,
“ আপনি কেনো হাসলেন??”

লোকটি ভারী অবাক হয়ে বললো,
“ আমি হেসেছি দেখে আপনি হাসছেন??”
“ আরে না।আগে আপনারটা বলুন।তারপর আমারটা বলবো।”
“ আমি হাসছি কারন সবাই ভয় পেয়েছে।”
“ আর আমি হেঁসেছি কারন আমার মনে হয়েছে আপনি পাগল।পাবনা থেকে পালিয়ে এসেছেন।কথাটা কি সত্য??”

বলেই তুতুল হাসতে শুরু করে।লোকটি কিঞ্চিত বেকুবের মতো তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন।রামিমও এবার হেসে ফেললো।পাশের একটা লোক রাগে আগুন হয়ে বললো,
“ এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছো না কি??কাকে কি বলছো??উনি রাজন স্যার।সম্রাট স্যারের ছেলে রাজন সম্রাট।এখানের সবাই তাকে ভয় পায়।আর তুমি হাসছো??এখনই মেরে পুতে দিলে বুঝবে কে আমরা।”

লোকটার কথা শুনে তুতুল নিজের দুজোড়া ভ্রু বাঁকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলো।বললো,
“ উনি রাজন সম্রাট হলে আমার বাপের কি?আমারই বা কি??আমার কি দুই টাকা লাভ হবে উনার নাম শুনে?যতসব।রিভলবার সরান।উনি আমার আকাশ ভাইয়া।কিছু করলে আপনাকেই খুন করে দিবো।সরান বলছি।ফাইজলামি হচ্ছে??যাকে পাবেন তুলে নিয়ে আসবেন?তারপর খুন করে দিবেন??পাগল লোক।”
কথাগুলো শেষ করে তুতুল দীর্ঘশ্বাস নিলো।বুকটা ধুকধুক করছে।এই লোক রেগে আবার গুলি না করে দেয়।রাজন তেমন কিছুই করলো না।রিভলবার সরিয়ে নেয় সে।চেয়ার টেনে বসে।তারপর হেসে উঠে বলল,
“ আপনার হাসি দারুন সুন্দর।আপনার সব সুন্দর।চোখ সুন্দর,চোয়াল সুন্দর,ভ্রু জুগল সুন্দর,চুল সুন্দর,কোঁকড়া চুল!এতো সৌন্দর্য্য আমি আগে কোনো মেয়ের মাঝে খুঁজে পাইনি।বিশ্বাস করুন আমি এতো পছন্দ আগে কাউকে করিনি।আমার এখানে প্রতিদিন দশেরও বেশি মেয়েদের নিয়ে আসা হয়।কিন্তু এতো সৌন্দর্য আমি কারো মাঝে খুঁজে পাইনি।আমি আপনাকে আমার সম্রাজ্ঞী বানাতে চাই।”

তুতুল চোখ বড় করে নেয়।বিয়ের প্রপোজাল দিলো??তার তো মাথা ঘুরছে।শেষে আবার বিয়ে??তুতুলের কন্ঠ রোদ হয়ে আসে।নিঃশ্বাস ভারী হয়।সাথে প্রচন্ড রাগে মাথা দপদপ করে।চারপাশে একবার তাকিয়ে সে রিঝকে খুঁজে।হঠাৎ করেই তার মন প্রান হৃদয় সব আঙ্গার হয়ে যাচ্ছে একটা মানুষের জন্য।হৃদয় শূন্য হয়ে গেছে মুহূর্তেই।
রামিম প্রচন্ড রেগে বললো,
“ পাগলামি পাইছস??ওর বিয়ে হয়ে গেছে।তোর সম্রাজ্ঞী কেনো তোর আশেপাশেও থাকবে না।শুনতে পাইতাছ হারামি।”

রাজনের যেনো সর্বাঙ্গ জ্বলে উঠলো।রাগে মুখটা শ্যাম বর্ণ থেকে লালে রূপ নিলো।ঘন কুয়াশার মাঝে সূর্য যেমন তেজ দেয় চোখটা থেকে তেমন তেজ বের হচ্ছে।আকাশ রামিমকে ইশারা করে বললো,
“ ইশ ইশ চুপ কর শালা।পরে গুলি করে উপরের টিকেট করে দিবে।চুপ যা তুই।”

রাজন জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে তুতুলের দিকে তাকালো।তুতুল বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে।তাকে ঘামাচ্ছে।ঘাম মাথা থেকে গাল বেয়ে পড়ছে।রাজন বললো,
“ আপনার বিয়ে হয়ে গেছে??”

তুতুল এই প্রথম নিজের বিয়েতে এতো খুশি হয়েছে।এক গাল হেঁসে সে বললো,
“ হ্যাঁ হ্যাঁ আমার বিয়ে হয়েগেছে।যার সাথে হয়েছে তাকে আমি অনেক ভালোবাসি।জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি।এতো ভালো আমি নিজেকেও বাসিনা।”

এক নিঃশ্বাসে তুতুল কথাগুলো বলা শেষ করে।রাজন আহত চোখে তাকায় তুতুলের দিকে।বিনিময়ে তুতুল দাঁত বের করে হাসে।অসম্ভব রাগ নিয়ে রাজন খুব জোড়ে চেয়ারটা পা দিয়ে লাথি মেরে ফেলে দেয়।তারপর কিছু না বলেই হন হন করে নিচে নেমে যায়।তার পিছনে পিছনে সবাই।বাকি সবাই হাফ ছেড়ে বাচঁলো।আকাশ তুতুলকে জিজ্ঞেস করলো,
“ তুমি সত্যি সত্যি রিঝকে ভালোবাসো?”

তুতুল অন্যমনষ্ক ছিলো।তাই বললো,
“ হ্যাঁ বাসি তো।”

সবাই এক সাথে চেঁচিয়ে উঠে বললো,
“ কি??সত্যি??তুমি??ভালোবাসো??রিঝমানকে??”

তুতুলের হুশ আশে।সে দ্রুত বললো,
“ আরে না না।ওইটা কথার কথা বললাম।এবার আসল কাজ করেন।”
“ কি কাজ??” আকাশ বলল।

“ আমার হাতের বাঁধন খুলে দেন।তারপর আমি সবারটা খুলবো।এতো কাহিনী করে ওদের বের করছি তাড়াতাড়ি করেন।পরে দেখা যাবে চলে আসবে।”

সবাই এবার বুঝতে পারে তুতুলের এতো হাসির কারণ কি?সবাই হেঁসে ফেললো।আকাশ তুতুলের হাতের দিকে উল্টো হতেই মট মট শব্দ হওয়া শুরু করে।নিচের হাড্ডি গুলো শব্দ করছে।আকাশ থেমে যায়।বলে,
“ শয়তান গুলোর অনেক বুদ্ধি।দেখো কেমন হাড় বিছিয়ে রেখেছে।এখন যদি বুঝতে পেরে উপরে চলে আসে??সত্যি মেরে দিবে।দেখনাই কেমন করে একজনকে সুট করে দিয়েছে।আমাদের এখনো করছে না কেনো আমি বুঝতে পারছি না।”
“ আকাশ ভাইয়া আগে হাত খুলুন।তারপর বুঝিয়ে বলবো কেনো মারছে না আমাদের।প্লিজ তাড়াতাড়ি করুন।আর আপনারা এখানে কিভাবে এসেছেন??কেনো এসেছেন??”

আকাশ দুঃখ প্রকাশ করে আহত হৃদয় নিয়ে বললো,
“ আর বলিও না।রিঝকে খুঁজতে খুঁজতে এদিকে চলে এসেছি।হঠাৎ দেখি কিছু লোক আমাদের ঘিরে ধরেছে।তারপর ধরে নিয়ে এসেছে।পোশাকের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উপরে নিয়ে এসেছে।কাহিনী কিছুই বুঝলাম না।আর চোখ বেঁধে নিয়ে এসেছে আমাদের।তাই রাস্তাও চিনলাম না।এখন বের হবো কিভাবে??”

তুতুলের রিঝের কথা মনে পড়ে।এতো ঝামেলার মাঝে সে রিঝের কথাই ভুলে গেছে।উত্তেজিত হয়ে তুতুল বললো,
“ রিঝ ভাইয়া কই??”

রামিম বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,
“ এখনো ভাইয়া ডাকছো??কিছুক্ষণ আগে না অনেক খুশি ছিলে তোমার বিয়ে নিয়ে।তাহলে বুঝতে পারছো না কেনো তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।আর ভাইয়া ডাকবে না।অন্য কিছু ডাকো।”

তুতুল ভারী অবাক হয়ে বললো,
“ অন্য কি ডাকবো??আর উনি তো আমার আগে থেকেই ভাইয়া।আমি এখন নতুন করে কি ডাকবো??আর এই বিয়ে আমরা মানি না।আপনি তো জানেন?”
“ বেশি কথা বললে খুলবো না হাত।এতো কষ্ট করে হাত খুলছি আর তুমি সব ভেস্তে দিতে চাইছো?সমস্যা কি তোমার??ওরা যদি শুনে তুমি তোমার হাজবেন্ডকে ভাইয়া ডাকছ তখন কি হবে বুঝতে পারছো??” আকাশ রামিমকে লুকিয়ে চোখ মারে।রূমাশ্রীও দেখে।মুখটা তার হা হয়ে গেছে।এরা সিরিয়েস সময়েও মজা করে??কিভাবে সম্ভব??এদের কি ভয় ডর নেই??রূমাশ্রীকে আরো বিস্মিত করে সবাই তাল মিতাতে শুরু করলো।তুতুল কনফিউজড হয়ে বললো,
“ আচ্ছা আচ্ছা।এখান থেকে যাওয়ার পরে না হয় ভাইয়া ডাকবো।এখন উনাকে কি ডাকবো??বলেন??”
আকাশ বললো,
“ ও গো,জানু,জান,পাখি,ময়না, ভালোবাসা সব ডাকতে পারো শুধু ভাইয়া বাদে।

তুতুল নাক ছিটকে বললো,
“ ছিঃ।এগুলো ডাকা যাবে না।এখন এসব বাদ দেন।যখন ডাকার ডেকে নিবো।আপনি হাত খুলুন।”

আকাশ বহু কষ্টে হাত খুলে।হাত খোলা পেয়ে তুতুল দ্রুত পায়ের দড়ি খুলে নেয়।তারপর সবারটা খুলে দেওয়া শুরু করে।
______________________
ছোট এতটা পাথর ছুড়ে মারতেই কারেন্টের দৌড়ে বেড়ানো লক্ষ করলো রিঝ।তার কাঁটার তৈরি বর্ডার দেখেই তার সন্দেহ হয়েছিলো।তাই পাথর মেরে বুঝার চেষ্টা করছিলো।মং নামের ছেলেটা রিঝকে নিচু গলায় নিজেদের ভাষায় বলল,
“ স্যার দেখলেন কারেন্ট আছে।আগেই বলেছি।ভাগ্যিস বলেছি তা না হলে আপনি তো আজকে মরতেন।”

রিঝের সাথে কয়েক ঘন্টা আগেই মং নামক এই ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে।রিঝ যখন ছন্নছাড়া হয়ে এদিক ওদিক দৌড়ে তুতুলকে খুঁজচ্ছিলো ছেলেটা তখনই রিঝের মুখটা চেপে ধরে।পাতলা শরীর হওয়ায় রিঝ তাকে এক হাতেই টেনে ইচ্ছা মতো মারে।বেঁচারা প্রচুর মার খেয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।পরে অনেক কষ্টে বুঝায় সে ভালো।এদের দলের না।সাহায্য করতে চায়।রিঝ তখন থেকেই ওর কথা মতো ঘুরছে।খুব গোপনে রিঝকে সে শান্তিবাহিনীর আস্তানায় নিয়ে এসেছে।রিঝ চোখেমুখে একটা বিস্ময় নিয়ে মারমা ভাষায় প্রশ্ন করলো,
“ তুমি এতো কিছু জানো কিভাবে??তুমি কি ওদের হয়ে কাজ করতে??”

মং হাসলো।সে মারমা ভাষা বাদে অন্য কোনো ভাষা পারে না।কারণ এই এরিয়ার বাহিরে সে কখনোই যায়নি।পোশাকেও সে পুরো দমে মারমা প্রকাশ পাচ্ছে।ভাগ্যিস রিঝ মারমা ভাষা পারে।তা না হলে কিছুই বুঝতে পারতো না।মং বলল,
“ আমার বাবা একজন শান্তিবাহিনীর সদস্য।তাই আমরা পাশেই থাকি।কিন্তু এদিকে আগে কখনোই আসা হয় নি।আজই প্রথম।কিন্তু আমি সব জানি।”
“ কিভাবে?”
“ বাবার কাছ থেকে শুনেছি।”
“ তুমি আমাকে সাহায্য করতে চাও কেনো??” রিঝ নিচু কন্ঠে জানতে চাইলো।
“ জানি না।মনে হচ্ছে আপনি ভালো মানুষ তাই করছি।কিন্তু আপনি কাকে খুঁজতে এসেছেন??সেটা তো বললেন না।”

রিঝ কিছু সময়ের জন্য থেমে থাকে।সামনে তাকিয়ে দেখে তিন তলা বিশিষ্ট সেই বাড়িটি।এখানেই কি আছে সে??না কি এখানেও নেই??একেবারে হারিয়ে ফেললো না তো??ভয়ের একটা দাপুরে বাতাস বয়ে গেলো রিঝের হৃৎপিন্ড জুড়ে।রিঝ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ আমার বউকে খুঁজতে এসেছি।কাল সন্ধ্যা থেকেই পাচ্ছি না।”
“ কিভাবে বুঝলেন এদের কাছে আপনার বউ??”
“ মন বলছে।কারণ আমি পুরো জঙ্গল খুঁজে নিয়েছি তোমার সাথে।শুধু এই অংশই বাকি।”
“ তাহলে চলেন ভিতরে যাই।বউ খুবই গুরুত্বপূর্ন্য জিনিস।” বলেই মং হাসতে লাগলো।রিঝ লক্ষ করলো ছেলেটা ঢুলে ঢুলে হাসে।ভারী অদ্ভুত!সেও হাসলো।
“ কিন্তু কি ভাবে যাবো??এই যে দেখাযাচ্ছে সব প্রহরী।উপর থেকেই আমাদের দেখে নিবে।তাই অন্য কিছু ভাবতে হবে।এই জায়গা দিয়ে তো ভুলেও যাওয়া যাবে না।”
“ সেটা এমনেও যাওয়া যাবে না।কারণ এই কাঁটা তার।কিন্তু আমার কাছে অন্য বুদ্ধি আছে।আমি ভিতরে যাওয়ার অন্য পথ চিনি।”

রিঝের বুক চিরে চিরো শান্তির একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।সে বললো,
“ কি দ্রুত বলো।অতো সময় নেই।”
“ সুরুঙ্গ পথ।”
“ হোয়াট!!” রিঝ মৃদূ শব্দ করেই বললো।ছেলেটা দ্রুত বললো,
“ আস্তে বলুন।”
রিঝ কন্ঠ নিচু থেকে আরো নিচু করে নিয়ে বললো,
“ স্যরি।কিন্তু কিভাবে??”
“ আমি যানি।এটা গোপন পথ।পাতালঘরের দিকে যায় এই পথ।এই যে কাঠের বিল্ডিং দেখছেন??এটা কিন্তু পাঁচতলা।দেখে মনে হচ্ছে তিনতলা।দুইতলা মাটির নিচে।এটা কেউ ভুলেও বুঝবে না এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে।সুরুঙ্গ পথ একদম মাটির গভীরে করা হয়েছে।যাতে হামলা করলে দ্রুত পালাতে পারে।আমরা ওই পথ ধরে যাবো।তবে সাবধান ধসে পড়তে পারে।আর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে।চলুন।”
রিঝ তাচ্ছিল্য করে হেসে উঠে বলল,
“ এই মুহূর্তের কষ্টের চেয়ে বেশি হবে না।আমি জানি।”
_____________________
তুতুলের মাথায় যে এতো বুদ্ধি আছে এরা রামিম আকাশ এমনকি আসমাও ভাবেনি।খুব সচেতন ভাবে সে সবাইকে বাঁধন থেকে মুক্ত করে দিয়েছে।রামিম ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।আকাশ নিজের ফোন বের করে ব্যর্থ নেটওয়ার্ক পাওয়ার চেষ্টা করছে।আসমা বার বার বলছে,ত্রিপল নাইনে কল করতে।তার ধারনা পুলিশ এসে বাঁচাবে।তুতুল হাড় গুলো দেখছে।কি ভয়ঙ্কর ভাবে আলাদা করেছে?ভাবতেই তার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে পড়ছে।শরীর জুড়ে ভীতি তৈরি হচ্ছে।একটা সময় তুতুল বললো,
“ এবার বের হতে হবে।কিন্তু কিভাবে হবো ভাবছি।”
“ কিভাবে আর সিঁড়ি বেয়ে।” আকাশের কন্ঠ সহজ।

রামিম বিরক্তি নিয়ে বললো,
“ তুই গাধা জানতাম।কিন্তু এতো বড় আজ জানতে পারলাম।আহাম্মক একটা।”
“ কেনো আমি কি করলাম??” আকাশের ভারী ইনোসেন্ট গলা।
“ কি আর করবি??সিঁড়ি দিয়ে নামলেই তো ধরা খাবো।”

তুতুল নিজের কন্ঠ খাঁদে নামিয়ে বললো,
“ আস্তে কথা বলুন।অন্য পথ খুজে বের করুন।”
“ কিভাবে সেটাই বুঝতে পারছি না।” আসমা কথাটা বলতে বলতে পিছনে গিয়ে ঠেসে দাড়ায়।সাথে সাথে একটা কঙ্কাল ঝুলে পরে।চিৎকার করে উঠতেই রামিম মুখটা চেপে ধরে।তুতুল নিজেও ভয় পায়।নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরে।কঙ্কালটার সাথে একটা জানালাও খুলে গেছে।সবার চোখেমুখে আলো পড়তেই সেটা টের পায় সবাই।তুতুল জানালা দিয়ে মুখটা বের করে দেখে দূরে কাঁটা তারের বেড়ি গেট।মনে মনে ভাবে নিচে নামতে পারলেই তো হলো।তার টপকে বের হয়ে যাবে।কিন্তু কিভাবে নামবে??রামিম আর আকাশও দেখে।তারা ঠিক করে আগে নিচে নামবে।তারপর মেয়েদের এক এক করে নামাবে।লাফ দিলে তারা দু’জন এক সাথে ধরবে।এর চেয়ে ভালো আর কোনো উপায় খুজে পেলো না কেউই।রামিম প্রথমে নামবে।কাঠের মধ্যে খানে একটু একটু জায়গা খালি আছে।রামিম নিজের জুতো খুলে নেয়।খালি জায়গা গুলোতে পা রেখে নিচে নেমে যাবে সে।জানালার কাছে আসতেই খটখট শব্দ হলো।সবাই দরজার দিকে তাকালো।নিচ থেকে কেউ আসছে।সবাই কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।তুতুল চারপাশে তাকিয়ে দেখলো কিছু হকস্টিক আছে।দ্রুত সে একটা হাতে তুলে নিলো।বাকিরাও নিলো।দরজার পিছনে এসে দাড়ালো তুতুল।আজ সে প্রচন্ড ভাবে অবাক করছে সবাইকে।তার এতো কাহিনী দেখে আকাশ রামিমের তো অবস্থা খারাপ।তারা ভেবেই পাচ্ছে না এতো বুদ্ধি কোথা থেকে এসেছে?দরজা খুলতেই তুতুল স্টিক উপরে তুলে নেয় মারতে কিন্তু তার আগেই কেউ স্টিকটা শক্ত করে ধরে নেয়।তুতুল সামনে তাকিয়ে দেখে রাজন।লোকটাকে দেখলেই তুতুলের মাথা গরম হয়ে যায়।রাজন হাসতে লাগলো।রামিম আকাশ অনেক চেস্টা করে ও এতো লোকের হাত থেকে বাঁচতে পারলো না।হাতাহাতিতে তাদের অনেক ব্যথা লেগে যায়।রাজন কঠিন গলায় হুকুম দিলো,
“ এদের সবাইকে পাতাল ঘরে নিয়ে যাও।তবে আপনাদের বুদ্ধি আছে বলতে হবে।এতোক্ষণ বেঁচে আছেন কারণ এই মেয়েটা।উনার কাছের মানুষ তাই বাঁচিয়ে রেখেছি।যদিও বা খুন করতে আমার হাত কাঁপে না।তবুও উনার জন্য ছাড় অফার চলছে।আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করবেন না।”

আকাশ চিৎকার করে বললো,
“ কুত্তা তোরে দেখে নিবো।জানোয়ার একটা।ছাড় বলছি।”

রাজন ছ্যৎ করে জ্বলে উঠে বললো,
“ তোরে সম্মান দি বলে কি মনে করছস??আমি তুই করে বলতে পারি না??শালা তোদের কি আমারে পাগল মনে হয়??এই মুহূর্তেই খুন করে দিবো।দুই সেকেন্ডও লাগবে না।”

রামিম কিছু বলতে যাবে তার আগেই দুই পাশের গাল চেপে ধরে রাজন বলল,
“ চুপ কর তা না হলে লাশ একের পরে এক পড়বে।”
“ ওই কুত্তা তুই চুপ কর।ফাইজলামি পাইছস তুই??আমি বলছি না আমার বিয়ে হয়ে গেছে।তবুও পিছে পড়ে আছস ক্যান??যেইতে দে।”

নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে তুতুল উজ্বল তেজে বললো।রাজন হাসলো।তুতুলের দিকে চেয়ে থেকে বলল,
“ আপনাকে বাঘিনীর মতো লাগছে এখন।”

রাগে শরীর রি রি করে উঠলো তুতুলে।এই লোকটাকে সে সহ্য করতে পারছে না।দেখা মাত্রই যেনো শরীরে বিদ্যুৎ দৌড়ে বেড়ায়।নরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ!হাতটা ঝাঁকিয়ে তুতুল চিৎকার করে বলল,
“ হাত ছাড়েন।ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।টাচ করলে খুন করে দিবো কিন্তু।”

রাজন সম্রাট আবার হাসলো।প্রেতের মত শুনালো সেই হাসি।বলল,
“ ভালো তো কিছুই হচ্ছে না।আপনাকে দেখার পর থেকেই কিছুই ভালো হচ্ছে না আমার সাথে।শিকার করতে গিয়েছিলাম।নিজেই শিকার হয়ে ফিরে এসেছি।রাজনকে শিকার করার ক্ষমতা যার আছে তাকে তো হেলাফেলা করা যাবে না।তাই তো আপনাকে আমার রাজ্যে নিয়ে এসেছি।”
“ এই লোক আপনি কি পাগল??মাথা ঠিক নেই আপনার।আমি বিবাহিত।কয়বার বলতাম?আমার হাজবেন্ড আছে।উনি আসলে কিন্তু আপনার কপালে দুঃখ আছে।খুন করে দিবে আপনার রাজ্যে এসে আপনাকেই।”

লোকটি এবার মুখে ভয়াত্নক চাহনী টেনে বলল,
“ ওহ ভয় পেয়েছি।আপনার এই বড় চোখ জোড়াকে আমি বড্ড ভয় পাই।সাথে একটা অদ্ভুত প্রেম প্রেম জাগে।যা প্রতিরাতে দুটি সুন্দরী মেয়ের সাথে ঘুমিয়েও আমার হয় না।আই রেইলি রেইলি লাইক ইউর আইস।”

তুতুলের এখন ইচ্ছে করছে লোকটির মাথা ফাটিয়ে দিতে।অন্য কেউ তার চোখ সুন্দর বললে সে মনে মনে হয় তো খুশি না হলেও বেজার হত না।কিন্তু এই লোকটি যখন থেকে তার তারিফ করছে তখন থেকেই শরীর ঘিন ঘিন করছে।মনে হচ্ছে কেউ শরীরে সাপ ছেড়ে দিয়েছে।সাপের সেই পিচ্ছিল শরীর তার শরীর বেয়ে নামছে উঠছে।বিষাক্ত মনে হচ্ছে সব।তুতুল এবার নিজের সব শক্তি দিয়ে রাজনের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়।রাজন সাথে সাথে চমকে উঠে হাত সরিয়ে নেয়।তুতুল রাজনের পায়ে লাথি মারে।ছুটে পালাতে চেয়ে ধরা পরে রাজনের লোকেদের কাছে।রাজন নিজের পা ধরে ব্যাথায় মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে চেঁচিয়ে সবাইকে সাবধান করে বলল,
“ উনার গায়ে হাত দিবি না কেউ।হাত কেঁটে রেখে দিবো।”

কেউ ধরলো না।রাজনের কথায় দু’জন মেয়ে উপরে উঠে আসলো।সবাই হতভম্ভ হয়ে দেখছে সব।এখানে কত লোক মোট কাজে নিযুক্ত আছে সেটা বুঝতে পারছে না কেউই।কিন্তু বড় ঝামেলায় ফেঁসে গেছে সবাই এটা বুঝতে পারছে।তুতুলকে ওই মেয়েগুলো টেনে হিচরে নিয়ে যায় পাতাল ঘরের দোতলায়।আর আকাশ রামিম রূমাশ্রী আসমাকে নিয়ে যাওয়া হয় নিচের তলায়।সবার মুখ বেঁধে দেওয়া হয়েছে।চোখ বেঁধে দেওয়া হয়েছে।তুতুলের হাত পা মুখ সব খুলে দেওয়া হয়েছে রুমে নিয়ে এসে।রুমটা রাজকিয়।বলাবলি করতে শুনেছে এটা রাজনের রুম।আসার পর থেকেই সে আপ্রান চেস্টা করছে বের হবার।সবাইকে খোঁজার।বার বার বলছে সবাইকে এক সাথে রাখার জন্য।কিন্তু তাকে আটকে রেখে সবাই চলে গেছে।কিছুক্ষণ পরে দুইজন মেয়ে এসে তার রুমে বসলো।কোনো কথা বলছে না।তুতুল অনেক প্রশ্ন করে।কিন্তু কোনো জবাব পায় না।মেয়েগুলো রোবটের মতো বসে আছে।এদিক সেদিকও তাকাচ্ছে না।তুতুল এবার মেঝেতে হাত পা ছুড়ে কান্না জুড়ে দিয়েছে।তার চোখে কোনো রাস্তাই পড়ছে না।সব এলোমেলো লাগছে।চোখের পর্দা ঠেকরে বেরিয়ে আসছে অজস্র জল কণা।সমুদ্র যেনো তার চোখের পর্দার আড়ালেই লুকিয়ে ছিলো।
_____________________________
কাঠের ঘর জুড়ে রক্তের আঁশটে গন্ধ।চারজনেরই চোখ বাঁধা।দেখছে না কিছুই।তবুও অনুভব করতে পারছে ঘরে এক ফোটাও রোদ ঢুকার জায়গা নেই।সব দিকে বিষাক্ত গন্ধে ঝিম ধরে আছে।পিন পিনে নিরবতা।রূমাশ্রীর ফোঁপানোর শব্দ ভাসছে।সে ভয়ে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে।কেউ কথা বলতে পারছে না।কথা বলার কোনো ব্যবস্থাই নেই।কারণ হাত পা চোখের সাথে মুখটাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।সবার ঘন শ্বাসের শব্দ দৌড়ে বেড়াচ্ছে কাঠের কোণায় কোণায়। যেনো মাঝ সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।অথৈ পানিতে সবাই সাঁতড়াচ্ছে।কিন্তু গতি মিলছে না।নিচে ছুড়ে পেলেছে সবাইকে।তাই মেয়েরা বেশি ব্যথা পেয়েছে।ছেলেদের শরীর শক্ত হয়।মেয়েদের চেয়ে তারা শক্তি এবং কঠরোতায় এগিয়ে।তাই ছেলেদের তেমন লাগেনি।কিন্তু আসমা এবং রূমাশ্রীর লেগেছে অনেক।কিন্তু কিছুই করার নেই।যেখানে বাঁচার চাঞ্চই খুঁজে পাচ্ছে না সেখানে ব্যাথার নিরাময় কোথায় পাবে?আসমার তো মনে হচ্ছে এই ঘরে অক্সিজেনও খুব কম।কারণ সে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করছে।বার বার মনে হচ্ছে শ্বাস রোধ হয়ে আসছে।যেনো গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।আসমা নিজের জীবনের কঠিন অধ্যায়েক কথা ভাবতে শুরু করেছে।তার বাবা আছে।কিন্তু মা মারা গেছে ছোট বেলায়।বাবা মায়ের মৃত্যুর তিন নাম্বার দিনই বিয়ে করেছিলো।তখন সে সবে মাত্র সপ্তম শ্রেনীতে উঠেছে।কিন্তু অনেক বুঝের বয়স সেই বয়স।গণনায় ছোট হলেও বয়স প্রচুর বুঝার।তখন সেও বুঝেছিলো তার জীবনের সেই আদুরে আরামের সময় ফুঁরিয়ে এসেছিলো।হারিয়ে গিয়েছিলো চির ভালোবাসার লাল রং টুকু।তার মা ছোট বেলায় বলতো যে তাকে খুব ভালোবাসবে সে তার মাঝে মায়ের মতো যত্ন খুঁজে পাবে।সত্যিকারের ভালোবাসা আসবেই একটা সময়।কিন্তু এই সত্যিকারের ভালোবাসা প্রচুর সময় নেয়।ঠিক সময় করে আসে না।যখন খুব প্রয়োজন তখন আসে না।উল্টো হারিয়ে যায়।যেমন তার মা হারিয়ে গিয়েছিলো।সবে মাত্র বন্ধুত্ব হয়েছিলো সেই মা বলে ডাকা মানুষটার সাথে।মেয়েদের মায়ের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার সবচাইতে পরিপক্ক সময় হচ্ছে বয়ঃসন্ধির সময়টা।তখন পৃথিবীকে মায়ের চোখ দিয়ে নতুন করে শিখা হয়।নতুন করে সব জানা হয়।মায়ের হাত ধরে পারি জমাতে হয় মায়ের মতো প্রাপ্ত বয়সে।বড় হয়ে উঠার আগ্রহ আরো প্রবল করে মা।বুঝাতে শিখায় তুমি যা করছো তা ভুল।আবার সাপোর্ট করে বুঝাতে শিখায় তুমি যা করছো তাই ঠিক।এগিয়ে যাও নিজের লক্ষে।আমি আছি তোমার ক্ষুদ্র হাতে বড় দায়িত্বরের ভার তুলে পৃথিবী চিনিয়ে দিতে।চিন্তা কিসের আমার সোনা।ঠিক সেই সময়টাই সে তার মাকে হারিয়েছিলো।তারপর সৎ মায়ের অদ্ভুত আচরনের মাধ্যমে নতুন দুনিয়াকে খুঁজে পাওয়া।নতুন করে ভাবতে শিখা।তুমি একা।নিজেই নিজের সঙ্গী তুমি।সবাই চাইলেই মা হয়ে উঠতে পারে না।পৃথিবীর সব মা তোমার না।শুধু তোমার মাই তোমার মা।তখন থেকে নিজেকে গুছিয়ে আবার এগিয়ে চলা।বাবার অনেক টাকা তার।টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে তার বাবা।কিন্তু সময়ের পাহাড়টাই সময়ের তালে তালে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ছিলো।দশম শেষ না করতে করতে বিয়ের জন্য চাপ শুরু করা হয়েছিলো তার উপরে।কারণ বংশের নিয়ম আঠারো হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে।কি অদ্ভুত নিয়ম বংশের তৈরি হয়।ভাবতেই হাসি পাচ্ছে আসমার।কিন্তু তখন হাসি পায়নি।তখন সে খুব কেঁদেছিলো।শেষে না পাড়তে বিয়ের দুইদিন আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে খালামনির বাসায় চলে গিয়েছিলো।খালামনি অনেক ভালোছিলো।পড়াবে বলেছিলো।কিন্তু বাবা এসে তাকে আবার নিয়ে গেলো।তিনবার বিয়ে থেকে পালানোর পরে তার বাবা তাকে পড়তে দিয়েছে।তখন থেকেই আসমা একটু ছেলে ছেলে স্বাভাবের।যখন তখন ছেলেদের গায়ে হাত তুলে ফেলে।অল্পতেই রেগে আগুন হয়।তাই তার কোনো মেয়ে বন্ধুও ছিলো না।ভার্সিটির শুরুর দিকে রিঝ নামক এই ছেলেটাকে তার দারুন লাগতো।তাই আগ বাড়িয়ে বন্ধু হতে চাইলো।কিন্তু রামিম ছেলেটা একদম তাকে পাত্তা দিতো না।পরে পরে বন্ধুত্ব হলো।পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেছিলো এই টিমকে।এদের সাথে তাল মিলিয়ে ঘুরা।আড্ডা মাস্তিতেই জীবন চলছিলো।মাঝে একবার মনটাও ভেঙ্গে গেলো।মায়ের কথা মতো কোনো ভালোবাসাই সে খুঁজে পেলো না।রিঝ যে অন্যের সত্যি কারের ভালোবাসা সেটাও বুঝা হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু খারাপ লাগলো না।হিমেল কয়েকদিন যত্ন করে হোস্টেলে দিয়ে আসতো।তা থেকেই ওকে ভালো লাগে।মনে হলো সেই মায়ের বলা ভালোবাসা।এই বুঝি পেয়ে গেলো।তাইতো হিমেল একবার বলাতেই রাজি হয়ে গেলো।কিন্তু সময়ের তালে তালে তার এখন মনে হচ্ছে হিমেলও তার আসল ভালোবাসা না।সত্যি কারের ফিলংসটা খুঁজে পাচ্ছে না।আর সবচাইতে ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটে গেলো এই কয়েক দিনে।রামিমের মতো গোঁজা,কথায় কথায় যে তার ভুল ধরে,তাকে অপছন্দ করে,তার জামা কাপড় পড়া নিয়ে বকবক করে জ্ঞান দেয়।যে ছেলে তার জ্বর হয়েছে বললেই দেয়াল টপকে রুমে এসে ঠান্ডা পানি গায়ে ঢেলে দেয়,সব সময় প্রচন্ড বিরক্তি প্রকাশ করে তার জন্য সে এসে এখন পড়েছে তার জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপুণ্য জায়গাটায়।দখল করে নিয়েছে নিয়তীর সবচাইতে অনুভুতি পূন্য জায়গাটা!!আসমার গাল বেয়ে পানি পড়ছে।তার বড্ড মনে পড়ছে নিজের মায়ের কথা।কত দিন পরে আজ তার নিজের মায়ের কথা মনে পড়ছে!ভাবতেই অবাক হচ্ছে সে।হঠাৎ পায়ের নিচে ধাক্কা অনুভব হচ্ছে।আসমা পিলে চমকে উঠে।ভয়ে আতঙ্কে হু হু শব্দ করে নিজেকে ছাড়াতে চায়।ধাক্কা আরো জোড়ে আসে।আসমা সরে পিছিয়ে যায়।অনেক জোড়ে একটা ধাক্কা মেরে উপরের ঢাকনাটা খুলে ফেলে রিঝ।তারপর জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।দু হাত কাঠের মেঝেতে রেখে তাতে ভর দিয়ে লাফিয়ে উপরে উঠে আসে।তার পিছনে পিছনে মং নামক ছেলেটাও আসে।হাটুতে হাত দিয়ে রিঝ শ্বাস নিচ্ছে।দমটা যেনো এতক্ষণ বন্ধ ছিলো।এই পৃথিবীর সবচাইতে বড় নেয়ামত অক্সিজেন থেকে সে এতসময় দূরে ছিলো।ভাবতেই তার ইচ্ছে করছে যত পারছে তত অক্সিজেন নিজের মাঝে সঞ্চয় করে নিতে।মানুষ হারানো জিনিসের মূল্য বেশি বুঝে।কাছে থাকলে বা খুব সহজে পাওয়া জিনিস গুলোর মানুষ মুল্য দিতে পারে না।অক্সিজেন তেমনই একটা জিনিস।মাটির অনেক নিচে হওয়াই শ্বাস ভালো করে নেওয়া যায় না।অনেক কষ্ট হয় শ্বাস নিতে।অক্সিজেন কম অনেক।কিন্তু একদম নেই এমন না।তাহলে তো আজ মারাই পড়তো তারা।রিঝ ঘাড় সোজা করে একবার রুমটার দিকে তাকালো।অন্ধকারে কিছু বুঝা যাচ্ছে না।তাই আগে সে রুমের লাইটিং ব্যবস্থা আছে কি না তা খুঁজে বের করেতে শুরু করলো।ব্যবস্থা নেই।কিন্তু একটা টচলাইট আছে।রিঝ সেটা হাতে তুলে নিলো।নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।প্রবাদটা সে একবার ভারী হয়ে আসা ঠোঁট নেড়ে উচ্চারণ করলো।তারপর লাইট মেরে চারপাশ দেখেতে শুরু করলো।হঠাৎ সবাইকে দেখে সে চমকে তাকালো।আশ্চর্য চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।খুঁজতে এসেছে একজনকে এরা সবাই এখানে কি করছে??রিঝ নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।নিজেকে সামলে নিয়ে সে রামিমের চোখটা আগে খুলে দেয়।তারপর এক এক করে সবার চোখ খুলে দেয়।সবাই রিঝকে দেখে খুঁশিতে আত্নহারা।একেই বুঝি বলে মৃত্যু একদম গা ছুঁয়ে বেড়িয়ে যাওয়া।রিঝের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।সাথে চাপা আনন্দও হচ্ছে।মনে মনে খুশিও হচ্ছে ভাগ্যিস এসেছে তা না হলে সবাইকে হারাতো।রিঝ এবার মুখে গাম্ভীর্য্যের রেখা টেনে বলল,
“ তোরা কি পাগল??নিজেদের জীবনকে নিয়ে খেলছিস কেনো??আমার পিছনে পিছনে আসতে নিষেধ করার পড়েও কেনো পিছনে পিছনে এসেছিস??কেনো বসতিতে ফিরে গেলি না??তোরা বুঝতে পারছিস কিসে ফেঁসে গিয়েছিস??আমি যদি না আসতাম??মং এর সাথে যদি আমার দেখা না হতো??তখন কি হতো?? Believe me, all of you want to slap me one by one. All of you are uncivilized.”

রিঝ কড় কড় করে আরো কিছু কথা শুনিয়ে দিলো সবাইকে।সব রাগ ঝাঁড়তে শুরু করেছে।পারলে এখনি মারবে।মং কিছুক্ষন পর পর আস্তে আস্তে কথা বলতে বলছে।রামিম মুখ দিয়ে বার বার শব্দ করছে।রিঝ বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,
“ এমন শব্দ করছিস কেনো??সমস্যা কি??এতো প্রশ্ন করলাম একটারও জবাব দিচ্ছিস না কেনো তোরা??”

সবাই এবার মুখের দিকে ইশারা করলো।রিঝ বুঝতে পারলো সে বোকার মতোই প্রশ্ন করছে।ওদের সবার মুখ তো বাঁধা।দ্রুত সবার মুখের কাপড় সরিয়ে দিলো।সবাই হুমড়ি খেয়ে শ্বাস নিতে শুরু করলো।রামিম রিঝকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ তুই সত্যি আমাদের প্রানের দোস্ত।”

আকাশ জড়িয়ে ধরে বললো,
“ তাই তো তোকে এত্ত গুলো আই লাভ ইউ।”

রিঝ সাথে সাথে নাক ছিটকে বললো,
“ ছিঃ রাবিস।তোদের লাভের ভান্ডা নিয়ে ফুট এখান থেকে।আমি এখানে নিজের প্রান বাঁচাতে এসেছি।তোদের প্রান না।কিন্তু তোরা সামনে পড়ে গেলি।কি আর করার যা বাঁচিয়ে দিলাম।বেঁচে থাকলে বিনিময়ে ট্রিট দিছ।”

রূমাশ্রীকে দেখেই রিঝ বলল,
“ তুমিও এদের চক্করে ফেঁসে গেছ!!স্যরি সব কিছুর জন্য।যাও দ্রুত বের হও।আমি আসল জনকেই খুঁজে পেলাম না।”

শেষের কথাটা আর্তনাদের মতো শুনালো।আসমা নিজের পায়ের শেষ বাঁধন খুলে নিতে নিতে বলল,
“ তোর প্রান দোতলায়।এই ঘরের উপরের তলায় আছে ও।ওই শয়তান রাজন বেঁধে রেখেছে।”

রিঝ তরিৎ গতিতে তাকালো।বলল,
“ রাজন কে??আর তুতুল এখানে আছে??সত্যি বলছিস??”
“ মজা করতে যাবো কেনো?এখন আমরা সবাই সিরিয়াস।সিরিয়াস সময়ে মজা করার সময়ও নেই আমাদের।চল তুতুলকে বাঁচাই তারপর সবাই মিলে এক সাথে যাবো।” আসমা উঠে দাঁড়ায়।রিঝ মংকে তাদের ভাষায় কিছু বলল।তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ সবাই এখানে কিন্তু আমার তুতুলকে আলাদা রেখেছে কেনো??”

আকাশ এই মুহূর্তেও রসিয়ে রসিয়ে বলল,
“ কেনো আবার,তুতুল পাখিকে সম্রাজ্ঞী বানাতে চায় সে।”

রিঝ হিংস্র হয়ে উঠে মুহূর্তেই।শরীর যেনো কেঁপে কেঁপে উঠছে তার।হাতে জমেছে রক্ত।সেই রক্তে আবার চাপ প্রয়োগ করে সে রক্ত ঝড়াতে শুরু করেছে।আকাশ থীত হয়ে বলল,
“ রাজন হারামজাদা আমাদের তুতুলের প্রেমে হাবু ডুবু খাচ্ছে।তাকে না কি বিয়ে করবে।তাই আটকে রেখেছে।আমাদেরও তাই বাঁচিয়ে রেখেছে।কারন আমরা তুতুলের কাছের মানুষ।সে ভেবেছে আত্নীয়।চল ওকে বাঁচায়।”

রিঝ হঠাৎ করেই পর্বের থেকে কঠিন হয়ে উঠে।শক্ত কন্ঠে বলল,
“ তোরা সবাই মংয়ের সাথে যাবি।তুতুলকে নিয়ে আমি আসছি।”

রামিম আতঁকে উঠে বলল,
“ পাগল হলি না কি??তোকে ছাড়া যাচ্ছি না।আগেই বলছি।আর ওরা ভয়ংকর অনেক।একা থাকা রিস্কি।”
“ সেটা আমি বুঝে নিবো।তোরা বুঝার চেষ্টা কর সবাই মিলে থাকা আরো রিস্কি।তাই প্লিজ যা।”
কেউ যেতে রাজি হলো না।রিঝ বুঝিয়ে বলতে বলতে হাপিয়ে উঠেছে।শেষে রিঝ বলল,
“ ঠিক আছে আমি ও এখন ধরা দিয়ে দি।সবাই এক সাথে মরি।কি বলছ??বাঁচার চেয়ে মরার ধান্ধা যদি তোদের বেশি থাকে তবে আমি রাজি।চল।”

রামিম এবার হার মেনে বলল,
“ ঠিক আছে যা।কিন্তু প্লিজ সেফলি ফিরে আসিস।তোদের না নিয়ে আমরা কেউ যাবো না।”

রিঝ হেসে বলল,
“ যেয়ে তো দেখ।সবাইকে বলে দিবো তুই আসমার হাজবেন্ড।

সবাই হেসে ফেললো।আকাশ রামিম আসমা রিঝকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ তুই যদি সময় মত না আসছ তবে আমরা আবার ধরা দিয়ে দিবো।তোরে ছাড়া বাঁচতে কষ্ট হবে।বহু বছর কষ্টে কষ্টে মরার থেকে একবারেই মরা ভালো।”

সবার এমন বাচ্চা বাচ্চা কথায় রিঝের খুব হাসি পেলো।মং তো কেঁদেই দিলো।সবার চোখেই পানি।রিঝ বাদে।সে কাঁদে না।এগুলো তাকে সুট করে না।রিঝ সবাইকে ঠেলে ঠুলে নিচে নামিয়ে দেয়।রামিম ঢাকনায় হাত দিয়ে আটকায়।তারপর রিঝের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ রিঝ আমি সত্যি তোরে অনেক ভালোবাসি।এটা কিন্তু সত্যি।”

রিঝ কাঁটা ভ্রু কুটি করে বলল,
“ তোর চরিত্রে সমস্যা আছে।সত্যি কইতাছি রামিম্মা।ডাক্তার দেখানো লাগবে আমি শিওর।”

রামিম আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো।রিঝ তার আগেই ঢাকনাটা বন্ধ করে দিয়েছে।রিঝ নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে নেয়।এলোমেলো হয়ে শার্টের ইনটা ভালো করে খুলে নেয়।দরজার দিকে দাড়িয়ে পরে।দরজা বন্ধ করা বাহির থেকে।কেউ না আসা পর্যন্ত সে যেতে পারবে না।তাই অপেক্ষায় আছে।কিছুক্ষণ আগের শব্দ শুনে নিশ্চিত কেউ না কেউ আসবে।

ঠিক কিছুসময় পরেই দরজা খোলার শব্দ হয়।রিঝ সচেতন হয়ে ধীরে হাতের স্টির দিয়ে খুব জোড়েই কাধে বাড়ি মারে।সাথে সাথে লোকটির মুখটাও চেপে ধরে।যাতে চিৎকার করতে না পারে।লোকটি সেন্সলেস হতেই রিঝ অন্ধকারে তার পোশাক পরিবর্তন করে নেয়।সবুজ পোশাক গায়ে জড়িয়ে নেয়।নিজের পোশাক নিচে পরে থাকা লোকটিকে পরিয়ে দেয়।তারপর খুব সাবধানে বেরিয়ে আসে।সব নিরাপত্তা টপকে রিঝ তুতুলের রুমের কাছে আসে।তার আগে সে আরো তিনটি রুমে ঘুরেছে।ভাগ্যিস এদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকার নিয়ম আছে।তা না হলে সে সত্যিই ধরা পড়ে যেতো।ঢাকা মুখে তাকে কেউই চিনলো না।দরজা বাহির থেকে লক করা ছিলো।খুলে ভেতরে ঢুকতেই মেয়ে দুটি এগিয়ে এলো।রিঝ কন্ঠে অদ্ভুত ভাব নিয়ে এসে বলল,
“ যেতে বলেছে তোমাদের।”
একটি মেয়ে বলল,
“ আমাদের তো বলা হয় নি।”
“ আমি এসেছি কেনো তাহলে??স্যার রেগে আছে যাও।কিসের যেনো আয়োজন করতে বলা হচ্ছে।যাও।”

রিঝ আসার সময় শুনে এসেছে রাজন চিৎকার করে কিসের যেনো আয়োজন করতে বলছে।সেটাই কাজে লাগিয়ে নিলো সে।যদিও সে রাজকে চিনে না।কিন্তু আশেপাশে ঘিরে থাকা লোকগুলোকে দেখে বুঝতে পেরেছে।মেয়েগুলো বেরিয়ে গেলো।তুতুল এলোমেলো হয়ে বসে ছিলো।কেঁদে সে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।নাক মুখ লাল করে ফেলেছে।চুল এলোমেলো হয়ে মুখের উপরে পড়ে আছে।তাকে দেখতে হলিউড মুভির কোনো এক ভুতুরে মানুষের থেকে কম লাগছে না।রিঝ দরজা বন্ধ করতেই তুতুল চিৎকার করা শুরু করে।কন্ঠ ছেড়ে বলতে শুরু করে,
“ আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন কেনো??কতবার বলবো আমার বিয়ে হয়ে গেছে।আপনি কিভাবে অন্যের ওয়াইফকে আটকে রাখতে পারেন??যেতে দিন।আমি বাসায় যাবো।কিন্তু আপনি কে??এখানে কেনো এসেছেন??ওই মেয়ে গুলো কই??কি চান??”

তুতুল অদ্ভুত সব ব্যবহার করছে।সাথে ভয়ে দরে সরে যাচ্ছে বার বার।হাতের কাছে যা পাচ্ছে ছুড়ে মারছে।রিঝ তুতুলের দু’হাত শক্ত করে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,
“ নিজের ওয়াইফকে নিয়ে যেতে এসেছি।অন্য কাউকে দিবো বলে তো আর বিয়ে করিনি।বিয়ে করতেও কষ্ট আছে।”

তুতুল হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে রিঝের দিকে।নিঃশ্বাস থেমে গেছে।চারপাশের উত্তপ্ত তাপ শীতল হয়ে গেছে।হৃদয়ের দহন নিভে গেছে।পরিবেশে হঠাৎ করেই সতেজতা ছড়িয়ে পড়ছে।তুতুল অবাক,বিস্মিত।সেই চেনা চোখ।কাঁটা ভ্রু!বহুল প্রতিক্ষিত মানুষটি তার সামনে!সত্যি তো!দম বন্ধ করে অস্ফুস্ট স্বরে সে বলল,
“ আপনি,রিঝ ভাইয়া!”কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৩১.🎈
@হাফসা আলম
_____________________________
তুতুল রিঝকে অবাক করে দিয়ে খুব শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে।তার দুটি হাত রিঝের গলা পিঠ জড়িয়ে আছে।বুকের সাথে একদম মিশে গেছে।এমন নয় যে তুতুল আগে কখনোই জড়িয়ে ধরেনি।ধরেছে।কিন্তু অনুভুতিটা ছিলো সাধারণ।যেমনটা সব সময় তুতুল আশেপাশে থাকলেই ফিল হয়।কিন্তু আজ সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছে।যে অনুভুতির কোনো নাম নেই রিঝের কাছে।কোনো প্রকাশের ভাষা নেই।শুধু আছে অনুভবে ডুবে থাকার অনুভুতি।পাগল করা অনুভুতি।যাতে সে ডুবে থাকতে চায় প্রতিটি মুহূর্ত।মনে হচ্ছে হাওয়া বইছে,তীব্র বাতাসে তার শার্ট,চুল উড়ছে।এলোমেলো করে দিচ্ছে তার সব।মনের ভেতরে উথালপাথাল হচ্ছে।চোখ গুলো কেমন যেনো ঘোলা ঘোলা হয়ে যাচ্ছে।ধুক ধুক করে বাড়ছে হৃৎপিণ্ডের গতিবিধী।ঝুমঝুম করে হানা দিচ্ছে অদ্ভুত আনন্দ।রিঝ কি পাগল হয়ে গেছে??ও না,পাগল তো সে আগেই ছিলো।কিন্তু আজকে মনে হয় আরো ভয়ংকর কিছু হচ্ছে।শিরশির করে ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে গেলো মেরুদন্ড বেয়ে।শ্বাস নালি দিয়ে প্রশান্তির শ্বাস উঠানামা করছে তার।রিঝ দু হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয় তুতুলকে।বুকের মাঝে ছোট হয়ে তুতুল ডুবে আছে।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ।তুতুল চমকায়।পিছনে তাকাতে চায়।রিঝ আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।তুতুল ফিরে তাকাতে পারে না।রিঝ চোখ বুঝে শ্বাস নিচ্ছে।তার শ্বাসের শব্দ তুতুল উপলব্দি করতে পারছে।সাথে ভয়ে কাঁপছে শরীর।এখন তো পালানো উঁচিত।কিন্তু রিঝ এভাবে জাপ্টে আছে কেনো??তুতুলের ভয় আরো বাড়িয়ে দিয়ে রাজনের কন্ঠ কানে আসে।সে হুংকার দিয়ে বলে উঠে,” কে তুমি??এখানে কি করছো??কিভাবে এসেছো??তোমার সাহস কিভাবে হয়েছে উনাকে জড়িয়ে ধরার??তোরা দাড়িয়ে দেখছিস কি??উনাকে টেনে নিয়ে আয়।আমার জিনিসে হাত দেওয়ার দূর সাহস কিভাবে হলো এই ছেলের??ও কি দলের লোক??”
রাজন রাগে ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলছে।সবাই ভয় পেয়ে যায়।রিঝের কাছে আসতে চায় তার আগেই রিঝ সিংহের মতো গর্জে উঠে চিৎকার করলো।বললো, ভুলেও না।যেখানে আছস ভালো আছস।কাছে আসলে সব উল্টেপাল্টে যাবে।ডোন্ট ডিস্টার্ব মি.!”
বলে সে আরো নিবিড় ভাবে তুতুলকে জড়িয়ে ধরে।রাজন নিজেও ভয় পায়।রিঝ এই জীবনে কখনো এতো জোড়ে চিৎকার করেছে বলে তুতুলের মনে পড়ছে না।সে তার এই জীবনে তা করতে দেখেনি।রাজন ভয় পেয়েছে রিঝের লাল হওয়া চোখ দেখে।মুহূর্তের মাঝে চোখ লাল হয়ে গিয়েছিলো।দেখে মনে হয়েছিলো সিংহের মতো থাবা দিয়ে খাবে।তুতুল বুক থেকে মুখটা তুলে রিঝের দিকে একবার তাকায়।রিঝ চোখ খুলে তাকালো।তুতুল ফিসফিস করে বলল, “ আপনি আমাকে ছাড়ুন।আর এখান থেকে বাঁচার রাস্তা খুজে বের করুন।”
“ সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।এখন তুমি আমাকে প্রথম বারের মতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।”
“ মানে??” তুতুলের কন্ঠে বিস্ময় প্রকাশ।”
“ কানে কম শুনো বলে তো মনে হচ্ছে না।”
“ আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন??”
“ সেটা আমি আগে থেকেই।তুমি জানো না তাই অবাক হচ্ছো।” রিঝের কন্ঠ প্রচন্ড শান্ত।তুতুল পুরো দমে হতবাক!সে তাকিয়ে আছে রিঝের দিকে।তাদের পিছনে দাড়িয়ে আছে বন্দুক ধারী লোক।সেদিকে রিঝ মোটেও পাত্তা দিচ্ছে না।এই লোক সত্যি পাগল আছে!রিঝ অধৈর্য গলায় বলল,
“ যত দেরিতে জড়িয়ে ধরবে ততো দেরিতে বেরহতে পারবে।চয়েস ইস ইউর।”
“ সিরিয়েসলি!পিছনের লোক গুলোকে কি আপনি দেখছেন না??”
“ জড়িয়ে ধরবে কি না বলো??”
তুতুল হাত গুলো নামিয়ে নিয়েছিলো।না পারতে আবার সে জাপটে জড়িয়ে ধরে।রিঝ নাক ছিঁটকে বলল,
“ এভাবে না।আগের বারের মতো।”
তুতুল আগের বারের মতো করেই আলতো করে কিন্তু শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে।রাজন এবং তাদের দলের উপস্থিত সবাই বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দেখছে সব।একটা সময় রাজন গুলি ছুঁড়লো।শব্দ শুনে তুতুল কেঁপে উঠে।আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।রিঝ তুতুলকে এক হাতে জড়িয়ে পাশে নিয়ে আসে।কড়া চোখে তাকায় রাজনের দিকে।তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,
“ নাটক শেষ??তাহলে এবার যেতে দেও।”
রাজন হো হো করে ডাকাতের মতো করে হেসে বলল,
“ নাটক তো এতক্ষণ আপনি করেছেন??উনি আমার হবু বউ।আর তুমি ওকে জড়িয়ে ধরেছো??তোর এতো বড় সাহস??শরীরের প্রতিটা অংশ যদি তোর আলাদা না করি তাহলে আমার নাম পাল্টে রেখে দিবো।”
রিঝ কিছুক্ষন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থেকে বলল,
“ তোমার ভাষায় সমস্যা আছে।কখনো আপনি,কখনো তুমি,আর তুইও বলো।ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।আর নামটাও পাল্টে দিতে হবে।পছন্দ হচ্ছে না।প্রথম অক্ষর আমার সাথে মিলে গেছে তাই।”
রাজন ক্ষেপে যায়।রাগ আরো কয়েক ধাপ বাড়িয়ে বলল,
“ ফাইজলামি হচ্ছে??আগে আমার বউকে ছাড়।”
রিঝ ফিচেল হাসলো।তুতুল তাকিয়ে তাকিয়ে সেই হাঁসি দেখলো।এই পরিস্থিতেও এতো সুন্দর হাসার মানে কি?রিঝ বলল,
“ হবু বউ বললেও চলে।কিন্তু বউ বলা চলবে না।কারণ ও আমার বউ।”
বলেই সে বিছানায় আয়েশ করে বসলো।তুতুলকেও পাশে টেনে বসালো।তারপর আবার বলল,
“ শালা তোর জন্য বাসর রাতটাও মাটি হয়েছে।তোরে ছেড়ে দিলে আমার নিজের সাথে অন্যায় করা হবে।তাই না??”
রিঝের শান্ত স্বাভাবিক কথা সবাইকে যতটা অবাক করছে তার থেকেও বেশি তুতুলকে বিস্ময়ে ফেলে দিচ্ছে।এসব কেমন ধরনের কথা?বাসর রাত মানে??ছিঃ!এটা রিঝ ভাই হতেই পারে না।সে এতো বাজে কথা বলতেই পারে না।তুতুল আশ্চর্য চোখে তাকিয়ে আছে।রাজন কিছু একটা ভেবে হেসে উঠে বলল,
“ তাহলে তো আর সমস্যাই নেই।আমার বউ আমাকে দিয়ে দিলেই হবে।তার বিনিময়ে আপনার জীবন ভিক্ষা দেওয়া হলো।যাও চলে যাও।”
রিঝ এবার বিছানায় পা তুলে দিলো।তারপর রয়ে সয়ে প্রশ্ন করলো,
“ এই মেয়ের মাঝে কি দেখলে বলো তো??ঘন্টা কয়েকের মধ্যেই প্রেম হয়ে গেলো??এতো ভয়ংকর কিছু তো নেই ওর মাঝে।”
রাজন চেয়ার টেনে বসলো।তারপর হেঁসে উঠে বলল,
“ আছে,আছে।তুমি বুঝবে না।ওই যে চিকন ঠোঁট জোড়া আমার দারুন লাগে।তার পাশের সেই কালো তিলে তো ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে।গোল গোল চোখের দিকে তাকালে ভয় লাগে।সাথে অদ্ভুত মায়াময় অনুভুতি।সবচাইতে আকর্ষনীয় হচ্ছে এই কালো কুচকুচে কোঁকড়া চুলগুলো।কেমন ঢেউ খায়।স্রোতের মতো।আর হাসি!সেটা তো বালার বাহিরে।কি মারাত্নক হাসে!ঠোঁটের কোণ ঘেঁষে কি মারাত্নক গর্ত হয়!”
রিঝ ভ্রু কুঁচকে তুতুলের দিকে তাকায়।তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“ সবার সামনে হাসতে নিষেধ করা উঁচিত ছিলো তোমাকে।আজ থেকে আর কারো সামনে হাঁসবে না।এটা তোমার জন্য নিষেধ।”
তুতুল চোখ বড় করে তাকিয়ে এদের কথা শুনছে।এদের আলাপ দেখে মনে হচ্ছে চা নাস্তা নিয়ে গল্প করতে বসেছে।তাকে নিয়ে গল্প!রিঝ এবার বলল,
“ তা ভাই তুমি তো দেখতে দারুন।অনেক সুন্দরী মেয়ে পেয়ে যাবে।আমার বউয়ের পিছনে ঘুরার মানে কি??না মানে বউ তো বউই হয়।এর ভাগ দেওয়া যায় না।”
“ বউ কথাটা রিঝ খুব সুন্দর করে টেনে টেনে বলে।তুতুলের মনে হয় কথাটা হৃৎপিণ্ডে ছড়িয়ে পড়ছে।মাদকের মতো লাগছে।এতো সুন্দর লাগছে কেনো এই বাক্যাংশ??কারণ জানা নেই তুতুলের।কিন্তু টেনে টেনে বউ ডাকলেই ভয়ঙ্কর ভালো লাগা কাজ করে।রাজন ক্ষুদ্ধ হয়ে বলল,
“ তোমার বউ মানে কি??উনি এখন আমার বউ হবে।আপনি উনাকে ভুলে যান।ভাগ চাই না পুরা উনিটাই চাই।”
রিঝ এবার নিজের ঘাড়ে হাত বুলালো।তারপর মাথাটা একটু বাঁকা করে বলল,
“ তুমি ওকে দেখেছো যে কত সময় হয়েছে??”
রিঝের প্রশ্নে রাজন ভরকে যায়।তারপর চিন্তা করে বলে,
“ ১২-১৪ ঘন্টার মতো তো হবে।বা তারও একটু কম।”
“ এইটুকুতেই প্রেম উতলে উঠছে??গ্রেট।”
বলে রিঝ হাতে তালি দিলো।রাজন একরোখা ভাবে বলল,
“ হ্যাঁ উঠছে।এটাই অনেক।আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।উনাকে আমি দিবো না।”
“ আর আমি ১২ বছর ভালোবেসে এসে এতো সহজে দিয়ে দিবো??তুমি যদি ১২-১৪ ঘন্টায় পাগল হয়ে খুনও করতে পারো তাহলে আমি কি কি করতে পারি তোমার কোনো আইডিয়া আছে??”
রিঝ নিজস্ব কায়দায় ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসতে লাগলো।
১২ বছর কথাটা কানে যেতেই তুতুল চকিতেই তাকায়।১২ বছরের ভালোবাসা!!মানে কি?তুতুলের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে।হৃৎপিণ্ড নামক যন্ত্রটা ধুকপুকানির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।সেকেন্ডের চাইতেও এর গতি বেশি হচ্ছে মনে হয়।তুতুলের পায়ের তলায় শিরশির অনুভুতি হচ্ছে।রক্ত যেনো পা থেকে শিরশির করে উপরে উঠে আসছে।হাড়ে হাড়ে কাঁপন ধরছে।থক থক কাঁপন।কেমন যেনো সব উল্টো দেখছে সে।মাথায় এসে জমা হচ্ছে রক্ত।মাথাটাও দপদপ করছে।তুতুল নিজের হাতের দিকে তাকায় দেখে তার হাত কাঁপছে।পায়ের হাঁটু কাঁপছে।গলা শুকিয়ে গেছে।তার এখন পানি খেতে ইচ্ছে করছে।কার কাছে চাইবে??এই সন্ত্রাস লোকটার কাছে??রিঝ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।তুতুল তখন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে।চোখ দেখে রিঝ কিঞ্চিত ঠোঁট উল্টে হাসলো।লাল ঠোঁটজোড়া ফুলিয়ে বলল,“ এভাবে দেখার কি আছে??ভালো মানুষ বাসতেই পারে।এটা মানব অধীকার।আমিও বেসেছি।তো কি হয়েছে??চোখ কটর থেকে বের করার মতো তো কিছু করিনি।”
রিঝ শার্টের বুক পকেট থেকে একটা ছোট ছুঁরি বের করলো।এটা তার সাদা শার্টে ছিলো।চেঞ্জ করার সময় নিয়ে নিয়েছিলো।রাজন ভাবলো তাদেরকে আক্রমন করবে।তারাও বন্দুক তাক করে।রিঝ ডাকাতের মতো হো হো করে হেসে উঠে।তারপর সবাইকে বিস্ময়ের সমুদ্রে ছুড়ে দিয়ে নিজের ডান হাতের বাহুতে ছুঁরি দিয়ে গভীর ভাবে আঘাত করে।উপস্থিত সবাই হকচকিয়ে যায়।রিঝের বাহু থেকে গড়গড় করে পড়তে থাকে তাজা রক্ত।গড়িয়ে পরে সবুজ শার্টের হাতা বেয়ে।তুতুল আতঁকে উঠে চিৎকার করে বলল,
“ আপনি পাগল হলেন না কি??হাত কাঁটলেন কেনো??আল্লাহ্ কত রক্ত!”
রিঝ আবার হাসলো।রাজনের ভয় হলো।সে ভাবছে এই ছেলে পাগল হবে।তাই তো নিজেকে নিজে আঘাত করছে।সাধারন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ নিজেকে আঘাত করতে পারে না।তুতুল হন্তদন্ত হয়ে কিছু খুঁজলো।কিন্তু কোনো কাপড়ই চোখে পড়লো না।তাই নিজের মাথার সাদা উড়নাটা দ্রুত খুলে নিলো।রিঝের ডান পাশে ঘুরে গেলো।হাতটা উঁচিয়ে উড়না দিয়ে ক্ষত স্থান বেঁধে দিলো।রিঝ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ ভালোবাসা বিনিময় করছো বুঝি??তোমাকে এসবে দারুন কিউট লাগে।আই রয়েলি রয়েলি লাইক দিস।”
তুতুল চোখ কপালে তুলে বলল,” আপনি ঠিক আছেন?
“ না একদমই ঠিন নেই আমি।”
কথাটা শেষ করতে করতেই রিঝ তুতুলের গলায় ছুঁরি ধরে।তারপর হেসে উঠে রাজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ আমি সব পারি।এই মুহূর্তেই তোমার ১২-১৪ ঘন্টার প্রেমকেও মেরে দিতে পারি।”
রাজন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।তুতুল আড়চোখে রিঝকে দেখে।এই রিঝকে সে চিনতেই পারছে না।অদ্ভুত দেখাচ্ছে।হকচকিয়ে তুতুল কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,“ আপনি আমার গলায় ছুঁরি ধরেছেন??”
“ আমি এখন গলা কেঁটেও দিতে পারি।”
রাজন চিৎকার করে বলল,
“ না না উনাকে কিছু করবে না তুমি।কি চাই বলো??”
“ রাস্তা ছাড়ো।প্যান প্যান আর ভালো লাগছে না।আমি প্রচন্ড টায়ার্ড।খুন খারাবি করে জেলে যেতে চাইছি না।” শান্ত কন্ঠে বললো রিঝ।রাজন চোখ বড় করে বলল,
“ কিছুক্ষণ আগে না বলছিলে তোমার বউ।নিজের বউকে মেরে দিবে??”
“ সেটা ব্যক্তিগত ব্যাপার।আমার বউয়ের সাথে আমি বুঝে নিবো।মৃত্যুর পরেও ক্ষমা চাইতে পারবো।বউদের মন মহান হয়।আরে জলসা দেখো না তুমি??কত মহান নারী জাতি।কুল।তুমি যদি তোমার কয়েক ঘন্টার প্রেমিকাকে মেরে দিতে চাও বলো।আমি নিজ দায়িত্বে এই কাজ শেষ করি।কি বলো??”
“ এই না না।ওই রাস্তা ছাড়।যেতে দে।এই মেয়েটাকে আমার মন দিয়েছি।বিনিময়ে না হয় বিরহ ভালো তার মৃত্যুর চেয়েও।ছেলেটা পাগল মনে হয়।যেতে দে।”
তুতুল নিজের বিস্ময় প্রকাশ করার ভাষা পেলো না।এই লোক যে কয়েক ঘন্টায় তার জন্য এতো মোরিয়া হয়ে যাবে সে ভাবতেও পারেনি।রাজনের অবস্থা খুব বাজে।চিন্তিত হয়ে সে সবাইকে সরিয়ে দিয়েছে।রিঝদের পিছনের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে।সামনে দিয়ে যাওয়া যাবে না।তার বাবা দেখলে খুন করে দিবে তবুও যেতে দিবে না।কারণ আজ পর্যন্ত এখান থেকে জীবিত কেউ যেতে পারেনি।এরা ছাড়া।রিঝ অনেকটা পথ আসতেই রাজন নিজের রূপ পাল্টে নিয়ে বলল,
“ না উনাকে দিয়ে তুমি চলে যাও।তোমার তো উনাকে প্রয়োজন নেই।প্রয়োজন হলে আপনি জীবনেও গলায় চাকু ধরতে পারতেন না।উনাকে ছাড়ো।”
রিঝ এবার সাবধানে গলায় ছুঁরিটা আরো কাছে নিয়ে এসে বলল, “ আমি নিজের সম্পদ অন্য কাউকে দিতে পছন্দ করি না।তাই আমার সম্পদ আমার সাথে যাবে তা না হলে উপরে যাবে।”
রাজন বুঝতে পারছে না এখানে ভিলেনটা কে??সে না কি এই ছেলে??হঠাৎ একটা ছেলে দৌড়ে এসে বলল,
“ নিচের কেউ নেই।সবাই পালিয়েছে।”
রিঝ শব্দ করে হেসে বলল,
“ সে তো পুরানো কথা।নতুন কিছু থাকলে বলো।তা না হলে যাও।”
রিঝ লোহার গেটের বাহিরে চলে যায়।রাজনের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।গেটের বাহিরে যেতেই লোহার গেট আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়।আধুনিক দরজার।দরজা বন্ধ হতেই রাজন চিৎকার করে উঠে।রাগে ফুলে উঠে বলল,
“ আমাকে বোকা বানিয়েছে।চাবি নিয়ে আয় জলদি।”
চাবি ছাড়া এই দরজা খোলা যায় না।সম্রাট এসে প্রচন্ড রেগে যায়।কিভাবে এতো বকা হতে পারে তার নিজের ছেলে?এর কাধে না কি তিনি সব দায়িত্ব দিবে ভেবেছে।এই কয়েকজনকেই আটকাতে পারলো না।রক্ত জড়ানো ছাড়াই বুদ্ধি দিয়ে ছেলেটা সবাইকে বাচিঁয়ে নিয়েছে।ভারি আশ্চর্য জনক বুদ্ধিমান না দেখা সেই ছেলেটি!তিনি সত্যিই বিমুগ্ধ তার বুদ্ধিতে।রাজন চিৎকার চেঁচামেচি করছে।ভাঙ্গচুর করছে।গুলি করে কয়েকজনকে মেরেও ফেলেছে।মেরে নিজের দলের অনেক মানুষকে আহত করে ফেলেছে।তাকে থামাতে পারছে না।সম্রাট রিঝের প্রতি মুগ্ধ হয়ে বলল,
“ রাজনের কথা শুনতে হবে না।ওকে বন্ধি করো।”
_________________
রিঝ ছুঁরি নামিয়ে তুতুলের হাতটা শক্ত করে ধরে।তারপর খুব দ্রুত গতিতে বিদ্যুৎ বেগে ছুটতে শুরু করে।তুতুল দৌড়াচ্ছে আর রিঝের দিকে তাকিয়ে আছে।তার দৌড়ের গতি দেখে তুতুলের মনে হচ্ছে তারা দৌড় প্রতিযোগীতায় আছে।একটা সময় তুতুল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“ আর দৌড়াতে পারছি না।এবার থামুন প্লিজ।”
রিঝ থামলো।পিছনে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দেখলো।তুতুলের খুব খারাপ লেগেছে রিঝ তার গলায় ছুঁরি ধরেছে।কেমন নির্দয় লোক?ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে।চোখের বারান্দায় জলের ছিটে পড়ছে।এমনেই তারা বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ হয়ে আছে।রিঝ তাড়া দিয়ে বলল, “ চলো যেতে হবে দ্রুত।চারদিকে কেমন অন্ধকার নেমে গেছে।এখনি এই জায়গা ত্যাগ করতে হবে।ওরা যদি ফিরে আসে সমস্যা হবে।এবার ধরা পরলে মৃত্যু নিশ্চিত।তুতুল অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলো, “ মরলে মরবো।আপনার সাথে থাকলেও মরতে হবে ওই জল্লাদ লোকটার কাছে থাকলেও মরতে হবে।একুই ব্যাপার।”
রিঝ তরিৎ বেগে তুতুলের দিকে তাকায়।তুতুল অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।রিঝ বিরক্তির হাসি হেসে বলল, “সিরিয়েসলি?তোমার আমার থেকে ও ওই রাজনকে বেটার মনে হচ্ছে??ব্রেব!”
রিঝের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে এখন।যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।ব্যাপারটা তার কাছে ঠিক তেমনই ঠেকছে।
“ আপনি আমার গলায় ছুঁরি ধরেছিলেন ভুলে গেলেন??”
রিঝ এবার তুতুলের দিকে তাকালো।বৃষ্টির পানিতে ভালো করে চোখ খুলে রাখা যাচ্ছে না।আদো আদো করে তাকিয়ে রিঝ বলল,“ রাজন বোকা স্বাভাবের।নিজেকে যতটা স্মার্ট আর বুদ্ধিমান ভাবে এবং দেখায় ততটা সে না।কথা বলার সময় বুঝতে পেরেছি।সে তোমাকে পছ্ন্দ করে।তাই এই টোপ কাজে লাগিনো ছাড়া বাহিরে বেরিয়ে আসার আর কোনো উপায় ছিলো না তুতুল।তাই তোমার গলায় ছুঁরি ধরতে হয়েছে।কিন্তু সত্যি বলছি আমি স্যরি তার জন্য।”
শেষের কথা গুলো রিঝ খুব বিনোয়ের সাথে বলল।তুতুল ঝুমঝুমিয়ে হেসে উঠে বলল,“ আপনি স্যরি বলেছেন??তাও আমাকে??যান মাফ করে দিয়েছি।”
রিঝ কপাল কুঁচকে নিয়ে হাসলো।তুতুল সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলল, “ নিজের হাত কাঁটা উঁচিত হয়নি আপনার।আপনাকে তখন আমার সত্যি কারের পাগল মনে হয়েছে।”
“ আমি সত্যি পাগল।তিন মাস আমি চিকিৎসা নিয়েছি।”
তুতুল আতঁকে উঠে।চোখ বড় বড় করে বলে,
“ সিরিয়েসলি!!কই আমরা তো জানতাম না??সামনে থাকি আপনাদের।তারপরও জানলাম না??পাগল পাইছেন আমাকে??বোকা বানাতে পারবেন না।বিশ্বাস করি না।”
“ সেটা তোমার ব্যাপার।”
তুতুল ভারি অবাক।সে ভাবে,মাঝে মাঝেই রিঝের অনেক কাজ অস্বাভাবিক।তাহলে কি? তুতুল রিঝের থেকে পিছিয়ে গেছে।দৌড়ে সামনে এসে বলল,
“ আপনি সত্যি নরমাল না??”
“ না।” রিঝের সোজা সাপটা জবাব।তুতুল রিঝের দিকে তাকিয়ে আছে।রিঝ হাটা থামিয়ে বলল,
“ ধরা পড়তে চাও?তাহলে যাও রাজনের কাছে।”
“ সেটা যেতেও পারি।লোকটা কত ভালোবাসে আমাকে।পিত্তর লাভ।”
রিঝ হাঁটা থামিয়ে দিয়ে তুতুলের দিকে মুখ করে তাকায়।বৃষ্টি পড়ছে বাহিরে।শীতের বৃষ্টি ভারী আশ্চর্যের।বৃষ্টির পানি বেয়ে পড়ছে তুতুলের মুখ বেয়ে।মুখটা শুকিয়ে গেছে।এলোমেলো ভিঁজা কোঁকড়া চুল।চিকন লাল ঠোঁটজোড়া ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে।হাতের চিকন আঙ্গুল কামড়ে সে কি যেনো চিন্তা করছে।ভাবটা এমন যেনো সে খুবই ভাবুক মানুষ।শুকনো মুখটা দেখতেও দারুন লাগছে।প্রতিটি পদে মেয়েটার আলাদা রূপ প্রকাশ পায়।কখনো চন্দ্র কন্যা।আবার কখনো চঞ্চল সূর্য কন্যা।এখন বৃষ্টি কন্যা মনে হচ্ছে।সচ্ছ পবিত্রতায় ছেয়ে গেছে গোল ছোট মুখটা।তুতুল চোখ তুলে চায়।এই গোল চোখে কাগলের প্রয়োজন নেই।ঘন পল্লবে ঢাকা চোখ দেখলেই মনে হবে ভরা কাজল।তুতুলকে রিঝের অন্য রকম লাগছে।অন্যদিনগুলোর চাইতেও আজ যেনো তুতুলকে আরো সুন্দর মনে হচ্ছে।অনুভব হচ্ছে খুব আপন।আপনই তো!নিজের বউ!তার নিজের।রিঝ হঠাৎ করেই চমৎকার করে হাসে।তুতুল চোখ বাঁকিয়ে তাকায়।প্রশ্ন করে,“ হাসছেন কেনো??”
“ তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তুতুল।তুমি আমার দেখা সবচাইতে সুন্দরী নারী।”
তুতুল লাল হলো।সাথে বেকুবও।সে আহাম্মকের মতো উচ্চারণ করলো,
“ মানে??আপনি আমাকে নতুন দেখছেন না কি??”
“ হুম।নতুনই দেখছি।একদম নতুন।”
রিঝ তাকিয়ে আছে।চোখের পাপড়িতে জমছে পানি।আবার গড়িয়ে পড়ছে।সে তবুও চোখ বুজে নিচ্ছে না।রিঝের এমন তাকিয়ে থাকা দেখে এই প্রথম তুতুল প্রচন্ড লজ্জা অনুভব করছে।তার তুলোর মতো গাল দুখানি লাল হয়ে উঠেছে।ঠোঁট দিয়ে পানি ঠেলে দিচ্ছে।রিঝ আজকের মতো এতো তৃপ্তি ভরে আগে কখনোই তুতুলকে দেখেনি।তার বুক জুড়ে একটা স্নিগ্ধ ভাব ছড়িয়ে পড়তে লাগলো।সে প্রমত্ত চোখে চেয়ে রইল ওর দিকে।
মেঘ ডেকে উঠে।বাতাসের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে।বৃষ্টি সেই তালে ঝড়তে শুরু করে।তুতুলের ভারী চুল বাতাসে পাতার মতো উড়তে শুরু করলো।পাপড়ি বেয়ে পড়তে লাগলো জলের ধারা।তুতুল একটু জোড়ে বলে উঠলো,
“ এতো কি দেখছেন??এখন আর পালানোর তাড়া নেই??না কি রাজনের কাছে চলে যাবো??”
রিঝ কোনো উত্তর দিলোনা।আরো কয়েকটা সেকেন্ড অমন থম ধরেই দাঁড়িয়ে রইল।দেখতে লাগলো তুতুলকে ঘোরলাগা চোখে।একটা সময় ধীর ধীরে মোহাবিষ্টের মতো এগিয়ে এলো তুতুলের নিকটে।তুতুলের কপালের উপরে পড়ে থাকা এক গাছি চুল রিঝ সযত্নে হাত দিয়ে সরিয়ে ওর কানের পাশে গুঁজে দিতে দিতে কেমন আচ্ছন্ন ভাবে প্রশ্ন করে বলল,“ ভালোবাসা মানে কি তোমার কাছে??”
বলেই রিঝ তুতুলের নরম গাল জোড়া নিজের হাতের তালুতে নিয়ে নিলো।তুতুল কেঁপে উঠে।চোখ খিঁচে কাঁপতে কাঁপতে বলল,“ দূরে যান প্লিজ।তারপর বলবো।”
রিঝ হাত সরিয়ে নেয়।তুতুলের ঠোঁট কাঁপছে।পানি ছড়াচ্ছে।রিঝ নিজের ডান হাতের একটা আঙ্গুল তুতুলের কম্পিত ঠোঁটজোড়ায় ছুঁয়ে দেয়।তুতুল দূরে সরে যায়।বুকের পাশে হাত দিয়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।রিঝ তুতুলের কান্ড দেখে শব্দ করে হেসে উঠে।তুতুল নিজের বুকে পূর্বের ন্যায় হাত রেখেই বলল,“ ভালোবাসা মানে হচ্ছে অন্যজন থেকে ভালোবাসা পাওয়া।যদি আমাকে কেউ ভালোবাসে তার বিনিময়ে আমিও তাকে ভালোবাসবো।কাহিনী শেষ।এটাই ভালোবাসা।”
রিঝ চুলের পানি তুতুলের মুখের উপরে ঝারে।তুতুল রিঝের কান্ডকারখানায় বাকরূদ্ধ।রিঝ গলার স্বর নরম করে বলল,“ তোমার আই কিউ এভারেজের চাইতেও লো।”
বলে সে কিছুক্ষণ নিজের মতো হাসলো।তারপর আবার বলল,“ ভালোবাসা মানে লেনদেন না।তুমি তো ভালোবাসাকে লেনদেনের তালিকায় ফেলে দিচ্ছো।”
“ তাহলে ভালোবাসা কি??”
“ তুমি ইয়াজকে ভালোবাসো??”
তুতুল থমকালো।কিছুক্ষণ রিঝের দিকে নিরবে তাকিয়ে রইল।তারপর ধীর গলায় বলল,“ হয় তো বাসতাম।”
“ বাসতাম বলতে কিছু হয় না।ভালোবাসায় শুধু ভালোবাসা উপস্থিত।বাকি সব অনুউপস্থিত।তুমি ভেবেছো ইয়াজ তোমাকে খুব ভালোবাসে।কেয়ার করে।তোমার ভালো খারাপের দিকে লক্ষ রাখে।তাই তোমারও উঁচিত ওর ভালোবাসার দাম দেওয়া।তাই তুমিও বিয়ে করে নিবে ঠিক করেছো।তার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে।তাই জীবন কাটিয়ে দিবে ভেবে নিয়েছো।এটাই তোমার ভালোবাসা।তাই তো??কিন্তু তুমি ইয়াজকে কখনোই ভালোবাসোনি তুতুল।”
তুতুলের অস্বস্থি হচ্ছে।কথা ঘুরিয়ে সে বলল,“ সে যাই হোক এখন আমরা এসব নিয়ে কথা না বলি।বসতির রাস্তা খুঁজি।আমি ঢাকা যেতে চাই যত দ্রুত সম্ভব।”
রিঝ ত্যাছড়া ভাবে তাকালো।তারপর তুতুলের একটা হাত নিজের হাতের বাঁধনে নিয়ে হাটতে শুরু করলো।তিরতির করে একটা ভালো লাগার স্রোত সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো তুতুলের।এতো ভালো লাগছে কেনো??মনে হচ্ছে এই হাতটাই প্রয়োজন তার।পাহাড়ের কোনো দিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে বুঝতে পারছে না রিঝ।তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।তুতুল নিজের গাউন উপরে তুলে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত গলায় বলল,“ আর কত পথ??” আবার হঠাৎ মনে পড়ালো এমন ভাব নিয়ে তুতুল বলল, “ আপনি ১২ বছর ধরে ভালোবাসেন এমন একটা ঢাহা মিথ্যা কথা বললেন কেনো??অন্যকিছুও তো বলতে পারতেন??”
রিঝ রাস্তা খুজচ্ছিলো।তুতুলের কথায় সে দৃষ্টি তুতুলের দিকে নিবন্ধন করে।তারপর শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকে।চোখের চাহনীতে তুতুল ভড়কে যায়।তারপর আপনা আপনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দূরো দূরো বুকে রিঝ বলে উঠলো,“ আমি কিছুই মিথ্যা বলিনি।মিথ্যা বলতে আমি পছন্দ করি না।”
হঠাৎ করে বাতাস থেমে গেছে।প্রকৃতি ঠান্ডা মেজাজের হয়ে গেছে।সব উজার করে এক অন্যরকম বাতাস এসে ভর করে তুতুলের বুকে।তোলপাড় করে তুলে মন,মস্তিষ্ক,আত্ন।শরীরের রগে রগে টগবগ করে উঠে রক্ত।তুতুল একটু দূরে সরে আসতেই পা পিছলে সে পড়ে যায় বিশাল গর্তের দিকে।রিঝ চিৎকার করে উঠে,
“ তুতুল।” বলে।একটা হাত বহু কষ্টে ধরে নিচে শুয়ে পড়ে।এখানে যে এতো বড় জঙ্গলা গর্ত আছে রিঝের জানা ছিলো না।সে বিস্ফোরিত চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,“ হাত শক্ত করে ধরো তুতুল।কিভাবে পড়লে তুমি??কিভাবে??”
রিঝ কথা শেষ করার আগেই তার পায়ের উপরে ভেঙ্গে পড়ে খাড়া পাহাড়ের মাথার গাছটা।রিঝ আর্তনাদ করে চেঁচিয়ে উঠে।তুতুল জুলন্ত অবস্থায় দেখেই চোখ বুঝে চিৎকার করে উঠে,“ ও আল্লাহ্!!”
রিঝের হাত থেকে তুতুলের হাত সরে যেতে চায়।রিঝ আরো শক্ত করে হাত ধরে ব্যাথাতুর কন্ঠে বলল,
“ প্লিজ হাত ছাড়বেনা।প্লিজ।”
তুতুল নিচের দিকে একবার তাকায়।হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠে তার।নিচের কিছুই দেখা যাচ্ছে না।কয়েকটা পাহাড়, গাছ আর গাছ দেখা যাচ্ছে।গর্তের গভীরে গাছ।রিঝ অনুভব করতে পারছে পাহাড় ধসে পড়ছে একটু একটু করে।বৃষ্টি হলেই বান্দরবানে পাহাড় ধসে পড়ার খবর শুনা যেতো।কিন্তু আজ নিজে এর সাক্ষী হচ্ছে।রিঝের গায়ের উপরে মাটি পড়ছে।মৃত্যু যেনো খুব কাছে!!তুতুলের চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ে।সে শ্বাস নিতে পারছে না।দম বন্ধ হয়ে আসছে।বুকে হাতুরি পিটা হচ্ছে।মনে হচ্ছে এই বুঝি মৃত্যুর ফেরাশতা এসে হাজির হবে।তুতুল উপরে ভালো করে দেখে।বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু পানির জন্য ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।অনেক কষ্টে চোখ খুলে সে দেখলো পিছনের পাহাড় একটু একটু করে ধসে পড়ছে।দিশেহারা হয়ে তুতুল বলল,“ আপনি আমার হাত ছাড়ুন প্লিজ।আর এখান থেকে সরে যান।আপনার গায়ে যে কোনো সময় পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে।সরে যান।”
রিঝ হাতটা আরো টেনে নিতে চাচ্ছে।তুতুলের কথা শুনে সে বলল,“ মাথা খারাপ হইছে??হাত ছাড়বে না।”
তুতুল শুনে না।হাত ছাড়াতে চায়।রিঝের অস্তিত্ব নড়ে উঠে।আতঙ্কিত হয়ে সে বলে,
“ তুতুল হোয়াট অ্যার ইউ ডুয়িং??হাত ছাড়তে চাইছো কেনো??ধরে রাখো।”
“ দুইয়ের জায়গায় এক ভালো।প্লিজ হাত ছাড়ুন।আপনি আমার জন্য এতো বিপদে জড়ান কেনো বলবেন??সরে যান প্লিজ।”
রিঝ এবার ভয় করছে খুব।এতো ভয় এর আগে কখনোই করেনি তার।শরীর কাঁপছে।হাত ঘামছে।মনে মনে সে দোয়া পড়ছে। জীবনে যে জিনিস সে কখনো করেনি,তার দ্বারা যে জিনিস অসম্ভব ছিলো সে জিনিসটাই আজ এই মুহূর্তে তার দ্বারা হয়ে গেলো।রিঝ শব্দ করে কেঁদে উঠে।তুতুল বিমূঢ় চোখে তাকিয়ে থাকে।রিঝের কান্নার শব্দ পাহাড়ের গায়ে লেগে যাচ্ছে।আকুতি ভরা কন্ঠে সে বলল,
“ প্লিজ তুতুল হাতটা ছাড়বে না।আমি মরে যাবো।তোমার কিছু হলে আমি সত্যি মরে যাবো।বিশ্বাস করো তুমি আমার বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস।আমি যে হাসতে পারছি তোমার জন্য।তুমি আমার হাসি।আমার খোলা আকাশ।আমার সুপ্ত ভালোবাসা।আমার বসন্ত।আমার রং।আমার জীবনের ঝকঝকে রং তুমি।আমার লাল রং তুমি।তুমি হিনা আমার জীবন অন্ধকারে ডুবা।প্লিজ হাতটা ছাড়বে না।”
রিঝ বলেই চলেছে।আজ সে থামছে না।চোখের দরজা খুলে উপচে পড়ছে পানি।ভয়ংকর সে স্রোত দেখে তুতুল বিমোহিত।কথা গুলো মধুর মতো শুনাচ্ছে।মাদকতা আছে এই ভাষায়।নেশার মতো কাজ করছে মন মস্তিষ্ক সব জুড়ে।চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে শুদ্ধ তম শুভ্র বাতাস।নিজের বর বলেই কি এতো মহনীয় লাগছে কথা গলো।তুতুল অনুভব করতে পারছে সে ভালোবেসে ফেলছে এই রাগী,মেজাজি,রুক্ষ,মানুষটাকে।ধীরে ধীরে সে মারাত্নক আসক্তিতে তলিয়ে যাচ্ছে।যে ভালোবাসা সে এই জীবনে আর কখনোই অনুভব করেনি সেটা আজ করছে।তুতুল বাঁচতে চাইছে।কিন্তু সে কিভাবে বাঁচবে??আজ মৃত্যুর এতো কাছে এসে তুতুল অনুভব করছে এই পৃথিবী কত সুন্দর!ছেড়ে যেতে চায়না সে।তারজন্য পৃথিবী জুড়ে শুধু আছে ভালোবাসা।তাকে কেউ না অনেকেই ভালোবাসে। তার জীবনে ভালোবাসার কোনো কমতি নেই অভাব নেই।তুতুল অন্য হাত দিয়ে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।রিঝ তখন শেষ বাক্য বলছিলো।তুতুল পড়ে যেতেই রিঝ চিৎকার করে বলে উঠে,
“ আমি তোমাকে ভালোবাসার থেকেও বেশি ভালোবাসি তুতুল পাখি।”
ঠিক সেই মুহূর্তেই পাহাড় ধসে পরে রিঝের পিটানো সুঠাম শরীরের উপরে।

_______________________

#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
_______________________

#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here