নিয়তি পর্ব -১৮+১৯

#নিয়তি
#সেলিন আক্তার শাহারা
#পর্ব-১৮

_______————–

নন্দিনি তার নিজের রুমে বসে কান্না করেই যাচ্ছে, কারন ভাবি কিনা আমায় ভুল বুজলো!

.. একটু আগে….

ভাবি আপনি মানে..
কি এই ছবি গুলোইতো খুজছিলে বলেই সপ্না নন্দিনির মুখের দিকে ছবি গুলো ছুরে মারে…

ফ্লোরে বিছিয়ে আছে এনি আর সোহামের ছবি গুলো,

নন্দিনি সব গুলো মন দিয়ে দেখে সপ্নার দিকে তাকাতেই, সপ্না চেচিয়ে বললো বোন ভাবতাম তোমায় আর তুমি কিনা// ছি নন্দিনি তুমিও সব সত্যিটা আমার কাছে লুকিয়েছো…

নন্দিনির চোখ জলে ছল ছল, তবুও ভাবি বলে কাছে যেতে চাইলে হাত দেখিয়ে সপ্না বাধা দিয়ে দেয়,আসবেনা তুমি আমার কাছে,
সপ্নার পিছনে এনি দাড়িয়ে আছে এক গাল বাকা করে হাসি দিয়ে নন্দিনিকে ইশারা করছে…

নন্দিনি যা বুঝার বুঝে গেলো,এই ছবি গুলো এনি ভাবিকে দেখিয়েছে….
তবে কেন… তবে কাজটা ভালো করে নি।

…..আর কোন কথা না বলে সপ্না তার নিজের রুমে চলে গেছে,

শিলা বেগম সব শুনে কিছুটা বিচলিত,শেষ মেস তুর্জটাকে ভুল বুজলাম,

সোহাম এসব করেও চুপ ছিলো এতটা কাপুরুষের জন্ম তো আমি দেই নি,
নিজের অন্যায় টা স্বিকারও করেনি, আমি এমন ছেলের মা?

,নন্দিনি এনিকে কিছুই বললো না শুধু এক নজর দেখে সেখান থেকে চলে এলো।
এনিও সয়তানি হাসি দিয়ে রুমে আয়েস করে বসে আপেলের স্বাদ নিচ্ছে….

সেই থেকে নন্দিনি রুমে বসে কাঁদেই যাচ্ছে।

… তুর্জ বাড়ি এসে সব শুনে হতাশ হয়ে বসে আছে, কি বলবে কোন মুখ নিয়ে ভাবির সামনে জাবে…
এ কোন পরিস্থিতিতে এসে পৌছেছে, এর শেষ কি তা জানা নেই, সপ্না সোহাম তুর্জ নন্দিনির জীবনে কি নতুর মোর আসতে চলছে না তো…

কোন ঘূর্ণি ঝড় আসার আগের নিরবতা নয়তো???

শিলা বেগম জায়নামাজে বিরাজ মান,
সোহাম দরজার সামনে এসে দারিয়ে আছে তবে ডাক দেয়ার সাহস তো পাচ্ছেই না…

তুর্জ নন্দিনির কাছে কখন থেকে বসে আছে,নন্দিনি নিজের মাথা হাটুতে গেরে বসে কাদঁছে…

শুনুন না ভাবি অনেক কষ্ট পেয়েছে,আমি কিছু বলতে চাইনি এনি ভাবিকে সব বলে দিয়েছে আর ঐ ছবি গুলোও দেখিয়েছে…

চরম পর্যায়ে রাগ নিয়ে এনির রুমের সামনে দারিয়ে আছে তুর্জ,কি করে বসে তার ঠিক নেই….

তবে নন্দিনি তুর্জকে আটকে দিয়ে বললে এখন নয় আগে ভাবিকে দেখুন…

শিলা বেগম বুকে দুহাত চেপে দারিয়ে আছে, নন্দিনি শিলা বেগম কে ধরে রেখেছে,

সপ্না কে কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছে রুমের ভিতর থেকে কোন সারা শব্দ নেই।
এই নিরবতা সবাইকে ঘাবরে দিচ্ছে.।

তুর্জ আর এক সেকেন্ড দেরিনা করে দরজায় লাথি দেয়া শুরু করেছে, তাতেও কোন লাভ নেই এই দরজা লাথি দিয়ে ভাংবে না।

তবে সোহামের হঠাৎ করে মনে হল, ডুপলিকেট চাবিতো মায়ের রুমে, তাই দৌড়ে চাবিটা এনে দরজা খুলে ফেলেছে…

দরজা খুলতেই সবাই চিৎকারে ফেটে উঠেছে,
এনিও নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে,

সোহাম তো সপ্না বলে এক চিৎকার দিয়ে বসে পরেছে,

সপ্না নিজের হাত কেটে ফেলেছে চেয়ারে হেলান দিয়ে পরে আছে, রক্তে ফ্লুর ভেসে গেছে, এত রক্ত দেখে নন্দিনি নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,

কখন যে রুমে এসে এই কান্ড ঘটিয়েছে তা কারো জানা নেই, তবে আমাদের এর্লাড থাকা দরকার ছিলো। তুর্জ সপ্নাকে নিজে গাড়িতে শুইয়ে দিয়েছে,
সোহাম সপ্নাকে নিয়ে বসেছে তুর্জ ড্রাইভ করছে,

শিলা বেগম যেতে চেয়েও জাওয়া হল না, নন্দিনির হুস নেই তার উপর গর্ভবতি, আবার একা রেখে গেলে এনি জদি আরো কিছু করে বসে,……

~~~~

সপ্নার ট্রিটমেন্ট চলছে তবে বাচাঁর চান্স ০.১%..
এত রক্ত ক্ষরন হয়েছে এখনই রক্তের প্রোয়োজন,

তুর্জ ব্লাডব্যাক ছুটে রক্তের জোগার দিয়েছে, কারন তাদের দু ভাইয়ের রক্ত ম্যাচ করছেনা তার উপর অনেক রক্ত চাই…..
সোহাম নিথর দেহের মত দারানো আসলে সব কিছুর দায় আমার।

~~“
নন্দিনির হুস আসতেই ভাবি বলে কান্নায় ভেংগে পরেছে,
শিলা বেগম নন্দিনিকে জরিয়ে ধরে বলছে কাদিস না মা, চল হাসপাতালে জাই ওরা সবাই ওখানে আছে,…..

এনি ও কিছুটা ভয় পেয়েছে, ভেবেছিলো সব দেখে সোহাম কে ছেরে চলে জাবে, এমন কিছু একটা করবে তাতো ভাবতেই পারেনি, এখন কি হবে আজ ওরা বাড়ি এলে হয়তো জিন্দা করব দিবে….
ফোনটা হাতে নিয়ে কাকে কল দিয়ো সব জানাচ্ছে,
নন্দিনি বেশ বুজতে পারছে এই নাটকের ডিরেক্টার অন্য কেউ।

~~~~
হাসপাতালের বাহিরে সবাই দারিয়ে আছে,

সোহাম সপ্নাকে দেখতে ভিতরে গেছে, আল্লাহ রহমত করেছে আমরা ভাবতেই পারিনি রুগিটা বাচঁবে হয়তো কারো দোয়া বেশ কাজ করেছে, বলেই ডাক্তার চলে গেছে।

ডাক্তার বলেছে এক জন জেতে তাই সোহাম ই গেলো এমন সময়টা শুধু তাদের জন্যে দরকার।

সপ্নার মাথার কাছে বসে আছে সোহাম, সপ্না চোখ তুলে একবারও তাকাচ্ছেনা।
রাগ নাকি অভিমান জাই হক,
তাতো বুঝাতেই হবে…

সোহাম কি বলবে তার কোন ভাষাই খুজে পাচ্ছেনা, তবু বলতে তো হবে আজ সপ্না এই পরিস্থিতির জন্য তো সেই দায়ি,
সপ্নার ভাই কে খবর পাঠানো হয়েছে,
তবে আসতে তো দেরি হবে….

আমি বড় ভুল করে ফেলেছি, আমার ক্ষমা নেই জানি,তবে এত বড় শাস্তি দিও না, আমায় ছেরে জেও না প্লিজ,

আমি জেনে শুনে আজ তোমায় মরনের দিকে ঠেলে দিয়েছি,বিশ্বাস কর আমি এমনটা চাইনি,
তোমার যা শাস্তি আমায় দাও তবুও নিজের ক্ষতি করো না।

তুমি হিনা এ জীবনে বেচেঁ লাভ কি, আমি না হয়…

সোহামের মুখ থেকে আর কথা বের হতে পারল না, কারন সপ্না যে এক হাতে সোহামের মুখটা চেপে ধরেছে…

সোহাম সপ্নার হাতটা সরিয়ে বললো এতটা ভালোবাসো আমায়!!! আমার মরন চাও না অথচ নিজে মরতে চাইছো…

একবার কি ক্ষমা করা জায় না,একটা সোজগ কি হবে না…

সপ্না সেই আগের মতই চুপ করে শুয়ে আছে।

এমন নিরবতা বেশ ভয়ানক লাগছে, সোহাম আর বসতে পারলনা হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

…..

সপ্না কারো সাথে একটা কথাও বলে নি, সবাই দেখা করতে এসেছিলো, সপ্নার ভাই এই অবস্থার কথা জানতে চাইলে সপ্না বলেছে ভাংগা প্লেটের কাচঁ দিয়ে…

,তবে বিশ্বাস করে নি তা ওনার মুখ দেখেই বুঝা গেছে…

…. সপ্নার শারিক অবস্থা ভালো হলেও মানুষিক জন্ত্রনায় ভুগছে।

তুর্জ নন্দিকে নিয়ে কিছু টেস্ট করিয়ে নিলো, এসেছে যখন একবারে করিয়ে নেয়া যাক,

সব নরমাল, তার পর ও ওর পাগলামি শেষ হয় নি।
শুনে প্রশান্তি তুর্জ, তার পর ফুল বডির সব ধরনের টেস্ট করাতে বলছে,কারন সায়মার মত আর সে নন্দিনকে হারাতে চায় না….তাই আগে থেকে সতর্ক হতে হবে, দরকার পরলে বাচ্চাও নিবোনা,

পরের দিন সকালে
সপ্নার কেবিনে এসেছে নন্দিনি।
কাল আসেনি সে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে তাই কেও আসতে দেয় নি,

নিজের রিপোর্ট গুলো নিয়ে সোজা সপ্নার কাছে…

সপ্নার হাতে হাত রেখে নন্দিনি হতাশ গলায় বললো ভাবি আপনি ভুল করছেন এনির বাচ্চার বাবা ভাইয়া নয়,!!!

চোখ গুলো সরু হয়ে আসছে সপ্নার, কড়া গলায় নন্দিনিকে বললো শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে এসেছো??

না ভাবি আমি সত্যি বলছি এনির বাচ্চা অন্য কারো ভাইয়ার নয়,

নন্দিনির এমন কথায় সপ্না হতবাক কি বলছো তাহলে কে??
নন্দিনি সপ্নার মাথায় হাত দিয়ে বললো আগে বাড়িতো আসুন…
তবে সপ্না বুঝতে পারছে কোন কিছু না জেনে এমনি এমনি নন্দিনি কিছু বলবে না।

~~~~~

বিকেলো সপ্নাকে বাড়ি নিয়ে এসেছে, তবে সোহাম বহু দূর দুর থাকে, সপ্না সোহামের মুখ দেখতেও রাজী নয় এখানে ফিরে আসার কারন শুধু শাশুরি কারন উনাকে নিজের মায়ের আসনে বসিয়েছি,
মা মরা মেয়েকে এই বাড়িতে ঠাই দিয়েছিলেন উনি, নয়তো ভাইয়ার ভরসায় কখনো স্বামীর ঘর করা হত না।

সপ্নার ভাই তুর্জের সাথে কিছু কথা বলে সপ্নার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো।
একবার ও সপ্নাকে বলেনি বাড়ি জাওয়ার কথা।

আসল কারন তো এটাই ছিলো মরতে চাওয়া,
কারন ভাইয়ের সংসারে তো ঠাই হবে না, সোহামের সাথে থাকাও সম্ভব না, সে তো একন অন্য কারো হয়ে গেছে, কেন একটা মেয়ের জন্য বাধা হব…!!!!
সে তার বাচ্চা কে নিয়ে স্বামীর ঘর করুক,

সপ্না সেই নিজের রুম টা ভালো করে দেখে নিলো, এই এক হাতে ব্যান্ডেজ থাকা সত্বেও,আরেক হাত দিয়ে সুটকেসে কাপর ভরে টানতে টানতে বেরিয়ে এলো….

সবার চোখ সপ্নার দিকে নন্দিনি দৌড়ে এসে সপ্নার হাত থেকে টান দিয়ে সুটকেসটা নিয়ে নিলো।
সপ্না তাছিল্য হাসি দিয়ে বললো, ভয় পেয়েও না বাড়ি ছেরে জাচ্ছিনা, তবে আমার আসল জায়গায় জাচ্ছি…

আসল জায়গা!
সোহামের পশ্নে সপ্না শিলা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো মা ডেকেছি আপনায়, তাই আপনাকে ছেরে জাওয়ার কোন জায়গা নেই,
তাই আপনার পায়ের তলায় একটু ঠাই দিন,
দাসি হয়েই পরে থাকব,

সবার চোখের পানি বেয়ে পরছে,
নন্দিনিও বেশ কষ্ট পাচ্ছে..

সপ্না নন্দিনির কাছে এসে ওর হাতটা ধরে বললো আমি সেদিনই বুজতে পেরেছিলাম,সব জেনে তুমি চলে গিয়েছিলে,কিন্তু আবার ফিরে এলে কেন??

তুমিতো তুর্জকো ভালোবাসো না যে ওর টানে ছুটে আসবে…
তখনই সন্দেহ হয় আমার, তার পর এনি সব সত্য বলে দিয়েছে,

.. সোহাম নিচের দিকে তাকিয়ে আছে…

এনিকে ডেকে বললো তোমার জিনিস পএ নিয়ে তোমার ঘরে যাও, আমি গেস্টরুমে থাকব

কি বলছো পাগলের মত কোথাও জাবেনা তুমি ঐ রুমেই থাকবে!!

সোহামের শক্ত কথায়ও সপ্নার মন ভুলেনি, তবে এবার শান্ত নয় রাগে গলা ফাটিয়ে বললো একটা কথা বলার চেষ্টা করবেনা।

এত বড় ছোট মনের মানুষ তুমি ছি.. নিজের দুষটা যখন তোমার ছোট ভাই নিজের কাধে নিচ্ছিলো তখন কেন বলো নি, যখন নন্দিনি রাগে দুখে বাড়ি ছেরে চলে জেতে চাইলো তখন কেন ওকে আটকিয়ে সব সত্য বলো নি কেন..? তুর্জ তো নিজের সংসারের চিন্তা করে নি অনাগত বাচ্চার চিন্তাও করে নি চেয়েছে তোমায় বাচাঁতে।

তুমিতো জানতে ও প্রেগনেন্ট, তাহলে কেন এত বড় ধাক্কা সইতে দিলে,আজ জদি আমার জায়গায় নন্দিনি কোন উল্টা পাল্টা করে বসতো তাহলে! ওদের বাচ্চা বেচেঁ থাকতো??
কি হল চুপ কেন?
সারা জীবন খুনি হয়ে বাচঁতে, কপাল ভালো নন্দিনি এমন কোন কাজ করেনি।

কি হল উওর দাও, তুমি এতটা নিচ তা আমার জানা ছিলোনা, নিজের সার্থের জন্য অন্যের ঘরে আগুন যে লাগাতে পারে সে আমার স্বামী নয়।

নিজের ছোট ভাইয়ের সংসার ভাংছিলো তুমি চুপ ছিলে।

এত বড় একটা কান্ড ঘটিয়েও , ছি।

সোহাম মাথা নত করে সব মুখ বুজে সয়ে নিলো কারন এটা তো তার পাওনা।

না ভাবি ভাইয়া সব বলতে চেয়েছিলো, আমি ভাইয়া কসম দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলাম,

তুর্জের কথায় সপ্না হেসে উরিয়ে দিয়ে বললো বাহ কসম!!!
তুমি এত কসম পালন কারি কবে থেকে হলে?

কত কসম ভেংগে আজ কসমের দুহাই দিয়ে বসে ছিলো,।।।
সপ্নার কথা শুনে সোহাম কিছুটা রেগে বললো..

এই যে নিজের ক্ষতি করতে চলছিলে ঠিক এই ভয়টার জন্যেই চুপ ছিলাম হারাতে চাইনি তোমায় তাই… একটা ভুল হয়েছে, তবে এর শাস্তি এত বড় নয় যা তুমি আমায় দিতে চলছিলে,
আর জদি মরার এতই শক তাহলে নাও আমার হাতে একবার ছুরিটা চালিয়ে তোমার হাতে চালাও,দুজনে চলে জাই।

সপ্না কোন কথা শুনার পাএ নয় তবে এনির ভিতরে ভয় কারন সপ্নার রুমে জাওয়া সম্ভব না, কারন নন্দিনি আধা ঘন্টা ধরে এনির দিকে চোখ পাকিয়ে চেয়ে আছে।

এনি নিজের ঢুক গিলে আবার গেস্ট রুমে গিয়ে দরজা লক করে বললো আমি এখানেই থাকব, কারো রুমে জাবো না… আগেতো জান বাচাঁই।

~~~
রাত হয়ে গেছে সপ্না ড্রইং রুমে বসে আছে, তুর্জ বহুবার বলেও নিতে পারেনি,
সোহাম তো কাছে আসতেও ভয় পায়।
নন্দিনি সপ্না কে বহু কষ্টে নিজের রুমে নিয়ে সুইয়ে দিয়েছে….

সোহামের যে কান্নার শেষ নেই, কি করবে সে।

এত সুন্দর সংসার সে নিজ হাতে নষ্ট করেছে বিমা দুষে সপ্নার শাস্তি,

তুর্জও বেশ চিন্তায়,

~~~ ছয়দিন হয়ে গেছে সপ্না নন্দিনির রুমেই টিকেছে,
তবে তু্র্জের বেশ কষ্ট হচ্ছে একা ঘুমাতে না আছে তুলি না ওর মা ধুর ছাই, তবে ভাই ভাবির জন্য মন টা বড় কাদেঁ,

শিলা বেগমের সারা শব্দ বন্ধ রুমে পরে থাকে সারা দিন।

নন্দিনি বেশ বুঝতে পারছে এনি কি চাইছে তবে যা চায় তা দিয়ে দিবে নন্দিনি…
এর তো একটা বিহিত করা চাই, ভাইয়া ভাবিকে প্রচন্ড ভালো বাসে সেই ভালোবাসার ঘরে চগুন লাগানো কারিকে ছারা চলবে না।

কদিন হল তুর্জের মুখটাও ভালো করে দেখা হয় না, সময়ই পায়না, সপ্না জদি আবার কিছু করে বসে, সেই ভয়ে ওর কাছে কাছে থাকা হয় সারাক্ষন।
#নিয়তি
#সেলিনা আক্তার শাহারা
#পর্ব—১৯
___________________

কদিন ধরেই নোটিশ করছে এনি কারো সাথে ফোনে আলাপ করছে,
নন্দিনি শুধু একটা চান্স চায় এনি কে ধরার তার জন্য বহু ট্রাই করেছে,
তবে এনি কম চালাক মেয়ে নয় বার বার ফসকে গেছে।
তার পরও হাল ছারেনি।

সোহাম বার বার সপ্নার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছে,তাতেও কোন লাভ হল না।
তাই সোহাম ঠিক করলো এখানে আর থাকবেই না,
বিদেশে সে নিজেই পারি জমাবে,কারন যে এখানে নিজের বলতে মা/ ভাই/ বৌ কেউ রইলো না সবাই অপরাধির মত ট্রিট করে তাদের কাছে থাকার চেয়ে না থাকাই উওম।

তুলিকে নিয়ে অনেক ক্ষন ঘুরে এসেছে তুর্জ,
মাথায় যে কি ঘুরপক খাচ্ছে,কে জানে,
নন্দিনি তুলিকে আজ কাল কোলে নেয় না, অবশ্য তুলিও বায়না করে না, কারন তুর্জ বলেছে ওকে মাম্মামের কোলে চরো না, মাম্মাম তোমায় খেলার জন্য বড় পুতুল নিয়ে আসবে।

সেই দাতঁ বের করা হাসি, তাই নন্দিনির আচল ধরে হাটে বসে খেলা করে তার পরও কোলে চরে না,
খুব লক্ষি মেয়েতো।

তুর্জ উসাদ হয়ে ছাদের কিনারায় দারিয়ে আকাশটা দেখছে,
চাইছেনা এক ঝামেলার মাঝে অন্য ঝামেলা আনতে,
নন্দিনিকে হারানোর ভয় টা বেশ জুর সুর করে হানা দিচ্ছে ওকে, না পারছে বলতে না পারছে সইতে,

গত কাল সালাম সাহেব কে দেখেছিলো কারো সাথে কথা বলছে,
কিছুটা কাছে জেতেই শুনতে পেলো,
তুমি চিন্তা করো না নিলয় সব ঠিক হয়ে জাবে…………..
নিলয় নাম টা শুনে ভিতরে রুহটা যে কেপে উঠেছিলো তখন, এই কি সেই নিলয় যার জন্য নন্দিনিকে কাছে পেলেও তার মনটা কো আজ পর্যন্ত ছোয়া হল না?
তবে সালাম সাহেবের আরালে থেকেই চলে এসেছিলো।

এই কি সেই যার জন্য নন্দিনি পিছন ছুটে ছিলো…
~~~~

রাতে সবাই ঘুমিয়ে পরেছে, সপ্নার চোখ লাগতেই নন্দিনি রুম ছেরে বাহিরে এসেছে,

উদ্দেশ্য এনির রুম, তবে পা চলতে চলতে থেমে গেলো তুর্জের রুমে, কয় দিন ধরে সোহামের রুমেই রাত কাটাচ্ছে,উনার অন্য কোথাও ঘুম হয় না নন্দিনি ভালো করেই জানে,তাদের জেঠুর বাড়ি জাওয়া পর জানা হয়েছিলো,তবে এখানে এতটা দিন কিভাবে রয়েছে কে জানে???

দরজাটা ধরতেই খুলে গেলো, ওমা লক করে ঘুমায় না নাকি দুই ভাই?
ভিতরে উকি দিতেই দেখা মিললো তুর্জ বুকের উপর ভর দিয়ে শুয়ে আছে,
তবে ভাইয়া টা কই!! আজ কি বাড়িই আসেন নি নাকি ছাদে চলে গেছে রুজকারের মত?

হতেও পারে,নিজেই নিজের পশ্নের উওর দিয়ে তুর্জের পাশটায় আয়েশ করে বসেছে।
আজ খুব ইচ্ছা করছে তুর্জের মাথায় হাত বুলাতে,
তবে ইচ্ছাকে মনের ভিতরে চাপা দেয়া স্বভাবের মেয়ে নয় নন্দিনি।

পাশে বসেই বেশ করে তুর্জের মাথার চুল গুলে এলোমেলো করে হাত দিয়ে বিলিয়ে যাচ্ছে, এই মানুষটার জন্য কেন যে এত মায়া হয় নিজেরই জানা নয়।

আচ্ছা এখন জদি নিলয় আসে তাহলে কি উনাকে ছেরে চলে জেতে পারব??
না না কি সব ভাবছি নিলয় আসবে কোথা থেকে, আর আসলে তো আমি জাবো না, এই রাগি মানুষটা কে ছারতে পারব না কিছুতেই না আর তুলি না না ওকে ছারা এক মুহুর্ত তো শ্বাস চলবে না গো।
এখন তো আমি মা হব উনি ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমায় যে মা হওয়ার সুখটা দিয়েছে তাতো মানতে হবে…

মলিন মুখটায় হাসির রেখা ফুটে উঠেছে, তুর্জের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ওর পাশটায় বেশ করে আধ শুয়া হয়ে রয়েছে।

চোখ দুটোও ঘুমে বন্ধ হয়ে এসেছে,

মাঝরাতে সোহাম ছাদ থেকে এসে তুর্জ আর নন্দিনিকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে দরজাটা লক বাহিরে থেকে লক করে বেরিয়ে গেছে,

তবে কোন পুরোনো ফিল্মের মত সোফায় শুতে নয় সোজা সপ্নার কাছে, আজ বহু দিন পর ওর পাশে গিয়ে শুয়ে আছে…

শেষ বারের মত একটু আদর করতে চায় তাই। কালতো চলেই জাবো পার্সপোর্ট টিকিট সব রেডি,

আজ রাতটা না হয় শেস বারের মত ওকে ছুয়ে দেব….

~~~~~~~~~

ভোর সকালে চিৎকারে আওয়াজ সপ্নার রুম থেকে,

সোহামের সাথে ঝগরা করছে,

কি হল তুমি এখানে!
আর এসব কি কি করেছো..
সোহাম নিজের টিশার্টটা গায়ে দিয়ে উঠে জেতে জেতে বললো যা মরার মত পরে ঘুমাও তাতে বহু কিছু করা জায় তবে ভয় নেই বাজে কিছুই করিনি, কারন তুমি আমার বৌ ই তাই না……..

….
নন্দিনি আরমুরা ভেংগে উঠতে গিয়েও উঠতে পারছেনা, বাধা পরেছে তুর্জের হাতের বাধনের কাছে,

তুর্জ রাতে নন্দিনিকে পাশে পেয়ে বহু শান্তি পেয়েছে…
নন্দিনিকে ঠিক করে শুইয়ে নিজের সাথে জরিয়ে নিয়ে শুয়ে ছিলো।

আজ কোন রাগই নয় নন্দিনি, বরং এভাবে আগলে না শুলে হয়তো রাগ হত..

ধিরে ধিরে তুর্জের বাধন থেকে বেরিয়ে চলে এসেছে…

তবে বাহিরে যে তুফান তার কি করবে।

সপ্না রাগে গিজ গিজ করছে, নন্দিনি কি করে পারল এমনটা সোহামকে আমার কাছে দিয়ে চলে গেছে??

নন্দিনি তো এ বিষয়ে কিছুই জানেনা তবে সোহাম কে ঐ ঘর থেকে বের হতে দেখে সব বুঝে গেছে।

সপ্নার চোখের আগুন সইতে না পেরে সোজা রান্না ঘরে ছুটেছে..

সপ্নাও পিছন পিছন গিয়ে নন্দিনির সামনে দারিয়ে জিজ্ঞাস করলো এটা কি হল নন্দিনি?

নন্দিনি নিজের ঢুক গিলে বললো ভাবি আসলে আমি রাতে উনার ঘরে গিয়ে ছিলাম, তার পর….

সপ্না নন্দিনির মুখ চেপে বললো বাস বাস আর বলতে হবে না,
নিজের মুখটা ছারিয়ে নন্দিনি আবার বললো না না ভাবি আগে শুনুন না…

সপ্নার রাগি চোখ কিছুটা মায়ালু ধারন করে বললো আর বলতে হবে না, তোমার স্বামীর কাছে গেছো বেশ ভালো,তা আমায় কইফত দিবে কেন???

আর দুষটা তো আমারই কোথায় তোমরা এখনকার সময়টা উপভুগ করবে নিজের অংশকে নিয়ে সপ্ন বুনবে তা নয় আমি মাঝ খানে এসে সব নষ্ট করলাম…

না না ভাবি আপনি…

আরে থাক থাক কাজে মন দাও বলে নন্দিনির কথাটা শেষ আর করতে দিলোনা,

~~~~~~~~
দুপুরে সোহাম বেশ তুর জুর হয়েই রেডি হয়েছে, হাতে বড় লাগেজটা নিয়ে বেরিয়ে শিলা বেগমের কাছে গিয়ে বললো, মা একটা কথা বলার ছিলো

শিলা বেগম একবারও সোহামের দিকে তাকায় নি, তাই দেখতে পেলো না ছেলের মলিন হয়ে জাওয়া মুখটা,
কিভাবে শুকিয়ে আছে।

কোন উওর না পেয়েও সোহাম নারাজ নয় এটা তো হবারই ছিলো।
উওরের অপেক্ষা না করেই বললো মা আমি চলে যাচ্ছি,
এই সংসারের অশান্তি আমি আমিই চলে জাচ্ছি,

এনি ও চলে গেছে আর আসবে না কখনো ফিরে, ওর চাওয়া ছিলো টাকা ঐ টাকা পেয়ে সে চলে গেছে…

তুর্জ শিলা বেগম আর সোহাম সপ্না চার জন জনই হতবাক মানে কি নন্দিনি কি বললো? এনি চলে গেছে কখন গেলো কি করে গেলো,

নন্দিনি একটুও অবাক নয়, কারন তো আছেই।

সপ্নার কাছে এসে নন্দিনি বললো আপনাদের হয়তো জানা নেই,তাই আমি সব বলি..
ভাইয়ার নয়,
টনির বাচ্চার বাবা এনির বয়ফ্রেন্ড “পিয়াস’
যে কি না টাকার লোভে পরে নিজের বাচ্চাকে সোহামের বলে চালিয়ে মোটা অংকের টাকা চাইতে চেয়েছিলো।
এনি প্রথম রাজী না হলে ও পরে রাজি হয়ে যায়,

এনি আগেই সোহাম ভাইয়াকে ফাসাতে চেয়েছিলে,তবে পারেনি তাই মদের নেশায় ফেলে নিজেকে সফল করেছিলো।

আর তার পর থেকেই ব্লেক মেইল শুরু হয়,

নানা ভাবে ভাইয়ার কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছে, নয়তো ছবি গুলো সব ভাবিকে দেখিয়ে দেওয়া ভয় দেখিয়ে।

ভাইয়াও আপনাকে হারাতে চায়নি তাই সব কামাই এনির হাতে তুলে দিত।

এতেও এনি শান্ত হয় নি, তার পর আরো নোংরা খেলায় মেতেছে।
নিজেকে ভাইয়ার বাচ্চার মা হতে চলেছে বলে বিয়ের জন্য প্রেসার দিতে থাকে,

তারপরও শান্ত নয় টাকা তো সব হাতিয়ে নিয়েছিলো।
তার পর তুর্জ মানে আপনার দেবর যখন এনি কে বললো ভাইয়াকে ছেরে দিতে সে দ্রুত রাজি হয়ে গেছে, কারন টা ছিলো ভাইয়া নিশ্ব , আর এবার তুর্জের কামাইয়ের দিকে নজর ছিলো,

,দুদিন আগেই আমি এনির মোবাইলের মেসেজ গুলা চেক করে সব তথ্য পাই।

তার পর ওকে সোজা ভাবে টাকার অফার করেছি,

সে প্রথম রাজি তো হতে চায় নি, তবে টাকার জন্যই এত কিছু সেই টাকা যখন পাচ্ছে তাতে আর লস নয়।

আমি ওকে বলেছিলাম কত টাকা চায়, লোভি মেয়ে এক কোটি তে রাজি হয়ে গেছে,

আমিতো ওকে ২ কোটি চাইলেও দিয়ে দিতাম,

আর এই নিন ওর সব ভিডিও, নিজ মুখে সব স্বিকার করেছে, আর এই স্টেম পেপারে সাইনও করেছে

এনি ভাইয়াকে ফাসাতে চেয়েছিলো ঐ বাচ্চাটা আসলে কিসের পেপার্স তুর্জ হাতে নিতে নিতে..

তুর্জ পেপার্স টা দেখে হা হয়ে আছে,
নন্দিনি আবার একটু হেসে বললো আরে মসাই কাগজে কলমে শুধু আপনারা নন আমরাও পারদর্শি।

সপ্নার হাতে কাগজ টা দিয়ে নন্দিনি মুখে চিতল হাসি দিয়ে বললো, ভাবি এতে লিখা আছে এনির বাচ্চার বাবা কে এবং আর জীবনে আমাদের কাছে এসে কোন রকম ব্লেকমিল করতে পারবেনা আর এই রইলো ছবির সব নেগেটিবস।

সপ্না তো ধপ করে বসে পরেছে,চোখে পানি নিয়ে নন্দিনিকে পশ্ন করছে বাচ্চাটা না হয় তার নয় তবে আমায় তো ঠকিয়েছে তা তো ঠিক??

নন্দিনির মুখে আর উওর নেই,কি আর বলবে,তবে সোহাম কিছুটা বিচলিত এত গুলো টাকা কোথায় পেলে নন্দিনি??

আরে ভাইয়া আমার কাছে ছিলোতো তার থেকেই কিছু দিয়েছি!!

নন্দিনির কথায় সবাই অবাক, এই মেয়েটা কি মানুষ নাকি না, এত গুলো টাকা কেও নিজের ভাসুরের সংসার বাচাঁতে দিয়ে দেয়…

শিলা বেগমের এমন আশ্চজ জনক কথায় নন্দিনি একটু বসে বললে মা ভাসুরের নয় আমার সংসার টা বাচিঁয়েছি,
কারন ভাইয়া ভাবির কষ্টে উনিওতো কষ্ট পাবে!আর উনি পেলে আমিও তো পাবো…

তুর্জ বেশ খুশি আজ কাল নিজের সংসারটা বেশ বুঝে নিয়েছে।

~~~~~
তবে পশ্ন একটাই থেকে যায় সোহাম কি ক্ষমা পাবে কিনা…

সে তো সত্যি অন্যায়টা করেছে..
মেয়েরা তো স্বামীর ভাগ কাওকে দেয় না, তাহলে এমনটা করার পর কি সপ্না মেনে নিবে??
আবার নতুন করে সংসার শুরু করবে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here