#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৭
আইরাত তার কোমড়ে হাত দিয়ে বিছানার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। মেজাজ এত্তো খারাপ হচ্ছে বলার বাইরে। আর আব্রাহাম খুব কষ্টে হাসি দমানোর চেষ্টা করছে তবুও যেনো পারছে না। সে খেয়াল করে দেখে আইরাত মুখটাকে কেমন বাংলার পাঁচ বানিয়ে রেখে দিয়েছে। তা দেখে আব্রাহাম তার গলা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। আইরাত বেড থেকে নেমে পরে। তবে এবার আব্রাহাম আবার ফিক করে হেসে দেয়। আইরাত এবার অসহায় ভাবে তার দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; আ”ম সো সরি বেবিগার্ল! কি করবো বলো হাসি থামছেই না। আল্লাহ জানেন আমি কত্তোদিন পর এভাবে হাসলাম।
আইরাত;; আমি ভেবেছি আপনি ভয় পাবেন।
আব্রাহাম;; ওহ আচ্ছা আচ্ছা। আমি ভয় পাবো। ভয় তাও আমি। ভালোই বললে।
আইরাত;; আসলে আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল যে যেই মানুষ এতো ভয়াবহ কান্ড গুলো করেও ভয় তো দূর হাতও কাপে না সে এই ভূতের ভয় পাবে।
আব্রাহাম;; আসলে আমি ভয় পাই।
আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; আমি মাঝে মাঝে সত্যিই খুব বেশিই ভয় পাই।
আইরাত;; আপ….
আব্রাহাম;; তোমাকে হারাতে ভয় পাই আমি। আমি চাই না তুমি কখনো আমার থেকে দূরে যাও। তুমি আমার নিঃশ্বাসে আমার অস্তিত্বে মিশে আছো। আমার সবসময় ভয় হয় তোমাকে হারানোর। তুমি তো আমার কাছে থাকতে চাও না। বুঝোই না যে কতোটা ভালোবাসি আমি তোমায়। কিন্তু আমি যেতে দিবো না তোমাকে। আব্রাহাম ভালোবেসেছে আইরাত কে আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবাসবে এই আইরাত কেই।
আইরাত তার চোখ গুলো নামিয়ে ফেলে। আব্রাহাম উঠে চলে যায়। তারপর খাবার নিয়ে এসে আইরাত কে খাইয়ে দেয়। প্রথমে খেতে না চাইলে আব্রাহাম দেয় এক ধমক তারপর গপাগপ সব খেয়ে নেয়। এভাবেই প্রায় বেশ সময় কেটে যায়। আইরাতের চোখে ঘুম নেই। মা”র কথা মনে পরছে। কবে এখান থেকে বাইরে যেতে পারবে! কবে নিজের বাড়ি ফিরবে! এইসব কিছুই মাথায় ঘুড়ছে এখন। আব্রাহাম তাকে যেতে দেয় না। আর এখান থেকে তো পালানো অসম্ভব ব্যাপার। আব্রাহামের সামনে এখান থেকে দূরে যাওয়ার কথা বলতেও পারে না। ধমক দিয়ে বসিয়ে রেখে দেয়। বিছানার ওপর থাই গ্লাসের সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে দিয়ে বসে আছে। রুমের সামনেই করিডর, সেখান থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড়ের ন্যায় সুউচ্চ দালানকোঠা রয়েছে। তার ওপরেই তারা দিয়ে ভর্তি রাতের আকাশ। আকাশ টা রুম থেকেই ক্লিয়ার দেখা যায়। আর সেদিকে তাকিয়েই একের পর এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ছে আইরাত।
ওদিকে আব্রাহাম আইরাতের রুমের পাশের রুমেই বসে আছে। হাতে কতো গুলো ফাইল। আব্রাহামের সামনেই একজন মুন্সী টাইপ লোক বসে আছে। আসলে আব্রাহামের পরিচিত একজনই। আব্দুল মোতালেব। উনার হাতেও কতোগুলো কাগজ রয়েছে।
আব্রাহাম;; চাচা, কি করতে হবে জানেন তো!
আব্দুল;; হ্যাঁ সবই জানি। কাবিননামাও তো রেডি। এখন শুধু বাকি কাজ টুকু করে নিলেই হয়েছে। তবে..
আব্রাহাম;; কি?
আব্দুল;; আইরাত মা কি মানবে?
আব্রাহাম;; মানতেই হবে।
এই বলেই আব্রাহাম চলে যায় আইরাতের রুমে। রুমে গিয়ে দেখে আইরাত চুপটি মেরে বসে আছে। আব্রাহামের এখন আইরাতের ওই ভূত সাজার কথাগুলো মনে পরছে। সাথে বেশ হাসিও পাচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ শুনে আইরাত সেদিকে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম এসেছে।
আব্রাহাম;; আমার বেবিগার্লের বুঝি মন খারাপ?
আইরাত;; _________________________
আব্রাহামের কথা শুনে আইরাত অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। বুঝলো পাহাড় সমান অভিমান জমে আছে। আব্রাহাম একটা সিটিং বল নিয়ে আইরাতের সামনে বসে পরে। আইরাত আবার উঠে চলে আসতে নিলে আব্রাহাম খপ করে তার হাত ধরে বসিয়ে দেয় আবার। আইরাতের হাত দুটো নিজের দুহাতের মাঝে এনে বলে…
আব্রাহাম;; কি হয়েছে?
আইরাত;; আম্মুর কথা মনে পরছে।
আব্রাহাম;; হুম বুঝলাম।
আইরাত;; আচ্ছা আব্রাহাম আপনি তো আমায় ভালোবাসেন তাই না! আমাকে হ্যাপি রাখার জন্য সব কিছুই তো করতে পারেন। আমার খুশিটাই আগে দেখেন তাই না!
আব্রাহাম;; হুমমম।
আইরাত;; তাহলে…..
আব্রাহাম;; এখন তুমি বলবে যে “তাহলে আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন, আমি এতেই হ্যাপি” আ’ম আই রাইট বেবিগার্ল!
আইরাত তার মাথা ওপর-নিচ করে।
আব্রাহাম;; দিবো।
আইরাত;; সত্যি 😃
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, তবে আমার কিছু কন্ডিশন আছে।
আইরাতের মুখ টা আবার চুপসে যায়।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; রাইট নাও আই ওয়ানা কিস।
আইরাত;; কিহ?
আব্রাহাম;; তুমি দিবে নাকি আমি নিবো?
আইরাত;; না, দূরে থাকুন।
আব্রাহাম;; আচ্ছা আমিও ভেবেছিলাম যে তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসবো খুব দ্রুতই। কিন্তু না তুমি তো কথাই শুনো না তাই থাক। প্ল্যান ড্রপ। বাড়ি ফেরা হচ্ছে না তোমার জানপাখি।
আইরাত;; এই না না আমি, আমি বাড়ি যাবো।
আব্রাহাম;; তাহলে কিস দাও।
আইরাত;; আপনি এমন কেনো?
আব্রাহাম;; শুনো আমি এখনো তোমার সাথে কিছুই করি নি বুঝলে। একবার শুরু করলে সামাল দিতে পারবে না। তাই এখন যা বলছি তা করো।
আব্রাহাম আইরাতের দিকে নিজের গাল এগিয়ে দেয়। আর আইরাত শুকনো কিছু ঢোক গিলে। দিবে কি দিবে না তা ভাবছে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল জলদি করো নয়তো আমিই কিছু একটা করে দিবো কিন্তু।
আব্রাহামের এই কথা বলার সাথেসাথেই আইরাত টুপ করে আব্রাহামের গালে একটা চুমু বসিয়ে দেয়। যেনো হাওয়ার বেগে।
আইরাত;; শেষ শেষ
আব্রাহাম কপাল কুচকে তার দিকে তাকায়। ভরাট কন্ঠে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; এটা কি ছিলো?
আইরাত;; ক ক কিস।
আব্রাহাম;; তাই, এটা কিস! আমার তো জানা ছিলো না।
আইরাত;; এখন আমায় বাড়ি দিয়ে আসুন।
আব্রাহাম;; চুপ সবসময় শুধু বাড়ি বাড়ি বাড়ি। শশুড়বাড়ি থাকবে কি করে।
আইরাত;; আমি কখনো বিয়েই করবো না।
আব্রাহাম;; এটা শুধুমাত্রই তোমার ভূল ধারণা।
আইরাত;; আমি তো আপ……
আব্রাহাম;; কিস দেওয়া হয়নি। এইপাশে আরেকটা।
আব্রাহাম তার আরেক গাল আইরাতের দিকে এগিয়ে দেয়। আইরাত এবার মুখটা ভেটকিয়ে দেয়। এ কি বিপদ রে বাবা।
আব্রাহাম;; কি হলো দিচ্ছো না কেনো?
আইরাত;; ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি। (মনেমনে)
আব্রাহাম;; আইরাত।
আইরাত;; এভাবে তাকান কেনো ভয় লাগে তো, দিচ্ছি।
আইরাত এবার আস্তে আস্তে আব্রাহামের গালের দিকে এগিয়ে যেতে লাগে। যেই না কিস করতে যাবে ওমনই আব্রাহাম তার মাথা সোজা করে নেয়। ফলে তার ঠোঁটের সাথে আইরাতের ঠোঁটগুলো লেগে যায়। আইরাত তো চোখগুলো বড়ো বড়ো করে ফেলে মূহুর্তেই। আব্রাহামের কাছ থেকে চলে আসতে নিবে কিন্তু আব্রাহাম একহাতে আইরাতের কোমড় প্যাচিয়ে ধরে আরেকহাতে আইরাতের গাল আর গলার মাঝ বরাবর ধরে। আইরাতের ঠোঁট গুলো আকড়ে ধরে নিজের করে নেয়। যেনো আইরাতে ডুবে গেছে এমন। আইরাত যে নড়াচড়া করবে তারও স্কোপ নেই। আব্রাহাম এতো টাই শক্ত করে ধরে আছে তাকে। আব্রাহামের হাতটা আইরাতের গলাতে বিচরণ করে চলছে আর এতে আইরাত থেকে থেকে কেঁপে ওঠছে। হঠাৎ আব্রাহাম আইরাতের নিচের ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দেয়। আইরাত চোখ-মুখ কুচকে ফেলে। নিজের হাত দিয়ে আব্রাহামের বুকে কিছুটা ধাক্কালে আব্রাহাম যেনো তাকে টান দিয়ে নিজের আরো কাছে এনে পরে। এভাবে ঠিক কতোক্ষণ ছিলো মনে নেই। তবে আব্রাহাম এবার খেয়াল করে যে তার গালের কিছুটা অংশ ভেজা। হালকা করে চোখ মেলে তাকায়। দেখে আইরাতের চোখ একদম টলমল করছে পানিতে। সেই পানিই তার গালে পরেছে। আব্রাহাম আস্তে করে আইরাত কে ছেড়ে দেয়। দুহাতে আইরাতের গাল দুটো ধরে নিয়ে নিজের মাথার সাথে আলতো করে তার মাথা ঠেকিয়ে দেয়। আইরাত চোখ বন্ধ করে ফেলে। গাল বেয়ে একবিন্দু নোনা জল গড়িয়ে পরার আগেই আব্রাহাম তার বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে দেয়। আইরাতের কপালে চুমু এঁকে দেয়। এবার আব্রাহাম সোজা হয়ে বসে। আইরাত চোখ মেলে তার দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আইরাত আব্রাহামের নজর অনুসরণ করে নিজের দিকে তাকায়। দেখে আইরাতের ওরনা টা অনেকাংশেই তার বুক থেকে সরে গিয়েছে। আইরাত দ্রুত ঠিক করে নেয়।
আব্রাহাম;; হয়েছে আর ঠিক করে লাভ নেই।
আইরাত;; আ..
আব্রাহাম;; একে বলে কিস বুঝলে।
আইরাত;; লুচুগিরি বলে একে।
আব্রাহাম;; শীঘ্রই তুমি তোমার বাড়ি যাচ্ছো।
আইরাত;; সিরিয়াসলি, আপনি বলছেন এই কথা?
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন মিথ্যা বলছি আমি। কোন বাড়ি টাড়ি যাওয়া হবে না তোমার।
আইরাত;; এই না না না আমি তো এমনিই বলছিলাম। আমি যাবো, বাড়ি যাবো আমি।
আব্রাহাম;; আমি নিজে দিয়ে আসবো।
আইরাত;; হুম।
আব্রাহাম এই বলেই উঠে পরে। আইরাতের রুম থেকে চলে আসতে ধরবে তবে আবার থেমে যায়।
আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল!
আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আইরাত;; হুম।
আব্রাহাম;; একটা হেল্প করবে?
আইরাত;; আমি আপনাকে কি করে হেল্প করবো!
আব্রাহাম;; আসলে আমি না অনেকক্ষণ যাবত একটা প্রশ্নের উত্তর মনে করার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই মনে পরছে না। প্লিজ তুমি বলে দাও না।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম আইরাতের দিকে তার এক ভ্রু উঁচু করে তাকায়।
আব্রাহাম;; আফগানিস্তানের রাজধানীর নাম কি?
আইরাত;; কবুল।
আব্রাহাম;; কি কি?
আইরাত;; কবুল।
আব্রাহাম;; এবারও বুঝলাম না।
আইরাত;; কবুল কবুল কবুল আরে কবুল।
আব্রাহাম;; থ্যাংক ইউ বেবিগার্ল।
আব্রাহাম হেসে দিয়ে আইরাতের রুম থেকে বের হয়ে পরে আর আস্তে করে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে ওঠে। একই প্রশ্ন কয়েকবার করায় আইরাত বিরক্তি হয়ে এতোই জোরে বলেছে যে পাশের রুম অব্দিও শোনা গিয়েছে। আর সেইদিন রাতে আইরাত আব্রাহামকে অধিকারের কথা বলেছিলো রাগের মাথায়। তার জন্য আব্রাহাম রাশেদ কে ফোন করে কাবিননামার কথাই বলেছিলো। আব্রাহাম পাশের রুমে এসে পরে। সব হয়ে গেছে। এবার শুধু কাবিননামায় সাইন করাতে হবে আইরাতের, আব্রাহাম করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর আব্রাহাম হাতে কাগজগুলো নিয়ে আইরাতের রুমে আসে। এসে দেখে আইরাত বই পড়ছে।
আইরাত;; আপনি?
আব্রাহাম;; কিছু ফাইলে সাইন করতে হবে তোমায়।
আইরাত;; কিন্তু কিসের ফাইল এগুলো?
আব্রাহাম;; তা তোমার জেনে কাজ নেই। যা বলছি তাই করো চুপচাপ।
আইরাত;; কিন্তু আ……
আব্রাহাম;; সাইন করো আইরাত।
আব্রাহাম যেনো এবার বেশ সিরিয়াস হয়ে গেলো। আইরাত বার দুয়েক আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে চট জলদি সাইন করে দেয়। তা নাহলে যে বাড়ি ফিরতে দিবে না। আইরাত কে পড়তেও দেয় নি কিছু। শুধু সাইন করিয়ে এনে পরেছে। কিসব পেপারে সাইন করলো আইরাত তা নিজেও জানে না। আব্রাহাম তার পাশের রুমে চলে যায়। সেখানে বাকিসব কাজ মিটিয়ে ফেলে। আইরাতের শুধু কবুল আর সাইন করাই ছিলো তা করে দিয়েছে। আজ অগোচরেই আব্রাহামের সাথে আইরাতের বিয়ে হয়ে গেলো। অবশেষে সব কাজ শেষ করে আব্রাহাম আইরাতের রুমে আসে।
আইরাত;; আচ্ছা ওটা, ওটা কিসের পেপার ছিলো বলুন তো?
আব্রাহাম;; এতোকিছু তোমার না জানলেও চলবে।
আইরাত;; রাত তো অনেক হয়েছে আমি ঘুমাবো।
আব্রাহাম;; তো ঘুমাও।
আইরাত;; না মানে বলছিলাম কি যে আপনি এখান থেকে…
আব্রাহাম;; যাবো না।
আইরাত;; মানে?
আব্রাহাম;; আমি এখানেই থাকবো। তোমার সাথেই থাকবো আর একই বেডে থাকবো।
আইরাত আবার বিছানার ওপর দাঁড়িয়ে পরে।
আইরাত;; কিহ না। মোটেও না। আপনি প্লিজ আপনার রুমে যান।
আব্রাহাম;; আমি আমার রুমেই আছি।
আইরাত;; মানে আমরা একই রুমে থাকতে পারি না। এটা কীভাবে সম্ভব।
আব্রাহাম আর আইরাতের বকবকানি না শুনে তার হাত ধরে দেয় এক হেচকা টান। এতে আইরাত হুমড়ি খেয়ে আব্রাহামের বুকের ওপর পরে যায়। চুলগুলো সামনে এসে পরেছে। মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে মুখের সামনে আসা চুলগুলোকে কানের পেছনে গুজে দেয়।
আব্রাহাম;; এখন আর একটা কথা বললে ছাদে রেখে আসবো। আর আমি শুনেছি মাঝরাতে ছাদের ওপর জ্বীন-ভূতরা সব নাইট পার্টি করে।
তখনই বাইরে বেশ জোরেই বাজ পরে। ওয়েদার ভালো না। হয়তো বৃষ্টি নামবে আকাশ কাঁপিয়ে। আইরাত আব্রাহামের টি-শার্ট টা হাত দিয়ে হালকা করে খামছে ধরে। আর আব্রাহাম আইরাত কে বিছানাতে শুইয়ে দেয়।
আইরাত;; শুনুন তাহলে এককাজ করুন আমি না হয় সোফাতে থাকি আর আপনি এখানেই শুয়ে পরুন। আমি যাই।
এই বলেই আইরাত বিছানা থেকে নেমে যেতে ধরবে তখন আব্রাহাম আইরাতের কোমড়ে ধরে আবার বিছানাতে কিছুটা জোরেই ধাক্কা মেরে শুইয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; আর একটা কথা মুখ দিয়ে বের করলে আমি কি যে করে ফেলবো তোমাকে আইরাত। নিজেকে কন্ট্রোল করা কিন্তু মুশকিল হচ্ছে আমার জন্য। বেশি ছটফট করলে যা করতে চাইছি না এই মূহুর্তে তাই করে ফেলবো।
আইরাত বুঝলো আব্রাহামের মাথা আসলেই ঠিক নেই। এখন কথা না শুনলে কপালে শনি নামবে তার। তাই আইরাত চুপ মেরে যায়। আর আব্রাহাম তাকে নিজের বুকে নিয়ে শুয়ে পরে। আব্রাহাম একহাত দিয়ে আইরাতের কোমড়ে ধরে আরেকহাত তার মাথার পেছনে চুলে ডুবিয়ে রেখেছে। আইরাত বর্তমানে আব্রাহামের বুকের সাথে লেগে আছে। আইরাতের উষ্ণ নিঃশ্বাস আব্রাহাম তার বুকে অনুভব করতে পারছে। আব্রাহাম থেকে থেকেই আইরাতের মাথায় চুমু এঁকে দিচ্ছে। কখন যে দুজনেই ঘুমিয়ে গেছে জানা নেই। এভবেই রাত টুকু পার হয়ে যায়।
পরেরদিন সকালে আইরাতের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তার পাশে কেউই নেই, জায়গা ফাকা। তখনই রুমে ব্রেকফাস্ট নিয়ে আব্রাহাম আসে। এসে দেখে আইরাত আড়মোড়া ভাঙছে।
আব্রাহাম;; Good morning Babygirl..!
আব্রাহাম হাত থেকে কফি-ব্রেড-জুস মিনি একটা টেবিলে রেখে দেয়। তারপর রুমে থাকা বড়ো বড়ো পর্দা গুলো মেলে দেয়। থাই গ্লাস খুলে দিলে। কড়া রোদ রুমের ভেতরে এসে প্রবেশ করে।
আব্রাহাম;; ঘুম হলো।
আইরাত;; হুম।
আব্রাহাম;; এবার জলদি ফ্রেশ হয়ে এসে ব্রেকফাস্ট করো এক জায়গায় যেতে হবে।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; গেলেই বুঝবে।
আইরাত উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে পরে। আব্রাহাম তাকে ব্রেডে জ্যাম দিয়ে দিচ্ছে। আইরাত খাচ্ছে, খাওয়ার মাঝেই হঠাৎ আইরাতের হেচকি উঠে পরে। আব্রাহাম দ্রুত জুস টা খাইয়ে দেয় তাকে। আইরাত প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখে তার আধো খাওয়া ব্রেড টুকু নেই।
আইরাত;; আমার ব্রেড কই?
তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তা খাচ্ছে। তারপরেই আবার আইরাতের খাওয়া জুস টুকু নিয়ে নিজে খেয়ে নেয়।
আইরাত;; আরে আরে করছেন টা কি?
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; এটা আমার আধো খাওয়া।
আব্রাহাম;; সো হুয়াট?
আইরাত;; আরে আমার খাওয়া জিনিস আপ…..
আব্রাহাম;; আমার কাছে এটাই বেস্ট। খেতে দাও তো চুপ করে থাকো।
আইরাত আর কি বলবে। আব্রাহাম খেয়ে নেয়। তারপর একজন স্টাফ এসে এইসব কিছু নিয়ে চলে যায়। আব্রাহাম এবার উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে একটা এশ কালারের হাটু অব্দি জামা আনে তার ওপর মেরুন কালারের একটা শর্ট জেকেট আর কিছুটা উঁচু ফুল কভার্ড জুতো। নিজেও আইরাতের সাথে ম্যাচ করে ব্ল্যাক কালারের প্যান্ট, ভেতরে এশ কালারের শার্ট আর ওপরে মেরুন কালারের জেকেট বের করে। এতো কাপড় বের করছে দেখে আইরাত কনফিউজড।
আইরাত;; এগুলো?
আব্রাহাম;; গেট রেডি। আর আমি যা বের করেছি তাই পরবে। এখন জলদি যাও।
আইরাত ড্রেস গুলো নিয়ে চেঞ্জিং রুমে চলে যায়। ১০-১৫ মিনিট পর রুমে আসে। এসে দেখে আব্রাহাম নিজের ওপরে জেকেট জড়াচ্ছে। আয়নাতে আইরাতের প্রতিবিম্ব দেখে আব্রাহাম তার পেছনে ঘুরে। দেখে আইরাত দাঁড়িয়ে আছে।
দারুন কিউট লাগছে দেখতে। আব্রাহাম তার দিকে এগিয়ে যায়। খেয়াল করে দেখে আইরাতের গালগুলো বেশ ফোলা ফোলা লাগছে। আব্রাহাম আইরাতের গাল গুলো টেনে দেয়।
আব্রাহাম;; আরে আমার গোলুমোলু রে।
এই বলেই আইরাতের গালে ধরে কষে একটা চুমু দিয়ে দেয়। আর আইরাত নাক কুচকে ফেলে।
আব্রাহাম;; সারাজীবন এমনই থাকবে বুঝেছো আমার গোলুমোলু। ওইসব পাটকাঠি/হাড়-মাংস ছাড়া আমার একদম পছন্দ না।
আইরাত;; তার মানে আমি মোটা?
আব্রাহাম;; আমার গোলুমোলু।
আসলে আইরাতের গোলগাল চেহারা, গালে মাংস বেশি থাকায় কিউট লাগে বেশি।
আব্রাহাম;; এবার যাওয়া যাক! (হাতে ঘড়ি পরতে পরতে)
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে। আরেক হাতে নিজের জেকেটের কলার ঠিক করতে করতে বের হয়ে পরে। গার্ড”রা সব গেইট খুলে দেয়। রাশেদ কে ফোন করে আসতে বলে। গেস্ট হাউজ একদম লক করে তারপরই যেতে বলে। আইরাত আর আব্রাহাম গাড়িতে করে যাচ্ছে। আব্রাহামের পাশেই আইরাত বসা। আইরাত তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে বলেও না। তবে যেতে যেতেই একটা জায়গায় এসে পরে তারা। আইরাত এবার তার কপাল কুচকে উইন্ড দিয়ে বাইরে তাকায়। এই রাস্তা টা তার অনেক চেনা পরিচিত। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায় তবে তার মাঝে কোন হাবভাব নেই। দেখতে দেখতে গাড়ি থেমে যায়। উইন্ড দিয়ে এবার বাইরে তাকাতেই আইরাতের বুক টা ধুক করে ওঠে। তাদের গাড়ি আইরাতের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ফট করে মাথা ঘুরিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায় কিন্তু দেখে আব্রাহাম ড্রাইভিং সীটে বসে নেই। পরমূহুর্তেই তার পাশের দরজা টা খুলে আব্রাহাম বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল বাইরে এসো।
আইরাত বাইরে নেমে আসে। নেমে এসেই প্রথমে চোখ যায় তার বাড়ির একদম ভেতরে।
আব্রাহাম;; নাও, এসে পরলাম তোমার বাড়িতে।
আইরাত;; আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসতে চাইছিলেন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, বলেছিলাম না কাল রাতে যে তোমায় বাড়ি যেতে দিবো।
আইরাত;; _________________________
আব্রাহাম;; এবার যাও।
এখন আইরাতের মাথায় শুধু ঘুরছে যে বাসায় গিয়ে আইরাত তার মা কে কি বলবে। কোথায় ছিলো এই তিন-চারদিন। জিজ্ঞেস করলে কি বলবে সে। আইরাতের ধ্যান ভেঙে যায় আব্রাহামের ডাকে।
আব্রাহাম;; জানপাখি ভেতরে যাও। নাকি আমি এখন ভেতরেও দিয়ে আসবো।
আইরাত এক নজর আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে সোজা নিজের বাড়ির দিকে দেয় এক দৌড়। বাড়ির গেইট হাত দিয়ে ঠেলে ভেতরে দৌড়িয়ে চলে যায়। আইরাত দৌড়ে যাচ্ছে আর আব্রাহাম তার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দুইহাত ভাজ করে আইরাতের যাওয়ার দিকে এক শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে।
।#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৮ {বোনাস ❤️}
‘আজ নিয়ে চারদিন হয়ে এলো বলে। এর মাঝে আইরাতের কোন খবর নেই। পুলিশ অফিসার রা কি সবাই গরুর ঘাস কাটতে গিয়েছে। পুলিশ স্টেশনে গেলে বলে এভাবে রোজ রোজ আসতে হবে না। কোন খোঁজ-খবর পেলে আমরাই আপনাকে ফোন করে জানাবো। এভাবে হাতের ওপর হাত রেখে বসে থাকা যায়। এভাবে আর কতো আর কতো দিন। না জানি কি হালে আছে আইরাত কি করছে।’
কথা গুলো একনাগারে চিল্লিয়ে বলে ওঠে অবনি। সামনেই নিলয়, তৌফিক আর দিয়া সবাই বসে আছে। অনামিকার শরীর প্রচন্ড রকমের খারাপ করেছে মেয়ের চিন্তায়। পুলিশ রা এই ব্যাপার টাকে খুব হালকার ওপরে নিয়ে রেখে দিয়েছে। কেননা আব্রাহাম তাদের মুখে মোটা অংকের টাকা ছুড়ে মেরেছে। আর যেহেতু আইরাত তারই কাছে ছিলো সেখানে চিন্তার কোন কারণই নেই। সবাই একরাশ চিন্তা মাখা মুখ নিয়ে বসে আছে হলরুমে। তখনই রুমের ভেতরে আইরাত দৌড়িয়ে আসে। আর এসেই থ। সবার নজর যায় বাড়ির দরজাতে আইরাতের দিকে। সবাই যেনো ভুত দেখার মতো করে চমকে যায়। এখন এই মূহুর্তে যে আইরাতকে দেখতে পাবে তা কেউ ভাবেই নি। অনামিকা উঠে ভালোভাবে বসে। কাদো কাদো মুখ। সবাই ছুটে আইরাতের কাছে চলে যায়। চারিপাশ থেকে ঘিড়ে ফেলে। প্রথমেই অনামিকা দৌড়ে গিয়ে কেঁদে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। মুখে হাজারো চুমু দিয়ে বলে ওঠে…
অনামিকা;; কোথায়, কোথায় গিয়েছিলি তুই আমাকে একা রেখে। জানিস না তুই ছাড়া আমার কেউ নেই। এভাবে না বলে কয়েই কোথায় গিয়েছিলি। আমার কথা একটাবারও ভাবলি না। জানিস কত্তো কত্তো জায়গায় খুঁজেছি তোকে। পুলিশে কমপ্লেইনও করেছি। কোথায় ছিলি তুই এতোটা দিন।
অবনি;; তুই ফোন রেখে গিয়েছিস বাসায়, তোর রুমের জানালার কাচ ভাঙা ছিলো। আর পেয়েছি কি একটা লেটার। কে লিখেছে, কে নিয়ে গেলো তোকে কিচ্ছু জানলাম না বুঝলাম না।
তৌফিক;; অন্য কারো ফোন দিয়ে ফোন করে একটা বার বলতি যে কোথায় আছিস তুই, কেমন আছিস। এদিক দিয়ে আমাদের সবার জান যায় যায় অবস্থা জানিস।
দিয়া;; কে নিয়ে গিয়েছিলো তোকে আর কেনো?
নিলয়;; আর এখনই বা কোথা থেকে এলি? কে দিয়ে গেলো? মামিকে তো আর একটু হলেই হস্পিটালে নিয়ে যেতে হতো।
অবনি;; কিরে কিছু বল।
আইরাত;; চুপ করো একটু সবাই।
আইরাত দুহাত দিয়ে সোজা নিজের মাথা চেপে ধরেছে। এত্তো গুলো প্রশ্ন আর নিতে পারছে না। যদিও সবাই তাদের জায়গায় স্বাভাবিক। ঠিকই আছে, এতোদিন পর বাড়ির মেয়ে বাড়ি ফিরলে এতোগুলো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসাবাদ করা টাই স্বাভাবিক৷ তবে এখন আইরাত এদের কি জবাব টা দিবে তাই ভাবছে। সে গিয়ে সোফাতে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বসে পরে। আর বাকি সবাই তার পাশে এসেই বসে।
অনামিকা;; কিছু বলিস না কেনো কোথায় ছিলি এতোদিন তুই?
আইরাত;; মা আমি..
সাবিলা;; কিরে আইরাত এসেছিস বাড়ি অবশেষে তুই!
সবাই তাকিয়ে দেখে সাবিলা ভেতরে আসছে। আইরাত এমনিতেই টেনশনে বাঁচছে না যে এদের কি জবাব দিবে এখন তার ওপর এই কুটনি মার্কা ফুপি। বিরক্তি লেভেল হাই। সাবিলা এসে সোফাতে বসে।
সাবিলা;; এই এতোগুলো মানুষ কে হয়রানিতে রেখে কোথা থেকে এসেছিস বল। জীবনে যা করতে হয় নি তা এখন তোর জন্য সবাই কে করতে হচ্ছে। জানিস পুলিশ স্টেশনে যেতে হয়েছে।
আইরাতের রাগ উঠে যায়।
আইরাত;; তো গিয়েছো কেনো? আমি যেতে বলেছিলাম তোমাদের।
সাবিলা;; দেখো দেখো কীভাবে কথা বলে।
নিলয়;; মা
নিলয় ইশারাতে সাবিলা কে চুপ করে যেতে বলে। সাবিলাও চুপ হয়ে বসে। দিয়া এবার আইরাতের পাশে গিয়ে বসে শান্ত সুরে বলে…
দিয়া;; দেখ আইরু কোথায় ছিলি এতোদিন বল।
আইরাত;; কি বলবো আমি এখন (মনেমনে)
অনামিকা;; আইরাত, এখন যদি তুই কিছু না বলিস ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় খাবি।
আইরাত;; আমি কিছু কাজে শহরের বাইরে গিয়েছিলাম।
তৌফিক;; কি, কি বলিস এগুলো।
অবনি;; তোর এমন কি কাজ পরে গেলো যার জন্য তোকে শহরের বাইরে যেতে হলো তাও আবার ফোন বাসায় রেখে কাউকে না জানিয়েই।
দিয়া;; তুই যদি শহরের বাইরে গিয়েই থাকিস তাহলে লেটার টা কে লিখেছে।
অনামিকা;; আইরাত সত্যি করে বল।
অনামিকা এবার আইরাত কে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করে।
অনামিকা;; আর তুই আগে বল তো আমায় যে তুই কি কাউকে ভালোবাসিস কিনা?
আইরাত;; না মা কাউকেই না। বিশ্বাস করো। আমি নিঃশ্বাস নিলেও তোমাকে জানিয়ে নি আর তুমি বলছো আমি একজন কে ভালোবাসবো আর তা তোমাকে বলবো না। মা কাউকেই ভালোবাসি না আমি।
অনামিকা;; তাহলে ওই চিঠি টা কে লিখেছে?
আইরাত;; কোন চিঠির কথা বলছো তোমরা?
অনামিকা;; তোর রুম থেকে একটা চিঠি পেয়েছি। আর সেখানে আমাকে শাশুড়ী মা বলেছে।
আইরাতের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে চিঠিটা আর কেউ না বরং আব্রাহাম-ই লিখেছে। আইরাত সেই কথা টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলে..
আইরাত;; ন না মা আমি কোন চিঠির কথা বলতে পারবো না। আমি জানি না।
নিলয়;; এখন তুই বল কোথায় গিয়েছিলি?
আইরাত;; ভাইয়া বললাম তো কাজের জন্য শহরের বাইরে যেতে হয়েছিলো।
দিয়া;; তো সবাইকে একটা বার বলে গেলে বা ফোনটা সাথে নিয়ে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো তোর।
আইরাত;; আমার শরীর টা খুব খারাপ লাগছে। আমার আর ভালো লাগছে না এইসব। প্লিজ তোমরা চুপ করো সবাই। আর প্লিজ কেউ বলো না যে কোথায় ছিলাম। এখন তো বাড়ি এসে পরেছি তাই না এখন তো সব ঠিকই আছে। কেস তুলে নাও আর ভুলে যাও সব।
সাবিলা;; এভবে কীভাবে ভুলে যাবো।
আইরাত;; ফুপি তুমি চুপ করো। আমার একা কিছু সময় দরকার।
এই বলেই আইরাত ওপরে নিজের রুমে চলে যায়। সবাই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আইরাত রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। জানালার কাছে গিয়ে পর্দা সরিয়ে বাইরে রাস্তার দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম সেখানে গাড়িতে বসে আছে। সে তার হাত তুলে আইরাতের দিকে বিদায় জানিয়ে চলে আসে। আর আইরাত এক ক্ষীণ দম আছে। সেইদিন টা এভাবেই চলে যায়। এখন সবকিছুই আবার আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে চলছে। তার পরেরদিন থেকে আইরাত তার ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা শুরু করে দিয়েছে। আব্রাহাম এমন কোন দিন নেই যে আইরাতের ভার্সিটিতে আসে না বা তাকে দেখতে যায় না। এমনও হয় যে আব্রাহাম হুট করেই আইরাতের ক্লাস রুমে এসে তাকে সোজা ক্লাস থেকে নিজের সাথে করে নিয়ে চলে যায়। ভার্সিটির প্রায় সবাই জেনে গেছে যে আইরাত আর আব্রাহামের মাঝে কিছু না কিছু একটা তো আছেই। এটাই ভার্সিটির টপে আছে। দিয়া আর অবনিও ব্যাপার টা নিয়ে আইরাতের সাথে কথা বলতে চাইলে আইরাত এড়িয়ে যায়। ছেলেরা একশ হাত দূরে থাকে আইরাতের কাছ থেকে। কারণ জীবনের মায়া তো সবারই আছে তাই না। আইরাত যদি নিজে থেকে কিছু কথা বলতে যায় তাহলে উল্টো ভুতের মতো ভয় পেয়ে চলে যায়। এগুলোর জন্য এখন সত্যি আইরাতের কাছে তার নিজেকে এলিয়েন মনে হয়। আস্তে আস্তে এই আব্রাহাম-আইরাতের খবর টা নিলয় জানতে পারে। আর কিছুটা হলেও নিলয় জ্যালাস ফিল করে। কেননা নিলয়ের মনে আইরাতের জন্য সফট কর্ণার আছে অনেক আগে থেকেই। একদিন আইরাত ভার্সিটি শেষে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই কোথা থেকে যেনো নিলয় আসে বাইক নিয়ে।
নিলয়;; কিরে ভার্সিটি শেষ। রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছিস? উঠে পর বাড়ি দিয়ে আসি তোকে।
আইরাত;; না না থাক ভাইয়া লাগবে না। আমি নিজেই যেতে পারবো।
নিলয়;; ওহ এখন আমার সাথে যেতে চাচ্ছিস না কিন্তু আব্রাহাম চৌধুরীর সাথে তো ঠিকই যাস।
আইরাত কপাল কুচকে নিলয়ের দিকে তাকায়।
আইরাত;; কি বলছো এইসব?
নিলয়;; না বোঝার ভান ধরিস না অযথা। সবই জানি বুঝি আমি। তোর আর আব্রাহাম চৌধুরীর ব্যাপার টা এখন তুঙ্গে। সবাই জানে।
আইরাত;; সবার জানা জানি বা কে কি ভাবলো কে কি বললো তা আমার জানার প্রয়োজন নেই। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’। খারাপ ভাবা বা খারাপ বলা/সমালোচনা করা এগুলো মানুষ করবেই। কিছু ফালতু মানুষের কাজই এমন তাই বলে আমি কেনো গুটিয়ে চলবো।
নিলয়;; এখন কি তুই আমার সাথে যাবি।
আইরাত;; না।
নিলয়;; আরে মেরি মা রাগ করিস না। এভাবে রোদে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে ভালো আয় ড্রপ করে দি তোকে।
আইরাত;; হুম।
নিলয় আইরাত কে বাইকে করে নিয়ে চলে যায়। বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়।
আইরাত;; ভেতরে আসবে না।
নিলয়;; না এখন আর না। আমি যাই আর শোন
আইরাত;; হ্যাঁ
নিলয়;; এই আব্রাহাম চৌধুরীর কাছ থেকে কিছুটা দূরে দূরেই থাকবি বুঝলি।
আইরাত নিলয় কে কিছু না বলে বাড়ির ভেতরে চলে যায়। আর নিলয়ও সেখান থেকে চলে যায়। আইরাত ভেতরে গিয়ে দেখে অনামিকা দুহাত দিয়ে কোমড় ধরে রেখেছে। আর একজন লোক চেয়ারের ওপরে ওঠে হলরুমে থাকা ফ্যানে কি যেন একটা করছে।
আইরাত;; কি হচ্ছে?
অনামিকা;; ফ্যান টা হঠাৎ ঘুরছে না। তাই ঠিক করে দেখছে।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।
অনামিকা;; শোন আমার না তোর সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।
আইরাত;; হ্যাঁ বলো।
অনামিকা;; আমি ঠিক জানি না যে তুই এই কথা টা শুনলে রাগ করবি নাকি কি করবি। তবে আমার মনে হলো যে একবার বলা দরকার আমার তাই।
আইরাত;; আরে এতে এতো ভাবাভাবির কি আছে বলে দাও না।
অনামিকা;; বাইরে থেকে এসেছিস। আগে ফ্রেশ হ খা কিছু তারপর না হয় আস্তে ধীরে বলা যাবে।
আইরাত;; হুম আচ্ছা।
আইরাত ভেতরে চলে যায় তখনই নিজের ফোন বেজে ওঠে।
আইরাত;; হ্যালো।
আব্রাহাম;; এই কই তুমি?
আইরাত;; আপনি?
আব্রাহাম;; না তো কে থাকবে ওই নিলয়!
আইরাত;; আমার কাজিন ও।
আব্রাহাম;; ওহ আচ্ছা আমি জানতাম না, খুব উপকার হইলো।
আইরাত;; কথা না ঘুরিয়ে কি বলবেন বলুন।
আব্রাহাম;; নিলয়ের সাথে কেনো গেলে তুমি?
আইরাত;; আরে মানে আম…
আব্রাহাম;; কেনো গেলে? (চিল্লিয়ে)
আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন এমনিতেই আমাকে নিয়ে আর আপনাকে নিয়ে চারিপাশে নানা কথা হচ্ছে। আমি চাই না এই আজগুবি কথা গুলো আরো বাড়ুক। সো প্লিজ…
আব্রাহাম;; আজগুবি না সত্যি।
আইরাত;; কি সত্যি?
আব্রাহাম;; এইযে তোমার আর আমার ব্যাপার টা এগুলো তো সম্পূর্ণই সত্য তাই না।
আইরাত;; আম আমি রাখি।
আব্রাহাম;; বিকেল ঠিক ৪;৩০ এ আমার এক গার্ড তোমাকে নিয়ে আসতে যাবে চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো চলে আসবে। নয়তো বাড়ি থেকে কীভাবে তুলে নিয়ে যেতে হয় তা আমার বেশ ভালোই জানা আছে।
আইরাত;; কি? এই না না…
আইরাতের আর কিছু বলার আগেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়।
আইরাত;; যাহ ফোনই কেটে দিলো।
আইরাত আবার আব্রাহাম কে ফোন করে। কয়েক সেকেন্ড পর রিসিভ করে।
আব্রাহাম;; বলো।
আইরাত;; আজ আমার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। আমি আজ বাইরে দেখা করতে যেতে পারবো না। বিকেলে অন্য এক জায়গায় যেতে হবে।
আব্রাহাম;; ঠিকআছে।
আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আর আইরাত বিছানাতে বসে পরে। চোখ তুলে টেবিলের ওপর তাকায়। একটা ছবি নজরে পরে তাতে ছোট্ট আইরাত আর তার বাবা-মা রয়েছে। আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে বিকেল হয়।
অনামিকা;; তুই কি অনাথ আশ্রমে যাবি?
আইরাত;; যেতে তো চাইছি। সাথে নাকি দিয়াও যাবে। তাই ভাবছি যে ওকে নিয়েই যাবো।
অনামিকা;; আচ্ছা যা তাহলে তোরা দুজন।
আইরাত;; আচ্ছা।
অনামিকা;; দিয়া কখন আসবে?
দিয়া;; এইতো এসে গেছি।
আইরাত;; আরে আয় আয় ভেতরে আয়। তোকে না আরো আগে আসতে বলেছিলাম।
দিয়া;; রাস্তায় জ্যাম প্রচুর রে।
আইরাত;; আচ্ছা বোস।
দিয়া এসে বসে পরে। বেশ সময় অনামিকার সাথে খোশগল্প করে তারপর আইরাত আর সে বের হয়ে পরে। একটা অনাথ আশ্রম আছে। বেশ চেনা-পরিচিত একটা জায়গা আইরাতের কাছে। সে ছোট থেকেই এখানে আসে। এই অনাথ আশ্রম যেখানে আছে সেই জমি টা মূলত এককালে আইরাতের বাবারই ছিলো। এখানে ছোট্ট একটা স্কুল আছে। এখানকার বাচ্চারা ওই স্কুলেই পড়ে। আইরাত বা অনামিকা প্রতিবছরই অর্থাৎ আইরাতের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী তে এখানে আসে। আজ আইরাত আর দিয়া এসেছে। আইরাত অনাথ আশ্রমে আসার সাথে সাথেই বাচ্চারা দৌড়ে গিয়ে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। দিয়াও সবার কে অনেক আদর করছে। আইরাত নিজের সাথে বাচ্চাদের জন্য অনেকগুলো জিনিস/গিফট এনেছে। এগুলো পেয়ে বাচ্চাদের খুশি দেখে কে। সবার সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে আইরাত বিদায় জানিয়ে এসে পরে। তবে এখন আইরাত আর দিয়াকে আলাদা আলাদা পথে যেতে হবে।
দিয়া;; কিরে আকাশের অবস্থা তো ভালো না মোটেও। এখন তোকেও আলাদা পথে যেতে হবে আর আমাকেও। একা যেতে পারবি তো!
আইরাত;; আরে হ্যাঁ হ্যাঁ যেতে পারবো। আর বৃষ্টি আসলেও খারাপ কি, ভিজবো।
দিয়া;; জানতাম। আচ্ছা তাহলে ভালোভাবে চলে যাস তুই কেমন আমি যাই।
আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ আচ্ছা।
দিয়া চলে যায়। আর তার চলে যাওয়ার পরপরই আকাশে বিদুৎ চমক দিয়ে ওঠে। অন্যদিকে আব্রাহামের কিছু কাজ আছে। যার ফলে তাকে হাইওয়ে রোড ক্রস করে তারপর যেতে হচ্ছে। কোন রিকশা-গাড়ি কিছুই পাচ্ছিলো না আর আকাশে মেঘের গর্জন তাই একটা ছাউনির নিচে আইরাত দাঁড়িয়ে ছিলো। তবে পরমূহুর্তেই আকাশ কাঁপিয়ে বর্ষণ শুরু হয়। বার কয়েক বর্জ্য পরে। তারপর আরো জোরে বৃষ্টি। এই বৃষ্টি দেখে আইরাত আর নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারলো না। দৌড়িয়ে গিয়ে বৃষ্টিতে নেমে পরে। কয়েক মিনিটেই পা থেকে মাথা অব্দি ভিজে চুবুচুবু হয়ে যায়। বৃষ্টির বেগ অতিরিক্ত দেখে গাড়ি আর সামনে না এগোনোই শ্রেয় ভাবলো আব্রাহাম। তাই একটা সাইডে এসে গাড়ি টা থামিয়ে ভেতরে বসে থাকে। উইন্ড টা খুলে দেয়। তবে কারো হালকা চেচানোর শব্দ আর খিলখিলিয়ে হাসির শব্দ শুনতে পেরে আব্রাহাম বাইরে কপাল কুচকে তাকায়। আশেপাশে চোখ বুলাতেই কিছুটা দূরে একজন কে চোখে পরে আব্রাহামের। দেখে কেউ একজন বৃষ্টিতে ইচ্ছে মতো ভিজছে। ভিজছে বলতে গেলে লাফাচ্ছে। একটা মেয়ে। মেয়েটা এদিকে ঘুরতেই আব্রাহাম অবাক হয়ে তাকায়। আইরাত। তার চুলগুলো ভিজে গলা পিঠের সাথে লেগে গিয়েছে। শেষাংশ ভিজে টুপটুপ করে পানি পরছে। মুখে ছিটেফোঁটা পানিবিন্দু লেগে রয়েছে আর লাগামহীন হাসি। আব্রাহাম তার সানগ্লাস খুলে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। আইরাত এখনো খেয়ালই করে নি যে গাড়ি থেকে কেউ একজন তাকে দু”নয়ন ভরে দেখছে। সে আর মতো করেই বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। আইরাত বৃষ্টিতে ভিজে প্রচন্ডভাবে খুশি আর আব্রাহাম দূর থেকে তাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে খুশি। এভাবে ঠিক কতোক্ষণ আব্রাহাম আইরাত কে দেখেছে মনে নেই। হঠাৎ একটা সময় বৃষ্টির বেগ কমে আসে। আর আইরাত বৃষ্টির শেষ সময় টুকু নিজের দু’হাত দুপাশে মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে উপভোগ করে। বৃষ্টি অনেকটাই কমে আসে। তারপর একটা রিকশা নিয়ে আইরাত চলে যায়। রিকশার হুড টাও তোলে নি বৃষ্টির ছিটে গায়ে নিবে বলে। আব্রাহাম দেখে আইরাত চলে যাচ্ছে তবুও কিছুই বলে না শুধু মুচকি হাসি দেওয়া ছাড়া। বৃষ্টি আসলে ময়ূর যেমন নিজেদের পাখনা মেলে দিয়ে বৃষ্টিতে মনভরে ভিজে ভিজে উপভোগ করে ঠিক তেমন টাই হয়েছে। কিছু সময়ের জন্য আইরাতকে দেখেও ময়ূরই মনে হচ্ছিলো। আইরাত চলে গেলে আব্রাহামও সেখান থেকে চলে আসে। আইরাত বাসায় এসে দেখে অনামিকা বসে আছে। আইরাত কে ভিজে টইটম্বুর অবস্থায় দেখে অনামিকা দ্রুত আইরাত কে একটা টাওয়াল দেয়। আইরাত তা দিয়ে নিজের মাথা মুছতে মুছতে নিজের রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়। তার কিছুক্ষণ পর অনামিকা আইরাতের রুমে আসে। আর এসেই তার না বলা কথা গুলো বলা শুরু করে দেয়। তবে অনামিকার পুরো কথা শুনে যেনো আইরাতের বলতি বন্ধ হয়ে যায় অটোমেটিকলি।
।
।
।
।
চলবে~~
[