নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৯+২০

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৯ + ২০

আইরাত তার গলা খাকাড়ি দিয়ে সোজা হয়ে বসে। যেনো অনামিকার কথা তার বিশ্বাসই হতে চাইছে না। আইরাত ক্লিয়ার হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞেস করে…

আইরাত;; কি বললে?

অনামিকা;; হ্যাঁ যা শুনেছিস তাই বলেছি। তুই এবোর্ড যাবি।

আইরাত;; কিন্তু তুমি তো…

অনামিকা;; হ্যাঁ আমিই একটা সময় না বলেছিলাম এবোর্ড যেতে তোকে তবে এখন হ্যাঁ বলছি। যাবি তুই।

আইরাত;; কোথায়?

অনামিকা;; কানাডা।

আইরাত;; কিন্তু ভিসা পাসপোর্ট!

অনামিকা;; এই যে।

অনামিকা আইরাতের সামনে আইরাতের নামেই ভিসা আর পাসপোর্ট রেখে দেয়। সবই ঠিকঠাক আছে। তা দেখে আইরাত অবাক।

আইরাত;; তুমি এইসব কবে করলে?

অনামিকা;; অনেক আগে থেকেই। তুই যখন যেতে চেয়েছিলি তখনই সব রেডি করে ফেলেছিলাম। ভেবেছিলাম আর যাওয়া হবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যাওয়া টাই ভালো হবে।

আইরাত;; হঠাৎ মত চেঞ্জ হলো কেনো তোমার?

অনামিকা;; এমনি। না আমি তোকে জোর করছি না। তোর যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো কানাডা তাই বলছি। আমি শুধু বললাম যাওয়া না যাওয়া তোর ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে।

আইরাত;; আব্রাহাম যেভাবে পিছে পরে আছে আর ওকে-আমাকে নিয়ে যে সমালোচনা গুলো হচ্ছে এগুলো তো সহজে পিছু ছাড়বে বলে মনে হয় না। তাই ভালো হবে আউট অফ কান্ট্রিই চলে যাই। তাই ভালো হবে। (মনেমনে)

অনামিকা;; যাবি?

আইরাত;; হ্যাঁ যাবো। কিন্তু ফ্লাইট আর বাকিসব কিছু?

অনামিকা;; ফ্লাইট আগামীকাল আছে একটা। তারপরের দুইদিন নেই। আবার তারপর আছে তাও রাতে। এখন দেখ তুই কি করবি!

আইরাত;; আচ্ছা আমাকে যে তুমি বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছো আমাকে ছাড়া তুমি থাকবে কীভাবে?

অনামিকা;; এখন না হলেও বিয়ের পর যখন তুই শশুড় বাড়ি চলে যাবি তখনও তো আমাকে একাই থাকতে হবে তাই না। সেই কথা ভেবেই থেকে যাবো।

আইরাত;; হুম বুঝলাম।

অনামিকা;; ওহ হ্যাঁ আরেক কথা।

আইরাত;; কি?

অনামিকা;; তোর সাথে কিন্তু নিলয়ও যাচ্ছে।

আইরাত;; কি?

অনামিকা;; হ্যাঁ।

আইরাত;; কিন্তু কেনো?

অনামিকা;; কারণ কানাডা নিলয়ও যাচ্ছে তাই। একসাথেই যাবি তোরা।

আইরাত;; আমি তার থেকে ভালো কানাডাই যাবো না।

অনামিকা;; আরেএএ আবার কি হলো?

আইরাত;; নিলয় ভাই-এর আবার সেখানে আমার সাথে যেতে হবে কেনো?

অনামিকা;; কারণ নিলয় এর আগেও কানাডা গিয়েছে। সবই চিনে সে। আর তুই প্রথম যাচ্ছিস। সবকিছু একটু চিনে বুঝে নিবি ভালো হবে তোর। তারপর একাই থাকিস যেখানে খুশি যাস কেউ মানা করবে না।

আইরাত;; আগামীকাল যাবো না। কারণ অবনি, দিয়া, তৌফিক ওদের সবাই কে বলতে হবে টাইম দরকার কিছুটা আমার। এভাবে হুট করেই আমি কাল যেতে পারবো না।

অনামিকা;; হুম ঠিকআছে।

অনামিকা উঠে চলে যায়। আর আইরাত চিন্তায় পরে যায়। এখন তাকে সবকিছু ছেড়ে এই কানাডায় পাড়ি জমাতে হবে। তবে এতে যদি তার আব্রাহামের থেকে পিছু ছাড়ে তাহলে মন্দ কিসে। কিন্তু ওইযে বলে না এক বিপদ না যেতে যেতেই আরেক আপদ এসে জুড়ে বসে। ঠিক তেমন হয়েছে। এই নিলয়ের বাচ্চা কেও এখন সাথে যেতে হবে। এগুলো ভেবেই মনে মনে একশ একটা গালি দিয়ে দেয় আইরাত। অবনি, দিয়া আর তৌফিকের রিয়েকশন না জানি কেমন হবে এই কথা শোনার পর। তবে আব্রাহাম যদি একবার জেনে যায় আইরাতের এবোর্ড যাওয়ার কথা তাহলে ইন্না-লিল্লাহ। এইসব হাবিজাবিই মাথায় আসছে এখন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত বাজে ৯ টার কাছাকাছি। আইরাত আর না থাকতে পেরে অবনি কে কল করে বসে।

অবনি;; হ্যালো…

আইরাত;; আচ্ছা চালতা হু দুয়াও ম্যা ইয়াদ রাখনা।

অবনি;; কনে যাস?

আইরাত;; কানা মামার বাড়ি ‘কানাডা’।

অবনি;; হুয়াট?

অবনি এক ঝটকায় শোয়া থেকে ওঠে বসে পরে।

অবনি;; কি বলিস মাথা ঠিক আছে তোর?

আইরাত;; জানি না। আগামীকাল তো ভার্সিটি আসছি তখন ক্লিয়ার করে সব জানা যাবে। তবে এখন আর থাকতে না পেরে তোকে কল করে বসলাম।

অবনি;; আগে তুই আমাকে ক্লিয়ার কর। কানাডা মানে কেনো? কিসের জন্য?

আইরাত;; ফর হাইয়ার স্টাডি।

অবনি;; এএএ তোর হাইয়ার স্টাডির গুষ্টি কিলাই। এহ যে মাইয়া ভার্সিটির ক্লাস/লেকচার সব বাংক করে সে যাইতাছে দেশের বাইরে এন্ড হুয়াট ডিড ইউ সে হাইয়ার স্টাডি (বেঙ্গ করে)। রাখ তোর স্টাডি। যাবি না কোত্থাও।

আইরাত;; বেবি শোন আমি ফানি মুডে নেই। আ”ম সিরিয়াস।

অবনি;; কিন্তু..!

আইরাত;; আমি নিজেই জানতাম না জানিস। আম্মু আসলো বসলো আর বলল। অবশ্য আমিই যেতে চাইছিলাম আগে তখন আম্মু আমায় যেতে দেয় নি আজ আবার আমার যাওয়ার কথা বলছে। হয়তো আব্রাহামের কিছু কথা অর্থাৎ টুকটাক কিছু কথা আম্মুর কান অব্দিও পৌঁছেছে তাই।

অবনি;; আব্রাহাম স্যারের তোর ভার্সিটি আসা, তোর জন্য রোজ রোজ অপেক্ষা করা, তোকে ক্লাস থেকে সবার সামনে নিয়ে যাওয়া, ভার্সিটিতে তোকে ভিপি হিসেবে ট্রিট করা, তোর প্রতি স্যার দের এতো বেশি কেয়ার ভাই এমন সব হলে কানার ভাই আন্ধাও ভাববে যে তোর আর আব্রাহাম স্যারের মাঝে কিছু একটা আছে।

আইরাত;; বাট বিশ্বাস কর কিছুই নেই। ওকে টেল মি ওয়ান থিং।

অবনি;; কি?

আইরাত;; তোর কি মনে হয়?

অবনি;; আচ্ছা তুই আমায় একটা কথা বল আগে।

আইরাত;; কি?

অবনি;; আব্রাহাম স্যার তোকে ভালোবাসে তাই না?

আইরাত;; না মানে…

অবনি;; তোকে প্রপোজ করেছে না!!

আইরাত;; হ্যাঁ করেছে।

অবনি;; জানতাম৷

আইরাত;; তো এখন কি করবো আমি। বইন আমি এইসবে নেই। তুই জানিস তো যে উনি কেমন মানুষ আমার ভয় লাগে। আর আমার মতো একটা সিম্পল মেয়ের মাঝেই উনি কি দেখলেন। আমি এতোটা ডিজার্ভিং নই রে।

অবনি;; “তুই হচ্ছিস সাধারণ মাত্রায় অতি অসাধারণ একজন মেয়ে” বুঝলি!

আইরাত;; আমি দূরে যেতে চাই। জানিস যদি এমন হয়ে যেতো যে আব্রাহাম কখনো আমাকে খুঁজেই পেতো না। মানে পুরা লাপাত্তা হয়ে যেতাম আমি, ভালো হতো।

অবনি;; আর আমাদের কি হতো?

আইরাত;; মুড়ি খা সারাজীবন।

অবনি;; হাট হারামি।

আইরাত;; কাল ভার্সিটি আসিস।

অবনি;; আয় শুধু কাল তুই তারপর তোর খবর আছে।

আইরাত;; রাখি?

অবনি;; আচ্ছা, গুড নাইট।

আইরাত ফোন কেটে দেয়। ফোনের দিকে এক নয়নে তাকিয়ে আছে। কোন ভাবেই আব্রাহাম কে জানানো যাবে না যে আইরাত এখান থেকেই চলে যাচ্ছে। সেইরাত টা আধো ঘুম আর পুরো চিন্তায় চিন্তায় ই কেটে যায়।


পরেরদিন সকালে আইরাতের ঘুম ভেঙে যায় অনামিকার ডাকে। খেয়ে-দেয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটি চলে যায়। তবে বাসা থেকে বের হতেই আইরাতের চোখে পরে আব্রাহামের একজন গার্ড কে। আইরাত তাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়। ভার্সিটি যেতেই দেখে কেউ নেই। পুরো ক্লাসরুমে মাত্র হাতে গোণা কয়েকজন আছে। তাদের মাঝ থেকে একটা মেয়ে দ্রুত আইরাতের কাছে এসে বলে অবনি দিয়া আর তৌফিক নাকি ভার্সিটির পাশে থাকা কফিশপে তার জন্য অপেক্ষা করছে। আইরাত সেখানেই চলে যায়। কফিশপের ভেতরে যেতেই দেখে তৌফিক তার গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে। অবনি নিজের সামনে একটা কোল্ড কফি নিয়ে মুখটা উল্টিয়ে রেখে দিয়েছে। আর দিয়া এক গালে হাত রেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আইরাত এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ার টান দিয়ে বসে পরে।

আইরাত;; কিরে সবার মুখের হুলিয়া এমন কেনো?

অবনি;; আসছেন আপনি?

আইরাত;; না আসার কি আছে। তোরা এমন করে আছিস কেনো?

তৌফিক;; কানাডা নাকি যাচ্ছিস তুই?

আইরাত;; আজ একটা ফ্লাইট ছিলো কিন্তু আজ যাচ্ছি না। আগামী দু”দিন পর যাবো।

দিয়া;; মানে সিওর তুই যে কানাডা যাচ্ছিস!

আইরাত;; হ্যাঁ। ভিসা পাসপোর্ট সবই রেডি।

তৌফিক;; আচ্ছা যদি আব্রাহাম স্যার….

আইরাত;; আহা, একদম না। উনার কথা বাদ দে। ভুল করেও তাকে জানতে দেওয়া যাবে না।

দিয়া;; ওখানে গিয়ে কোন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবি?

আইরাত;; The University Of British Columbia..

তৌফিক;; বাহ। তো আমাদের তো দুই দিনেই ভুইল্লা যাবা।

আইরাত এক গাট্টা মারে তৌফিকের মাথায়।

আইরাত;; একটু বেশিই বুঝোস।

অবনি;; সত্যিই তো ভুলে যাবি।

আইরাত;; আরে না একদমই না। বললেই হলো নাকি।

এভাবেই প্রায় আধা ঘন্টা কফিশপে বেশ আড্ডা দিয়ে আইরাত, অবনি আর দিয়া ভার্সিটির ভেতরে চলে যায় আর তৌফিক চলে যায় অফিসে। ভার্সিটির টাইম শেষ হলে আইরাত বাইরে বের হয়ে আসে। বাইরে এসে নিজের সবদিকে চোখ বুলাতে লাগে। নাহ, কোথাও আব্রাহাম বা তার কোন গার্ড নেই। বেঁচে গেছে। হাফ ছেড়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে একটা টেক্সি করে বাড়ি এসে পরে।

বিকেলের দিকে হলরুমে বসে বসে মুখটা পানসে বানিয়ে দিয়ে মটর ছুলছিলো আইরাত তখনই নিজের ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে না তাকিয়েই রিসিভ করে কানে ধরে।

আইরাত;; হ্যালো।

আব্রাহাম;; হাই বেবিগার্ল।

আইরাত কপাল কুচকায়।

আইরাত;; আপনি?

আব্রাহাম;; না তো আর কে থাকবে।

আইরাত;; আমি তো এক মিনিটের জন্য ভেবেই নিয়েছিলাম যে আপনি ‘নাই’ হয়ে গেছেন কিন্তু না আমি ভুল, আমার ধারণাও ভুল।

আব্রাহাম;; লিসেন এটা স্বপ্নেও ভাবা ভুল যে আমি তোমার লাইফ থেকে দূরে চলে যাবো।

আইরাত;; কিছু কি বলবেন?

আব্রাহাম;; মটর ছুলা বাদ দিয়ে দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে বাইরে বের হবে। নয়তো আমি কিন্তু সোজা বাড়ির ভেতরে এসে পরবো।

আইরাত;; কিহ? আপনি কি করে জানলেন যে আমি মটর ছুলছি।

আব্রাহাম;; মিস. বকবক তোমার বকবক অফ করে যা বললাম ভালো মেয়ের মতো তাই করো। নয়তো এইযে আমি এইযে আসলাম বাড়ির ভেতরে৷

আইরাত;; এই না না না। আমি আসছি, আসছি আমি। আপনি বাইরেই থাকুন প্লিজ।

আব্রাহাম;; কাম ফাস্ট।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আর আইরাত রাগে হাতে থাকা চাকু টা জোরেই স্টিলের থালের ওপর ঢিল দিয়ে দেয়। আইরাত কে রাগ করতে দেখে অনামিকা তার কাছে যায়।

অনামিকা;; কিরে রাগে এভাবে ফুসছিস কেনো? কি হয়েছে?

আইরাত;; কিছু না। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।

অনামিকা;; আচ্ছা যা, জলদি ফিরে আসিস কিন্তু।

আইরাত;; হুমম।

আইরাত বাসা থেকে বের হতেই দেখে আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক কদম সামনে এগোলে আব্রাহাম সোজা হয়ে বসেই তার পাশের দরজা টা খুলে দেয়। আইরাত গিয়ে আব্রাহামের পাশে বসে পরে। আব্রাহাম এক নজর আইরাতের দিকে তাকায়। দেখে তার মুখটা কেমন ভারভার। আব্রাহাম তার হাতের উল্টো পাশ দিয়ে আইরাতের গালে কিছুটা ছুইয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?

আইরাত;; কিছু না।

আব্রাহাম;; নাহ, কিছু তো হয়েছে!

আইরাত;; কিছু না। আপনি কিসের জন্য ডেকেছেন প্লিজ জলদি বলুন আমায় আবার বাসায় যেতে হবে।

আইরাতের এই কথায় আব্রাহাম বেশ দ্রুত গতিতে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আইরাত কিছুটা ধাক্কা খেয়েই কপাল ভাজ করে আব্রাহামের দিকে তাকায়। চলতি গাড়িতে হাজার বার আইরাত জিজ্ঞেস করেছে যে আব্রাহাম তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আব্রাহাম কিছুই বলে না। দেখতে দেখতে একটা সময় গাড়ি থামে।

আব্রাহাম;; এসো।

আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরে। আশেপাশে চোখ বুলায়।

আইরাত;; এটা কোন জায়গা?

আব্রাহাম;; বেসিক্যালি এখানে বৃদ্ধ মানুষ রা আসে। কেউ বন্ধু হয়ে বা কেউ কাপল হয়ে। কেই সময় কাটানোর জন্য আসে বা কেউ হাঁটাহাঁটির জন্য।

আইরাত দেখে এখানে আসলেই অনেক বয়স্ক মানুষ রা রয়েছে। কেউ কেউ একসাথে বসে খোশগল্প করছে। কেউবা হাঁটছে। আইরাত খেয়াল করে চারিদিকে বেশ গাছপালা আছে। বাগানের মতোই সম্পূর্ণ জায়গা টা। দুপাশে নানা ধরনের গাছকে ছাটাই-বাছাই করে আকৃতি দেওয়া হয়েছে। উঁচু-নিচু গাছগুলো তাদের ডালপালা গুলো ছড়িয়ে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের উচ্চতা যেনো আকাশ ছুঁই ছুঁই। গাছে পাতার সমাহার। আর সেই পাতার ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে সূর্যের কিরণ তীর্যকভাবে পরছে৷ সবুজ ঘন ঘাসে ঘেরা মাঠ। তার সামনেই মাঝারি আকাড়ের একটা ছোট নদী রয়েছে। তাতে সাদা বড় বড় পালক ওয়ালা পাতিহাঁস গুলো ভেসে বেড়াচ্ছে, মাঝে মাঝে ডুব দিয়ে আবার উঠে পরছে। নদীর পাশেই বসার জন্য সীট রয়েছে। তাতে কিছু বয়স্ক লোক বসে বসে দানা ছড়িয়ে দিচ্ছে হাস দের দিকে। পরমূহুর্তেই কোথা থেকে যেনো পাখনা ঝাপটে একঝাক পায়রা উড়ে এসে মাঠে নামলো। তারা ঘুড়ে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। পরিবেশে কেমন এক সুমধুর সুগন্ধ যুক্ত রয়েছে। এক আলাদা ভালো লাগা কাজ করছে। এইসব দেখে যেনো আইরাতের ঠোঁটের ভাজে আপনা আপনিই হাসির ঝলক ফুটে ওঠে। আইরাত নিজের চারিপাশে দেখতে ব্যাস্ত আর আব্রাহাম তার আইরাতকে।

আইরাত;; জায়গা টা সত্যি অনেক সুন্দর।

আব্রাহাম;; তোমার থেকে বেশি না।

আইরাত চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; চলো হাঁটি!

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম-আইরাত পাশাপাশি হাঁটা শুরু করে। আব্রাহাম তার দু’হাত প্যান্টের পকেটে রেখে চলছে আর আইরাত নিজের দু’হাত ভাজ করে। হঠাৎ আইরাতের চোখে পরে ছোট্ট আইসক্রিমের ট্রলি নিয়ে একজন যাচ্ছে। তা দেখে আইরাতের চোখ-মুখে হাসি ফুটে। তবে পরক্ষণেই আবার মনে পরে যে এখন আব্রাহাম আছে তাই শান্ত হয়ে থাকুক। চুপ করে আবার হাঁটতে লাগে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আইসক্রিম খাবে?

আব্রাহামের এমন কথায় হকচকিয়ে যায় আইরাত। পাশে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তার দিকে জিজ্ঞেস সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; খাবে?

আইরাত;; আব.. না মানে

আব্রাহাম;; আরে চলো তো।

আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে নিয়ে আইসক্রিমের ট্রলির কাছে চলে যায়। সেখানে দশ টাকা দিয়ে দুটো মালাই আইসক্রিম কিনে নেয়। আর বাকি টাকা গুলো ট্রলির লোক টিকে দিয়ে দেয়। আইরাতের আগে যেনো আব্রাহাম নিজেই আইসক্রিম খাওয়া শুরু করে দেয়। আইরাত তার আইসক্রিমে কামড় বসানোর পরপরই আব্রাহাম ছো মেরে আইরাতের হাত থেকে তার আইসক্রিম টুকু নিয়ে নেয় আর তার আইসক্রিম টা আইরাতের হাতে দিয়ে দেয়। আইরাত হা হয়ে আব্রাহাম কে দেখছে।

আব্রাহাম;; আমাকে দেখার জন্য সময় পরেও পাবে আগে খাও। আইসক্রিম গলে যাচ্ছে।

আইরাত হা বন্ধ করে ফেলে তারপর খেতে লাগে। আইরাত খাচ্ছে আর ভ্রুজোড়া কুচকে আব্রাহাম কে দেখছে। আর না পেরে অবশেষে বলেই দিলো।

আইরাত;; আপনি এই দশ টাকার মালাই আইসক্রিম গুলোও খান?

আব্রাহাম;; না খাওয়ার কি আছে?

আইরাত;; না মানে বলছিলাম যে আপনি তো…..

আব্রাহাম;; আরে আমি আমেরিকায় থেকেছি হ্যাঁ হয়তো বড়োও হয়েছি, সেখানকার ওয়েস্টার্ন কালচার বেশ জানা আছে আমার। বাট আমার জন্ম বাংলাদেশে। যাই বলো আমার একদম ছোট কাল কেটেছে এখানেই। আমার এটাই ভালোলাগে। তো সবই জানা আছে। আমি এই কম দামি আইসক্রিম খাচ্ছি দেখে তুমি অবাক হচ্ছো। সত্যি বলতে এখন যদি কেউ আমাকে মাটির ঘরেও থাকতে বলে তো আমি পারবো। হ্যাঁ যদি সেখানে তুমি থাকো তো। আর এই যে এই আইসক্রিম এটা শুধু আইসক্রিম না আমার ছোটবেলার ভালোবাসা বুঝলে। এখন যেটা আমরা দশ টাকা দিয়ে কিনে খেলাম ছোট থাকতে এটা আমি দু”টাকা দিয়ে কিনে খেয়েছি জানো।

আইরাত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আমি জানি আমি সুন্দর এতো তাকিয়ে থাকার কি আছে। তোমারই তো।

আইরাত নজর নামিয়ে খেতে থাকে। মাঠে ছোট বাচ্চারা বল খেলছিলো। হঠাৎ বলটা গড়িয়ে আব্রাহামের পায়ের কাছে এসে পরে। আর আব্রাহাম নিজের পা দিয়ে বল তাদের দিকে এগিয়ে দেয়। আর কয়েকটা কিকও দিয়ে দেয়। এতে বাচ্চা রা সব চিল্লিয়ে ওঠে খুশিতে। কেনো যেনো আইরাত দূর থেকে দাঁড়িয়ে এগুলো দেখেই হেসে দেয়। বেশ খানিক সময় কাটিয়ে দেয় তারা একসাথেই। সামনে একঝাক শালিক পাখি ছিলো আইরাত হালকা ছুটে গিয়ে তাদের মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দেয়। আব্রাহাম এগুলো দেখছে। কখন যে সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা সন্ধ্যা সাজ হয়ে গেছে তা আইরাত খেয়ালই করে নি। আযানের ধ্বনি কানে এনে আইরাত তার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকায়। বিকেলের একবারেই শেষ সময়। আইরাত তার মাথায় নিজের ওরনা টা হালকা ভাবে দিয়ে রাখে, এমনি।

আইরাত;; কি আমি বাসা থেকে বের হয়েছি এতো সময় কখন হলো?

আব্রাহাম;; হয়ে গেছে।

আইরাত;; আমাকে বাড়ি যেতে হবে অতি দ্রুত।

আব্রাহাম;; আচ্ছা কিন্তু তার আগে চলো।

আইরাত;; আরে আবার কোথায়?

আব্রাহাম;; চলো তো।

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে একটা খোলা জায়গায় চলে যায়। এখানে মানুষ একদমই কম। তবে এখানে প্রচুর সাদা পালকের কবুতর রয়েছে। আর এক একটা প্রচুর কিউট।

আইরাত;; আমরা এখানে কেনো এলাম?

আব্রাহাম;; এটাকে ওই দূর আকাশে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

আব্রাহাম তার হাতের ভাজে একটা কবুতর নিয়ে আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। তারপর আইরাতের পেছন দিক থেকে এসে তাকে নিজের দুহাতের মাঝে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।

আব্রাহাম;; নাও ধরো ধরো।

আইরাত;; আমি এর আগে কখনো ধরি নি।

আব্রাহাম;; সমস্যা নেই কিছু করবে না। তুমি একে নিজের দু”হাতের মাঝে নাও তারপর আমি তোমার দু’হাত কে নিজের হাতের মাঝে নিচ্ছি।

আইরাত তাই করে। খুব সাবধানে কবুতর টাকে নিজের হাতে নেয়। আব্রাহাম আইরাতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরার মতো করে তার হাত গুলো ধরে।

আব্রাহাম;; এখন এটাকে ওপরে তুলে আকাশে উড়িয়ে দাও।

আইরাত;; আচ্ছা আমরা এটা কেনো করছি?

আব্রাহাম;; এখানের মানুষ বলে এভাবে কবুতর উড়িয়ে দিলে নাকি মনের ইচ্ছে পূরণ হয় বা তুমি যা চাও তা পেয়ে যাও।

আইরাত;; এটা হাস্যকর।

আব্রাহাম;; আরে বিশ্বাস তো আমিও করি না। কিন্তু এমনি আজ কবুতর উড়ানোর মন চাইলো তাই।

আইরাত;; Make a wish…

আব্রাহাম;; Only you..

আইরাত তার ঘাড় টা হালকা বাকিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকালে আব্রাহাম তাকে কবুতর টাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ইশারা দেয়। আইরাত এবার সোজা হয়। কবুতর টা তার হাতের মাঝেই নিজের পাখনা ঝটকাচ্ছে। অতঃপর আব্রাহাম-আইরাত দুজন একসাথেই কবুতর কে আকাশে উড়িয়ে দেয়। আইরাত খানিক হেসে দেয়। আর আব্রাহাম তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

আইরাত;; আব্রাহাম আমার বাড়ি যেতে হবে জলদিই।

আব্রাহাম; চলো।

আব্রাহাম আর আইরাত এসে পরে। আইরাত কে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে চলে যায়। এভাবেই দেখতে দেখতে মাঝখানে চলে যায় দু”দিন।


সাজ-সকাল বেলাই আইরাত উঠে তড়িঘড়ি লাগিয়ে দিয়েছে। কেননা আজই তার কানাডা যাওয়ার ডেট। তবে আইরাত কে ইনফর্ম করা হয়েছে যে তার ফ্লাইট ১২ঃ৩০ এ। আর আইরাত ঘুম থেকেই উঠেছে ১১ টায়। গতকাল রাতে ব্যাগ প্যাক করে রেখে দিয়েছিলো। এখন শুধু বাদবাকি জিনিস গুলো নিচ্ছে। আইরাত এটা ওটা গোছাচ্ছে আর অনামিকা তার পেছন পেছন ঘুড়ছে।

অনামিকা;; পাসপোর্ট/ভিসা?

আইরাত;; নিয়েছি।

অনামিকা;; কলেজের দরকারি কাগজ?

আইরাত;; নিয়েছি।

অনামিকা;; তোর মেডিসিন”স?

আইরাত;; নিয়েছি।

অনামিকা;; তোর ফোন?

আইরাত;; ওইটা তো নিতেই হবে।

অনামিকা;; আচ্ছা।

আইরাত সোফার ওপর ধুপ করে বসে পরে।

অনামিকা;; কি হলো?

আইরাত;; যেতে তেমন একটা ইচ্ছে তো করছে না।

অনামিকা;; আমি জানি না সবকিছু ঠিকঠাক। আর তোর ওপরই তো আমি সব ছেড়ে দিয়েছিলাম।

আইরাত;; না ঠিকই আছে৷

অনামিকা;; বারো টা বাজলো বলে। চল এখান থেকে এয়ারপোর্টে যেতে হবে।

আইরাত;; আমি এখান থেকেই চলে যাই তোমাদের আর এয়ারপোর্টে যেতে হবে না।

অনামিকা;; তোমাদের মানে? আর কে?

আইরাত;; অবনি, দিয়া আর তৌফিক আসতে চেয়েছিলো আমিই মানা করে দিয়েছি। ভিডিও কলে কথা বলেছি। সবার মুড কিছুটা অফ।

অনামিকা;; স্বাভাবিক সেটাই। যা রেডি হয়ে আয়।

আইরাত;; হুমম।

আইরাত ওপরে নিজের রুমে চলে যায়। ব্ল্যাক কালারের একটা প্যান্ট পরে ভেতরে সাদা টি-শার্ট পরে নেয়, তার ওপর এশ কালারের শর্ট জেকেট। পায়ে শু জুতো পরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।

আইরাত;; মা!

অনামিকা;; ঘর টা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে এখনই।

আইরাত;; আরে সমস্যা নেই আমি আছি তো। সারাদিন কথা বলবো আমিই ভিডিও কল দিবো তুই ধরো।

অনামিকা;; হুম শোন ভালোভাবে থাকবি, সাবধানে থাকবি। নিজের খেয়াল রাখবি, খাবার ঠিকভাবে খাবি। একদম হেয়ালিপানা করবি না৷ যেখানে ঝামেলা বেশি সেখানে যাবি না। আর ওইসব ইংরেজের বাচ্চাদের থেকে কিছুটা দূরে দূরেই থাকবি।

আইরাত হেসে দেয়।

আইরাত;; আচ্ছা বুঝলাম। এবার আমি যাই?

অনামিকা;; কতো করে বললাম যে আমিও যাই এয়ারপোর্টে তোকে ড্রপ করতে।

আইরাত;; আরে না ক্যাব বুক করেছি সে হয়তো বাইরে এলো বলে। আমিই নিজেই যাবো।

অনামিকা;; আচ্ছা।

অনামিকা আর আইরাত বাইরে আসে। আইরাতের একহাতে পাসপোর্ট-ভিসা আরেক হাতে একটা ট্রলি ব্যাগ৷ তবে আইরাত এখন প্রচুর দ্রুত কাজ করছে৷ কারণ আব্রাহামের কোন গার্ড যদি এখানে থেকে থাকে আর আইরাত কে দেখে থাকে তাহলে খবর খারাপ হয়ে যাবে একদম৷ ক্যাব এসে পরে৷ অনামিকা তাকে বাইরে পর্যন্ত এগিয়ে দেয়৷ আইরাত তার মা কে বিদায় জানিয়ে এসে পরে৷ তারপর সোজা এয়ারপোর্ট। বেশ দ্রুতই এসেছে তাই বেশি একটা সময় লাগলো না এয়ারপোর্টে আসতে। তবে আইরাত এয়ারপোর্টে এসে অবাক, কেননা সে জানে ফ্লাইট ১২ঃ৩০ এ তাই এখান এখানে বেশ মানুষের আনাগোনা থাকার কথা কিন্তু তার বদলে সব কেমন যেনো ফাঁকা। যাই হোক আইরাত রেসিপশনের কাছে চলে যায়। সেখানে একজন মেয়ে কে পায়। সে আইরাত কে দেখে মেকি হাসে। বলে ফ্লাইট আছে। আইরাত গিয়ে বসে পরে এক জায়গায়। নিলয় কে এইযে বারবার ফোন করছে তার কোন খবরই নেই। দুজনের একসাথে এয়ারপোর্টেই দেখা করার কথা ছিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সময় প্রায় শেষের দিকে৷ এনাউন্সমেন্টও হয়ে গেছে। আইরাত উঠে পরে তারপর বিমানে গিয়ে বসে পরে। এখন আইরাত আরো অবাক। বিমানের ভেতরে একটা মানুষও নেই৷ সব ফাকা। নিজের ট্রলি ব্যাগ টা ওপরে রেখে দিয়ে জানালার কাছে গিয়ে বসে পরে। তবে আইরাতের সামনে কেউ একজন বসে আছে। যার আপাদমস্তক কিছুই দেখা যাচ্ছে না, একটা বিশাল আকাড়ের নিউজপেপার দিয়ে ঢেকে রেখে দিয়েছে মুখ। আইরাত কপাল কুচকে সেদিকে তাকায়৷ তখনই একজন এয়ার হোস্টেজ তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো।

আইরাত;; Excuse me..!

— ইয়েস ম্যাম।

আইরাত;; এখানে মানুষ এতো কম কেনো?

আইরাতের প্রশ্নে মেয়েটা কিছুটা ভাবে তারপর আমতা আমতা করে বলে…

— এসে পরবে ম্যাম সবাই৷ ডু ইউ নিড সামথিং?

আইরাত;; নো, থ্যাংক ইউ।

মেয়েটা চলে যায়। আর আইরাত মুখ গোমড়া করে বসে।

আইরাত;; নিলয় ভাইয়া তাহলে এলোই না। ধুর কখন যাবো আমি!

আব্রাহাম;; কোথায় যাবে বেবিগার্ল?

আব্রাহামের কন্ঠ শুনে আইরাতের আত্মা যেনো কিছু সময়ের জন্য তার কাছ থেকে বিদায় নিলো৷ চোখ গুলো আলুর মতো বড় বড় করে ফট করে মাথা ঘুড়িয়ে তাকায়। কথাটা আর কেউ না ওইযে আইরাতের সামনে থাকা নিউজপেপার দিয়ে যে মুখ ঢেকে রেখে ছিলো সেই বলেছে। আব্রাহাম খুব শান্ত ভঙ্গিতে নিউজপেপার টা পাশে রেখে দেয়। দুইহাত ভাজ করে সীটে কিছুটা হেলান দিয়ে বসে৷ আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে৷ আইরাত আব্রাহাম কে দেখে শুকনো ঢোক গিলে। আব্রাহাম নিজের ভ্রুজোড়া খানিক নাচায়।

আইরাত;; আপনি এখানে?

আব্রাহাম;; কোথায় যাচ্ছো তুমি?

আইরাত;; ____________________

আব্রাহাম;; চুপ করে থাকবা তো চড় খাবা (মেকি হেসে)

আইরাত;; কানাডা।

আব্রাহাম;; আহারে, কানাডার ফ্লাইট ছিলো তোমার!!

আইরাত তার মাথা ওপর নিচ করে৷

আব্রাহাম;; কিন্তু সেটা তো সকাল ১১ টায়-ই চলে গিয়েছে।

আইরাত;; কিহহ?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ সাথে ওইযে কি যেনো একটা নাম নিলয় নাকি সেও চলে গিয়েছে।

আইরাত;; কি হচ্ছে এইসব। কখন গেলো? আমাকে তো বলেছিলো ১২;৩০ এ।

আব্রাহাম;; সেটা আমি বলেছিলাম বেবিগার্ল।

আইরাত;; আপনি, আপনি এমন কেনো? (রেগে)।

আব্রাহাম;; আমি গতকাল রাতেই জেনেছি যে আমার বেবিগার্ল তো আমার কাছ থেকে উড়াল দেওয়ার ধান্দায় আছে। কিন্তু তাকে তো আমি উড়াল দিতে দিবো না দরকার পরলে পাখনা কেটে নিজের কাছে রেখে দিবো।

আইরাত;; আর নিলয় ভাইয়া?

আব্রাহাম;; ওই বেটা বর্তনানে ফ্লাইটে আছে৷ ও জানে যে তুমি যাবে না। আর তোমার সাথে ওর যোগাযোগ ব্যাবস্থা আমি অফ করে দিয়েছি। এয়ারপোর্টে মানুষ না থাকা, এখানে মানুষ না থাকা সবই প্ল্যান বেইবি।

আইরাত;; আপনি কি আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতে দিবেন না। কেনো এভাবে আদা-লবণ খেয়ে পিছু লেগে আছেন আমার। প্লিজ আমাকে যেতে দিন।

আব্রাহাম;; ন্যাহ…

আইরাত দাঁত কটমট করে আব্রাহামের দিকে তাকায়৷

আইরাত;; এখন আমি কি করবো?

আব্রাহাম;; এখান থেকে সুন্দর করে বাসায় যাবা। আগে যেভাবে থাকতে সেভাবে থাকবা।

আইরাত;; আপনি…

আব্রাহাম;; এই চুপ। বলতি বন্ধ একদম। কি আমাকে কি পাগল মনে হয়। আমি কিছু বুঝি না তাই না? আমাকে বলবে না দেখে আমি কিছুই জানতে পারবো না তাই না? তুমি এভাবে আমাকে ফাকি দিয়ে চলে যাবে আর আমি বসে বসে দেখবো। এতো বোকা কেনো তুমি। আমার বিষয়ে এখনো এতোটুকু ধারণা হয় নি তোমার বেবিগার্ল। মানুষ ফরেইন কান্ট্রি যায় হাইয়ার স্টাডির জন্য কিন্তু তুমি একচুয়ালি যাচ্ছো আমার থেকে দূরে পালানোর জন্য।

আইরাত;; ____________________

আব্রাহাম;; চলো।

আব্রাহাম উঠে আইরাতের হাত ধরে টান দেয়।

আইরাত;; যাবো না আমি।

আব্রাহাম;; তুই যাবি তোর ঘাড় যাবে।

এই বলেই আব্রাহাম আইরাত কে জোরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এসে পরে। আইরাত হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আব্রাহাম যেনো আরো আকড়ে ধরে। আব্রাহামের গার্ড গিয়ে আইরাতের সব জিনিস বের করে আনে। আর আব্রাহাম আইরাত কে তার গাড়িতে কিছুটা ধাক্কা দিয়েই বসিয়ে দেয়। আইরাত তো কাদো কাদো ভাব। আর আব্রাহাম নিজেও গাড়িতে বসে পরে৷ গাড়ি অনেক জোরে চালাচ্ছে। আইরাত বুঝলো রেগে আছে আব্রাহাম। গাড়ি ড্রাইভ করার সময় কেউ একটা টু শব্দও বলে নি। বেশ সময় ড্রাইভ করে আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে এসে পরে সোজা আইরাতের বাসার সামনে৷ গাড়ি হঠাৎ করেই ব্রেক কষে ফলে আইরাতের কিছুটা ধাক্কা লাগে। আব্রাহাম গাড়ি থামিয়ে নিজের চোখ গুলো বন্ধ করে ক্ষীণ দম ছাড়ে। আইরাতের দিকে ঘুড়ে তার একহাত দিয়ে আইরাতের দুহাত ধরে। আরেকহাত দিয়ে আইরাতের গালের পাশে ধরে আলতো করে।

আব্রাহাম;; লিসেন, খুব কষ্ট করে নিজেকে আর নিজের রাগকে কে দমিয়ে রেখে দিয়েছি। নয়তো রাগের বশে খুব খারাপ কিছু একটা করে বসতাম আমি। কিন্তু তুমি তো আবার ভয় পাও তাই কিছু করতে চাচ্ছি না এই মূহুর্তে। আজকে লাস্ট বারের মতো আজীবনের জন্য বলে দিচ্ছি আইরাত আমার কাছ দূরে যাবি তো মরবি।

আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে রাগে রক্তচক্ষু আকার ধারণ করেছে। আইরাতের আর সত্যি কিছু বলার সাহস হলো না। আব্রাহাম আইরাতের গালে চুমু এঁকে দেয়। কপালে চুমু দেওয়ার সময় আইরাতের কপালে তার ঠোঁট কিছু সময়ের জন্য ধরে চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। তারপর আইরাত গাড়ি থেকে নেমে নিজের ব্যাগ টা হাতে নিয়ে সোজা বাড়ির ভেতরে চলে যায়।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here