নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৬

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৬

তার প্রায় বেশ সময় পর গাড়ি এসে থামে আব্রাহামের মেইন বাড়ির সামনে অর্থাৎ যেখানে তার দাদি রয়েছে। আব্রাহাম কে আসতে দেখে গার্ড রা দ্রুত গেইট খুলে দেয়। তারপর আবার গাড়ি বাড়ির একদম ভেতরে চলে যায়। ইলা বেগম ওপরে নিজের রুমের সামনে থাকা করিডরে ছিলো। সেখান থেকে নিচে সবকিছুই দেখা যায়। আব্রাহামের গাড়ি আসতে দেখে ইলা খুশিমনে দ্রুত নিচে নেমে যায়। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে আইরাতের পাশে গিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়। নিজের হাতটা আইরাতের সামনে মেলে দেয়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল এসো।

আইরাত আব্রাহামের হাতে নিজের হাত রেখে দেয়। আস্তে করে গাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। চোখ উঠিয়ে দেখে আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম তার হাতটা আইরাতের গলার উপরিভাগে বুলিয়ে দিতে দিতে বলে…

আব্রাহাম;; আমরা এখন ভতরে যাবো ওকে। তবে তুমি ভূল করেও মুখ দিয়ে উলটা পালটা কিছু বের করবে না। আর যদি কোন চালাকি করার চেষ্টা করেছো তাহলে তোমার হাল আমি বেশি একটা ভালো রাখবো না বুঝলে।

আব্রাহাম যেনো খুব শান্ত স্বরে তাকে এক প্রকার থ্রেইট-ই দিলো। আইরাতের হাত ধরে ভেতরে চলে যায়। হলরুমে যেতেই ইলা আসে। ইলা দেখে আব্রাহাম একা না তার সাথে আইরাতও রয়েছে। আব্রাহাম এবার আইরাতের হাত ছেড়ে দেয়।

আব্রাহাম;; দাদি!

ইলা;; হুম এতোদিন পর আসার সময় হলো তোর?

আব্রাহাম;; আরে এতোদিন কোথায়। মোটমাট সব মিলিয়ে একদিন হবে।

ইলা;; তবুও, আর আইরাত কেমন আছো?

আইরাত;; জ জ্বি ভালো আছি। আপনি?

ইলা;; হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো। আব্রাহাম তুই আইরাত কে নিয়ে আসছিস আমকে আগে কেনো বলিস নি৷ তাহলেই তো আমি কিছু না কিছু একটা করে রাখতাম।

আব্রাহাম;; আসলে আমারও কোন প্ল্যান ছিলো না হুট করেই এসে পরেছি। আর কি করবে তুমি, কিচ্ছুই করতে হবে না তোমার।

ইলা;; আইরাত তুমি এদিকে এসো।

ইলা আইরাত কে নিয়ে সোফার ওপরে বসিয়ে দেয়। তখনই আব্রাহামের একটা কল আসে আর সে ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে যায়। এদিকে ইলা যেনো আইরাতের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আইরাতও ইলার সাথে হেসে এসেই কথা বলছে। মনটা একটু হলেও ভালো হয়েছে। আব্রাহাম ঠিকই বলেছিলো যে তাকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে গেলে সত্যি ভালো লাগবে। সার্ভেন্ট রা এসে হাজারো পদের খাবার আইরাতের সামনে রেখে দিয়ে গেছে। তবে খাওয়ার মন নেই, সে ইলার কথাগুলোই শুনে যাচ্ছে। হঠাৎ ইলার কথা বলার মাঝেই আইরাত বলে ওঠে…

আইরাত;; আচ্ছা দাদু!

ইলা;; হুমমমমম

আইরাত;; আব্রাহাম আপনারই নাতি তো!

ইলা;; ওমা একি কথা (হেসে দিয়ে)। হ্যাঁ রে আমারই নাতি। কেনো কিছু কি করেছে?

আইরাত;; কিছু না অনেক বেশি কিছুই করেছে (ফিসফিস করে)

ইলা;; হ্যাঁ!

আইরাত;; না না মানে আপনি এতো ভালো এতো সুন্দর করে কথা বলেন আর আব্রাহাম সে তো আস্তো জল্লাদ। এত্তো রাগি, কথা বলার আগেও হিসেব করে বলতে হয়।

ইলা;; ও এমনই। ছোট থেকেই বাবা-মায়ের আদর পায় নি তো। আমার এক হাতে বড়ো করা ওকে। ছোট থেকেই ওর জেদ টা অনেক বেশি। আর যখন বুঝার মতো যথেষ্ট বয়স হলো তখন থেকেই রাগ বাড়তে লাগলো। স্কুল থেকে না জানি প্রিনসিপাল কত শত বার কমপ্লেইন জানিয়েছে। ও যেখানেই গিয়েছে সেখানেই সবাই ওকে দেখে কেমন ভয় ভয় পেতো। তবে আব্রাহাম যেমন রাগি তেমনই চঞ্চল। আব্রাহামের এই চঞ্চলতা একমাত্র তার কাছের মানুষগুলোই দেখেছে। বাকি সবার মতো থাকলেও আস্তে আস্তে কখন যে এইসব মাফিয়া-টাফিয়া বা রিস্ক নেওয়া শুরু করলো সেই জানে। আমি কখনোই ভাবি নি আব্রাহাম এতোটা সাকসেসফুল হবে।

আইরাত;; আব্রাহাম আপনাকে অনেক ভালোবাসে তাই না!

ইলা এই কথা শুনে আইরাতের দিকে তাকায়।

ইলা;; একটা জিনিস দেখবে!

আইরাত;; কি?

ইলা;; এসো আমার সাথে।

ইলা আইরাতের হাত ধরে ওপরে আব্রাহামের রুমে নিয়ে যায়।

আইরাত;; দাদু এখানে কেনো?

ইলা;; এটা আব্রাহামের রুম, দাড়াও।

ইলা দরজা খুলে আইরাত কে ভেতরে নিয়ে যায়। আর রুমের ভেতরে যেতেই আইরাত জাস্ট ভাষা হারিয়ে ফেলে। রুমের প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় আইরাতের ছবি। ইলা এবার গিয়ে রুমে থাকা একটা বেশ বড়োসড়ো পর্দা সরিয়ে দেয়। আইরাত অবাকের চরম পর্যায়। জলরঙ দিয়ে একটা সাদা ধবধবে মোটা কাগজে পেইন্টিং আঁকা। হরেক রকমের রঙ দিয়ে আঁকা হয়েছে। যাতে আইরাতের হাসি মিশ্রিত মুখটা এত্তো সুন্দর করে ফুটে ওঠেছে। আইরাত কখনো ভাবেও নি যে তার ছবি কেউ এভাবে আঁকবে। একরাশ মুগ্ধতা ফুটে ওঠেছে প্রতিচ্ছবি তে। রঙতুলির মাধ্যমে এত্তো সুন্দর করে সবকিছু ফুটিয়ে তুলেছে যে চোখ ফেরানো দায়। আইরাতের নিজেরই মন চাইছে না ছবিটা থেকে চোখ সরাতে। পুরো ঘরের শোভা যেনো আরো কয়েক হাজার গুণ বাড়িয়ে তুলেছে আব্রাহামের আঁকা আইরাতের এই ছবি। আইরাত এক নয়নে তার ছবির দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায়। হাতটা যেনো আপনা আপনিই ছবির ওপরে চলে যায়। ইলা আইরাতের দিকে এগিয়ে আসে।

ইলা;; এবার বলো যে আব্রাহাম কাকে বেশি ভালোবাসে আমায় না তোমায়?

ইলার কথায় আইরাত তার দিকে তাকায়। হেসে দিয়ে বলে…

আইরাত;; উনি হয়তো দুজন কেই ভালোবাসে। আপনার জন্য ভালোবাসা টা আলাদা আর আমার জন্য। এ দুটোকে একত্রে মিশাতে গেলে হয়তো সবই গুলিয়ে যাবে।

ইলা;; হ্যাঁ তা তো একদম ঠিক তবে আমি এটুকুই বলতে চাই যে আমার আব্রাহাম তোমাকে অন্নেক ভালোবাসে।

আব্রাহাম;; আইরাত.. আইরাত!

ইলা;; ওইতো এসে গেছে। না পেয়ে নিচে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে। জলদি চলো যদি দেখে যে আমরা দুজন ওর রুমে তাহলে এসেই এত্তোগুলো প্রশ্ন করা শুরু করবে। চলো চলো।

ইলা আইরাত কে নিয়ে নিচে নেমে পরে। হলরুমেই এসে দেখে আব্রাহাম সোফাতে বসে ফোন ঘাটছে। আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে ইলা আর আইরাত ওপর থেকে নিচে নামছে।

আব্রাহাম;; তোমরা ওপরে কোথায় গিয়েছিলে?

ইলা;; সব তোকে বলতে হবে কেনো? নিজের চরকায় তেল দে।

আব্রাহাম;; আমার চরকা তো তুমি নিয়ে গেছো।

ইলা;; হয়েছে। এবার বল তোদের সামনে প্ল্যান কি!

আইরাত;; প্ল প্ল্যান মানে ক ক কিসের প্ল্যান?

ইলা;; আরে আর কতো প্রেম করবে এবার প্রেমের আগে সামনে তো কদম বাড়াও।

আইরাত;; প্রেম কবে ক….

আব্রাহাম;; খুব দ্রুতই করবো।

ইলা;; হ্যাঁ আমারও না বাড়িতে মন টেকে না। তাই তুই জলদি আইরাত কে বউ বানিয়ে ঘরে তোল।

আইরাত এই দুই নাতী-দাদির মাঝে বসে বসে শুধু কথা গিলছে। একবার ইলার দিকে তো আরেকবার আব্রাহামের দিকে তাকাচ্ছে। সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ জানে এরপরে কি হবে।

আব্রাহাম;; দাদি, ক্ষুদা লেগেছে।

ইলা;; হ্যাঁ কি খাবি শুধু একবার বল না। দাড়া তোর তো বিরিয়ানি পছন্দ বানিয়ে দিবো!

আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল!

আইরাত;; জ্বি।

আব্রাহাম;; যাও, পায়েস বানাও।

আইরাত;; পায়েস!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

ইলা;; আব্রাহাম কি বলছিস এইসব। মেয়েটা এসেছে আর তুই ওকে দিয়ে রান্না করাবি।

আব্রাহাম;; দাদি ইন ফিউচার ওকেই মাঝেমাঝে টুকটাক রান্না করতে হবে তাই এখনই একটু করুক।

আইরাত;; নিকুচি করেছে রান্নার, হারামি (মনে মনে)

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল…

আইরাত;; না মানে আম আমি পারি না বানাতে। মিষ্টি জিনিস পছন্দ করি না তো বানাতেও পারি না।

ইলা;; কোন সমস্যা নেই আমি আছি তো। চল আমি হেল্প করবো। আমি না হয় সব দেখিয়ে বলে বলে দিলাম আর তুই রান্না করবি। আর হ্যাঁ আমাকে আপনি বলে ডাকার দরকার নেই আব্রাহামের মতো তুমি বলেই ডাকতে পারিস আর আমিও তুমি তুমি বলতে পারবো না বলে দিলাম।

আইরাত;; চলবে। (হেসে)

ইলা আর আইরাত রান্নাঘরে চলে গেলো। ইলা সব এক এক করে আইরাতকে দেখিয়ে দেখিয়ে দেয় আর সে তেমনই করে। তবে এক সময় ইলাকে আব্রাহাম রান্নাঘর থেকে নিয়ে চলে যায়। চল্লিশ মিনিট পর রেডিও হয়ে যায় পায়েস।

ইলা;; হয়ে গেছে?

আইরাত;; আমি জানি না কেমন হয়েছে। যদি বকা দেয়?

ইলা;; আব্রাহাম আর যাই করুক রেসিপি খারাপ হওয়ার জন্য বকা তাও তোকে তো জীবনেও দিবে না।

আইরাত;; হুমমম।

আইরাত ট্রে তে করে ছোট ছোট কিছু বাটিতে পায়েস নিয়ে এসে আব্রাহামের সামনে রেখে দেয়। আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে আইরাত তার মুখটা কেমন ফুলিয়ে রেখে দিয়েছে।

আব্রাহাম;; এভাবে মুখ ফুলিয়ে রেখেছো কেনো?

আইরাত;; না মানে এমনি।

আব্রাহাম এবার কোন কথা না বলেই সোজা পায়েস হাতে তুলে নিয়ে খাওয়া শুরু করে। আব্রাহাম খাচ্ছে তো খাচ্ছেই। আর আইরাত তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। পায়েস কেমন হয়েছে! ভালো নাকি মন্দ কিছুই বলছে না আব্রাহাম। শুধু একের পর এক খেয়েই যাচ্ছে। আইরাত কপাল কুচকে তাকায়। আইরাত ভাবে সেও খেয়ে দেখবে কেমন হয়েছে। জীবনে এই প্রথম পায়েস বানিয়েছে আর খেয়ে দেখবে না কেমন হয়েছে। কারণ আব্রাহাম তো কিছু না বলে লাগাতার খেয়েই যাচ্ছে। আইরাত যেই না পায়েস বাটি হাতে নিতে যাবে তখনই আব্রাহাম দ্রুত বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; What r you doing?

আইরাত;; i”m just checking..

আব্রাহাম;; No need..

আইরাত;; আরে আমি বানিয়েছি আর আমি খেয়ে দেখবো না।

আব্রাহাম;; না।

আইরাত;; আমি তো খাবো।

এই বলেই আইরাত একটা পায়েসের বাটি তুলে স্পুন দিয়ে খানিক পায়েস নিয়ে মুখে পুড়ে নেয়। আর আব্রাহাম তার হাতের বাটি টা রেখে মুখের একপাশে হাত রেখে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ আইরাত তো সামান্য খেয়েই চোখ বড় বড় করে তাকায়। যেনো আর গলা দিয়ে নামছে না। আইরাত মুখে পায়েস পুড়েই আব্রাহামের দিকে তাকালে আব্রাহাম তার উদ্দেশ্যে নিজের ভ্রুজোড়া খানিক নাচায়। আর আইরাত এভাবে থাকতে না পেরে ছুটে কিচেনের বেসিং এ চলে যায়। মুখের সব পায়েস টুকু ফেলে দেয়। সে কি কাশি। আব্রাহামও দ্রুত আইরাতের পেছনে যায়। আস্তে আস্তে আইরাতের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগে।

আব্রাহাম;; আগেই বলেছিলাম যে খেতে হবে না কিন্তু না কে শুনে কার কথা? আর ইউ ওকে?

আইরাত সোজা হয়ে ওঠে পরে আব্রাহাম নিজের হাত দিয়েই আইরাতের মুখের সাইড টুকু মুছে দেয়। আর আইরাত একমনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক যত্নের সাথেই আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁট গুলো মুছে দিয়ে বলে…

আব্রাহাম;; মানা করেছিলাম না খেতে?

আইরাত;; আপনি কি হ্যাঁ? এটা খাচ্ছেন কীভাবে। এত্তো লবণ। পায়েসে আমি হয়তো ভূলে চিনির জায়গায় ভরপুর লবণ দিয়ে দিয়েছি। আপনি কীভাবে পুরো এক বাটি খেয়ে নিলেন। এত্তো লবণ। জঘন্য খেতে এক কথায় কুখাদ্য।

আব্রাহাম;; এইইইইইইইই। হাউ ডেয়ার ইউ!

আইরাত;; হা?

আব্রাহাম;; তোমার সাহস হয় কি করে খারাপ বলার।

আইরাত;; আরে আমারই তো রেস….

আব্রাহাম;; তোমার বলেই। খবরদার না করলাম তোমার কোন জিনিস কে খারাপ বলবে না। আমার কাছে তুমি বেস্ট, তোমার সবকিছুই বেস্ট। লবণ কেনো তুমি যদি বিষও দিয়ে দাও আমাকে তাহলে আমি হাসিমুখে খেয়ে নিবো।

আইরাত;; আচ্ছা দাদি কোথায়?

আব্রাহাম আইরাতের কথায় নিজের চারিপাশে দেখতে লাগে। খেয়াল করে দেখে ইলা হাতে একটা মোটা কলম নিয়ে কিচেনের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ইলা আসলে তার হাতে লবণের বক্স নিয়ে তাতে ‘লবণ’ আর চিনির বক্স নিয়ে তাতে ‘চিনি’ লিখে দিচ্ছে। যেনো পরেরবার এমন ওলট-পালট না হয়। আইরাত ইলা কে দেখে হাসবে না কানবে বুঝে না।

আব্রাহাম;; এইসব রান্নাবান্না তোমার কর্ম নয়। চলো।

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে বাইরে চলে আসে। তবে আইরাতের মুখটা মলিন। ইলা এসে আব্রাহামের পাশে বসে।

ইলা;; কিরে মুখটা এমন শুকনো কেনো রে?

আইরাত;; না কিছু না।

ইলা;; হুম বুঝেছি। আরে হয় হয় মাঝে মাঝে এমন মিস্টেক হয়। লবণ আর চিনি তো প্রায় একই দেখতে। শুধু লবণের দানা গুলো একটু বেশিই চিকন। আর চিনির দানা গুলো একটু মোটা এই আর কি। এতো খেয়াল করে কে দেখে। আমারও মাঝে মাঝে ভূল হয় যাক ওসব বাদ দে।

তিনজন বসে হলরুমে আড্ডা দিচ্ছিলো। আইরাত মাঝেমধ্যে টুকটাক কথা বলছে। তার মাঝেই একজন গার্ড এসে আব্রাহাম কে কি যেনো একটা বলে যায় তারপর আব্রাহাম বাইরে চলে যায়।

ইলা;; আইরাত জানিস, আব্রাহামের ছোট বেলার এত্তো এত্তো গুলো ছবি আছে। সব এলবামে রেখে দিয়েছি। তুই দেখবি?

আইরাত;; হুম

ইলা গিয়ে এলবাম টা নিয়ে আসে। এসেই আইরাতের সামনে মেলে ধরে।

ইলা;; এই দেখ।

আইরাত এলবাম টা কোলে নিয়ে বসে আছে আর ইলা এক এক করে দেখাচ্ছে। কেনো যেনো আইরাতের বেশ মজাই লাগছে।

ইলা;; দেখ এইযে এই ছবিটা, এটা আব্রাহাম যখন দেড় বছরের ছিলো তখনকার।

আইরাত;; কি এটা, এটা আব্রাহাম?

ইলা;; হ্যাঁ

আইরাত;; উনি ছোট বেলা এতো মোটু ছিলেন।

ইলা;; আল্লাহ আর বলিস না, আব্রাহাম এত্তো গোলুমোলু ছিলো যা বলার বাইরে। মোটার জন্য ওকে তো কেউ কোলেও নিতে পারতো না।

আইরাত ফিক করে হেসে দেয়।

ইলা;; এটা দেখ।

আইরাত এবার খিলখিল করে হেসেই দেয়। কেননা আব্রাহামের একদম ছোট বেলার ছবি বের করা হয়েছে। এতে সে ডায়পার পরে হাতে মুখে সব জায়গায় চকোলেট দিয়ে ডুবিয়ে রেখেছে। তারপর আরো একটা ছবি বের করে এতে আব্রাহাম রাগে দাঁত বের করে ইইইইইইই করে আছে।

আইরাত;; এতো রাগি কেনো?

ইলা;; মায়ের পেট থেকে রাগ নাকের ডগায় নিয়েই হয়েছে।

এলবামের পরের পাতা উল্টাতেই আব্রাহামের আরো একটা ছবি আসে। তাতে সে হাত-পা সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়ে কান্না করছে। পাশেই একটা ভূতের মাস্ক পরে আছে।

ইলা;; এই দেখ আব্রাহাম আগে ভূত দেখে কতোটা ভয় পেতো। মানে ভূতের নাম শুনলেই যেনো আব্রাহাম অজ্ঞান এমন ছিলো। এই ছবিটা আব্রাহামের ২ বছরের বার্থডে-এর সময়ে তোলা। ভেবেছিলাম আব্রাহাম কে চমকে দিবো। কিন্তু না তা আর হলো কই। উল্টো হয়েছে। ভূতের মাস্ক পরে থাকার কারণে আব্রাহামের কি ভয়। ভেঁ ভেঁ করে কেঁদে দিয়েছিলো। বলতে গেলে ছোট বেলা সে প্রচন্ড ভূতের ভয় পেতো।

আব্রাহাম;; আর এখন বাকি সবাইকে নিজের ভয়ের ওপরে রাখে।

ইলা;; এটা একদম ঠিক বলেছিস। এটা দেখ, ও ঘুমাচ্ছিলো তখন আমি ই তুলেছিলাম।

আইরাত;; কি কিউট লাগছে। উনি ছোট বেলায়-ই ভালো ছিলেন। এখন তো যম।

তারপরেই আব্রাহাম ফোনে কথা বলতে বলতে আসে। এদে দেখে আইরাত হাসছে। আব্রাহাম শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। পরক্ষণেই তার নজর যায় ইলার হাতের দিকে।

আব্রাহাম;; কি করছো তোমরা?

ইলা;; আইরাত কে তোর ছোট বেলার ছবি দেখাচ্ছি।

আব্রাহাম;; হুয়াট না না, ইজ্জতের ফালুদা।

আব্রাহাম এলবাম টা নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে দেয়।

ইলা;; যা দেখানোর তা দেখিয়ে ফেলেছি আইরাত কে এখন লুকিয়ে লাভ নেই।

এভাবেই খুনশুটির মাঝে বেলা পেরিয়ে যায়। আব্রাহাম ইলাকে বলেছে যে আইরাত কে সে তার বাসা থেকে এনেছে এখন আবার সেখানেই নিয়ে যেতে হবে। আর আব্রাহাম আজও রাতে তার বাড়ি আসবে না। বাইরে কিছু কাজ আছে তাই একদম আগামীকাল থেকে এখানেই এসে পরবে। ইলাও তাই ভেবে নেয়। অনেক সময় একসাথে আড্ডা দিয়ে এবার আসে বিদায়ের পালা। আইরাত ইলার কাছ থেকে এসে পরে। ইলা তো আইরাতকে ছাড়তেই চাইছিলো না কিন্তু উপায় নেই তাই এসে পরে। রাত হয়ে গিয়েছে। আব্রাহাম এখন ড্রাইভ করছে আর তার পাশেই আইরাত বসে আছে। নীরবতা ভেঙে আব্রাহামই বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; মুড ঠিক হয়েছে?

আইরাত;; আপনার দাদি অনেক নরম মনের একজন মানুষ।

আব্রাহাম;; হুমমম।

আইরাত;; এখন আমি আমার নিজের বাসায় কবে যাবো?

আব্রাহাম;; সেটা আমার ইচ্ছে তোমার না। এই ব্যাপারে এতো মাথা না ঘামিয়ে চুপ করে বসে থাকো।

আইরাত;; আবার এর হিটলার গিরি শুরু।

আব্রাহাম;; কিছু বললে?

আইরাত;; না।

আব্রাহাম আবার আইরাত কে নিয়ে নিজের গেস্ট হাউজে এসে পৌঁছায়। এসেই দেখে বাইরে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পরে সাথে আইরাতও।

আব্রাহাম;; কিরে তুই এখানে?

অয়ন;; আপনার পারমিশন ছাড়া আপনার গার্ড রা আমাকে ভেতরে যেতেই দিচ্ছে না।

আব্রাহাম ঘুড়ে গার্ডের দিকে তাকায় দুহাত সামান্য প্রসারিত করে বলে…

আব্রাহাম;; কি ইয়ার! ওকে তো ভেতরে যেতে দিতে৷

গার্ড আর কিছু বলে না তারপর তারা ভেতরে চলে যায়।

অয়ন;; আমার আসলে তোর সাথে কিছু কথা আছে।

আব্রাহাম;; হুম, বেবিগার্ল তুমি তোমার রুমে যাও।

আইয়াত সেখান থেকে চলে আসে। আর তারা দুজন কথা বলতে লাগে। আইরাত সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় এক নজর পেছনের দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম বেশ রেগেরেগেই অয়নের সাথে কথা বলছে আর অয়ন যেনো কোন রকমে সামাল দিচ্ছে। আইরাত নিজের রুমে এসে বেডে বসে পরে। মুখটা বাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। পরপক্ষণেই নিচে ঠাস করে কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ পায়। আইরাত দ্রুত দরজা খুলে বাইরে দেখে। কিন্তু কিছুই হয় নি শুধু একটা স্টাফের হাত থেকে কিছু গ্লাস পরে গেছে। আর আব্রাহাম-অয়ন নিজেদের মতো বসে বসে কথাই বলছে। আইরাত রুমে এসে পরে…

আইরাত;; আব্রাহাম ভূতে ভয় পেতো!

আইরাত ফ্রেশ হয়ে এসে চেঞ্জ করে নেয়। রুমে এসে দেখে গরম ধোঁয়া ওঠানো কফি রাখা আর তার পাশে একটা ছোট চিরকুট।

”তুমি তো হয় চকোলেট কফি পছন্দ করো তাই খেয়ে নিও, আমি বাইরে যাচ্ছি। হয়তো আসতে একটু দেরি হবে৷ রুমে ভালো না লাগলে ছাদে বা বাগানে গিয়ে ঘুড়ো। পালাবে? যদি ইচ্ছে হয় ট্রাই করে দেখতে পারো তবে বাড়ির মেইন গেটে ইলেকট্রিক শকের ব্যাবস্থা করা আছে। এটুকুই বললাম বেবিগার্ল বাকিটুকু বুঝে নিও। লাভ ইউ”

আইরাত চিঠি টা রেখে দেয়। কি আর করার আইরাত বসে বসে কফি টা খেতে লাগে। ফোনও দেয় নি। কবে থেকে নিজের ফেইসবুক আইডি তে ঢোকা হয় না। কেমন যে আছে। ফোন ছাড়া থাকা যায় নাকি। এগুলোই ভাবছে আর কফিতে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে। আইরাতের আগে থেকেই বই পড়ার শখ, সামনে তাকিয়ে দেখে কিছু উপন্যাস রাখা আর ম্যাগাজিন। তবে সেগুলো সবই ইংলিশ। তাতে কিছু কিছু ম্যাগাজিন আব্রাহাম কে নিয়েই লিখা। বুঝলো এগুলো আব্রাহামই বসে বসে পরে। তখনই একজন স্টাফ আসে।

আইরাত;; ভেতরে এসো।

স্টাফ;; ম্যাম আপনার কি কিছু লাগবে?

আইরাত;; না।

স্টাফ;; জ্বি আচ্ছা।

স্টাফ চলে যেতে ধরলে আইরাত আবার ডাক দেয়।

আইরাত;; এই শুনো শুনো।

স্টাফ;; জ্বি।

আইরাত;; তোমার নাম কি?

স্টাফ;; রিতা।

আইরাত;; ওহ আচ্ছা রিতা আব্রাহাম কোথায় গিয়েছে?

স্টাফ;; ম্যাম স্যার বাইরে গিয়েছে তা জানি। কিন্তু কোথায় গিয়েছে তা তো আমরা জানি না।

আইরাত;; কখন ফিরবে?

স্টাফ;; স্যার বলে গিয়েছে ১১ থেকে ১২ টার মাঝে ফিরে আসবে।

আইরাত;; ওহ আচ্ছা, আর এখন বাজছে ৯ টা। হুমমমম, আচ্ছা আমাকে কিছু জিনিস এনে দিতে পারবে তুমি?

স্টাফ;; জ্বি ম্যাম বলুন না।

আইরাত;; এনে কিন্তু দিতেই হবে। শুনো একটা বড়ো সাদা কাপড় আনবে, বেশ বড়ো সাথে কিছু কালি আনবে কলমের কালি হলেও চলবে আর সাথে একটা বড়ো মোমবাতি।

স্টাফ;; এ্যাহ?

আইরাত;; হ্যাঁ। এখন যাও দ্রুত এনে দাও প্লিজ।

স্টাফ;; জ জ্বি আ আচ্ছা।

স্টাফ টার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে খুব কনফিউশনে পরে গেছে। আর তার এমন চেহারা দেখে আইরাতের বেশ হাসি পাচ্ছে। স্টাফ চলে গেলে আইরাত আবার বসে বসে পা দুলিয়ে কফি খাওয়া শুরু করে দেয়।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পর ওই রিতা নামে স্টাফটা আইরাতের বলা সব জিনিস নিয়ে আসে।

স্টাফ;; ম্যাম এই যে বড়ো সাদা কাপড়, কালি আর মোম।

আইরাত;; থাংকু থাংকু।

স্টাফ টা আইরাতের বলার ধরণ দেখে খানিক হেসে রুম থেকে চলে যায়। আর আইরাত বত্রিশ টা দাঁত বের করে দিয়ে দেয় এক ভেটকি।
অন্যদিকে আব্রাহামের কিছু ঝামেলা হয়েছে সে সেগুলোই সামলাতে ব্যাস্ত। আর এছাড়াও গতকাল রাশেদ কে কিছু পেপার”স ঠিকঠাক ভাবে আনতে বলেছিলো সেগুলোও নিয়ে নেয়। সব মিটমাট করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে এগারোটার ওপরেই বেজে যায়।


আইরাত;; আমাকে আটকিয়ে রাখা তাই না। ব্যাটা তুই বাড়ি আয় দেখ কি করি।

বর্তমানে ছাদের ওপরে একটা সাদা কাপড় শুরু ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। সাদা কাপড়ে রয়েছে আইরাত। মূলত পায়চারি, একবার এদিক থেকে ওদিক তো আরেকবার ওদিক থেকে এদিক। হাত দুটো মুঠিবদ্ধ করে রেখেছে পেছনে। একহাতে বড়ো একটা মোম। তাতে ছোট্ট করে আগুনের ফুল্কি জ্বলছে। হাওয়া এসে তা নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও আইরাত আগলে নেয় বারবার। সাদা কাপড়ে কালি দিয়ে ডিমের মতো দুটো গোল গোল চোখ আঁকানো হয়েছে। নাকের জায়গায় শুরু একটা সোজা দাগ বসানো। ঠোঁট গুলো আঁকাবাকা আঁকিয়ে তাতে দাঁত এঁকে দিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে সেও আইরাতের মতোই দাঁত গুলো বের করে রেখেছে। রুমে বসে বসে এগুলো করেছে সে। সেই সাদা কাপড়ই নিজের ওপর দিয়ে রেখেছে। কাপড় টা এতোই বড় যে আইরাত সম্পূর্ণ মাথা থেকে পা অব্দি ঢেকে গিয়েছে। আর সাদা কাপড়ে তার হাতে আঁকা মহান কারুকাজ করা মুখমণ্ডল খানা তার মুখের ওপরেই। ছাদে ঘুড়ছে। আব্রাহাম তো বলেছেই তাকে যে রুমে ভালো না লাগলে ছাদে বা বাগানে আসতে, তাই সে ছাদে এসে পরেছে। ঘুড়তে ঘুড়তে নিজের কাপড়ে নিজেই কত শত বার যে বেধে পরছে সে। তাও সামলিয়ে নিচ্ছে। মোট কথা আইরাত আব্রাহাম কে ভয় দেখাবে 🤦‍♀️। ঘড়ির কাটা যখন পনে বারো টায় তখন বাইরে আব্রাহামের গাড়ি আসার আওয়াজ পাওয়া যায়। হর্নের শব্দ। আইরাত ছাদের রেলিং ধরেই নিচে কিছুটা উঁকিঝুকি মারে। দেখে সত্যিই আব্রাহাম এসেছে।

আইরাত;; এসে গেছেএএএএএএ। আইরাত বি রেডি। ভয় দেখাতে হবে। তবে ছাদ টা বেশ নিরব। এতো নিরব ক্যা রে ভাই! এখন তো আমারই ভয় লাগতাছে। আচ্ছা যাজ্ঞে এমন করলে হবে না। আব্রাহাম কে ভয় দেখিয়ে যদি পালাতে পারি, আইডিয়া মন্দ না।

আব্রাহাম এসে গার্ড কে গাড়ি পার্ক করে দিতে বলে। হলরুম পেরিয়ে এসে আইরাতের রুমে চলে যায়। তবে আইরাত নেই। রুমের সবদিকেই খোঁজে কিন্তু আইরাত নেই। আব্রাহাম ভাবে হয়তো বাগানে, সেখানে যায় তবুও নেই। তখন একজন স্টাফ এসে বলে যে আইরাত ছাদের ওপরে গিয়েছে। আব্রাহাম দ্রুত সিড়ি বেয়ে ওঠে ছাদে যায়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল ঘুড়াঘুড়ি শেষ হলো তোমার এবার চলো রুমে। খাবে তারপর কাজ আছে চলো।

কোন শব্দ নেই।

আব্রাহাম;; আইরাত আমি জানি তুমি এখানেই কোথাও আছো তো এইসব লুকোচুরি বাদ দিয়ে জলদি সামনে এসো।

তবুও সাড়াশব্দ নেই।

আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল তুমি কি নিজে থেকে বের হয়ে আসবে নাকি আমি বের করবো। আমি বের করলে কিন্তু ব্যাপার টা বেশি একটা ভালো হবে না। সো কাম আউট।

এবার আব্রাহামের পেছন থেকে ধুপ করে শব্দ আসে। আব্রাহাম পেছন ঘুড়ে তাকায়। দেখে তার সামনে শুধু একটা সাদা কাপড়ে মুড়ানো মূর্তির মতো কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে। মুখের জায়গায় কি কালো কালি দিয়ে উল্টাপাল্টা এঁকে রেখে দিয়েছে। আর সাদা কাপড়ের ভেতরে একটা মোমবাতি জ্বলছে তা থেকেই আলো ছড়াচ্ছে।

আইরাত;; হায়ায়ায়ায়ায়ায়াওওওওওও আমি ভূত। আওওওওওওওওওওওওওওও, ঘাড় মটকে তালগাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে দিবো। তারপর তোকে শেওড়াপাড়ায় শেওড়াগাছের পেত্নীর জামাই বানিয়ে রাখবো। হাওওওওওওওওওওওওও আমি ভূত 🧛‍♀️।

আব্রাহাম নিজের দুহাত ভাজ করে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর আইরাত কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে আবার বলে ওঠে….

আইরাত;; এই আমি ভূত, ভয় পাস না কেনো। হায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া। উলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলু (হাত ওপরে তুলে দুলিয়ে দুলিয়ে)

আব্রাহাম এবারও চোখ গুলো সরু রেখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চারিপাশে ঝিঝি পোকার ডাক যেনো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। আইরাত কোন হাবভাব বুঝতে না পেরে এবার আর থাকতে পারে না। ফু দিয়ে মোমবাতি টা নিভিয়ে এক টানে মাথার ওপর থেকে কাপড় টা নামিয়ে ফেলে। কপাল কুচকে আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আইরাত;; আপনি না ভূত দেখে ভয় পান?

আব্রাহাম;; দোয়া করি এমন চুনোপুঁটি একটা ভূত আজীবন আমারই থাক।

আইরাত;; ভয় পান না কেনো আপনি?

আব্রাহাম;; পাগল। চলো

আইরাত;; আরে, আরেএএএএএএ

এই বলেই আব্রাহাম এক টানে আইরাত কে নিজের কাধে তুলে নেয়। তারপর সিড়ি বেয়ে নিচে হাঁটা দেয়। আইরাত এইযে চিল্লাচ্ছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা, আব্রাহাম তা এক কান দিয়ে ঢোকাচ্ছে আরেক কান দিয়ে বের করছে। আইরাত কে তুলে নিয়ে সোজা রুমে গিয়ে বিছানার ওপর ছেড়ে দেয়। আইরাত বিছানার ওপর দাঁড়িয়ে মুখ উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর আব্রাহাম যেনো থাকতে পারছে না। হাসতে হাসতে সোফাতে গিয়ে বসে পরে। আব্রাহাম কে এভবে হাসতে কি যে সুন্দর লাগছে তবে আইরাত তো হাবলাকান্তের মতো বিছানাতে নিজের কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি ভাবলো আর কি হলো, একেবারে পুরোটাই ঘেটে ঘ।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here