পদ্মপাতার জল পর্ব ২

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_২
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

ইয়াশ বিরক্ত হয়ে ঝিলের দিকে এগিয়ে গেল। পদ্ম ওকে দেখে একটা ডুব দিল।

ইয়াশ পাড়ের কাছে এসে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। কোনো শাপলাই কাছে নেই। সবগুলোই হাতের নাগালের বাইরে। ন্যাকা মেয়েটা এসে বলল, জানু, এদিকের গুলো কেমন মরা মরা। দেখো, ঐযে ঐ শাপলাটা ভালো। ওটা নিয়ে দাও।
ইয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল, দেখতেই পাচ্ছো নাগাল পাচ্ছি না। তার উপর বাছাই করছো।

ইয়াশ একটা লম্বা লাঠি জোগাড় করে পাড়ে ঝুঁকে বসে একটা মোটা শাপলাকে খোঁচাতে লাগল। পদ্ম পানির নিচে আর নিশ্বাস রাখতে পারছে না। ডুব দিয়ে অনেকক্ষণ বসে আছে। স্বচ্ছ পানিতে সব দেখতে পাচ্ছে। হাসির চোটেই জমিয়ে রাখা অক্সিজেন বেরিয়ে গেছে। এখন উপরে উঠতেই হবে। না হলে মরবে। তাই দেরি না করেই পদ্ম পানির উপর মাথা তুলল।

এমনিই বিরক্ত হয়ে শাপলাটাকে খোঁচাচ্ছিল। হঠাৎ পদ্ম পানি থেকে উঠায় চমকে উঠল ইয়াশ। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল ঝিলের পানিতে। অমনি পদ্ম হেসে উঠল। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রোদে পোড়া পদ্ম। পানিতে শাড়ি গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। চুলগুলোও মুখের সাথে লেপ্টে টুপটুপ করে ঝিলে পানির ফোঁটা ফেলছে। ইয়াশ কোনোমতে পানিতে তাল সামলিয়ে ওর দিকে তাকাল। চোখে যদি আগুন থাকত এখুনি পদ্ম ভষ্ম হয়ে যেত।

পেছন থেকে ইয়শের একজন বন্ধু বলল, ভিলেজ গার্ল। ওয়া! হোয়াট এ বিউটি!

ইয়াশ- থামতো, রাফি। বিউটি? কোনখান দিয়ে? এই মেয়ে, তুমি পানির নিচে কি করছিলে?

পদ্ম- দেখছিলাম।

ইয়াশ- কি দেখছিলে?

পদ্ম- কিভাবে লাঠি দিয়ে শাপলা তুলতে হয়।

রাফি- তুমি কি মৎস্য কন্যা নাকি!

পদ্ম- কেন?

রাফি- পানির নিচ থেকে উঠলে।

রাফির কথা শুনে হাসি পায় পদ্মের। ইয়াশ বলল, হোয়াট ননসেন্স!
পদ্ম হাসতে হাসতে বলল, আমি ডুব দিয়েছিলাম। তাই পানির নিচ থেকে উঠেছি। তা শাপলা লাগবে বুঝি?
পদ্ম সুন্দর দেখে গোটা তিনেক শাপলা তুলে ইয়াশের দিকে ধরে বলল, এই নিন। আর আপনাকে তুলতে হবে না। নিয়ে ওনাকে দিন।

ইয়াশ- লাগবে না।

পদ্ম হেসে ঝিল থেকে উঠে এল। গায়ে গামছা জড়িয়ে নিতে নিতে বলল, আপনারা কি সব সময় কারো সাথে শুরুতে কথা বলার সময় তুমি করে বলেন?

ইয়াশ ঝিল থেকে উঠে বলল, না। কেন?

পদ্ম- তাহলে আমার সাথে বললেন যে?

ইয়াশ- গাঁয়ের মেয়ের সাথে কিসের আপনি?

পদ্মের এবার মেজাজ খারাপ হলো। কিন্তু বাইরে তা প্রকাশ না করে বলল, গাঁয়ের মেয়েরাও মানুষ। ভদ্রভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখুন।
কথাটা শুনেই ইয়াশ তেড়ে যাচ্ছিল রাফি আর আদনান ওকে আটকালো। পদ্ম শাপলা নাচাতে নাচাতে বাড়ির পথে রওনা দিল। ইয়াশ রেগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, কোনোদিন হাতের নাগালে পেলে বুঝিয়ে দেবো ভদ্রতা কাকে বলে।
.
.
.
.
ঘরে কাপড় পাল্টিয়ে উঠানে চলে এল। গামছা দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, মা, রান্না কি হয়ে গেছে? মরিয়ম বেগম রান্নাঘর থেকে বলল, হয়ে আসছে।
পদ্ম- আচ্ছা, তুমি শেষ করো। আমি দাওয়ায় পাত পাতছি।

সবাই বিকালের খাবার খেতে বসল। গরম ভাত, শাপলা ভাজি আর কই মাছ ভাজি। গরম পড়লেও সবকিছু একসাথে খেতে অমৃত লাগছে। খাওয়া শেষে রুমে চলে গেল যে যার। শাপলা বিছানায় শুয়ে গেল। পদ্মও নামায সেরে একটা বই নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসল। পড়তে পড়তে ইয়াশের কথা মনে পড়ল। আজকে ইয়াশের কথায় রাগ উঠছে ওর। গ্রামের মেয়ে বলে কি গন্ডমুর্খ ভাবে নাকি? তাই যখন যা খুশি তাই বলা যায়? ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল। শাপলার ডাকে ঘুম ভাঙল। মাগরীবের আযান হয়ে গেছে। চোখ কঁচলে ওযু করতে গেল। নামায পড়ে উঠানে বসল পদ্ম। এই কয়দিন পড়াশোনা আর করেনি। চট্টগ্রাম ভার্সিটির পরীক্ষাটা ভালোই দিয়েছে। আশা করছে নাম আসবে। বাবাকে আর কোথাও নিয়ে ঘুরতে চায় না ও। কয়েক ভার্সিটি পরীক্ষায় ওকে নিয়ে ঘুরে বেশ হাঁপিয়ে গেছে ফরহাদ মিয়া। তাই এটাতেই টিকে ভর্তি হতে চায় ও।
.
.
.
.
বসে বসে তারা দেখছিল। তার সাথে বাতাসে গাছপালার নড়ার শব্দ শুনছিল। হঠাৎ চেঁচামেচি কানে এলো। ওদের বাড়ির কিছুদূর পর খলিল মিয়াজি বাড়ি। ওখান থেকেই আসছে চেঁচামেচি। খলিল মিয়াজি আর পদ্মের দাদা বাল্যবন্ধু ছিলেন। তাই ওই দিক দিয়ে একটা সম্পর্ক আছে দুই পরিবারের। পদ্ম টর্চ নিয়ে একলাই ঐদিকে রওনা দিল। গিয়ে প্রথমেই চোখ পড়ল ইয়াশের দিকে। তার আশেপাশেই ন্যাকা মেয়েটা বানরের মতো লাফাচ্ছে আর চেঁচাচ্ছে। তারসাথে ওর বাকি তিন বন্ধু।
পদ্ম ওদের দিকে টর্চ ফেলে বলল, কি হয়েছে?

ইয়াশ- তুমি?

পদ্ম- হ্যাঁ আমি। কি হয়েছে? এভাবে চেঁচামেচি করছেন কেন?

রাফি- মনিকা আসলে একটা ব্যাঙ দেখে ভয় পেয়েছে।

কথাটা শুনে পদ্ম হাসতে লাগল। মনিকা রেগে বলল, ওই হাসছিস কেন?

পদ্ম তুই তুকারি শুনে হাসি থামিয়ে বলল, আপনারা কি পড়াশোনা করেন?

ইয়াশ- হ্যাঁ, কেন?

পদ্ম- দেখে তো মনেই হয় না। যার ব্যবহার ঠিক নেই তারা শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষিত। যাহোক ভেবেছিলাম বিপদে পড়েছেন। তাই সাহায্য করতে এসেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে শুধুই সময় নষ্ট করলাম।

পদ্ম বাড়ির পথে হাঁটা ধরল। ইয়াশের ইচ্ছে করছে পদ্মকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে। মনিকাও বেশ রাগে ফুসে উঠল। কিন্তু কেউ কিছু বলল না। পদ্মের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল।
.
.
.
.
রাতে শোয়ার আগে ফরহাদ মিয়া পদ্মকে বলল, কালকে রেজাল্ট দেওয়ার পর একবার চট্টগ্রাম যাব। তোর খলিল দাদার ছেলে মাহফুজের বাড়ি। যদি টিকিস তবে ওখানে থেকেই পড়বি।

পদ্ম- বাবা, হল আছে তো। ওখানে সিট পেলে তো লাগবে না।

ফরহাদ- সেটা পরে দেখা যাবে।

পদ্ম নিজের রুমে এসে শুয়ে গেল। চারদিকে শুনশান নীরবতা। ও কান পেতে ঝিঝি পোকার ডাক শুনছে আর ভাবছে, কালকে রেজাল্ট দিবে। ও পাস করবে তো!
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here