পদ্মপাতার জল পর্ব ৮

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_৮
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

ইয়াশ রেগে ওকে টেনে নিয়ে দেয়ালে চেপে ধরে বলল, কি করবে বুঝতে পারছ না। আমার ঘড়িতে কে এলার্ম সেট করেছে? আপু, ইনু বা রিনি, কেউই নুপুর পরে না। এই বাড়িতে নুপুর পরলে একমাত্র তুমিই পরবে। আর আমাকে কেউ জ্বালালে আমি তাকে দ্বিগুণ জ্বালাই। আজকে তুমি আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছো তার শাস্তি তো তোমাকে পেতে হবে, মিস গেঁয়ো।
.
.
.
.
পদ্ম কিছু না বলে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে। সে রেগে আছে না মজা নিচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তবে ওর শক্ত দুই হাতের চাপে কাঁধে ব্যাথা পাচ্ছে। ইয়াশ ওভাবে থেকে বলল, বলো, কি শাস্তি দেওয়া যায়।
পদ্ম নিরুৎসাহিত ভঙ্গিতে বলল, সেটা আমি কি করে বলব।
পদ্মের চেহারায় কোনো ভয়ের ছাপ নেই দেখে ইয়াশের মোটেই ভালো লাগল না। বিরক্ত হয়ে বলল, তোমার ভয় লাগছে না?

পদ্ম- কেন ভয় পাবো?

ইয়াশ- শাস্তি দেবো বলছি যে।

পদ্ম- দোষ করলে তো শাস্তি পেতেই হবে। স্বাভাবিক।

ইয়াশ- তাহলে দোষ স্বীকার করছো।

পদ্ম- একপ্রকার।

ইয়াশ- এই মেয়ে, তুমি সোজাসাপটা কথা বলতে পারো না। এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলো কেন?

পদ্ম- কি আর করব। ছোটবেলার অভ্যাস।

ইয়াশের পদ্মকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেরই বিরক্ত লাগছে। তাই পদ্মকে ছেড়ে দিয়ে সরে এল। মনে মনে বলল, কি মেয়ে রে বাবা।প্রত্যেক কথার এমনভাবে উত্তর দেয় যে কথা বলার ইচ্ছাই চলে যায়।

হঠাৎ বাইরে কেমন হট্টগোল শোনা যেতে লাগল। ইয়াশের রুমের দরজায় নক করছে ইরিন। তার সাথে ইনু আর রিনি। তার উপর কোথা থেকে মনিকা এসে হাজির হয়েছে। সে ন্যাকা ন্যাকা গলায় ইয়াশ ইয়াশ বলে চেঁচাচ্ছে আর বলছে, জান, আমি এসে গেছি। দরজা খোলো। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। মনিকার কথা শুনে পদ্ম হাসতে লাগল। ইয়াশ কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, হাসছ কেন?

পদ্ম- ( হাসতে হাসতে) তোমার মিস জানুর কথা শুনে।

ইয়াশ এক প্রকার বিরক্ত হয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল। এরা আসার আর সময় পেল না। বারান্দায় এসে আবার পেছন ফিরে বলল, শাস্তিটা তোলা রইল। যেকোনো মুহূর্তে পেতে পারো।

পদ্ম- আমি অপেক্ষায় থাকব।
বলেই পদ্ম হাসতে লাগল।

ইয়াশ মনে মনে বলল, ধুর, এই ছাগলগুলো সব প্যান মাটি করে দিল। দাঁড়া, সবগুলাকে জব্দ করব। বলেই বারান্দা পার হয়ে নিজের রুমে চলে এল।
.
.
.
.
দরজা খুলতেই সবাই হুড়মুড় করে ওর রুমে ঢুকল।

ইরিনা- এতক্ষণ কি করছিলি?

ইনু- ভাইয়া, কতক্ষণ ধরে দরজা নক করছিলাম।

রিনি- ভাইয়া, কখন রুমে ঢুকেছেন?

মনিকা- কি হয়েছে তোমার জানু?

ইয়াশ হাই হাই তুলতে তুলতে বলল, বাপরে বাপ, আস্তে আস্তে। উফ্! কত কোয়শ্চান! মুখ তো একটাই নাকি?

ইরিনা- কথা ঘোরাস না তো। কি করছিলি এতক্ষণ? পাঁচ দশ মিনিট ধরে শুধু দরজাই ধাক্কাচ্ছিলাম।

ইয়াশ- আরে বাবা, একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

ইনু- ঘুম! আবার! এখন?

ইয়াশ- হ্যাঁ, আজকে তাড়াতাড়ি উঠেছি তো তাই।

মনিকা ছাড়া বাকিরা মুখ টিপে হাসতে লাগল। পদ্মও দরজা খুলে নাটক দেখার জন্য আসছিল। রুমে ঢোকার সময় ইয়াশের কথা শুনে ওরও হাসি পেল। ঢুকেই বলল, হ্যাঁ আপু, অনেক গভীর ঘুম দিয়েছিল। তাই তোমাদের ডাক কানে যায়নি।
ইয়াশ ওর দিকে তাকাতেই পদ্ম চোখ টিপে হাসতে লাগল। ইয়াশও ওর দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলল, মনিকা।

মনিকা- হুম?

ইয়াশ- তুমি না কয়দিন ধরে লং ড্রাইভে যাবে বলছিলে?

কথাটা শুনে মনিকার চোখ চকচক করে উঠল। মনিকা হাসি চওড়া করে বলল, হ্যাঁ, জানু। কতদিন যাই নাই। তোমাকে তো যতবার বলেছি তুমি না করে দিয়েছো।

ইয়াশ- আজকে যাব।

মনিকা- সত্যি!

ইয়াশ- হুম।

মনিকা- থ্যাংকু থ্যাংকু থ্যাংকু…জানু।

মনিকার এত ন্যাকামি দেখে পদ্মের বিরক্ত লেগে উঠল। এত নাটক করতে পারে কেউ তা মনিকাকে না দেখলে বুঝতই না। এত ন্যাকামি দেখতে ইচ্ছে করছে না ওর তাই মাত্র দরজার দিকে পা বাড়াচ্ছিল, এমন সময় ইয়াশ ডেকে বলল, কোথায় যাচ্ছেন মিস পদ্ম?

পদ্ম পেছন দিকে তাকিয়ে বলল, যেখানে যাওয়ার কথা। কথাটা শুনেই ইয়াশের মাথায় রাগটা হালকা নড়েচড়ে উঠল। মনে মনে বলল, মেয়েটা খালি প্যাঁচিয়ে কথা বলে। সোজা কথা মুখ দিয়ে বের হয় না। ওর এই কথা শোনা আর আগুনে ঘি ঢালা সমান।

ইয়াশ- তোমার তো এখন অনেক কাজ। এখুনি তৈরী হয়ে এসো।

পদ্ম- কেন?

ইয়াশ- তুমিও আমাদের সাথে যাবে।

সবাই একসাথে বলে উঠল, কি!!!!!!!!

মনিকা খানিকটা ঝাঁঝালো গলায় বলল, হোয়াট ইজ দিস, জানু। আমাদের লং ড্রাইভে বাইরের মানুষ টানছো কেন?

ইয়াশও মনিকার মতো ন্যাকামি করে বলল, ওমা, তোমার ভালোর জন্যই তো। আমরা লং ড্রাইভ উপভোগ করব আর ও আমাদের কাজ করে দেবে।

ইরিনা- এসব কি বলছিস ইয়াশ? বাড়িতে এত কাজের লোক থাকতে ওকে কেন টানছিস?

ইয়াশ- সেটা আমার আর মিস পদ্মের ব্যাপার। তাই না?

সবাই পদ্মের দিকে তাকিয়ে আছে। পদ্ম কি বলবে শোনার জন্য। ইয়াশ ওর কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলল, তুমি যদি আমাদের সাথে যাও তবে সবার শাস্তি মাফ করে দেবো। কথা দিচ্ছি।

ইরিনা- ফিসফিস করে কি বলছিস?

ইয়াশ- তেমন কিছুই না।

পদ্ম- আমি যাব।

ইরিনা- পদ্ম…

ইয়াশ- যাও রেডি হয়ে নাও। মনিকা জানু, যাও নিচে বসো, আমি রেডি হয়ে আসছি।

সবাই ইয়শের রুম থেকে বেরিয়ে গেলে ইয়াশ দরজা মেরে দিল।
.
.
.
.
সবাই নিচে বসার ঘরে অপেক্ষা করছে পদ্মের জন্য। ইয়াশ বার বার ঘড়ি দেখছে। মনিকা তার ব্যানেটি ব্যাগ থেকে আয়না বের করে কিছুক্ষণ পর পর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ঘষছে। ইনু আর রিনি ওকে দেখে ফিসফিস করছে আর মুখ টিপে হাসছে। ইয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল, এতক্ষণ লাগছে কেন এই মেয়ের?

ইরিনা রান্নাঘর থেকে বলল, ও একটু আগে নিচে কাজ করে তারপর রেডি হতে গেছে। তোদের তাড়া থাকলে চলে যা।

ইনু আর রিনি নিজেদের মধ্যে বকবক করছিল। ইয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল, তোদের বকর বকর বন্ধ করবি?

ইনু- বিরক্ত লাগলে চলে যা।

দুই বোন থেকে গুঁতা খেয়ে চুপ করে গেল ইয়াশ। আর যাই হোক পদ্মকে না নিয়ে বাড়ির বাইরে এক পাও নড়বে না। তাই অপেক্ষা করতে লাগল। হঠাৎ দুইজনের কথা বন্ধ হয়ে গেছে দেখে ইয়াশ ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, কিরে এখন চুপ করে গেলি যে। দুইজনে সিঁড়ির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ইয়াশও ওদের অনুসরন করে তাকিয়ে তার চোখ পদ্মের দিকে আটকে গেল। কালো জর্জেটের থ্রি পিস পরেছে। মাথার চুল বেণী করে সামনে আনা। ছোট চুলগুলো একপাশে সিঁথি করে রাখা। হাতে কালো ফিতার ছোট ঘড়ি। মুখে কোনো সাজ নেই। গলায় শুধু একটা ছোট পাথরের চেইন। ইয়াশ টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেল। কেউ কিছু বোঝার আগেই ওর মাথায় পানি ঢেলে ভিজিয়ে দিল ওকে। ইয়াশ রাগী স্বরে বলল, এত সেজেছো কেন? তুমি লং ড্রাইভে যাচ্ছো না আমরা যাচ্ছি। যাও চেঞ্জ করে এসো।

পদ্ম রেগে কিছু না বলে চেঞ্জ করতে চলে গেল। ইরিনা রান্নাঘর থেকে বলল, এমন করলি কেন? মেয়েটা সাজলো কোথায়? যত সব বাড়াবাড়ি।

ইয়াশ মনে মনে বলল, এমন না করলে যে আজ আমি নিজেকে আটকাতে পারতাম না বোন। সবার সামনে উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলতাম। মেয়েটা না সেজেই আমার হার্ট অ্যাটাক করিয়ে দিচ্ছিল। সাজলে তো মরেই যেতাম। জানি না কেন ওকে দেখলেই পাগল পাগল লাগে। কি আছে ওর মধ্যে!
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here