পদ্ম ফুলের অভিমান পর্ব -০৮

#পদ্ম_ফুলের_অভিমান(পর্ব 8)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আব্বু ডেকে পাঠালো। আমি রাগ করে কখনো কিছু করলে পরে রাগ থেমে যাওয়ার পর সেই আব্বু আম্মুর কথাই মেনে নেই। আমি যখন বাড়ি থেকে চলে গেছি সেই সময়টা আমার রাগের থেকে বেশি ছিলো আমার জিদ, যে আমার আব্বু আম্মু আমাকে কেনো বুঝতে চায় না। সবসময় পড়াশুনার জন্য আমাকে ব*কে। তারা জানে আমি ভালো ছাত্রী, তবুও রেজাল্ট খারাপ হলে কি হয়েছে জিজ্ঞেস না করে শুধু বকে এজন্যই ফুপির বাড়িতে যাওয়া।
কিন্তু কিছুদিন পর আবার নিজের ভূল নিজে বুঝতে পারি যে বাবা মা যখন সন্তানকে পড়াশুনা করতে পাঠায়, স্কুল কলেজে টাকা দেয় তখন মনে মনে ভাবে যে আমার সন্তান ভালো করে লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে এটাই বড় পাওয়া।
আর আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষদের খাওয়া, পরা, স্কুল কলেজে,কোচিংএর বেতন, তার ওপর আলাদা দুইটা টিউটর রাখলে তাদের বেতন, সব মিলিয়ে দেখা যায় মাস শেষে বাবা মাকে হিমশিম খেতে হয়, কিন্তু তবুও বাবা মা সেই চাপ সন্তানদেরকে দেয় না। বিনিময়ে তারা শুধু ভালো রেজাল্ট চায়, কিন্তু সন্তান রেজাল্ট খা*রা*প করলে রাগের সাথে সাথে তাদের যে তাদের কষ্ট ও হয়, আর সেই সেজন্যই তারা বকে।

আমি আব্বুর সামনে আসতেই আব্বু বললো,,

-পদ্ম মা ,তোমার ক্লাস কবে থেকে শুরু

-সামনের সপ্তাহ থেকে আব্বু

-তাহলে তুমি যাবে কবে

-আর দুইদিন থেকেই যাবো আব্বু, আমার কিছু বই আর নিজের জন্যও কিছু কেনাকাটা আছে।তাই ক্লাস শুরুর আগেই সব ঠিকঠাক করতে হবে।

-তোমাকে একটা কথা বলি,আশা করি আমার কথার অবাধ্য হবে না

আব্বু এভাবে কেনো কথা বলছে,কি এমন বলবে যে আগেই এভাবে বললো। কথাগুলো মনে মনে বলে আব্বুকে আসতে করে বললাম জ্বি আব্বু বলো, আব্বু ভালোভাবে আমাকে কিছু বললে সেই কথার অবাধ্য হওয়ার সাহস আমার নেই। কিন্তু রাগ করে বললে সেই কথা যদি পছন্দ না হয় তো আমি জিদ করি আম্মুর সাথে। তখন আম্মু আব্বুকে সব বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু এখন যতো ভালোভাবে বলতেছে,আমি তো আব্বুর কথার অবাধ্য হতে পারবো না,, আল্লাহ ভালো কিছু যেনো বলে।

-আমি তোমার আর নিলয়ের বিয়ে ঠিক করেছি

-কথাটা কর্নপাত হতেই কান গরম হয়ে গেলো। কিইইহহহ বলে দাড়িয়ে গেলাম

-হ্যাঁ, আমি চাইছিলাম ঘরোয়া ভাবে আজকেই তোমাদের বিয়েটা নিতে। কিন্তু তোমার আম্মু বললো আমাদের তো বেশি আত্মীয় নেই শুধু তোমার নানু বাড়ি, আজ ওনাদের ডেকে নেই, আর কিছু কেনা কাটা থাকলে সেটাও করে নেওয়া যাবে আজ। এজন্য কাল বিয়ে।

-কিন্তু আব্বু আমি এখনে বিয়ে করতে চাচ্ছি না। আমি এখনো কিছুই করি না

-বিয়ের জন্য মেয়েদের কিছু করতে হয় না। তাছাড়া নিলয় তো জব করেই, আর ও তো কোনো দিক দিয়ে খারা*প ও না। যথেষ্ট ভদ্র ছেলেদের মধ্যে নিলয় একজন। তোমার তো সমস্যা হওয়ার কথা না,,

-আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। হটাৎ আব্বুর এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছি ন। নিলয় ভাইয়াই কি তাহলে আব্বুকে বলেছে বিয়ের কথা। প্রচন্ড রা*গ হচ্ছে ওনার ওপর। নিজে যা মনে করবে তাই হবে নাকি। আমার মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই ওনার কাছে, বিয়ে ঠিক করে ফেললো না জানিয়ে।

আব্বুকে এখন কিছু বলতে পারবো না কারন কান্নাগুলো দলা পেকে আসছে। আর অতিরিক্ত কান্নার সময় মুখ দিয়ে কথা বের হয় না।দৌড়ে চলে গেলাম নিজের ঘরে। আমাকে কেউ বুঝতেই চায় না। তখন নিলয় ভাইয়ার কথা শুনে মনে হলো উনি বোধহয় সত্যি সত্যি আমাকে বোঝে কিন্তু এখন একদমে তা মনে হচ্ছে না, এতোই যদি বুঝতো আব্বুকে বিয়ের কথা বলার আগে আমাকে বলতে পারতো, উনি বলেছে যে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু কাল বিয়ে এসব তো বলে নি। আমার ও তো একটা প্রস্তুতি থাকতে হবে। সেটা কি উনি একবারো ভেবে দেখলো না।

সকালে নাস্তাও খেতে যাই নি আর নিজের রুমেই দরজা লাগিয়ে বসে আছি।আম্মু একবার এসেছিলো,আম্মুকে রাগ দেখিয়ে বলে দিয়েছি আমি এই বিয়ে করবো না। আম্মু বলেছে আব্বু নাকি সবাইকে বলেও দিয়েছে এতোক্ষনে।তাই আর না করে কোনো লাভ নেই।
এগারোটা নাগাত আম্মু আবারো এসে ডাকতেছে,

আমি দরজা খুলতেই আম্মু এসে বললো, এসব কি পদ্ম মা। চোখঁ মুখের এ কি অবস্থা করেছিস।কান্না করে একদম ফুলে গিয়েছে। এভাবে কেউ কাঁদে, বিয়ে তো সবাইকেই করতে হবে মা। আর নিলয় তো কোনো দিক দিয়ে খারা*প না। তোর নানু বাড়ির সবাই তো শুনে খুব খুশী। নিলয় সবার সাথে অনেক ভালো ব্যাবহার করে, এতো বড় বাড়ির ছেলে হয়েও নিলয় কখনো আমাদের সাথে বা*জে ব্যবহার করে নি। ওর মধ্যে কোনো অহং*করে নেই,দেখতেও মাশাআল্লাহ,ভালো চাকরি করে। এমন ছেলে তো লাখে একটা রে মা। তাহলে তুই এতো ভেঙে পরছিস কেনো।

-আমি খুব মনোযোগ দিয়ে আম্মুর কথাগুলো শুনলাম।সবাই রাজি,সবার মুখেই হাসিঁ, আর হবেই না কেনো নিলয় ভাইয়া সবার থেকে ওপরে। নিলয় ভাইয়ার বাবা, চাচারা সবাই বড়লোক। ওনার চাচাতো বোনদের মধ্যে অহংকার থাকলেও নিলয় ভাইয়ার চাচাতো ভাইদের মধ্যে নেই। ছেলেদের মনে হয় অহংকার বেশি থাকে না। আমি ফুপির বাড়িতে থাকতে কয়েকদিন ওনার চাচাতো ভাই বোনেরা এসেছিলো তখনি বুঝেছি আপুগুলা কেমন যেনো ওভার স্মার্ট ভাব দেখাচ্ছিল,তবে ভাইয়াগুলা সবাই ভালো ছিলো,নিলয় ভাইয়ার মতোই। সব মিলিয়ে নিলয় ভাইয়াকে অপছন্দ করার মতো কোনো কারন পাওয়া যাবে না।

সব কিছুই ঠিক আছে কিন্তু উনি আমকে একটাবার জিজ্ঞেস করলো না আমি এখনি বিয়ে করতে চাই কি না। চাইলে তো সময় নিতে পারতো।

আমি আম্মুকে বললাম,আচ্ছা আম্মু নিলয় ভাইয়া কোথায়।

-নিলয়কে তখন ছাঁদে যেতে দেখেছিলাম,নেমেছে কি না জানি না।

-আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখে আসছি,

-তারাতারি আসবি,আমি খাবার দেবো। সকাল থেকে না খেয়ে আছিস। এভাবে থাকলে অসুস্থ হতে সময় লাগবে না। নিলয়ের মতো ছেলে হয় না রে মা। আমি তোকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আজ যে কারনে তুই ওকে বিয়ে না করার জন্য কান্না করতেছিস। একদিন ঠিক এই কারনেই তুই খুশি হয়ে কান্না করবি।

আমি আম্মুর বলা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ছাঁদের দিকে এগোচ্ছি,
সত্যি কি এমন দিন আসবে। যেদিন আমি নিলয় ভাইয়াকে মন থেকে মেনে নিতে পারবো।জানি না কি আছে আমার ভাগ্যে। যাক গে সেসব আগে ওনাকে জিজ্ঞেস করবো কেনো আমাকে না জানিয়ে বিয়ের মতো এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত উনি নিলো,,

ছাঁদে উঠেই দেখি কি রোদ, এই রোদের মধ্যে নিলয় ভাইয়া দাড়িয়ে আছে। আমি যেতেই বললো,,

-এই তুই এই সময় ছাঁদে এসেছিস কেনো, খুব রোদ চল নীচে যাই

-দাড়াও নিলয় ভাইয়া, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে

-আচ্ছা নিচে আয়, ঐ গাছের নিচে গিয়ে যা বলার বলিস

আমি আর কথা বাড়ালাম না। এমনিতে কান্না করার জন্য মাথাটা ব্যথা করছে,এখন আবার রোদে দাড়িয়ে থাকলে উল্টে পরে যাবো।

নীচে নেমেই, নিলয় ভাইয়াকে বললাম,
-বিয়ের মতো একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না

নিলয় ভাইয়া ছোট ছোট চোখঁ করে বললো, আমিও জানতাম না যে আমাদের বিয়ে

-তুমি মিথ্যে কেনো বলছো, তুমি যদি আব্বুকে না বলো তাহলে আব্বু আজ কেনো বিয়ের কথা বলবে। কই আগে তো বলে নি। তুমি কাল আমাকে জানিয়েছো যে আমাকে ভালোবাসো তাহলে আজকেই আব্বু তোমার সাথে আমার বিয়ের আয়োজন করতেছে কি এমনি এমনি। আর তুমি বলছো জানো না।

-আমি সত্যি জানি না পদ্ম , শুধু ভোরের দিকে আম্মু আমাকে বললো আমি আর তোর বাবা আসতেছি,তোর আর পদ্মের বিয়ে হবে আজ। একটু পর মামা ডেকে নিয়ে বললো আমার কোনো আপত্তি আছে কি না। আমি শুধু বলেছি মামা আমার আগে পদ্মের মতামত জানা প্রয়োজন, ও এখনি বিয়ে করবে কি না। মামা বললো পদ্ম আমার কথার অবাধ্য হবে না।আর আজকে না কাল হবে বিয়ে। এর থেকে বেশি আর আমিও জানি না।

-নিলয় ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে না উনি মিথ্যে বলছে। তাই ওনাকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে আব্বুর রুমের দিকে গেলাম।

গিয়ে আব্বুকে বললাম,,

চলবে,,

আজকে খুব ব্যাস্ত ছিলাম। আর খুব তারাতারি লিখছি। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।❌কপি করা নিষেধ ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here