পদ্ম ফুলের অভিমান পর্ব -০৭

#পদ্ম_ফুলের_অভিমান(পর্ব 7)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম

আমি তোকে ভালোবাসি পদ্ম,

ভাইয়া মজা করো না, এখন এরকম মজা একদম ভালো লাগে না আমার

-কেনো আর কতো ভাবে বোঝাবো তোকে, এখন তো ছোট নেই তুই, বোঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে তোর।

-মানে

-মানেটা খুব সহজ, আমি তোকে ভালোবাসি, অনেক বেশি ভালোবাসি।আর এটা একদম সত্যি ।একটুও মজা করে বলছি না।

-ছিহহ নিলয় ভাইয়া তুমিও, অন্তত তোমার থেকে এটা আশা করি নি আমি। আমি তোমাকে ভাইয়ের মতো দেখেছি আর তুমি এখন এসব বলছো

-তুই আমাকে ভাইয়ের মতো দেখলেও আমি তোকে বোন কখনই ভাবি নি।তাছাড় ফুপাতো ভাই মামাতো বোন কি সম্পর্ক করে না

-তোমরা সব ছেলেরাই এক, আগে এভাবে বলবে পরে গিয়ে ছেড়ে চলে যাবে।

-না পদ্ম, তুই ভূল ভাবছিস,সবাই এক হয় না। পদ্ম তুই তো জানিস আমি যা বলি একদম সিরিয়াসলি বলি আর সত্যি বলি। এখন তোকে যে কথাগুলো বলবো একদম মন থেকে বলবো,

আমি তোকে ছোটোবেলা থেকে চিনি। আমার থেকে ছয় বছরের ছোট তুই। তবুও আমি তোর সাথে সবসময় ফ্রি ভাবে চলেছি, আমি ভেবেছিলাম যে ছোট থেকে তোর সাথে স্বাভাবিকভাবে চললে তুই খুব সহজেই আমাকে বুঝতে পারবি। আমার সাথে কথা বলতে কোনো জড়তা কাজ করবে না এজন্য আমি তোর পাশাপাশি থেকেছি।
তোর ভালো খা*রাপ,ইচ্ছা,অনিচ্ছা,বিরক্তি,অভিমান সবকিছু লক্ষ্য করেছি ছোট থেকে। যাতে তোর কোনো সমস্যা হলে আর কেউ না বুঝলেও আমি বুঝতে পারি।

-কিন্তু তুমি এসব কেনো লক্ষ্য করেছো নিলয় ভাইয়া, আমি তো কখনো বুঝি নি

-আজ তোকে সব বলবো, আগে বুঝিস নি তো কি হয়েছে এখন থেকে বুঝবি।

-কি বলছে এসব,মাথা কি ঠিক আছে এনার।এখন থেকে এসব বুঝবো মানে(মনে মনে কথাগুলো বলে আবারো ওনার কথায় মনোযোগ দিলাম)

-তুই যখন অনেক ছোট ছিলি,তখন থেকে আমার বুকের বা-পাশে তোর নাম লেখা ছিলো।আমি সবসময় মনে মনে তোকে চাইতাম। আমার ফুলটা যেনো আমার থাকে।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমার ফুলটা যতো বড় হচ্ছিল আমি ওর চোখেঁ আমার জন্য মায়া দেখতে পাই নি। আমি দেখেছি আমার ফুলটা অন্য একজনের মায়ায় আকৃষ্ট। তবুও আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম যাতে আমার ফুলকে বোঝানোর যে আমার মতো কেউ ওকে আগলে রাখতে পারবে না। ভালোবাসতে তো অনেকেই পারে কিন্তু আগলে রাখতে কতোজন পারে। একটা মেয়ে যখন বড় হয় তখন অনেক ছেলেই মেয়েটাকে প্রস্তাব দেয়,কেউ কেউ না খেয়ে থাকে,নিজের ক্ষতি করে,তাকে না পেলে সু*ই*সা*ইড ও করে এমনো ওনেক দেখেছি।তারা সবাই চায় মেয়েটা আমার হলেই আমি তাকে ভালোবাসবো, তার যত্ন করবো,তার প্রয়োজনমতো সব করবো।কিন্তু ভালোবাসা কি এটাই যে তাকে কাছে পেলে আগলে রাখা আর দূরে গেলে ভূলে যাওয়া। যদি এটাই ভালোবাসা হয় তাহলে বলবো এই ভালোবাসা আমি মানি না। আমার ভালোবাসা ছিলো এমন যে,আমি তোকে না পেলেও তোকে আগলে রাখবো। কষ্ট পেতে দেবো না আমি তোকে সেটা তুই আমার হলেই কি আর না হলেই কি।তুই আমার থেকে দূরে থাকলেও তোর ভালো থাকাটা আমার কাছে ইমপোর্ট্টেন্ট বেশি।

-এসব তুমি কি বলছো নিলয় ভাইয়া

-হুম পদ্ম ফুল আমি তোকে ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে। তুই যখন ছোট ছিলি তখন থেকেই ভালোবাসি আমি তোকে। অনেক আগেই বলতাম কিন্তু তুই ছোটো ছিলি তাই বলি নি। কিন্তু আমি যখন বুঝতে পারি তুই অভ্রকে ভালোবাসিস তখন আমার কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছিলো। আমি চাইলেই তখনি তোকে আর অভ্রকে আলাদা করতে পারতাম কিন্তু আমি করিনি। তোর ছোট্ট মনটা তখনেই ভেঙে যেতো আর সেই সময় মন ভেঙে গেলে তুই না বুঝেই উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতি। তুই ছোট থেকেই অনেক আবেগময়ি। আবেগের বসে যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমি নিজেকে কখনই ক্ষমা করতে পারতাম না। তাই চলে যাই কানাডা। কিন্তু আমি চলে গেলেও তোর প্রতি নজর আমার সবসময় ছিলো।

মনে আছে কি, তুই যখন বান্ধবীদের সাথে অভ্রের সাথে ছিনেমা দেখতে গেছিলি সেদিন একটা ছেলে তোর ছবি তুলেছিলো

-হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে, আর সেদিন অভ্র ভাইয়া ওনাকে মেরেছিলো

-ঐ ছেলেটা আমার লোক ছিলো। তোকে সবসময় ফলো করতো। তবি সেদিন নাকি তুই প্রচন্ড খুশি ছিলি তাই আমি বলেছিলাম তোর কিছু ছবি তুলে দিতে আমার কথাতেই তুলেছিলো।

-আবার মনে আছে বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরে ঝাল ফুসকা খেতে গিয়ে গলায় লেগেছিলো। আর পাশ থেকে কেউ একজন পানি দিয়েছিলো

-হুমম মনে আছে, কিন্তু পানি খেয়ে দেখি ওখানেই কেউ নেই।

-সেখানেও আমার লোক ছিলো,
এভাবে দূরে থেকে আমি সবসময় তোর ওপর নজর রেখেছি। হয়তো তুই এতোটা লক্ষ্য করিস নি।তোর প্রত্যেকটা বিপদেই কেউ না কেউ তোর পাশে এসে দাড়িয়েছে। আমি চেষ্টা করে গেছি তোর যাতে কোনো সমস্যা না হয়। তুই যেভাবে ভালো থাকিস সেটাই করবো আমি।

কিন্তু কিছুদিন পর যখন অভ্রের সাথে তোর আর কথা হয় না। এস এস সি তে রেজাল্ট খারাপ হলো সেদিন আমাকে মামি ফোন করে বলেছিলো তুই সবসময় রুমে থাকিস, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করিস না কেমন যেনো হয়ে গেছিস। তাই আমি আম্মুকে বললাম তোকে এখানে নিয়ে আসতে। আমি জানতাম মামা মামির ব*কা খাওয়া থেকে বাঁচার জন্য তুই এখানে আসবি। আর সেটাই হলো তুই আমাদের এখানে আসলি।
তখন থেকে আমার টেনশন আরো কমে গেলো। এখানে তুই কবে কোথায় গেছিস,কি করেছিস আমি সবটা সাথে সাথে খবর পেয়ে গেছি।আম্মুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সময় কখনো কখনো দূর থেকে তোকে এক ঝলক দেখতে পেয়েছি।কিন্তু ঐ দেখাতে মন ভরছিলো না,যখন দেখি নি তখন নিজেকে আটকাতে পেরেছি কিন্তু এক ঝলক করে দেখার পর আর মনটা মানতে চায় নি।তাই তুই এখানে আসার কিছুদিন পর তোকে সামনাসামনি দেখার জন্য আমার বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে তার মধ্যে হটাৎ শুনতে পাই অভ্র নাকি বিয়ে করেছে। আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম এমন কিছু একটা হয়েছে, কারন তোর সাথে কথা বলা বাদ দিয়ে এভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া আমার কাছে ঠিক মনে হয় নি। কিন্তু আমি ওর খবর ঠিকভাবে নিতে পারি নি জন্য আগে জানতে পারি নি। আমি বাড়িতে থাকলে হয়তো জানতে পারতাম। কিন্তু আমি তো দূরে ছিলাম। শুধু তোর বেলাতে কোনো অযুহাত ছিলো না।তোরটা আমি সবসময় জেনেছি।

আমার তখন ওখানে একটা জব হয়েছে, আমি আসতে চেয়েও পারি নি। কেনোনা আমার জব এ একটা নিয়ম ছিলো ফাস্ট স্টেপ কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত ছুটি নেওয়া যাবে না।আর এটার জন্য জব হওয়ার আগেই সই করতে হয়েছে। তাই আমাকে এতোদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর তাছাড়া তখন আমার মনে হয়েছে যে আমার পদ্ম ফুলকে আমার থেকে আর কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।

-আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। একটা মানুষ দূরে থেকেও যে এতোটা ভালোবাসতে পারে তা হয়তো এনাকে না দেখলে বোঝা যাবে না। কিন্তু আমি তো ভাই ছাড়া অন্য কিছু কখনো ভাবি নি।

-প্লিজ পদ্ম ফুল,আমাকে ফিরিয়ে দিবি না। প্রয়োজনে তুই আরো সময় নে, আমাকে বোঝার জন্য তোর যত সময় চাই তুই নে।কিন্তু আমার থেকে হয়ে থেকে যা পদ্ম। আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

-আপনার দিক থেকে হয়তো এটা ভূল নয়। আপনি আমাকে ভালোবেসেন ঠিক আছে। কিন্তু আমি যে আপনাকে কখনই ভালোবাসি নি। আর বাসতে পারবো কি না তাও জানি না।

-এভাবে বলিস না পদ্ম, আমি রিকোয়েস্ট করছি তোকে,থেকে যা আমার হয়ে, আমি তোকে জোড় করবো না যে আমাকে ভালোবাসতেই হবে। তোর যখন মনে হবে যে এখন আমাকে ভালোবাসা যায় তখন বাসবি। আমি না হয় অপেক্ষা করবো,কিন্তু তুই অন্যকারো হয়ে গেলে আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না।

-আগেরবার কিভাবে সহ্য করেছিলে

-তখন তুই ছোটো ছিলি, তখন তোকে বোঝানোর মতো উপায় ছিলো না। বোঝালেও বুঝতি না তুই। আমাকে ভূল বুঝতি। কিন্তু এখন যথেষ্ট বোঝার বয়স হয়েছে তাই বলছি প্লিজ আমার হয়ে থেকে যা।

-আমাকে এখন একা থাকতে দিন প্লিজ। আমার সহ্য হচ্ছে না এসব কথা। আপনাদেরকে বিশ্বাস করতে ক*ষ্ট হয়।

অসহায় ফেস করে চলে গেলেন নিলয় ভাইয়া। আমার আর কি করার। আমি আর কাউকে বিশ্বাস করে ঠকতে চাই না।

পরেরদিন সকালে উঠতে না উঠতেই আব্বু এমন একটা কথা বললো যে নিলয় ভাইয়ার প্রতি যেটুকু সম্মান ছিলো সেটাও ন*ষ্ট হয়ে গেলো। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে আমার,,

চলবে,,

#ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ❌কপি করা নিষেধ ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here