পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ২৩
—” এ নিয়ে চারজন ধর্ষকের খুন। প্রতিটি লাশের সাথে লিখা, “আমি ধর্ষক। হাজারো মেয়ের ধর্ষণ করেছি আমি।”
ইচ্ছে করেই জোরে জোরে পড়ে সবাইকে শোনালেন আমজাদ চৌধুরী। রায়হানের মুখের খাবার আঁটকে গেল। সাদিয়া মুখে যেন স্পষ্ট সুখের উল্লাসে দেখা দিল। মুখ ফুটে কিছু না বললেও মনে মনে বলছে, ” ধর্ষণের শাস্তি যদি ফাঁসি না হয় তাহলে প্রতিটা ধর্ষকের সাথে এমনটাই করা উচিৎ। যেখানে আমার মত কত মেয়ে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে। সেখানে আইন ব্যাবস্থা ধর্ষকদের বিরুদ্ধে তেমন কিছুই করতে পারছে না। আজ যে বা যারা চুপ হয়ে বসে আছে, থাকবে কাল তাদেরই মা, বোন ধর্ষিত হবে। তারা কিছুই করারা থাকবে না।”
রায়হান ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে চেয়ারে হেলান দিল। মনে মনে বলল, ” ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি হলে আজ এত কিছুই করতে হতো না আমাকে। কিন্তু আফসোস…. ” একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রায়হান।
।
।
।
লাঞ্চ শেষে সবাই যে যার রুমে চলে গেল। সাদিয়া সব গোছগাছ করে রাখতে লাগল। রেহানা বেগমও সাহায্য করতে লাগল। গোছগাছ শেষ হতেই রেহানা বেগম সোফায় গিয়ে বসলেন সাদিয়া উনার সমনে এসে জিজ্ঞেস করল, রাতে কি রান্না করবে? তিনি উত্তরে কিছু বলল না। সাদিয়া হাত ধরে নিজের পাশে বসালেন। শান্ত কন্ঠে বললেন,
—” কিছু কথা বললে রাখবি মা? ”
সাদিয়া এবার তার হাতদুটো শক্ত করে ধরল। বলল,
—” হ্যাঁ মা বলেন। রাখবো না কেন? অবশ্যই রাখবো। ”
—” তুই জানিসই তো আমার বড় ছেলেটা ছোট বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে। ওর নিজেও চায় হয়তো ওর ঘরে একটা বাচ্চা আসুক। ”
সাদিয়া এবার বুঝতে পারল উনি কি বলতে চাইছে, তাও চুপ করে রইল। রেহানা বেগম আবার বলতে লাগল, “আমারা সবাই চাই আমাদের পরিবারে একটা নতুন সদস্য আসুক। দেখলি সেইদিন মাথা ঘুরিয়ে দুইবার পরে গেলাম। হয়তো সেদিনই মরে যেতে পারতাম, আল্লাহ বাঁচাইছে।”
—“এমন কথা বলবেন না মা।”
—” মৃত্যু তো বলে কয়ে আসে না-রে মা। বেঁচে থাকতে নাতীনাতকুর দেখে যেতে চাই এই তো শেষ আশা। তোর আর রায়হানের ঘরে সন্তান আসবে। আমরা বুড়ো বুড়ি ওদের সাথে হাঁসবো, খেলবো, সময় কাঁটাবো। আমাদের দাদা-দাদী বলে ডাকবে, সারা ঘর মাতিয়ে রাখবে। ”
কথাটা বলতেই উনার চোখ জোরা উল্লাসের জ্বলে ভেসে উঠল। সাদিয়া এখনো চুপ করে রইল, তা দেখে রেহেনা বেগম জিজ্ঞেস করল, ” রাখবি না মা আমার এই ছোট আশা? তুই কথা দিয়েছিলি রাখবি।”
সাদিয়া মুখ ফুটে বলতে ইচ্ছে করছে,”আমারা স্বামী-স্ত্রী তো বটে কিন্তু আমাদের মধ্য সেই শারীরিক সম্পর্কটা নেই মা। আমাদের সম্পর্কটা ওই বিয়ে পর্যন্তই আঁটকে আছে। আপনার ছেলে আমার কাছে এখনো কিছুই চায়নি মা। আমি কি করবো বলুন? ” মনে মনে কথাটা বলতেই চোখ জোরা ভিজে উঠল সাদিয়ার। মনের কথাটা প্রকাশ করল না রেহানা বেগমের কাছে। শুধু “হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। সাদিয়া সম্মতি দেখে খুশিতে জরিয়ে ধরলেন রেহানা বেগম।
।
।
।
বসে বসে গল্পের বই পড়ছিল মিম। হঠাৎ জানালায় হৃদয়ের গলা শুনে তাড়াতাড়ি জানালা খুলে দিল মিম। জানালা খুলতেই হৃদয় একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বলল, ” এটা পড়ো। আমি অপেক্ষা করবো কিন্তু।” বলেই চলে গেল হৃদয় মিম কিছু বলার সুযোগই পেল না। জানালা বন্ধ করে খাটে গিয়ে বসল মিম। চিঠিটা খুলতেই দেখল একটা রঙিন কাগজ তাতে হৃদয়ের নিজ হাতে লিখা,
“প্রিয়া…জানো খুব ইচ্ছে করছে তোমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলি, একটু সময় কাটাই কিন্তু সেটা বাসায় কিছুতেই সম্ভব না। মা, বাবা, ভাইয়া ভাবি কেউ জানলে কি ভাববে? সেটা ভেবেই মন খারাপ আমার। তবে বেশি দেড়ি না আর মাত্র কিছুদিন আমি প্রমোশনটা পেয়ে নেই তারপরই আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা বাসায় জানাব। কিন্তু এখন যে খুব ইচ্ছে করছে তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে। তাই ভেবেছি ছাদে দুজন খোলা আকাশের নীচে বসে কিছুক্ষণ সময় কাটালে ব্যাপারটা মন্দ হয় না। আর তোমাকে কোথাও নিয়ে বেরও হওয়া যাবে না যেহেতু ,ছাদই বেষ্ট। আমি ছাঁদে অপেক্ষা করবো, আজ রাত আঁটটার পর। আমার দেয়া সেই হলুদ শরীটা পড়ে তুমি এসো, কানের দুল পরতে ভুলনা যেন । কানের দুলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে। আর পারলে একটু সাজবে তবে না সাজলেও সমস্যা নেই এমনিতেও তোমাকে খুব সুন্দর লাগে।
শোন, বেশি না এক ঘন্টা সময় দিলেই হবে আমাকে। দুজন বসে বসে গল্প করবো। তুমি আসবে কিন্তু! আমার জন্য হলেও আসবে প্লিজ। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো।
তোমার ভালোবাসা
শেষটুকু পড়ে মুচকি হাসলো মিম। দু’ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিল সেই রঙিন চিরকুটে।
আজ মনটা বড্ড বেশি খারাপ লাগছে সাদিয়া। কি করে কথা রাখনে রেহানা বেগম এর? সে যে এখনো এসবের জন্য প্রস্তুত না। মনটা হালকা করতে, এগলো মিম এর ঘরের দিকে।
দরজায় নাক করতেই দরজা খুলে মিম বাইরে থাকা মানুষটাকে না দেখেই বলল, “বলেছি না রাত আঁটটায় আসবো। এখন এসেছেন কেন? ”
সাদিয়া কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। মিমের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেল। মিম শাড়ি পরেছে? মিম তো কখনো শাড়ি পরে না। ওর কাছে শাড়িই বা আসল কোথা থেকে?
মিম ভেবেছিল হয়তো হৃদয় এসেছে তাই দরজা খুলে বকবক করে সব বলে দিয়েছে। ” সাদিয়া আপু কি ভাবছে? কেন না দেখেই এসব বলে ফেললাম? ” ভাবতেই লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেল মিমের। দরজা থেকে সরে ভিতরে এসে দাঁড়াল।
সাদিয়া ওর পিছু ভিতরে ঢুকল। ড্রেসিং টেবিলের উপর কানেরদুল, সাজসজ্জা জিনিশপত্র দেখে কিছুটা খটকা লাগলো। মিমকে একনজর দেখে প্রশ্ন করল, “কিরে? তুই শাড়ি পড়েছিস কেন? শাড়ি কোথায় পেয়েছিস? আই এইসব সাজসজ্জার জিনিশপত্র?”
মিম কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কিভাবে বলবে হৃদয়ের কথা? লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিল মিম। সাদিয়া এসে ওর সামনে দাঁড়াল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মিম আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি মিমের ফোনটা বেজে উঠল। সাদিয়া মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখল, ওর দেয়া মোবাইল এটা না। একদম নতুন মোবাইল। মোবাইল ঘোরাতেই দেখল স্কিনে “হৃদয়” লিখা নামরা ভাসছে। মানে হৃদয় কল করছে?
সদিয়ার কাছে এবার সম্পূর্ণ ব্যাপার ক্লিয়ার হয়ে গেল। মিমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ” আমার থেকেও এখন কথা লুকচ্ছিস? এই নতুন ফোন, শাড়ি, সাজসজ্জার জিনিশ, কানের দুল এসব হৃদয় দিয়েছে না তোকে? আমাকে এতটাই পর করে দিলি যে আমার দেয়া ফোনটাও বদলে ফেললি। ফোনের কথা আর কি বলবো তুই তো আমার সাথে সবকিছু সেয়ারই করিস না এখন।” বলে মুখ ঘুরোলো সাদিয়া।
মিম সাদিয়াকে জরিয়ে ধরল। বলল, ” আমি কি তোমার কাছ থেকে কিছু লুকাতে পারি? তুমিই তো আমার সব আপু। তুমি মন খারাপ করে থাকলে আমি কার কাছে যাব বলো। আমি তোমাকে সব বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু উনি বলতে নিষেধ করেছিল। বলল, কিছুদিনের মধ্যে তার চাকরির প্রমোশন হবে তখন দুইটা খুশির খবর একসাথে বলবে সবাইকে এর আগে যেন আমি কাউকে কিছু না বলি। ”
সাদিয়া এবার ওকে দূরে ঠেলে দিল। বলল, “আমি তো ভেবেছিলাম হৃদয় ভাইয়া তোকে শুধু গিফট দিয়েছে আর তুই নিইয়েছিস। এখন এই কথার মনে কি? দুইটা খুশির খবর দিবে মানে? একটা খুশির খবর তো প্রমোশন আরেকটা কি? তোদের বিয়ের? ”
মিম অস্ফুটে “হুম” শব্দটা উচ্চারণ করতেই সাদিয়া বলে উঠল। “তোর সাথে তো হৃদয়ের বিয়ে পর্যন্ত ঠিক হয়েছিল তুই ভেঙ্গে দিলি। বললি, হদয়ের মত বাজে ছেলে তোর পছন্দ না। এখন হঠাৎ পছন্দ হয়ে গেল? এতকিছু হয়ে গেল আমাকে অন্তত কিছু জানাতে পারতি।”
—“হঠাৎ পছন্দ হয়েছে কারণ উনি উনার সবচেয়ে বড় ভুলটা শোধরে নিয়েছে। আর উনি আগার থেকে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। তুমি দেখো না? ”
—“হ্যাঁ খুব বেশে পরিবর্তন হয়েছে। হৃদয় এতটা বদলে যাবে ভাবিনি। আগের হৃদয়ের সাথে এই হৃদয়ের রাত দিনের পার্থক্য।”
—“হুম। উনার এই জিনিশটা আমার ভালো লেগেছে তাছাড়া উনি আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি আমার স্বামীর মধ্যে যা যা দেখতে চেয়েছিলাম সব গুণ উনার মধ্যে আছে। এতদিন উনি সম্পূর্ণ অন্য একটা মনুষ ছিল তাই আমি তাকে এড়িয়ে চলতাম। এখন উনি সম্পূর্ণ আলাদা তাই আমি উনার প্রপোজাল একসেপ্ট করেছি। এখন তোমার মত ছাড়া আমি এ বিয়ে করবো না বলেও জানিয়েছি তাকে। তুমি আমার গার্ডিয়ান তুমি যেখানে আমার বিয়ে দিব আমি সেখানেই যাব। তুমি হৃদয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে না চাইলে আমি কখনোই উনাকে বিয়ে করবো না। কারণ আমি জানি তুমি আমার ভালোই চাও, আমার জন্য সবচাইতে ভালোটাই করবে আপু।”
সাদিয়ার চোখে কোন বেয়ে পানি গরিয়ে পরল। মিমকে জরিয়ে ধরে বলল, “এজন্যই তো তোকে এতটা ভালোবাসি মিম। আমি জানি আমার অমতে তুই কিছুই করবি না। আমি নিজেই দেখছি হৃদয় ভাইয়া যে কতটা পরিবর্তন হয়েছে। সে তোকে খুব ভালোবাসে আর তোকে ভালোবেসে নিজেকেই সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলেছে।আমি জানি হৃদয় ভাইয়াকে তুইও ভালোবেসে ফেলেছিস। আমি সত্যি তোদের বিয়ে হলে খুব খুশি হবো। আমি চাই হৃদয়ের সাথেই যেন তোর বিয়েটা হয়। আন্টি থাকলেও হয়তো এটাই চাইতেন।”
মায়ের কথা মনে পড়তেই সাদিয়াকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। সাদিয়া ওকে শান্ত করার জন্য বলল, “কেঁদে মন খারাপ করিস না। কি উল্টাপাল্টা শাড়ি পড়েছিস? হৃদয়ের সামনে গেলে যদি খুলে যায়? ” বলে হাঁসতে লাগল সাদিয়া।
মিম কান্না থামিয়ে বলল, “তুমি তো পারো তাহলে তুমিই পরিয়ে দাও।”
—” আচ্ছা। শাড়ি তো পরিয়ে দিবই সাথে সুন্দর করে সাজিয়েও দিব। দেখবি হৃদয় চোখ ফেরাতে পারবে না। ”
।
।
।
হৃদয়কে ছাঁদে বেলুন, মোমবাতি, রঙিন বাতি, টেবিল ক্লথ নিতে দেখে রায়হান জিজ্ঞেস করল, “এগুলো নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
পেছন থেকে বড় ভাইয়ের কন্ঠ শুনে ভেবাচেকা খেয়ে গেল হৃদয়। বড় ভাইকে এখন কি উত্তর দিবে?
রায়হান আবারো বলে উঠল, “কিরে বলছিস না যে?”
হৃদয় কথা এড়ানোর জন্য বলল, ” ভাইয়া তোকে তো বলতে ভুলেই গেছি আমি খুব তাড়াতাড়ি প্রমোশন পেতে চলেছি।”
‘প্রমোশন’ এর কথা শুনে রায়হানের মাথা নষ্ট হয়ে গেল বলল, “তোর ওইখানে জব করার প্রয়োজন নেই। আমাদের নিজেদেরই বিজনেস আছে। ওইটা থেকে লিভ নিয়ে আমাদেরটা জয়েন কর।”
—“ভাইয়া আমি প্রমোশন পেতে চলেছি আর এখন তুই এই কথা বলছিল।”
—“তোকে কেন প্রমোশন করতে চসইছে সেটা তুই বুঝলে তো হতোই। অনেক বড় ষরযন্ত্র করছে ইকবাল হাসান।”
—” ষড়যন্ত্র? কিসের ষড়যন্ত্র? তুই কি উনাকে আগে থেকেই চিনিস? আমাকে সব ক্লিয়ার বলবি ভাইয়া? আমি কিছুই বুঝতে উঠতে পারছি না। ”
—“ওই ইকবাল মনে তোর বস, একটা ধর্ষক। আর আমার আর আমার পরিবারের ক্ষতি করতেই উনি এখানে এসেছিল আর তোকেও প্রমোশন করতে চাইছে।”
—” তোর আর আমাদের সাথে উনার কিসের শত্রুতা? আর আমাদের ক্ষতিই বা কেন করতে চায় উনি? ”
—” ছাঁদে আয় বলছি এখানে বললে যে কেউ শুনে ফেলতে পারে।”
হৃদয় ভাইয়ের কথা মত তার সাথে উপরে উঠল। ছাদ এত পরিষ্কার পরিপাটি দেখে রায়হানের মনে কিছু প্রশ্ন জাগল। কিন্তু সে প্রশ্ন করার আগেই হৃদয় প্রশ্ন করে বসল। বলল,
—“এখন বল ভাইয়া। কেন উনি আমাদের ক্ষতি করতে চায়?”
—” বাবা দুপুরো খবরের কাগজ পড়ে বলেছিলেন না চারজন ধর্ষকের খুনের কথা?”
—” হুম।”
—“তাদের আমিই খুন করেছি। সেই চারজন তোর ভাবির ধর্ষক ছিল। ইকবাল হাসানও তাদের মধ্যে একজন। সে জানতে পেরে গেছে যে আমি তার বন্ধু চারজনের খুন করেছি এবং তাকেও টার্গেট করেছি। সেই জন্যই সে এতসব করছে।”
—” ভাইয়া তুই আর এতগুলো খুন? আমি বিশ্বাস করি না। যে জীবনে একটা মশা-মাছি এমনকি পিঁপড়ে মারতে দশবার ভাবে সে খুন করেছে? তাও চার চারটা? ভাইয়া তুই ঠাট্টা না সঠিক কারণটা বল তো।”
—“তুই বিশ্বাস করিস আর না করিস এটাই সত্যি।”
—“ভাইয়া এইাব তুই কি শোনালি আমাকে? ”
—“কাউকে ভালোবেসেছিস কখনো? ভালোবাসার জন্য সব কিছু করা সম্ভব। আর সেই ভালোবাসার মানুষটার ডাথে যদি কেউ নোংরামি করে তাকে কি করা যায়? ”
—“আমি মেরে ফেলবো সোজা। আমি থাকতে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে কেউ ছুতেও পারবে না।”
—“হ্যাঁ, আমিও ঠিক এটাই করেছি। মেরে ফেলেছি এক এক করে সবগুলোকে। আচ্ছা বাদদে ওইসব এখন বল ছাদে এইসব লাইটিং, সাজসজ্জা কেন? বেশ পরিষ্কার পরিপাটিও মনে হচ্ছে। গাছগুলোর মরা পাতা ছেঁটে ভালো করেছিস, সুন্দর লাগছে এখন। কিন্তু হঠাৎ এইসব করার কারন কি? ”
—“কিভাবে বলবো তোমাকে ভাইয়া?”
—“আমাকে বলতেও দীদ্ধা? একটু আগে দেখ আমি তোর সাথ আমার কত বর একটা বিষয় সেয়ার করলাম যা তোর ভাবিও জানে না এখনো। আর তুই আমাকে বলতে…. ”
—“আরেহ তেমন কিছুই না ভাইয়া মিমের সাথে একটু সময় কাটাতেই এতসব আয়োজন।”
মুখ ফসকে বলে পেলল হৃদয়। বলে জিহ্বায় কামড় দিল সে। রায়হান ওর পিঠে চাপর মেরে বলল,
—“ভাই দেখি আমার বড় হয়ে গেছে। তো যার জন্য এত আয়োজন সে কি আসবে? মিম তো তোকে দেখতেই পারে না।”
—“আসবে ভাইয়া কথা দিয়েছে।”
—“ওহ গ্রেট। অবশেষে কি শাহজাদি মেনে নিল তোকে?”
—“হ্যাঁ, ভাইয়া। আমি মিমকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করেছিলাম। মিম আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করেছে।”
—“হাহাহা। খুব ভালো। আচ্ছা, শেহজাদীকে খুশি করার জন্য ভালোভাবে ডেকোরেশন কর।”
—“তুমিও তো ভাবিকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারো। সময় কাটাতে পারো। বিয়ের পর তো ভাবিকে নিয়ে কোথাও যাওনি। তারও তো ইচ্ছে করে তোমার সাথে ঘুরতে যেতে, সময় কাটাতে। ভাবি একটা ডিপ্রেশন থেকে উঠেছে তাকে একটু বেশি সময় দাও।”
হৃদয়ের কথাটা ভেবে দেখল রায়হান। হৃদয় তো ঠিক কথাই বলেছে। সারাদিন ঘরে থাকতে কারই বা ইচ্ছে করই বা ইচ্ছে করে? ভেবেই সেখান থেকে চলে আসল রায়হান।
ঘরে এসে দেখল সাদিয়া আনমনে বসে আছে। কাবার্ড থেকে বোরখা, খীমার, নেকাব বোর করে সাদিয়ার কাছে এসে দাঁরাল সে। টেনে সাদিয়াকে বসা থেকে উঠিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দিল সব। বলল,
—“তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নাও তুমি। আমরা ঘুড়তে বেরোবো।”
—“এখন এই রাতে কোথায় যাবো?”
—“কথা না বলে তৈরি হও তো। বাসয় বলে দিয়েছি আমরা বাহিরে থেকে ডিনার করে আসব। ”
—“কি আশ্চর্য? ”
চলবে……
[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি নিজ গুণে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ। ]
#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব :২৪
রায়হানের জোরাজোরিতে মাঝ রাত্রে ঘর থেকে বেড়তে হলো সাদিয়াকে। আজ খুব মনে পড়ছে সেই কালো রাতের কথা যে রাতে ওর জীবনের সবচাইতে নিষ্ঠুর, জঘন্যতম ঘটনা ঘটেছিল। আজ স্বামী, সংসার নিয়ে সুখে থাকলেও ওই ঘটনাটা খুব জ্বালাতন করে সাদিয়াকে। সত্যি, সুখের সময়টাতেই কষ্টের দিনগুলোর কথা বড্ড বেশি মনে পড়ে।
রাত্র করে রিকশায় করে সাদিয়াকে নিয়ে যেতে চায় না রায়হান তাই গাড়ি নিয়েই বেরিয়েছে সে। অবশ্য সাদিয়াও বলেছিল একবার রাতবিরেতে সে রিকশায় চড়তে ভয় পায়। রায়হান আর সাদিয়াকে কোথাও যেতে দেখে পিছু নেয় ইকবাল হাসান।
অফিসের কাজের ছুতোয় হৃদয়ের সাথে কিছু কথা বলতেই রায়হানদের বাসায় আসছিল সে। গাড়ি থেকে নামতেই রায়হান এবং সাদিয়াকে কোথাও যেতে দেখে। “এই হয়তো সুবর্ণ সুযোগ সাদিকে অপহরণ করার।” ভেবেই পিছু নেয় ইকবাল হাসান। প্রানপ্রিয় বন্ধু মুন্নাকে সে বাঁচতে পারেনি কিন্তু মুন্নার খুনের বদলা সে সাদিয়াকে পূনরায় ধর্ষণ করেই নিতে চায়। কারণ এই সাদিয়াকে ধর্ষণের কারণেই আজ সে সব বন্ধুদের হারিয়েছে।
রায়হান নিজে গাড়ি চালালে এত ধীরগতিতে কখনোই চালায় না। কিন্তু আজ সাদিয়া পাশে আছে বলে ধীরে চালাচ্ছে। সাদিয়া হঠাৎ কিছু একটা ভেবে বলল,
—” আজ হঠাৎ ঘুরতে নিয়ে আসলেন যে?”
রায়হান সামনে তাকিয়ে থেকেই উত্তর দিল,
—“কেন? আসা যায় না? আজ ইচ্ছে করল তোমাকে নিয়ে কোথাও একটু ঘুরতে যাই। বিয়ের পর তো একদিনও তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে গেলাম না সেইজন্য। ”
সাদিয়ার মনে একটা প্রশ্ন জাগল। হঠাৎ মুখটা চুপসে গেল। আনমনা হয়ে, ধীর কন্ঠে বলল,
—“আজ আমার সাথে ওইসব না হতো তাহলে আমাদের বিয়েটা সুন্দর স্বাভাবিক ভাবে হতো, বাবা মা উপাস্থিত থাকতো, আপনি আমাকে নিয়ে ঘুড়তেও বেড় হোতেন।”
রায়হান গাড়ি রাস্তার সাইডে নিয়ে থামাল। সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে ওর হাতদুটো ধরে বলল,
—” এটা সত্য না সাদিয়া। তুমি দেখছো তো আমাদের বিয়ের পর থেকে আমি কতটা যে ব্যাস্ত? কাজের চাপে বাসায় বা তোমাকেও কোথাও তেমন সময় দিতে পারি না। কিভাবে ঘুড়তে নিয়ে যাব বল? ”
উত্তর কিছু বলল না সাদিয়া। মনে মনে ভাবলো, ঠিকই তো বলছেন উনি। বিয়ের পর থেকে এখন অব্দি লোকটা একরকম ব্যাস্ততার মধ্যে দিয়েই সময় কাটিয়েছেন। ব্যাস্ততার মধ্যে হয়তো এ-সব মনে ছিল না। ”
” বিয়ের আগের দিন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সারাক্ষণ তোমাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ীকথা ভেবেছি, সেই ভাবনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। তার উপর তোমার অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার জন্য কত কি-না করেছি আমি। এসবের মাঝে একটুও খেয়াল আসেনি তুমি আমার কাছে কিছু সময় চাইতে পারো, আমার সাথে বাইরে ঘুরতে যেতে চাইতে পারো। আজ সেটা বুঝতে পারছি সাদিয়া। আমার বড়ই ভুল হয়ে গেছে।” মনে মনে ভাবলো রায়হান। অস্ফুটস্বরে বলল,
—“এখন থেকে সব কিছু ফেলে হলেও তোমাকে সময় দিব সাদিয়া।”
রায়হানর কথাটা শুনে কেন যেন হাঁসি পাচ্ছে সাদিয়ার। ফিক করে হেঁসে দিল। তা দেখে রায়হান জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকাল। সাদিয়া বলল,
“আমি কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকলে তো না খেয়ে মরতে হবে। ”
সাদিয়ার কথা শুনে এবার রায়হানও হেঁসে ফেলল। আবার গাড়ি চালাতে শুরু করল।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। চলতে চলতে একটা রেস্টুরেন্টে এর সামনে গিয়ে থামলো। রায়হান গাড়ি থেকে নেমে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিল। হাত বাড়িয়ে দিল সাদিয়ার দিকে। সাদিয়া একবার রায়হানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসল।
রায়হান সাদিয়া ভিতরে গিয়ে বসল। ইকবাল হাসান ওদের পিছু পিছু আসতেই দেখলো, গাড়ি পার্কিং করা আর রায়হান সাদিয়া কেউই নেই। ভাবলো রেস্টুরেন্টে এ গিয়েছে হয়তো। তাই সে অপেক্ষা করতে লাগল।
রায়হান ওয়েটার বয়কে ডেকে সাদিয়া এবং নিজের পছন্দমত খাবার অর্ডার করে দিল। ওয়েটার চলে যেতেই একটা পিচ্চি মেয়ে সাদিয়ার হাত ধরে টেনে “আম্মু আম্মু” বলে ডাকতে লাগল। সাদিয়া আর রায়হান অবাক হয়ে সেদিকে তাকালো। খুব মিষ্টি দেখতে মেয়েটাকে। বয়স এই চার সাড়ে চার হবে হয়তো। সাদিয়ার ও রায়হানের কাছে বেশ আকর্ষিক যে বিষয়টি মনে হলো সেটা হচ্ছে পিচ্চি মেয়েটি স্কার্টের সাথে হিজাব পরে আছে। যার কারণে আরো মিষ্টি লাগছে ছোট্ট মেয়েটিকে।
সাদিয়াকে নিজের মা ভেবে ডাকতেই লাগল মেয়েটি। সাদিয়ার মুখে কোন কথা না শুনে এবার কাঁদতে লাগল। রায়হান কান্না থামাতে কোলে তুলে নিল মেয়েটিকে। অপরিচিত রায়হানের মুখটা দেখে কান্নার আওয়াজ যেন আরো বারিয়ে দিল সে। সাদিয়া এবার বালল, “বাসা কোথায় আম্মু তোমার? তোমার বাবা মা কোথায়?”
সাদিয়ার কতাটি মেয়েটি বুঝতে পারল কি না জানে না সাদিয়া। তবে কন্না থামিয়ে কাউকে দেখে হাসতে লাগল। সাদিয়া সেদিকে তাকাতেই দেখল একজন ভদ্রমহিলা পাশে একজন হুজুর টাইপ লোক দৌড়ে এদিকে আসছে। এসেই মহিলাটি রায়হানের কাছ থেকে মেয়েটিকে নিজের কোলে নিয়ে কপালে, গালে চুমু দিতে লাগল। হুজুর টাইপ লোকটা রায়হানকে সালাম দিয়ে বলল,
—” ও আমার মেয়ে ভাইজান। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার মেয়েটিকে দেখে রাখার জন্য। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম। আল্লাহর কাছে লাক্ষ লাক্ষ শুকরিয়া আমাদের মেয়েটিকে সুস্থভাবে ফিরে পেয়েছি। ”
—” ধন্যবাদ এর কিছু না ভাইজান। আপনার মেয়ে আমার স্ত্রী-কে ওর মা ভেবে ডাকছিল। হয়তো সেম কালার বোরখা পরার কারনে। পিচ্চিটিকে একা ছেড়েছিলেন কেন?”
—“আর বলবেন না ভাইজান। এই রেস্টুরেন্টের পাশেই ওর মায়ের হস্পিটাল। ওর মা ওকে চেম্বারে রেখে এক রোগির সাথে কথা বলছিলো। কোন ফাঁকে সেখান থেকে বেরিয়ে গেছে আল্লা আল্লাহ জানে এক ঘন্টা ধরে খুঁজছিলাম। বর্তমান দেশের পরিস্থিতি তো ভালো না খুব ভয়ে ছিলাম ভাই।”
—“এখন আর চিন্তা নেই। মেয়েকে একটু সাবধানেই রাখবেন। ওই যে একটু আগে বললেন দেশের পরিস্থিতি ভালো না, সেটাই।”
মহিলাটি তখন থেকে কেঁদেই চলেছে। সাদিয়া তাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বলল,
—“আপনি কাঁদবেন না আপু বরং বাসায় গিয়ে দু রাকাআত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন।”
মহিলাটি সাদিয়ার দিকে তাকালো। কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল,
—“আমার মেয়েটিকে তুমি ফিরিয়ে দিলে তোমার প্রতি আমি কৃতজ্ঞীত। তোমার এ ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না বোন।”
—“এ কথা বলবেন না আপু। আমরা তেমন কিছুই করিনি। আপনার মেয়েটি বড্ড মিষ্টি। মাশাল্লাহ।”
মহিলাটি এবার মুচকি হাঁসল। ব্যাগ থেকে কার্ড বের করে দিয়ে বলল,
—” এইটা আমার কার্ড। যেকোন প্রয়োজনে একটা ফোনকল দিও বোন। আমি একজন মহিলা বিশেষজ্ঞ ডক্টর। এই পাশেই আমার হস্পহস্পিটাল।”
হুজুর টাইপ লোকটা এবার রায়হানের সাথে হাত মিলিয়ে বলল, “এখন তবে আসি ভাইজান।”
উত্তরে রায়হান বলল, “আমাদের সাথে ডিনার করে যান আপনারা। ”
রায়হানের কথার পরিপেক্ষিতে মহিলাটি বলে উঠল,
—“আজ নয় আরেকদিন ভাইয়া। আসলে বাড়ির সবাই অনেক চিন্তীত। আপনারা আমাদের বাসায় যাবেন কিন্তু। দাওয়াত রইলো।”
—“ওহহ আচ্ছা।”
পিচ্চি মেয়েটিকে নিয়ে তারা দুজন চলে গেল যাওয়ার সময় পিচ্চি মেয়েটি মায়ের কথামত সাদিয়া কপালে আলতো চুমু এঁকে দিয়ে গেছে। সেটা নিয়েই রায়হান সাদিয়া কথা বলছে। পিচ্চি মেয়েটি কথা রেখে হঠাৎ রায়হান বলে উঠল,
—“এই পিচ্চি মেয়েটির মত আমারও একটা মেয়ে বাবু চাই সাদিয়া।”
রায়হানের এমন চাওয়া-পাওয়ার কথা শোনার জন্য সাদিয়া মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। খাবার খাওয়া রেখে পানি খেলো সাদিয়া। গলার শো-র ঠিক করে বলল,
—“সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে যাই পৃথিবীতে আসুক না কেন সুস্থ সবল আসলেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।
বলে আবার খাবারে মনযোগ দিল সাদিয়া। রায়হান এবার মনের কথাটা বলার সুযোগ পেল যেন। সাদিয়ার কাছে গিয়ে গলার আওয়াজ খাদে নামিয়ে, আস্তে করে বলল,
—“সেটাই কিন্তু আমাদের মধ্যে তো আমার বৌবাহিক সম্পর্ক ছাড়া কোন শরীরিক সম্পর্ক নেই। সান্তান আসবে কোথা থেকে?”
রায়হানের এমন কথা শুনে গলায় খাবার আঁটকে গেল সাদিয়ার রায়হান তাড়াতাড়ি উঠে ওর দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে ধরল। ঢকঢক করে পুরোটা পানি শেষ করলো সাদিয়া। এরপর আর কিছুই খেতে পারল না সে।
।
।
।
ইকবাল হাসান সেই কখন থেকে বাইরে অপেক্ষা করছে। আজকে সব খেলা শেষ করবে এই রায়হানের। সব পরিকল্পনা করে রেখেছে সে। রায়হানকে আটক করে ওর সামনেই ধর্ষণ করবে সাদিয়াকে তারপর দুজকে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবে। তার চারজন বন্ধুকে যেভাবে মেরেছে তারচেয়েও কয়েক হাজারগুন বেশি কষ্ট দিয়ে মারবে দুজনকে।
বিল প্যে করে সাদিয়াকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এর বাইরে বেরিয়ে আসল রায়হান। বাইরে বেরিয়ে রায়হান পকেটে হাত দিয়ে গাড়ির চাবি বের করতে যাবে ঠিক তখনি দেখলো পকেটে গাড়ির চাবি আর ওয়ালেট কোনটাই নেই। সাদিয়াকে উদেশ্য করে বলল,
—“সাদিয়া গাড়ির চাবি আর ওয়ালেট ভিতরেই রেখে এসেছি। চলো গিয়ে নিয়ে আসি। ”
—” আপনি নিয়ে আসুন আমি এখানেই দাঁড়িয়ে আছি।”
—“তুমি এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকবে? চলো বলছি আমার সাথে।”
—“সেই কখন থেকে পা বড্ড বেশি ব্যাথা করছে কেন জানি। আপনি যান আমি এখানে দাঁড়াই না?”
—“কি বলো? কখন থেকে ব্যাথা করছে? আমাকে বলবে না?”
—“আরে তেমন কিছুই না; আপনি গিয়ে আপনার ওয়ালেট, গাড়ির চাবি নিয়ে আসুন নয়তো কেউ নিয়ে যাবে। আমি দাঁড়াই এখানে?”
—“আচ্ছা, এখানেই থেকো আমি এক্ষুণি আসছি।”
বলে রায়হান দৌড়ে ভিরতে গেল। ইকবাল হাসান সাদিয়াকে একা দেখে দৌড়ে সেখানে আসলেন। সাদিয়া তাকে দেখেই কেমন ঘাবরে গেল। তাকে না দেখার ভান করে রেস্টুরেন্টে এর ভিতরে ঢুকার রাস্তায় দাঁড়াল। ইকবাল হাসান নিজের চুল নিজে টানলেন। সাদিয়া এতক্ষণ যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলে যে করে হোক মুখ চেপে ধরে গাড়ি পর্যন্ত নিতে পারতেন কিন্তু এখানে এত লোকের মাঝখানে এটা তো সম্ভব না। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই। অফিসের হৃদয়ের ফাইলটা গাড়ি থেকে নিয়ে নিলেন। দূর থেকে সাদিয়াকে ডাকলেন।
দুই তিনবার ডাকার পরও সাদিয়া শুনতে পেয়েও কোন সাড়া দিল না। রায়হান এখানে নেই তাছাড়া ও একদম একা আর লোকটাকেও বেশি সুবিধার মনে হয় না বলে সাদিয়া এমনটা করছে। তবুও লোকটা বেহায়ার মত সাদিয়ার একবারে সামনে এসে দাঁড়াল। বলল,
—“কি ভাবি কি অবস্থা? আপনি এত রাতে এখানে? ”
সাদিয়া কিছু বলতে চাইছে না। তবুও উনি বলে যাচ্ছে।
—“কি হলো ভাবি কিছু বলছেন না যে?”
এবার ইচ্ছা না থাকা স্বত্বেও সাদিয়ার উত্তর দিতে হলো। বলল,
—“এইতো আমার হাসবেন্ড এর সাথে এসেছি।”
—“তো আপনাকে একা দেখছি যে রায়হান ভাই কোথায়?”
—“একটু ভিতরে গেছেন।”
—“আমি তো এখন আপনাদের বাসায়ই যাচ্ছিলাম। হৃদয়ের কাছে, অফিসিয়াল কিছু ব্যাপারের জন্য।”
—“ওহ তাহলে বাসায় না গিয়ে এখানে?”
—“আপনাদের বাসায় গেলে তো আন্টি ডিনার না করে যেতে দেবে না তাই এখানে ডিনার করতে আসলাম যাতে সেখানে গিয়ে বলতে পারি আমি ডিনার করে এসেছি।”
সাদিয়া কিছু না বলাতে উনি সাদিয়াকে গাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য বলে উঠল,
—“ভাই কই আসছে না যে? চলুন আমরা সামনে এগোই উনি আসলে কথা হবে।”
—“না, উনি আসুক।”
“আরে শালি আয়। তোকে গাড়ির সামনে নিয়ে যেতে পারলেই আজ তোর খেলা শেষ। তোর সাথে আজ মধু চন্দ্রিমা হবে।” কথাটা মনে মনে বললেও মুখে বলল,
—“আরেহ চলুন তো। আমরা গাড়ির দিকটায় এগোই রায়হান ভাই এসে পরবে। ভেবেছি আপনাদের সঙ্গে আপনাদের গাড়িতে করেই যাব। গেলে কোন আপত্তি আছে আপনার? ”
—” কোন আপত্তি নেই। তবে আমাকে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছেন উনি। আপনি এগোতে থাকেন উনি আসলে আমি উনার সাথে আসছি।”
সাদিয়ার কথায় রেগে গেল ইকবাল হাসান বলল,
—“আরে এত কথা কম। চল আমার সাথে।”
চলবে….
[