পবিত্র সম্পর্ক পর্ব ৩১+৩২

#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ৩১ (এলার্ট ১৮+)

হঠাৎ মিমের চিৎকার শুনতে পেল রায়হান। দৌড়ে ডাইনিং রুমে যেতেই দেখল, সাদিয়া ফ্লোরে পড়ে আছে।রেহানা বেগমের কোলে মাথা রেখে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর রেহানা বেগম জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে?

সাদিয়ার উত্তরে কিছু বলতে পারছে না পেটে হাত দিয়ে শুধু গোঙ্গাচ্ছে। সাদিয়া মুখে কিছু না বললেও সবাই ওকে দেখে ওর পেটের ব্যাথাটা বুঝতে পারল কিছুক্ষণের মধ্যেই যেন সে ব্যাথ্যা প্রচন্ড বেড়ে গেল। রায়হান ইমিডিয়েটলি হাসপাতালে নিয়ে গেল সাদিয়াকে। যাওয়ার সময় ব্যাথায় কাতরানো অবস্থায় সাদিয়া রায়হানকে বার বার বলেছে রায়হান যেন কোন পুরুষ ডাক্তারের কাছে না নিয়ে মহিলা ডাক্তারের কাছে ওকে নিয়ে যায় নয়তো সে ডাক্তার দেখাবে না।

একে তো সাদিয়ার চিন্তায় রায়হানের মাথা ঠিক নেই তার উপর সাদিয়া মহিলা ডাক্তার ছাড়া ডাক্তার দেখাবে না। হঠাৎ রায়হানের মনে পড়ল, সেদিন রেস্টুরেন্টে এ হারিয়ে যাওয়া ছোট মেয়েটির মায়ের কথা। সেই মেয়েটির মা’ও তো একজন মহিলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। যেকোনো সমস্যা হলে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন তিনি। ভেবেই রায়হান ম্যানি ব্যাগ হতে তার কার্ড বের করতেই দেখল নাম সাজিয়া আফরিন। সাজিয়া আফরিনের নাম্বার খুঁজে তাকে ফোনকল দিলো রায়হান। পরিচয় দেয়ার পর সাদিয়ার ব্যপারটা বলতেই সে সাদিয়াকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলল। উত্তরে রায়হান ” আমরা রাস্তায় আছি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।”, বলে ফোনকল কেঁটে দিল।

হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাদিয়ার ব্যাথা অনেকটা কমে গেল। সাজিয়া আফরিনের চেম্বারে রায়হান সাদিয়াকে নিজে যেতেই সে বলল, ” কিসের থেকে এই ব্যাথাটা হঠাৎ?”

সাদিয়ার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। রায়হানকে এই পেটে ব্যাথার কথা কিছুই জানায়নি আগে। এখন সাজিয়া আফরিনকে বলতে গেলে রায়হান কিভাবে রিয়েক্ট করবে? ভেবে কিছুক্ষণ ইতস্তত বোধ করে বলল, “আজ অনেকদিন ধরেই পেটে ব্যাধা হয়। আজ হঠাৎ প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়। সহ্য না করার মতো।”

রায়হান বিস্ময় নিয়ে সাদিয়ার দিকে তাকালো বলল, “কি বলছো সাদিয়া? আমাকে এসব কিছু জানাওনি কেন?” রেগে চোখমুখ লাল হয়ে গেল রায়হানের। সাদিয়া একবার রাগি মুখটার দিকে তাকালো সাথে সাথেই মাথা নামিয়ে নিল। উত্তরে আর কিছু বলল না রায়হানকে।

সাজিয়া আফরিন রায়হানকে ইশারায় চুপ থাকতে বললেন। তাই রায়হানও আর কিছু বললো না। সাজিয়া আফরিন শান্ত ভাবেই জিজ্ঞেস করল, ” ব্যাথাটা কি পেটের ডান পাশে হয় বোন?”

সাদিয়া ব্যাথা সহ্য করতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “না। মাঝে মাঝে পেটে চাপও সৃষ্টি হয়”

সাজিয়া আফরিন কপাল ভাঁজ করে টেবিলে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলেন। ভাবতেই তার চোখেমুখে একটা চিন্তার ছাপ দেখা দিল। সে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট দেখতে পেল রায়হান।

সাজিয়া আফরিন শান্ত ভঙ্গিতেই সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, ” পেটে অতিরিক্ত ব্যথা ছাড়া কি বমি বমি ভাব হওয়া কিংবা বার বার বমি হয় ? ক্ষুধা কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করেন?
সাদিয়া “হ্যাঁ” সূচক মাথা নাড়ল। রায়হান অবাকের পর অবাক হচ্ছে সাদিয়া এসব কিছুই বলেনি ওকে।তাছাড়া সাদিয়াকে দেখে এসব কিছুই বোঝার উপায় ছিল না। সাজিয়া আফরিন সাদিয়ার দিকে তাকালেম। এবার তার ধারণাটা বাস্তবে রূপ নিতে লাগল। সে আবারও জিজ্ঞেস করল,
“বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য? হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি লাগা? কিংবা পেটে অস্বস্তি লাগা?”

সাদিয়া ব্যাথার করনে কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তারপর আসে ভাবে উত্তর দিল। ” বদহজম হয় না। কিন্তু হালকা খাবার খেলেই পেট ভর্তি লাগে। আর পেটে অসস্তিও হয়।”

সাজিয়া আফরিন রায়হানকে ডেকে বলল, “ভাই তোমাকে যে একটু বাইরে যেতে হবে আমার আরো কিছু জিজ্ঞেস করার আছে সাদিয়াকে। রায়হান এবার বড় চিন্তায় পরে গেল। চিন্তিত হয়েই বলল, “যা বলার আছে আমার সামনেই বলুন। কি হয়েছে সাদিয়ার? আপনার মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ আমি দেখতে পাচ্ছি। প্লিজ বলুন। “, বলে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল রায়হান।

সাজিয়া আফরিন রায়হানকে উত্তেজিত হতে দেখে সাদিয়াকে আর কিছু প্রশ্ন করল না। রায়হানকে শান্ত করার জন্য বলল, “আচ্ছা ভাই তোমাকে কোথাও যেতে হবে না তুমি বসো এখানে। আমাকে আগে ব্যপারটা বুঝতে দাও তারপর আমি সবটা বলছি।”

কিন্তু একটা প্রশ্ন না করে সে থাকতেও পারল না। সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করল, “সাদা স্রাব হয়?” রায়হান এবার তার কথা শুনে নীচে তাকাল।

সাদিয়া অবাক চাহনিতে তাকালো তার দিকে। কিভাবে ওর সব সমস্যার কথা এভাবে বলে দিচ্ছেন উনি? নকি বড় ধরনের কোন রোগের লক্ষণ এটা? ভিতরে ভিতরে খুব ভয় করছে সাদিয়ার। সাজিয়া আফরিন আবার জিজ্ঞেস করল, “সাদিয়া? হয় কি-না বলো?” সাদিয়া “হ্যাঁ” বলতেই সে কিছু ভাবতে লাগল। এতক্ষণ যা ভেবেছি তাই হয়েছে। মেয়েটি জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হলো।

সাজিয়া আফরিন আর কিছু বললো না সাদিয়াকে। ভায়া টেস্ট করে তার সাথে রিপোর্ট নিয়ে দেখা করতে বলল। রায়হান সাদিয়া দুজনই এই ভায়া টেস্ট এর বিষয়ে অঙ্গ। কেউই জানে না কি এখ ভায়া টেস্ট। সাদিয়া যখন টেস্ট করানোর জন্য গেল একটা অল্পবয়সী মেয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনারও কি জরায়ু ক্যানসারের লক্ষ্মণ দেখা দিয়েছে।” সাদিয়ার মাথা ঘুরে গেল। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছে না যেন। ” জরায়ু ক্যানসারে এর মত একটা ভয়ংকর ক্যানসার তাও আবার ওর। কিছুতেই ভাবতে পারছে না সাদিয়া।

“এক দুঃসম্পর্কের চাচাতো বোনের এই জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিল। ক্যসন্সার ছড়িয়ে পরার কারণে সম্পূর্ণ জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছিল তার। সন্তান জন্ম দিতেও অক্ষম হয়ে গেছিল, শশুর বাড়ি থেকে তাড়ানো হয়েছিল। পরে ক্যানসার শারা শরীর ছড়িয়ে পরার কারণে মৃত্যু হয়।” ভেবেই নিঃশ্বাস ভাড়ি হয়ে গেল সাদিয়া। কি করবে কিছুই ভাবতে পারছে না যেন। “রায়হান কত ভালেবাসে আামাকে। খুব করে চায় একটা ছোট বাচ্চা আসবে আমাদের ঘরে। যে বাবা বাবা বলে সারাক্ষণ ডাকবে উনাকে। কিন্তু আমি যে এই সুখ টুকুর কিছুই দিতে পারব না উনাকে। না দিতে পারব কোন বাচ্চা না কোন সুখ। মরার আগে দিয়ে যাবো শুদু কষ্ট আর যন্ত্রণা। না আমি উনার এ কষ্ট সহ্য করতে পারবো না সে যে খুব ভালোবাসে আমায়।” মনে মনে কথাটা বলেই কাঁদতে লাগল সাদিয়া।

অল্পবয়সী মেয়েটা সাদিয়াকে কাঁদতে দেখে বলল, ” আরে আপু আপনি কাঁদছেন কেন? অনেকের ভায়া টেস্ট করার পর কিছু ধরা পরে না আপনি চিন্তা করবেন না। আমিই তো তিন বছর আগে করিয়েছিলাম কিছু ধরা পরেনি তিনবছর পর আবার আাসতে বলেছিল বিধায় এসেছি। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করুণ যাতে ‘লেড কার্ড’ না আসে।” বলেই মেয়েটি ভিতরে চলে গেল। সাদিয়া যেন একটু সাহস পেল মনে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগল।

বাইরে এক দেকানে এসে বসলো রায়হান। দোকানী হতে পানির বোতল নিতে যাওয়ার সময় এক লোক ফোনে কাউকে বলল, “না জানি ভায়া টেস্ট কি আসে। খারাপ কিছু না আসেলেই বাঁচি।” লোকটি খুব আস্তে বললেও রায়হান তা শুনতে পেল। লোকটা ফোন রেখে বসে বসে কিছু একটা ভাবতে লাগল। রায়হান তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। পানি?”

লোকটি রায়হানের কাছ থেকে পানির বোতল নিয়ে বলল, “আর বলবেন না ভাই। বউয়ের জরায়ু ক্যানসারে লক্ষ্মণ দেখা দিয়েছে তিনটা তাই ভায়া টেস্ট করাতে নিয়ে এসেছি। এখন খুব চিন্তা হচ্ছে।” লোকটির সবার সামনে কেমন জরায়ুর ব্যাপারে বলে ফেলল সেটা অশ্চর্যেজনক মনে হলো রায়হানের তবে তারচেয়ে বিশি অবাক হলো ভায়া টেস্ট জরায়ু ক্যানসারে এর জন্য করানো হয় শুনে।”

রায়হান হোটচ খেলো। আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, “ভায়া টেস্ট জরায়ু ক্যানসার জানার জন্য করা হয়?”

লোকটি সব খুলে বলল রায়হানকে। রায়হান যেন সব শুনে ভেঙে পড়লো সাথে সাথে। লোকটার স্ত্রীর তো মাত্র তিনটা লক্ষ্মণ দেখা দিয়েছি কিন্তু সাদিয়ার তো কতগুলো লক্ষ্ণণ ! আর ভাবতে পারছে না রায়হান। “আল্লাহ যেন সাদিয়ার কোন ক্যানসার ধরা না পড়ে।” মনে মনে এতটুকুই প্রার্থনা করতে লাগল।

সাদিয়ার হাতে লাল কার্ড ধরিয়ে দিতেই সেটা দেখে হাত কাঁপতে লাগল ওর। লাল কিছুর মানেই তো বিপদ সংকেত। আর ওই মেয়েটাও বলেছিল দোয়া করতে যেন লালা কার্ড না আসে তার মানে আমি ক্যানসারে আক্রান্ত? মুহূর্তে রায়হানের মুখটা ভেসে উঠল সাদিয়ার কাছে।

রায়হান সাদিয়ার সামনে যতটা পারে সামলে রাখার চেষ্টা করলো। লাল কার্ড দেখার পর থেকেই বারবার মাথাটা কেমন ঘুরছে তার। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সাদিয়া সামনে থাকায় তা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। পাশেই সাদিয়া বসা মূর্তির মত বাইরে তাকিয়ে আছে। না কিছু বলছে না একটু নড়াচড়া করছে যেন কোন এক মূর্তি সে।


সাজিয়া আফরিন লাল কার্ড দেখে বলল, “যেটা ধারণা করেছিলাম সেটাই হয়েছে। হয়তো তোমরা ওখানে গিয়ে জেনে গেছ ভায়া টেস্ট জরায়ু ক্যানসার পরিক্ষা করার জন্য করা হয়।”

সাদিয়া জানে না রায়হান বিষয়টা জানতে পেরেছে কি-না তাই রায়হানের দিকে তাকাতেই দেখল রায়হান ছলছলে চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সাজিয়া আফরিন বলে চলছে, “এক ধরণের ভাইরাস এই জরায়ু ক্যানসারের জন্য দায়ী। এই ক্যানসারের নাম হচ্ছে এইচপিভি বা হিউমেন পেপুলুমা ভাইরাস। এই ভাইরাসটা সেক্সুয়াল রুটে একজন থেকে অন্যজনে ছড়ায়। যেসব মেয়েরা বহুগামী কিংবা স্বামীরা অনেকের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে- এমন ক্ষেত্রে এইচপিভি ভাইরাসে নারীদর বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এখন আমার কথা হলো তেমার আক্রান্ত হওয়ার কারণটা কি? তুমি তো পর্দা করো দেখি, তোমার বহুগামিতা থাকার কোন কারণ নেই। তার মানে কি তোমার স্বামী?”

রায়হান সাদিয়ার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল। সাদিয়া বিশ্বাস করে না রায়হানের অন্য মেয়েদের সাথে যৌন সম্পর্ক থাকতে পারে। তখনি মনে হলো ওর সাথে ঘটা ধর্ষণের কথা। অস্ফুটে বলল, “না আমার স্বামী এমন নয়। দু মাস আগে আমি গন ধর্ষণের শীকার হই।”

একটা মেয়ে তার ধর্ষণ হওয়ার কথাটা কতটা কষ্ট পেলে বলতে পারে। কতটা ভেঙে পড়লে এসব কথা বলতে পারছে ভাবতে পারছে না সাজিয়া। তিনি দেখলেন সাদিয়ার চোখ বেয়ে পানি পরছে তবুও তিনি বললেন, ” হয়তো ওদের থেকে কারো মধ্যে থেকেই এই ভাইরাস তোমার মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে।”

সাদিয়া ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ধর্ষকরা ধর্ষনের পরও কিছু পাপ রেখে যায় যেই পাপলর মাশুল হয়তো সারাজীবন দিতে হয়।
রায়হান ভাবতে পারছে না। ধর্ষকরা মরে যাওয়ার পরও পিঁছু ছাড়ছে না ওদের । ওদের কারণে আজ আমাদের এই অবস্থা। ওরা বেঁচে থাকাতে শান্তি দেয়নি কাউকে এখন মরে গিয়েও শান্তি দিচ্ছে না। পারলে হাজার মৃত্যু দিত রায়হান ওদের।

সাজিয়া আফরিন বলেই চলেছে, ” ওসব কথা ভেবো না। এখন সমনে কি হবে সেটা নিয়ে ভাবো। ভায়া টেস্ট যে করাতে বলেছিলাম। ভায়া টেস্ট দুই ধরনের কার্ড দেয়া হয় একটা হচ্ছে লাল কার্ড। অন্যটি হচ্ছে নীল কার্ড। নীল কার্ড যাদের দেওয়া হয়, তাদের বলা হয়, আপনার জরায়ুতে এখন পর্যন্ত ক্যানসারের কোনো লক্ষণ নেই। আর যাদের লাল কার্ড দেওয়া হয় তাদের বলা হয় আপনার জরায়ুতে ক্যান্সারের সম্ভাবনা আছে।”

রায়হান সম্ভাবনার কথা শুনে কিছুটা আশার আলো দেখতে পেল। জিজ্ঞেস করল, ” সম্ভাবনা? এর মানে এখন পর্যন্ত ক্যানসারের কিছুই হয়নি?”

সাজিয়া আফরিন রায়হানের দিকে তাকালো বলল, ” তাদের বলা হয় নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে `কল্পোস্কপি` বা `বায়োপসি` করাতে। তখন রোগী আমাদের কাছে আসে আর আমরা এই `কল্পোস্কপি` বা `বায়োপসি` করানোর পর যদি দেখি ক্যান্সার ধরা পড়ে তখন তার চিকিৎসা দিয়ে থাকি।”

সাদিয়া নিশ্চুপ হয়ে সব শুনছে বারবার মনে পড়ছে সেই চাচাতো বোনটার কথা। রায়হান সাজিয়া আফরিনকে বলল, “ধরা পরলে কি এর কোন ভালো চিকিৎসা নেই?”

সাজিয়া আফরিন উত্তরে বলল, “আছে। জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের আগ মুহুর্তে যদি ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে লোকাল কিছু থেরাপি আমরা দিয়ে থাকি। এছাড়া যদি ক্যান্সার হয়েই যায় সেক্ষেত্রে পুরো জরায়ুটাকে ফেলে দিতে হবে। এটা বিশেষ ধরনের জরায়ুর অপারেশন যার ফলে জরায়ু ও আশপাশের সম্ভাব্য এলাকা ফেলে দিতে হয়।”

রায়হান এটা শুনে দু হাত পিছিয়ে গেল। সাদিয়া উনার হাত ধরে বলল, “জরায়ু কেটে ফেলে দিলে কি আমি সন্তান জন্ম দিতে পারব না?”

সাদিয়া কাঁদছে। তা দেখে সাজিয়া আফরিনের চোখ জোরা ভিজে আসলে। মাথা নেড়ে ‘না’ বলল। রায়হানের চোখ দিয়ে পানি ঝাড়ছে। সাদিয়া বলল, ” তখন আমার বেঁচে থাকার চান্সও তেমন থাকবে না। তাই না?”

সাজিয়া আফরিন সাদিয়ার হাত দুটো দরে বলল, “এমটা বলতে হয় না। কে বলেছে চান্স নেই। চান্স আছে তো।”


সাজিয়া আফরিন এর কথা মতো `বায়োপসি` করিয়ে সাদিয়াকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয় রায়হান। গাড়ি চালাতেও যেন কষ্ট হচ্ছে ওর। মাঝে মাঝে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ছে। দোকান থেকে এটা সেটা আনার কথা বলে সাদিয়ার সামনে ধরে রাখা চোখের জলগুলো ছেড়ে দিচ্ছে। শর্টের হাতা ওর চোখের জলে ভিজে একাকার। চিৎকার করে কাঁদতে পারলে হয়তো মনটা হালকা হতো। কেন বারবার আমাদের সাথে এমনটা হয়? কি দোষ করেছি আমরা? এই কষ্ট থেকে কি মুক্তি পাবো না?

সাদিয়া কিছুক্ষণ পরপর রায়হানকে জরিয়ে ধরে ইচ্ছেমত কেঁদেছে। কিন্তু মুখ ফুটে একটা শব্দও বলেনি রায়হানকে। মাথায় সুধু একটা কথাই আসছে। “এত কষ্ট না দিয়ে নিয়ে নিলেই তো পারতো আল্লাহ আমাকে। কেন একের পর এক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে আমাদের।ওই ধর্ষকরা বেঁচে থাকতে নরক বানিয়ে দিয়েছিল আমার জীবনটাকে এখন মরেও বাঁচতে দিবে না আমাকে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস।


বাড়িতে এসে দরজার কড়া নারতেই রেহানা বেগম সহ সবাই উপস্থিত হয়। রেহানা বেগম যেন হাতে মিষ্টি নিয়েই বসে ছিল। রায়হান সাদিয়ার ঘড়ে ঢুকতেই তিনি সাদিয়া মুখে জোর করে মিষ্টি তুমে দেয়। রায়হানের হাতে মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে ছেলের বউকে নিয়ে পরেছেন। উনি সাদিয়াকে কয়েদিন ধরেই লক্ষ করছে সাদিয়ার শুধু শুধু বমি হওয়া, খেতে পারে না ঠিকমত, পেট ব্যাথা, অসস্তী বোধ করা এক কথায় সবই লক্ষ করে ভেবে বসে আছেন সাদিয়া অন্তস্যত্তা। সেই ভাবনা অনুযায়ী সবাইকে বলেছেন। সবাই খুব খুশি। তারা এখনো ভেবে বসে আছেন সাদিয়া রায়হান বাবা-মা হতে চলেছে।

চলবে……
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ। ]
#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ৩২

সবাই খুব খুশি। তারা এখনো ভেবে বসে আছেন সাদিয়া আর রায়হান বাবা-মা হতে চলেছে। কিন্তু সাদিয়ার জরায়ু ক্যানসারের বিষয়টা থকে সম্পূর্ণ আজানা।

রেহানা বেগম ছেলের বউকে সোফায় বসিয়ে নিজে পাশে বসলেন। খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন, “ডাক্তার কি বলেছে সেটা আর বলতে হবে না। আমি আগেই বুঝেছি আমাদের সংসারে নতুন অতিথি আসতে চলেছে। আমি দাদি হতে চলেছি। আজ আমাদের খুব আনন্দের দিন।”

সাদিয়া তার কথা শুনে কাঁদতে লাগল। মনে মনে বলল, “আমিযে ক্যানসারে আক্রান্ত মা। জানি না, হয়তো কখনে আপনাদের নাতি-নাতনীর মুখ দেখাতে পারবো না আমি। আমাকে মাফ করে দিন। ”

রায়হান দরজায় ঠেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে। হৃদয় সাদিয়ার চোখের পানি দেখে বিষম খেয়ে মিমকে ফিসফিসিয়ে বলল, “এই ভাবি কাঁদছে কেন বলো তো?”

রেহানা বেগম বলে চলেছেন, “এখন থেকে তোর আর কোন কাজ করা লাগবে না বলে দিলাম। বাড়ির সব কাজকর্ম আমি আর মিম সামলে নিব। তুই সারাক্ষণ রেস্ট নিবি। প্রয়োজন হলে কাজের লোক রেখে দিব। মনে রাখবি তোর ভিতর এখন আরেকজন বেড়ে উঠছে, তার জন্য হলেও নিজের যত্ন নিতে হবে। আর আমি আমাদ দাদুভাইয়ের কোন অযত্ন দেখতে পারবো না।”

সাদিয়া ভেজা চোখজোড়া নিয়ে রেহানা বেগমের দিকে তাকালো। রেহানা বেগম ওর চোখে পানি দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। তিনি দেখলেন, সাদিয়ার চোখদুটি যেন বারবার কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। তিনি কিছু বলার আগেই সাদিয়া উঠে দাঁড়াল। নিস্তব্ধে হেঁটে নিজেদের রুমে চলে গেল।

রেহানা বেগম হতাশ হয়ে ছেলের কাছে গেলেন। দরজায় ঠেশ দিয়ে দাড়িয়ে ছেলেরও চোখের পানি দেখে কিছুটা আঁতকে উঠলেন। আমজাদ চৌধুরী বুদ্ধিমান মানুষ ছেলেকে কাঁদতে দেখে সে সাদিয়ার বড় কোন অসুখের কথা আন্দাজ করতে পারলেন তবুও সবটা শোনার অপেক্ষা করতে লাগলেন সে। মিম ছুটেছে সাদির পিছনে আর হৃদয় পরিস্থিতির কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।

রেহানা বেগম ছেলের বাহুতে হাত রেখে কাতর স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ” কি হয়েছে বাবা বল আমায়?সাদিয়ার ওইভাবে কেঁদে চলে গেল কেন? তুই বা কাঁদছিস কেন? তার মানে আমরা এতক্ষণ যেটা ভেবেছিলাম সেটা ভুল?”

রায়হান মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। মায় ভ্রুক্ষেপ করলো না সে। রেহনা বেগম ছেলের অবস্থা দেখে ভয়ে চুপসে গেলেন। কেন এক শঙ্কা ঘিরে ধরছে তাকে। সে আবারও জিজ্ঞেস করল,” আচ্ছা আমরা ভুল ভেবেছিলাম তো কি হয়েছে সুখবর আজ না হোক কাল তো পাবো। এখন বল ডাক্তার কি বলেছে?”

রায়হান দু’হাতে নিজের চোখ জল মুছে নিল। মায়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,” সুখবর হয়তো কখনো পাবে না মা। সাদিয়া জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত…

মুখের কথা আটকে গেল রায়হানের। নিশ্বাস ভাড়ি হয়ে আসছে। না চাইতেও চোখে পানি ঝড়ে পরছে। রায়হানের কথা শুনে রেহানা বেগম ছেলের হাতটা ছেড়ে দিলেন। ইতিমধ্যে তার মাথায় যেন বজ্রপাত ঘটলো। মুখের ভাষা হিরিয়ে ফেললেন তিনি। আমজাদ চৌধুরী, হৃদয় কেউই এটা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।

আমজাদ চৌধুরী ছেলর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। বললেন,”এসব কি বলেছিস তুই?”

রায়হান এবার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। ভাঙ্গা কন্ঠে বলল, “হ্যা বাবা। সাদিয়া ক্যানসারে আক্রান্ত। ডাক্তার বলেছে ক্যানসার ছড়িয়ে গেলে সাদিয়ার অপারেশন করতে হবে। আর সাদিয়া সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা হারাবে তখন।”

এতটুকু কথা বলে রায়হান বাবাকে ছেড়ে দিল। ছেলের কথা শুনে রেহেনা বেগম দু’কদম পিছয়ে গেলেন। রায়হান বাবাকে ছেড়ে দিয়েই বলল, ” আমার সন্তান চাই না বাবা। এখন কত বাচ্চা এডপশন করা যায়। আমি সাদিয়াকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। এই ক্যানসার যে খুব ভয়াবহ। ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে নিয়ে যায় একটা মানুষকে। আল্লাহ না করুক সাদিয়ার যদি…

আর কিছু ভাবতে পারছে না রায়হান। এখন এই মুহূর্তে নিজে ভেঙ্গে পরলে চলবে না। নিজে যদি ভেঙ্গে পরে সাদিয়ার কি হবে? সাদিয়াকে কে সামলাবে? যতই কষ্ট হোক না কেন আমাকে শক্ত থাকতে হবে। ভেবে রায়হান সাদিয়ার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। মুহূর্তে কিছু একটা ভেবে দাঁড়িয়ে পরে।


মিমের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিয়েছে সাদিয়া। মিম কখন থেকে দরজা ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু দরজা খোলার কোন নাম নেই সাদিয়ার।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুরনো দিনের কথা ভাবছে সাদিয়া। একের পর এক ওর জীবনে আসা দুঃখগুলো সব চোখের সামনে ভাসছে যেন। ছোটবেলায় একা করে দিয়ে মায়ের চলে যাওয়া। মায়ের চলে যাওয়ার পর থেকে বাবার অবহেলা। সৎ মা ও সৎ বোন সংসারে এসেই শুরু হয় সে কি অত্যাচার। রায়হান নামে লোকটা জীবনে আসার পর যাই একটু সুখের স্বপ্ন দেখেছিলো কিন্তু সেই সুখ সহ্য হলো না কিছু ধর্ষকের। ভেঙে গুরিয়া দিল সেই সুখের স্বপ্ন। তারপরও সেই রায়হান নামের লোকটি ছেড়ে যায়নি। ভেঙে যাওয়া স্বপ্নগুলো পূরণের জন্য ছুটে চলেছে এদিক ওদিক। কত কি-না করেছে। কত ভালোবাসা দিয়ে এসেছে দিনের পর দিন। কিন্তু সেই ভালোবাসা নজরে পরে গেছে কোন এক অসুখের। ক্যানসার নামক সেই অসুখটা আজ কেড়ে নিতে চলেছে ওকে। ভেবেই অঝোরে চোখের পানি ফেলছে সাদিয়া।

“হয়তো চাচাতো বোন ঋত্বিকার মতো একদিন আমাকেও এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে”, ভাবতেই রায়হানের মুখটা দু’চোখের সামনে ভেসে উঠল। আমি চলে গেল লোকটার খুব কষ্ট হবে। সে কিভাবে থাকবে আমাকে ছাড়া? বড্ড বেশি ভালোবাসে যে আমায়। আমাকে হারিয়ে হয়তো নিজেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে সে। এরচেয়ে ভালো আমি চলে যাবো তাকে ছেড়ে তাহলে আর যাই হোক তিলেতিলে শেষ হবে না লোকটাকে। কিছুদিন পর যখন মা-বা জোর করে আবার বিয়ে দিয়ে দিবে তখন ঠিকই নতুন বউ সবকিছুর সাথে উনাকেও গুছিয়ে নেবে, নিজের মত করে।, ভাবতেই কিছুটা সস্তি পেল মনে। দু হাতে চোখের পানি মুছে নিল সাদিয়া। আর কত চোখের জল ফেলবে?

“যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন নাহয় উনার ভালোবাসার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বাঁচবো। তবুও তো আমাকে তিলেতিলে মরতে দেখতে হবে না তাকে। এ কষ্ট যে সে সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু আমি যাবো তো যাবো কোথায়? বাড়িতে গেলে কি আমায় জায়গা দিবে মা? হয়তো দিবে, কেননা মা আগের চেয়ে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। আল্লাহকে ভয় পায় এখন। তবে রায়হান তো সেখান থেকে এক নিমিষেই খুঁজে বের করে ফেলতে পারবে আমায়। কোথায় যাবো আমি?”

ভাবছে সাদিয়া তখনি দরজায় ভাঙ্গার শব্দ আসে কানে। ধীর পায়ে এগিয়ে রুমে যেতেই দেখে রায়হান দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখেই জরিয়ে ধরে। কান্নায় ভেঙ্গে পরে। ভাঙ্গা কন্ঠে বলে, “দরজা খুলছিলে না কেন তুমি? জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি?”

সবাই চিন্তিত হয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। এবার ওদের কিছুক্ষণ একা থাকতে দেওয়া উচিৎ ভেবে একে একে চলে গেল যে যার রুমে।

সাদিয়া রায়হানের কথার উত্তরে বলল,” ভেবেছিলেন আত্মহত্যা করেছি? আরে না… রায়হান মুখ চেপে ধরলো সাদিয়া। মুখের উপর থেকে রায়হানের হাত সড়িয়ে সাদিয়া বলল,” কিছুদিন পর তো এমনিতেই মারা যাবো তাই আর আত্মহত্যা করে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে চাই না।”

রায়হান ওর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে যে পানি ঢেউ তুলছে সাদিয়ার বুকে। বুকের ভিতরটা যেন দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে কেউ। রায়হান অস্পষ্ট স্বরে বলল, “সাদিয়া আল্লাহর দোহাই এমনটা বলো না। আমি সহ্য করতে পারছি না বিশ্বাস করো। দেখো কিছু হবে না তোমার।”

সাদিয়া রায়হানকে আরও কষ্ট দিতে চাইছে যেন সে চলে গেলেই এই কথাগুলো ভেবে রায়হান কষ্ট না পায়। তাই ঝাঁজাল কন্ঠে বলল, “নিজেই এই ভাইরাসটা আমার শরীরে স্থাপন করে এখন ভালো সাজছেন? আচ্ছা বলুন তো কতগুলো মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে আপনার? জানি না কোন মেয়ের কাছ থেকে এই ভাইয়াস আমার শরীরে এনে দিয়েছেন আপনি। ”

রায়হান ভাবতে পারছে না সাদিয়া ওকে এমন কিছু বলছে। নিজের কানকেই যেন ভুল শোনার কারণে দোষারোপ করছে সে। সাদিয়া রায়হানের নিশ্চুপ থাকতে দেখে আবারও বলে, “এমটা না করলেও পারতেন আমার সাথে। কেন এই ক্যানসারে আক্রান্ত করলেন আমাকে?”

বারবার ভুল শুনতে শুনছে? এটা হতে পারে না। রায়হান মুখ ফুটে শুধু বলল, “সাদিয়া? তুমি আমাকে এসব বলছ?তোমার মনে হয় এমনটা?”

সাদিয়া আবারও ঝাঁজালো কন্টে বলল, “তো মনে না হলে কি বলছি নাকি? আমার সাথে এম জঘন্য অপরাধ করে আবার ভালো সাজছেন। এসব ন্যাকা কান্নাঁ কিসের জন্য?”

রায়হান এবার রাগে চেঁচিয়ে বলল, “সাদিয়া!” সাদিয়া রায়হানকে পাশ কেঁটে বিছানা থেকে একটা বিলিশ নিয়ে বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়াল। বলল, “আমি এখন ঘুমাচ্ছি আমাকে যেন কেউ ডিসটার্ব না করে। আর যদি করা হয় মাঝরাতে বাড়ি থেকল বেড়িয়ে চলে যাবো। মনে থাকে যেন। যত্তসব ” বলে সাদিয়া শব্দ করে বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিল।

বারান্দায় মেঝেতে বসে মুখ চেপে কাঁদতে লাগল সাদিয়া। আজ কতগুলো খারাপ কথা বললো রায়হানকে। যে মানুষটা নিজের প্রাণের চেয়েও বিশি ভালোবাসে সাদিয়াকে। যার ভালোবাসার ঋণ কখনো শোধ করতে পারবে না সাদিয়া তাকে আজ অকারণে কতগুলো কথা শুনিয়ে দিল। নিজের চুল নিজে টেনে ছিঁড়তে লাগল সাদিয়া। দেয়ালা মাথা ঢুকে মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। আজ আর সারারাত একবিন্দুও ঘুম আসবে না।

রায়হান চিৎকার করে কাঁদছে। ওর কান্নার আওয়াজ মা-বাবা, হৃদয়-মিমের ঘড় সহ আশেপাশের বাড়িতেও পৌঁছাচ্ছে। বুক কেঁপে উঠছে সাদিয়া। এখন মনে হচ্ছে কথাগুলো না বললেই হয়তো ভালো হতো। লোকটা এতগুলো কষ্ট একসাথে নিতে পারছে না। যদি কিছু হয়ে যায় ভেবে দরজার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে সাদিয়া।
ফ্লোরের সাথে আঘাত করার কারনে দু হাত কেঁটে গেছে রায়হানের। রক্ত বেয়ে বেয়ে পরছে তার। ফ্লোরে বসে চিৎকার করে কাঁদছে সে। সাদিয়া আর সহ্য করতে পারছে না।
রেহানা বেগম ছেলের চিৎকার শুনে স্বামীকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে যাচ্ছেন। আমজাদ চৌধুরীর বউকে স্বান্তনা দেয়ার মনমানসিকতা কোনটাই নেই তার। ছেলের জন্য তার চোখ বেয়েও পানি পরছে।

রাত প্রায় তিনটা বাঁজে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছ রায়হান। তখন সাদিয়ার উপর চেঁচানোটা মোটেও ঠিক হয়নি। কিভাবে ঘুমাবে সাদিয়া বারান্দায়? মেঝেতে ঘুমালে তো শরীর ব্যাথা করবে ওর। ভেবেই চু’চোখের পাতা এক করতে পারছে না রায়হান। কতবার ডেকেছে কিন্তু একবারের জন্যও দরজা খোলেনি সাদিয়া।


শীত শীত লাগছিলো বলে ঘুমের মধ্যে থাকা রায়হান সাদিয়াকে ডেকে বলল, “সাদিয়া কাঁথাটা দাও না!” পাশে বিছানা হাতড়ে দেখতেই রায়হান সাদিয়ে পেল না। চোখ খুলে তাকিয়ে সাদিয়াকে না দেখে ঘুম উধাও হয়ে গেল তার। মূহুর্তে মনে পরল রাতের ঘটনাটা। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল ৩টা ১০ বাজে। এই বিশ মিনিটে চোখ লেগে গেছিল তার।
বাইরে বজ্রপাতের আওয়াজ হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে হয়তো। তাহলে কি সাদিয়া বারান্দায় বসে ভিজছে? ভেবে দৌড়ে সেখানে গেল দেখল ভিতর থেকে দরজার লাগানো। স্টোর রুমে গিয়ে সেখান থেকে মাইনাস ইস্ক্রুপ ড্রাইভার নিয়ে সেটা দিয়ে রিবিট এ চার দিতেই প্লাস্টিকের দরজা খুলে গেল। রায়হান দেখল সাদিয়া এমনিতে না ভিজলেও শীতে কাঁপছে। রায়হান ওর কাছে গিয়ে দু’হাতে কোলে তুলে নিল সাদিয়াকে। সাদিয়া কিছু বলল না শুধু তাকিয়ে আছে রায়হানের দিকে। রায়হান খাটে নিয়ে শুয়িয়ে দিল সাদিয়াকে। কাবার্ড থেকে কাঁথা বের করে জরিয়ে দিল সাদিয়ার গায়ে। সাদিয়ার মাথার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমে তলিয়ে গেল রায়হান।


সকালে উঠে সারা বাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না কেউ। রায়হান চিন্তিত হয়ে সাদিয়াদের বাড়ি, ওর আত্মিয়স্বজনদের বাড়িতে ফোনকল দিয়েছে কিন্তু কেউই সাদিয়ার খোঁজ দিতে পারে নি। বাড়ি শুদ্ধ সবাই খুব চিন্তায়। আমজাদ চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। রায়হান বাসা থেকে বের হয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেছে আশেপাশে সব জায়গায় কিন্তু সাদিয়া কোথাও নেই। রেহেনা বেগমের ইচ্ছে করছে না এখন কিছুতেই রান্না করতে কিন্তু না খেয়ে কিভাবে বাঁচাবে? ভেবে রান্নাঘরে গেলেন তিনি। চালের ড্রামের ঢাকনা খুলতে যাবে তখনি একটা চিঠি পায় সে কাগজটাতে লিখা “সাদিয়া।” খুলতেই কিছু একটা লেখা দেখতে পায় সে। যাতে প্রথমেই লিখা

আসসালামু আলাইকুম মা।
জানি খুব ভালোবাসেন আপনি আমাকে। ঠিক নিজের মেয়ের মত। আর যদি ভালোবেসে থাকেন এই চিঠিটা আপনার ছেলেকে দেখাবেন না, অনুরোধ। জানি না আপনার একটা মেয়ের অভাব আমি পূরণ করতে পরেছি কি না। তবে খুব খুব খুব ভালোবাসি আপনাকে। শুধু আমি জানি, নিজের মায়ের চেয়েও কম ভালোবাসিনি আমি আপনাকে। শুধু আপনাকে না এই বাড়ির প্রতেকটি মানুষকেও আমি খুব ভালোবাসি। নিজের সবচেয়ে আপন বলে ভাবি। জানেন মা, আনার বাকিটা জীবনও আপনাদের সাথে কাটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু কী করবো বলুন এই ক্যানসার যে আমাকে একা ছাড়বে না।

এতটুকু পড়েই তিনি দৌড়ে ড্রয়িং রুমে গেলেন। রাখতে পারলেন না সাদিয়ার অনুরোধ। ছেলের হাতে চিঠিটা ধরিয়ে দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “সাদিয়ার চিঠি।” রেহানা বেগমের কথা শুনে আমজাদ চৌধুরী, হৃদয় সহ মিম বিস্ময় নিয়ে তাকালো সেই সেই সাদা কাগজের চিঠিটার দিকে।

রায়হান প্রথম পৃষ্ঠা পড়ল যতটুকু রেহানা বেগম পড়েছিলেন। তারপর পৃষ্ঠা উল্টে পড়া শুরু করলো।

হয়তো আমাকে আর কোনদিন দেখবেন না, খুঁজেও পাবেন না কেউ। কারণ আমি আপনাদেরকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি দূড়ে, খুব দূরে।

এতটুকু পড়ে রায়হান মেঝেতে বসে পরল। চেখের পানি বেয়ে সেই কাগজের উপর পরছে। রায়হান আবারও পড়তে শুরু করল,

আমার চলে যাওয়ার একটাই কারণ মা। আমি সত্যিই চাইনি আমি তিলেতিলে আপনার ছেলের সামনে শেষ হয়ে যাই। আমাকে এভাবে দেখলে যে সুস্থ অবস্থায়ও মারা যাবে সে। কারণ খুব ভালোবাসে আমাকে। আমিও যে খুব ভালোবাসি তাকে কিন্তু কখনো বলে উঠতে পারিনি। হয়তো আর কখনো পারবোও না।

চলবে…
[

2 COMMENTS

  1. ভাই লাস্ট এর পর্ব টা কই ?
    প্লিজ ভাই লাস্ট এর টা দিন প্লিজ ।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here