#প্রণয়াসক্ত_হাওয়া`[৬]
#সুমাইয়া_মনি
#অন্তিম_পর্ব
মেঘলা আকাশ যেমন বৃষ্টি আসার আগ পর্যন্ত থম মে রে থাকে। তেমনি রাবি অনুভব করছে তার জীবনের এক নির্দিষ্ট পাতা যেন হাওয়া-বাতাস আলো বিহীন শুঁকনো এবং থমথমে হয়ে আছে। এ বিতৃষ্ণা অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়।
দু রাত ছটফট করে কাটিয়েছে। বাহির থেকে রুমে প্রবেশ করার পর শূন্য অনুভব করেছে। এমন কখনো হয়নি। বাবা-মা ছাড়া একা আমেরিকায় থেকেছে। কাটিয়েছে কয়েক বছর।
বড়ো নিশ্বাস ফেললো। টওয়াল হাতে নেওয়ার সময় পাশের টাওয়ালটির ওপর নজর পড়ে। লাল রঙের টাওয়ালটি রায়ার। একবার স্পর্শ করল। বি চ্ছে দে র কথাটি মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে ম লিন হয়ে এলো তার মুখমণ্ডল। টাওয়াল নিজেরটি নিয়ে চলল বাথরুমে।
_
‘তুই যে ভার্সিটিতে এসেছিস হাসবেন্ড জানে?’ নয়ন প্রশ্ন ছুঁ ড়লো রায়ার উদ্দেশ্যে।
‘সে জানলেও বা কি বলবে? তার জীবনে যেহেতু অন্যকেউ আছে আমার কোনো গুরুত্ব আছে বলে মনে হচ্ছে না।’
‘রাবিকে খোলামেলা ভাবে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল নিশির ব্যাপারে। কথা চা পিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না।’
‘হ্যাঁ! জানিয়েছি। তেমন কিছু বলেনি।’
‘বড়ো প দ ক্ষে প নেবার আগে তাকে আরেকবার সুযোগ দে। হয়তো সে নিশির সঙ্গে সম্পর্ক বি চ্ছি ন্ন করতে পারে।’
‘রাবি আমাকে পছন্দ করে না।’ করুন স্বরে বলল।
‘দোস্ত, একটা সম্পর্ক স্বাভাবিক ভাবে গড়ে উঠতে হলে তাকে সময় দিতে হবে। হুটহাট সম্পর্ক তৈরী হয়না।’
‘আমি সময় দিয়েছি। প্রতিদিন তার সঙ্গে কোনো না কোনো দুষ্টুমি করেই থাকি। সে বুঝে না আমাকে।’ বলতে বলতে দৃষ্টি নত করে ফেলে রায়া। নয়ন টপিক পাল্টে জিজ্ঞেস করল,
‘বাসায় যাবি না?’
‘যাব।’
‘চল তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি।’
‘হুম।’
রিকশায় চড়ে একত্রে বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে রাবি তাদের একত্রে যেতে দেখে। বাইক থামিয়ে তৎক্ষনাৎ রায়াকে কল দেয়। এ ক’দিনে দু’জান মধ্যে কথা হয়নি। এসময়ে রাবির কল দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল। ডানে-বামে তাকাল।
‘রিসিভ কর। কে দিয়েছে? আশেপাশে কী দেখছিস?’
‘রাবি কল দিয়েছে। আশেপাশে দেখছি ও আমাদের দেখছে কি-না।’
রায়ার উত্তেজনায় নয়নও একবার নজর বুলিয়ে নিল। কিন্তু রাবিকে দেখতে পেল না। রাবির কল রিসিভ করল না। বাড়িতে গিয়ে কল দিবে ভেবে ফোন সাইলেন্ট করে রাখল।
.
রিনি সকালে বাড়ি ফিরেছে। আজ কলেজে যায়নি। রাবি দুইটার দিকে বাড়ি ফিরে রিনির নিকটে আসে। ওর ফোনটি নিয়ে ফেসবুকে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ বাদে ফোন ফেরৎ দেয়। কামরায় এসে রায়াকে কল দিলো। দু বার রিং হবার পর ফোন রিসিভ করল রায়া।
‘বলেন।’
‘রেডি থেকো আমি আসছি তোমাকে নিতে।’
‘কেন..।’
এতটুকু বলে ফোন রেখে দেয় রাবি। রায়া চিন্তিত হয়ে পড়ে। আরো কয়েক বার কল দেয়। তবে রাবি রিসিভ করল না।
ঢয়ার থেকে আরো চার জন রমণীর চিত্র বের করে পকেটে পু রে। তারপর রওয়ানা হয় রায়াদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
অস্থির হয়ে পায়চারি করছে রায়া। ওর মা ডেকে চলেছে নাস্তা তৈরী করার জন্য। কেননা রাবি আসছে খবরটি জানিয়েছে তাকে। তার ডাকে সাড়া দিচ্ছে না রায়া। সে তো অস্থিরতায় ভু’গছে। হঠাৎ করে রাবির বাড়ির যাওয়ার কথাটি জানানোর ফলে সে গভীর ভাবনায় মসগুল। ব্যা’ঘা’ত ঘটলো রচনা খাতুনের ডাকে। তার নাতি জামাইকে হাত ধরে রুমে নিয়ে এসেছে। এতে কপালে ভাঁজ পড়ে রায়ার।
‘আসার পর থেকা তোর কথা জিগাইয়া গলা শুকাইয়া ফেলছে। এজন্য তোর ঘরে নিয়া আইলাম। নে এলা তোরা পেম কর।’ সম্পূর্ণ কথা শেষ করে মুচকি হেসে তিনি চলে গেলেন। রায়া কিছুটা লজ্জা অনুভব করে মাথা নুইয়ে রাখলো। রাবি বলল,
‘ব্যাগ গুছিয়েছো?’
রায়া সপ্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘ঐ দিন আপনাকে কিছু বলেছিলাম। ভুলে গেছেন?’
‘আচ্ছা নিশিকে তোমার কেমন লেগেছে?’
সুপ্ত অভিমান নজরে তাকিয়ে সরস গলায় বলল,
‘ভালো। কতদিনের সম্পর্ক আপনাদের?’
‘এই ধরো চার মাসের হবে।’
‘তাহলে নিশিকে বিয়ে করেননি কেন?’
রায়া ওর পকেট থেকে আরো কিছু রমণীর চিত্র বের করে তুলে ধরল রায়ার সামনে। বলল,
‘এদের সাথেও আমার সম্পর্ক আছে। তাহলে কী সবাইকে একত্রে বিয়ে করা উচিত আমার?’
‘মানে?’
রাবি আরাম করে বিছানায় বসলো। ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে বলল,
‘নিশি আমার প্রথম মডেল। ঐ মেয়েদের তালিকা থেকে ওঁকে মডেল হিসাবে ভালো লেগেছে। আগামী মাসে আমার নতুন ড্রেসের মডেলিং নিশিকে দিয়ে করাব। কাজের মাধ্যমে নিশিকে আমি চিনেছি। এ ছাড়া ওর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
রায়া নরম ভঙ্গিতে তাকাল। এতদিন ভুল ধারণা পুষে রেখেছিল মনে। এ যে অ’পরাধ!
‘আচ্ছা তোমরা মেয়েরা এত বেশি বুঝো কেন? নিশির ছবি যখন দেখেছো আমাকে জিজ্ঞেস করতে। আমি বলতাম সব। কিন্তু তুমি আমাদের সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টি করলে মনে। তোমার বিস্তারিত জানা উচিত ছিল রায়া।’
রায়া মিনমিন স্বরে বলল,
‘আমি জানতে চেয়েছিলাম। অনেক বার আপনার মোবাইল চেক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু…।’
‘ব্যর্থ হয়েছো?’
রায়া মাথা উপর নিচ ঝাঁকাল। সে লজ্জিত! অ’পরাধী বোধ তাকে চে’পে ধরেছে। রাবি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল,
‘আমি তোমাকে পছন্দ করতাম না, এটা ঠিক। কিন্তু সেদিন তুমি যখন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছিলে। তে জি হাওয়া তোমার খোলা চুলগুলো উড়িয়ে দিয়েছিল। তোমার অদ্ভুত এক সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছিলাম সেদিন। মুগ্ধ হয়েছি। আমার হৃদয়ে প্রণয়াসক্তের হাওয়া বয়ে গিয়েছিল। তবে আমি সেটা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। তোমার এলোমেলো চুলে আমি বরাবরই মুগ্ধ হয়েছি। দুষ্টুমিতে তোমার সঙ্গে কখনোই পেরে উঠেনি। তোমার চঞ্চলতা আমায় বরাবর তোমার প্রতি অ’কৃ’ষ্ট করেছে। বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমাকে বিমোহিত করেছে। আমি তোমায় পছন্দ করে ফেলেছি। যে মেয়েটিকে আমি অপছন্দের তালিকায় রেখেছিলাম। সেদিন তার বি চ্ছে দ হবার কথাটি শুনে আমার হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আমি তোমাকে ছাড়তে পারব না। ভালোবেসে ফেলেছি যে তোমায় রায়া। আমাকে কী সুযোগ দিবে তোমার মন জয় করার?’
স্ত ব্ধ হয়ে গেছে রায়া। কীভাবে বলবে। কী থেকে শুরু করবে ভাষা নেই। দৃষ্টি নত রেখে ওড়নার কোণা বারবার আঙুলের সঙ্গে পেঁচাচ্ছে। বুকের মধ্যে থাকা হা র্ট যন্ত্রটিতে ধুকপুক শব্দ হচ্ছে। রায়াকে চিন্তিত দেখে রাবি ওঁকে কাছে টেনে কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটের সঙ্গে মাথা ঠেস দিয়ে রাখল। হা র্ট বেরিয়ে আসার উপক্রম রায়ার। হাত-পা জমতে বসেছে। ঘনঘন চোখের পাপড়ি ফেলছে। রাবির ছোঁয়ায় নিশ্বাস তী ব্র তার। রাবি কোলম স্বরে বলল,
‘আমি তোমার হতে চাই। এটা মিথ্যে কোনো গল্প না রায়া। চলো না আমরা আমাদের প্রণয়ের সূচনা করি।’
রায়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দু হাত দূরে সরে এলো। রাবি উঠে দাঁড়াল। প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকিয়ে আছে। তবে কী রায়া তাকে প্র’ত্যা’খ্যা’ন করবে?
উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়ায় রায়া। ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসি।আজ সে এ জগতের সুখী মানুষ হিসাবে দাবী করছে। প্রথম যেদিন ছবি দেখেছে রাবির, সেদিনই মনে মনে পছন্দ করে ফেলেছে। স্বামী হিসাবে তাকে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে। চোখ হালকা বন্ধ করে নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
‘আমি প্রস্তুত আছি প্রণয়ের সূচনায়…।’
রাবির ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। পিছন থেকে রায়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘সো, নানুর কথা প্রধান্য পাবে। আমাদেরও বা স র হবে।’ লাস্টেরটুকু রাবি ফিসফিস করে বলল। রায়া মুচকি হেসে মাথা নুইয়ে ফেললো। তার দিকে ফিরিয়ে কপালে আলতো ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। মিশিয়ে নিলো বুকের মাঝে। তাদের প্রণয়াসক্তের সূত্রপাত ঘ’টে।
সমাপ্ত।
কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।