#প্রণয়িনী
#আফসানা_মিমি
|১৭তম পর্ব |
আয়মান তুবা এখন আগের ফর্মে চলে এসেছে। নিজের ঘরে দরজা আটকে সাদা বিলাইকে জব্দ করার ফন্দি আটছি। আমার সহকর্মী হিসেবে আছে আমার কিউট দেবর মিনি সাদা বিলাই।
– মিষ্টিপরী, কি করবে তুমি ভাইয়ার সাথে? চলো না ক্রিকেট খেলে আসি।
– না সোনা, আজ ক্রিকেট খেলব না। আজ লুকোচুরি খেলব।
– ইয়ে, কি মজা আমরা লুকোচুরি খেলব।
মিনি সাদা বিলাইয়ের আনন্দ দেখে মুচকি হাসলাম। আমাদের কথার মাঝেই সাদা বিলাই দরজায় কড়াঘাত করে।
– আয়মান দরজা খুলো। কি করছো ভেতরে? দরকারি কথা আছে তোমার সাথে।
সাদা বিলাইয়ের আগমনে বিরক্তবোধ করলাম। কারণ, আমি এখন পর্যন্ত সাদা বিলাইকে জব্দ করার কোন উপায় পাইনি। সাদা বিলাই অনবরত দরজায় কড়াঘাত করেই যাচ্ছে। অগত্যা দরজা খুলে কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে রাগান্বিত স্বরে বললাম,
– কি হয়েছে আপনার? শান্তিতে একা ঘরে বসতে পারব না? খুব তো সবাই একজোট হয়েছেন নিচে। এখন আমি একা। আমার কেউ নেই এখানে।
সাদা বিলাই উঁকি দিয়ে রুমে হামিকে দেখে নিলেন। এতক্ষণ যে আমার বলা একটা কথাও সাদা বিলাইয়ের কর্নকুহরে প্রবেশ করেনি তা সাদা বিলাইয়ের চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম। সাদা বিলাই আমাকে চোখ মেরে হামির উদ্দেশ্যে বললেন,
– হামি সোনা, বাবা তোমাকে ডাকছেন। নতুন কার নিয়ে এসেছে তা দেখাবে বলে।
গাড়ির কথা শুনেই হামি ভো দৌঁড়। হামি যেতেই সাদা বিলাই দরজা আটকে ফেলেন।
– এখন কোথায় পালাবে শুভ্রপরী?
আমার নিকটে সাদা বিলাইয়ের আগানো দেখে ভরকে গেলাম কিন্তু তা প্রকাশ করলাম না। সাদা বিলাই পরিধানের টি-শার্ট খুলতে খুলতে আমার দিকে আগাচ্ছেন। অবস্থার অবনতি দেখে শুকনো ঢুক গিলে সাদা বিলাইয়ের উদ্দেশ্যে বললাম,
– সমস্যা কি আপনার সাদা বিলাই? যখন তখন পরনের কাপড় খুলে ফেলেন কেন? আপনার কি খুলে ফেলার রোগ ধরেছে? একদম উল্টা পাল্টা কাজ করবেন না বলে দিলাম।
আমার কথা শেষ হতেই সাদা বিলাই আমাকে টপকে আমার পেছনের আলমারি থেকে ড্রেস পরতে পরতে উওর দিলেন,
– ওহ আমার শুভ্রপরী, সবসময় তোমার মাথায় এসবকিছু ঘুরে তাই না? ছিহ্ দুষ্টু মেয়ে! আমি তো কাপড় পরিবর্তন করছি অফিসে যাবো বলে! ইশ তুমি কি ভাবলে? ছিহ্ আয়মান ছিহ্। বাই দ্যা ওয়ে, তুমি যদি চাও তো অফিসে যাবার আগে কিছু হতে পারে।
সাদা বিলাইয়ের কথায় কটমট চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের কাজ করতে লাগলাম।
– অফিসে যাচ্ছি আয়মান। কিছু প্রয়োজন পড়লে ফোন করিও। আর লিজা এবং লিজার মা এই দুইজন মানুষদের থেকে দূরে থাকবে।
লিজার কথা বলাতে আমার আবরার ভাইয়ার কথা মনে পড়লো। লোকটার হঠাৎ কি হয়েছে? কোথায় চলে গিয়েছে লোকটা?
– আবরার ভাইয়ের কোন খোঁজ পেয়েছেন? আর কেনই বা আবরার ভাই আমার আর আপনার মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন? এতে ভাইয়ার কী লাভ?
আমার কথায় রাদের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– ঐ বেইমানটার কথা আর আমার সামনে কখনও’ই বলবে না। ঐ বেইমানটার জন্যই আমাদের মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। আবরারকে আমি আমার হাতের কাছে পেলে মেরেই ফেলব।
সাদা বিলাইয়ের এই মুহূর্তে রাগান্বিত কথায় সন্তুষ্টি হতে পারলাম না। একজন জানের প্রিয় ভাই কোনদিনও স্ব-ইচ্ছায় তাঁকে কষ্ট দিবে না। সাদা বিলাইয়ের হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে কোমল কন্ঠস্বরে বললাম,
– আমি আপনার কথায় একমত হতে পারছি না। ঠান্ডা মাথায় আমার কথাগুলো শুনুন। আবরার ভাইয়া যদি আমাদের ক্ষতি করতে চাইতো তাহলে এতদিনে অনেক সুযোগ ছিলো তখন করতে পারত। আরেকটা কথা চিন্তা করুন, আমরা সেদিন ভাইয়াকে রাতে সুস্থ সবল দেখে এসেছিলাম মানে ভাইয়া তখনও আমাদের সাথে দুষ্টুমি করছিলো। আমি ভাইয়ার চোখে খারাপ কিছু দেখিনি। সে ছোট বোনের মতোই আমার সাথে কথা বলেছে। কিন্তু আমিও ভাবছি হঠাৎ কি হয়েছে ভাইয়ার যে আপনাকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছে আর এখন পর্যন্ত কোথায় কি অবস্থায় আছে তা কেউ জানতে পারছে না!
আমার কথা শেষ করে সাদা বিলাইয়ের পানে দৃষ্টিপাত করলাম। সাদা বিলাই যে আমার কথার মানে বুঝতে পেরেছেন তা বুঝতে পারলাম। আমি আবারও বলে উঠলাম,
– আবরার ভাইয়ার খোঁজ করুন সাদা বিলাই! হয় ভাইয়া বড়ো বিপদে আছে নয়তো আশঙ্কায় আছে।
আমার কথার মাঝেই সাদা বিলাইয়ের মুঠোফোন বেজে উঠে। কিছুক্ষণ কথা বলার পর সাদা বিলাই আমাকে তাড়া দিয়ে বলে,
– শুভ্রপরী, ঝটপট দৈনিক কাজটা সেড়ে ফেলো তো! আমাকে আর্জেন্ট অফিসে যেতে হবে।
সাদা বিলাইয়ের কথায় কটমট চোখে তাকিয়ে রইলাম। দৈনিক কাজটা যে কি তা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আজ তা আমি করব না। যতই জোড় করুক না কেন। সাদা বিলাইয়েরকাছ থেকে উঠে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। যেচেই যে আমি বাঘের গুহায় ঢুকে পড়েছি বুঝতে পারছি। আমার পরিকল্পনার উপর এক বালতি পানি ঢেলে সাদা বিলাই আমার গালে নিজের অধর ছুঁয়ে দিল। সাদা বিলাইয়ের এহেন কান্ডে আমি বরফের ভত জমে গিয়েছি। আমার অবস্থা দেখে সাদা বিলাই নাকে আলতো কামড় খেয়ে বলল,
– আমার স্পর্শে’ই তোমার চঞ্চলতার ঔষধ নয়তো টিকটিকির মতো তো এখানে সেখানে দৌঁড়াতে থাকো।
সাদা বিলাইয়ের কথায় পিটপিট চোখে তাকিয়ে রইলাম। আমার তাকানো দেখে জরিয়ে ধরে আদুরে কন্ঠস্বরে বলল,
– উফ আমার শুভ্রপরী, এভাবে তাকিয়ে থেকো না তো! মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোমাকে লুচির পরোটার মত টুপ করে খেয়ে ফেলি।
———
সাদা বিলাই চলে যেতেই নিচে নেমে আসলাম। বাবা বসে বসে বিয়ের লিস্ট করছেন। মা রান্না ঘরে আর হামি এই রাত বিরাতে বল ব্যাট হাতে নিয়ে একা একাই ক্রিকেট খেলছে। লিজা আর লিজার মা আমার পিছু পিছু নিচে নেমে এসেছে। আমি বাবার পাশে বসলাম। আমার বা দেখে বাবা হাসিমুখে বললেন,
– তুবা মা, দেখতো এখানে কি কি বাদ গিয়েছে? আমি চাই আমার ছেলে মেয়ের বিয়েতে সবকিছু পরিপূর্ণভাবে করতে যেন কেউ কোন ভুল ধরতে না পারে।
বাবার কথার প্রত্যুওরে কিছু বলছি না। কারন আমি রেগে আছি। প্রচুর রেগে আছি। তখন বাবা আমার পক্ষে ছিলো না তাই রেগে আছি। আমার কোন হেলদোল না দেখে বাবা অসহায় কন্ঠস্বরে বলল,
– তোর ভালোর জন্যই তো আমি এমন সিদ্ধান্ত নিলাম। যেন তোর উপর কেউ আঙ্গুল তুলে কথা বলতে না পারে। আর তুইও যেন এই বুড়ো বাবাকে ছেড়ে যেতে না পারিস।
বাবার কথার মাঝেই লিজা পিজ্জার মা বলে উঠে,
– ভাই সাহেব, আপনার ছেলে যেমন মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে! দেখবেন, দুইদিন পর পরই চলে যাচ্ছে। আর আজকালকার মেয়েরা তো মিনিটে মিনিটে ছেলে পাল্টায়। কখন বা কবে যেন কোন ছেলের সাথে চলে যায়।
লিজার মায়ের কথায় বাবা অসন্তুষ্টি হলেন। কঠিন স্বরে বললেন,
– আমার ছেলের বউয়ের ব্যাপারে আপনার নাক গলাতে হবে না। আমার ছেলের বউ যেমন আছে তেমনি আমরা গ্রহণ করে নেবো। আর রইলো এক ছেলে থেকে অন্য ছেলে ধরার কথা! তা আপনার মেয়ে ধরবে। আমার মেয়ের সম্পর্কে ভবিষ্যতে এমন কথা বলার আগে দশবার ভেবে বলবেন যে কার সামনে আপনি কথা বলছেন। এই আশিকুর রহমানের মেয়েকে কথা বলে কেউ পার পাবে না; মনে রাখবেন।
বাবার কথায় লিজার মায়ের মুখ চুপসে গেল। মিন মিন করে কিছু বলতে নিলে লিজা মায়ের হাত ধরে আটকে দেয়। আমি এতক্ষণ লিজা আর তাঁর মায়ের কার্যকলাপ দেখছিলাম। নিশ্চয় এই দুই কালা বিলাই ভিতরে ভিতরে আমাদের অগোচরে কিছু করে যাচ্ছে যা আমরা টের পাচ্ছি না। যাই করুক না কেন এই তুবা বের করেই ছাড়বে।
————
অন্ধকার পরিত্যক্ত গোডাউনে বিশ থেকে ত্রিশজন মানবেরা আলোচনা করে যাচ্ছে। তাদের দলের তিনজন প্রধান আর বাকি সব এই তিনজনের আদেশ পালন করে সদা। তিনজন প্রধানদের মধ্যে সামাদ লোকটি বলে উঠলো,
– এইবার আর আগের মত ভুল করব না। পনেরো বছর আগে করা ভুল এইবার যেন না হয় আলফাজ।
আলফাজ নামক লোকটি সিগারেটের ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে সামাদের উদ্দেশ্যে বলল,
– গতবার ঐ পুলিশের জন্যই তো আমাদের সব প্ল্যান বিফলে গিয়েছিল। এজন্যই ঐ পুলিশ সহ ছেলে-মেয়ের জীবন নিয়েছিলাম সেদিন। কিন্তু এবার একদম সবকিছু প্ল্যান করেই আসছি।
– যাই বলিশ আলফাজ এবার আমাদের’ই জয় হবে। এই মাসুদ এবার স্বয়ং এসেছে এ দেশে। ধামাকা হবেই হবে।
তিনজন লোক তাদের পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে গেল। এদের আগমনে যে খারাপ কিছু ঘটবে তা বুঝা যাচ্ছে।
———–
রাত এগারোটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিটে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মিনি সাদা বিলাই। রাতে খাবারের পর সাদা বিলাই ফোন দিয়ে বলছে যে সে আজ আর আসতে পারবে না। অফিসে অনেক প্রেসার। সাদা বিলাই আজ আসবে না শুনে মনটা খানিক খারাপ হয়ে গেল। কি আর করার মার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু হামি এসে আমাকে ঘুম থেকে টেনে উঠিয়ে ছাদে নিয়ে যাচ্ছে। সে নাকি আজ রাতের তারা দেখবে। ঘুম ঘুম চোখে এগিয়ে যাচ্ছি। বলি কি এই মধ্যরাতে কেউ কি ছাদে আসে! আকাশের তারা দেখতে? মাকে বা বাবাকে নিয়ে আসতো না সে আমাকেই নিয়ে আসবে।
ছাদে এসে আমার সমস্ত ঘুম উধাও। কি চেহারা করেছে ছাদের! নিচে সাদা কার্পেট বিছানো লাল নীল লাইটের আলোতে মোহনীয় লাগছে। ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যাই। সাদা কর্পেটের উপর হরেক রঙের বেলুন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বেলুনগুলোর মাঝখানে কয়েকটা লাভ সেটের বেলুন আছে। যা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। এতখুশি আমার লাগছে ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে বেলুনগুলো উড়িয়ে দিতে। কেননা সবকিছু এত সুন্দর সাজানো-গোছানো যে কেউ দেখলে পাগল হয়ে যাবে।
দৌঁড়ে বেলুনের দিকে গিয়ে দুইটা করে বেলুন ফুটাতে শুরু করলাম। এটা আমার অভ্যাস। বেলুন ফুটানো ভালো লাগে। আচমকা আকাশে আলো দেখে তাকিয়ে দেখি আকাশে হরেক রঙের ফানুস উড়ছে। আর আতসবাজি ফুটছে এসবকিছু দেখে দেখে আনমনে হেসে যাচ্ছি।
হঠাৎ কারও উষ্ণ নিঃশ্বাস কানের কাছে পাওয়ায় বরফ জমে গেলাম। এই নিঃশ্বাস একজনের’ই আমি জানি এবং আমার এত কাছে এই একজন’ই আসার সাহস রাখে। পেছনের মানুষটি কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলছে,
– শুভ জন্মদিন শুভ্রপরী। শুভ জন্মদিন আমার ভালোবাসা। অনেক অনেক ধন্যবাদ শাশুড়ি মাকে আজকের এই দিনে আমার শুভ্রপরীকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য। সব সময় হাসি খুশি থাকো এই প্রার্থনা করি। আর আমার সকল অত্যাচার এমনই চুপচাপ গ্রহণ করবে এই আশা রাখি। কি বলো শুভ্রপরী, আমার সকল ভালোবাসাময় অত্যাচার সহ্য করবে তো?
সাদা বিলাইয়ের কথা শুনে কান, নাক, মুখ মাথা সব গরম হয়ে যাচ্ছে। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। আজ আমার জন্মদিন আমার মনে ছিল কিন্তু কাউকে বলিনি। কারণ, বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে এই দিনটি পালন করিনি কোনোদিনও।
আমার ভাবনার মাঝে সকলের একসাথে কন্ঠ শুনতে পেলাম। সবাই আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। সকলের দিকে তাকিয়ে দেখি হামি, বাবা-মা, আমার মা, লিজা এবং লিজার মা সকালে এখানে উপস্থিত।
আমার মাকে দেখে কান্না করে দেই। কেননা আমার মা একমাত্র জানে এই দিন আমি কেন পালন করিনা। এই দিনটা আমার কাছে খুবই কষ্টের দিন। আমার জন্মদিনের কয়েকদিন পরেই তো বাবা আর ভাইয়া আপুকে তারা মেরে ফেলা হয়েছিল।
কখনো কি শুনেছেন নিজের জন্মদিনে ঘুম ঘুম চোখে যে কাপড় পরিহিত ছিল ওই কাপড়ে কেক কাঁটতে? আমি কাঁটছি। কারণ আমার শ্বশুর বাড়ির সকলের নাকি অনেক ঘুম আসছে। আমাকে খাইয়ে তারা ঘুমাতে চলে যাবে। কি আর করার! কেক কেঁটে সকলকে খাইয়ে গিফট আদান-প্রদান করে সকলেই চলে গেল ঘুমাতে। বর্তমানে ছাদে রয়ে গেলাম আমি আর আমার সাদা বিলাই। সাদা বিলাই কেমন ঘোর লাগা চোখে আমার পানে তাকিয়ে আছে আর তা দেখে আমি লজ্জায় নুয়ে যাচ্ছি বারবার।
সাতই আমার কাছে এসে দুই গালে হাত দিয়ে কপালে অধর ছুয়ে দিলেন। আমার পানে কতক্ষণ গভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে বললেন,
– মাশাল্লাহ আমার ঘুমন্ত পরী, আমার শুভ্রপরী, কারোর নজর যেন না লাগে তোমার উপর এই দোয়া করি। তোমার সব রূপে আমি মুগ্ধ হই। এই যে এখন ঘুম ঘুম চোখ মুখে ক্লান্তির ভাব দেখে পাগল হয়ে যাচ্ছি ইচ্ছে করছে টুপ করে কামড়ে খেয়ে ফেলি।
সাদা বিলাইয়ের একেক কথায় লজ্জায় লাল নীল রং ধারন করছে আমার চেহারায়। আজ যেন মুখের কথা হারিয়ে ফেলেছি আমি। সাদা বিলাইয়ের সামনে কিছুই বলতে পারছি না। আমার এই অবস্থা দেখে সাদা বিলাই শুধু কিটকিটিয়ে হাসে। আমাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় সাদা বিলাই আমার হাতে সোনার একটা আংটি পরিয়ে দেয়। খুব সুন্দর আংটি। আমাকে এক মিনিটের কথা বলে সাদা বিলাই কোথায় যেন চলে গেল। আর আমিও কিছুক্ষনের আগের কথা মনে করতে থাকছি ছাদের রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
ঠান্ডা বাতাস বইছে ছাদে। এই শীতের মধ্যে শীতের কাপড় ছাড়া দাঁড়িয়ে আছি। ঘুম থেকে উঠেছি বিধায় শীতের কোনো পোশাক পড়ে আসেনি। উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করছি যেন আমার সাদা বিলাই সব সময় এমনই থাকে। আরআমাকে খুব ভালোবাসে।
আমার ভাবনার মাঝেই আচমকা কেউ আমাকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেওয়ায় তাল সামলাতে না পেরে রেলিং এর ভর দিয়ে দাঁড়াই। পিছনে ফিরে তাকাবো কাঙ্খিত মানুষটিকে দেখার উদ্দেশ্যে কিন্তু তার সুযোগ হলো না। ধাক্কা দেয়া ব্যক্তিটি আবারো ধাক্কা দিয়ে আমাকে নিচে ফেলে দিল।
গালে তরল কিছু অনুভব করায় বুঝতে পারলাম গালের একাংশ পাথরের উপর পড়ে পুরোই থেঁতলে গিয়েছে। আর তরলজাতীয় পদার্থ হচ্ছে রক্ত । উপর থেকে সাদা বিলাই আয়মান বলে চিল্লিয়ে যাচ্ছে। এদিকে আমার অশ্রু ঝরে যাচ্ছে অনবরত। কোথায় ভেবেছিলাম, সাদা বিলাইয়ের সাথে সুখে শান্তিতে সংসার করব তা আর হয়ে উঠলো না। কিছুক্ষণ আগে সাদা বিলাইয়ের পরিয়ে দেয়া আংটিটির দিকে নজর দিলাম যা লাইটের আলোতে ঝলমল করছে। চোখ বন্ধ করে সাদাবিলাইয়ের সাথে কাটানো মুহূর্ত মনে করে আস্তে আস্তে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলাম। আমি জানি এরাজ্য থেকে আমি আর কখনো ফিরে আসব না। আমার সাথে আর কখনও সাদা বিলাইয়ের দেখা হবে না।
” প্রিয়জনের ভালোবাসায় রাঙাতে পারে যে জন,
পৃথিবীতে সর্বসুখি হবে সে জন।”
চলবে………
[