প্রণয়িনী পর্ব -২৫ ও শেষ

#প্রণয়িনী
#আফসানা_মিমি
|সমাপ্তি পর্ব |

– এই সিরিয়াস সময়েও তোমার উদ্ভট কথাবার্তা বলতে হবে? তুমি জানো! আমাদের অবস্থা কেমন হয়েছিল? তা জানবে কীভাবে! মাথায় তো শুধু দুষ্টুমি ঘুরে সর্বক্ষণ।

সাদা বিলাইয়ের বকা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। আসলে কয়েকঘন্টা চিন্তা করতে করতে পাগল হয়ে গিয়েছি। আহাদ এতক্ষণ আমাদের দেখছিল। আমার ছন্দ শুনে আহাদ ফিক করে হেসে উঠে।

– আপা, আপনি খুব সুন্দর ছন্দ বলতে পারেন। আমার উদ্দেশ্যেও কিছু বলুন!

আহাদের কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে সাদা বিলাইয়ের পানে তাকালাম। সাদা বিলাই আমার চাহনি দেখে কপাল চাপড়ে বাহিরে চলে গেল পুলিশের সঙ্গে কথা বলবে বলে।

সাদা বিলাই যাওয়াতে আহাদের দিকে তাকিয়ে দেখি কৌতূহলী দৃষ্টিতে আমার পানে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আপাতত আমার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। কারন হামিদার মৃত্যুর কথা মনে পড়েছে। আমার জন্য মেয়েটাকে জীবন দিতে হয়েছে। সারা জীবন ঋনী হয়ে থাকব এই মেয়ের কাছে। আহাদকে কিছু না বলে চলে আসলাম

আমার বাবা, ভাই ও আপুর কবরের পাশেই হামিদাকে কবর দেয়া হয়েছে। হামিদার এমন করুণ কাহিনী শুনে সকলে কান্না করেছেন। আমার মা তো হামিদার জন্য দোয়া-দরুদ কুরআন খতম করেছেন। আমার মায়ের কথা, হামিদার জানের ওসিলায় আমাকে নাকি মা ফিরে পেয়েছেন।

সেদিনের ঘটনার আজ প্রায় এক মাস পার হয়ে গিয়েছে। আহাদের ছয় মাসের জেল হয়েছে। এরমধ্যে আমার পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস না পেলেও পাস করেছি মান-সম্মানের ডুবাই নি সাদা বিলাইয়ের।
সকাল থেকে মন খারাপ। মন খারাপের একটা কারণ, সাদা বিলাই দুইদিনের জন্য বিদেশ চলে যাবে। সাদা বিলাই যখনই আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায় তখন একটা না একটা বিপদ আসে। আমার শাশুড়ি মা অনেকবার নিষেধ করেছেন সাদা বিলাইকে এখন কোথাও না যেতে। কিন্তু সাদা বিলাই তো সাদা বিলাই। কারোর কথা শুনতে নারাজ সে। তার কাছে বউ একপাশে তো কাজ একপাপাশে। কাজ না করলে বউ বাচ্চাকে খাওয়াবে কি!

আমাকে চার দেয়ালের মাঝখানে বন্দি করে রেখে চলে যাবে সাদা বিলাই আর রেখে যাবে দশকের মত দেহরক্ষী বাড়ির আশেপাশে। সাদা বিলাইয়ের স্পেশাল দেহরক্ষী তো আছেই সেই ফোকলা দাঁত ওয়ালা মাসুদ বেটা। যে কিনা আমাকে কিডন্যাপ করে কাজী অফিস পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল!

ঘরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দৌঁড়াচ্ছি। বলতে গেলে পায়চারি করছি আর কি। অপেক্ষা করছি সাদা বিলাইয়ের। সাদা বিলাই একটু পর চলে যাবে। আমি চাচ্ছি যেন সে না যাক। এজন্য চিন্তা করছি যে কি করতে পারি। কি এমন করলে সাদা বিলাইকে আটকানো যাবে! কিন্তু মাথায় কিছুই আসছে না। কথায় আছে না! দরকারের সময় মাথার মগজ ফাঁকা হয়ে যায়! আমার অবস্থা এমন এখন। মাথায় কোন বুদ্ধি আসছে না। আরে সুবুদ্ধি হোক বা কুবুদ্ধি হোক। একটা বুদ্ধি তো আসবে! কিন্তু কোনো বুদ্ধি আসছে না।
আমার এখন ইচ্ছে করছে দেয়ালের সাথে মাথা ঠুস মারতে যেন মাথা দুই খন্ড হয়ে যায়। আর মগজ বের করে দেখতে পারি। মগজে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে যেন আবার মগজের তার কেঁটেকুটে আবার ঠিক করতে পারি।

দেয়ালের সাথে মাথা ঠুক ঠুক করে আঘাত করে যাচ্ছি আর চিন্তা করছি কি করব। এমন সময় ঘরে সাদা বিলাইয়ের আগমন ঘটে,
আমার এই অবস্থা দেখে বিচলিত কণ্ঠস্বরে বলে,

– আরে কি করছো! এমন এভাবে নিজের মাথায় নিজে আঘাত করছো কেন? এমনিতেই তোমার মাথায় সমস্যা এখন আবার নিজের মাথা নিজে আঘাত করলে তো আরো সমস্যা হবে!

– আমার মাথার সমস্যা মানে! এই মাথায় সমস্যা মানে আপনি কি বোঝাচ্ছেন? হ্যাঁ! আমি পাগল? আমি নির্বোধ! কিছু বুঝিনা আমি? কিন্তু আমি সব বুঝি। বিদেশে কেন যাচ্ছেন তাও বুঝতে পারছি। ও আচ্ছা! বিদেশে গিয়ে বিদেশীদের সাথে লাইন মারতে হবে না! এজন্য যাচ্ছেন বুঝি?

আমার কথা শুনে সাদা বিলাই গোল গোল করে তাকিয়ে রইলো। সাদা বিলাইয়ের এখন হয়তো বোধগম্য হচ্ছে না আমার এমন রুপ দেখে।

– এই আয়মান, উল্টা পাল্টা কিছু খেয়েছো নাকি! এমন করছো কেন? উল্টাপাল্টা বকছো কেন? জ্বর এসেছে? নাকি ঠান্ডা লেগেছে। ডাক্তার ডাকবো, মাথা ব্যথা করছে সোনা?

সাদা বিলাইয়ের চিন্তা মার্কা কথা শুনে ইচ্ছে হচ্ছে কচু গাছের সাথে ফাঁসি দেই। সবকিছু সিরিয়াস ভাবে নেয় এই ছেলেটা। বউয়ের আদর সোহাগ ভালোবাসা বুঝে না কি এই সাদা বিলাই? আমি এমন করছি কেন বুঝতে পারছে না? আরে জামাই যেন আমার কাছ থেকে দূরে সরে না যায়। এটাও বুঝতে পারছে না গাধাটা।

সাদা বিলাই দরকারি কাগজপত্র ব্যাগের ভিতর ভরছে। আমার মন সায় দিচ্ছে না সাদা বিলাইকে ছাড়তে। অবশেষে যখন সাদা বিলাই আমার কপালে অধর ছুঁয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে তখনি আমি বলে উঠলাম,

” বিদেশ গিয়া জামাই,
তুমি আমায় ভুইলো না!
চিঠি দিও পত্র দিও
জানাইও ঠিকানা।
ও জামাই জানাইও ঠিকানা। ”

আমার গান শুনে সাদা বিলাই হাসতে হাসতে বসে পড়েছে। সাদা বিলাই হুট করে আমার কাছে এসে সরাসরি সাদা বিলাইয়ের কাঁধে তুলে নেয়। তিন থেকে চারবার চক্কর লাগানোর পর যখন আমাকে নিচে নামিয় দেয়। আমার সাথে সাথে পুরো দুনিয়া ঘুরছে। সাদা বিলাইকে তিন ডাবল মনে হচ্ছে চোখের সামনে। আমার এমন জোকারের মত অবস্থা দেখে সাদা বিলাই আমার কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,

– একদম দুষ্টুমি করবে না। বড়ো হয়েছো তুমি।

সাদা বিলাইয়ের কথায় আর কিছু বললাম না। আমিও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আমার সাদা বিলাইকে।

———-

পাঁচ মাস পর,
আগামীকাল আমাদের চতুর্থতম বিবাহ বার্ষিকী সাথে আমাদের রিসেপশন। কখনও কি শুনেছেন! বিয়ের চার বছর পর রিসেপশন হতে? আমাদের হচ্ছে। বিয়র পর থেকে একটা না একটা ঝামেলায় জড়িয়ে যাচ্ছিলাম তাই এর মধ্যে রিসেপশন করা হয়নি। অনেকবার সাদা বিলাইকে না করেছিলাম রিসেপশন না করতে। কিন্তু না, সে রিসেপশন করে ছাড়বে। সাদা বিলাই সকাল থেকে চিল্লিয়ে যাচ্ছেন রিসিপশনের সাথে সাথে সারপ্রাইজ আছে এই বলে। আচ্ছা আপনারাই বলুন সারপ্রাইজ যদি কেউ দেয় তাহলে কি বলে বলে দেয়! আমি এই প্রথম আমার সাদা বিলাইকে দেখলাম যে, সে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলে বেড়াচ্ছে সারপ্রাইজ দিবে।

সাদা বিলাইয়ের সারপ্রাইজ সাদা বিলের কাছে। কিন্তু আমার কাছে যেই সংবাদ আছে তা শুনলে সাদা বিলাই খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।

সাদা বিলাই আমাকে গোলাপি বেনারসি শাড়ি উপহার দিয়েছেন আজকের দিনটার জন্য। এই রংটা আমার খুব প্রিয়। গোলাপি শাড়ি পড়ে নিজেকে আজ গোলাপি রাণী সাজাবো এই ভেবে তৈরি হতে শুরু করলাম।

যথাসময়ে সাদা বিলাই হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করেন। আমাকে দেখে সাদা বিলাই হা করে তাকিয়ে থেকে বলেন,

– মাশাআল্লাহ, আমার সবুজ পরী। আমার গোলাপি পরী। একদম পুতুল বউ লাগছে। মনে হচ্ছে এই রংটা তোমার জন্যই। মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ কারোর নজর যেন না লাগে আমার গোলাপী পরীর উপর।

সাদা বিলাই এবার আমাকে তাগাদা দিয়ে বলতে শুরু করলেন,

– চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে। আজ কোন দুষ্টুমি করবে না। মনে থাকবে তো!

সাদা বিলাই আমাকে নিয়ে নিচে চলে আসলো। খুব সুন্দর করে আমাদের বাড়িটা সাজানো হয়েছে। সবাই বলাবলি করছে যে, সাদা বিলাই নাকি ইচ্ছে করে এখানে সব কিছুর অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন যেন আমার কোনো ক্ষতি না হোক এই ভেবে। গতবার আমার জন্মদিনে যে ক্ষতিটা হয়েছিল এবার যেন ওরকম কোন বিপদের মুখোমুখি হতে না হয় এজন্য এখানে আয়োজন করা।

যথারীতি সবাই আমাদের শুভেচ্ছা, স্বাগতম জানাচ্ছে। চতুর্থ বিবাহ বার্ষিকীর সাথে রিসেপশনের জন্য অনেকে খোঁচা দিচ্ছেন অনবরত। এত বছর পর এরকম রিলেশন করার জন্য। আমাদের আনন্দের মাঝে একজন নেই সে হচ্ছে আবরার ভাই। আবরার ভাই কোন কাজে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন কিন্তু কি কাজে গিয়েছেন তা আমাদের বলেনি। সাদা বেলায় গতকাল রাতে অনেক আফসোস করেছিল আবরার ভাইয়ের জন্য। ভিডিও কলে আমাদের অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। আবরার ভাই জানিয়েছে খুব দ্রুতই দেশে ফিরবেন তিনি এবং আমাদের সাথে অনেক মজা করবেন।

কয়েকজন মেহমানদের সাথে কথা বলছিলাম আমি আর সাদা বিলাই ঠিক তখনই সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন আবরার ভাই সাথে সুন্দর রমণীকে নিয়ে। আবরার ভাইয়ের মুখের হাসি যেন সরছেই না। পাশে থাকা রমণীর হাত শক্ত করে ধরে আমাদের পানে এগিয়ে এসে হাসিমুখে আমাদের উদ্দেশ্যে বললেন,

– এই দেখ রাদ, আমি আমার তুবাকে পেয়ে গিয়েছি। আর এই যে তুবা ভাবি। পরিচিত হন আমার তুবা। যার উছিলায় রাদ আপনাকে পেয়েছে।

আবরার ভাইয়ের কথায় আমি সকলের সামনে হাসতে শুরু করলাম। মানে লাইট সিরিয়াসলি! পুরা সিনেমার কাহিনী ঘটেছে দুই ভাইয়ের সাথে।

সাদা বিলাইয়ের পানে তাকিয়ে দেখি সাদা বিলাই মাথা চুলকে দাঁত কেলিয়ে আমার পানে তাকিয়ে আছেন। সাদা বিলাইয়ের তাকানো দেখে আমার শরীর জ্বলে গেল। কই চেয়েছিলাম ঘোড়ার গাড়ি চলে রাজপুত্রের সাথে বিয়ে হবে কিন্তু হলো কি একটা সাদা বিলাইয়ের সাথে। আমার চাহনি দেখে সাদা বিলাই আবরার ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলল,

– কিরে শা**, কিভাবে পেলি এই মেয়েকে? আমি তো এই মেয়ের সাথে কথাই বলব না। কত বড়ো সাহস এই মেয়ের! আমার ভাইকে কষ্ট দিয়েছে? আমি তোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েকে কোনদিনও ক্ষমা করব না।

– আরে ভাই বাদ দে তো! এখন তো সে তোর ভাবি হয়। ভাবির সাথে কথা বললে কিছু হবে না। আরেকটা সিক্রেট কথা শুন,

দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা হচ্ছিল কিন্তু হঠাৎই আবরার ভাই সাদা বিলাইয়ের কানে কানে কি যেন বললো তা শুনে সাদা বিলাই চিল্লিয়ে বলে উঠল,

-সত্যি!

সাদা বিলাইয়ের চিল্লানো শুনে আমার সামনে থাকা আমার জমজ নামের আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি, সে ও লাজুক রাঙ্গা হাসি দিচ্ছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। ব্যাপারটা কেমন যেন সন্দেহজনক মনে হলো। সাদা বিলাইয়ের হাতে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপারখানা কি? প্রত্যুওরে সাদা বিলাই প্রফুল্লময় হাসি হেসে উত্তর দিলো,

– আরে আয়মান, তুমি ভাবতে পারছো! আমি চাচা হবো। আমাকে কেউ চাচ্চু বলে ডাকবে। আহা আমার ভাই আমার আগে বাবা হয়ে যাবে।

সাথে বিয়ের কথা শুনে মুখ ভেংচি কেঁটে বললাম,

– এই যে আবরার ভাই শুনে রাখুন, আপনিও কিন্তু চাচা হবেন। আপনার এই ভাইকে বলে দিন খুব শীঘ্রই সেমি সাদা বিলাই আমাদের ঘরে আসতে চলেছে।

আমার কথা শুনে আবরার ভাই আর সাদা বিলাই চুপ হয়ে গেল। সাদা বিলাই প্রথমে ভেবেছিল আমি দুষ্টুমি করছি কিন্তু তাঁর ভাবনার উপর এক বালতি জল ফেলে আমার দুই মা শাশুড়ি বাবা আর হামি এসে আমাদের কাছে আসে। হামি সোনা আমার পেটে হাত বুলিয়ে বলতে শুরু করে,

– সত্যিই মিষ্টিপরী, আমাদের বাসায় ছোট বাবু আসবে? আমি খুব খুশি। সারাদিন বাবুর সাথে খেলতে পারব তাই না মিষ্টিপরী!

এদিকে আমার আমার শাশুড়ি মা আর মা দুজন আমাকে দুই পাশে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলেন,

– আমরা খুব খুশি মা! এমন একটা দিনে তুই আমাদের এমন একটা সংবাদ দিবি ভাবতেই পারিনি।

সাদা বিলাইয়ের পানে তাকিয়ে দেখি, সে এখনও হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে আছে আমার পানে। সাদা বিলাইয়ের চোখ দেখে বুঝতে পারছি এখনও সে বিশ্বাস করতে পারছে না যে, আমাদের ঘরে নতুন অতিথি আসবে।

————

বারান্দায় সাদা বিলাই আর আমি বসে আছি। সাদা বিলাই সেই প্রথম দিনের মত খালি গায়ে আমাকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। আর আমি সাদা বিলাইয়ের কোলে গুটিশুটি মেরে বসে সাদা বিলাইয়ের বুকে আঁকিবুকি করছি। আমার সাহস হচ্ছে না সাদা বিলাইয়ের পানে তাকানোর। সাদা বিলাইও কিছু বলছে না। হয়তো এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে সে বাবা হবে।
প্রায় দশ মিনিট এভাবে বসে থাকার পর সাদা বিলাই মুখ খুলেন।

– সত্যিই শুভপরী! আমাদের ভালোবাসার উপহার হিসেবে কেউ আসবে আমাদের কাছে? আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।

– বিশ্বাস করে নিন। এটাই সত্যি। প্রথমে ভেবেছিলাম আপনাকে একান্তে এই সুসংবাদ দিবো। কিন্তু পরে ভাবলাম, সবাই যদি একান্তে প্রিয়জনকে বলে তাহলে তুবা আর সবার মাঝখানে পার্থক্য কি রইলো? তাই হুট করে আপনাকে বলে ফেললাম। কি সারপ্রাইজ হননি?

আমার কথা শুনে সাদা বেলায় আমার কপালে গভীরভাবে অধর ছুঁয়ে বললেন,

– আমি খুব খুশি শুভ্রপরী, অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে; আমাকে এমন একটা খুশির সংবাদ দেয়ার জন্য। উপর ওয়ালার কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আমার শুভ্রপরীকে আমার জীবনে নিয়ে আসার জন্য। ভালোবাসি শুভ্রপরী।

সাদা বিলাইয়ের সাথে এইভাবে আমার সময় কাঁটতে লাগল। অন্যদের মত প্রেগনেন্সির সময় সাদা বিলাইকে একটুও জ্বালাই নি। কারন আমার দুই মা আমার পাশে ছিল। চব্বিশ ঘন্টা আমার কি প্রয়োজন সব খবর রাখতো। আর দুই সাদা বিলাই শুধু আমার দুই মায়ের কান্ড দেখত আর হিংসা করত।

প্রেগনেন্সির সময় এতো এতো ভালোবাসা পেয়েছি যা বলার মতো না। আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া আমার জীবনে হুট করে সাদা বিলাইয়ের আগমন ঘটনোর জন্য।

আমার প্রেগনেন্সির শেষ সপ্তাহ চলছে। ডাক্তার বলছে আমার সবকিছু ঠিক আছে। সাদা বিলাই শুধু পারেনি ডাক্তারের বাড়িতে আমার বসত গড়ে তুলতে। বমি হলে ডাক্তারকে ফোন দেওয়া শুরু করত। আবার যদি ঘন ঘন ওয়াশরুমে যেতাম তাহলেও ডাক্তারকে ফোন দেওয়া শুরু করত। সাদা বিলাইয়ের এমন কাণ্ড দেখে আমরা বসে কপাল চাপড়াতাম।

আমাদের অবস্থা থেকে সাদা বিলাই বলতো,

– পাঁচটা না, দশটা না একটা মাত্র বউ আমার। ওঁকে যদি পিঁপড়ে ও কামড় দেয় তাহলে কষ্ট লাগবেআমার বুকে।

———-

হাসপাতালে কেবিনের মধ্যে বিছানার উপর বসে পা নাড়াচ্ছি। এই কয়েকমাসে আমার পেট ফুলে উঁচু হয়ে আছে তার দিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। আমি আমার মত পা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার এই অবস্থা দেখে সাদা বিলাই কয়েকবার আমাকে ধমকিয়েছেন। এই অবস্থা এত নাড়াচাড়া করা ঠিক না। কিন্তু কে শুনে কার কথা! আমি তো আমিই।

অবশেষে আমাকে নিয়ে ও.টি তে নিয়ে যাওয়া হয়।ও.টি তে ঢোকার আগ মুহূর্তে সাদা বিলাইকে বলে এসেছি, বের হয়ে যদি আমার চোখের সামনে সাদা বিলাইকে না পাই তাহলে ঘাড় মটকে খাবো। আমার কথা শুনে সাদা বিলাই দুঃখের মধ্যেও হেসে উঠে। “যথা আজ্ঞা মহারানী” বলে কপালে অধর ছুঁয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। এক হাতে স্যালাইন চলছে অন্য হাতে প্রেসার মাপা হচ্ছিল। আমার মাথার কাছে একজন ডাক্তার মিষ্টি কন্ঠে আমার সাথে কথা বলছিল। এর মাঝেই অন্য ডাক্তার তাদের কাজ সেরে ফেলেছে। বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম,

– ডাক্তার আমার কি হয়েছে গো? সেমি সাদা বিলাই নাকি বিলাইনি হয়েছে?

আমার কথা শুনে ডাক্তার কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। পাশ থেকে নার্স বলে উঠে,

– আপনার ছেলে হয়েছে ম্যাডাম।

ছেলের কথা শুনে আলহামদুলিল্লাহ বললাম। ছেলের কপালে চুমু এঁকে চোখ বন্ধ করে রইলাম চোখ বন্ধ করে। আমার চোখ বেয়ে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। এটা সুখের অশ্রু।

——-

– আরে বাবা, থাম এবার! আর কতো! এই আয়মান, দেখো তোমার ছেলে আমার প্যান্টে হিসু করতে করতে আর জায়গা বাদ রাখেনি। কি করছো তুমি?

শাশুড়ি মায়ের কাছে আমার মাথার চুলে তেল মালিশ করতে গিয়েছিলাম। এই দশমিনিট হয়েছে! এরমধ্যে আমার দুষ্ট কার্বন কপি বাবাকে জ্বালিয়ে শেষ।
সাদা বিলাইয়ের হাত থেকে বাবুকে নিয়ে ফ্রেস করিয়ে দিলাম। সারা গরে হাঁটছি আর কথা বলছি বাবুর সাথে,

– কি হয়েছে আমার সেমি সাদা বিলাইয়ের? সাদা বিলাইকে বুঝি ভিজিয়ে দিয়েছো! একদম ঠিক কাজ করেছো। তোমার দাদা ভাই আছে না! ঐ যে ভুঁড়ি ওয়ালা চকচকে টাক মাথা! তাঁকেও জ্বালাবে বুঝলে! তাড়াতাড়ি বড়ো হও তো! দুজন মিলে সবাইকে জ্বালাবো না!

আমার কথা শুনে সাদা বিলাই তেড়ে এসে বাবুর সহিত কথা বলছে,

– একদম না! আমার ছেলেটা এমন উদ্ভট কাজ করবেই না তাঁর মায়ের মত!
– যদি করে তো!
– তাহলে আর কি! দুই দুষ্টের সাথে বসবাস করব আমি।

সাদা বিলাইয়ের কথা শুনে সেমি সাদা বিলাইকে নিয়ে বিছানায় বসতে বসতে প্রশ্ন করলাম,

– আচ্ছা! সেমি সাদা বিলাইয়ের নাম কি রাখবো?

আমার কথা শুনে সাদা বিলাই মুচকি হেসে উউর দেয়,

– তা পাঠকদের উপরই ছেড়ে দাও!

কি বলেন আপনারা! কি নাম রাখবেন সেমি সাদা বিলাইয়ের?

সমাপ্ত

[।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here