প্রণয়ের আসক্তি পর্ব -০৮

#প্রণয়ের_আসক্তি
৮.(বোনাস পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

‘নিজের স্বামি কে অন্যর দিকে এগিয়ে দেওয়ার মতো বোকামি করতে প্রথম তোমাকেই দেখলাম। মৃথিলার দিকে খানিক টা ঝুঁকে গিয়ে বললো নিরব।’

‘মৃথিলা অবাক হয়ে বললো,আপনি এসব কি বলছেন আমাদের কি সেই সম্পর্ক নাকি।আপনি আপুকে ভালবাসেন আমি তো সেটাই জানি।’

‘হারামে আরাম নেই তুমি জানোনা।হালাল রেখে হারাম খেয়ে বদ হজম করতে চাই না আমি।’

‘মানে?’

‘সামনে বিরিয়ানি রাখা আমাকে তুমি বলছো চারমাস আগের বাসি পান্তা ভাত খেতে।’

‘এই আপনি এসব কি বলছেন শুনি।কিসের বিরিয়ানি কিসের পান্তা।আপনি না বললেন আপু আপনার হিয়ার মাঝে আছে তাকে কখনো ভুলতে পারবেন না।’

‘উম জেলাস ফিল হয়েছিলো তোমার তাইনা?’

‘মোটেও না। আমি জানি আমাদের সম্পর্ক এমনি কোনো মানে নেই।তা জেলাস ফিল করবো কেনো?তাছাড়া আমার আপু আমাকে ভীষণ ভালবাসে তাকে আমি কষ্ট দিবো না কখনো।’

‘তাই।জেলাস ফিল হচ্ছিলো না। এই সম্পর্কের কোনো দাম নেই তাইতো।বলেই বেডের সাইডে রাখা মৃথিলার আনা গোলাপ টা নিরব মৃথিলার সামনে ধরে বললো তাহলে এটা এনেছো কেনো আমার জন্য।লাল গোলাপ মানুষ কেনো দেয় আমি কি বুঝি না।ফুল মানুষ একমাত্র প্রিয়জনদের জন্য কিনে আমি সেটা জানি।নিশ্চয়ই আমিও তোমার প্রিয়জন।’

‘আমি কি বলেছি ওটা আপনার জন্য এনেছি।’

‘তাহলে কি এই রুমে সুবাস ছড়াতে এনেছো।আমি তখন ই বুঝেছিলাম এটা আমার জন্য।সময় থাকতে প্রিয়জন কে আগলে রাখতে শিখো। জীবনে সব কিছুতে স্যাক্রিফাইস করে মহান হয়ে লাভ নেই।লাইফের গুরুত্বপূর্ণ অংশ গুলো কে আঁকড়ে ধরতে হয়।যেটা মনে মনে চাই সেটা মুখে প্রকাশ করাই উত্তম।বুঝেছো বালিকা।’

মৃথিলার মনের কথা নিরব কিভাবে বুঝলো মৃথিলা সেটাই ভাবছে।নিরব ই বা হঠাত এমন বিহ্যাভ করছে কেনো মৃথিলা কিছুই বুঝতে পারছে না।নিজেকে নিজে চিমটি কেটে দেখলো সত্যি না স্বপ্ন ছিলো।

নিরব মনে মনে বলছে এইতো মৃথিলা আস্তে আস্তে কথা বলা শিখছে।এভাবেই মৃথিলাকে ডিপ্রেশন থেকে বের করতে হবে।মৃথিলাকে এভাবেই কথা বলাতে হবে।

নিরব ফোনটা নিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো তার কাজের জন্য।ল্যাপটপে ভীষণ মনোযোগ নিরবের।মৃথিলা কিচেনে জিনিস পত্র গুলো সাজাচ্ছে।প্রায় এক ঘন্টা মৃথিলা ঘর গোছালো।ঘর, আর কিচেন পরিপাটি করে সাজিয়েছে।কোমরে ওড়না বেঁধে ভীষণ ভাবে কাজে মনোযোগ মৃথিলার।কপালে ঘাম জমেছে ফোঁটা ফোঁটা।নিরব আড়চোখে তাকিয়ে দেখে মৃথিলাকে বেশ প্রাণবন্ত লাগছে আজ।নিজের সংসার গোছাতে বোধহয় সব মেয়ের ই এমন ভাল লাগে।নিরব ল্যাপটপ টা রেখে কিচেনে প্রবেশ করলো চারদিক তাকিয়ে দেখে বললো বাহ খুব গোছালো মেয়েতো তুমি।এত সুন্দর করে গুছিয়ে ফেলেছো।

‘মৃথিলা বললো পছন্দ হয়েছে আপনার?’

‘নিরব বললো ভীষণ পছন্দ হয়েছে।’

‘কিছু খুজছেন?’

‘হ্যাঁ বাজার থেকে যে কফি এনেছিলাম ওটাই খুজছি।মাথা ধরেছে একটা ব্লাক কফি খাবো।’

‘আমি কিন্তু ভাল কফি বানাতে পারি।আমি বানিয়ে দেই।এক কাপ কফি খেয়ে দেখুন। ভাল না লাগলে আর খাওয়া লাগবে না।’

কোনো মেয়ে সত্যি ইনোসেন্ট না হলে এটা কফি খাওয়ানোর জন্য এত রিকুয়েষ্ট করে।নিরব হেসে দিয়ে বললো খুব বিশ্রি কফি বানালেও আমি তৃপ্তির সাথে খাবো।আমি তো ভাবতেই পারছি না এমন সুন্দর একটা অফার পাবো।তোমাকে কষ্ট দিতে খারাপ লাগছে কিন্তু তোমার হাতের কফি খাওয়ার সুযোগ ও হাত ছাড়া করতে চাই না।তাতে তোমার একটু কষ্ট হলে হোক।

মৃথিলা ভীষন আনন্দ আর যত্নের সাথে নিরবের জন্য কফি বানালো।
ধোয়া ওড়া কফির মগ নিরবের হাতে দিয়ে বললো খেয়ে দেখুন না কেমন হয়েছে।

-নিরব মগে চুমুক দিয়ে বললো বিলিভ মি এত সুন্দর কফি এই প্রথমবার খাচ্ছি।

-আসলেই কি সুন্দর নাকি আমার মন রাখতে।

-আসলেই সুন্দর। ঠিক তোমার ই মতো।

-মৃথিলা এক গাল হেসে দিলো।

এই প্রথম নিরব মৃথিলাকে হাসতে দেখলো।মৃথিলা হাসলে এত টা মিষ্টি লাগে নিরব আগে বুঝে নি।মৃথিলার হাসির প্রেমে পড়ে গেলো।

নিরব আর মৃথিলা নিচে আলতাফ আহমেদ এর রুমে গেলো।তারা অনেক অনুরোধ করে গিয়েছে তাদের রুমে যেনো ওরা বেড়াতে যায়।মৃথিলা আর নিরব আলতাফ আহমেদ এর রুমে বসে আছে।উনারা দুজন নিরব -মৃথিলার সাথে গল্প করছে।এমন সময় মৃথিলা বললো আপনারা কি একাই থাকেন আপনাদের কোনো ছেলে মেয়ে নেই।

শিরিন আহমেদ বললো ওইযে ওয়ালে একটা ছবি দেখছো আমার চোখের মনি ছিলো।এক বছর বয়সে ট্রেন এক্সিডেন্ট এ হারিয়ে যায়।সেই এক্সিডেন্ট এ আমার ছেলে আর বৌমা মারা যায়।ছবিটির দিকে মৃথিলা আর নিরব খানিক সময় তাকিয়ে থেকে বললো বাচ্চাটাও মারা গেছিলো।

শিরিন আহমেদ বললো জানিনা কিছুই।কারো লাশ আমরা পাই নি।শুনেছি মারা গিয়েছি।সেখান থেকে আজ ও অস্বাভাবিক আমরা।বেঁচে আছি কেনো সেটাও জানিনা।সন্তানের মৃত্যু যেনো কোনো মা বাবা না দেখে। এর থেকে ভয়ানক কষ্ট পৃথিবীতে নেই।দুজনেই কাঁদছে তারা।মৃথিলার চোখ দিয়ে ও পানি পড়ে গেলো।নিরব মৃথিলা দুজনেই বোঝাচ্ছে তাদের।

উনাদের রুম থেকে আসার পর থেকেই মৃথিলার ভীষণ মন খারাপ।মানুষের জীবনে কত কষ্ট।ওই দুটো বৃদ্ধ মানুষের কষ্টের কাছে মৃথিলার কষ্ট কিছুই না।মৃথিলার তো পরিবার আছে আর ওদের পরিবার টাই শেষ হয়ে গিয়েছে।প্রেসার কুকারে খিচুড়ি চড়িয়ে মৃথিলা ভেবেই যাচ্ছে।

ঘড়িতে রাত প্রায় এগারো টা বাজে।নিরব ল্যাপটপে কাজ করেই যাচ্ছে।মৃথিলার একা একা ভাল লাগছে না।কিভাবে সময় কাটাবে সে।বাবাকে ভীষণ মিস করছে সে।নিরবের কাছে বসে বললো আমি একটু বাবার সাথে কথা বলবো।নিরব ল্যাপটপ চেপেই যাচ্ছে মৃথিলার দিকে খেয়াল নেই।মৃথিলা আবার ও বললো আমার বাবার জন্য খারাপ লাগছে আমি বাবা আর আপুর সাথে কথা বলবো।নিরব তবুও পাত্তা দিলো না।মৃথিলা উঠে চলে গেলো।জানালা ধরে কাঁদছে শব্দহীন ভাবে।কাঁন্নার শব্দ নেই কিন্তু ভেতরে কষ্ট বয়ে যাচ্ছে।

‘নিরব রিফাত কে মেসেজ করলো আমি অফ লাইন হচ্ছি ভাই।এখন আর কাজ করা সম্ভব নয়।’

‘কেনো ভাই?..’

‘মৃথিলা ওর বাবা আর বোনের সাথে কথা বলতে চাইছে।বাট এই মুহুর্তে কারো সাথে কন্ট্যাক্ট করতে চাইছি না।লোকেশন জানলেই বিপদ।’

‘ভাবিকে প্রচুর সময় দে নিরব।ভাবিকে যেভাবেই হোক এটা বোঝা তুই ভাবির পৃথিবী। ভাবি যখন বুঝবে তুই তার নিরাপদ আশ্র‍য়স্হল তখন ভাবির আর কারো জন্য খারাপ লাগবে না।’

‘কি করি বল আমি মৃথিলাকে কিভাবে বোঝাবো এই মুহুর্ত ওর জন্য কতটা রিস্ক।ওর জন্য দেশ ছেড়ে কত দূরে এসেছি।ওর বোন আর বাবাকে ভীষণ আপন মনে করে আর ভীষণ ভালবাসে ও তো ওদের সাথে কথা না বলে থাকতে পারবে না।যদিও ওদের সাথে কথা বললে সমস্যা নেই তবুও চাইছি না রিস্ক নিতে।’

‘কত যে আপন ভাবি যদি বুঝতো।যদিও এখনো সিওর না বিষয় টা।সিওর হই তারপর ভাবিকে জানাবো।বাট ভাবি এই সত্য কিভাবে মেনে নিবে তাই ভাবছি।’

‘আপাতত কিছুই জানাবো না।শোন ভয়েজ চেঞ্জার এপ দিয়ে মৃথিলার সাথে কথা বল।আমাকে মৃথিলাকে বাঁচাতে এই মিথ্যার আশ্রয় কিছুদিন নিতেই হবে।’

‘তুই চিন্তা করিস না মৃথিলার বাবা সেজে আমি ঠিক ই ভাবির সাথে কথা বলে নিতে পারবো।সাত দিন পর আসল সত্য টা জানা যাবে।’

-নিরব মৃথিলার কাছে ফোন দিয়ে বললো বাবা কথা বলো।মৃথিলা চোখের পানি মুছে কথা বললো।রিফাত এক মিনিট নিজের ভয়েজ চেঞ্জ করে মৃথিলার বাবা সেজে কথা বললো।কথা শেষ হতেই নিরব বললো সুন্দরী দের চোখে পানি মানায়।সুন্দরীদের চোখে থাকবে কাজল।কাজল কালো চোখে মায়াবতী সেজে থাকবে।যে মায়ায় হারিয়ে যাবো অনেক দূরে।

-মৃথিলা ভীষণ মন খারাপ করে বললো কেনো করছেন আমার সাথে এমন।আমার মন রাখতে এত অভিনয় করছেন কেনো?

-নিরব একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, অবুঝ বালিকা কিভাবে বুঝবে তুমি কোনটা সত্যি আর কোনটা অভিনয়।

-মৃথিলা খুব জোরে কেঁদে দিয়ে বললো আপনি আমাকে উইক করবেন না প্লিজ।সেই তো একদিন আমাকে ছেড়েই যাবেন। তাহলে কেনো মায়ায় জড়াচ্ছেন।এমনিতেই অনেক মায়ায় পড়ে যাচ্ছি।এ মায়া কাটিয়ে বের হবার ক্ষমতা আমার নেই।

মৃথিলার চোখের পানি নিরব মুছে দিয়ে বললো,মায়া ভীষণ খারাপ জিনিস।প্রেমে পড়লে বেরিয়ে আসা যায় কিন্তু কারো মায়ায় পড়লে সেটা কাটিয়ে উঠা যায় না মৃথিলা।জানি আমি কিছুই বললে বিলিভ হবে না তোমার কেননা তোমার আমার মাঝে তোমার আপুর নাম টা জড়িয়ে আছে।তার সাথে যেটুকু হয়েছিলো হয়তো তার অভিনয়ে প্রেমে পড়েছিলাম কিন্তু আমি তার মায়ায় পাড়িনি মৃথিলা।যেটা হয়েছে ছেলে মানুষি ছাড়া আর কিছুই না।তোমার আপুর মিথ্যা গল্প কে সত্য ভেবেছিলাম।তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রথমে আমার জীবনে আসার জন্য ধন্যবাদ দ্বীতীয়ত আমার কাজে ৯৯% সাহায্য করার জন্য।তোমার অজান্তেই আমাকে সাহায্য করেছো তুমি।

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here