প্রণয়ের আসক্তি পর্ব -০৯

#প্রণয়ের_আসক্তি
৯.
#WriterঃMousumi_Akter

নিরবের পায়ের উপর মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে মৃথিলা ভেজা চুল গুলো মেলে দিয়ে।গরমে ঘেমে নাকের ডগায় ঘাম জমেছে বিন্দু বিন্দু।কিছুক্ষণ আগেই গোসল করেছে মৃথিলা হঠাত ঘুম ধরাতে বালিশ ছাড়ায় ঘুমিয়ে পড়েছে ফোনে মুভি দেখতে দেখতে।ফোন হাতে রেখেই ঘুমিয়ে পড়াতে নিরব মৃথিলার মাথা টা তার পায়ের উপর উঠিয়ে দেয়।নিরব পাশেই পা মেলে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।এর ই মাঝে লোড শেডিং হওয়াতে গরমে মৃথিলার ফর্সা গাল লাল হয়ে যাচ্ছে।নিরব ল্যাপটপ এর সাটার অফ করে পাখা দিয়ে বাতাস করছে মৃথিলাকে।হাত পাখার শীতল বাতাসে মৃথিলা আরামে ঘুমোচ্ছে।নিরব মাঝে মাঝে নিজের কপালের ঘাম মুছে ফেলছে।গরম সহ্য করতে না পেরে গায়ের ঘামে ভেজা শার্ট খুলে রাখলো পাশের চেয়ারে।প্রায় আধাঘন্টা পরে কারেন্ট এসছে।নিরব যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এর ই মাঝে মৃথিলার ঘুম ভেঙে গেলো। বাট বার বার আড়মোড়া দিচ্ছে আর ঘুমোচ্ছে।হাতড়াতে হাতড়াতে নিরবের উন্মুক্ত খোলা বুকে হাত দিলো।নিরবের বুকের হার্টবিট চলাচল করা জায়গা মৃথিলার হাত।নিরব অন্যরকম কিছু অনুভব করলো।দিনে দিনে নিরবের অনুভব শক্তি বেড়েই চলেছে মৃথিলার প্রতি।এবার মৃথিলা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সে নিরবের পায়ের উপর মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে আর খালি গায়ে বসে আছে নিরব এর সমস্ত শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা।মৃথিলা দ্রুত উঠে পড়ে বলে আমি আপনার পা বালিশ ভেবেছিলাম ঘুমের মাঝে খেয়াল করিনি সরি।

নিরব ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।কেননা তার বউ তার পায়ের উপর ঘুমিয়ে সরি বলছে।এটা ভীষণ বোরিং লাগছে তার।মারাত্মক একটা রোমান্টিক তামিল মুভি ধরিয়ে দিয়েছিলো যাতে তার বউ রোমান্টিক হয়।কিছু অন্তত শিখে।

‘নিরব কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মৃথিলা বললো আপনি এত ঘেমেছেন কেনো?’

‘কারেন্ট ছিলো না তাই।’

‘আমি বুঝলাম না কেনো?আমি তো একটুও ঘামি নি।’

‘গরম তোমাকে স্পর্শ করে নি এইজন্য।’

‘মৃথিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।’

‘নিরব বললো,আমার গায়ে কি ঘামের বিশ্রি গন্ধ বের হচ্ছে।’

‘কই নাতো।’

‘মিথ্যা বললে কেনো?আমি তো প্রচুর ঘেমেছি।’

‘আপনার ঘামে কোনো বাজে গন্ধ নেই।আপনার শরীরের ঘ্রাণ আমার খুব ভালো লাগে।বলেই লাজুক একটা হাসি দিয়ে উঠে গেলো মৃথিলা।’

তারমানে নিরব তার অভ্যাসে পরিনত হয়ে যাচ্ছে।।ভেবেই নিরব একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

‘মৃথিলা ঘড়ি দেখে বললো, দুইটা বেজে গিয়েছে আমি রান্না করবো কখন।আর আপনি খাবেন ই বা কখন।কত লেট হয়ে গেলো।খুদা লেগেছে তাইনা আপনার।সকালে তো কফি ছাড়া কিছুই খান না।’

‘খুদা লেগেছে তাও ভীষণ খুদা।এই মুহুর্তে খুদা মিটিয়ে দাও আমার।’

‘একটু দেরি করেন আমি এক্ষুণি ভাত চড়াচ্ছি।ডিম ভাজি করে দেই খেতে লাগুন।পরে তরকারি হলে আবার খাবেন।’

‘হাহাহহা আমি কি বাচ্চা ছেলে মিথু।ধীরে ধীরে রান্না করো।তার আগে রেডিমেড খাবার দাও আমায়।’

‘কিছুই তো নেই।’

‘আছে? ‘

‘নিয়ে খান না তাহলে?আপনি কি এনে রেখেছেন আমি জানিনা।’

‘নিরব এসে মৃথিলার গালে চুমু দিয়ে বললো বউ এনে রেখেছি খাবার না থাকলে হঠাত চুমু দিয়ে খুদা নিবারন তো করতে পারে।’

নিরবের এমন কাজ দেখে ভরকে গেলো মৃথিলা।নিরব মিনিটে মিনিটে চেঞ্জ হচ্ছে।এটার কারণ খুজে পাচ্ছে না মৃথিলা। এইভাবে চুমু দিয়ে দিবে আচমকা মৃথিলা ভাবতেই পারে নি।

বিকালে মিসেস শিরিনা তার পাখিদের খাবার দিচ্ছে।মৃথিলা আর নিরব দুজনে নিচে নেমে গেলো।নিরব বললো দাদী ওকে একটু আপনার কাছে রাখুন। আমি বাইরে যাবো আর আসবো।প্লিজ খেয়াল রাখবেন।মৃথিলা মিসেস শিরিনার পাখি গুলোকে খাবার দেওয়া শুরু করলো।মিসেস শিরিনা বললো তুমি যাও দাদু ভাই দিদি ভাই আমার কাছেই থাকবে।দেখছো না পাখি দেখে কত খুশি।নিরব বাইরে গেলে মিসেস শিরিনা মৃথিলাকে বললো দাদু ভাই এর সাথে কি সম্পর্ক করে বিয়ে হয়েছে তোমার।পালিয়ে বিয়ে করেছো।বাসা থেকে মেনে নেয় নি তাইনা?..

মৃথিলা কি বলবে বুঝতে পারছে না।কিছুক্ষণ দম নিয়ে বললো না মানে উনার মা আমাকে পছন্দ করতেন।

দাদু ভাই বলেছে সে তোমাকে খুব ভালবাসে।আমার ছেলে বউমা থাকলে নাতনি টা থাকলে আজ আমিও এমন নাতজামাই পেতাম।ওরা সেই যে গেলো আর এলো না।লাশ টাও পেলাম না।মিসেস শিরিনার চোখে পানি।

মৃথিলা মিসেস শিরিনার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো দাদী ওপারে হয়তো দেখা হবে।ততদিন আমাকে নাতনী ভাবুন।

________________________________
নিরব ঘন্টা খানিক পর ফিরে এলো হাতে করে নিয়ে এলো পাখির খাচা।পাখি পেয়ে মৃথিলা ভীষণ খুশি।

মৃথিলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বলছে,
আমি আপনাকে ভালবাসি নিরব বাবু।

মৃথিলার মুখে এমন কথা শুনে ভীষণভাবে অবাক হলো নিরব।স্হবির হয়ে গেলো সব কিছু নিরবের।শরীরের শিরা উপশিরাতে আমি আপনাকে ভালবাসি নিরববাবু কথাটা বয়ে চলেছে।নিরব দরূণভাবে অবাক করা চাওনি তে তাকালো মৃথিলার দিকে।কালো জিন্সের পকেটে হাত গুজে তাকিয়ে রইলো মৃথিলার দিকে।মৃথিলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিরবের দিকে তাকিয়ে মন খুলে হাসছে।মৃথিলা নিরবের কিছুক্ষণ আগে এনে দেওয়া সবুজ আর লাল পাখিটার দিকে তাকিয়ে তাদের সাথে কথা বলছে।ভীষণ খুশি মৃথিলা পাখি দু’টো পেয়ে।নিরব বলেছে সবুজ পাখিটার নাম নিরব আর লাল পাখিটার নাম মৃথিলা।নিরব এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছে মৃথিলার দিকে।এগোতে এগোতে মৃথিলার খুব কাছাকাছি গিয়ে পাখির খাঁচাটা মৃথিলার হাত থেকে নিয়ে সাইডে রেখে মৃথিলার কোমর জড়িয়ে ধরলো।মৃথিলা ও ভীষণ অবাক হয়ে গেলো নিরব কে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে।বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর নিরব বললো,তুমি আমাকে ভালবাসো মৃথিলা।

–সরি! আমি আসলে ওই সবুজ পাখি টাকে বলেছি।ও খুব কথা বলছিলো আমার সাথে।

–আমিও তো সারাক্ষণ তোমার সাথেই কথা বলি মৃথিলা।কেনো আমাকে ভালবাসলে না মৃথিলা।কেনো বললে না আমি আপনাকে ভালবাসি নিরব।একটা পাখি এক ঘন্টায় তোমার প্রিয় হয়ে গেলো আমি কেনো হতে পারলাম নাহ বলোতো।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ভীষণ ইমোশনাল হয়ে বলছে নিরব।

–ওই নিরব নামের পাখিটা শুধুই আমার।কিন্তু আপনি…..

–আমি কি মৃথিলা।আমি যে তোমার সেটা বোঝাতে কি হজবেন্ড দের সব গুলো স্টেপ অতিক্রম করতে হবে।বলেই মৃথিলার দিকে মুখ এগোলো।মৃথিলা ছুটে পালালো।

দরজার বাইরে মুনতাহা আর তার হজবেন্ড ঝগড়া করছে।মুনতাহার হজবেন্ড বেরিয়ে গেলে মৃথিলা এগিয়ে গিয়ে বললো ভাবি কি হয়েছে রাগ করেছেন কেনো?

“মুনতাহা রাগি মুডেই বললো,ভাবি রাগবো না। মন চাচ্ছে আপনার ভাইকে পানি দিয়ে গুলিয়ে খেয়ে ফেলি।”

“সন্দিহান ভাবে মৃথিলা জিজ্ঞেস করলো কেনো ভাবি।”

“শোনেন আপনার ভাই এর এক্স প্রেমিকা এখনো ফোন করে।এটা সহ্য করার মতো বলেন।সে এখন ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার সতিন হতে চাই।আমার কথা হচ্ছে বিয়ে তো আর তোর সাথে হয় নাই।নিশ্চয় উপর থেকে আমাদের জুটি বাঁধা ছিলো তাই আমাদের ই বিয়ে হয়েছে।এখন তুই ফোন দিবি কেনো?”

“ভালবাসা কি ভোলা যায় ভাবি।মনে হয় ভুলতে পারে না তাই।”

“কিসের ভালবাসা প্রেমিকা তো যে কেউ হতে পারে বউ কি যে কেউ হতে পারে।আমার কবুল বলা ভালবাসার থেকে কি ওই সব ভালবাসার জোর বেশী।আমার জামাই একান্তই আমার।আমি কোনো মেয়েকে আমার জামাই নিয়ে টানাটানি করতে দিবো না।”

“আপনি এত রেগে আছেন কেনো ভাবি।”

“নিরব ভাই যদি তার এক্স প্রেমিকার সাথে কথা বলে তাহলে বুঝবেন রাগ কাকে বলে।স্বামি এমন ভালবাসার জিনিস একবার হারালে আর ফিরে পাওয়া যায় না।নিজের অধিকারে তাকে আগলে রাখতে হয়।মেয়েদের মানসিক শান্তির জায়গা তার স্বামি।স্বামির ভালবাসা ছাড়া একটা মেয়ের জীবনে কোনো পূর্ণতা আসে না।”

মৃথিলা দ্রুত রুমে চলে আসে।নিরব ফোনে কথা বলছে।

‘–আমাকে এতটা ইগনোর করছো কেনো নিরব?আজ কয়েকদিন আমি দেখছি দিনে রাতে কখনোই তোমাকে পাওয়া যাচ্ছে না।কল দিলেই তুমি বিজি আছো?এই ব্যাস্ততা কবে যাবে নিরব।’

‘–ফ্রি থাকলে নিশ্চয়ই ফোন রিসিভ করতাম তাইনা মেধা?এই মুহুর্তে তুমি কেনো পৃথিবীর কারো ফোন ই রিসিভ করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।আমি একটা ইমারজেন্সি কেস নিয়েছি।’

‘–আমি বাদে সব কিছুই তো তোমার কাছে ইমারজেন্সি।’

‘–যে জিনিস যতটা ইমপরটেন্ট আমি সেটাকে ততটায় দেই তার কম বা বেশী দেই না।’

‘–আমার মিথু কোথায় নিরব?মিথু কে আমাদের বাড়িতে পাঠাচ্ছো না কেনো?আর কতদিন তোমাদের ওখানে থাকবে।’

‘–তোমার বোন আমার আম্মুর কাছে আছে।আমার আম্মু মৃথিলার খুব ভাল খেয়াল রাখবে।’

‘–মা বাবা মৃথিলার জন্য চিন্তা করছে, মা আজ ই মৃথিলাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বলছে?’

‘–কেনো তোমার মায়ের কি কাজ করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে মেধা।না তোমার কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

‘–তুমি এসব কি বলছো নিরব।বাড়ির মেয়ে কোন লজিকে অন্যর বাড়িতে থাকবে বলোতো।কোনো মা বাবা ই কি সেটা মেনে নেয়।’

‘–যে লজিকে বাড়ির মেয়ে পাচারকারীর হাতে চলে যায় অথচ বাড়ির কেউ কিচ্ছু টের ই পায় না সেই লজিকে।মৃথিলাকে আমি উদ্ধার করেছি তাই ওর সেফটির দায়িত্ব আমার।’

‘–নিরব আমরা কেউ জানিনা কে বা কারা মৃথিলার পিছনে আছে।আর সে কি চাই।তোমার কাছে একটাই অনুরোধ তুমি মৃথিলার পাচারকারীদের এরেস্ট করো প্লিজ।আমার বোন তো তোমার ও বোন প্লিজ ওকে বাঁচাও তুমি।’

‘–বোন তো বউ ও হতে পারে তাইনা মেধা?’

‘–মানে কি বলছো এসব।’

‘–না মানে আমি বিয়ে করলে তো আর পাপ নেই।’

‘দেখো নিরব এসব ফাজলামি করবে না।আমি কিন্তু তোমার পাশে কাউকে সহ্য করবো না।’

‘আমার বউ ও আমার পাশে আমার এক্স গফ কে সহ্য করবে না।’

‘হোয়াট দ্যা হেল নিরব তুমি এসব কি বলছো।তুমি জানোনা তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই।পৃথিবীতে আমার আপন বলতে তুমি আছো সেই তুমি আমাকে এসব বলছো?’

‘আমি ছাড়াও যদি আপনজন থাকে তাহলে তো আমি না থাকলেও সমস্যা নেই তাইনা মেধা?’

‘এই প্রথমবার তোমাকে এভাবে কথা বলতে দেখছি। কি হয়েছে তোমার নিরব।’

‘অসুখ হয়েছিলো এখন সুস্থ হয়ে গিয়েছি।’

‘কিসের অসুখ।’

‘ছলনার জাল বিছিয়ে কি লাভ পেয়েছো মেধা।কেনো করলে এমন।’

‘কিসের মিথ্যা নিরব।’

‘তোমার ফ্যামিলিতে কেউ তোমাকে ভালবাসে না মন থেকে।মৃথিলার কাজ করার জন্যই তোমাকে রাখা।মানসিক অশান্তির জীবন তোমার।এর কোনটায় কি সত্য মেধা।’

‘সরি নিরব প্লিজ ক্ষমা করো আমায়।শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য এটুকু মিথ্যা বলেছি।গড প্রমিজ আমার কেউ নেই নিরব।মা বাবা কেউ নেই।ট্রেন লাইনের পাশে আমাকে কুড়িয়ে পেয়েছিলো মৃথিলার মা বাবা।তবে এটা সত্য এরা আমাকে মানুষ করেছে অত্যাচার না করলেও ভালবাসে নি কেউ।’

‘মৃথিলাকেও তো কেউ ভালবাসে নি।তুমি অন্যর সন্তান হয়েও যে ভালবাসা পেয়েছো মৃথিলা তো সেটাও পায় নি মেধা।’

‘আমার কারো ভালবাসা চাই না নিরব।আমার শুধু তোমার লাভ নিড নিরব বলেই মেধা কেঁদে দিলো।’

এই দিকে নিরবের কলিগ ফোন দিচ্ছে।নিরব দ্রুত ফোন রাখতে বললো,প্লিজ কেঁদো না আমি তো হারিয়ে যায় নি মেধা।আমি আছি তো।

কথা টা বলে ফোন কাটতেই নিরব তাকিয়ে দেখে মৃথিলা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।এতক্ষণ এর বলা একটা কথাও মৃথিলা শোনে নি।শুধু লাস্ট কথা টায় শুনেছে।

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here