প্রণয়ের আসক্তি পর্ব -১২

#প্রণয়ের_আসক্তি
১২.
#WriterঃMousumi_Akter

মধ্য রাস্তায় খোলা শাড়ির কুচি ঠিক করতে ব্যাস্ত ঊনিশ বছর বয়সী মৃথিলা।চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে এই বাচ্চাসুলভ আচরণের মেয়েটির বাচ্চামো দেখে মুগ্ধ নিরব।ফোনে শাড়ির টিউটোরিয়াল প্লে করে কোনরকম বউ এর শাড়ির কুচি ঠিক করে দিলো নিরব।

রাতে বাসায় ফিরে নিরব ইচ্ছা করেই দুষ্টুমি শুরু করলো।মৃথিলা ওয়াশ রুমে গিয়ে নিজের শাড়ি চেঞ্জ করে থ্রি পিছ পরে নিলো।মৃথিলা বাইরে বেরিয়ে দেখে নিরব ওয়াশ রুমের সামনেই দাঁড়িয়ে।

“মৃথিলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে আপনি এখানে।চোখে মুখে ভীষণ আশ্চর্যজনক ভঙ্গী।মৃথিলা থেমে গিয়ে বললো,ইয়ে মানে আপনি কি এখানেই ছিলেন।”

“নিরব প্যান্টের পকেটে হাত গুজে বললো হ্যাঁ এখানেই ছিলাম।”

“কোন দিকে তাকিয়ে ছিলেন।”

“তোমার দিকে?”

“কি দেখছিলেন আপনি?”

“তোমাকে?”

“আমাকে?আপনি কি কিছু দেখেছেন।”

“হ্যাঁ দেখেছি তো।আহা এতদিনে শান্তি।আজ মনে হয়েছে বউ দেখেছি।”

“কি দেখেছেন আপনি? ”

“এই যে দরজা খোলা রেখে শাড়ি চেঞ্জ করার অপুর্ব দৃশ্য। সব ই অপূর্ব ছিলো।”

“আপনি এত অসভ্য কখন হলেন। আপনার লজ্জা করলো না এইভাবে একটা মেয়ের ইজ্জতের দিকে তাকিয়ে রইলেন।”

“কেনো আমার পাপ হয়েছে বুঝি।”

“অবশ্যই পাপ হাদিস পড়েন না কোনদিন তাইনা?অন্য কারো শরীর দেখতে নেই।”

“নিরব খানিক টা ঝুঁকে বললো,তুমি কি হাদিস জানোনা বউ কে সুনজরে যত দেখবো ততই পূণ্য।”

“ছিঃছি আপনি এত অসভ্য।আপনাকে ভালো মনে করেছিলাম।”

“এইভাবে দরজা খোলা রাখলে আমার চোখ তো ওদিকে যবেই।নিজে দরজা লক করে নি এই দিকে দোষারোপ আমাকেই করা হচ্ছে।”

“দরজা খোলা থাকলেই আপনি দেখবেন।”

“পরনারী তো আর দেখি নি।”

“আগে তো কত ই দেখেছেন।”

“অস্তাগফিরুল্লাহ,নাউজুবিল্লাহ মিথু।তুমি আমার ইজ্জত এভাবে রিং পাউডার ধুয়ে দিতে পারো না।জীবনেও কোনো মেয়ে দেখি নি আমি।”

“কোনো মেয়ে দেখেন নি।”

“মেয়ে দেখেছি বাট মেয়েদের ইয়ে দেখি নি তো।”

“এই আপনি কি বলছেন।ইয়ে মানে কি মিন করছেন।”

“ইয়ে মানে ইয়ে মানে ওইযে শাড়ি থেকে থ্রি পিছ পরা মেয়ে।”

“বেশ কথা ঘুরাতে পারেন আপনি।”

“এখন সত্যি কথা বললে রুমে জায়গা হবে না।”

“ওহ আচ্ছা তাহলে কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন গোয়েন্দা অফিসার।”

“বউ কে ভয় পায় না এমন কোনো সাহসী পুরুষ আছে দুনিয়াতে।বাইরে বীরপুরুষ হলেও বউ এর কাছে উইক।”

“এখন বুঝলাম এইসব আপনার পুরণো অভ্যাস।আগে নিজের প্রেমিকা কে এইভাবে দেখেছে কত কে জানে।”

“ঘরের বউ যদি একবার প্রেমিকার খবর জানে সব কিছুতে খোচা দিবেই।”

“যা সত্যি তাই বলেছি।”

“আমার কোনো প্রেমিকা ছিলো নাকি যে দেখবো।”

“মিথ্যুক একটা।আপু কি ছিলো তাহলে।”

“আমার বিয়ে হয়েছে ২৫ শে নভেম্বর। তার পর থেকে আমার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গিয়েছে।আমার কিছুই মনে নেই।আমার শুধু মনে আছে আমার একটা বউ আছে।আর কোনো মেয়ের কথা মনে নেই।”

“ওহ আচ্ছা বিয়ের আগের সব ভুলে গিয়েছেন আপনি।”

“সব মনে আছে শুধু মহিলা রিলেটেড সব ভুলে গিয়েছি।”

“দেখুন কথা ঘুরাবেন না সত্যি করে বলুন আপুর সাথে কি কি ছিলো।”

“আপু আপু না করে নিরব নিরব করতে তো পারো।তাহলে আমার একটু ভালো লাগে।”

“আপনি কিন্তু কোনো ভাবে কথা ঘুরাতে পারবেন না।আমাকে সত্যি কথা বলতেই হবে।”

“আচ্ছা কি জানতে চাও বলো।”

“আপুর সাথে কি কি হয়েছিলো।”

“ট্রাস্ট মি! কিছুই না।বিকজ তাকে নিয়ে আমার কিছুই ফিল হতো না।”

“ফিল না হলে রিলেশন করলেন কিভাবে।?”

“ভাবতাম যে বিয়েতো জীবনে করতেই হবে।মেয়েটা যখন এতটা অসহায়,দুনিয়াতে কেউ নেই এত অসহায়।মেয়েটাকে বিয়ে করলে পূণ্য হবে।এতিম একটা মেয়ে ভালবাসাহীনতায় ভুগছে তাই ভেবে রাজি হয়েছিলাম।আমি কিন্তু তার প্রেমে পড়ি নি কখনো।শুধু মাত্র তার অসহায়ত্ত্ব দেখে একটা ভাল জীবন দিতে চেয়েছিলাম।অত শত ভেবে দেখি নি কি ফিল হচ্ছে নাকি হচ্ছে না।”

“থাক বুঝেছি আর বলতে হবে না।”

“এবার কি আমাকে একটু হেল্প করবে তুমি মিসেস গোয়েন্দা অফিসার।”

“কি হেল্প চাই আপনার।”

“এই যে আমার হাতে ব্যাথা করছে শার্ট খুলতে হেল্প করো আমায়।’

“মৃথিলা নিরবের শার্ট খুলে দিলো।”

“আমি কি সারাদিন একটায় প্যান্ট পরে থাকবো।প্যান্ট খুলে দাও।”

“ইম্পসিবল আমি পারবো না প্যান্ট খুলে দিতে।”

“প্লিজ মিথু হেল্প মি! তুমি ছাড়া কে আছে আর যে আমাকে হেল্প করবে।”

“পাশের রুমের মুনতাহা ভাবির জামাই কে বলুন আপনাকে হেল্প করতে আমি পারবো না।”

“ওরা এখন রোমান্টিক মুডে আছে তুমি বুঝো না।এখন কি ডিস্টার্ব করা টা ঠিক হবে।”

মৃথিলা প্যান্ট চেঞ্জ করে না দিয়ে বললো ওই একটা প্যান্ট করেই থাকুন সমস্যা নেই।নিরব বউকে পটাতে না পেরে নিজেই চেঞ্জ করে নিলো।

মৃথিলা খাবার নিয়ে নিরবকে বললো খেয়ে নিন।নিরব অসহায় ভাবে বললো আমার হাতে ব্যাথা কিভাবে খাবো কেউ যদি গালে তুলে খাইয়ে দিতো আমাকে আর তাহলে না খেয়ে থাকা লাগতো না।মৃথিলা বললো এই রাতে এখানে তো কাউকেই পাবেন না আজ রাতে চামচ দিয়ে খান।
নিরব বললো তুমি একটু খাইয়ে দিবে আমায় প্লিজ মিথু প্লিজ।আমি চামচ দিয়ে খেতে পারি না।মৃথিলা উপায় না দেখে ভাত মাখিয়ে নিরব কে খাইয়ে দিলো।নিরব মৃথিলার আঙুলে হালকা একটা কামড় দিয়ে বললো তার হাতের স্পর্শে খাবারে পেয়েছি অমৃতের স্বাদ।মৃথিলা ভালবাসা ময় প্রশংসা তে ভীষণ খুশি।পরের দিন ঘুম থেকে উঠে মৃথিলা দেখে নিরব তার পেটে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।মৃথিলা দেখেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলো।নিরবের মাথা আস্তে করে সরিয়ে দিতে গেলে নিরব জড় সড় হয়ে মৃথিলার কোমর জড়িয়ে ধরে ঘুমোনোর চেষ্টা করলো।মৃথিলা নিরবের মাথা সরিয়ে তার নিচে বালিশ দিয়ে উঠে গেলো।

সকাল দশ টা বেজে গিয়েছে।নিরব ঘুম থেকে উঠে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।
ঝরঝরে রোদ উঠেছে বাইরে।কয়েক দিন এসে ধরেই ঘরের মধ্যই আছে নিরব আর মৃথিলা।মুনতাহা মৃথিলা কে বললো ভাবি নিচে যাবেন চলুন একটু হাঁটাহাটি করে আসি।মৃথিলা নিরবের দিকে তাকালো অনুমতির জন্য।নিরব মাথা নেড়ে ইশারা করলো।মৃথিলা মুনতাহার সাথে নিচে আসলো। নিচ তলায় আলতাফ মাহমুদ আর শিরিনা মাহমুদ থাকেন।শিরিনা মাহমুদ রান্নার জন্য তরকারি কাটছে নিচে বসে।মৃথিলা আর মুনতাহা বসে শিরিনা মাহমুদ কে হেল্প করছে শাক বেছে দিচ্ছে।শিরিনা মাহমুদ বললো মৃথিলা এখানে কি অসুবিধা হচ্ছে কোনো।মুনতাহা বললো আরে দাদী ভাই যে পরিমান ভালবাসে তাতে এখানে কেনো কোথাও খারাপ লাগবে না ভাবির।শিরিনা মাহমুদ বললো,কেনো তোমার বর বুঝি কম ভালবাসে সেও তো বউ পাগল।মুনতাহা বললো দাদী আপনি কিন্তু ওদের দলে হয়ে কথা বলছেন নিরব ভাই এর নাম কিন্তু বউ ভক্ত লোক।শিরিনা মাহমুদ বললো,আহা মৃথিলা একটু লজ্জা পায় বোঝো না।

এমন সময় নিরব নিচে নেমে এলো।নিরব কে দেখেই মুনতাহা বললো দেখুন দাদী কিছু সময় বউ ছাড়া আছে ওমনি নিচে চলে এসছে।মৃথিলার চোখে মুখে অনেক লজ্জা।নিরব নিচে নেমে বললো দাদী বউ পাগল রিক ভাই মানে মুনতাহা ভাবির জামাই কোথায়?একটা ছেলে এত বউ ভক্ত কিভাবে হতে পারে।মুনতাহা লাফিয়ে উঠে বললো দাদী দেখুন কেমন ফাঁসাচ্ছে আমাকে।রিক কোথায় বউ পাগল নিজের দোষ রিকের কাধে চাপাচ্ছে।নিরব একটু কেশে বললো দাদী পাশের রুমে ঘুমোতে পারিনা শুধু চুমুর শব্দে।মুনতাহা চোখ বড় বড় করে বললো নিরব ভাই আপনি কি বলতে চাইছেন আমাদের চুমু তে এত সাউন্ড হয় যে,এই জেলার মানুষ শুনতে পায়।নিরব হেসে বললো ভাবি থাক লজ্জা পাবেন না আমি কিন্তু সব শুনতে পাই।সামনে ওইটা কি আইসক্রিমের দোকান নাকি চলুন খাওয়া যাক।মুনতাহা মৃথিলাকে বললো ভাবি চলুন।

রাস্তা ক্রস করে আইসক্রিমের দোকানে গেলো।

দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা দুইটা ছেলে মৃথিলার দিকে তাকিয়ে আছে।একটা ছেলে আরেক টা ছেলেকে বলছে এটা মেয়ে নাকি পরী।সচরাচর এমন সুন্দর মেয়ে তো দেখা যায় না।নিরব আইসক্রিম কিনছে একটি ছেলে মৃথিলাকে বললো হ্যালো আপু আপনার বাসা কি এখানেই।মৃথিলা বললো না।ছেলেটি বললো বুঝেছি আপনার বাবা জব করেন এখানে। আপনার ফোন নাম্বার টা পেতে পারি।মৃথিলা বললো আমার তো ফোন নেই।ছেলেটি বললো আমরা ফ্রেন্ডশিপ করতে পারি আমি ফ্রেন্ড হিসাবে একটা ফোন গিফট করলে কি গ্রহন করবেন।মৃথিলা চুপ করে আছে।ছেলেটি আবার বললো ডোন্ট মাইন্ড আপনি রিয়েলি অনেক নাইস আপু।নিরব প্যান্টের পকেটে হাত গুজে বললো কি সমস্যা ভাই।ছেলেটি একটু অস্বস্তি তে পড়ে বললো আপনার বোন নাকি ভাই।নিরব ভ্রু কুচকে বললো ক্যানো ভাই বোনের জায়ভা বউ বললে কি খুব ক্ষতি হতো।

আপনার বউ উনি।

ইয়েস ব্রো।

বাট নাকে তো কিছুই নেই হাতেও কিছুই নেই।ভাই ভাবি যে সুন্দর প্লিজ একটা নাক ফুল পরাণ।আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয়।

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here