গল্পঃ #প্রতিশোধ
পর্বঃ ২৫+২৬
লেখাঃ #Mst_Liza
,
ডা.নাহিদ কেবিন থেকে বের হতেই তার নাকের সামনে সজীব একটা রুমাল চেপে ধরে।ডা.নাহিদ রুমালটা নাকের সামনে ধরার সাথেই সেন্সলেন্স হয়ে পরে যায়।মায়া, রুসা, মিতু নিধি এসে একটা মানকিটুপি ডা.নাহিদের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।তারপর তাকে চাদরে মুড়িয়ে সবাই মিলে স্টোর রুমের কাছে যায়।সবাই যার যার মুখ থেকে ঢেকে রাখা চাদর সরিয়ে স্টোর রুমের চেয়ারে বসিয়ে ডা.নাহিদকে বাঁধে।
,
,
,
,
কিছুক্ষণ পর,
ডা.নাহিদের জ্ঞান ফেরে।সে মিট মিট করে চোখ মেলে চেয়ে দেখে সামনে মায়া, রুসা, মিতু, নিধি আর সজীব দাড়িয়ে আছে।রুসা একগ্লাস পানি ডা.নাহিদের মুখের উপর ছুড়ে মারে।সজীব যেয়ে ডা.নাহিদের চুলের মুষ্টি টেনে ধরে।মায়া ইনজেকশন নিয়ে সামনে আগাচ্ছে।মিতু, নিধি বেধে রাখা ডা.নাহিদের দু’পাশে দাড়িয়ে আছে।
ডা.নাহিদঃ প্লিজ ছেড়ে দাও আমায়।
মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে বলে, ওটা কিসের ইনজেকশন?
রুসাঃ পাগলের!
ডা.নাহিদ ভয়ে আমতা আমতা করে।
ডা.নাহিদঃ না আমায় ছেড়ে দাও। তোমরা কত্তো ভালো।তাহলে এমনটা কেনও করছো?
মায়া এসে রুসার হাতে ইনজেকশনটা দেয়।
রুসাঃ সব সত্যি কথা বলবেন নইলে এই পাগলের ইনজেকশন আপনাকে দিয়ে দেব।
ডা.নাহিদ ভ্যাবাচেকা খায়।
ডা.নাহিদঃ সত্যি কিসের সত্যি?
সজীব ডা.নাহিদের চুলের মুষ্টি ধরে এক টান দেয়।
সজীবঃ ন্যাকামো হচ্ছে? চুপচাপ আমাদের কথা শোনেন নইলে।
ডা.নাহিদঃ নইলে কি? তোমরা আমার সাথে এমন কেন করছো আমি কিন্তু এবার চিৎকার দেব।
সজীব ডা.নাহিদের মুখটা চেপে ধরে।
সজীবঃ চিৎকার দেবেন? তার আগেই আপনাকে আমরা পাগলা গারদে পাঠাবো।কিরে রুসা দারিয়ে কি দেখছিস? দিয়ে দে ইনজেকশনটা।
রুসাঃ হ্যাঁ, দিচ্ছি।
সজীব ডা.নাহিদের মুখটা ছেড়ে দেয়।
ডা. নাহিদঃ এমনটা করো না তোমরা।বল কি সত্য বলতে হবে?
রুসাঃ এই তো পথে এসেছেন। এখন বলেন দেখি শ্যামলি বসুর নকল ফাইলটা কে বানিয়ে ছিল?
ডা.নাহিদঃ আমি যানি না।যা করেছে ডা.মাহির করেছে।সে তো তার শাস্তি পাচ্ছে তাহলে আমার সাথে কেন তোমরা এমন করছো?
মায়া গিয়ে ডা.নাহিদকে একটা চর বসিয়ে দেয়।
-ঠাসসস।
মায়াঃ ডা.মাহির স্যার কিছু করে নি।যা করেছেন আপনি করেছেন।
ডা.নাহিদঃ কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে যে আমি করেছি?
মায়া ডা.নাহিদের মুখের উপর ফিঙ্গার পেন্ট রিপোর্টটা ছুড়ে মারে।
মায়াঃ এই রিপোর্টটা দেখছেন? সেই নকল ফাইনালের হাতের ছাপ আপনার সাথে ম্যাচ করেছে।ফাইলটা আপনারই তৈরি।
ডা.নাহিদ ভয়ে ভয়ে তাকায়।
ডা.নাহিদঃ না মানে
রুসাঃ না মানে এইসব কি? যা বলার পরিষ্কার করে বলুন।আপনি এসব কেন করেছেন?
ডা.নাহিদ সব খুলে বলে যে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল হসপিটালের সুনাম নষ্ট করা।ডা.মাহিরকে বিপদে ফেলা বা শ্যামলি বসুকে মেরে ফেলা না।
ডা.নাহিদের বলা কথাগুলো নিধি রেকর্ড করে আর মিতু ভিডিও করে রাখে।
তারপর মায়া ও তার বন্ধুরা ডা.নাহিদকে টানতে টানতে থানায় নিয়ে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয় প্রমাণ সহ।মাহিরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মাহিরকে লকাপ থেকে বের করে ডা.নাহিদকে লকাপের ভেতরে ঢুকানো হয়।
সবাই খুব খুশী হয় মাহিরকে বাইরে দেখে।মাহির মায়ার ফ্রেন্ডের ধন্যবাদ জানিয়ে মায়ার সামনে এসে দাড়ায়।
মাহিরঃ মায়া তোমাকে আমি..
মাহির কিছু বলতে চাচ্ছিল মায়াকে হঠাৎ কোথা থেকে যেন স্নিগ্ধা চলে আসে।মাহিরকে স্নিগ্ধা জড়িয়ে ধরেই হাওমাও করে কেঁদে দেয়।
স্নিগ্ধাঃ জান তোমাকে এখানে থাকতে হবে না।আমি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো।
মায়া এমন দৃশ্য চোখের সামনে দেখে সেই মুহূর্তেই দৌড়ে থানার বাইরে চলে আসে।
মায়া চলে যাওয়ার পর মাহির স্নিগ্ধাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়।
মাহিরঃ চলে যাও স্নিগ্ধা।তোমার নাটক আমি আর দেখতে পারছি না।
স্নিগ্ধাঃ নাটক? আমার কস্টটাকে তোমার নাটক মনে হয়?
মাহিরঃ কিসের কস্ট তোমার? কাল সারাদিনে একবারও দেখতে এসেছো আমাকে? আজ এসে আবার তোমার এই মিথ্যে নাটক দেখাচ্ছো।
স্নিগ্ধাঃ বিশ্বাস কর মাহির কাল আমার কি হয়েছিল আমি নিজেই মনে করতে পারছি না।ঘুমিয়ে ছিলাম উঠে শুনি পুরো একদিন বিছানায় পরে পরে ঘুমিয়েছি।
মাহিরঃ আবার নাটক! দেখও স্নিগ্ধা অনেক হয়েছে আর না।এবার তোমার এই নাটক থেকে আমাকে মুক্তি দাও।
মাহির কথাটি বলে স্নিগ্ধাকে এড়িয়ে চলে যায়।থানার বাইরে গিয়ে দেখে মায়া রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।
মাহির কান ধরে হাটু নুইয়ে মায়ার পিছনে বসে পরে।মায়াকে ডাকে।
মাহিরঃ মায়া
মায়া পিছনে ফিরে অবাক হয়ে যায়।মায়া কি তাহলে স্বপ্ন দেখছে? মায়া চোখদুটো হাতদিয়ে ভালো ভাবে ডলতে ডলতে মাহিরের দিকে তাকায়। না এতো সত্যি!
মাহিরঃ সরি মায়া।
চলবে……
গল্পঃ #প্রতিশোধ
পর্বঃ ২৬
লোখাঃ #Mst_Liza
মাহির কথাটি বলে স্নিগ্ধাকে এড়িয়ে চলে যায়।থানার বাইরে গিয়ে দেখে মায়া রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।
মাহির কান ধরে হাটু নুইয়ে মায়ার পিছনে বসে পরে।মায়াকে ডাকে।
মাহিরঃ মায়া
মায়া পিছনে ফিরে অবাক হয়ে যায়।মায়া কি তাহলে স্বপ্ন দেখছে? মায়া চোখদুটো হাতদিয়ে ভালো ভাবে ডলতে ডলতে মাহিরের দিকে তাকায়। না এতো সত্যি!
মাহিরঃ সরি মায়া।
মায়া মাহিরের এমন কান্ডে অবাক হয়ে যায়।মায়া সামনে বসে মাহিরের কান ধরে রাখা হাতদুটি নামিয়ে দেয়।তারপর মাহিরকে উঠিয়ে দাড় করায়।মায়া ছলছল চোখ দিয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে,
মায়াঃ এটা আপনি কি করছেন?
তখন মাহির মায়ার গালটা দু’হাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরে।
মাহিরঃ আমি খুব খারাপ তাই না?
মায়াঃ আপনি এভাবে কেন বলছেন?
মাহিরঃ খুব কস্ট দিয় তোমাকে আমি?
মায়াঃ নাহ
মাহিরঃ আজ কিছু কথা বলব শুনবে?
মায়াঃ হুমমম
মাহিরঃ তোমাকে
মায়াঃ কি?
মাহিরঃ তোমাকে আমি ভালোবাসি মায়া।
কথাটা বলেই মাহির থেমে যায়।মায়ার গালটা ছেড়ে দিয়ে মায়ার থেকে একটু দূরে সরে দাড়িয়ে তারপর আবার এক নিঃশ্বাসে বলতে শুরু করে।
মাহিরঃ ভালোবাসি তোমায়! সেই প্রথম দিন থেকেই।যেদিন বিয়ের পর তোমার ওই মুখটা দেখেছিলাম।বিশ্বাস কর মায়া তুমি ছাড়া আর কাউকে নিয়ে কখনও আমি ভাবি নি।আর কাউকে এতোটা ভালোবাসি নি।আমার মন শুধু তোমাকেই চেয়েছে।আমি যানি না কিভাবে আমাদের মাঝে এতো ভুল বুঝাবুঝির সৃস্টি হলো।আমি এটাও যানি না তুমি আমাকে এখন আর বিশ্বাস করবে কিনা।তবে বিশ্বাস করো, সত্যি বলছি, আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
মায়া চুপ করে মাহিরের কথাগুলো শুনছে।কোনও কথা না বলে।মাহির মায়ার কাছে এসে মায়াকে ঝাকিয়ে জানতে চাই।
মাহিরঃ এভাবে চুপ করে থেকো না।কিছু তো বলো মায়া। তুমি কি আমার কথা বিশ্বাস করছো না?
মায়া এক ঝটকায় মাহিরের বুকে ঝাপিয়ে পরে কান্না জুড়ে দেয়।কান্না জড়িত কন্ঠে মাথাটা হালকা ঝাকিয়ে বলে,
মায়াঃ হুমমম! আমি বিশ্বাস করি।
আপনাকে আমি নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি।আপনি শুধুই আমার।আর আমাকেই ভালোবাসেন। আপনার মতোন এতোটা ভালোবাসা আমাকে কেউ দিতে পারবে না। এতোগুলো দিন অপেক্ষা করেছি, আপনার মুখে এই কথাটা শোনার জন্য।আপনি কি বোঝেন না আমার কস্ট হয়?
মাহির আর মায়ার পেছনে বেশ খানিকটা দূরে মায়ার ফ্রেন্ডরা দাড়িয়ে আছে।সাথে স্নিগ্ধা রেগে অগ্নি দৃস্টিতে তাকিয়ে দেখছে মায়া আর মাহিরকে।
মায়ার ফ্রেন্ডরা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। আর বলাবলি করছে।
সজীবঃ এটা কি হলো?
আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
মিতুঃ আমিও না।এ তোরা যানিস ডা.মাহির স্যারের সাথে আমাদের মায়ার সম্পর্ক কতদিনের?
নিধিঃ হেব্বি জিনিস আমাদের মায়া ডুবে ডুবে জল খাই।অথচ আমরা কিছু জানলামই না।শুধু পার্ট নেই। মাহির স্যার ভালো না! মাহির স্যার ভালো না!
রুসাঃ আহহ। থামবি তোরা?
নিধিঃ এই থামবো কি রে? ফ্রেন্ড হিসেবে আমাদের কি জানার অধিকার নেই?
মাহির একটা রিক্সা ডেকে মায়াকে নিয়ে রিক্সায় উঠে চলে যায়।মায়ার ফ্রেন্ডরা হা হয়ে আছে।তাদের পাশ কেটে রিক্সাটা চলে যায় কিন্তু মায়া, মাহির তাদের দেখেই না।
রিক্সায় বসে মায়ার হাতের আঙুলে নিজের হাতের আঙুলগুলো চেপে রেখে মায়াকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছে মাহির।এতো কাছ থেকে মায়ার সিল্কি চুলের গন্ধ মাহিরকে আরও মাতাল করে তুলছে।মাহির মায়ার চুলে নাক ডুবিয়ে মায়াকে পরম আদরমাখা কন্ঠে ডাকে,
মাহিরঃ মায়া
মায়াঃ বলুন
মাহিরঃ স্নিগ্ধা ওই ছবিগুলো
মায়াঃ প্লিজ! আপনি আর কক্ষণও আমার সামনে স্নিগ্ধা ম্যামের কথা বলবেন না।আমার ভালো লাগে না আপনার মুখে ওই নামটা শুনতে।
কথাটা মাহিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে মায়া।
মাহিরঃ আমার কথাটা তো শুনবে? আসলে সেদিন…
মায়াঃ কিচ্ছু শুনতে চায় না আমি।আপনি যে আমার হয়েছেন এতেই আমি খুশি।
মাহিরঃ তবুও!
মায়াঃ বললাম তো শুনবো না।
রিক্সা এসে মাহিরের বাড়ির সামনে থামে।মাহিরের বাবা মা মাহিরকে দেখে খুব খুশী হয়।
।
ওদিকে, রুমা মিরাকে নিয়ে কিছু রিপোর্ট হাতে হসপিটাল থেকে বের হচ্ছে।
রুমাঃ আমার মনে হয় মায়াকে কথাটা যানানো উচিৎ
মিরাঃ না রুমা।তার আর দরকার নেই।আমার মেয়েটাকে কিছু যানিয়ে টেনশনে ফেলতে চাই না।আমার যা হয় হবে।মেয়েটা ওখানে সুখে থাকুক।
রুমাঃ কিন্তু মিরা তুই মায়াকে কিছু বলবি না? পরে যদি জানতে পারে কতটা কস্ট পাবে জানিস?
মিরাঃ ভাগ্যের সাথে আমি আপস করে নিয়েছি।এই জীবনে উনিই যখন নেই তখন আর বেঁচে থেকে কি লাভ।শুধু মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা ছিল।আজ ওর বিয়ে হয়েছে।স্বামী, সংসার নিয়ে সুখে থাকুক আমার দায়িত্ব শেষ।এখন আমি শান্তিতে মরতেও পারবো।শুধু একটাবার জীবনের এই শেষ সময়টাতে উনাকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। যানি না কখনও সেটা সম্ভব কিনা। তবুও চাইবো উনি সব সময় ভালো থাকুক।
রুমাঃ এতোই যখন ভালোবাসিস একটাবার তো ফিরে গিয়ে দেখতে পারতি।হতেও পারে সে তোকে ভালোবাসে!
মিরাঃ বাসে না রুমা।সে কখনোই আমাকে ভালোবাসেনি।পর নারীতে আশক্ত ছিল সে।তবুও সবকিছু মেনে নিয়ে আমি তার সংসারে পরে ছিলাম দিন শেষে একটাবার তার মুখটা দেখবো বলে।তার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনবো বলে।ভিক্ষা চেয়েছিলাম প্লিজ আমাকে আপনার সাথে থাকতে দিন।কিন্ত দিল না।তারিয়ে দিল সে আমাকে।তবুও আমি তো তাকেই চেয়েছিলাম।মা, রাইসূল আর রাইশা পার্টির দিন বাড়িতে ছিল না।আমি পরে আর তাদের সাথে যোগাযোগও রাখতে পারি নি। লজ্জায়, ঘৃণায় আমার ভেতরটা খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছিলো।সকলের সামনে উনি আমার জীবনটাকে হাসি, ঠাট্টা, তামাশা বানিয়েছে।তাতেও আমার কোনো আপত্তি ছিল না।কিন্তু তুই বল রুমা সে যদি আমায় ভালোইবাসতো তাহলে কি পারতো ওইভাবে নোংরা অপবাদ দিতে? আমাদের পবিত্র ভালোবাসার সন্তানকে অস্বীকার করতে? পারতো না! পারতো না এমনটা করতে!
কথাগুলো বলতে বলতে মিরা কেঁদে দেয়।
রুমাঃ শান্ত হ মিরা।প্লিজ উত্তেজিত হোস না।
তখনই মিরার ফোনটা বেজে ওঠে।মায়া মিরার জন্য সারপ্রাইজ গিফট পাঠিয়েছে সেটা বলতে ফোন করেছে।মায়ার সাথে কথা বলে মিরা বাড়ি ফিরে মেয়ের পাঠানো সারপ্রাইজ গিফটের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বিকালের দিকে কুরিয়ারে একটা পার্সেল এসে মিরাকে দিয়ে যায়।পার্সেলটা ছিল মায়ার পাঠানো সারপ্রাইজ গিফট।মায়ার পাঠানো সারপ্রাইজ গিফটটা খুব খুশী মনে খুলতে থাকে মিরা।তারপর গিফটটা দেখেই মিরা শকট।
চলবে….