প্রতিশোধ পর্ব ৩

#প্রতিশোধ
#পার্ট_3

__আবিরের মনে পড়ে মেয়েটি ঘরে একা তাই দরজা লাগিয়েই সোজা উপরে যায় আবির। রুমানা ( আবিরের বাসায় কাজ করে ঘর গোছায়, রান্না করে) কে সকালেই ছুটি দিয়েছে তাই আজ সে একা। আবির মেয়েটির পাশের টুলে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কি নিষ্পাপ মেয়েটি, ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়েটিকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। নিজের প্রতি ঘৃণা তে ভিতর টা তিলে তিলে জ্বলছে। না পারছে কাউকে বলতে না পারছে সহ্য করতে।

__ তৃণা বাসাতে বসে বসে ভাবছে, এমন টা তো হবার প্লান ছিলো না। কিভাবে কি হয়ে গেলো কিছুই তো বুঝলাম না।

__ কিরে কি ভাবছিস এতো? সেই বিকেল থেকেই তুই চুপচাপ আছিস? তোকে খুব টেন্স লাগছে? খুলে বল সব কিছু? ( সাইরা, তৃণার বান্ধবী)

__ প্লান ভেস্তে গেছে, বুঝছিনা কিভাবে কি হলো! (তৃণা)

__ কি বলিস, তোর জন্য এতো কষ্ট করে প্লান করলাম আর তুই বলিস ভেস্তে গেছে। কিভাবে কি হলো খুলে বল, আমার টেনশনে হাত পা কাঁপছে। (সাইরা)

__ আবির স্যারের হাত খুব লম্বা, যতটা দুর্বল ভেবেছিলাম তার কিছুই না। আজ আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো স্যারের বাসায়। ( তৃণা)

__ কি বলিস, স্যার তোর কোন ক্ষতি করেনি তো? (সাইরা)

__ নাহ! আমি তো ভেবেছিলাম আজ আমি মার্ডার হয়ে যাবো। কিন্তু স্যার অবাক করে একটা চড় মেরেই ছেড়ে দিলেন। এটাই আমাকে ভাবাচ্ছে বেশি, আমি যা করেছি তার শাস্তি মাত্র এটুকু।
স্যারের সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি, তাও স্যার কিছু বললোনা রে। আমি তো আবারো স্যারের প্রেমে পড়ে গেলাম। ( তৃণা)

__ তুই যা বলেছিস, স্যার যা হ্যান্ডসাম না আমারও প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে। ( সাইরা)

__ আর একবারও এই কথা বলবি না, মেরে তোর মুখ ভেঙে দিবো। (তৃণা)

তৃণা বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে, যা চায় সব কিছু নিজের করেই ছাড়ে। সেটা যে কোন মূল্যের বিনিময়ে হোক না কেনো। সাইরা কে শুনিয়ে দেয় তৃণা।

__ তৃণা মেডিকেল এ চান্স পেয়েছে এবার কিন্তু মেসে থাকতে চায় না বলেই ফ্লাট টা ভাড়া করা। সাইরা কে তৃণাই এনেছে এই ভাড়া করা ফ্লাটে। দুই বান্ধবী এক সাথে থাকবে তাই। তাছাড়া শহরে একা থাকার চেয়ে কেউ থাকা বেশি ভালো, যদিও তৃণার বডি গার্ড হিসেবে দুইজন থাকে বাসায়, আর কাজের জন্য একটা মেয়ে, রান্নার জন্য আরেকজন মেয়ে। তৃণার বাবা সব সময় মেয়েকে চোখে চোখে রাখেন, আর মেয়ের মাথা নষ্ট হবার পিছনে এই একটা কারণ। মেয়ের সব আবদার পূরণ করার জন্যই বাবা যেন সর্বদা প্রস্তুত। কিন্তু এবার তৃণা লুকিয়ে কিছু কাজ করে তাও ধরা খেয়ে নিজেই টেনশন এ পড়ে গেছে।

__ আবির মেয়েটির মাথার কাছে গিয়ে বসে চিন্তা করতে করতে ওভাবে ই ঘুমিয়ে পড়ে, মেয়েটির মাথার পাশে মাথা রেখে টুলে বসে ঘুমিয়ে আছে আবির।

__ সকালে জ্ঞান ফিরে মেয়েটির, পাশে আবির কে দেখে সরে আসে। নিজেকে শাড়িতে দেখে বুঝে ফেলে আবির ই তাকে শাড়ি পড়িয়েছে । ঘৃণা তে মুখ ঘুরিয়ে নেয় মেয়েটা, অস্ফুট স্বরে বলে ছিঃ মানুষ এতো জঘন্য হয় কেনো। আল্লাহ বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে মেয়েটা।

__ কান্নার শব্দে আবিরের ঘুম ভেঙে যায়।
এখন কেমন আছো? আবির বলে মেয়েটি কে।

__ সাড়া নেই মেয়ের , নিঃশব্দে কাঁদছে সে।

__ আমি জানি আমি অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি। আমি আসলে জানতাম না তুমি আর তৃণা দেখতে একই রকম। তৃণা আমাকে মিথ্যা রেপ কেশে ফাঁসিয়ে আমার সম্মানহানি করেছে। তাই আমি রাগে ওকে তুলে আনতে বলি। কিন্তু আসাদ তোমাকে তৃণা ভেবে তুলে আনে। আর তুমি দেখতে হুবহু তৃণার মতো। মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তুমি স্বীকার না করায়। আমি খুব ভুল করে ফেলেছি, ক্ষমাও করতে পারবেনা জানি। তুমি যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নিবো। প্লিজ কথা বলো, আমাকে আর কষ্ট দিওনা। তোমার সাথে করা অপরাধ বোধ আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। প্লিজ কথা বলো, চুপ করে থেকোনা আর। প্লিজ মেয়ে, তোমার তো নাম টাও জানিনা, প্লিজ কিছু তো বলো। ( কান্না জড়িত কণ্ঠে আবির)

__ নাটক বন্ধ করেন, আর শাস্তির কথা বলছেন স্যার। আপনি পারবেন আমার সম্মান, ইজ্জত ফিরিয়ে দিতে। পারবেন না, এই যে আমি একদিন ধরে নিখোঁজ। পারবেন আমার গরীব দুখী মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে। পারবেন আমার বাবাকে বলতে আপনার নিষ্পাপ মেয়েকে ফিরিয়ে নিন। পারবেন সমাজ কে বলতে, আমি সতী। কি হলো, কথা কেন বলছেন না, জানি পারবেন না। তাই এখুনি আমি চলে যাবো এখান থেকে।

__ পারবোনা সব ফিরিয়ে দিতে, কিন্তু তোমাকে একাও ছাড়তে পারবোনা। কোথায় যাবে? আগে বলো নাম কি তোমার?

__ হুহ, নাম দিয়ে কি করবেন। নিজের ভোগ তো মিটিয়েই নিয়েছেন। (মেয়েটি)

__ বিশ্বাস করো! আমি ওমন না।

আবিরের কোন কথা না শুনেই মেয়েটি হাতের স্যালাইন চ্যানেল টান দিয়ে খুলে ফেলে, এতে বের হয়ে আসে রক্ত। মেয়েটির কোন চিৎকার না আসলেও যেন এ ব্যথা আবির পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি হাত টা ধরে ফেলে, যেন তার ই হাত কেটেছে।

__ হাত টা ছাড়ুন ( মেয়েটি বলে)

__ দেখছোনা রক্ত বের হচ্ছে,থামো একটু। বলে পাশের বক্স থেকে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে হাতে বেধে দেয়।

__ থাক আর নাটক করতে হবেনা, এবার হাত ছাড়িয়ে নিলো মেয়েটি।

বিছানা থেকে তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে ব্যথা তে আর দুর্বলতা তে পড়ে যেতে শুরু করে। আবির ধরে নেয় মেয়েটিকে। খুব কাছে দুইজন দুজনের, ঘোর কাটিয়ে মেয়েটি বলে….

__ স্বাদ মিটেনি তাইনা, ছাড়ুন আমাকে।

এমন একটা কথাতে রাগ আসে আবিরের। তাও ভালো করে বলে…

__ তুমি এখনো অসুস্থ, রেস্ট নাও। নাস্তা নিয়ে আসি খেয়ে নিবে। বলেই বের হয়ে যায় আবির। যাবার সময় দরজা টা বাইরে থেকে লাগিয়ে যায়।

নিজেকে খুব ছোট লাগছে আজ নিরার।
কিভাবে সমাজের কাছে মুখ দেখাবে, কিভাবে বাবা মার মুখের সামনে দাঁড়াবে। কিভাবে বড় ভাইয়ের সামনে দাঁড়াবে, কিভাবে ক্লাসে যাবে। ভাবতে ভাবতে ফুঁপিয়ে কাঁদে অনেক্ষণ। নাহ! এজীবন আর রেখে কি হবে। আমাকে ক্ষমা করে দিও আল্লাহ বলে বিছানার চাদর কে কয়েক ভাগ করে কেটে ফেলে নিরা পাশে বক্সে থাকা কেচিঁ দিয়ে। সেগুলো কে বেঁধে প্যাচিয়ে নেয় আর ফ্যানের সাথে ফাঁস রেডি করে তাতে ঝুলে পড়ে নিরা। আবির খাবার নিয়ে এসে দরজা খুলেই চিৎকার করে খাটে উঠে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে। ফাঁস থেকে মুক্ত করে মেয়েটিকে বিছানায় শোয়ায়ে দেয়। মেয়েটার মাথায় মাথা দিয়ে বলে প্লিজ মাফ করে দাও। আর এমন করবেনা কখনো। আবিরের চোখের পানি মেয়েটার মুখে পড়ছে।

__আবির উঠে বসে বলে খাবার এনেছি, প্লিজ খাবে।

__ আপনার হাতে খাবার খাওয়ার চেয়ে বিষ খাওয়া ভালো।

এরই মাঝে মিশি ফোন দেয় আবিরকে।

__ হ্যালো, মিশি বল।

__ কেমন আছে মেয়েটি।

__ যেমন দেখে গিয়েছিলি, শুধু জ্ঞান ফিরেছে। আর একটু আগে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো।

__ তা তো করবেই, যে কোন মেয়েই করবে। এখন কি করবি তুই সেটা বল?

__ কি করতে বলছিস সেটা বল?

__ বিয়ে করে নে।

__ কি বলছিস এসব। তাহলে সে…

__ চুপ কর! ভুলে যা ওসব। বিয়ে করে নে কখন আসবি সেটা বল।

__ ১১ টাই ফাঁকা আছিস।

__ নাহ! ১২ টাই আই।

__ ওকে, রাখ তাহলে।

আবির খাবার নিয়ে মেয়েটির সামনে বসে খেতে বলে। খাবার গুলি ফেলে দেয় মেয়েটা। খাবার নষ্ট করা আবির একদম সহ্য করতে পারেনা। রাগ করে বলে উঠে…

__কতো মানুষ একবেলা খেতে পায়না তুমি জানো? বলেই নিচ থেকে কুড়িয়ে খাবার নিজের মুখে দিলো। এরপর মেয়েটাকে খাইয়ে দিলো, মেয়েটি ও আর কিছু না বলে খেয়ে নিলো।

__ তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।
কাজ আছে, চলো।
নিরার কথা শুনার অপেক্ষা না করেই কোলে তুলে নেয় আবির। কারণ জানেই মেয়েটার হাটার শক্তিও নাই।

চলবে…..

/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here