#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ১৯
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
একদলা বৃষ্টি মাথায় করে ধানমন্ডির একটি কফি হাউজের ছাউনিতে এসে থামে নিষ্প্রাণ।একজন চল্লিশ উর্ধ্ব ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন।তার সামনে দাঁড়িয়েই বিগলিত হাসে নিষ্প্রাণ।ঝমঝমিয়ে নভোমণ্ডলের বুক চিরে ঝরছে অশ্রুজল।তাতেই অবগাহনে মত্ত ধরিত্রী মাতা।থৈ থৈ জলে নিমগ্ন চারপাশ। সমান্তরাল সড়ক পথ থেকে একটু উঁচুতে অবস্থিত কফি হাউজের ছাউনির খাঁজকাটা টিন বেয়ে পড়ছে জল তাতে অদ্ভুত মাদকভরা শব্দ।একপাশ দিয়ে বেড়ে উঠা কুঞ্জলতায় লাল,সবুজে আচ্ছাদিত টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে মনে হচ্ছে মনখুলে আজ নৃত্য করছে বৃষ্টির দল।টিন থেকে ঝরে পড়া পানি ভূমিতে পতিত হয়েই ছলকে উঠে।
ছাই রঙা ব্লেজার পরিহিত ভদ্রলোক কোমল হাসলেন।হাসি হাসি মুখে শুধালেন—
“কেমন আছেন?
নিষ্প্রাণ প্রাণবন্ত হেসে উত্তর করে।
“ভালো।আপনি?
“জ্বী,ভালো।”
নিষ্প্রাণ নমনীয় চোখে চেয়ে কৌতূহলী গলায় বললো—
“কেন ডেকেছেন?
ভদ্রলোক নিগূঢ় চোখে চেয়ে বললেন—
“রাশেদ সাহেব আমাকে পাঠিয়েছেন।”
চকিতে ভ্রু কুঞ্চি করে নিষ্প্রাণ।জিঙ্গাসু গলায় বললো—
“কেন?
ভদ্রলোক অমায়িক হেসে নিষ্প্রাণের দিকে একটা খাম এগিয়ে বললেন—
” এখানে চার হাজার টাকা আছে।আপনার জন্য।”
যারপরনাই তাজ্জব হয় নিষ্প্রাণ।শুষ্ক গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে—
“কিন্তু এখন তো মাসের শেষ! এখন কেন টাকা পাঠালেন?আর এর জন্য কী আমার সামনের মাসের হাত খরচ কমিয়ে দেবেন তিনি?
ভদ্রলোক চোখে হাসলেন।মৃদু স্বরে বললেন—
“না।এইটা এই মাসের জন্যই।আপনি নিতে পারেন।”
নিষ্প্রাণ প্রফুল্লচিত্তে খামটা চট করে নিয়ে নিলো।সানন্দে বললো–
“ধন্যবাদ।
আর কিছু বলবেন?
ভদ্রলোক মৃদুহাস্য অধরে বললো—
“না।আপনি যেতে পারেন।তবে এই ঘন বর্ষাতে না ভেজাই আপনার জন্য উত্তম।”
“আসলে আমার একটা জরুরী কাজ আছে।দাদুকে আমার সালাম জানাবেন।আসি আমি।”
নিষ্প্রাণ রাস্তার দিকে তাকালো।দামাল বৃষ্টি কিছুটা কমে এসেছে।রাস্তায় জমেছে পানি।নিষ্প্রাণ চোখের চশমাটা ঠিক করে নিলো।স্লিপার পরা পায়ের গোড়ালি থেকে প্যান্টটা একটু উঁচুতে ভাঁজ করে নিয়ে সেই পানিভর্তি রাস্তায় নামে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে শীতল প্রভঞ্জনে উড়িয়ে নিচ্ছে নিষ্প্রাণের অর্ধভেজা চুল।টুকটুক করে তার চশমার গ্লাসে জমছে পানি।সেই সব ডিঙিয়ে পানির মধ্যে ঢেউয়ের সৃষ্টি করে এগিয়ে যাচ্ছে নিষ্প্রাণ।গায়ে পরা গাঢ় নীল রঙের টিশার্ট বুকে,পিঠে লেপ্টে গেছে।রাস্তার ওপ্রান্তে এসে একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়ে নিষ্প্রাণ।চশমার গ্লাস গলিয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে নির্বিঘ্ন হাসলো।নিষ্প্রাণ দৃষ্টিসীমার আড়াল হতেই ভদ্রলোক নিজের মুঠোফোন হাতে নিলেন।রাশেদ কে কল করে আনন্দের সহিত বললেন—
“হি ইজ ফাইন।আমি আপনাকে অডিও রেকর্ডারটা পাঠাচ্ছি।শুনে নেবেন।”
ভদ্রলোক নিষ্প্রাণের সাথে হওয়া পনেরো মিনিটের ভয়েজ রেকর্ডিং সেন্ট করে রাশেদের নম্বরে।
নিজের পাড়ায় আসতেই নভোলোকের অশ্রুনীর বন্ধ হওয়াতে স্বস্তির শ্বাস ফেলে নিষ্প্রাণ।টানা বর্ষনের পর ঝকঝকে নভোলোকে শুরু হয়েছে শুভ্র জলদের আনাগোনা।তার ভাঁজে ভাঁজে নীলাভ অম্বরের লুকোচুরি।
একটা রিচার্জের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় নিষ্প্রাণ।খামের ভেতর থাকা চার হাজার টাকা বিকাশ করে সীমান্তের অ্যাকাউন্টে।বিকাশ সাকসেসফুল হতেই ব্যস্তসমস্ত নিষ্প্রাণ কল করে সীমান্তকে।
স্নেহার্দ্র গলায় প্রশ্ন করে নিষ্প্রাণ—
“তোর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছি।দেখতো গিয়েছে কিনা?
সীমান্ত চেক করেই খুসখুসে গলায় বললো—
“টাকা পাইলি কই তুই?
“মামা পাঠিয়েছে।ফসল বিক্রি করেছে তাই।”
সন্দিগ্ধ গলায় প্রশ্ন করে সীমান্ত—
“টাকা ধার নিয়া করছিলি কী তুই?
নিষ্প্রাণ শিথিল গলায় প্রত্যুক্তি করে—
“বই কিনেছিলাম।”
সীমান্ত চওড়া গলায় বললো—
“একদিন এই বই কিনতে কিনতেই তুই ফকির হইয়া যাবি হারামি।বউরে খাওয়াবি কী!
নিষ্প্রাণ আদুরে হাসে।ব্যস্ত হয়ে বললো—
“কোথায় আছিস এখন?আজ তো এলি না।”
“আইতে পারমু না।আব্বা থাপড়াইবো।”
“কেন?
সীমান্ত বিতৃষ্ণা নিয়ে বললো—
“আর কইস না।ভাইয়ার লাইগা মাইয়া দেখতে যাইবো।আমি কেন যামু ক তো।পাঁচবছর ধইরা প্রেম কইরা এখন আমারে লইয়া মাইয়ারে আবার দেখতে যাইবো।মানে রঙের তামাশা দেইখা আর বাঁচি না আমি।শালা জীবনডা বেদনা!
নিষ্প্রাণ মুচকি হেসে বললো—-
“ভালো কিছুও তো হতে পারে।গিয়ে দেখ ভাইয়ার কোনো শ্যালিকা থাকলে তোরও একটা গতি হয়ে যাবে।”
“দুর ছাতার মাথা।এইসব পিরিতি ফিরিতি আমারে দিয়া হইবো না।আচ্ছা রাখি এখন।ভাইয়া ডাকতাছে।”
“ওকে।বাই।”
,
,
,
ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই আয়েন্দ্রির পাশ ঘেঁষে বসে আছে নিষ্প্রাণ।পেছন বেঞ্চে বসা নিষ্প্রাণ এখন সামনে বেঞ্চেই তার ঘাঁটি গেড়েছে।আয়েন্দ্রির টলটলে চাহনি উপেক্ষা করে বিগলিত হাসে নিষ্প্রাণ।আয়েন্দ্রি চট করেই বললো—
“তোর মোবাইলটা দে।”
নিষ্প্রাণ বিনা প্রতিক্রিয়ায় তার মোবাইলটা আয়েন্দ্রির হাতে দেয়।আয়েন্দ্রি গ্যালারির লক দেখিয়ে বললো—
“এইটা খোল।”
অধরের কোণ প্রসারিত করে নিষ্প্রাণ।সহজ গলায় বললো—
“ধ্রুবতারা।”
চোখের পাল্লা নেচে উঠে আয়েন্দ্রির।ধ্রুবতারা লেখতেই লক খুলে যায়।কিন্তু আয়েন্দ্রির বিস্ময় আকাশ ছোঁয়।গ্যালারিতে কিছুই নেই।ফিক করে হেসে ফেলে নিষ্প্রাণ।নরম গলায় বললো—
“ভয় পেয়েছিস?
“লক করে কেন রেখেছিস?
নিষ্প্রাণ হেয়ালি গলায় বললো—
“ভালো লাগে তাই।”
আয়েন্দ্রি নাক কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বললো–
“যত্তসব!
অধর ছড়িয়ে উৎফুল্ল হাসে নিষ্প্রাণ।স্যার ক্লাসে ঢুকতেই দৃঢ় হয়ে বসে সকলে।সীমান্ত পেছন থেকে ঠেস মেরে বলে উঠে—
“বাঁইচা থাকিস নিষ্প্রাইন্না।”
নিঃশব্দে হাসে নিষ্প্রাণ।আয়েন্দ্রির বুকের ভেতর ঢিবঢিব করছে।হট করেই আয়েন্দ্রির দিকে চোখ ফেলে নিষ্প্রাণ।হৃষ্ট গলায় বললো—
“তোর এই বেলি ফুলের ঘ্রাণ সত্যিই আমার প্রাণ নিয়ে নিবে ধ্রুবতারা”
রুদ্ধশ্বাসে নিষ্প্রাণের চকচকে অক্ষিযুগলের দিকে দৃঢ় আর ভীত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আয়েন্দ্রি।
#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ২০
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
শহীদ মিনারের পেছনের দিকে একটি দীর্ঘকায় বট গাছ।তার চারপাশে গোলাকার লাল পাথরের বেদি।বিছানো সবুজ ঘাসের উপর শিয়র উঁচু করে দাঁড়ানো বটগাছটি বহু বছরের পুরোনো।তার পাশেই দুই রুমের দেয়াল আর উপরে টিনসেড দেওয়া একটি দোচালা ঘর।সেখানে থাকেন ভার্সিটির পুরোনো দপ্তরী আসমত মিয়া।তার ঘরের পাশ ঘেঁষে চাপকল।
সীমান্ত বোতলভর্তি করে পানি সেই চাপকল থেকে।’দুষ্টের শিরমনি লঙ্কার রাজা’ উপাধিতে ভূষিত সীমান্ত একটু আগেই প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের সাথে মারামারি লাগিয়ে দিয়েছে।ছেলেটা প্রথম বর্ষের হলেও রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।মাথায় আঘাত লাগায় সেখান থেকে রক্ত বের হতেই তা পরিষ্কার করার জন্য ভার্সিটির পেছন দিকে নিয়ে যায়।পানি দিয়ে সেই রক্ত পরিষ্কার করে ছেলেটিকে পার্শ্ববর্তী হসপিটালে পাঠিয়ে দেয়।প্রাবিশ তখন বাইরে থাকায় এমন অঘটন ঘটলো।এক ঝাঁড়ি মেরে বলে উঠে প্রাবিশ—
“পাগল হয়েছিস?মারামারি করতে গেলি কেন?
বটগাছের বেদির উপর শান্ত হয়ে বসে আছে সীমান্ত।নির্বিঘ্ন গলায় বললো—
“তোরে কৈফিয়ত দিতে পারমু না।”
সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকা ভীতসন্ত্রস্ত কুসুম ক্ষীণ স্বরে বললো—
“ছেলেটা একটা মেয়ের সাথে বেয়াদবি করছিলো।সীমান্ত শুধু ওকে ধমকই দিয়েছে।কিন্তু ছেলেটাই উল্টো..।”
নিষ্প্রাণ একটা শিশু গাছের সাথে ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে আছে।সে তখন মসজিদে ছিলো।ঘটনা ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি।তবে সবটা সামলে নেয় সারক।আয়েন্দ্রি সর্বপ্রথম তার কাছেই যায়।কারণ রাজনীতিতে বিশেষ ঝোঁক আছে তার।প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে সে রাজনীতির সাথে যুক্ত।ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছেলেরা তাকে বেশ সমীহ করে।
,
,
,
মাথার উপর বিশাল ধূসর আকাশ।চারদিকে মৃদু সমীরণের গুঞ্জন।যান্ত্রিক বাহনের বিক্ষিপ্ত শব্দ।তার মাঝেই হুরহুরিয়ে যাচ্ছে রিক্সা।আয়েন্দ্রির পাশেই বসেছে প্রাবিশ।নিষ্প্রাণ বসতে চেয়েছিলো।কিন্তু আয়েন্দি সেই সুযোগ দেয়নি।পেছনে রিক্সায় বসেছে কুসুম আর তৃণা।আরেকটা রিক্সায় সীমান্তের সাথে নিষ্প্রাণ।উসখুস করছে তার মস্তিষ্ক।ভেতরে দাবদাহ প্রকট হচ্ছে ক্রমাগত।কিন্তু বাইরে শান্ত,সমাহিত।
বেশ কিছু সময়ের মৌনতা ভেঙে বলে উঠে আয়েন্দ্রি।
“আমার তোকে কিছু বলার আছে।”
প্রাবিশ বিনা সংকোচে বললো—
“বল।”
আয়েন্দ্রি ভীত গলায় বললো—
“প্রাণকে আমার ভয় করে।”
ফিক করে হেসে ফেলে প্রাবিশ।ফিচেল গলায় বললো—
“এরচেয়ে যদি বলতি আমার পিঁপড়াকে ভয় করে তাহলে আমি নির্দ্বিধায় মেনে নিতাম।”
আয়েন্দ্রি মেজাজ দেখিয়ে বললো—
“আমি মজা করছি না।”
প্রাবিশ নড়ে বসে।বৈকালের সূর্যের ম্রিয়মান আভায়ও কিঞ্চিৎ উষ্ণতা বিদ্যমান।তাতে অস্বস্তিও আছে।কিন্তু প্রাবিশের এখন আয়েন্দ্রির কথায় বেশি অস্বস্তি হচ্ছে।সরল গলায় বললো—
“এমন কেন মনে হচ্ছে তোর?
আয়েন্দ্রি চোখ পিটপিট করে তাকায়।লম্বা শ্বাস নিয়ে বললো গ্যালারির সেই কান্ডটার কথা ।এমনকি তাকে ধ্রুবতারা বলে ডাকার কথাও।মুচকি হাসে প্রাবিশ।খেয়ালিপনায় বললো—
“ও হয়তো তোকে পছন্দ করে।ছেলেটা কিন্তু জেমস বলতে পারিস।যদিও ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ততটা উচ্চ নয়।তবে,আমার মতে মানুষের পরিচয় সে নিজে।বংশ মর্যাদায় নয়।”
আয়েন্দ্রি নীরস গলায় বললো—
“আমার এখন এইসবে কোনো ইন্টারেস্ট নেই।বাবা এইসব পছন্দ করে না।”
“তুই নিষ্প্রাণকে পছন্দ করিস?
এই প্রশ্নের জবাব আয়েন্দ্রি দিতে পারলো না।প্রাবিশের ধারণা হলো,হয়তো আয়েন্দ্রি তার প্রশ্নের জবাব দিতে ইচ্ছুক নয়।তাই সে আর এই বিষয়ে কথা বললো না।
আয়েন্দ্রির সব কথা ব্লুটুথের মাধ্যমে শুনে ফেলে নিষ্প্রাণ।এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে অধরে ঝোলায় ক্লান্ত হাসি।তাদের রিক্সা এসে থামে বনশ্রীতে।আজ এখানে একটা ছোট্ট মেলা বসেছে।সীমান্ত আসতেই চাইছিলো না।মেয়েদের ভীড়ভাট্টা থাকে এইসব মেলাতে।কিন্তু নিষ্প্রাণের দেহপিঞ্জরে চলে শিরায় শিয়ায় নিষ্পেষণ।আয়েন্দ্রিকে কোনোভাবেই একা ছাড়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।তাই প্রাবিশ আর সীমান্তকে তার হৃদয় ভেজা কথায় গলিয়ে নেয়।
মেলার দরজার কাছে আসতেই সীমান্তের অক্ষিযুগল তটস্থ হয়।একগাদা মেয়ে মানুষের ঢলাঢলি।বিশ্রি কান্ড!
তারা তিনজন ভেতরে গেলো না।মেলার পাশেই কয়েকটা বড় আমগাছ।তারা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।আয়েন্দ্রি,তৃণা আর কুসুম ভেতরে যেতেই দেখে এলাহিকান্ড।মানুষে গিজগিজ করছে।মেয়েলি জিনিসের উপস্থিতি বেশি।একজন মহিলা ডালাভর্তি রঙ বেরঙের রেশমি চুড়ি নিয়ে বসেছেন।আয়েন্দ্রি উৎফুল্ল দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেই ডালার সামনে বসে।মাথায় আধঘোমটা দেওয়া শীর্ণ দেহের মহিলা মৃদু হাসলেন।আয়েন্দ্রি কালো রঙের একমুঠ চুড়ি হাতে গলিয়ে নেয়।কুসুমের সামনে হাত নাড়াতেই রিনিঝিনি শব্দ হয় তাতে।উচ্ছ্বসিত গলায় বললো—
“সুন্দর না চুড়িগুলো?
সেই চুড়ির শব্দ পৌঁছে যায় নিষ্প্রাণের কর্ণরন্ধ্রে।আর সেখান থেকে তার বুকের কম্পিত মাংসপিন্ডে।গম্ভীর শ্বাস ফেলে নিষ্প্রাণ।প্রাবিশ ব্যস্ত তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে।সীমান্তের বিরক্তিকর কন্ঠ—
“তোগো এই মাইয়া মানুষের নেওটামি একদম ভাল্লাগে আমার।”
নিষ্প্রাণ সেই কথা শুনলো না।তার মস্তিষ্ক ঝাঁঝিয়ে উঠলো ওপাশের অমসৃণ কন্ঠে।নিষ্প্রাণ শান্ত গলায় বললো—
“তোরা বস।আমি আসছি।”
“কই যাস তুই?
“মেলার ভেতরে।দাঁড়া এখানে তোরা।”
সীমান্ত ভ্রু কুঞ্চি করে তাকায়।নিষ্প্রাণ দৃঢ়চিত্তে লম্বা লম্বা পা ফেলে মেলার ভেতর প্রবেশ করে।
আয়েন্দ্রির হাত ধরে রেখেছে ছেলেটি।তার চুড়ি পরা হাতে আঙুল ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে মুখ দিয়ে অশ্লীল ভাবভঙ্গি করে।আয়েন্দ্রি জোর হাতে হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।তপ্ত গলায় বললো–
“এইটা কী ধরনের অসভ্যতা?
চোখে কালো রোদ চশমা পরে থাকা অপরিচিত ছেলেটি বাঁকা হেসে বললো—
“আপনার হাতটা খুব সুন্দর।ধরে দেখছিলাম।আসলে আমার গার্লফ্রেন্ডেরও চুড়ি ভীষণ পছন্দ।দেখতে শুনতে আপনার মতোই।”
অদ্ভুতভাবে আয়েন্দ্রির সারা শরীরে চোখ বোলায় ছেলেটি।মুহূর্তেই ভয়ংকর এক ঘটনা ঘটে গেলো।আচমকা ছেলেটির হাতটা কেউ ধরে তার হাতের মধ্যখানে কাঁচের তৈরি ভাঙা একটা ফুলদানি উপুর করে গেঁথে দেয়।আর্তনাদ করে উঠে ছেলেটি।হুলুস্থূল শুরু হয়ে যায় স্বাভাবিক পরিবেশে।
চলবে,,,
চলবে,,,