#প্রিয়তার_প্রণয়সন্ধ্যা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১০& শেষ
রাত প্রায় একটা, বাড়ির কারো চোখে ঘুম নেই। ইয়াশ কিছুক্ষণ আগেই এসেছে। ইয়াশের মা ইয়াশের কপালের জায়গাটা পরিষ্কার করে দিচ্ছে। সবাই এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে বা বসে আছে, সেখানে নেই শুধু প্রিয়তা। তাদের থেকে দূরে নিজের রুমের দরজার কাছে থেকে সে উঁকি দিয়ে দেখছে, তার চোখ দুটো টলমল করছে। হঠাৎ ইয়াশ তার দিকে তাকালেই সে রুমের ভেতরে ঢুকে যায়।
ইয়াশ বুঝতে পারে প্রিয়তা ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু এখানে সবাই আছে সে কেন আসছে না এটা ভাবতে থাকে। ইয়াশ ভাবতে থাকে, প্রিয়তার সাথে তার মামা আর বাবা-মা বিয়ের কথা বলেছিল এটা কি প্রিয়তাও জানতো! সে নিষেধ করে দিয়েছে বলে কি প্রিয়তা তার কাছে আসছে না! ইয়াশ সেদিন প্রিয়তার বলা কথাটা তেমন মাথায় নেয় নি, কেন বলেছিল সেটাও জানতো না।
ইয়াশের মা ইয়াশকে নিয়ে গিয়ে খাওয়ার জন্য বসিয়ে দেন। অনেক রাত হয়ে গেছে সারাদিন এখানে ওখানে যাওয়ায় বাহিরে থাকায় ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া হয় নি। ইয়াশ ও খাওয়া শুরু করে।
” তোমার আর এসব কাজে যেতে হবে না, এসব বাদ দাও আমার ব্যবসায় হাত লাগাও।” (ইলিয়াস, ইয়াশের বাবা)
” বাবা এসব কি বলছো? ”
” ঠিকই তো বলছি ইয়াশ।”
” বাবা, এই ঝামেলা বেধেছে কারণ আমি সঠিক ছিলাম, আমি তাদের কথায় তাল মিলিয়ে কথা বলি নি সেজন্য এমন হয়েছে।”
” তবুও আমি চাই তুমি এসবে আর না জড়াও।”
” আচ্ছা আপাতত পরিবেশ ঠিক হোক, আহমাদ স্যার বলেছেন কি হয় না হয় আমাকে জানাবেন।”
” শুরুতেই যদি এমন হয় তাহলে ভবিষ্যতে কেমন হবে বুঝতে পারছো?”
” বাবা, সাফল্যের পথ সহজ হয় না।”
” তোমার এই ইচ্ছের জন্য আমি আর তোমার মা হায়-হুতাশ করতে পারব না ইয়াশ। আমার কথা শোনো এসব থেকে সরে এসো।”
” ঠিক আছে, এবার যাও সবাই ঘুমাও।”
” অবনী যা তো মা প্রিয়তাকে নিয়ে তুই আর প্রিয়তা ঈশিতার রুমে থাক আজকের মতো আর ইয়াশ প্রিয়তার রুমে ঘুমাক।” (বেলাল)
” ঠিক আছে মামা।”
___
অবনী প্রিয়তার রুমে চলে যায় প্রিয়তাকে ডাকতে।
প্রিয়তা এই রাতের বেলায় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাহিরের চাঁদ দেখছিল। যেই মেয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ও উশৃংখল ধরনের ছিল কথা বেশি বলতো বাহিরে ঘুরাফেরা করতো পর্দা করত না গান-বাজনা মজা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা ইত্যাদি নিয়ে থাকতো সেই মেয়ে ভালোবাসার মানুষের সামনে পর্যন্ত যাচ্ছেনা নিজেকে সংবরণ করে রেখেছে। হেদায়েত কি আসলেই এত সহজে আসে কারো কাছে! এত সহজে সব রকম পা*প থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়! যে মেয়ে বাহিরে ঘোরাফেরার সময় পর্যন্ত কখনো কখনো ওড়না ব্যবহার করত না সেই মেয়ে নিজের ঘরের মধ্যে সমস্ত গায়ে ওড়না জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে!
প্রিয়তা এক মনে বাহিরে তাকিয়ে আছে, তার চারপাশে কি ঘটে যাচ্ছে না যাচ্ছে সেদিকে যেন তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তার সমস্ত মনোযোগ যেন বাহিরের আকাশের ওই চাঁদটায় রয়েছে। দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে কোনাকুনি ভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
অবনী প্রিয়তাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছে এগিয়ে যায় তার কাঁধে হাত রাখে। প্রিয়তার কাঁধে স্পর্শ করতেই সে চমকে ওঠে, পিছনে ফিরে তাকায়। তৎক্ষণাৎ আবার জানালার বাহিরের দিকে মুখ করে আলতো করে চোখের পানিটা মুছে ফেলে। তারপর আবার অবনীর দিকে ফিরে তাকায়।
” কি রে তুই!” (প্রিয়তা)
” হ্যাঁ আমি, তুই কি কান্না করছিলি? ” (অবনী)
” না তো, কান্না কেন করবো! ”
” দ্বিতীয়বার ওদিকে ঘুরে চোখের পানি যে মুছে ফেললি।”
” না না এমনিও দিতে হয়েছিলাম। কি করছে সবাই শুয়ে পড়েছে?”
” না মামা বলল আমাকে আর তোকে ঈশিতা আপুর রুমে ঘুমাতে, ইয়াশ ভাইয়া তোর রুমে এখানে ঘুমাবে। ”
” উনার শরীর এখন কেমন আছে? ”
” হ্যাঁ ভাইয়া তো ভালো আছে তুই গেলি না কেন ওখানে? ”
” না এমনি যাইনি। ভালো লাগছিল না। ”
” শরীর খারাপ লাগছে? ”
” না এমনি মন খারাপ লাগছে, মন খারাপের অসুখ ঠিক করার ওষুধ হবে? ”
” কি ব্যাপার প্রেমে পড়েছ নাকি? ”
” কয়েকদিন আগে হলেও হয়তো পড়তাম কিন্তু এখন প্রেমে পড়ার ইচ্ছে নেই। আচ্ছা চল আমরা রুম ছেড়ে দেই। ”
” হ্যাঁ চল। ”
প্রিয়তা আর অবনে ঈশিতার রুমে চলে যায়। ততক্ষণে সবাই ধীরে ধীরে নিজেদের রুমে যাওয়া শুরু করেছে। ইয়াশ সোফায় বসে আছে, প্রিয়তা আর অবনী পাশের রুমে চলে গেলে ইয়াশ প্রিয়তার রুমে যায়।
ইয়াশ রুমে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে তার ফোনে চার্জ নেই। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে চার্জার খুঁজে পায় না তখন অবনীকে ডাক দেয়।
পাশের রুম থেকেই ইয়াশের ডাক শুনে প্রিয়তা অবনীকে তার ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। অবনীও ইয়াশের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি চলে আসে।
” হ্যাঁ ভাইয়া বলো। ”
” আমার ফোনে চার্জ নেই চার্জার টা কোথায় খুঁজে পাচ্ছি না তো। ”
” দাঁড়াও আমি দিচ্ছি। ”
” এই নে ফোনটা নে একটু চার্জে লাগিয়ে দে। ”
” আচ্ছা দাও। ”
” এই শোন তো। ”
” হ্যাঁ বলো।”
” প্রিয়তার কিছু হয়েছে, না মানে রুমে একা একা ছিল দেখলাম আমি আসার পর আসলো না সবাই আমার কাছে ছিল কিন্তু প্রিয়তা গেল না যে! ”
” হ্যাঁ আমিও বিষয়টা খেয়াল করেছি। আমি রুমে এসে দেখি ও জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো কান্নাও করছিল আমাকে দেখে সাথে সাথে চোখ মুছলো।”
” হয়তো ঈশিতার বিয়ে হয়ে গেছে বাসায় একা একা এই জন্য। ”
” হতে পারে। ”
” আচ্ছা যা অনেক রাত হয়ে গেছে এখন ঘুমা সকালে উঠে নামাজ পড়বি। ”
” ঠিক আছে, কিছু লাগলে আমাকে ডেকো। ”
” আচ্ছা যা।”
অবনী ইয়াশের থেকে বিদায় নিয়ে পাশের রুমে চলে যায় ঘুমাতে। আসলেই অনেক রাত হয়ে গেছে সকালে এমনিতেও হয়তো ঘুম ভাঙবে না এলার্ম দিয়ে রাখতে হবে। অবনী এসে প্রিয়তার পাশে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
” কেন ডেকেছিল কোন দরকার? ”
প্রিয়তা অবনীর দিকে ফিরে প্রশ্নটা করে।
” হ্যাঁ ভাইয়ার ফোনে চার্জ ছিল না তো চার্জার খুঁজে পাচ্ছিল না আমি ভাইয়ার ফোনটা চার্জে দিয়ে আসলাম। ”
” আচ্ছা। ঘুমা তাহলে অনেক রাত হয়ে গেছে। ”
” হ্যাঁ তুইও ঘুমা।”
” হুম।”
দুজন আর এত রাতে নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি না করে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে নাস্তা করে ইয়াশ এবং তার বাবা-মা, অবনী সবাই বাড়ি ফিরে যায় কারণ ঈশিতার শ্বশুরবাড়ি থেকে বলেছে তারা সাতদিন পর বাসায় এসে ঘুরে যাবে। সকাল সকাল সবাই বাসায় ফিরে যায়।
ইয়াশ ভোরবেলা প্রিয়তার ব্যবহারে খুব অবাক হয়েছিল। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙে গেলেও সে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। কেউ এসে মাথার পাশে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে সে এটা বুঝতে পারে। মাথার পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কান্না করছে সে শব্দ ও বুঝতে পারছে। কিচ্ছুক্ষণ পর আবার পায়ের শব্দ পায় তার মানে সে চলে যাচ্ছে তখন ইয়াশ তাকিয়ে দেখে প্রিয়তা। তখনই সে তাকে ডাক দেয়।
প্রিয়তা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়, সে এটা আশা করে নি। সামনের দিকে আর না এগিয়ে পিছনের দিকে ফিরে তাকায়।
” কি করছিলি এখানে?”
” না মানে।”
” হ্যাঁ কি?”
” আমি ডায়েরী নিতে এসেছিলাম।”
” নিয়েছিস?”
” হ্যাঁ নিয়েছি।”
” এই ভোরবেলা ডায়েরী দিয়ে কি হবে?”
” একটু দরকার এজন্য নিতে এসেছিলাম।”
” রাতে সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল, তুই আসলি না কেন?”
ইয়াশের এই প্রশ্নের কি জবাব দেবে সেটাই ভাবছে, সে যে রাতে তার সামনে যেতে পারে নি বলে মনটা খচখচ করছিল ঘুম আসছিল না তাই দেখতে এসেছিল এক নজর সেটা তো তাকে জানানো যাবে না।
” কি হলো আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।”
” ভালো লাগছিল না এজন্য রুম থেকে বের হই নি।”
” তুই জানিস না একটা রুমে যখন একটা পুরুষ একা থাকে সেখানে একা যেতে নেই? এই ভোরবেলা এখানে আসা কি তোর ঠিক হয়েছে?”
” আমার এখানে আসার কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই। প্রয়োজন ছিল বিধায় এসেছিলাম, প্রয়োজন শেষ তাই চলে যাচ্ছি।”
” তোর প্রয়োজনটা কি লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখা?”
” মোটেও না, আমি কেন অন্য কাউকে লুকিয়ে দেখতে যাব? ডায়েরী নেওয়ার ছিল এই যে দেখুন নিয়েছি এখন আসছি।”
প্রিয়তা আর দেরি না করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইয়াশ প্রিয়তার কথা লুকিয়ে পালিয়ে যাওয়া দেখে মিটিমিটি হাসে আর অবাক হয় এটা ভেবে যে তার প্রতি অভিমান এত যে রাতে দেখতে আসলো না আর ভালোবাসা এত গভীর হয়ে গিয়েছে যে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তাকে দেখার লোভ সামলাতে পারে নি!
চলবে…………..
সবাই কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগছে। ভালো থাকবেন সকলে।#প্রিয়তার_প্রণয়সন্ধ্যা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১১( অন্তিমপর্ব)
দিনের পরে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত আর রাতের পরে নতুন আরেকটা দিন এভাবে চলতে চলতে কেটে গেছে বেশ কিছু সময়। ইয়াশ ও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজের ইচ্ছে পূরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে প্রিয়তারও আভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
প্রিয়তা দুদিন হলো তার বান্ধবীর বাসায় ছিল, ক্লাস শুরু হবে কয়েকদিনের মাঝেই তাই সবাই পড়াশোনায় ব্যস্ত হওয়ার আগেই একসাথে ভালো কিছু সময় পার করলো। বান্ধবীদের সাথে দিনের সবটা সময় কাটালেও সন্ধ্যা পর যে ভালো লাগা কাজ করে সবাই একসাথে থাকলে সেটা আসলে পরিমাপযোগ্য না। তাই সবাই মিলে ঠিক করে যেকোন একজনের বাসায় কয়েকজন মিলে দুদিন মজা করবে। বিকেলবেলা সেই বাসা থেকে বেরিয়েছে লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে। লাইব্রেরী থেকে এখন সোজা নিজের বাসায় চলে যাবে। তার বাসা থেকে কিছুটা দূরেই লাইব্রেরিটা আছে, কিছুদিন যাবৎ তার বই পড়ার খুব অভ্যাস জন্মেছে।
প্রিয়তা লাইব্রেরীতে পৌঁছে তার নিজের পছন্দ অনুযায়ী বইগুলো কিনে আবার বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে এমন সময় ঈশিতার কল আসে। সে তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করে।
” আসসালামু আলাইকুম আপু। কতদূর আসছো তোমরা? ”
” আমরা তো বাসায় চলে এসেছি তুই কোথায়?”
” আমি তো এই যে লাইব্রেরীতে বই কিনতে এসেছিলাম কেনা হয়ে গেছে আমি বাসায় আসছি।”
” হ্যাঁ তাড়াতাড়ি বাসায় আয়, আর হ্যাঁ শোন তো…”
” হ্যাঁ বলো।”
” তোর কাছে কি টাকা আছে?”
” কেন, কিছু লাগবে তোমার?”
” টাকা থাকলে একটা লাল ওরনা নিয়ে আসিস তো, বউ ওরনা।”
” বউ ওরনা দিয়ে কি হবে?”
” আমার টা খুঁজে পাচ্ছি না আসার সময় হয়তো নিয়ে আসি নি। তোর ভাইয়ার বন্ধু ফটোগ্রাফার, ও এখানে আসবে ভাবলাম ক’টা ছবি উঠব।”
” বউ সেজে ছবি উঠতে হবে নাকি?”
” হ্যাঁ, ইচ্ছে হচ্ছে। আসার সময় প্লিজ নিয়ে আসিস বোন। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসছি কিন্তু তোমার পছন্দ হবে?”
” তোর যেটা ভালো লাগবে সেটাই নিয়ে আসবি, তোর পছন্দের ওপর আমার ভরসা আছে। এবার যা একটু দেখেশুনে সুন্দর দেখে বউ ওরনা নিয়ে আয়।”
” সে নাহয় নিয়ে আসছি, কিন্তু বাসায় এত হৈচৈ কেন?”
” কোথায় হৈচৈ? আমাদের আসার খবর শুনে অবনী এসেছে, গল্প করছি বসে সবাই।” (ঈশিতা)
” সত্যি করে বলো তো কখন এসেছ? আমাকে ছাড়া তোমরা এত মজা কেন করছো দাঁড়াও আমি আসছি। ” (প্রিয়তা)
” আমরা এসেছি সকালেই, অবনীও সকালেই এসেছে।”
” বাহ, সবাই বাসায় সকাল থেকেই আছো আর আমাকে বলো নি!”
” তুই ও তো মজা করতেই গিয়েছিস বান্ধবীর বাসায় তাই আর বিরক্ত করি নি, এখন তাড়াতাড়ি ওরনা কিনে বাসায় ফিরে আয় সবাই অপেক্ষা করছে।”
” সবাই অপেক্ষা কেন করছে? সবাই কে কে?”
” সবাই মানে আমরা, আমি, তোর ভাইয়া, অবনী।”
” হুম আসছি, ফোন রাখো।”
” হ্যাঁ তাড়াতাড়ি চলে আয়।”
ঈশিতা কল কেটে দেয়, একটুর জন্য সব বলে দিচ্ছিলো। পাশে থেকে অবনী বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
” তোর আবার কি হলো?” (ঈশিতা)
” এখনই তো মুখ ফসকে সব বলে দিতে যাচ্ছিলে তুমি।” ( অবনী)
” আরে বলি নি তো কিছু, সো লিভ ইট মেরি জান।”
” কিছু বুঝতে পারলে তোমাকে একদম ছাদ থেকে ফেলে দিতাম।”
” আবির কি তোকে ছেড়ে দিতো?”
” ভাইয়া কি করতো সেটা পরে দেখা যেত, আগে তোমাকে তো ফেলতাম!”
” এই তোমাদের এত কথা কেন? কাজ শেষ করো তাড়াতাড়ি, দেখছো না কত কাজ বাকি এখনও!” (আবির)
” আপনার বউকে ফরফর করে বেশি কথা বলতে নিষেধ করে দেন ভাইয়া।” (অবনী)
” কেন সে কি করলো?”
” এখনই সব বলে দিতে যাচ্ছিলো প্রিয়তাকে।”
” আরে কিছু বলি নি কিন্তু, এখন নে কাজ কর।” (ঈশিতা)
” আর এই যে শালিকা, প্রিয়তাকে প্রিয়তা বলা বাদ দাও, সে তোমার সিনিয়র। ”
” হ্যাঁ কথাবার্তায় পরিবর্তন আনতে হবে দেখছি কি করে সম্ভব হয়, একদম সোজা ভাবিতেই চলে যাব ভাবছি!”
অবনীর কথায় সবাই একযোগে হেসে ওঠে। তাদের হাসির শব্দে অন্যপাশে থাকা একজন তাদের দিকে এগিয়ে আসে।
” কি হচ্ছে এখানে?”
ঈশিতা জনৈক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বলে, ” তেমন কিছু না ভাইয়া কাজের মাঝে বিনোদন হচ্ছে। তবে ফাঁকি কিন্তু দিচ্ছি না আর হ্যাঁ নিজে তো ভুল করে বউ ওরনা নিয়ে আসেন নি, প্রিয়তাকেই কিন্তু বউ ওরনা নিয়ে আসতে বলেছি।”
” বউ কি না নিয়ে আসবে বউ ওরনা!”
” হ্যাঁ আপনি যেমন নিজের কাজ সম্পন্ন করতে পারেন নি, বাকিটা বউ নিজে করবে, বা জেনে না বুঝে।”
” বেচারি!”
” আচ্ছা শাড়িটা ঠিকমতো রেখে এসেছেন, আর চিরকুট! ”
” হ্যাঁ রেখে এসেছি বিছানার ওপর।”
” আচ্ছা এবার চটপট কাজ শেষ করি আমরা।” (ঈশিতা)
” হ্যাঁ। ”
” চিন্তা নেই ভাই, সব হয়ে যাবে।” (আবির)
” আপনারা না থাকলে এতকিছু করতামই না।”
” জানি তো, কাজী নিয়ে এসে কবুল বলিয়ে নিয়ে যেতেন। একমাত্র শালিকা বলে কথা এমনি এমনি এত নিরামিষভাবে কীভাবে যেতে দেই!” (আবির)
” বেচারি অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যাবে।” (অবনী)
সবাই কাজ করার পাশাপাশি মজা করতে থাকে। সারপ্রাইজ পেতে যেমন ভালো লাগে তেমনই সবাই মিলে কাউকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কাজ করতেও ভালো লাগে। সবাই মিলে আড্ডা দেওয়ার সাথে সাথে কাজ করতে থাকে।
_______
প্রিয়তা বাসায় ঢুকে সোজা রান্নাঘরে চলে যায় কারণ বাসায় ঢুকেই রান্নাঘর থেকে দারুণ গন্ধ পাচ্ছিলো। রান্নাঘরে গিয়ে দেখে তার মা আর ফুপু রান্নায় ব্যস্ত। রান্নাঘরে ঢুকেই প্রিয়তা তাদের সালাম দেয়। দুজনই একসাথে সালামের জবাব দেয়।
” ফুপিও এসেছো!” (প্রিয়তা)
” হ্যাঁ, কেন আসতে পারি না তোমাদের বাড়ি?”
” আমি কি সেটা বলেছি নাকি বলো! আমি বাসায় নেই আর সবাই বাসায় এসে মজা করছো নানারকম রান্না করছো! কি কি রান্না হচ্ছে?”
” সব তোর পছন্দের রান্না হচ্ছে। ” (প্রিয়তার মা)
” আজ এত রান্না! গরুর মাংস রান্না হয়েছে?”
” হ্যাঁ হয়েছে, ওটা কমপ্লিট। ”
” আমি বোরখা খুলে আসছি আমাকে গরুর মাংসটা দাও প্লিজ…”
” আগেই না, আগে রুমে যা আমি ঈশিতা আর অবনীকে ডেকে দিচ্ছি।” (বেলা)
” কেন, ওরা কোথায় আছে?”
” ওরা সবাই ছাদে আছে।”
” আমিই যাচ্ছি সমস্যা নেই।”
” না এখন তোমার ছাদে যাওয়া হবে না।”
” কেন?”
” কারণ আছে তাই।”
” কি করছো তোমরা বলো তো, কি লুকোচ্ছো আমার কাছে থেকে?”
” একটু পর জানতে পারবে সব। যাও এখন রুমে যাও তাড়াতাড়ি। ”
” কিন্তু বলবে তো কি হচ্ছে…”
” রুমে যাও, সব জানতে পারবে।”
প্রিয়তাও আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। মিসেস বেলা রান্নাঘর থেকে ছাদের দিকে যেতে থাকে ঈশিতা আর অবনীকে ডাকতে।
_____
প্রিয়তা রুমে ঢুকে বইগুলো রেখে বোরখা খুলে বিছানার দিকে আসতেই দেখে সেখানে একটা টকটকে লাল রঙের একটা শাড়ি রাখা আর তার ওপরে একটা কাগজ। প্রিয়তা ভাবে ঈশিতা তো কল দিয়ে বলেছিল বউ ওরনা নিয়ে আসতে তাহলে হয়তো তার শাড়ি এটা কিন্তু এটা ঈশিতা নিজের রুমে না রেখে তার রুমে কেন রেখেছে! প্রিয়তা শাড়ির ওপরে রাখা কাগজটা হাতে নিয়ে ভাজ খুলতে থাকে। সেখানে লেখা আছে, ” এই হবু বিবিসাহেবা এটা পরে চটজলদি ছাদে চলে আসবেন, বউ সাজবেন কিন্তু, আপনাকে বউ সাজে দেখার ইচ্ছে আর দমিয়ে রাখতে পারছি না। আর এই যে সবসময় মুখ মলিন করে রাখেন সবার চোখের আড়ালে আমাকে দেখেন এবার আমাকে দেখার অধিকার দিয়ে দেব আপনাকে। বুঝে ফেলেছেন আমি কে তাই না? বুঝে ফেলারই তো কথা, এই একজনকেই তো আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন। তুই থেকে সোজা আপনি করে বলছি বলে কি অন্যরকম অনুভব করছেন? এবার অভ্যাস করে নিন, আমিও আপনার সাথে আপনি করে বলব, আর আপনি তো আমাকে আপনি করেই বলেন। এই ভাষাতে কেমন একটা ভালো লাগা কাজ করে তাই না! অনেক কথা বলে ফেলেছি এবার চটজলদি তৈরি হয়ে নিন। শুনুন টিপ ইগনোর করবেন, ওটা ছাড়াই আপনি আলোকরশ্মি, একদম আমার হৃদয়ে বি*ধে যাওয়ার মতো।”
চিরকুট পড়ে শেষ করতে না করতেই ঈশিতা আর অবনী রুমে প্রবেশ করে। দুজন এসে প্রিয়তার পাশে দাঁড়াতেই প্রিয়তা সাথে সাথে চিরকুট বন্ধ করে ফেলে।
” কি রে রেডি হবি না? বউ ওরনা কোথায়?” (ঈশিতা)
” কি হচ্ছে আপু? বাসায় রান্না, তুমি বউ ওরনা নিয়ে আসতে বলেছো, এখানে শাড়ি চিরকুট রাখা আমাকে বউ সাজতে বলা হয়েছে, এসব কেন? আমি কেন বউ সাজব, কার জন্য সাজবো?” (ঈশিতা)
” ভাবি তাড়াতাড়ি এসো সাজিয়ে দেই সময় হয়ে গেছে।” ( অবনী)
” তুই আমাকে ভাবি কেন বলছিস?”
” ভাইয়ার বউকে ভাবি বলব না তো কি বলব?”
” কি হচ্ছে বাসায়, বুঝতে পারছি না আমি।”
” আরে বাবা সব বুঝতে পারবি, আর হ্যাঁ তুই যা ভাবছিস তাই।” (ঈশিতা)
” আমি কি ভাবছি?”
” সব কথা পরে হবে আগে তাড়াতাড়ি আয় আয় সাজিয়ে দেই। তোর হবু বর তো তোকে দেখার আকুলতা বাড়িয়েই চলেছে তার আর সময় যাচ্ছে না। তিনি একেবারে তোকে বউ সাজেই দেখবেন।” (ঈশিতা)
” মানে কি আপু? আমার হবু বর কে?”
” তুই যাকে ভাবছিস সে।”
” আমি বিয়ে করব না তাকে।”
” ড্রামা করিস না এখন চল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”
” সে তো বিয়ে করবে না বলেছিল এখন আবার এত তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করবে মানে? আর হঠাৎ করেই আমাকে বিয়ের জন্য বউ সাজতে বললেই কেন আমি বউ সাজবো? আমি বিয়ে করব না….”
” শোনো মেয়ে, আমার ভাইয়ার জন্য কিন্তু মেয়ের অভাব নেই। আজকেই ভাইয়ার বিয়ে দিয়ে দেব, হয় তুমি বিয়ে করবে নয়তো অন্যকেউ। আজ আমার ভাবি লাগবেই।” ( অবনী)
” পা ভেঙে রেখে দেব অন্যকাউকে ভাবি বানাতে যা না দেখ কি করি!”
প্রিয়তার কথা শুনে ঈশিতা আর অবনী দুজন হেসে ফেলে। অবনী বলে,
” তাহলে চুপচাপ রেডি হয়ে নাও ছাদে সবাই অপেক্ষা করছে, কাজী সাহেবও।”
প্রিয়তার সাথে এমন একটা অবাক করা ঘটনা ঘটবে এটা সে কখনো কল্পনা করতে পারে নি। ইয়াশকে না পাওয়ার ভয় পেয়েছিল প্রথম যেদিন শুনেছিল ঈশিতার সাথে বিয়ে, দ্বিতীয় দিন আবার ভেতর থেকে ভেঙে গিয়েছিল যখন ইয়াশ তার সাথে বিয়েতে নিষেধ করেছিল। এতকিছুর পরও প্রিয় মানুষকে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই না।
প্রিয়তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে একদম ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানেই সবাই অপেক্ষা করছিল।
প্রিয়তা ছাদের চারপাশে তাকিয়ে দেখে ছাদের সবটা সাজানো হয়েছে সুন্দর করে। ছাদের একপাশে বসার জায়গা করা, সেখানে সবাই বসে আছে সাথে ইয়াশও। সাদা পাঞ্জাবি পাজামাতে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। মুখের দাঁড়িগুলো যেন আজ তাকে সাথ দিচ্ছে আরও সুন্দর দেখাতে। প্রিয়তাকে নিয়ে গিয়ে ইয়াশের পাশে বসিয়ে দেওয়া হয়।
ইয়াশ চুপচাপ বসে ছিল, প্রিয়তাকে পাশে বসিয়ে দেওয়া মাত্র তার মধ্যে অস্বাভাবিক কার্য ঘটছে, বারবার কপালের ঘাম মুছছে সে মাঝে মাঝে বুকে হাত দিচ্ছে বিষয়টা প্রিয়তাও খেয়াল করছে।
” আপনার কি খারাপ লাগছে?”
প্রিয়তা আস্তে করে কথাটা জিজ্ঞেস করে ইয়াশকে।
” অন্যরকম ভালো লাগছে, আপনি তো এর আগে অনেকবার আমার পাশে এসেছেন কিন্তু এরকম অনুভূত হয় নি। ”
” কেমন লাগছে?”
” ভীষণ অন্যরকম।”
” খারাপ লাগলে বলুন, আমি বাবাকে বলছি।”
” না না, এরকম লাগতে দিন, এই ভালো লাগার কোন ডেফিনেশন নেই। ”
” এত ভালো লাগা আগে ছিল না কেন?”
” অসময়ে ভালো লাগা লাগতে নেই, আমার সব ভালো লাগা এখন আপনার নামে। আপনার গা থেকে যে সুগন্ধ আসছে, এটা পৃথিবীর সেরা সুগন্ধ। এই যে আপনার হাসি হাসি মুখ, এটা আমাকে অসম্ভব স্বস্তি দিচ্ছে। ”
” থাক আর বলতে হবে না। এখন এত মানুষের মাঝে উনার প্রেম পাচ্ছে।”
” আজ অনেক কথা বলার আছে আপনাকে, আমার সব কথা জানাবো। আমার করে নিয়ে আপনাকে আমার সব জানাবো।”
” আপনার ” আপনি” বলাটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে।”
” আরও অনেককিছু সুন্দর লাগা বাকি আছে বিবিসাহেবা।”
” এখনও নই।”
” চলুন হয়ে যান।”
প্রিয়তা আর কোন কথা বলে না, কেমন একটা লাগছে তার। সে যা দেখছে এগুলো কি সত্যি! ইয়াশ তাকে এসব বলছে, তার কথায় কেন এত ভালোবাসা পাচ্ছে তার! কেন মনে হচ্ছে এই সময়টা থেমে যাক, চারপাশ স্থীর হয়ে যাক, চারপাশ জনশূণ্য হয়ে যাক, শীতল হাওয়া বয়ে যাক শুধু সে আর তার প্রিয় মানুষ, জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
“আলহামদুলিল্লাহ কবুল” তিনবার বলার মাধ্যমে দুজন নতুন সম্পর্কে আবর্তন করে। এই শব্দটা যেন সাথের মানুষের প্রতি ভালোবাসা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। প্রিয়তা আর ইয়াশ ও যেন একে অপরের প্রতি আরও টান অনুভব করছে। এই অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য হাজার শব্দও যেন কম পড়ে যাবে।
ইয়াশ প্রিয়তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, প্রিয়তাও ধীরে ধীরে ইয়াশের হাতে হাত রাখে। ইয়াশের হাত কাঁপছে, শক্ত করে হাত ধরে নেয় সে। এই প্রথম প্রিয়তমাকে স্পর্শ, নিজের করে, হালাল করে। এই মানুষ এখন তার, শুধুই তার। মা-বাবা, ভাই-বোন বা বন্ধু-বান্ধবের ভাগ হলেও পৃথিবীর এই একটা মানুষের কোন ভাগ নেই, আর কেউ তার ভাগীদার নয়। দুজন এই প্রথম দুজনের চোখে তাকায়, নিজেদের নতুন পৃথিবী দেখতে পায় যেখানে আছে শুধু ভালোবাসা আর পূর্ণতা।
ভালোবাসা রঙধনুর মতো মনের আকাশে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখুক, এভাবেই পূর্ণতা পাক প্রতিটা ভালোবাসা।
**সমাপ্ত**
গল্পের সমাপ্তি এখানেই, কেমন হলো জানাবেন। আজকে সবার মন্তব্য আশা করছি। গল্পটা আর দীর্ঘ করতে মন চাইছিলো না তাই ভালো লাগা আর ভালোবাসার পূর্ণতা দিয়ে সমাপ্তি ঘটালাম। নতুন গল্প নিয়ে আসবো খুব শীঘ্রই ইন শা আল্লাহ।