#প্রিয়তার_প্রণয়সন্ধ্যা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৮
ঈশিতাকে আবিরের পরিবার দেখতে আসার সপ্তাহ দুই পরই ঈশিতার বিয়ে ঠিক হয় আবিরের সাথে। একদিন দুইদিন করে পুরো তেরো দিন কেটে যায়। বিয়েটায় বড় আকারের অনুষ্ঠান করা হবে না।
বাড়িতে সবাই বিয়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন না কোন কাজে ব্যস্ত। ইয়াশের পরিবার গতকালই চলে এসেছে। ইয়াশের বাবা নিজে এত ব্যস্ত তবু সময় বের করে গতকাল ঠিকই চলে এসেছেন। সবাই গতকাল চলে আসার সময় ইয়াশ বলে দিয়েছিল আজ সকালে চলে আসবে। কারণ বিয়ে বাড়িতে ছেলে মানুষের প্রয়োজন হয়, তার সাথে দুই তিনটা ছেলেকে নিয়ে আসার কথাও ছিল কিন্তু সে সকালে জানালো আসতে পারবে না।
এই তো সকালে অবনী আর প্রিয়তা তাদের কাজ করছিল এমন সময় ইয়াশ অবনীকে কল দেয়। অবনী ফোন থেকে দূরে থাকায় প্রিয়তা টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে অবনীকে দেওয়ার সময় ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ইয়াশ কল দিয়েছে। সে সাথে সাথে আর দেরি না করে অবনীর হাতে ফোনটা দিয়ে দেয়। ইয়াশ কল দিয়েছে দেখে অবনী তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে।
” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ”
” ওয়ালাইকুমুস সালাম। কি করছিস?
” এইতো ভাইয়া আমি আর প্রিয়তা একটু কাজ করছিলাম বিয়ে বাড়ি বোঝোই তো, তুমি কখন আসবে? ”
” আমি তো আসতে পারবো না এটা জানানোর জন্যই কল দিয়েছি। ”
” কেন কি হয়েছে? ”
” বাবা কোথায়? ”
” বাবা হয়তো মামার সাথে কাজ করছে। কেন কথা বলবে? ”
” হ্যাঁ বাবাকে প্রয়োজন। ”
” কল দাও। ”
” ফোন বন্ধ বলছে তুই একটু তোর ফোনটা বাবার কাছে নিয়ে যা। ”
” আচ্ছা দাড়াও আমি নিয়ে যাচ্ছি। ”
অবনী ফোনটা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে তার বাবাকে খুঁজতে থাকে। অতঃপর বাবাকে খুঁজে পেলে উনার হাতে ফোনটা দিয়ে বল, ” এই নাও ভাইয়া কথা বলবে, তোমাকে অনেকক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছে তোমার ফোন বন্ধ। ”
ইয়াশের বাবা ফোনটা নিয়ে ইয়াশের সাথে কথা বলেন। ইয়াশ জানায় তাকে কোন এক সম্মেলনে আজকেই শহরে যেতে হবে। এই সম্মেলনটা সপ্তাহখানেক পরে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেই সম্মেলন টা আজকেই করা হয়েছে বিকেল চারটার দিকে। বাসা থেকে শহরে যেতে মিনিমাম পাঁচ ঘন্টা লাগবে। সে অলরেডি তার দলের কয়েকজনের সাথে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। ইয়াশ মনে করে এই সুযোগটা কোনভাবেই হাতছাড়া করা উচিত হবে না। ইয়াশের বাবা ও যেহেতু রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাই তিনিও চান ইয়াস তার ভাবনা অনুযায়ী এগিয়ে যাক। এই দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে তরুণ শিক্ষিত ছেলেগুলো দেশের হাল ধরলে দেশ অন্য একটা পর্যায়ে চলে যাবে।
তিনি ইয়াশের সাথে ভালোমন্দ কিছু কথা বলে ফোনটা রেখে দেন৷ তিনি ইয়াশকে পুরোপুরি ভরসা করেন এই ভেবে যে ইয়াশ কিংবা ইয়াশের ভাবনার সাথে মিল আছে এমন কেউ যদি দেশীয় আইনের, দেশ পরিচালনার কোন ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকে তাহলে দেশের মানুষ এই দেশের এক অন্যরকম রূপ দেখবে।
__________
সাদা রঙের মাইক্রো গাড়িটা ছুটে চলেছে আপন গতিতে। ভেতরে বসা কয়েকটা টগবগে রক্তের তরুণ। যাদের মাথায় স্বার্থহীনভাবে দেশের চিন্তা আর উমরের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার স্বপ্ন। এই স্বপ্ন কবে পূরণ হবে কে জানে, যারা কোনকিছুর স্বপ্ন দেখে তারা সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ ও করে। মাঝরাস্তায় একটা স্টল দেখে গাড়িটা থেমে যায়। গাড়ি থেকে চারজন নেমে স্টলে বসে চা খেতে। চা খেয়ে আরো কিছুক্ষণ বসে কথা বলে আমার গাড়িতে গিয়ে বসে, গাড়ি ও আবার আপন গতিতে চলা শুরু করে একটু একটু করে চলতে থাকে গন্তব্যের দিকে ।
প্রিয়তা কাজের ফাঁকে একসময় অবনীকে জিজ্ঞেস করে, ” কি রে ইয়াশ ভাইয়া আসবে না বিয়েতে?”
” না, ভাইয়ার তো কাজ পড়ে গিয়েছে এজন্য সে শহরে রওয়ানা দিয়েছে। বাবার সাথে এ বিষয়েই তো কথা বলল।” (অবনী)
” বাবা যে বলল বাড়ির কাজে উনাকে প্রয়োজন ছিল?” (প্রিয়তা)
” বাবাকে বলেছে ভাইয়া কয়েকজনকে এই বাসার ঠিকানা দিয়েছে ওরা নাকি ঘন্টাখানেকের মাঝেই চলে আসবে।”
” উনার এত জরুরি কাজ, যে আজ আপুর বিয়ের দিনে বাহিরে কোথাও যেতেই হলো?”
” হ্যাঁ জরুরি না হলে তো যেত না।”
” হ্যাঁ কত জরুরি কাজ জানা আছে, শুধু ছেলেদের দলবল নিয়ে এখানে ওখানে যাবে ঘুরবে, মানুষকে ভয় দেখাবে তাছাড়া উনার আবার গুরুত্বপূর্ণ কি কাজ! ”
” আমার ভাইয়া মোটেও এমন না।”
” হ্যাঁ খুব ভালো মানুষ উনি।”
” অবশ্যই, আমার ভাইয়ার মতো ছেলেই পাবি না কোথাও।” ( অবনী)
” তোর ভাইয়ার মতো ছেলে কেন খুঁজতে যাব? ”
” সেটা তুই-ই জানিস।”
” বয়েই গেছে আমার, উনার মতো ছেলে খুঁজতে। যতপ্রকারের……”
” কিছু বললি?” ( অবনী)
” নাহ, আমি আবার কি বলব!”
” হ্যাঁ, যা বলবি স্পষ্ট বলবি, লুকিয়ে নিজে বলবি নিজেই শুনবি এমন কিছু বলবি না।”
” হ্যাঁ কাজ কর এখন।”
” জি আপনিও আপনার কাজটা শেষ করুন।”
” অবশ্যই ম্যাম।”
দুজন একসাথে হেসে ফেলে, নিজেদের কাজে মন দেয়। প্রিয়তা ভাবতে থাকে তার বড় বোনকে কি তাহলে পছন্দ করেছিল ইয়াশ! তার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলেই কি সে আজ কাজ দেখিয়ে এ বাড়িতে আসলো না!! একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে প্রিয়তা, এখনও যে ওই লোকটার প্রতি থাকা ভালো লাগাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে না। উনি তো তার সাথে বিয়েতে না করে দিয়েছে, ইয়াশ তার হয় নি এটা সে মেনে নিতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু সে যদি অন্য কারো হয়ে যায় তাহলে বিষয়টা সে(প্রিয়তা) কীভাবে মেনে নেবে!
_________
দুপুর গড়িয়ে বিকেল এবং বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। বিয়েটা খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিয়ের সম্পন্ন হওয়ার পর ঈশিতাকে তার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাড়িতে এখন প্রিয় তার বাবা-মা প্রিয়তা এবং ইয়াসের বাবা-মা আর অবনী। ইলিয়াস সাহেব (ইয়াশের বাবা) এবং বেলাল সাহেব বসে কথা বলছিলেন। সবার নামাজ হয়ে গেলেও প্রিয়তা এখনো জায়নামাজ ছেড়ে ওঠেনি। মিসেস রোমেলা বেলা এবং অবনী তিনজন বসে গল্প করছিল।
প্রিয়তা জায়নামাজ থেকে উঠে পাশের রুম সবার সাথে বসতে যাবে তখনই টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে ওঠে। প্রিয়তা গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে তার বান্ধবী রিমি ফোনটা দিয়েছে।
” হ্যাঁ রিমি বল, কেমন আছিস? ”
” এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুই কেমন আছিস? ” (রিমি)
” আমি আলহামদুলিল্লাহ। কি করছিস? ”
” আমি তো টিভি দেখছিলাম টিভি দেখেই তোকে ফোন দিলাম কি হচ্ছে দেখেছিস? ” (রিমি)
” না তো কেন কি হয়েছে? ”
” ফোনে আর কি বলবো তাড়াতাড়ি যা খবরের চ্যানেলগুলো একটু দেখ। ”
” কি হয়েছে বল না, বাবা আর ফুপা টিভি দেখছে। ”
” উনারা নিউজ দেখেনা? ”
” দেখেই তো, আপুর বিয়ের পর তো আপুকে নিয়ে গেল হয়তো টিভি অন করে দুজন গল্প করছে। ”
” তুই আমার সাথে ফোনে কথা বলে সময় নষ্ট না করে যা খবর দেখ।”
” আচ্ছা ঠিক আছে রাখ আমি দিয়ে দেখছি, কোন চ্যানেল দেখব? ”
” যেকোনো খবরের চ্যানেল দেখ, প্রায় সবখানে একই খবর। তাড়াতাড়ি যা আমি ফোন রাখছি। ”
” ঠিক আছে রাখ তাহলে।”
প্রিয়তা ফোন রেখে ড্রয়িং রুমে চলে যায় সোফার উপরে রাখা রিমোটটা নিলে বেলাল সাহেব প্রিয়তার দিকে তাকায় কারণ তারা দুজন বসে বসে গল্প করছিল এমন সময় প্রিয়তা সেখানে চলে এসে রিমোট হাতে নেয়।
” কি হয়েছে প্রিয়?”
” বাবা এখনই রিমোট দিচ্ছি দাঁড়াও।”
” সে নাহয় পরে দাও কিন্তু এভাবে এসে রিমোট নিলে যে, কিছু হয়েছে?”
” বাবা, রিমি মানে আমার বান্ধবী কল দিয়েছিল, বলল খবরের চ্যানেল দেখতে তাড়াতাড়ি। ”
” খবরের চ্যানেল!”
” হ্যাঁ বাবা দেখি একটু কি হয়েছে!”
” হ্যাঁ দাও তো।”
প্রিয়তা এবার একটা খবরের চ্যানেলে দেয়। সেখানে লাইভ হচ্ছিলো কোন একটা জায়গার। কয়েক মিনিট দেখার পর ও কেউ কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে সেখানে। আরও কিছুক্ষণ দেখার পর স্পষ্ট দেখে ইয়াশ এবং তার সাথের কয়েকজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ইয়াশের কপাল থেকে র*ক্ত ঝরছে। ইয়াশের এমন অবস্থা দেখে প্রিয়তা জোরে একটা চিৎকার দেয়। প্রিয়তার চিৎকার শুনে রুম থেকে সবাই বেরিয়ে আসে। প্রিয়তার বাবা এবং ইয়াশের বাবা সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়, ইয়াশের বাবা ইলিয়াশ সাহেব মাথা ঘুরে আবার সোফাতেই পড়ে যান।
সবার একটাই প্রশ্ন কি হয়েছিল ওখানে ইয়াশের এই অবস্থা কেন!
চলবে……
আজ সারাদিন একটা শব্দও লেখি নি, ইচ্ছে করছিল না ভেবেছিলাম আজ গল্প দেব না। তবুও সন্ধ্যা সাতটা থেকে লেখা শুরু করে মাত্র শেষ করে সাথে সাথে পোস্ট করলাম। পড়ায় মন দিতে হচ্ছে, প্রতিদিন পড়তে হচ্ছে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি একদিন পরপর গল্প দেব, হয়তো রোজার আগেই শেষ করে দেব। রমজান মাসে কষ্ট করে আর তেমন লেখব না, মাঝে মাঝে কিছু লেখা পোস্ট করব। সবাই কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগলো।