#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১১
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
অনেকটা সময় কেটে গেছে, সময় তখন রাত আটটা ছুঁইছুঁই। পাহাড় থেকে নেমে জঙ্গলের পাশ দিয়ে নামতে থাকে সবাই। তখনই একটা অদ্ভুত শব্দ সবার কানে আসে। প্রথমে কেউ পাত্তা দেয় নি। কিন্তু হঠাৎ একটি মেয়ের চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে। সবাই হকচকিয়ে যায়। শব্দের উৎস খুজতে খুজতে তাহি বলে-
-মনে হচ্ছে জঙ্গলের ভিতর থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসছে। কেউ বিপদে পড়েছে। আমি যাচ্ছি,,,,
বলেই তাহি জঙ্গলের ভিতরের দিকে দৌড়ে যেতে থাকে। নিষ্প্রভ ও পিছু পিছু দৌড়ে যায়। বাকিরা ও তাদের পিছে দৌড়ে যেতে থাকে।
‘
‘
‘
জঙ্গলের বেশ ভিতরেই চলে এসেছে সবাই। চারিদিকে অন্ধকার। ফোনের লাইট অন করা সবার। চারিদিকে তাকিয়ে কারো চোখে কিছু পড়ছেনা। কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই তো, কারো চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসছিলো।
ভয়ে দীবা তীব্রের হাত খামচে ধরে, সবার দিকে তাকিয়ে বলে- চলো আমরা চলে যাই। নাহলে যেকোনো বিপদ হতে পারে।
চোখ মুখ শক্ত করে তাহি বলে- এভাবে কিকরে যেতে পারি, কেউ অবশ্যই বিপদে পড়েছে, চারিদিকে লাইট মারো, দেখো কিছু দেখা যায় কি না।
সবাই আবারো চারিদিকে লাইট দিয়ে দেখতে থাকে। তাহি চারিদিকে ঘুরে ঘুরে, দেখছে। তখনই ওর কানে ‘উম উম’ শব্দ ভেসে আসে। সাধারণত কেউ মুখ চেপে ধরে রাখলে, এরকম শব্দ বের হয় মুখ থেকে। বিচক্ষণ স্থির হয়ে দাড়িয়ে চারিপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে নেয়। যেহেতু তাহি একজন সিআইডি অফিসার, তাই সবসময় পিস্তল সাথে থাকে। তবে সেটা কারো চোখে পড়ার মতো নয়। খু্ব সাবধানে পিস্তল বের করে তাহি। সবাই তাহির হাতে পিস্তল দেখে ভড়কে যায়। তাহি ইশারায় চুপ থাকতে বলে, আর ওর পিছনে আসতে বলে। পিস্তল ধরে খুব সাবধানের সহিত জঙ্গলের আরো গভীরে ঢুকতে থাকে তাহি, পিছনে বাকি সবাই।
– তোমরা সবাই এখানে দাড়িয়ে থাকো, আমি আবার যেদিক দিয়ে এখানে এসেছি, মানে পিছনটা আবার ঘুরে আসছি। বলেই কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই পা বাড়ায় তাহি। নিষ্প্রভ ও পিছন পিছন আসে। তাহি সামনের দিকে যাওয়ার সময় কাউকে সরে যেতে দেখেছে। আবারো চারিদিকে চোখ ভোলায় তাহি৷ চারিপাশটা কেমন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে। একটি মোটা গাছের পিছনে, কারো পা দেখতে পায় তাহি। সাবধানের সহিত এগিয়ে যায়। গাছটার সামনে গিয়ে পিস্তল তাক করে, লুকিয়ে থাকা ব্যক্তির উপর। ততক্ষণে নিষ্প্রভ ও চলে এসেছে।
একটি মেয়ের মুখ চেপে ধরে রেখেছে, কোনো ব্যক্তি। অন্ধকারে কারো মুখই স্পষ্ট নয়। পিস্তল তাক করে তাহি বলে- ছাড়ো মেয়েটিকে।
মেয়েটির মুখ ছেড়ে দেয় ব্যক্তিটি। ছাড়া পাওয়া মেয়েটি হাঁপাতে থাকে, জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়।
মুখ চেপে ধরা ব্যক্তিটির শার্টের কলার ধরে ঝাকিয়ে তাহি প্রশ্ন করে- হু আর ইউ? আর একটা মেয়েকে এভাবে মুখ চেপে ধরে লুকিয়েই বা কেনো ছিলে?
– বিশ্বাস করুন, আমরা কিছু করিনি। আর আমি মানে আমরা দুজন লুকিয়ে ছিলাম, যাতে কেউ আমাদের দেখতে না পারে। আর আলিশার মুখ চেপে ধরেছিলাম, কারণ ও বেশি কথা বলে। যদি ধরা পড়ে যাই, তাহলে ওরা আমাদের মেরে ফেলতো। বিশ্বাস না হলে আলিশাকেই জিজ্ঞেস করুন।
– হ্যা, আনান ঠিকই বলেছে, আসলে আমরা ওই খারাপ লোক গুলোর থেকে বাঁচার জন্যই এভাবে লুকিয়ে ছিলাম।
সন্দিহান হয়ে প্রশ্ন করে তাহি, – তাহলে চিৎকারের আওয়াজ যে ভেসে আসছিলো, সেটা কার?
– সেটা আমারই, ওরা আমাকে ধরে ফেলেছিলো। তাই চিৎকার করে ছিলাম। পরে আনান আমাকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে গভীরে চলে আসে। আর আমরা এভাবে লুকিয়ে থাকি।
– তোমরা যাদের কথা বলছো কে তারা? আর তোমাদেরই বা কেনো অ্যাটাক করেছিলো?
– আমরা দুইজন গোয়েন্দার ইনভেস্টিগেটর। এখানকার অনেক মানুষই থানায় কমপ্লেইন করতো, এখানের মানুষ উধাও হয়ে যায়। পরে কয়েকদিন পরে লাশ পাওয়া যায়। সব লাশেরই চোখ, কিডনি, হার্ট এগুলো থাকে না। মানে তাদের এগুলো নিয়ে নেয়। (আনান)
– হোয়াট? কতোদিন ধরে এমন ঘটছে?(নিষ্প্রভ)
– অনেকদিন ধরেই,( আলিশা)
– এখানের পুলিশরা কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। বা তদন্ত করেনি?(তাহি)
– করেছিলো, তবে কেউই কোনো কিছু বের করতে পারেনি। আমরা তো এই ক্যাইস এর জন্যই আজ এই জঙ্গলে এসেছিলাম। মানে এই জায়গার প্রতিটি জায়গা দেখতে চেয়েছিলাম। তাই জঙ্গলেও ডুকে পড়ি। (আনান)
– বাকি কথা পরে শুনবো, আগে তোমরা চলো।
নিষ্প্রভ গিয়ে বাকি সবাইকে নিয়ে আসে। সবাই একসাথে সাবধানে জঙ্গলের ভিতর থেকে বের হয়। তাহি আনান ও আলিশার ফোন নাম্বার নিয়ে নেয়। কাল তারা দেখা করবে। তারপর বাকিটা জানবে। আপাতত সবাই বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সবার মনে একটাই চিন্তা কে বা কারা এমন করতে পারে? তাহির মনে ও একই ভাবনা- কোনো অবৈধ ব্যবসায়ী বা খারাপ কাজের সাথে যুক্ত এমন লোকেরা এসব করছে, তারা হয়তো এগুলো বিক্রি করে।
নিষ্প্রভ দীবাকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়, তীব্র ও আয়াত চলে যায়। রয়ে যায় উর্মিলা ও তাহি। তাহি কোনো দ্বিধা ছাড়াই বলে – তুমি চাইলে, আমি তোমাকে লিফট দিতে পারি। বিনাবাক্যে তাহির বাইকে উঠে যায় উর্মিলা। সে ভয় পেয়ে আছে, জঙ্গলের ঘটনাটা নিয়ে।
-্ভয় পাচ্ছো?
তাহির প্রশ্নে উর্মিলা ঢোক গিলে। আমতা আমতা করে বলে- কিছুটা,
-ভয় পেওনা, এরকম অহরহ ঘটনা ঘটে, আমাদের চারিদিকে। তবে সব ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়না। আমি এই খানের এই ক্যাইস টার দায়িত্ব নিবো।
– সে তো নিবেই, তুমি তো একজন আইনের রক্ষক। আর তুমি যথেষ্ট সাহসী।
আর কোনো কথা না বলে বাইক স্টার্ট দেয় তাহি, উর্মিলাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে, নিজের বাসার দিকে রওনা হয়।
‘
‘
‘
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে, ল্যাপটপ নিয়ে বসে তাহি। তারা যে জায়গায় গিয়েছিলো, সেই জায়গাটা সাধারণত একটা গ্রাম। গ্রামটির নাম ‘মির্জাপুর'(কাল্পনিক)। মির্জা বংশের জমিদার বাড়ি এখনো রয়েছে সেখানে। আর জঙ্গলটি জমিদার বাড়ির কয়েক রাস্তার পরেই অবস্থান করছে।
–
‘
হালকা খাবার খেয়ে ঘুমানোর প্রস্ততি নেয় তাহি, তখনই তার ফোন বেজে উঠে। স্কিনে ‘ডাক্তার সাহেব’ নামটি জ্বল জ্বল করছে। স্মিত হেসে তাহি কল রিসিভ করে কানে ধরে। ওপাশ থেকে নিষ্প্রভ বলে – কি করছেন মহারানী।
– এই তো ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।
– ক্লান্ত তো লাগবেই, যেভাবে জঙ্গলে দৌড়েছো। বাপরে, আমার দস্যি রানী। কিছুই ভয় পায়না। কতো সাহসী হবে আমার বউ, ভাবতেই গর্ব হয় আমার।
– এতো গর্ব করে লাভ নেই, ঘুমান। ঘুমালে শরীর সুস্থ হবে।
– ঘুম তো আসবে না মহারানী, তোমাকে খুব শীগ্রই আমার করে নিয়ে আসবো। তখন সারাক্ষণ তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। আমি তো ভেবে রেখেছি বিয়ে করে একসপ্তাহ দরজা জানালা খুলবো না!
– চুপ করুন অসভ্য ডাক্তার। আপনার ঘুম না পেলেও আমার ঘুম পেয়েছে, রাখছি ভালো থাকুন, গুড নাইট, আল্লাহ হাফেজ।
– আরে আরে শুনবে তো আমার কথা,,,,, দূরররর,,,
কল কেটে দিলো। হুহ,,, কি আর করার যাই আমিও ঘুমাই। বিছানায় শুয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে নিষ্প্রভ। মনে মনে বলে- কবে যে কোলবালিশের জায়গায় তুমি থাকবে বউ,
আচ্ছা আমি কি লুচি হয়ে যাচ্ছি? আগে তো এসব ভাবতাম না, ছিহ ছিহ তাহি ঠিকই বলে ‘ অসভ্য ডাক্তার’ হয়ে যাচ্ছি। আরে তাতে কি আমিতো শুধু তাহির ক্ষেত্রেই একটু এমন করি। আমার বউ আমি যা ইচ্ছে করবো। আরো লুচি – পরোটা হবো। কিন্তু আমার বউ চাই ই চাই। কবে যে মহারানী বুঝবে। এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায় নিষ্প্রভ।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১২
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
সকাল সাড়ে দশটার কাছাকাছি, ক্যাফেতে বসে আছে আলিশা ও আনান। মূলত তারা তাহি’র জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগমন ঘটে তাহির।
তাহি এসে বসে টুকটাক কথা বলে কফি অর্ডার করে, কফি এলে কফিতে এক চুমুক দিয়ে বলে,
এবার বলা শুরু করো, কি কি জানো তোমরা, আর কি কি ইনফরমেশন কালেক্ট করেছো।
-মির্জা পুরের নাম সাধারণত মির্জা জমিদারের কারণেই হয়েছে। আমরা যতোটুকু জানতে পেরেছি, মির্জা বাড়ির জমিদার বেঁচে নেই। তবে উনার বংশধর মানে দুই ছেলে আবার তাদের ছেলে মেয়ে আছে। তারা কেউই জমিদার বাড়িতে থাকে না। সবাই শহরে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে। তবে বছরে তারা একবার সবাই একসাথে মির্জা বাড়িতে হাজির হয়। তখন সবাই এক সাথে মিলে সময় কাটায়। মির্জা জমিদারের দুই সন্তান। আরিফ মির্জা ও আরিয়ান মির্জা। আরিফ মির্জার এক ছেলে আছে। বর্তমানে সে একজন সফল বিজনেস ম্যান। সবাই এক নামে চিনে।(আনান)
– কি নাম সেই বিজনেস ম্যানের?(তাহি)
– আরাধ্য মির্জা। আরিফ মির্জার একমাত্র সন্তান। আরিয়ান মির্জার ও ছেলে আছে। এক ছেলে এক মেয়ে। আরাফ মির্জা ও মেয়ে আরশি মির্জা।(আলিশা)
আরাধ্য মির্জা তার বাবা ও মা কে নিয়ে ঢাকার মিরপুরে নিজের বাড়িতে থাকেন। আরাফ মির্জার মা নেই। নিজের বোন ও বাবাকে নিয়ে তিনিও আরাধ্য মির্জার বাড়ির পাশেই বাড়ি বানিয়েছেন, সেখানেই থাকেন। তবে তিনি বিদেশে বেশি যাতায়াত করেন। কেনো করেন সেটা জানতে চাইলে আরাফ মির্জা বলেছেন তিনি ব্যবসায়ীক কাজে বিদেশে আসা যাওয়া করেন বেশি।
তবে মজার ব্যাপার হলো, যেখানে আরাধ্য মির্জা এতো বড় ব্যবসায়ী হয়েও মাসে একবারো বিদেশে যান কি না সন্দেহ, মানে তিনি সবকিছু অনলাইনেই করেন, বিদেশে বেশি যান না, সেখানে আরাফ মির্জা আরাধ্য মির্জার থেকে ব্যবসার তুলনায় একটু নিচুতে, সেখানে আরাফ মির্জা এতো বার বিদেশ যাতায়াত করেন।(আলিশা)
– আরাফ মির্জার কোনো রেকর্ড আছে? মানে থানায় বা আইনি কোনো রেকর্ড?(তাহি)
– হ্যা আছে, প্রায় দুইবছর আগে আরাফ মির্জার ব্যবসায়ীক মাল বহন করা ট্রাকে ড্রাগস পাওয়া গেছে। পড়ে তিনি বলেন, এগুলো থাকে ফাসানোর জন্য তার কোনো শত্রু করেছে। আর পরে এসব নিয়ে কোনো ঘাটাঘাটি হয়নি। টাকা খাইয়ে পুলিশের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।(আনান)
– ওকে ধন্যবাদ। আমি খুব শীগ্রই এই কেইসের দায়িত্ব নিবো, আর আমার সাথে তোমরা দুজনও থাকবে।(তাহি)
– শিওর ম্যাম, আমরা আপনার সাথে এই কেইসে কাজ করতে চাই। (আনান ও আলিশা)
– তো ওই কথায় রইলো, মোবাইলে যোগাযোগ হবে, আমিও দুইদিনের ভিতরে পারমিশন নিয়ে এই কেইস নিয়ে তদন্তের কাজে নামবো। তোমাদের জানাবো, ভালো থেকো।(তাহি)
– জ্বি ম্যাম। আপনিও,(আনান ও আলিশা)
‘
‘
‘
‘
চেম্বারে রোগী দেখতে ব্যস্ত নিষ্প্রভ। ডাক্তারদের ছুটি নেই। এই রোগী দেখা তো লেগেই থাকে। সাথে সার্জারী তো আছেই। দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেছে তাই নিষ্প্রভ আরেকটা রোগী দেখে খেতে যাবে।চেম্বারের দরজায় নক করলো কেউ, নিষ্প্রভ ‘কাম’ বলে অনুমতি দিলো।
একটি মেয়ে এসে দাড়ালো, নিষ্প্রভ এক পলক তাকিয়ে বললো ‘ সিট’, মেয়েটি বসলো। নিষ্প্রভ বলে,
– আপনার সমস্যা বলুন।
মেয়েটির মুখ উড়না দিয়ে ঢাকা ছিলো। নিষ্প্রভের কথা শুনে মুখ থেকে উড়না সরিয়ে দিলো।
নিষ্প্রভ মেয়েটির মুখের দিকে থাকাতেই চমকে উঠলো। সারা মুখে মারের দাগ।
– আপনার এই অবস্থা কেনো?
– শুধু মুখেই না, সম্পূর্ণ শরীরে ও আছে। ফুল হাতা জামা পড়ার জন্য দেখতে পাচ্ছেন না।
– আপনার এই অবস্থা কে করেছে?
– সে অনেক কাহিনি। আগে আপনার মোবাইল টা দিন তো।
– মোবাইল দিয়ে কি করবেন?
– পুলিশকে ফোন করবো।
– পুলিশকে ফোন করে কি করবেন?আমাকে বলুন, আমি দেখি আপনার কোনো সাহায্য করতে পারি কি না।
‘
তখনই সেখানে তাহি’র আগমন ঘটে, চেম্বারে অন্য কারো প্রবেশ ঘটেছে বুঝতে পেরে মেয়েটি, আবার নিজের মুখ ঢেকে নেয়। তাহি হুরমুর করে ডুকে নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকায়। নিষ্প্রভের দিকে একবার সামনে বসা মেয়ের দিকে একবার থাকায়।
– এখন তো খাবার টাইম ডাক্তার সাহেব, তাহলে আপনি এখনো রোগী দেখছেন কেনো?(তাহি)
– হ্যা আসলে খেতেই যাচ্ছিলাম, তখনই এই মেয়েটি চলে আসে, তাই ভাবলাম দেখে তারপর যাই।(নিষ্প্রভ)
– তো দেখুন, তারাতারি, আমি আর আপনি একসাথে দুপুরের খাবার খাবো আজ। (তাহি)
– কিন্তু তাহি, তার আগে এই মেয়ের সমস্যা জানতে হবে, মেয়েটি এসেই বলছে পুলিশ কে ফোন করবে। আর মেয়েটির মুখে ও শরীরে মারের দাগ। (নিষ্প্রভ)
– হুয়াট! কোথায় দেখি তো। বলেই মেয়েটির পাশে এসে দাড়ালো তাহি। মেয়েটি নিজের মুখ থেকে আবারো উড়না সরায়। মুখ দেখে চমকে উঠে তাহি। কতো নিষ্পাপ একটি মেয়ে,। কিন্তু মেয়েটির এই অবস্থা কেনো?
– তোমার এই অবস্থা কেনো? কে করেছে এসব?, (তাহি)
– বলবো, আগে আমাকে পুলিশকে ফোন করতে দিন, প্লিজ।(মেয়েটি)
– আমি একজন আইনের অফিসার হই। তুমি আমাকে বলতে পারো।(তাহি)
– হ্যা বলুন আপনার এই অবস্থা কে করেছে, আমরা সাহায্য করবো আপনাকে।(নিষ্প্রভ)
– শুনোন তাহলে। আমি আরশি মির্জা। আরিয়ান মির্জার মেয়ে ও আরাফ মির্জার বোন। আমার বাবা ও ভাই অনেক খারাপ কাজ করে, আমি সেগুলো জানতে পেরে ওদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। তার জন্য ওরা আমাকে মেরেছিলো। যে বাবা কখনো আমার গায়ে ফুলের ঠুকা দিতো না সেই বাবা আমাকে চাবুক দিয়ে মেরে এই অবস্থা করেছে। যেই ভাই আমার গায়ে কখনো হাত তুলতো না সেই ভাই আমার গালে থাপ্পড় মেরেছে। মুখে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে। গাল দিয়ে রক্ত পড়েছে৷ তবুও ফিরে থাকায় নি আমার দিকে। আমি আজ অনেক কষ্টে পালিয়ে এসেছি। কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ চোখ যায় হাসপাতালের দিকে, তাই আপনার চেম্বারে চলে এসেছি। বলেই ডুকরে কেঁদে উঠে আরশি। অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে রেখেছিলো সে।
নিষ্প্রভের চোখে মুখে বিস্ময়। এই টুকো একটা মেয়েকে এতো অত্যাচার করেছে। তাও কি না নিজের বাবা ও ভাই?
তাহি নিশ্চুপ হয়ে গেছে। এই তাহলে আরশি। আরশি মির্জা যার কথা সকালে আনান ও আলিশা বলেছিলো থাকে। তার মানে মির্জা পুরের ওইসব ঘটনা গুলোর সাথে সত্যিই মির্জা পরিবারের সম্পর্ক আছে।
– তুমি আরশি মির্জা? মানে মির্জা জমিদার বংশের ছেলে আরিয়ান মির্জার মেয়ে? (তাহি)
–
-হ্যা, কিন্তু আপনি এতো কিছু কি করে জানেন? (আরশি)
– সে অনেক কথা, ভালোই হলো তোমাকে পেয়ে গেলাম, কেইস স্লভ্ করতে সহজ হবে(তাহি)
– কিসের কেইস? (নিষ্প্রভ)
– গতকাল আমরা জঙ্গলে গিয়ে জেনেছিলাম না, ওখানের মানুষ কিডন্যাপ হতো, আর কয়েকদিন পরে ওদের শরীরের মূল্যবান জিনিস গুলো নিয়ে ফেলে চলে যেতো?(তাহি)
-হ্যা, কিন্তু এর সাথে আরশির কি সম্পর্ক?
– সম্পর্ক আছে ডাক্তার সাহেব। আমি আজ আনানদের সাথে মিট করেছি। সব কিছু জেনেছি। আর এখন আরশির কথা শুনে আমি শিওর এসবের সাথে আরাফ মির্জা ও তার বাবা আরিয়ান মির্জা জড়িত। (তাহি)
– ঠিক আছে, সব কথা পড়ে হবে। আগে আরশির চিকিৎসা করতে হবে। (নিষ্প্রভ)
– হুম তাই করুন। আরশি তুমি কিছু খেয়েছো? তোমার মুখ দেখেই মনে হচ্ছে কিছু খাও নি। ডাক্তার সাহেব আরশির চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তার আগে ওর খাওয়ার ব্যবস্থা করুন। আরশিকে সুস্থ হতে হবে। (তাহি)
‘
চলবে, ইনশাআল্লাহ