প্রিয়ংবদা পর্ব ৩০

#প্রিয়ংবদা
#লেখনীতেঃমৌশ্রী_রায়

৩০.
গভীর কৃষ্ণনিশীথ!পৃথিবীময় কুয়াশার আবরণ!ঘন কুয়াশার সেই বেড়ি ভেদ করেই শিরশিরে হাওয়া এসে নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে খোলা জানালার পর্দা,বিছানার চাদর,হৃদিতার শাড়ির আঁচল,খুলে রাখা চুল!
বাতাসের আক্রমণেই যেন শুভ্র বেলীফুলে সজ্জিত ঘরটার কোণে কোণে মনমাতানো সৌরভের গাঢ়ত্ব হচ্ছে আরও দ্বিগুণ!
হৃদিতা সেই শুভ্রপুষ্পশোভিত কক্ষে বিছানার ওপরে বসে রয় একধ্যানে!খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে আদৃতের ঘরটিকেই বারবার!
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে চকিতে ফিরে তাকায় সেদিকে।দরজা ঠেলে ভেতরে আসে আদৃত।
হৃদিতা আচমকাই কেমন কেঁপে ওঠে!সারা শরীরের সব রোম দাঁড়িয়ে যায় সহসাই!বুকের ভেতরে প্রবল বেগে বেজে ওঠে প্রণয়ের দামামা!গলা শুকিয়ে আসে,নিঃশ্বাস আটকে আসে,হৃদিতা বুঝে পায়না এই অযাচিত অনুভূতির কারণ!
আদৃতের গভীর দৃষ্টি তখন হৃদিতার গোটা দেহে আবদ্ধ!হালকা নীল জামদানী জড়ানো গায়ের সর্বত্র বেলীফুলের সাজ!যেন বেলীরাজ্যের রাজকুমারী!আদৃতের ঘোর লেগে যায়!সে এক পা দু পা করে এগিয়ে যায় সেই পুষ্পরাণীর দিকে!
হঠাৎ আদৃতের পিছু পিছু ঘরে আসেন অন্বেষা আর কাদম্বিনী দেবী!হৃদিতা এবারে অপ্রস্তুত নয়নে তাকায়!
কাদম্বিনী দেবী ওনার হাতে ধরে রাখা চওড়া কাসার থালাটা ধরিয়ে দেন হৃদিতার হাতে।হৃদিতা প্রশ্নাত্মক চাহুনি নিক্ষেপ করামাত্র তিনি হেসে বলেন,

“এই থালায় নারকেলের জল আছে দিদিভাই!তুই তোর চুলের ডগা এই জলে চুবিয়ে নিয়ে দাদুভাইয়ের পা জোড়া তিনবার মুছিয়ে দিবি,তারপর প্রণাম করে আশির্বাদ নিবি।আজকের মতো আর কোন নিয়ম নেই!”

হৃদিতা হালকা হেসে মাথা নেড়ে সায় জানাতেই আদৃত বেঁকে বসে।সে অসন্তুষ্ট কন্ঠে বলে ওঠে,
“এটা কেমন নিয়ম ঠাম্মি?আমার এসব নিয়ম মানার কোন ইচ্ছে নেই।ওর চুল কি আমার পা মোছার জিনিস?তাছাড়া ও আমার স্ত্রী,আমারই অর্ধাঙ্গিনী,তাকে আমি আমারই সম্মুখে কিকরে নত হতে দিই?বলো?এসব নিয়ম পালনের কোন দরকার নেই ঠাম্মি!লিভ ইট!”

কাদম্বিনী দেবী হাসলেন।নাতবৌয়ের হাত থেকে নিয়ে নাতনির হাতে নারকেল জলের থালাটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
“দিদিভাই, এটা লাগবে না।যাও, বাইরে রেখে এসো!”

অন্বেষা হেসে প্রস্থান করলো।কাদম্বিনী দেবী নাতির মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে বললেন,
“তুমি একদম তোমার দাদুর মতো হয়েছো দাদুভাই!
তোমার দাদু নিজেও এসব মানতেননা!উনিও আমাকে এসব নিয়ম করতে দেননি।যখন বিয়ে হয় তখন উনি ভালোবাসতেন কিনা জানা নেই তবুও আমাকে নিজের সামনে কখনো এক মুহূর্তের জন্যও ঝুকতে দেননি!সেখানে তুমি তো ওকে ভালোবাসো দাদুভাই!তুমি যে এমনটাই করবে তা তো জানা কথা!
সবসময় ওকে এভাবে সম্মান করো দাদু!ওকে ভালো রেখ!”

আদৃত সহাস্যে সম্মতি জানায়!কাদম্বিনী দেবী বেরিয়ে যান ঘর থেকে!হৃদিতার গোটা দেহে আবারও কম্পন খেলে যায়!
আদৃত দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াতেই হৃদিতা খিঁচে বন্ধ করে নেয় চোখ,খামচে ধরে বিছানার চাদর।
আদৃত তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে।ধীর পায়ে এসে বসে পড়ে একদম হৃদিতার পাশে!হৃদিতার সারা গা শিউরে ওঠে।
আদৃত ফিচেল কন্ঠে তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
“অত ভয়,লজ্জা পাবার কিছু নেই!কাঁপা-কাঁপি করার মতো কিছু করবো না আজ। বড় হও আগে!তারপর!”

হৃদিতা চোখ মেলে। বোকা বোকা চোখে আদৃতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ভাবলেশহীন ভাবে ফোনস্ক্রিন স্ক্রল করে যাচ্ছে!হৃদিতা বুঝতে পারেনা কি করবে?আদৃতই দেয় সমাধান।গম্ভীর স্বরে বলে,
“এসব শাড়ি ফুলের সাজ পাল্টে এসো, হালকা রঙের কোন সুতি শাড়ি পড়ে নাও।
তোমার এমন রুপ আমার মাইন্ড ডাইভার্ট করে দেয়!”

হৃদিতা বাধ্য মেয়ের মতো তাই করে।কাবার্ড খুলে একটা হালকা বেগুনি সুতি শাড়ি বের করে চেঞ্জ করে নেয় ঝটপট।
ওয়াশরুমের দরজা ঠেলে ঘরে আসা মাত্র আদৃতের গমগমে কন্ঠ কানে আসে তার,
“তোমার স্যুটকেস থেকে সব বই-খাতা নিয়ে এসো!পড়াবো!”

হৃদিতা যেন এবারে আকাশ থেকে পড়লো।বড় বড় চোখ করে আদৃতকে অবাক কন্ঠে শুধালো,
“মানে?”

আদৃত যথারীতি ফোন স্ক্রল করতে করতেই বললো,
“মানে সিম্পল।তোমাকে পড়াবো!গো ফাস্ট!”

হৃদিতা হতবাক।ফুলসজ্জার রাতে কোনও বর তার বউকে পড়াতে পারে,পড়াতে চাইতে পারে এমন নজির পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা তা নিয়ে চালালো এক বিস্তর চিন্তা! তবে তার ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকের কোন পৃষ্ঠাতেই এমন কোন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে পড়লো না।
হৃদিতাকে এখনো ভাবুক মুখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদৃত একটু জোরে বললো,
“কি হল?যাও?”
হৃদিতা চমকে গেল। হতবিহ্বল নয়নে একবার আদৃতকে দেখে নিয়ে বের করলো বই খাতা!তারপর আদৃতের সামনে সেগুলো এনে রাখতেই আদৃত বললো,
“পৌরনীতি পড়াবো আজ। বের করো!”

হৃদিতা এবারে কাঁদো কাঁদো চোখে চাইলো!বললো,
“আপনি এমন করেন কেন?আজ রাতে কি কেউ পড়ে?আর এত রাতে আমি পড়বো না।একদম না!”

আদৃত এবারে শান্ত চোখে হৃদিতার দিকে তাকালো, হৃদিতার চোখে চোখ রেখে তার চেয়েও বেশি শান্তস্বরে বললো,
“এত রাতে পড়লে কি সমস্যা? তোমার না ক’দিন বাদে পরীক্ষা।সকালেই না চিন্তা করছিলে কি হবে সেসব নিয়ে!এখন সব চিন্তা উবে গেল?আর আজ রাতে পড়ে না তো কি করে?”

হৃদিতা এবারে পড়লো অথৈ পাথারে!আজ রাতে কি করে এমন প্রশ্নের উত্তরে ঠিক কি বলা যায় তা নিয়ে বিস্তর চিন্তা ভাবনার পরে উত্তর দিল,
“কেন?রোজ রাতে যা করে!আজও তাই করবো!ঘুমাবো!আপনি ফোন টিপুন। আমি ঘুমাই!শুভ রাত্রি!”

হড়বড় করে কথা গুলো বলে হৃদিতা বিছানায় শুতে যাবে তার আগেই আদৃতের হাতে আবদ্ধ হয় তার কোমড়!রাতের বেলা তাড়াহুড়ায় শাড়ি পড়তে গিয়ে কোমড়ের কাছ থেকে শাড়ি সরে গিয়েছিল অনেকটাই!সমস্ত কটিদেশ উন্মুক্ত রেখে শাড়ির পাড় নেমে গিয়েছিল নিচে! সেই অনাবৃত অংশেই আদৃতের শীতল স্পর্শে হৃদিতার গোটা দেহে বয়ে গেল শিহরণ!আদৃত বুঝলো,তবে ছাড়লো না।বরং পূর্বাপেক্ষা দৃঢ় করলো বন্ধন!
তারপর শীতল স্বরে বললো,
“আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ রাত, তোমাকে পড়াবো বলে স্যাক্রিফাইজ করতে চাইলাম!আর তুমি আমার সব আত্মত্যাগকে কাঁচকলা দেখিয়ে ঘুমাতে যাচ্ছো?তা তো হবে না মিসেস সেন!
আমাকে ছটফটিয়ে মেরে তুমি শান্তিতে ঘুমাবে তা হতে পারেনা।আমি হতেও দেব না।
হয় পড়তে বসে আমার আত্মত্যাগকে সফল করবে, নইলে সব বাদ। জাস্ট রোমান্স হবে।
তবে কোন ঘুম-টুম হবে না!”

হৃদিতা বড়বড় চোখ করে তাকালো।অবাক হবার সব সীমা পেরিয়ে এসে লাজুক হেসে বললো,
“অসভ্য!”
আদৃত হাসলো। আকড়ে ধরা কোমড়ে চাপ দিয়ে হৃদিতাকে টেনে নিল বুকের ওপর!হৃদিতা দুহাতে সে বুকে ঠেস দিয়ে একেবারে পড়ে যাওয়া আটকালো!
লজ্জায় আনত করলো মুখখানি!
আদৃতের দুহাত এবার নিঃসঙ্কোচ বিচরণ করলো হৃদিতার সমগ্র পিঠময়,খুলে রাখা চুলের ভাজে ভাজে।
প্রতিটা স্পর্শ যত গাঢ় হলো,হৃদিতার কম্পনের বেগ বৃদ্ধি হলো ততটাই!
আদৃত এবারে ঘোর লাগা কন্ঠে শুধালো,
“হৃদ!আমি লাস্টবার বলছি, তুমি কি পড়বে?নাকি আমি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাব!আমার কিন্তু নিজের ওপর থেকে সব নিয়ন্ত্রণ লোপ পাচ্ছে হৃদ!নিজেকে আর আটকে রাখতে না পারলে দায়টা কিন্তু তোমার!”

হৃদিতা আচমকাই আদৃতের বাহুডোর ছাড়িয়ে উঠে বসলো বিছানার ওপর।কাঁপা কাঁপা স্বরে জবাব দিল,
“আমি পড়বো!”
আদৃত চাপা হাসলো।আদেশের স্বরে বললো,
“বই বের করো!”

হৃদিতা হতাশ নয়নে চাইলো!মনে মনে নিজের বিয়ে করা বরটিকেই চরম অসভ্যের উপাধি দিয়ে মেলে বসলো বইয়ের পাতা!ঘুমে প্রায় বুজে আসা চোখ নিয়ে একের পর এক পড়ে গেল পৌরনীতির প্রতিটা লাইন,উল্টে গেল প্রতিটা পৃষ্ঠা!
ঘড়ির কাটা যখন ভোর তিনটার ঘরে দোল খাচ্ছে হৃদিতার সবে মাত্র পড়া হয়েছে গোটা বইয়ের অর্ধেক।সে করুণ চোখে আদৃতের দিকে তাকালো। আদৃত তার মুখপানেই তাকিয়ে ছিল, হৃদিতার করুণ দৃষ্টি দেখে হালকা হেসে বললো,
“রেখে দাও!বাকিটা কাল পড়ো!হৃদিতা হাফ ছেড়ে বাঁচলো।বইয়ের মধ্যে একটা কলম রেখে তা বন্ধ করে খোপা করে নিল খুলে রাখা চুল।তারপর শোবার জন্য বালিশ সাজাতেই আদৃত এক টানে এনে ফেললো বুকের ওপর!হৃদিতা অবাক চোখে তাকালো।ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
” আমি তো পড়লাম!আপনি এখন এমন কেন করেন?ঘুমাবো আমি। ঘুমাতে দিন!”
আদৃত সে কথা শুনলো না। হৃদিতাকে নিজের আরও কাছে টেনে নিয়ে তার দুগালে ঠোঁট ছোঁয়ালো পরপর!হৃদিতা লজ্জায় কেঁপে উঠলো।বুজে নিল কাজলকালো দুটি চোখ!আদৃত এবারে ঠোঁট ছোঁয়ালো সেই বন্ধ চোখের পাতায়!হৃদিতার কম্পন গাঢ় হলো।আকড়ে ধরলো আদৃতের বুকের কাছের পাঞ্জাবি!
আদৃত হাসলো। বেশ মনোযোগ দিয়ে প্রিয়তমার লাজুক বদন অবলোকন করে সর্বশেষ ঠোঁট ছোঁয়ালো তার ললাটে।
তারপরে নিজের বুকের ওপরে হৃদিতার মাথা রেখে হালকা আওয়াজে বললো,
“আজকের জন্য এটুকুই!বাকিটা কাল হবে।
তোমার জন্য এক আকাশ ভালোবাসা জমা আমার বুকটা রেখে বালিশে মাথা রাখার পরিকল্পনা করার শাস্তি এটা!আর যেন এমন না হয়!তাহলে পরেরবার ডাবল ডোজে শাস্তি পাবে!”

হৃদিতা আর কথা বাড়ায় না। মুখ বুজে পড়ে থাকে আদৃতের বুকের ওপরে!সকল লজ্জার বাঁধ ভেঙে মনজুড়ে প্রবাহিত হয় অদ্ভুত এক শান্তির আবহ!মিনিট না গড়াতেই সেই শান্তি দুচোখের পাতায় এনে হাজির করে ঘুমপরীদের। ঘুমপরীদের জাদুর কাঠি সেই বদ্ধ চোখের পাতায় ছুঁইয়ে যায় প্রশান্তির ঘুমের পরশ!
আদৃত প্রিয়তমার সেই ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে দুর্বোধ্য হাসে!তারপরে বুজে নেয় নিজের চোখ।বন্ধ চোখেই বিরবির করে,
“ভালোবাসি লাজুকলতা!খুব ভালোবাসি!”
.
সকাল বেলা হৃদিতার ঘুম ভাঙে আগে!আদৃত ঘুমের ঘোরেও তাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে নিজের সাথে। হৃদিতা হালকা হেসে উঠে বসে!সরে যাওয়া শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিয়ে নেমে পড়ে বিছানা থেকে!বাইরে তখন আলো ফুটেছে, সূর্যের রোদে ঝলমল করছে প্রকৃতি!হৃদিতা ঘড়ির দিকে তাকায়!সকাল ৮.৩০!
হৃদিতার টনক নড়ে এতক্ষণে। সে বাড়ির নতুন বউ!তার ঘুম ভাঙলো এত বেলা করে!সকলে কি ভাববে সে চিন্তার মস্তিষ্কে এসে বারি দিতেই হৃদিতা নুঁইয়ে পড়ে লজ্জায়!
তড়িঘড়ি করে কাবার্ড থেকে একটা লালচে খয়েরী সুতি শাড়ি নিয়ে ঢুকে যায় ওয়াশরুমে।
শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে সোজা নেমে যায় নিচে। কাদম্বিনী দেবী ও মল্লিকা দেবী তখন সবাইকে চা-জলখাবার দিতে ব্যস্ত। হৃদিতা ত্রস্তব্যস্ত হয়ে উপস্থিত হয় সেখানে।হাফানো কন্ঠে বলে,

“সরি গো!আমার উঠতে দেরি হয়ে গেল!”

কাদম্বিনী দেবী স্মিত হেসে বলেন,
“কোন ব্যাপার না দিদিভাই!কাল সারাদিন কত ধকল গেছে তোমার ওপর দিয়ে!শরীর তো একটু ক্লান্ত হবেই।আর ক্লান্ত শরীরে ঘুমের প্রয়োজন হয় বেশি।এতে সরি বলতে হবে না দিদি!”

হৃদিতা মিষ্টি হাসে।মল্লিকা দেবী প্রশ্ন করেন,
“আদৃত কই হৃদ?ও ওঠেনি এখনো?”

হৃদিতা নত মুখে প্রত্ত্যুত্তর করে,
“না দিদার বৌমা!ওঠেনি!”

এবারে অন্বেষা কৌতুকের স্বরে বলে,
“হুম সেই!কাল রাতে তো তারও প্রচুর পরিশ্রম গেছে।সেজন্য ঘুম ভাঙতে তো দেরি হবে।স্বাভাবিক!”

অন্বেষার এমন ঠোঁটকাটা কথায় হৃদিতার কান দিয়ে গরম বের হতে থাকে।মনে মনে বিবৃত করে,
“ভাই-বোন দুজনই সমান।আস্ত ঠোঁটকাটা!”

মল্লিকা দেবী মেয়ের কান ধরে শাসনের স্বরে বলেন,
“খুব পাঁকা হয়েছ তুমি মেয়ে!মারবো কিন্তু! বড় ভাইকে নিয়ে ফাজলামি তাই না?দাঁড়া আজ আদৃত উঠুক, সব বলবো!তখন বুঝবে মজা!”

অন্বেষা ঠোঁট উল্টে তাকায়।মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ওকে বলার কি দরকার।আর তোমরা সবাই কি আমার কানটাকে সরকারী পেয়েছো!যে পারে টেনে দেয়!”
হৃদিতা হেসে ফেলে।
আশুতোষবাবু হঠাৎ চিন্তিত স্বরে বলে ওঠেন,
“ওদের তো দ্বিরাগমনে যাওয়া সম্ভব না।এখন কি করবে কিছু কি ভেবেছো কৃষ্ণকায়া?”

কাদম্বিনী দেবী হালকা হেসে বলেন,
“সেসব কালই ভেবে রেখেছি!দ্বিরাগমনে যখন যেতে পারবেনা, তখন বাড়ির সামনের মন্দিরটায় যাক দুজনে। আমি পুরোহিত মশাইকে বলে রেখেছি। উনি ওদের জোড় খোলার সব ব্যবস্থা করে দেবেন!”

আশুতোষবাবু নিশ্চিন্ত হাসেন।
কথার মাঝেই নেমে আসে আদৃত। দাদুর পাশের চেয়ারটা টেনে সেখানে বসে জিজ্ঞেস করে,
“কোথায় যাওয়া নিয়ে কথা বলছিলে ঠাম্মি!”
কাদম্বিনী দেবী হেসে জবাব দেন,
“মন্দিরে দাদুভাই!তোমাদের বিয়ের জোড় খুলতে হবে তো তাই!”
আদৃত পাউরুটির টুকরোয় একটা কামড় দিয়ে সম্মত কন্ঠে উত্তর দেয়,
“আচ্ছা! ”
তারপর হৃদিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তৈরী হয়ে থেকো হৃদ!আমরা এগারোটা নাগাদ যাব নাহয়!”
হৃদিতা মাথা নেড়ে সায় জানায়!
তারপর শাশুড়ীমা-দিদাকে সাহায্য করে যেতে থাকে নিজের মতো করে!
.
মন্দির থেকে বিয়ের জোড় খুলে মাত্র বাড়ি ফিরেছে আদৃত-হৃদিতা!
ঘরে গিয়ে জোড়টা ভালো মতো আলমারিতে তুলে রেখে পিছু ফিরতেই বাঁধা পড়ে আদৃতের হাতে!আদৃত হৃদিতার দুকাধের ওপর দিয়ে দুহাত আলমারির ওপরে রেখে তাকিয়ে রয় প্রিয়তমার দিকে!
হৃদিতা কপাল কুচকে ফেলে। শুধায়,
“কি হলো?এভাবে এখানে আটকে রাখার মানে কি আদৃতবাবু!ভালো লাগে না কিন্তু! কাল সারারাত পৌরনীতি পড়িয়ে এখন এসছেন প্রেম করতে?ফাজলামি করেন আপনি?আপনার পড়াশুনোর চক্করে আমার ঘুম ভাঙতে কত দেরি হয়ে গেল জানেন!কি ভেবেছে সকলে কে জানে!অথচ যা ভেবেছে তেমন কিছুই তো হয়নি!অযথা লজ্জায় পড়তে হলো!”

আদৃত এবারে ফিচেল হাসে।দুষ্টুমিমাখা কন্ঠে বলে,
“ওহ্ হো!সব দোষ আমার হলো!আমি তো যা যা হয় সেসব করতে গেছিলাম, তুমিই তো কাঁপতে কাঁপতে বললে পড়বে!তো আমি কি করবো!এখন তোমার যদি অযথা লজ্জা পেয়ে খুব কষ্ট হয়, তাহলে সকলে যা ভেবেছে তাই করবো নাহয়!আমার তো কোন সমস্যা নেই!কাল রাতে যা হয়নি আজ রাতে হবে।ক্ষতি কি!”

হৃদিতা লজ্জা পায়!কৃত্রিম রাগ নিয়ে আদৃতের বুকের ওপর হাত দিয়ে চালায় নির্বল আক্রমণ।সরিয়ে দেবার অযথা প্রয়াস করে বলে,
“যান তো সরুন আপনি!বিয়ের পর থেকে আপনি বেশি অসভ্য হয়ে গেছেন। আমাকে শুধু লজ্জা দিয়ে যাচ্ছেন ইচ্ছে মতো!এসব ঠিক না। সরুন।
আপনি বোঝেন না আপনার এমন ধারা লাগামছাড়া কথাবার্তায় আমি লজ্জা পাই!তবুও কেন বলেন?”

আদৃত চুপ করে থাকে, উত্তর দেয়না কিছুই।
হৃদিতা তা দেখে অভিমানী কন্ঠে শুধায় ,
“কি হলো,চুপ কেন?উত্তর দিন?
আমার কথা কি আপনি শোনেননি?
আমার কোন কথাই শোনেন না আপনি!আমার কথা শুনতে কি আপনার ভালো লাগে না আদৃতবাবু?”

আদৃত এবারে সাড়া দেয়!হৃদিতার দিকে নিজের মুখ এগিয়ে নেয় আরও খানিকটা। হৃদিতার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় ক্ষণেই!আদৃতের উষ্ণশ্বাস চোখে-মুখে এসে আঘাত করতেই দুহাতে মুখ ঢাকে সে!আদৃত তা দেখে হাসে। হৃদিতার কানের সামনে মুখ এগিয়ে নিয়ে সম্মোহনী কন্ঠে ব্যক্ত করে,
“তোমার সব কথা,উচ্চারিত সকল শব্দ,সবই আমার ভীষণ প্রিয় হৃদ।খুব খুব খুব বেশি প্রিয়!তোমার প্রতিটা কথাই তাই আমি বিভোর হয়ে শুনি,তোমার বলা সব কথাই আমার কেবল শুনে যেতেই ইচ্ছে করে,ঠিক এতটাই ভালো লাগা মিশে আছে!
আর তুমি কিনা বলছো তোমার কথা শুনতে আমার ভালো লাগে না?
বলতে পারলে কিকরে বলতো!
মনে করে দেখ সেই প্রথমদিন থেকে তোমার সব কথা আমি শুনে আসছি একমনে,মন্ত্রমুগ্ধের মতো।তোমার নিশ্চুপতা,পালিয়ে বেড়ানো তো সেজন্যই আমাকে এতটা পোড়াতো,জ্বালিয়ে দিত ভেতরটা, কেড়ে নিত রাতের ঘুম!
তুমি যে আমার প্রিয়ংবদা হৃদ।আমার শ্রাব্যসীমার সকল প্রিয় কথার একমাত্র অধিশ্বরী!
প্রিয়ংবদার সব কথাই প্রিয়, সবকথাই এক একটা আস্ত ভালো লাগা!”

হৃদিতা মুখ থেকে সরিয়ে নেয় দুহাতের আড়াল।প্রচন্ড সুখে বন্ধ হয়ে আসতে চায় তার প্রশ্বাস!তবুও আটকানো স্বরে বলে ওঠে,
“এত ভালোবাসেন?”

আদৃত হৃদিতার কপালে কপাল ঠেকায়!ফিসফিস করে প্রশ্ন করে,
“সন্দেহ আছে?”

হৃদিতা চোখ নামিয়ে নিয়ে নাসূচক মাথা নাড়ে!আদৃত আবারও প্রশ্ন করে,
“আমার দেয়া নামটা তোমার পছন্দ হয় হৃদ?”

হৃদিতা চোখ তুলে চায়, ভ্রু কুচকে শুধায়,
“কোন নামটা?”
আদৃত স্নিগ্ধ হাসে,বলে,
“এই যে প্রিয়ংবদা!”

হৃদিতা কুঞ্চিত ভ্রুযুগল আরও কুচকে যায়! কৌতুহলী স্বরে বলে ওঠে,
“ওটা নাম ছিল!”
আদৃত এবারে বিস্তর হাসে।সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বলে,
“হ্যাঁ!ঠাম্মির কাছে শুনেছিলাম, তুমি ওনাকে বলেছিলে, দাদুর মতো তোমাকেও কেউ কৃষ্ণকায়া বলে ডাকুক!ঠাম্মি অসম্মতি জানিয়ে বলেছিল, কৃষ্ণকায়া নামটা একান্ত তারই,এ নামে অন্যকারো কোন অধিকার নেই।
সাথে এও বলেছিল, ঠাম্মির মতো, তোমারও থাকবে একটা একান্ত নিজস্ব নাম, যে নামে শুধু তোমারই অধিকার থাকবে, প্রিয়জনের মুখ থেকে কেবল তোমার জন্যই নিঃসৃত হবে সেই অনন্য সম্বোধন!

এবাড়িতে আসার পরে ঠাম্মির কাছে একদিন কথার প্রসঙ্গে জানতে পেরেছিলাম বিষয়টা।
অনেক ভেবেছিলাম আমার হৃদের জন্য কি বিশেষ নাম রাখা যায়।
অনেক ভেবে মনে হলো, যে নারীর সকল কথাই আমার কাছে সাক্ষাৎ প্রণয়,যে নারীর প্রতিটা শব্দই আমার কাছে প্রচন্ড প্রিয়, যার কথা শুরু হলে আমার মন চায় সবকথা শুধু শুনে যাই, শুনে যাই আর শুনেই যাই, তার জন্য “প্রিয়ংবদা” ব্যতীত আর কোনও নামই উত্তম হতে পারেনা!সেইদিন থেকেই তুমি আমার কাছে প্রিয়ংবদা!তোমার জন্য বরাদ্দ আমার অনন্য সম্বোধন!
পছন্দ হয়নি?”

হৃদিতার দীঘল আঁখিপট ছলকে ওঠে!টলমল নয়নে সে উত্তর দেয়,
“খুব!”

আদৃত সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সরিয়ে নেয় হাতের বেষ্টনী!হৃদিতাকে হাত ধরে নিয়ে যায় তাদের ঘরেরই ব্যালকনির দিকে।ব্যালকনির থাইয়ের দরজাটা দুহাতে টেনে সরিয়ে পা রাখে ব্যালকনিতে।
আঙুলের ইশারায় হৃদিতাকে তাকাতে বলে সামনের কোণে!
হৃদিতা তাকাতেই চোখ বেয়ে টপ করে গড়িয়ে পড়ে একফোঁটা অশ্রু,প্রিয়তমের ভালোবাসার নিজস্ব অভিব্যক্তিতে প্রবাহমান আনন্দাশ্রু!
হৃদিতা একবুক আনন্দ নিয়ে বলে ওঠে,

“মাধবীলতা?”

আদৃত হেসে বলে,
“হু!তোমাকে বলেছিলাম না সেদিন , আমাদের বাগানে তোমার প্রিয় ফুল নেই,কিন্তু তোমার জন্য আমাদের বারান্দায় তোমার প্রিয় ফুলগাছ লাগাবো।দেখ আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি!এবার তোমার পালা!”

হৃদিতা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি উন্মিলিত করে ঘাড় ফিরিয়ে চায় আদৃতের দিকে,শুধায়,
“আমার কি কথা?”

আদৃত হৃদিতার কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে বলে,
“তুমি রোজ সকালে স্নান সেরে যখন ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াবে,সদ্য ফোঁটা মাধবীলতার গোলাপী আভায় মুগ্ধ হবে তোমার চোখজোড়া, তার সৌরভে স্নিগ্ধ হাসি ফুটবে তোমার ওষ্ঠপ্রান্তে!
তখন তোমার হাসির সেই স্নিগ্ধতা, চোখের ভাষার সেই মুগ্ধতা দেখে আমার দুচোখও মুগ্ধ হবে,তোমায় দেখে স্নিগ্ধ হাসবে।
আমাকে সেই স্নিগ্ধতাটুকু,আর সেই মুগ্ধতাটুকু তোমায় কিন্তু দিতে হবে!
দেবে না?”

হৃদিতা মিষ্টি হেসে জবাব দেয়,
“দেব না কেন!খুব দেব!আপনি চেয়েছেন যে!না দিয়ে কি থাকতে পারি?”

আদৃত তৃপ্ত হাসে।হৃদিতাকে ছেড়ে দিয়ে কানে কানে বলে,
“ফুলের টবের গোড়ায় তোমার জন্য কিছু আছে।গিয়ে দেখ!”

হৃদিতা অবাক নয়নেই হাসে।ধীর পায়ে গাছের গোড়ায় বসে পড়ে হাতড়ে দেখে টবের গোড়া। হাতে লাগে পলিথিনে মোড়ানো একটা হলদে কাগজের খাম।
হৃদিতা হাতে তুলে নেয়!আদৃতের দিকে একপলক তাকিয়ে পলিথিনের আবরণটা সরিয়ে বের করে আনে সেই হলুদরঙা খাম!
খামের মুখটা খুলে ভেতরে হাত দিতেই হাতে পড়ে একটা ভাজ করা হলদে কাগজ।হৃদিতা কাগজটা খুলতেই চোখে পড়ে লাল কালিতে লেখা গোটা গোটা কিছু শব্দ,
“প্রিয় প্রিয়ংবদা!
পত্রের সম্বোধন শুনে খুব অবাক হচ্ছো তাইনা!ভাবছো প্রিয় প্রিয়ংবদা বলার কারণ!
কারণটা খুব সহজ,প্রিয় কথা বলা এই নারীটিও আমার খুব প্রিয়!প্রিয় নারীর সকল কথা যখন প্রিয় তখন সেই তো প্রিয় প্রিয়ংবদা হবে তাইনা?
জানো প্রিয়ংবদা, তোমার সাথে অযাচিত ভাবে হওয়া সেই প্রথম সাক্ষাৎটাও আমার ভীষণ প্রিয়,সেই সাক্ষাতে তোমার বলা সেসব অদ্ভুত কথাগুলোও সময়ের সাথে নাম লিখিয়েছে আমার প্রিয় তালিকায়!সেদিন যা শুনে বিরক্ত হয়েছিলাম, সময়ের আবর্তনে আজ সেসবেও খুঁজে পাই অপরিসীম ভালো লাগা।
হয়তো ভালোবাসাই এমন!
তোমার রাগ,অভিমান, আমাকে এড়িয়ে গিয়ে আমাকে এক সমুদ্র কষ্টে ভাসিয়ে দেয়া,অবহেলার তী বিদ্ধ করে আমার ভেতরটা ছিন্ন করে দেয়া সবই আমার প্রিয়!তোমার দেয়া সকল আঘাতই আমার নিকট প্রিয়!
তোমার হাসি,অনুরাগ,লজ্জায় রক্তিম মুখ এই সবটাও আমার খুব প্রিয়!
সত্যি কি জানো তো?আমার কাছে আস্ত তুমিটাই ভীষণ প্রিয়,আমার তুমিময় এই জীবনটা খুব প্রিয়।

তুমি আমার জীবনের সেই প্রিয় অধ্যায়, স্মৃতির পাতা উল্টে যেই অধ্যায়ে বারংবার বিচরণ আমার খুব প্রিয়!

আমার কাছে প্রিয় মানেই তুমি,আর তুমি মানেই ভালোবাসা!একবুক ভালোবাসা!
ভালোবাসি আমার প্রিয়ংবদাকে, যতটা ভালোবাসলে তাকে নিজের সমগ্র অস্তিত্বময় অনুভব করা যায় ঠিক ততটা!
আমার সকল প্রেমের রাণী তুমি, সকল প্রিয় ব্যাথা তুমি, সবটুকু আবেগের কেন্দ্র তুমি এবং অবশেষে আমার প্রিয়ংবদা তুমি,আমার প্রণয় তুমি!

আমি শুধু এটুকুই চাইবো, আমৃত্যু তুমি আমার প্রিয়ংবদা হয়েই থেক! আমাকে নিজের ভালোবাসার আচলে জড়িয়ে রেখ!আর কিছু চাইনা!

পরিশেষে আবারও বলতে চাই, ভালোবাসি তোমাকে!ভালোবাসি আমার আজন্ম প্রিয়তমাকে, ভালোবাসি আমার অনুরাগিনীকে,আমার অভিমানিনীকে, ভালোবাসি আমার প্রিয়ংবদাকে!

পত্রান্তে,
তোমার আদৃতবাবু!”

চিঠিটা পড়া শেষ করে হৃদিতা চোখ তুলে তাকায় আদৃতের মুখপানে।আদৃত হাসিমুখে তার দিকেই তাকিয়ে!হৃদিতা অশ্রুসজল চোখেই হাসে!আদৃত এবারে বলে ওঠে,
“খামটায় আরেকবার খোঁজো।কিছু এড়িয়ে গেছো, দেখ, পাবে!”
হৃদিতা তাই করে।আরেকবার হাত ঢুকিয়ে অজানার কিছুর খোঁজ চালায় সেই হলুদখামটার ভেতরে!দুয়েকবারের চেষ্টায় পেয়েও যায়। হাত বের করে চোখের সামনে আনতেই জ্বলজ্বল করে একটা হীরের আংটি!
হৃদিতা আদৃতের দিকে তাকায়। আদৃত এগিয়ে যায় তার দিকে। হৃদিতার হাত থেকে আংটিটা নিয়ে অন্যহাতের ওপর মেলে ধরে হৃদিতার বাম হাতটা!আলতো হাতে অনামিকা আঙুলে আংটিটা পড়িয়ে দিয়েই হালকা স্পর্শে ওষ্ঠ ছোঁয়ায় তাতে।
হৃদিতা কোমল স্বরে প্রশ্ন করে,
“এসবের কি দরকার ছিল?”

আদৃত বিস্তর হেসে জবাব দেয়,
“ফুলসজ্জায় স্ত্রীকে কিছু উপহার দেয়া এ বাড়ির রীতি!কাল তো কিছু দিইনি। এটা অনেক আগেই কিনে রেখেছিলাম তোমার জন্য। ঠিক করেছিলাম ফুলসজ্জার রাতে দেব।
তবে তা তো হলো না।তাইঠিক করলাম তোমাকে একটু চমকে দিই!চিঠিটা লিখেছিলাম প্রথম তোমার নতুন নামের হদিশ পাবার পরই!তার ভেতরেই তাই রেখে দিলাম আংটিটা। পছন্দ হয়নি?”

হৃদিতা প্রফুল্ল হেসে বলে,
“খুব পছন্দ হয়েছে!সবটাই!
এই মাধবীলতা,এই নাম,এই চিঠি,চিঠির প্রতিটা শব্দ আর আংটি, এইসবকিছু!এত এত ভালোবাসা নিয়ে আমার জীবনে আসার জন্য অনেক ধন্যবাদ আদৃতবাবু!”

আদৃত দুর্বোধ্য হাসে। হৃদিতার দু বাহু ধরে কাছে টেনে হালকা আলিঙ্গনে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয় তাকে।হৃদিতা বাঁধা দেয়না। শান্তিতে মাথা রাখে তার প্রেমিকপুরুষটির প্রণয়শোভিত বক্ষে!
মধ্যাহ্নের রোদরশ্মি এসে আছড়ে পড়ে দুজনের মুখে,গায়ে।স্বর্নালী দ্যুতিতে মাখামাখি হয়ে যায় দুজনার সারা দেহ।
বারান্দার গ্রিল গলে আসা মৃদুমন্দ সমীরণে দুলে ওঠে প্রেমে মত্ত হৃদিতার খোলা কেশ,পিঠময় ছড়ানো আচল।
বাতাসে দোল খায় মাধবীলতার নমনীয় ডালগুলোও!হালকা বাতাসের থেমে থেমে ছুঁয়ে যাওয়া স্পর্শে দোদুল্যমান সেই মাধবীলতা গাছটিই সাক্ষী হয়ে রয় এই প্রেমিকযুগলের প্রণয়লীলার!

#চলবে!

[🥺সরি!কাল বোনাস পর্ব দিতে চেয়েও পারিনি!
ক্ষমাপ্রার্থী!
হ্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here