প্রিয়তার মিষ্টি সংসার পর্ব ১

“তোর মতো একটা গবেটকে বিয়ে করার চেয়ে আমি আজীবন চিরকুমারই থাকবো তবুও তোকে আমি বিয়ে করবোনা!!

এ কথাটা কে জানি বলেছিলো প্রিয়ম ভাই??? ”

খাটের ওপর বসে লেহেঙ্গা ঠিক করতে করতে তানি কথা গুলো বলে।বন্ধ দরজার পাশে রাগে কটমট করতে থাকে প্রিয়ম।চোখ তুলে একবার প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে আবারও নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তানি।তানির এমন উদাসীন কাজে সারা শরীর জ্বলছে প্রিয়মের কিন্তু সে কিছুই বলতে পারছেনা কারণ এ মুহূর্তে কিছু বলতে গেলে বাড়ির সবাই এসে তার ওপর চিল্লাচিল্লি করবে তাই চুপ করে এ মেয়ের গা জ্বালানো কথা শুনছে নাহলে এতোক্ষণে দু তিনটা চড় গালে পড়ে যেতো।

প্রিয়মের কোনো নড়চড় না দেখে তানিও আর কথা বলেনা।গায়ে জড়ানো বিয়ের কাপড়টা খুলতে সে আলমারির কাছে গিয়ে একটা নরমাল কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

আধ ঘন্টা পর বের হতে দেখে প্রিয়ম একি জায়গায় একি ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। তানি ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলের জট ছুটাতে থাকে।জট খুলতে খুলতে আয়নায় একবার প্রিয়মের দিকে তাকায়। প্রিয়ম তখন মেঝেতে নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে।

“প্রিয়ম ভাই মেঝের দিকে তাকিয়ে কি এতো ভাবছো বলো তো??এদিকে তোমার বউ তো বিয়ের সাজসজ্জা ছাড়তে ব্যস্ত। আমি তো বারবার এভাবে বিয়ের কনে সাজবো না তাই একেবারে দেখে নাওনা বউয়ের সাজে।যদিও বিয়ের লেহেঙ্গা খুলে ফেলেছি তবে সাজটাও ধুয়ে নেওয়ার আগে একবার দেখে নাও বউ হিসেবে আমাকে কেমন মানিয়েছে?”

শেষ কথাটা বলে একটু লজ্জার ভঙ্গিমায় মাথা নিচু করে তানি।তানির এমন উটকো কথা আর লজ্জা পাওয়ার ঢং দেখে প্রিয়ম পারে না সোজা কয়েকটা কিল বসিয়ে দিতে।নিজের রাগটা ভেতরে রেখে কর্কট কন্ঠে বলে,

“একে তো তোকে আমার মেয়ে মনে হয়না তার ওপর তো ঐ রূপের ছিঁড়ি। এ রূপ দেখার জন্য আমি কেনো আমাদের বাড়ির কাকও অপেক্ষা করছে না।আর কি বল্লি বউয়ের সাজ??আরে শাঁকচুন্নিকেও বউ সাজালে তোর চেয়ে বেশি সুন্দর লাগবে।নিজেকে দেখ আয়নায় পুরো একটা পেত্নী তার আবার বউ সাজ নিয়ে কতো কথা?? ”

“আহা প্রিয়ম ভাই এভাবে বলে না তো।আফটার অল আমি তোমার বউ। আমাকে এসব বলতে একটু সংকোচ করো। কারণ সামনের পথগুলো তো আমার সাথে কাটাবে।যদি একটু এডজাস্ট করতে না পারো তাহলে কীভাবে হয়??তাছাড়া তুমি আমাকে শাঁকচুন্নি বলছো ভেবে দেখেছো আমি কতো ভালো শাঁকচুন্নি নাহলে তো এতোক্ষণে তোমার ঘাড় মটকাতাম।হা হা হা!”

রাগে হির হির করছে প্রিয়ম।অগ্নি চোখে বলে,

“ঘাড় মটকাবি বলেই তো আমার ঘাড়ে এসে চেপেছিস।এখন তো অনেক সময়।সুযোগ বুঝে না হয় নিজের কাজ করবি।”

পাশে থাকা সোফার এক কোণায় একটা লাথি মেরে একটা টাউজার আর টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। এখানে থাকলে এ অসভ্য মেয়ের সাথে কথা বলতে হবে তার চেয়ে স্থান ত্যাগ করা শ্রেয়।”

মোটামুটি গায়ে একটু পানি দিয়ে বের হতে দেখে তানি এখনো আয়নার সামনে বসে আছে। ওর চুলগুলো এলোমেলো। বুঝতে পারছে চুলে স্প্রে করা আঠালো মেডিসিনটার জন্য চুলের এমন দশা।মনে মনে খুশি হয় প্রিয়ম।তানি অসহায় মুখ করে বলে,

“প্রিয়ম ভাই দেখো না চুলগুলো জটলা পাকিয়ে গেছে একটু এসে সাহায্য করোনা।নাহলে তো তোমার বউয়ের সব চুল ছিড়ে যাবে।তখন তোমাকে টেঁকো বউয়ের বর বলবে।হি হি।”

“আমি পারবোনা তোর এসব ময়লা চুলে হাত দিতে।দুনিয়ার সব ময়লা আছে তোর চুলে।না জানি হয়তো উকুনও আছে।”

“এমা এভাবে বলছো কেনো??আমার চুলে ময়লা আছে তোমাকে কে বল্লো?জানো আমি সপ্তাহে দুবার শ্যাম্পু করি।তাছাড়া মেয়েমানুষের লম্বা চুলে উকুন থাকতেই পারে এটাকে এভাবে বলার কি আছে?? জানো আমি শুনেছি বিয়ের প্রথম রাতে বররা তাদের বউয়ের সাজসজ্জা তুলতে আর চুলের জট খুলতে কতো সাহায্য করে।আর তুমি কিনা আমাকে এভাবে বলছো??”

“তা ওরকম ছেলে দেখে বিয়েটা করে নিতি আমাকে বিয়ে করলি কেনো??তুই জানিস না আমি অন্যদের বরের মতো না?তাছাড়া আমি তোকে বউ হিসেবে বিশ্বাস করিনা সেখানে তোর সাথে এসব ন্যাকামি করা তো দূরের কথা। আরেকবার যদি কোনো কাজ করতে বলিস তাহলে সোজা চুলগুলো টেনে নিয়ে আসবো।আর এসব ঢং শেষ হলে লাইট অফ কর আমি ঘুমাবো।”

হনহনিয়ে বিছানায় উঠে শুয়ে পরলো প্রিয়ম।আয়নার সামনে বসে এবার রাগে ফুঁসতে থাকে তানি।এতোগুলো অপমান করে গেলো অথচ তানি কিছু বল্লো না।উঁহু এটা ঠিক না।তানিকে সাহায্য না করা আর অপমান করার শোধ তানি নিবেই।

অনেক্ক্ষণ যুদ্ধ করে কিছুটা চুল খুল্লেও আর পারেনি তাই আর টানাটানি না করে ভাবলো একেবারে কাল সকালে শ্যাম্পু দিয়ে খুলবে।তাই মুখ হাত ধুয়ে নিয়ে সোজা বিছানায় এসে বসলো।যেই না শুতে যাবে ধুম করে প্রিয়ম লাফিয়ে উঠলো।

“কি করছিস তুই?? লজ্জা করেনা আমার সাথে একখাটে শুতে??”

প্রিয়মের কথা শুনে তাজ্জব বনে যায় তানি।কি বলে এ ছেলে??ওরা তো স্বামী স্ত্রী তাহলে সমস্যা কোথায়?

“কি বলো তুমি??এখানে না শুলে আমি শুবো কোথায় শুনি??তাছাড়া কোন বইয়ে আছে স্বামী স্ত্রী আলাদা শুই?”

“তানি মেজাজ খারাপ করিসনা।যেখানে ইচ্ছে শু কিন্তু আমার খাটে বা আমার পাশে না।তোর পাশে আমি ঘুমাবো না।”

“না ঘুমালে নাই। তোমাকে কে থাকতে বলেছে বলো তো।ইচ্ছে না হলে মাটিতে যাও।আর হ্যাঁ অনেক রাত হয়েছে। একে তো আমাকে সাহায্য না করে আমার সময় বাড়িয়েছো তার ওপর ঘুমানোর জায়গা নিয়ে ঝগড়া করছো।দেখো আমার এখন ঝগড়া করতে ভালো লাগছে না।তোমার সমস্যার কথা কাল শুনবো।এখন ঘুমোতে দাও।আর কোনো কথা বল্লে সোজা আন্টিকে বিচার দিবো তুমি কি চাও এতো রাতে তুমি আন্টির বকা খাও??”

মায়ের কথা শুনে প্রিয়ম কিছুটা দমে যায়। এ মেয়ে সবসময় তাকে মায়ের ভয় দেখায়।মেজাজ শক্ত রেখে অপর পাশ করে শুয়ে পড়ে।তানিও হামি দিতে দিতে বিছানায় শুয়।

চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে রুমটা দেখছে।আজ নাকি ফুলসজ্জা অথচ রুমের কোথাও টাটকা ফুল তো দূরে থাক একটা প্লাস্টিকের ফুলও নেয়।ছোট থেকে যেভাবে বিয়েটা আশা করেছিলো তার তো কিছুই হলো না।তার ওপর এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো যে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। পাশে শুয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে আবারও সোজা হয়।মাথার ওপর চলন্ত ফ্যানের দিকে চেয়ে থেকে ভাবে কীভাবে এ ছেলের সাথে সংসার করবে যেখানে দুজন দুই মেরুর পথে??

ফ্যানের দিকে চেয়ে চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে যায় বুঝতে পারছে একটু পর চোখের পাতায় অমাবস্যা নামবে যার কারণে একটা রাত পার হবে।সেই রাত যেটার জন্য একজোড়া নতুন দম্পতি অপেক্ষা করে বছরের পর বছর!!!

চলবে…….

পর্ব-১

#প্রিয়তার_মিষ্টি_সংসার

#তানিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here