প্রিয়তার মিষ্টি সংসার পর্ব শেষ

#প্রিয়তার_মিষ্টি_সংসার

#তানিয়া

রাত কতো কে জানে?রাত যে পার হচ্ছে সেদিকে মোটেও লক্ষ্য নেয় প্রিয়মের।এমনকি সিগারেট কয়টা শেষ করলো তারও হিসাব নেয়।এতো হিসাব কে করবে?কারণ এ মুহূর্তে প্রিয়মের জীবনটা কেমন জানি বেহিসাবি লাগছে।আসলে কি চায়ছে প্রিয়ম তা নিজেই বুঝতে পারছেনা।তানির চলে যাওয়াটা কেমন জানি অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।সে তো কখনো চায়নি তানি তার জীবন থেকে চলে যাক।মেয়েটাকেই পাওয়ার জন্য তো প্রিয়ম বিয়ের দিন বরকে না আসার প্ল্যান করেছিলো যাতে ভালোবাসার মানুষটি তার হয়।মেয়েটা কেনো তাকে বুঝেনা?কেনো জানতে চায়না কীসে সে খুশি?সবসময় অবাধ্য থাকে।কেনো আমি যা বলি তা মানতে চাই না?কেনো আমাকে কষ্ট দেই,কেনো?

বদ্ধ ঘরে ডুকরে উঠে প্রিয়ম।এ মেয়েকে কতো যত্ন করে সে নিজের করে পেয়েছে তাহলে কি তার অতি মাত্রার শাস্তি তানিকে দূরে ঠেলে দিবে?না সেটা হবেনা।

তানির প্রতি ছোট থেকে দূর্বল ছিলো প্রিয়ম।যেহেতু প্রিয়ম তানি থেকে যথেষ্ট বড় সেই হিসেবে প্রিয়ম বুঝতে পারতো ভালো লাগা কি? সেই ভালো লাগা থেকে প্রিয়ম সবসময় তানিকে নিজের সাথে চায়তো কিন্তু তানির সাথে অন্যদের মেলামেশা প্রিয়ম মানতে পারতো না।বিশেষ করে কোনো ছেলেকে তো একদম না।কিন্তু দিন দিন তানি কেমন জানি প্রিয়মকে অবজ্ঞা করে আর এক পর্যায়ে দূরে চলে যায়। যতই তাকে ছেলেদের থেকে দূরে থাকার কথা বলতো ততই সে তাদের সাথে মিশতো।একসময় প্রিয়ম নিজেই চুপ হয়ে যায় কিন্তু আড়াল থেকে লক্ষ্য রাখতো তানি কার সাথে মিশছে।আস্তে আস্তে স্কুল গন্ডি পার হয়ে কলেজে গেলো তখনও নজর রাখলো।কোনো ছেলের সাথে যাতে মিশতে না পারে তাই প্রিয়ম তানিকে গার্লস স্কুল আর কলেজে ভর্তির কথা জানায় তার বাবা মাকে।কিন্তু বিপাকে পড়ে অনার্সে এসে।যেই কলেজে ভর্তি হয় সেখানে ছেলেমেয়ে উভয় আছে আর ভয়টা সেখানেই বেশি।ওখানেও প্রিয়ম লোক লাগায় কিন্তু তেমন কোনো তথ্য পায়নি তবে এক দু জন সিনিয়র ছেলের সাথে তানির কথা হতো।সেসব জানার পর তার মাথায় আগুন জ্বলে। এরপর আরও গম্ভীর হয়ে যায়।

তানির মায়ের মৃত্যুর পর ওর বাবা বিভিন্ন সম্বন্ধ দেখে কিন্তু হয়না।হবে কি করে যেখানে প্রিয়ম সব ভেস্তে দিতো।কিন্তু তাও হয়না।আসতেই থাকে।শেষে প্রিয়ম যে সিদ্ধান্ত নিলো তাতে তানির বিয়েও ভাঙবে আর তার সাথেই বিয়ে হবে।এমন এক ছেলের সম্বন্ধ আনলো যার সাথে প্রিয়মের আগে যোগসূত্র ছিলো। কথা হয়েছে, যখন বিয়ে পাকা হবে ঠিক বিয়ের দিন ছেলে উধাও হবে আর পাত্র যখন আসবেনা তখন সবাই প্রিয়মকে ধরবে।প্ল্যান মোতাবেক তাই হলো আর সেই সুযোগে বিয়েটা হলো।প্রিয়ম চেয়েছিলো তানিকে কিছু শাস্তি দিবে কেনো সে এতোদিন তাকে কষ্ট দিয়েছিলো কিন্তু কষ্টের মাত্রা এতো কঠোর হবে কে জানতো?সব তো ভালোই চলছিলো কিন্তু সেদিন যখন কলেজের বাইরে তানি আর ঐ ছেলের এমন কাজ দেখলো মাথায় তখন রক্ত উঠে গেলো তাই তো সেই রাতে মেয়েটার গায়ে হাত তুলেছে।হাত তুলেছে, কথাটা মনে পড়তেই জ্বলন্ত সিগারেটটা হাতে চেপে ধরলো।এ হাতের আঘাতে তার তানি কষ্ট পেয়েছে এটা মানা যায় না তাই এ আগুনের ছ্যাঁকা তার শাস্তি।

এক সপ্তাহ হলো প্রিয়ম বা তানি কেউ কাউকে দেখে নি।দু’জনে একই জায়গায় থাকলেও প্রিয়ম একবারের জন্যও তানির বাসায় দেখা করতে যায় নি।তার মধ্যে জড়তা কাজ করছে কীভাবে সে তানির সামনে দাঁড়াবে।তাছাড়া কলেজ হলে প্রিয়ম আড়াল থেকে তানির দেখা পেতো কিন্তু তানি এক সপ্তাহ কলেজ দূরের কথা বাসার বারান্দায় পর্যন্ত আসেনি।প্রিয়ম এ এক সপ্তাহ কতোবার তানির বাসার সামনে আড়ালে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা বেহিসাব শুধু তানিকে দেখবে বলে কিন্তু মেয়েটা এতোটাই কেয়ারলেস যে একটিবার আসলোও না।তবে তাকে দোষ দিয়ে লাভ কি সে তো আর জানেনা প্রিয়ম বাইরে অপেক্ষা করছে। মার কাছ থেকেও তানি বিষয়ে প্রশ্ন করতে লজ্জা করছে কারণ মোটামুটি সবাই জানে তানিকে প্রিয়ম অপছন্দ করে এখন যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে হয়তো সন্দেহ করবে!

হেনা বেগম আর আজিজ সাহেবের বিবাহবার্ষিকী পালন করা হবে সেজন্য মোটামুটি সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রিয়ম তো সেই খুশি কারণ এ সুযোগে সে তানিকে দেখতে পাবে।আর নিজের করা ভুলটা ঠিক করবে।

সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এলো।অতিথিরা আসা শুরু করেছে। আজিজ সাহেব আগেই তানির পরিবারকে চলে আসতে বলেছে।একে তো ঘনিষ্ঠ বন্ধু অন্যদিকে বেয়াইন পরিবার। তানির বাবা আর তানির বোন আসলেও তানি আসেনি।প্রিয়ম ওদের আসার পরও অনেক্ক্ষণ তানির অপেক্ষায় ছিলো হয়তো দেরীতে আসবে বলে কিন্তু দুই ঘন্টা পার হওয়ার পরও যখন তানি এলো না তখন সরাসরি শ্বশুর মশাইকে জিজ্ঞেস করলো।তিনি তানি আর প্রিয়মের সবটা না জানলেও যতটা জানেন তার ওপর ভিত্তি করে বলেন,
তানি নাকি অসুস্থ। তাই আসবেনা।ওনি জোর করার পরও তানিকে আনতে পারেনি।
প্রিয়ম শ্বশুরের কথা শুনে ভেতরে অনেক রেগে যায় কিন্তু প্রকাশ করেনা।হনহন করে রুমে চলে যায়।

“কি ভেবেছে এ মেয়ে নিজেকে?এভাবে আমাকে ইগনোর করবে?ছোট থেকে তো কম অবহেলা করলো না আর এখন বিয়ের পরও করবে।এ মেয়েকে শিক্ষা না দিলে বোধ হয় ভালো হবেনা।ফুঁসতে ফুঁসতে দেয়ালে ঘুষি মারে।”

আজ তানির নিজেকে একটু রিফ্রেশ লাগছে।বাসায় বাবা আর বোনের সামনে তো আর কাঁদা যায় না তাই আজকের এ ফাঁকা ঘরে ইচ্ছে মতো নিজের সকল কষ্টকে কান্নার মাধ্যমে বের করে দিয়েছে।সৃষ্টিকর্তা মানবজাতিকে দুঃখ প্রকাশের এক বিশাল ক্ষমতা দিয়েছেন।সেটা হচ্ছে চোখের পানি।যদি এ সুযোগটা না থাকতো তবে হয়তো ৯০ ভাগ মানুষ নিজের কষ্টে মারাই যেতো।এ মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছে তানি।নিজের মনকে হালকা করতে এ সময়টা দরকার ছিলো।হঠাৎ কানে কলিং বেলের শব্দ আসছে।বাসায় তো কেউ নেই। তাছাড়া তাদের বাসায় এ সময়ে কেউ আসেনা তাহলে বেল বাজালো কে?

তানি দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কারণ অচেনা কেউ হলে তো বিপদ হতে পারে।বেলটা বেজেই যাচ্ছে। তানি ভেবে পাচ্ছে না কি করবে?হঠাৎ একটা চিৎকার ভেসে এলো।শব্দটা শুনে তানি জমে গেলো কারণ যার চিৎকার কানে এসেছে তাকে তানি ভালোই জানে।কন্ঠ শুনে তানি রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলো।ভাবার মতো সময় না নিয়ে দরজাটা খুলতে চোখের পলকে কেউ ঢুকে গেলো তানি তখনও দরজায় গোড়ায় দাঁড়িয়ে।

“কীরে এতোক্ষণ লাগে নাকি দরজা খুলতে?মরার মতো পড়ে ঘুমোচ্ছিস নাকি?”

তানি ভয়ে পেছনে ফিরে আর ফিরতে প্রিয়মের চোখাচোখি হয়।তানির মুখটা দেখে প্রিয়মের বুকটা ধক করে উঠে। কি হাল করেছে মেয়েটা?এ কদিনে চেহারা আর শরীরের যা তা অবস্থা তার ওপর চোখ মুখ বলে দিচ্ছে এতোক্ষণ হয়তো কান্না করছিলো।প্রিয়ম ছোট থেকে হাসিমাখা তানিকে দেখেছে এ প্রথম তানির কান্না মিশ্রিত মুখ দেখলো।তানির এ অবস্থার জন্য কি প্রিয়ম দায়ী?কথাটা ভাবতেই প্রিয়মের কান্না এলো কিন্তু সেই কাঁদলো না জোর করে আটকে রাখলো কিন্তু কতক্ষণ পারবে কে জানে?

“তানি তুই কি কাঁদছিলি?”

“না কাঁদবো কেনো?সকাল থেকে জ্বর জ্বর লাগছে তাই হয়তো ওমন মনে হচ্ছে। ”

“কোনটা জ্বর আর কোনটা কান্না সেটা কি তুই আমাকে শিখাবি?”

“তোমাকে শিখনোর কি আছে? তাছাড়া আমার কান্নার কি আছে যে কাঁদবো? ”

“সত্যি কথা বলেছিস তো?”

প্রিয়ম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে।

“মিথ্যা বলার কারণ আছে কি?”

“মিথ্যা বল্লে যদি কিছু লুকানো যায় তাহলে তো মিথ্যা বলবি।তা বাসায় যাসনি কেনো?আজ বাবা মার বিবাহবার্ষিকী। বাড়ির বউ হিসেবে তোর কি উচিত ছিলো না সেখানে উপস্থিত থাকা?”

“বাড়ির বউ হু?

উপহাসের ভঙ্গিতে।

“তুমি তো আমাকে বউ হিসেবে মানোই না তো কার বউয়ের পরিচয়ে আমি ও বাড়ি যাবো।তাছাড়া তোমাকে মুক্তি দিতে তো আমি একেবারে চলে এলাম।তাই আমার থাকা না থাকাতে কারে কিছু যায় আসেনা।”

শেষের লাইনে তানির কান্না পায়।তাড়াতাড়ি সেটাকে মানাতে ওখান থেকে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু প্রিয়ম পেছন থেকে হাত ধরে নেয়।তানি যখন হাত ছাড়াতে মোচড়া মোচড়ি করছিলো আকস্মিক টান দিয়ে প্রিয়ম তাকে বুকে আনে।সেখানেও যখন তানি নড়াচড়া করছিলো প্রিয়ম তানির মাথাটা শক্ত করে বুকে চেপে ধরে।

“হুঁশশ নড়াচড়া করিস না।একটু বুকের মাঝে কান দিয়ে থাক।কিছু শুনতে পাচ্ছিস?শোন আমার বুকের ভেতর ধড়াম ধড়াম ঢোল পিটার মতো আওয়াজ হচ্ছে। এটা কীসের জানিস?এতোদিন তোকে ছাড়া একা থাকার আওয়াজ,নিঃসঙ্গ পথিকের ন্যায় হাহাকার করার আওয়াজ,তোকে কষ্ট দিয়ে নিজেকে ধুঁকে ধুঁকে মারার আওয়াজ।আচ্ছা তুই কেনো আমাকে বুঝিস না তানি।আমার না বলা অনুভূতি,না বলা প্রেমের ভাষা,না বলা ভালোবাসা, তুই কেনো বুঝিসনা?মানছি অন্য পাঁচটা স্বামীর মতো না,অন্য কোনো প্রেমিকের মতো প্রকাশিত না তবুও তো আমি ভালোবাসতে জানি।আমার ভালোবাসার তানিকে লুকিয়ে ভালোবাসতে জানি তাহলে!সৃষ্টিকর্তা নাকি মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়েছেন যা দিয়ে তারা বুঝতে পারে কে তাকে গভীরভাবে ভালোবাসে।তাহলে আমার ভালোবাসা কখনো তোর নজরে পড়েনি?তানি মনে আছে আমাদের ছোট কালের সেই স্মৃতিগুলো।তুই যখন আমার সাথে খেলতি তখন আমার নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে হতো।আমি ভাবতাম তোকে নিয়ে এভাবে আজীবন খেলার সঙ্গী করবো কিন্তু বড় হতে তুই পরিবর্তন হলি।আমার সাথে খেলিস না।যাদের সাথে খেলতি তাদের আমার ভালো লাগতো না আমি চাইতাম আমার তানি শুধু আমার সাথেই খেলবে কিন্তু তুই তো আমাকে পাত্তাই দিতি না।তখন খুব রাগ হতো।আস্তে আস্তে আমার রাগের ভান্ডার অভিমানে জমা হলো।দূরে চলে গেলাম তোর থেকে কিন্তু আড়ালে তোকে চোখে হারাতাম।আমার খুব ভয় লাগতো কারণ তুই যদি হারিয়ে যাস, অন্য কারো হয়ে যাস।সেই ভেবে কষ্ট পেতাম তাই পাহারা দিতাম। আমি ছাড়া অন্য কোনো ছেলের সাথে তুই কথা বল্লে খুব হিংসে হতো,কেনো আমার তানি অন্য ছেলের সাথে কথা বলবে?যখন তোকে মানা করার পরও তুই আমাকে ইগনোর করতি তখন নিজের রাগ কমাতে চারদেয়ালের মাঝে কাঁদতাম।এমন যে কতোশত রাত দিন পার করেছি কান্না করে তার তো কোনো হিসাবি নেই। তানি আমি বোঝাতে পারিনা কীভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করা হয় কিন্তু বিশ্বাস কর আমার মতো ভালোবাসা হয়তো তোকে কেউ করবে না।জানিস তোকে নিজের করবো বলে তোর হবু বরকে আমি বিয়ে করতে দেয়নি। হা হা সেই অনেক কথা। তানি আমি তোকে খুব কষ্ট দিয়েছি তাই না?আমাকে ক্ষমা করে দেনা তানি তবুও আমাকে ছেড়ে যাস না। তোকে ছাড়া আমার ছেলেবেলা একাকিত্বে কেটেছে আমি আর একাকিত্ব সইতে পারবোনা। ”

প্রথমে তানি ছটফট করলে সেই যে চুপ হয়েছে আর নড়াচড়া করেনি।প্রিয়ম একমনে কথা গুলো বলে যাচ্ছে আর নিশ্চুপ তানি সেগুলো শ্রবণ করছে।তানি অনুভব করলো তার কপালে পানি,বুঝলো প্রিয়ম কাঁদছে।প্রিয়ম কাঁদছে, তার প্রিয়ম ভাই তার জন্য কাঁদছে।কথাটা মনে হতে তানির পুরো শরীর হিম হয়ে গেলো। নিজেও আর কান্না আটকাতে পারলোনা প্রিয়মের বুকে হু হু করে কেঁদে দিলো।কান্নার বেগ এতোটাই যে প্রিয়মের পরিহিত জামাটা ভিজে ছিপছিপে হয়ে গেলো।

বদ্ধ ঘরে একজোড়া ভালোবাসার মানুষ নিজেদের ভালোবাসার গভীরতা বোঝাতে শব্দহীন কান্নার অনুভূতিতে সেটা প্রকাশ করছে।তানি আওয়াজ করে,

“প্রিয়ম ভাই আমি না হয় তোমার ভালোবাসা বুঝিনি,তুমিও কি বুঝোনি? আমার শৈশব কৈশোর যৌবনেের প্রথম ভালোবাসা ছিলে তুমি!তোমাকে ভালোবেসে আমি কতোবার যে কল্পনায় বিমোহিত হয়েছি তা অগণিত!কৈশোরের আবেগ নাম দেওয়া অনুভূতিকে যৌবনে যখন ভালোবাসা বুঝতে পারলাম সেদিনই তোমাকে নিজের স্বামী ভেবেছিলাম। কিন্তু ভয় পেতাম তুমি আমাকে যে পরিমাণ অপছন্দ করো তাতে যদি আমার ভালোবাসা অস্বীকার করো।মনে মনে ভয় লাগতো আমার প্রিয়ম ভাইকে যদি অন্য কেউ নিয়ে নেয় তখন তো আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো।বাবা যখন বিয়ে ঠিক করলেন তখন রাগে ক্ষোভে নিজেকে শেষ করতে ইচ্ছে করছিলো।তাই নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর সহায়তা চেয়েছিলো।করুণাময় আল্লাহ আমাকে করুণা করেছেন।তিনি তোমাকে আমার বর হিসেবে দিয়েছেন।আমি যে কী খুশি তোমাকে বোঝাতে পারবোনা!তোমাকে দেখার জন্য রোজ তোমার বাসায় যেতাম, কতো বাহানা করে তোমাকে দেখতে হতো।এখন আর সেসব লাগবেনা। রাতদিন তোমাকেই দেখবো সেই খুশিতে আমি প্রায় আত্মহারা!তোমাকে জ্বালাতে,রাগাতে আমার ভালোই লাগতো কিন্তু তুমি যখন সেই রাতে আমাকে ডিভোর্সের কথা বল্লে তখন মনে হলো এ পৃথিবীর বুকে আমর ঐ মুহূর্তে মৃত্যু হোক।আমি চাই আমার প্রিয়ম ভাই সুখী হোক কিন্তু আমাকে নিয়ে তার অসুখ আমি মানতে পারিনি তাই ছেড়ে এলাম।বিশ্বাস করো এতোদিন আমার কষ্ট আমার মাথার বালিশ আমার ঘরের দেয়ালরা দেখেছে।তোমাকে ছাড়তে হবে বিষয়টা ভাবলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো।আমার প্রতিটি প্রহর কতোটা ভয়ে কেটেছে, এ বুঝি ডিভোর্স পেপার এলো বলে!আমার যন্ত্রণা কাকে বুঝাবো, বলো কাকে?”

তানি এবার সশব্দে কান্না করে শুরু করে দেয়।প্রিয়ম তানিকে একটু সরে আনে তারপর মুখটা তুলে ধরে।তানি চোখ নিচে রাখে।

“তানি চোখ তোল,আমার দিকে তাকা?”

তানি তাকায় না।বড্ড অভিমান জমেছে মনে সেই অভিমান এতো সহজে কি ভাঙবে?প্রিয়ম না জেনে কতো কষ্ট না দিয়েছে মেয়েটাকে। আচ্ছা কি করলে এ মেয়ে আগের মতো চঞ্চল হয়ে উঠবে,কি করলে তার তানি তার কাছে ফিরবে?

“তানি কথা বলবি না আমার সাথে?তুই কি চাস তোর প্রিয়ম ভাই তোকে না পেয়ে নিজেকে শেষ করুক?”

তানি সাথে সাথে বুকের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। না পারবেনা সে এ ছেলে থেকে দূরে থাকতে,পারবেনা মানুষটাকে আর আঘাত করতে, পারবেনা তাকে আর একা রাখতে বা নিজে একা থাকতে কারণ এটা যে প্রিয়ম তানির ভালোবাসা।

প্রিয়ম তানির মুখটা উঁচু করে নিজের উঞ্চ অধর রাখে তানির অধরে।লজ্জায় তানি কিছুটা সরে আসে।প্রিয়ম এগিয়ে আসে। পেছন থেকে ফিসফিসিয়ে বলে,”তানি ভালোবাসি!”

তানি লজ্জামিশ্রিত বদনে লুকিয়ে পড়ে প্রিয়মের বুকে।আজ থেকে না হয় শুরু হোক প্রিয়ম তানির একতাই প্রিয়তার মিষ্টি সংসার!

সমাপ্ত

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here