প্রিয়তার মিষ্টি সংসার পর্ব ২

#প্রিয়তার_মিষ্টি_সংসার
#তনিয়া
পর্ব:২

প্রিয়মের চিল্লানিতে ঘুম ভাঙ্গে তানির।ঘুম কাতুরে চোখেই জিজ্ঞেস করে এভাবে ফাটা বাঁশের মতো চিল্লানোর কারণ?? প্রিয়মের চোখ গুলো মনে হচ্ছে অগ্নি কূপ যেখানে আগুন জ্বলছে। প্রিয়ম পাশে থাকা পানিটা তানির মুখে ছুড়ে দেয়।তানি দ্রুত সজ্ঞানে আসে।আর ঘুম উবে যেতেই এবার নিজেই চিৎকার করে।

“এসব কেমন অসভ্যমি প্রিয়ম ভাই, সাতসকালে আমাকে এভাবে অপমান করার মানে কি?”

“অপমান করছি তোকে?নাকি তুই করছিস আমাকে?বেয়াদব মেয়ে।তুই আমার গায়ের ওপর এভাবে পা তুলে ঘুমোচ্ছিস কেনো?”

এতোক্ষণে বুঝলো প্রিয়মের রাগের কারণ। আসলে ছোট থেকে এটা তানির অভ্যাস কারো গায়ে পা তুলে ঘুমানো।এরজন্য প্রিয়মের ওপরেও পা তুলেছে।এতে রাগ করার কি আছে। তারই তো বউ।

“আসলে কি বলো তো এটা আমার অভ্যাস। ছোট থেকে এটা করে আসছি তাই পাল্টাতে পারছিনা।তাছাড়া আমি তো আমার বরের ওপর তুলেছি আর কারো ওপর তো তুলি নি তাই না?

“আমি তো বরের ওপর তুলেছি!”

মুখ ভেঙচি দিয়ে বলে প্রিয়ম।

“তোর হাতির মতো পা আমার শরীরে পড়লে আমি কি বাঁচবো মনে করেছিস?পরেরবার এমনটা করলে সোজা পা টা কেটে রেখে দিবো।অসভ্য মেয়ে কোথাকার।”

বিছানা ছেড়ে প্রিয়ম বাথরুমে ঢুকে গেলো।তানি হাত পা ছাড়িয়ে বসে রইলো।প্রিয়ম তাকে হাতি ডাকলো এটা কোনো কথা? না হাতি ডাকার শোধ নিবে আগে ঘুমিয়ে নিক।

আবার বিছানায় ঘুমোতে যেতেই আর ঘুম হলোনা।একে তো কাল দেরীতে শুয়েছে তার ওপর সকালে পানির ছিটে ঘুমটা চলে গেলো।অগত্যা ফ্রেশ হওয়ার জন্য পা বাড়াতে বুঝলো প্রিয়ম ওয়াশরুমে।

ডাইনিং টেবিলে আসতে সবার নজর পরে দুজনের ওপর।তানি প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝে কারণ কি?? প্রিয়ম শয়তানটার জন্য তাকে এতো সকালে গোসল করতে হয়েছে কারণ সকালে সে পানি মেরেছিলো। নিরবে নাস্তা করতেই আজিজ সাহেব বলেন,

“প্রিয়ম অনেক দিন তো জবের চেষ্টা করলে। আমি বলি কি,এবার তুমি আমার কোম্পানিতে বসো।জব করে কোনো ফায়দা হবেনা।”

“না বাবা আমার ব্যবসার কাজে থাকতে ভালো লাগেনা।আমি বরং আগে জব করি। কারণ নিজের ব্যবসায় বসলে হয়তো নিয়মকানুনে মনোযোগী হবো না তাই আগে অন্যের আন্ডারে কাজ করি তারপর ভেবে দেখবো।”

আজিজ সাহেব আরকিছু বলেননা।কারণ তিনি জানেন এটা বল্লেও হবেনা।তানি ওদের কথা শুনে হঠাৎ মনে পড়ে আজ তার পরীক্ষার ফর্ম পূরণের ডেট।তাড়াতাড়ি আধ খাবার খেয়ে হেনা বেগমকে বলে,

“আন্টি আজ আমার ফর্ম পূরণের ডেট আছে। আমাকে দ্রুত কলেজ যেতে হবে।”

তানির কথায় উপস্থিত সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খায় কারণ বিয়ের পরদিন বাড়ির বউ কলেজ যাবে বিষয়টা কেমন না? তবুও আপত্তি করলোনা কারণ তানির এমন উড়নচণ্ডী স্বভাব সবার জানা।তাই হেনা বেগম ছেলেকে বলে যেনো তানিকে কলেজ ছেড়ে আসে।

প্রিয়ম খাবার মুখে কেশে দেয়।মুখের ওপর না বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো কারণ এ না বলা জড়তার জন্যই আজ তাকে তানির বর হয়ে থাকতে হচ্ছে। যদি বিয়ের দিনই না বলতে পারতো তাহলে হয়তো বেচে যেতো।আজ আর না বলে কি হবে?

তানি শ্বাশুড়ির কথায় খুশি হলো কিনা বা রাগ করলো কিনা বুঝা গেলোনা।সে আপন মনে খেতে লাগলো।

বাইকে বসতেই তানির অস্বস্তি হতে লাগলো কারণ ছোট থেকে তানি বাইক ভয় পায়।একবার স্বাদ করে বড় মামার বাইকে উঠেছিলো। মামা পইপই করে বলেছিলো তাকে ভালো করে ধরতে কিন্তু তানি এতো খুশি ছিলো যে বাইক স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথে তানি বড় মামাকে ছেড়ে দেয় আর সাথে সাথে পড়ে যায়। সে বার খুব ব্যাথা পেয়েছিলো যার ভয়ে আর কারো বাইকে উঠার সাহস করেনি।

তানিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রিয়ম জিজ্ঞেস করে,

“এভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি উঠবি?আমার কাজ আছে।”

“প্রিয়ম ভাই অটোতে বা রিকশায় গেলে ভালো হতো না।আসলে আমার বাইকে চড়তে ভয় লাগে।”

“গাড়ি থাকতে অযথা টাকা খরচ করবো কেনো?তাহলে গাড়ি ঠিক করে দেয় তুই চলে যা।”

তানি এমনটা করতে চায়নি কারণ সে চায় আজ কলেজে সে তার বরকে নিয়ে যাবে।তাই উপায় না পেয়ে বাইকে উঠে। বাইকে প্রিয়মকে জড়িয়ে ধরতেই সে ধমক দিয়ে উঠে।

“এই এভাবে আমাকে ধরবিনা।পেছনে হ্যান্ডেল আছে ওটা ধরে থাক আমার সুড়সুড়ি লাগে।”

“এমন করছো কেনো? আমি সত্যি বাইকে ভয় পায়। প্লিজ একটু জড়িয়ে ধরি যাতে পরে না যায়।”

প্রিয়ম আর কিছু বলেনা, জানে লাভ নেই। বাইক কলেজ গেইটে আসতে তানি নেমে পড়লো।কিছু বলার আগেই প্রিয়ম বাইক টান দিলো।তানি কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে কলেজের ভেতরে চলে গেলো।দূর থেকে তানির বান্ধবীরা তানিকে দেখে দৌড়ে আসে।তাদের হঠাৎ আগমনে তানি কিছুটা ঘাবড়ে যায়।

রুম্পা হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করে,

“কিরে বিয়ের কনে,সাতসকালে কলেজে চলে এলি।আমরা তো ভাবলাম আগামী এক সপ্তাহ তুই কলেজের গেইটেও আসবি না।তা এতো কি কাজ যে বিয়ের পরদিন আসা লাগলো?”

“আরে ইয়ার কি বলিস??আজকে ফর্ম পূরণের লাস্ট ডেট তোরা আমাকে মনে করিয়ে দিবিনা নাহলে কি এতো তাড়াতাড়ি কলেজ আসতাম।”

“আচ্ছা তুই কি ভালো হবিনা।সেই কখন থেকে তোকে লাস্ট ডেট বল্লাম আর তুই কিনা এখন জানছিস। তোর এ ভুলোমনের জন্য না জানি কি হয় আমাদের প্রিয়ম ভাই এর।বাই দা ওয়ে প্রিয়ম ভাই এসেছিলো মনে হয়?”
আমাদের সাথে আলাপ না করে চলে গেলো?

“কি করবে বল ওর না কাজ আছে তাই তারাহুরো করে আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেলো।চল ভেতরে যায়। স্যারকে টাকাটা দিয়ে একটা ক্লাস করে ফুসকা খাবো।”

তানির কথায় সবাই হো হো করে খুশি প্রকাশ করলো এদিকে তানি ভাবছে কথার ছলে ওদেরকে প্রিয়মের বিষয়টা ভুলোনো গেলো নাহলে যা ধড়িবাজ মেয়ে সব।

আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এলো যতই হোক নতুন বউ বলে কথা। তাছাড়া বিয়েটা এমনভাবে হলো যে প্রিয়মের দিক থেকে তেমন কোনো মানুষের আগমন হয়নি।হবে কি করে? কে বা জানতো হুট করে এমন একটা কান্ড হবে নাহলে তো প্রিয়মের বউ হওয়া অসম্ভব ছিলো।

সন্ধ্যায় মোটামুটি একটা অনুষ্ঠান করা হলো যেখানে শুধু মাত্র ঘরের আত্মীয় স্বজনরা এটেন্ড করেছিলো।অনেকে হেনা বেগমকে অভিযোগ জানিয়েছেন যে,তাদের ছেলের বিয়েতে কেনো তাদের জানানো হলো না।হেনা বেগম খুব বিচক্ষণ মানুষ, কথার ভাঁজে ঘটনাটা বুঝিয়ে দিলেন।

রাত তেমন বেশি না।অনুষ্ঠান ছোট হওয়াতে খুব দ্রুত কাজ শেষ হলো।বাসার সবাই খাওয়া শেষ করতেই হেনা বেগম তানিকে ডেকে পাঠালেন।

শ্বাশুড়ির রুমে ঢুকে তানি আন্টি বলে ডাক দেয়। হেনা বেগম তানির ডাক শুনে ভ্রু কুঁচকায়।

“কিরে এখনো কি আমি তোর আন্টি।এটা জানিস না বিয়ের পর বরের মাকে মা ডাকতে হয়।”

“ওহো আন্টি এসব অনেক নতুন কথা। তাছাড়া তোমাকে ছোট থেকে আন্টি বলে ডেকেছি তাই মা ডাকাটা কঠিন হবে।তাছাড়া তুমি বল্লে কি আর হবে তোমার ছেলে তো আমাকে মানতেই চাইনা।যতই হোক তার অপছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে। ”

অনেকটা অসহায় আর শুকনো মুখে কথা টা বলে তানি।হেনা বেগম বুঝতে পারে তানির বিষয়টা।তাই এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

“বোকা মেয়ে মন খারাপ করলে হবে।আমরা সবাই জানি তোদের সম্পর্কটা সাপে নেউলের মতো তবুও দেখ আল্লাহ তোদের এক করেছে।নাহলে কি বিয়ের দিন ওরকম ঘটনা হতো।জানিস তো প্রিয়মকে, একটু না হয় মানিয়ে নিবি।আমি জানি তো তুই পারবি।”

তানি শ্বাশুড়ির এমন কথা শুনে কিঞ্চিৎ হাসি দেয় তবে তানি জানে এ কাজটা প্রায় অসম্ভব। আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়। হেনা বেগম তার যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে।ভাবে কীভাবে এ দুটো এক হবে? একজন তো উড়নচণ্ডী আরেক জন তো পানির মতো শীতল।

হঠাৎ মনে পরলো যার জন্য তানিকে ডাকা হয়েছে তা তো বলা হয়নি।থাক কাল না হয় জানিয়ে দিবে।

চলবে…

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here