প্রিয়তার মিষ্টি সংসার পর্ব ৩

#প্রিয়তার_মিষ্টি_সংসার

#তানিয়া

পর্ব:৩

রুমে ঢুকতেই দেখে প্রিয়ম মাটিতে বিছানা করছে।তানি অবাক হয়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

“একি কি করছো তুমি? মেঝেতে কেনো বিছানা করছো? এতো বড় খাট তোমার, আমরা দুজন থেকে আরো তিনজন থাকতে পারবে।তবুও তোমার জায়গা হচ্ছে না প্রিয়ম ভাই। কই তুমি তো এতো মোটা না তাহলে?”

“কে বলেছে আমি আমার জন্য বিছানা করছি , এটা তোর জন্য করে রাখলাম।আমার খাটে আমিই ঘুমাবো।আমার পাশে কেউ ঘুমাক সেটা আমি চাই না।তুই নতুন তাই আজ আমি বিছানা করে দিলাম পরেরবার তুই নিজে করবি।”

প্রিয়মের কথায় তানির চোখ ছানাবড়া। কি বলে এ ছেলে?

“তোমার মাথা ঠিক আছে? আমি শুবো নিচে? অসম্ভব। তুমি জানোনা মেঝেতে থাকলে আমার ঠান্ডা লাগবে ঠান্ডা থেকে জ্বর, সর্দি তারপর…”

“থাম তোর কি হবে সেটা জানতে চাইনি বরং আমার যেনো অসুবিধা না হয় সেটা কথা। তাছাড়া রাতের বেলা তোর হাত পায়ের জ্বালায় আমার ঘুম হারাম করতে পারিনা।তাই যা বলছি তাই কর।”

“প্রিয়ম ভাই তুমি কিন্তু অতিরিক্ত করছো।তোমার অসুবিধে হলে তুমি থাকো নিচে কিন্তু আমি থাকবোনা ব্যস।”

তানি দৌড়ে বিছানায় উঠে গেলো।প্রিয়ম রাগে ক্ষোভে তৈরি করা বিছানাটা লাথি দিয়ে উল্টে দিলো।বিছানায় এসে দুজনের মধ্যে একটা কোলবালিশ রাখলো আর তানিকে সতর্ক করলো যেনো,এ বালিশ ক্রস না করে।তাহলে বালিশ আর তানি দুজনকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিবে।কে শোনে কার কথা? তানি ততোক্ষণে ঘুমের দেশে।

তানির ঘুম দেখে প্রিয়মের ইচ্ছে করছিলো ওকে ওখানে গলা টিপতে কিন্তু ওকে মারলে জেল হবে তাই এসব করার সাহস নেই। শুধু মাত্র মায়ের কথা রাখতে এতোকিছু।

অতীত……

বিয়ের দিন যখন মোটামুটি সব আত্মীয় স্বজনরা চলে এলো শুধু বরের গাড়ি আসার কথা। হুট করে বরযাত্রীর একজন দূত খবর দেয় বর পালিয়েছে। কথাটা শুনে হৈ-হুল্লোর করা বিয়ে বাড়ি নিমিষে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।এমন কিছু হবে তা সবার অজানা। বিয়ের আগে বর সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নেওয়া হয়।বরের পরিবার ভালো আর সুনাম দেখে বিয়ের আয়োজন হয়।কিন্তু এ দিনে বর পালাবে তা কে জানতো?তানির বাবা শফিক সাহেব কান্নাতে ভেঙে পড়েন।তার আদরের মেয়ের সাথে এমন কিছু হবে তিনি কল্পনা করেননি।বড় কথা বিয়ের দিন বর পালালো এরচেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে?সবাই তখন সাত্বনা জানাতে লাগলো। ভাবতে লাগলো সমাধান কি হবে?আর তখনই আজিজ সাহেব জানান তার ছেলে প্রিয়মের সাথেই তানির বিয়ে হবে।কিন্তু প্রিয়মের যা রাগ তাতে সে বিয়ে করবেনা বলে সবার ধারণা কারণ প্রিয়ম তানিকে মোটেও পছন্দ করেনা এমনকি চোখের সামনে দেখলেও সহ্য করতে পারেনা।সেই ছেলে কীভাবে বিয়ে করতে রাজি হবে।শেষে সবাই হেনা বেগমকে ধরলেন কারণ প্রিয়ম ভীষণ মা ভক্ত। মায়ের কোনো কথা অগ্রাহ্য করেননা।তাই হেনা বেগম নিজেই এ বিষয়ে কথা বল্লেন।তাছাড়া তানিকে তিনি ছোট থেকে চিনেন।অতএব মেয়ে হিসেবে তানি যথেষ্ট ভালো যদিও একটু উশৃংখল তবে বেশ মিষ্টি।

মায়ের কাছ থেকে বিয়ের কথা শুনে প্রিয়মের মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। কারণ তানিকে সেই দুই চোখে দেখতে পারেনা আর সেই মেয়েকে করবে বিয়ে। অসম্ভব ব্যাপার। দুজনের মধ্যে বেশ কথা কাটাকাটি হলো। এক সময় হেনা বেগম কান্না করে দেন।মায়ের কান্না দেখে শেষ পর্যন্ত রাজি হয় প্রিয়ম।

প্রিয়মের বাবা আর তানির বাবা বাল্যকালের বন্ধু। তারা দুজনে প্রাইমারি থেকে একসাথে বড় হয়।প্রিয়মের বাবা শহরেই পার্মানেন্ট ছিলেন। তানির বাবা শহরে এসেছিলো গ্রাম থেকে। সেই থেকে শহরে থেকে যায়। ধীরে ধীরে এখানে সেটেল হয়।জায়গার দাম কম হওয়ায় নিজেই বন্ধুর বাড়ির পাশে জায়গা কিনে ফেলেন।আর সেখানে মোটামুটি থাকার মতো একটা বাড়ি করে ফেলেন।প্রিয়মরা এক ভাই একবোন।প্রিয়ম বড়।তানিরা দুই বোন।তানির মা মারা যায় যখন তানি মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়।এরপর বাবা তাদের দেখাশোনা করে। সাধারণত বড় মেয়েরা নরম আর শান্ত হয়।তানির ক্ষেত্রে সব উল্টো বরং তানির মতো অশান্ত আর চঞ্চল মেয়ে খুব কম।তবে হাসিখুশি থাকতে যেমন পছন্দ করে তেমনি রাখতেও পছন্দ করে।এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী।পড়াশোনায়ও যথেষ্ট ভালো।সবকিছুই ভালো তবে একটা সমস্যা খুব চঞ্চলতা দেখায়।কখন কোথায় কি করতে হবে তা জানে না বা চেষ্টাও করেনা।উল্টো দিকে প্রিয়ম ঠিক তানির বিপরীতে।একি জায়গায় বাসা হওয়াতে তানি সবসময় প্রিয়মদের বাসায় যাতায়াত করতো।প্রিয়ম খুব কমই যাতায়াত করে।তানির কাছে দুটো বাসায় নিজের বাসার মতো ছিলো।তবে ছোট থেকে প্রিয়ম তানিকে খুব একটা দেখতে পারতোনা তানির এমন উড়নচণ্ডী স্বভাবের জন্য। তানি যাদের সাথে মেলামেশা করতো তারা খুব একটা ভালো পরিচিত ছিলো না। প্রথম প্রথম প্রিয়ম নিষেধ করলে তানি সেটা পাত্তা দিতো না বরং নিষিদ্ধ কাজটা বেশি করতো সময়ের সাথে সাথে চক্ষুশূল হয়ে উঠে তানি প্রিয়মের।আর সেই মেয়েকে বিয়ে করতে হবে জেনে প্রিয়ম যেনো দুনিয়া ভুলে গেলো কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না বিয়ে তাকে করতেই হলো তাও সেই মেয়েকে যাকে কখনো বন্ধু হিসেবে ভাবতে পারেনি!

সকালে গায়ের ওপর ভারী কিছু অনুভব করে প্রিয়ম।চোখ খুলতে দেখে তানি পুরো প্রিয়মের গা ঘেঁষে শুয়ে আছে। গতকালের মতো আজও পা তার গায়ের ওপর। তার মানে মাঝখানের কোলবালিশটা ফেলে দিয়ে সে প্রিয়মের গায়ের ওপর পা তুলে ঘুমিয়েছে।এ মেয়ে কখনো ভালো হবেনা।প্রিয়ম ভালো করে তাকাতেই খেয়াল করে তানি বুড়ো আঙুল মুখে দিয়ে ঘুমুচ্ছে।ছোট বাচ্চারা যেভাবে ঘুমায় ঠিক তেমন লাগছে।তবে পার্থক্য একটা তানি বড় আর যুবতী মেয়ে। তবুও খারাপ লাগছে না দেখতে।একি এসব কি ভাবছে প্রিয়ম এ মেয়েকে নিয়ে উল্টা পাল্টা চিন্তা করছে সে।না এসব করার মানে হয়না।

প্রতিটি সংসারে উত্থান পতন হতেই থাকে। তাতে কি? সংসার তো নিজ নিয়মে চলে।একইভাবে তানি আর প্রিয়মের সংসার এগোচ্ছে তবে আর পাঁচটা সংসারের মতো নয়।এক বাড়িতে তাদের যেমন আচরণ এক রুমে তা ভিন্ন আচরণ। বাড়ির পরিবেশের সৌন্দর্যতা বজায় রাখতে দুজনি ঠিক আচরণ করলেও চারদেয়ালের কক্ষে দুজনের ঝগড়া লেগেই থাকে।এটা সেটা নিয়ে দুজনে তুমুল ঝগড়া করে। তবে সেটা বাইরে প্রকাশ করতে দেয়না।তানির পরীক্ষা শুরু হওয়ায় তানি একটু রাত জেগে পড়ার চেষ্টা করে কিন্তু এতে প্রিয়মের আপত্তি। কারণ আলোতে তার ঘুম হয়না।বেস এটা নিয়ে রাত বিরাতে হইচই। এর পরদিন প্রিয়ম টেবিল ল্যাম্প নিয়ে আসে যাতে তানি একাকি আলোতে পড়তে পারে।তানিও কম কিসে?ল্যাম্পটা এমনভাবে বসিয়েছে যেনো তার আলোর প্রতিফলন প্রিয়মের চোখে পড়ে।রাত একটা বাজে এ নিয়ে তর্কাতর্কি হলে প্রিয়ম হার মানে।কারণ সে জানে,তানির এমন বদমায়েশির সাথে সে পেরে উঠবেনা।শেষমেশ গরমের মধ্যে একটা কাপড় নিজের মুখে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

আজ পরীক্ষার শেষ দিন।হল থেকে বের হতে হঠাৎ কলেজের এক সিনিয়র ভাই এর সাথে দেখা হয় তানির।দুজনে বেশ কিছুটা পরীক্ষা নিয়ে কথা বলে।সিনিয়র ভাই তানিকে ফুসকা খাওয়ার আবদার করলে তানি আপত্তি জানায়।শেষে রাজি হয় কারণ শুরু থেকে মানুষটা তাকে অনেক সাজেশন দিয়ে সাহায্য করেছে। তাই এটুকু অনুরোধ ফেলা যায় না।

ফুসকা খাওয়ার মুহূর্তে ভাইয়াটি বিভিন্ন কথা বলে যা শুনে তানি ফুসকা মুখে হাসতে থাকে।এক পর্যায়ে হিচকি উঠে গেলে তিনি মাথায় হাত বুলোতে থাকেন।তানির হিচকি থেমে যায় কিন্তু অগোচরে কারো চোখের আগুন নিভে না তা হয়তো তানি টেরও পায়নি।

বাসায় ফিরতে একটু দেরী হয়।এ নিয়ে হেনা বেগম কিছু জানতে চায়নি কারণ তানি আগেই জানিয়েছিলো আজ শেষ পরীক্ষা হওয়াতে আসতে লেট হবে।বাসায় ঢুকতে তানি জানতে পারে প্রিয়মের আসার খবর সেই সাথে এও জানতে পারে প্রিয়মের মুডের অবস্থা। তাই তানি বেশ সতর্ক হয়ে যায় যেনো আজ কোনো গন্ডগোল না করে বসে?

রুমের বিছানা এলোমেলো মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে বিছানার উপর কোনো রাগ এসে পড়েছে। রাগটা প্রিয়মের তবে কীসের রাগ সেটা তানি জানেনা।রুমে স্মোকের গন্ধ নাকে লাগছে তার মানে প্রিয়ম ভাই স্মোক করছে?তানি প্রিয়মকে খুঁজতে খুজতে বারান্দায় যায়। ঠিকই ধরেছে, প্রিয়ম স্মোক করছে। তানি ডাক দেয়,

“প্রিয়ম ভাই তুমি স্মোক করো?”

প্রিয়ম নিশ্চুপ, শুধু নাকে মুখে ধোঁয়া ছাড়ছে।তানি বুঝতে পারে প্রিয়ম নিশ্চয়ই বড় কিছু নিয়ে আপসেট।

রাতে খাবার খেতে ডাকলে প্রিয়ম আসেনা।হেনা বেগম নিজে যান ছেলেকে ডাকতে তবুও প্রিয়ম খাবে না বলে জেদ ধরে। এক প্রকার বাধ্য হয়ে খেতে আসে।তানি আড়চোখে প্রিয়মকে দেখছে আর প্রিয়ম নিচু হয়ে খাচ্ছে। হেনা বেগম সবাইকে খাবার দিতে গেলে তানি আপত্তি জানায়।সে খেতে পারবেনা তখনি প্রিয়ম বলে উঠে,

“মা খেতে যখন চাইছে না জোর করো না।বাহির থেকে খেয়ে আসলে বাসার খাবার কি আর মুখে রোচে। ”

প্রিয়মের এহেন কথায় যতটুকু খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো তাও চলে গেছে। তানি চিন্তা করছে প্রিয়ম কি তার ওপর রেগে আছে? কারণ কি?তানি তো তেমন কিছু করেনি?আর তানি বাহিরে খেয়েছে তাই বা প্রিয়ম জানলো কি করে?প্রিয়ম কি তার মানে তানির ওপর নজরদারি করে?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here