#প্রেমময় প্রহর (deewana 2)
Urme prema (sajiana monir)
পর্ব :৫
সায়রা নিজের চোখের সামনে আরসালের সাথে অন্যকোন মেয়েকে এভাবে জরিয়ে থাকতে দেখে বেশ কষ্ট হচ্ছে সে পারছেনা এই দৃশ্য নিজের চোখের সামনে দেখতে ।তার এই মূহুর্তে ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ।
সায়রা সেখান থেকে রেগে চলে যায় ।
সায়রা যেতেই আরসাল মেয়েটারে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে বলতে লাগে
-“কি করছিস নেহা !
তুই জানিস আমার এই সব একদম পছন্দ নয় ।
তোকে কতবার বসেছি আমাকে এভাবে হুটহাট জরিয়ে ধরবিনা ।তারপরও কেন এইসব ?”
নেহা নিজেকে সামলিয়ে বলতে লাগে
-“আসলে আরসাল তোকে এতদিন পর দেখে এক্সাইডমেন্টে জরিয়ে ধরেছি সরি !”
-“ইটস অকে !
নেক্সট টাইম খেয়াল রাখবি ।
বলেই আরসাল রুম থেকে রেগে চলে যায় ।নিহা রহস্যজনক ভাবে বাকাঁ হাসে !
এদিকে সায়রা বারান্ধায় দাড়িয়ে আছে কিছুসময় পূর্বেই সন্ধ্যার আযান দিয়েছে চারদিক অন্ধকার হয়ে আছে হালকা বাতাস ছেড়েছে মনে হচ্ছে প্রচুর ঝড় হবে আজ ।
সায়রার খোলা চুল বাতাসে বার বার মুখে এসে পড়ছে ।আজ যে সায়রার মনেও ঝড় উঠেছে ।
তার খুব কান্না আসছে ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কান্না করতে ।হ্যা সে আরসাল কে ভালোবাসেনা কিন্তু আরসালকে অন্যকারো সাথে আবার সয্য ও করতে পারেনা আর ঐ নিহার সাথে তো একদমই না !
আরসালের জন্য তার মনে এক অন্য অনুভূতি কাজ করে কি অনুভূতি তা নিজেও জানে না ।আরসালকে অন্য কারো সাথে ক্লোজলি দেখলে তার জ্বেলাসি হয় খুব জ্বলে বুকে লাগে তার ।ইচ্ছে করে সব শেষ করে দিতে কেন এমন হয় তার উত্তর সে আজও জানতে পারেনি !
আজ আবার সেই পুরোনো আঘাত যেন নতুন করে জেগে উঠেছে । দেড় বছর আগের সেই দিনের কথা সায়রার মনে পড়ে যায় যেদিন থেকে আরসালকে সে ঘৃনা করতে শুরু করেছে !
যাকে বলে চরম ভাবে ঘৃনা করা ।
এসব ভাবতে ভাবতেই দুই বছর আগের সেই পুরোনো স্মৃতিতে সায়রা ডুব দেয় !
অনেক আগের থেকেই আরসাল আর সায়রার পরিবারের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ।আরসালের দাদা আর সায়রার দাদা বাল্যকাল থেকেই বেস্ট ফ্রেন্ড ।সেই সূত্রে আরসালদের পরিবারের সায়রাদের বাড়িতে প্রায়ই আসা যাওয়া হতো !
তার উপর রিদ্ধির বিয়ের পর সম্পর্ক আরো গভীর হয় ।
ছোট থেকেই আরসালকে সায়রা ভয় পেতো ।আরসাল বাসায় আসলে সায়রা পালাতো কারন একটাই আরসালের রাগ ।
ছোট থেকে আরসাল বেশ রাগী আর ঘোমড়ামুখো তাই সায়রা তাকে বেশ ভয় পেত ।কিন্তু আস্তে আস্তে যত সময় যেতে লাগে সায়রার আরসালের প্রতি এক অনুভূতি কাজ করতে লাগে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতে লাগে ।আরসালের রাগটাকেও এক সময় ভালো লাগতে শুরু করে ।আস্তে আস্তে সময় যেতে লাগে আরসালের প্রতি সায়রার সেই অনুভূতি ও বাড়তে লাগে ।
আরসালকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা তার কথা শুনা সবকিছুই একটা নতুন মোর নিতে লাগে সায়রার ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিনত হতে লাগে ।আরসালকে সে ভালোবেসে ফেলে কিন্তু আরসালকে কখনো নিজের অনুভূতি বলতে পারেনা ভয় হতো খুব বেশি ভয় হতো যদি আরসাল রেগে যায় ।সে সময় সেই রাগটাকে সে কি করে সয্য করবে ?
এইসব ভেবে কখনই নিজের মনের কথা আরসালকে বলে না ।আরসাল হয়তো তার অনুভূতি বুঝতো আবার হয়তো না !
সে সময় সায়রা সবে মাত্র ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে সাভার কলেজে ভর্তি হয়েছে ।দিন ভালোই কাটছিলো হঠাৎ একদিন ক্লাস থেকে বের হতেই কেউ তার হাত শক্ত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগে মনে হচ্ছে বেশ রেগে আছে সামনে তাকিয়ে দেখে বেশ সুন্দরী মর্ডান একটা মেয়ে চোখে মুখে তার ভয়ংকর রাগ যেন এই মুহূর্তেই সায়রাকে গিলে খাবে ।টান দিয়ে এনে সায়রাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সায়রার গালে চড় বসিয়ে দেয় সায়রা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে ।সব যেন সায়রার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা রেগে বলতে লাগে
-“এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে আমার আর আরসালের মাঝে আসার ?
তুমি কি ভেবেছো আরসাল কে নিজের দিকে আকর্ষন করলেই সে তোমার হয়ে যাবে ?
দেখতে তো একটুখানি মনে হয় কিন্তু এত ঝাঝঁ রয়েছে তোমার মধ্যে জানা ছিলো না ।
কি ভেবেছো তোমার রূপে আরসাল তোমার হবে ?
সে কিছুসময়ের জন্য তোমার রূপের মৌহতে ডুবলেও সারাজীবনের জন্য তোমার থাকবেনা ।আরসাল আমার শুধুই আমার !
আমাদের মধ্যে আসার চেস্টা করোনা এর ফল তোমার জন্য ভালো হবেনা ।
মনে রেখ আমি নিহা চৌধুরী এত সহজে তোমাকে আমি ছাড়বোনা !”
সায়রা ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে বলতে লাগে
-“আমি কি করে আপনাকে বিশ্বাস করবো ?
কি প্রমান আছে আপনার কাছে যে আরসাল ভাইয়া আপনাকে ভালোবাসে ।”
নিহা নিজের ফোন থেকে কিছু ছবি বের করে সায়রার সামনে ধরে যা দেখে সায়রার মাথায় যেন আসমান ভেঙ্গে পড়ে ।চোখ থেকে টপটপ করে জল ঝোরতে লাগে ।ছবিগুলো তে আরসাল আর নিহা বেশ কাছাকাছি দেখে মনেই হচ্ছে তাদের মধ্যে কোন গভীর সম্পর্ক রয়েছে ।এসব দেখে নিমিষেই যেন সায়রার সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে যায় ।আরসালের প্রতি ভালোবাসা নিমিশেষেই ঘৃনায় পরিনত হয়ে যায় ।
নিহা আবার বলতে লাগে
-“আরসাল তোমাকে ভালোবাসে না শুধু তোমার মৌহ তে পড়েছে মৌহ কেটে গেলেই ও তোমাকে ছুড়ে ফেলবে ও তোমাকে ভালোবাসেনা ও আমাকে ভালোবাসে ।
আমার আরসালের থেকে দূরে থাক !
আসলে দূরে থাকবে কি করে তোমরা মিডেলক্লাস ফেমিলির মেয়েরা তো চাওই এমন ধনি ছেলেদের ফাসিয়ে বড় বাড়ির বউ হতে তাইতো তোমার পুরো পরিবার আরসালের পিছনে হাত ধুঁয়ে পড়ে আছো ।
যদি সামান্য পরিমান লজ্জা থাকে তাহলে আরসাল থেকে দূরে থাকবে ।”
নিহা আরো কিছু কথা শুনিয়ে চলে যায় ।সায়রা ঠায় সেখানেই দাড়িয়ে আছে পাথরের মত শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে ।মাওয়া আর মুন সেদিন সায়রাকে বাড়িতে নিয়ে আসে রাস্তায় বার বার তারা সায়রাকে জিগাসা করে কি হয়েছে কিন্তু সায়রা কোন উত্তর দেয়না ।
বাড়িতে এসেই দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ লুকিয়ে চিৎকার করে কান্না করতে লাগে ।এই প্রথম বার সায়রা এতটা অপমানীত হয়েছে কেউ তার গায়েঁ হাত তুলেছে ।সে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছে ।সে যাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবেসে গেছে তার কাছে ভালোবাসা পুতুল খেলা ।
এসব ভেবেই সে চিৎকার করে কান্না করতে লাগে ।
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায় সায়রা আরসাল থেকে দূরত্ব রেখে চলতে শুরু করে ।আরসালকে ইগনোর করতে লাগে ।আরসালকে দেখলেই তার ভিতরের ঘৃনা জেগে উঠে ।
হঠাৎই একদিন খালি বাড়িতে আরসাল হুট করে আসে সায়রা সে সময় বই পড়ছিলো ।আরসাল এসেই সায়রার সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে আরো উপস্থিতী টের পেয়েই সায়রা মাথা তুলে তাকায় ।সামনে তাকিয়ে দেখে আরসাল বসে আছে চুল সব অগোছালো ।গোছালো মানুষটা কেমন যেন অগোছালো হয়ে গেছে !
চোখ গুলো ভয়ংকর লাল রং ধারন করেছে ।
আরসাল সায়রার বাহু ধরে সায়রা কে নাড়িয়ে বলতে লাগে
-“কি হয়েছে তোমার ?
কেমন এমন করছো !
কেন আমাকে ইগনোর করছো ?
কি করেছি আমি কেন কিসের শাস্তি আমাকে দিচ্ছ তুমি ।”
সায়রা আরসালের এমন রূপে ভয় পেয়ে যায় ।সায়রা আরসাল থেকে চোখ সরিয়ে কাপাঁ কাঁপা গলায় বলে
-“কই কিছু হয়নি তো !
আমি ঠি ক আছি আর আমি আপনাকে কোন ইগনোর করিনি ।”
-“সায়রা আমি জানতে চাইছি কি হয়েছে ?”
সায়রা কোন উত্তর দেয়না তাই আরসাল আরো জোরে চিৎকার করে বলে
-“আমি জানতে চেয়েছি কি হয়েছে সায়রা ?
বলো !!!”
সায়রা চিৎকার করে বলে
-“জানতে চানতো কি হয়েছে ?
তাহলে শুনুন আমার আপনাকে ভালো লাগেনা ঘৃনা হয় খুব বেশি ঘৃনা হয় !
আপনার কেরেক্টারটাকে ঘৃনা করি
আপনি একজন কেরেক্টারলেস লোক !”
আরসাল সায়রার প্রত্যেকটা কথা মাথা নিচু করে শুনছিল সায়রার কথা শেষ হতেই আরসালের দিকে তাকিয়ে দেখে আরসাল রাগে ফুসছে ।আরসাল নিজের রাগটাকে দমিয়ে সায়রার হাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে সায়রা ব্যথায় কুঁকড়িয়ে যায় ।আরসাল শীতল কন্ঠে বলতে লাগে
-“ঘৃনা কর আমাকে তাই না ?
খুব ঘৃনা হয় !
এই কেরেক্টারলেস লোকের সাথেই তোমাকে সারাজীবন থাকতে হবে আমি এখন সেই ব্যবস্থাই করবো !”
বলেই সায়রাকে ছেড়ে চলে যায় ।সায়রা কলিজায় চাপ দেয় কারন আরসালের রাগের সম্পর্কে তার বেশ জানা আছে নিশ্চিত ভয়ংকর কিছু করবে ।
আর তাই হয় পরদিনই আরসালদের বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে সায়রার দাদার কারনে সায়রাকে বিয়েতে রাজি হতে হয় ।বিয়ে পড়ানোর সময় আরসাল শক্ত করে সায়রার হাত চেপে ধরে বলতে লাগে
-“আমার ভালো রূপ দেখেছো তুমি এবার আমার হিংস্ররূপ দেখবে !
আমি কি কি করতে পারি তা দেখবে ।
তুমি আমার মধ্যে ঘুমন্ত জানোয়ারকে যাঘিয়ে দিয়েছো এর ফল তোমাকে ভোগতে হবে !
এখন তুমি আমার শুধুই আমার ।”
সায়রা বেশ ভয় পেয়ে যায় ।তারপর দিন থেকেই আরসালের হিংস্র রূপের সম্মখীন হয় ।এই দুবছরে যে সায়রার কাছে এসেছে তাকেই আঘাত করেছে ।সে আর আগের মত শান্ত আরসাল ছিলো না সাইকো হয়ে গিয়েছে ।আর সায়রার ঘৃনাও ধীরে ধীরে শুধু বেড়েছে ভালোবাসাটা কোথাও হারিয়ে গেছে !
এই মুহূর্তে সায়রার কাউ কে প্রয়োজন যার বুকের মধ্যে মাথা রেখে বেশ কিছুসময় চিৎকার করে কান্না করতে পারবে ।তাহলে হয়তো তার কিছুটা শান্তি লাগবে কিছুটা কষ্ট কম হবে !
হঠাৎ কেউ সায়রার কাধেঁ হাত রাখতেই সায়রা নিজের আবেগের উপর কন্ট্রোল করতে না পেরে তাকে গভীর ভাবে জরিয়ে ধরে ।অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছেনা কে সায়রা তার বুকে মাথা রেখে জোরে জোরে কান্না করে যাচ্ছে কিছু কষ্ট লাঘবের আশায় হয়তো শান্তি লাগবে তাই ভেবে !
বাহিরে বেশ জোরে ঝড় চলছে এদিকে অন্যকারো মনেও সায়রার এভাবে জরিয়ে ধরা ঝড় তুলে দিচ্ছে ।হ্যা সে আর কেউ না আরসালই …..
চলবে….❤️
Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন😊😊😊