প্রেমাঙ্গনা পর্ব -২৮+২৯

#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৮।

বিয়ের বেশ কিছুদিন পার হয়ে গিয়েছে। পৃথা এখন ছয় মাসে পা দিয়েছে। এর মাঝেই তার শরীরে বেশ পানি জমে, শরীর ফুলে যেন গোলুমোলু হয়ে গিয়েছে সে। আয়নায় এখন নিজেকে যতবারই দেখে ততবারই সে মুচকি মুচকি হাসে। কেমন যেন অদ্ভুত সুন্দর লাগে তাকে। অর্ণবও আজকাল পৃথাকে একটু বেশিই চোখে হারাচ্ছে। পৃথার শারীরিক এই পরিবর্তনে অর্ণব যেন বেশ অবাক। যে মেয়েটাকে সেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিল, আজ যেন সেই মেয়েটাই মা রুপে অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। তার এই অদ্ভুত সৌন্দর্য যেন অর্ণব ভীষণ উপভোগ করে। মাঝে মাঝে আবার অবাক হয়ে ভাবে, সব মেয়েরাই বুঝি মা হলে এত নিখোঁজ সুন্দর হয়ে যায়? অর্ণব তখন ভাবে, এই মেয়েটাকে যদি সে সারাক্ষণ চোখের সামনে বসিয়ে দেখে যায়, তবুও তার দেখার তৃষ্ণা মিটবে না।
_________

এই কদিনের পৃথাও অবশ্য অর্ণবকে খুব জ্বালিয়েছে। কতবার যে তার গায়ে বমি করেছে তার তো কোনো ইয়ত্তাই নেই। তবে অর্ণব কখনো তার উপর এইটুকুও বিরক্ত দেখায়নি। বরং যতবারই সে বমি করেছে ততবারই সে বিচলিত হয়ে উঠেছে। এখন যদিও পৃথার এই বমির অভ্যাসটা গিয়েছে তবে তার ইদানিং খুব বেশি মুড সুইং হচ্ছে। যার দরুন, মাঝে মাঝে সব অদ্ভুত কাজ করে বসে সে। এইতো সেদিনের ঘটনা,
অর্ণব যদিও এখন সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে তবে তার পুরনো এক সিগারেটের প্যাকেট তার ড্রয়ারেই পড়েছিল। পৃথা সেদিন সেটা বের করে হুট করেই সেখান থেকে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে খেতে আরম্ভ করে। অর্ণব তখন ওয়াশরুমে ছিল। সে বের হয়ে পৃথার এই অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে যায়। দ্রুত এসে পৃথার মুখ থেকে সিগারেটটা টান দিয়ে সরিয়ে নেয়। উদ্বিগ্ন সুরে বলে,

‘পাগল হয়ে গিয়েছ, পৃথা? তুমি সিগারেট খাচ্ছো কেন?’

পৃথা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,

‘কী জানি, আমার সিগারেট দেখে খুব খেতে ইচ্ছে করছিল তাই খেয়ে ফেলেছি।’

অর্ণব হতভম্ব হয়ে বলে,

‘শেষ মেষ সিগারেট খেতে ইচ্ছা হয়েছিল তোমার? তুমি না এই সিগারেটের ঘ্রানও সহ্য করতে পারো না?’

পৃথা বিরক্ত চোখে চেয়ে বলে,

‘আমি কি করে বলব? আমার সিগারেট খেতে ইচ্ছে হয়েছিল তাই খেয়ে ফেলেছি।’

অর্ণব তখন বুঝতে পারে আসলে সমস্যাটা এখানে পৃথার নয় বরং তার এই অবস্থার। এ সময় এমন একটু আধটু হয়ে থাকে। তাই সে ব্যাপারটা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিল সঙ্গে পুরো সিগারেটের প্যাকেটটাই বাইরে ফেলে দিল। তারপর সে পৃথার পাশে গিয়ে বসে বলল,

‘চিন্তা করো না, পৃথা। এটা তেমন কোন ব্যাপারই না। এই সময় এমন একটু আধটু উল্টাপাল্টা জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। এই নিয়ে তুমি এত দুশ্চিন্তা করো না।’

পৃথা তখন হেসে বলল,

‘তাহলে আমার যখন খেতে ইচ্ছে করবে আপনি আবার আমাকে এসব উল্টোপাল্টা জিনিস এনে দিবেন তো?’

অর্ণব বড়ো বড়ো চোখে চেয়ে বলল,

‘কখনোই না। তোমার শরীরের জন্য খারাপ এমন কোনো খাবারই আমি কখনোই তোমাকে এলাউ করব না।’

________

আজ অর্ণব আর পৃথা ডাক্তারের একটি রেগুলার চেকআপের জন্য হসপিটালে যায়। সেখানে যাওয়ার পর ডাক্তার তার চেকআপ করে বলেন, সে এখন আলট্রা করে বাচ্চা ছেলে না মেয়ে সেটা দেখতে পারবে। অর্ণব তখন খুশি হয়। বলে,

‘ হ্যাঁ হ্যাঁ ডাক্তার, তাহলে তো ভালই হবে; আপনি এখনই আলট্রা করুন।’

কিন্তু পৃথা বাধা দিয়ে বসে। সে বলে,

‘না, আমি আমার বাচ্চার জেন্ডার এখনই দেখতে চাই না।’

ডাক্তার খানিক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,

‘কেন?’

পৃথা বলে,

‘কারণ আমি চাই সেটা আমার জন্য একটা সারপ্রাইজ হিসেবে থাকুক।’

পৃথা রাজী হচ্ছে না বলে অর্ণব বলল,

‘আচ্ছা থাক তাহলে, তুমি যখন চাইছো না তখন আমরা আলট্রা করাব না।’

অর্ণবেরও সম্মতি পেয়ে পৃথা খুশি হয়। তারপর হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পৃথা বলে, সে নাকি ফুচকা খাবে। অর্ণব বলে,

‘ একদমই না, এই সময় ফুচকা খাওয়া যাবে না।’

পৃথা তার দিকে চেয়ে অনুনয়ের সুরে বলে,

‘প্লিজ অর্ণব, শুধু এক প্লেট।’

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে বলে,

‘না একদম না।’

পৃথা তখন জেদ দেখিয়ে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। নাকমুখ কুঁচকে বলে,

‘আমাকে ফুচকা না খেতে দিলে আমি এখান থেকে এক পা ও নড়বো না।’

অর্ণব পড়েছে বিপদে, রাস্তার মানুষ হাঁটছে আর তাদের দিকে তাকাচ্ছে। সে পৃথার হাত ধরে টেনে বলে,

‘আরে চলো, মানুষ দেখছে তো।’ পৃথা নড়ে না ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। বলে,

‘আমি এক পাও নড়বো না। আমাকে আগে ফুচকা খেতে দিবেন, তারপর আমি যাব।’

অর্ণব একটু রাগী চোখে তাকায় তাকে ভয় দেখানোর জন্য কিন্তু, পৃথা তো ভয় পায়ই না, উল্টো আরো বিরক্ত হয়ে বলে,

‘আপনার এসব চোখ রাঙানো তে আমার কিছুই হবে না। আপনি আজকে আমাকে ফুচকা খেতে না দিলে আমি এখান থেকে নড়বো না মানে নড়বো না।’

উপায়ান্তর না পেয়ে অর্ণব বলে,

‘ঠিক আছে, তবে এক প্লেটও ফুল না। জাস্ট তিনটা ফুচকা খাবে।’

পৃথা মুখ কালো করে বলে,

‘কিন্তু, কেবল তিনটাতে তো আমার পেট ভরবে না।’

অর্ণব তখন বলে,

‘থাক তাহলে, একটাও খেতে হবে না।’

পৃথা বলে উঠে,

‘না না, ঠিক আছে ঠিক আছে, তিনটাই খাব।’

তারপর অর্ণব তাকে নিয়ে একটা ফুচকার স্টলে যায় সেখানে গিয়ে সে এক প্লেট ফুচকা অর্ডার দেয়। এক প্লেট ফুচকা হাতে পেয়ে পৃথা তার দেওয়া কথা ভুলেই যায়। সে গপাগপ সব সাবাড় করে। অর্ণব তাকে আর আটকাবে কী, সে তো অবাক চোখে তাকিয়েই থাকে কেবল। আর পৃথার অমন করে খাওয়া দেখে অর্ণব আর তাকে আটকাতেও পারে না। পুরো প্লেট শেষ করার পর বৃথা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,

‘কী, আটকাতে পারলেন না তো।’

‘আপনার মত এমন ফুচকাখাদক কে ফুচকা খাওয়া থেকে আটকানো আমার কর্ম না।’

পৃথা হেসে বলে,

‘গুড, এখন থেকে যেন এই কথাটা মনে থাকে।’

তারপর তারা উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

________

পৃথা শশুর বাড়িতে যাওয়ার পর খুব একটা তার বাবার সাথে যোগাযোগ রাখে না। আজ হঠাৎ তার বাবার কথা মনে পড়ল। অর্ণব তখন গভীর ঘুমে। পৃথার চোখে ঘুম নেই। সে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল, রাত দুটো বাজে। সে উঠে বসল। বাবার জন্য কেন যেন আজ মনটা তার ভীষণ অস্থির লাগছে। সে ফোন না দিলেও তার বাবা মাঝে মধ্যেই তাকে ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। কিন্তু, গত এক সপ্তাহ যাবত তিনিও কোনো কল দিচ্ছেন না। সে অস্থির মনে তার ফোনটা হাতে নেয়, ভাবে বাবাকে একবার কল দিবে। কিন্তু, আবার কী কারণে যেন কল না দিয়ে ফোনটা পাশে রেখে দেয়। তারপর সে অর্ণবকে ডাকে,

‘অর্ণব অর্ণব।’

পৃথার সুর অর্ণবের কর্ণে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই সে হকচকিয়ে উঠে বসে। বিচলিত সুরে বলে,

‘কী হয়েছে, পৃথা? শরীর খারাপ লাগছে? কোনো অসুবিধা হচ্ছে, বলো আমায়।’

পৃথা নরম সুরে বলে,

‘এত অস্থির হবেন না, আমি ঠিক আছি।’

অর্ণব চোখ কচলিয়ে বলে,

‘তুমি এখনো ঘুমাওনি।’

পৃথা বলে,

‘না, ঘুম আসছে না।’

অর্ণব পৃথার গালে হাত দিয়ে আলতো ছুঁয়ে বলে,

‘কেন, শরীর খারাপ লাগছে?’

পৃথা মৃদু সুরে বলে,

‘না, বাবার কথা মনে পড়ছে।’

‘বাবাকে কল দাও।’

পৃথা বলে’

‘আমার বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। আমাকে বাবার কাছে নিয়ে যাবেন, প্লিজ।’

অর্ণব মৃদু হেসে বলে,

‘ঠিক আছে, কাল সকালে আমরা তোমার বাবার কাছে যাব।’

পৃথা কাঁদো মুখে বলে’

‘এখন যায় না, প্লিজ।’

অর্ণব ঘড়ির দিকে চেয়ে বলে,

‘এখন রাত দুটো বাজে।’

পৃথা অনুরোধের সুরে বলে,

‘প্লিজ, অর্ণব; আমার খুব অস্থির অস্থির লাগছে। প্লিজ, আমায় নিয়ে চলুন।’

পৃথার এত আকুতি মিনতি দেখে অর্ণব আর কিছু বলতে পারে না। সে বলে,

‘ঠিক আছে, চলো।’

অর্ণব তার মাকে বলে পৃথাকে নিয়ে তার বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাত তখন তিনটা। রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা। অর্ণবের বাড়ি থেকে পৃথার বাড়ীর দূরত্ব, এক ঘণ্টার মতো রাস্তা। তবে আজ পৃথার মনে হচ্ছে, সেই এক ঘন্টাই যেন আজ আর ফুরাচ্ছে না। সে বারবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে, এইতো ভোর হয়ে গেল কিন্তু, তারা এখনও কেন পৌঁছাচ্ছে না। অর্ণব তার অস্থিরতা টের পেয়ে বলল,

‘এত অস্থির হইও না, পৃথা। আমরা পৌঁছেই গিয়েছি।’

চারটা বাজার কিছু আগে তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যায়। পৃথা গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত তাদের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দেখে, দারোয়ান চাচা ঘুমাচ্ছেন। পৃথা তাকে ডেকে তুলে। এতদিন পর পৃথাকে দেখে দারোয়ান চাচা অবাক হন। দারোয়ান চাচার সাথে সৌজন্য বার্তা শেষে অর্ণব পৃথাকে নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে। দরজায় কলিং বেল দেওয়ার কিছুক্ষণ পর দরজাটা কেউ একজন এসে খুলে। দরজা খোলার পর খালাকে দেখে পৃথা প্রচন্ড খুশি হয়। অন্যদিকে খালা পৃথাকে দেখে কেঁদে ফেলেন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন,

‘খালা, আপনি আইছেন?’

চলবে….#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২ঌ।

পৃথা ভেতরে এসে বলল,

‘হ্যাঁ খালা, আমি এসেছি। কেমন আছেন আপনি?’

‘আমি ভালো আছি। আপনে ভালো আছেন, খালা?’

‘আমিও বেশ ভালো আছি।’

পৃথা তারপর জিজ্ঞেস করল,

‘বাবা কি ঘুমাচ্ছেন, খালা?’

খালা জবাবে বলল,

‘জি, সাহেব ঘুমায়। তারপর তিনি মুখ কালো করে বললেন,

‘আসলে সাহেবের শরীরটা কিছুদিন যাবত খুব খারাপ যাইতেছে।’

পৃথা এই কথাটা শুনে যেন খুব বিচলিত হয়ে পড়ে, জিজ্ঞেস করে,

‘কেন, কী হয়েছে বাবার?’

‘ডাক্তার দেইখা কইছে, প্রেসার নাকি হাই হয়ে আছে। ওষুধ দিছে আর কইছে খুব বেশি টেনশন না করতে।’

পৃথা বলল,

‘আমাকে একবার ফোন দিয়ে বলেননি কেন? তাহলে তো আমি আরো আগেই চলে আসতাম।’

‘কেমনে কমু, খালা? সাহেব তো বারণ করছে আপনারা জানাইতে, আপনি দুশ্চিন্তা করবেন তাই।’

পৃথাকে অস্থির হতে দেখে অর্ণব তার কাঁধে হাত রেখে বলে,

‘শান্ত হও, পৃথা। অস্থির হয়ো না, আমরা বাবার সাথে কথা বলব।’

খালা তখন বললেন,

‘আমি কি সাহেবরে গিয়া ডাকমু?’

পৃথা বলল,

‘না, থাক। বাবা এখন ঘুমাক। আমরা না হয় সকাল হলেই কথা বলব।’

তারপর সে অর্ণবের দিকে চেয়ে বলল,

‘এখন আমার রুমেই চলুন।’

কিছুক্ষণের জন্য চোখ লাগলেও বেশিক্ষণ পৃথা ঘুমাতে পারে না। ছয়টার দিকে তার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে বাইরে তাকিয়ে দেখে, চারদিকে তখন ফকফকা ফরসা। পাখির অনেক কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে। পৃথা উঠে বসে। অর্ণবের দিকে চেয়ে দেখে, সে ঘুমাচ্ছে। পৃথা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর এসে নামাজ পড়ে।
নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসেই সে তার রুমের আশেপাশে চোখ বুলায়। কতদিন পর সে আবার তার পরিচিত জায়গায় এসেছে। তার নিজের বাড়ি, নিজের রুমে এসেছে। এইতো সেদিনের কথা, তার বাবা যেদিন এই বিল্ডিংটাতে তাকে প্রথম নিয়ে আসেন, সেদিন সে এই রুমটা দেখে কী খুশিটাই না হয়েছিল! তার রুমের সাথে এত বড়ো বারান্দা দেখে আনন্দ যেন কমছিলই না তার। নিজের হাতে পুরো রুম সাজিয়ে ছিল সে। খুব নিখুঁত ভাবে, যত্ন করে। আজও তার গুছিয়ে রাখা জিনিসগুলো আগের মতোই আছে, কোনো জিনিস নড়চড় হয়নি। সে যেভাবে রেখেছিল এখনো সেভাবেই রয়ে গেছে। আর এই পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে পড়তেই চোখের কোণে জল জমে তার।
সে জায়নামাজ ভাজ করে উঠে দাঁড়ায়। তারপর বারান্দায় যায়। নতুন সকালের প্রথম সূর্যের কিরণ তার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। সে চোখ বুজে বেশ উপভোগ করছে সেটা। কিছুক্ষণ পরই পেছনে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মেলে তাকায়। অর্ণব ততক্ষণে পৃথাকে পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। পৃথা তখন বলল,

‘উঠে পড়লেন কেন? কালকে রাতে তো ঠিক মতো ঘুমাতেও পারেননি।’

‘তুমি পাশে না থাকলে কি আর ঘুম আসে?’

‘আচ্ছা, তাই? এখন কি আপনাকে বাচ্চাদের মতো পাশে শুয়ে গান গেয়ে ঘুম পাড়াতে হবে?’

‘হু, তবে গান না গাইতে চাইলে সমস্যা নেই। একটু আদর দিলেই আমি ঘুমিয়ে পড়ব।’

এই বলে সে পৃথার ঘাড়ে আলতো করে চুমু খায়। পৃথা চকিত হয়ে বলে,

‘ইশ, অর্ণব। দিন দিন আপনি আরো বেশি অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।’

‘তোমাকে এত সভ্য হতে কে বলেছে? তুমিও আমার মতো অসভ্য হয়ে যাও। তাহলেই তো হয়।’

পৃথা অর্ণবের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,

‘না, একদমই না। আমি এখন যেমন সভ্য আছি, ভবিষ্যতেও এমন সভ্যই থাকব, বুঝেছেন?’

অর্ণব পৃথার মুখের কাছে মুখ এনে বলে,

‘হ্যাঁ, বুঝেছি।’

তারপর সে আরেকটু পৃথার দিকে এগুতেই পৃথা পিছিয়ে যায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘কী সমস্যা?’

অর্ণব মুচকি হেসে বলে,

‘না মানে, ঐ তোমার ঠোঁটটা একটু শুকনো শুকনো লাগছে।’

পৃথা তার ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে,

‘লাগুক। যত খুশি শুকনো লাগুক। আপনি ভুলেও আমার ঠোঁটের দিকে নজর দিবেন না।’

অর্ণব সরু চোখে চেয়ে বলে,

‘আমি নজর না দিলে কে নজর দিবে শুনি?’

‘কেউ না। আমার ঠোঁট দেখার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আপনি গিয়ে এখন শুয়ে পড়ুন।’

অর্ণব এসে তখন হুট করে পৃথাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,

‘বললাম না, তোমাকে ছাড়া ঘুম আসবে না। চলো।’

________

দশটার দিকে পৃথার ঘুম ভাঙে। সে উঠে দেখে, অর্ণব তার পাশে নেই। সে ওয়াশরুম আর বারান্দায় দেখে। কিন্তু, অর্ণব কোথাও নেই। পৃথা তখন ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল। ড্রয়িং রুমের কাছে গিয়ে দেখল, অর্ণব আর তার বাবা বসে গল্প করছেন আর চা খাচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে পৃথা বেশ অবাক হয়। সে ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে। তার বাবা তাকে দেখেই তৃপ্ত মুখে হাসসেল। বললেন,

‘কেমন আছো, মা?’

পৃথা নরম গলায় বলল,

‘ভালো আছি, বাবা। তুমি কেমন আছো?’

‘আমিও ভালো আছি, মা।’

‘মিথ্যে কেন বলছো, বাবা? তুমি ভালো নেই। খালা আমাকে বলেছেন। তোমার নাকি প্রেশার হাই? তুমি কি কিছু নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করছো, বাবা?’

পৃথার বাবা চায়ের কাপটা রেখে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,

‘আমার সব চিন্তা তো কেবল তোমাকে নিয়েই, মা। তুমি আমার উপর অভিমান করে আছো, তোমার এই অভিমান ভাঙাতে না পারলে তো আমার মরেও শান্তি হবে না।’

‘বাবা, এভাবে বলো না প্লিজ। তোমার ভালোবাসার কাছে আমার অভিমান কিছুই না। প্লিজ, এসব কথা আর কখনোই বলবে না। তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি, নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।’

পৃথার বাবা খুশি হলেন। বললেন,

‘তাহলে আর আমার উপর রাগ করে থাকবে না তো?’

‘না বাবা, আর রাগ করে থাকব না।’

পৃথার বাবার এবার অর্ণবের দিকে চাইলেন। বললেন,

‘তুমি কি আমাকে ক্ষমা করবে, বাবা?’

অর্ণব মৃদু হেসে বলল,

‘আপনি ক্ষমা না চাইলেও আমি আপনাকে আরো আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আপনি আর এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনার মেয়েও অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই নিজের খেয়াল রাখবেন, বাবা।’

________

পৃথার বাবা উনার মেয়ের জামাইকে খাওয়ানোর জন্য অনেক বাজার করিয়ে এনেছেন। দুপুরে আজ জম্পেশ রান্না হবে। এত এত বাজার দেখে অর্ণব পৃথাকে বলে,

‘বাবা কী শুরু করেছেন, পৃথা? উনাকে বলো, এতকিছু করার দরকার নেই। এত রান্না বান্না করতে হবে না, এত খাবার কে খাবে, বলো?’

পৃথা হেসে বলে,

‘কেন, আপনি খাবেন? আপনার বাড়িতে যাওয়ার পর যখন আমার জন্যও এত এত রান্না করা হয়েছিল তখন কি আপনি মা’কে বারণ করেছিলেন? করেননি। তাহলে এখন আমি কেন বাবাকে বারণ করব? আজকে একগাদা রান্না হবে, আর সেই একগাদা রান্নাই আপনাকে খেতে হবে।’

অর্ণব অসহায় চোখে চেয়ে থেকে বলে,

‘এভাবেও কেউ শোধ নেয়?’

‘হ্যাঁ, নেয়। অর্ণব খানের বউ পৃথা খান নেয়, বুঝেছেন?’

অর্ণব হেসে বলে,

‘জি, বুঝেছি।’

চলবে….

(আগামীকাল গল্পের অন্তিম পর্ব আসবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here