প্রেমাধিকার পর্ব ১২

#প্রেমাধিকার💝[ The_Egoistic_Love ]
#Written By: Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr[ Mêhèr ]
Part: 12…….

আরিয়া: আমি আর যাই হোক ইশাদকে কিছু হতে দিব না। ইশাদ প্লিজ উঠো।

কিন্তু ইশাদ কোনো সাড়া দিল না।

আরিয়া: আনজুম ভাইয়া আপনি ওকে ধরেন আমি আসছি।

ইশাদের মাথাটা আনজুমের কোলে দিয়ে আরিয়া চলে যায়। তারপর নিজের গাড়ির চাবি নিয়ে এসে। আনজুকের সহযোগিতায় ইশাদকে গাড়ি থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ওখানের সবাই রীতিমতো অবাক হয়ে আছে। বিয়ের বউ অন্য একটা ছেলের জন্য এমন করবে তা হয়ত সবার ধারনার বাইরে। আরিয়ার বাবা মাও কিছু বলতে পারে না। কারন ওনারা খুব ভালো করেই ওনার মেয়ের ব্যাপারে জানে।

কিন্তু রাজের হিসেবটা আলাদা৷ এতক্ষন যা হয়েছে খুব শান্তভাবেই দেখেছে ও। আরিয়ার ইশাদের জন্য পাগলামী। আর আরিয়ার জন্য ইশাদের ভালোবাসা কোনোটাই রাজের চোখ এড়ালো না। সবাই যেখানে পরিস্তিতির কথা ভাবছে সেখানে রাজ অন্য কিছু নিয়ে ভাবছে…….

সাদ: এখন কি করব স্যার….

রাজ: আপাতত হাসপাতালে চলো…… [ বলেই বেড়িয়ে যায় রাজ ]

,
,
,
,
,

,
,
,
,
,

,
,এদিকে আরিয়া ইশাদকে হসপিটালে নিয়ে আসে পাগলের মত করতে থাকে।

আনজুম: বনু শান্ত হো। ইশাদের কিছু হবে না।

আরিয়া: ওর কিছু হলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না দরকার হলে নিজেকে শেষ করে দিব।

আনজুম: এখন এসব বলো না আগে ওকে সুস্থ করো।।।

তখনি ডক্টর এসে ইশাদকে দেখে।

ডক্টর ওকে দেখেই….

ডক্টর: পেসেন্টের অবস্থা খুব খারাপ। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। ইমিডিয়েটলি ৩ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করতে হবে।

আরিয়া: আপনি যেকরেই হোক ওকে সুস্থ করে দিন৷

ডক্টর: আপনি ৩ ঘন্টা মধ্যে ৭ লাক্ষ টাকা জমা করে দিন। আমাদের বাইরে থেকে ডক্টর আনতে হবে৷

আনজুম: ৭ লাক্ষ….. এতো টাকা তুমি এখন পাবে কোথায় বনু….. তোমার বাবা….

আরিয়া: কারো টাকার দরকার নেই। আমি যে করেই হোক সেই টাকা মেনেজ করব। আমি ৩ ঘন্টার মধ্যে টাকা নিয়ে আসছি তুমি ইশাদের সাথে থাক। যে করেই হোক আমি ওর কিছুই হতে দিব না।

তারপর আরিয়া বেড়িয়ে যায়। আর ওদিকে ইশাদের অবস্তা খুব খারাপ ওকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে । ডক্টর ইশাদকে দেখছে। আনজুম বাইরে দাঁড়িয়ে কাদছে৷

প্রায় ২ ঘন্টা হয়ে গেছে কারো কোনো খবর নেই। যেহেতু আরিয়া তাড়াহুড়োয় বেড়িয়েছে তাই তাই রাজের একটু সময় লেগেছে ওকে খুজতে ও হাসপাতালে যায়। কিন্তু আরিয়াকে পায় না।

রাজ: আরিয়া কোথায়??? আর ইশাদের অবস্থা কেমন???

আনজুম রাজের কথা শুনে বেশ ভয় পায়। রাজ ইশাদের ক্ষতি করবে ভেবে রাজকে কিছু বলে না শুধু গোঙরানী দিয়ে কাদে।

রাজ: আমি তোমাকে কিছু বলছি…. কোথায় ইশাদ…. [ খুব জোরে ধমকে চিল্লিয়ে ]

কিন্তু আনজুম কিছু বলে না। তখনি সাদ আসে।

সাদ: স্যার… ইশাদ ৩০২ নাম্বার কেবিনে আসে। অবস্থা খুব খারাপ।

রাজ: What….

সাদ: ইমিডিয়েটলি অপারেশন করতে হবে।

রাজ: তাহলে এখনো বসে আছে কেন???

সাদ: টাকার জন্য….

রাজ: মানে। যত টাকা লাগুক ওর অপারেশনের ব্যবস্থা করো। [ ইশাদকে সুস্থ হতেই হবে। নাহলে আমি আরিয়ার কাছে সারাজীবনের জন্য অপরাধী হয়ে যাব। আর যাই হোক আমি ইশাদের এমন অবস্থা চাইনি। ]

সাদ: ওকে স্যার…….

আরিয়া: তার আর কোনো দরকার হবে না মি. রাজ…..

আনজুম: বনু তুই এসেছিস। [ মোটা শরীরের ভারে হাটতে পারে না তবুও দৌড়ে আরিয়ার কাছে যায়। ]

আরিয়া: তুমি চিন্তা করোনা আনজুম ভাইয়া। তোমার বনু আছে না কিচ্ছু হতে দিবে না সে ইশাদের…. [ কাদতে কাদতে ] যাও এই টাকা গুলো কাউন্টারে জমা দিয়ে দেও। [ কাগজে মোড়ানো টাকার বান্ডেল হাতে দিয়ে ]

আনজুম: আচ্ছা……

রাজ: আরিয়া তুমি……

আরিয়া: আমার ইশাদের চিকিৎসার জন্য আপনাকে ভাবতে হবে না মি. রাজ…। আরিয়া যতদিন বেচে আছে ততদিন ও নিজেই পারবে।

রাজ: তুমি…..

এবার আরিয়া খুব জোরেই রাজকে একটা থাপ্পড় মারে। কেপে উঠে রাজ। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে…….

আরিয়া: এটাই তো চেয়েছিলেন না আপনি…. [ কাদতে কাদতে। ] এটাই আপনার প্লান ছিলো আমাকে হাসিল করার জন্য। আপনি ইশাদকে কিডন্যাপ করিয়েছেন তারপর ওর এই অবস্থা করেছেন যাতে আমাকে পেতে আপনার আর কোনো বাধা না থাকে….. [ কাদতে কাদতে ]

রাজ:……..

আরিয়া: কি দোষ করেছিল ও বলতে পারেন। কোন পাপের সাজা দিচ্ছেন আমাকে। আমাদের দুজনের সাজানো জীবনটাকে এক নিমিষেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। যেখানে আজ আমার সাথে ওর থাকার কথা সেখানে আজ ও মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। কেন করেছেন আপনি এসব। একটুও কি বিবেগে বাধল না। [ রাজের শার্টের কলার ধরে ]

রাজ:…….

আরিয়া: যেই ছেলেটা কোনোদিন আমার চোখে পানি আসতে দেয়নি আজ আপনার কারনে তার জিবনের জন্য কাদছি আমি। কেন করলেন এমন??? কেন শেষ করে দিলেন আমাদের দুজনকে…. যাকে ছেড়ে কোনোদিন থাকিনি আজ সারাজিবনের জন্য তার থেকে আলাদা করে দিলেন আমাকে। সত্যি করে বলছি আজ যদি ইশাদের কিছু হয়ে যায় তবে মনে রাখবেন আমি নিজেকে শেষ করে দিব…. [ রাজের শার্টের বাটন ছিড়ে ওকে ধরে ওর পায়ের কাছে বসে পরে ]

রাজ: [ I’m sorry আরিয়া। আমি এমনটা চাইনি। আমি শুধু তোমাকে চেয়েছি কিন্তু কি হতে কি হয়ে গেলো নিজেও বুঝতে পারছি না। ]

আনজুম: বনু ডক্টর অপারেশন শুরু করে দিয়েছে….

আরিয়া: ইশাদ… [ নিজের দু-চোখ মুছে অপারেশন থিয়েটারের কাছে যায়। আর কাদতে থাকে। ]

,
,
,

,
,
,
,
,
,
,রাজ: সাদদদ….. [ খুব জোরে চিল্লিয়ে ]

সাদ: জি স্যার…..

রাজ: যাদের ইশাদকে কিডন্যাপ করার কথা বলা হয়েছে তাদের ডাক…. আমি এই মুহুর্তে ওদের সাথে দেখা করতে চাই [ প্রচন্ড রেগে ]

সাদ: ওকে স্যার……

,
,
,

,
,

,
,
,
,
,
বেশ কিছুক্ষন পর রাজ ওই লোক গুলোর কাছে যায়।

রাজ: তোমাদের শুধু ইশাদকে বেধে রাখার কথা বলা হয়েছিল তাহলে ওর এমন অবস্থা হলো কেন??? [ চিল্লিয়ে ]

লোকগুলো নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ী করল তারপর ওদের একজন বলল

লোক: স্যার আসলে ছেলেটা অনেক বেশি পাগলামি করেছে। অনেক কষ্ট করেও ওকে আটকাতে পারিনি তাই বাধ্য হয়েই….. [ মাথা নিচু করে ]

রাজ: তাই বলে মারবে…. তাও এভাবে….

লোক: স্যার লোকটাকে এভাবে মেরেছি আরেকটু হলেই মরেই যেত। কিন্তু তবুও আটকে রাখতে পারিনি। ঠিক বিয়ে অব্দি চলে গেছে। তাইলে ভাবুন যদি সুস্থ থাকত তবে আমরা আর যাই হোক কিছুতেই আটকে রাখতে পারতাম না। এতটা শক্তি কিভাবে ছিল তাই বুঝতে পারলাম না। সব গুলো লোক মিলেও ওকে শায়েস্তা করতে পারিনি। পরে পিছন থেকে মেরে….. ওর অবস্থা দেখে ভেবেছিলাম হাটার মত অবস্থায় নেই। কিন্তু কিভাবে যে এতটা রাস্তা চলে গেল বুঝতে পারলাম না।

রাজ: সাদ এদের এখনি বিদায় করো। 😡😡

সাদ: ওকে…..

রাজ: শীট…. এখন আমি কোন মুখে আরিয়ার সামনে দাড়াব। বাধ্য করে বিয়ে করাটা আরিয়া মেনে নিলেও ইশাদের এই অবস্থা মেনে নিবে না।

রাজ আর কিছু না ভেবে হাসপাতালে যায়…. গিয়ে দেখে আরিয়া এখনো অপারেশন থিয়েটারের পাশে মুখ গুজে কাদছে।

রাজ কিছু বলতে গিয়েও পারছে না সেই মুখ ওর নেই…..

,
,
,

,
,
,
,

,
,এভাবে অনেকক্ষন কেটে যায়। তারপর ডক্টর বের হয়…..

আরিয়া: কি হয়েছে ডক্টর ইশাদ কেমন আছে???

ডক্টর আরিয়াকে দেখে নেয়। পুরো কনের সাজ। আর ইশাদের গায়ে পাঞ্জাবি দেখে বুঝতে পারে আরিয়ার সাথে ওর সম্পর্ক কি হতে পারে……

ডক্টর: ওনি এখন বিপদ মুক্ত কিন্তু……

আরিয়া: কিন্তু কি???

ডক্টর: দেখুন যেহেতু ওনার মাথায় আঘাত লেগেছে তাই…..

আরিয়া: কি????

ডক্টর: ওনি কোমায় চলে গেছেন। ওনার কবে জ্ঞান ফিরবে বা আদো ফিরবে কিনা সেটা বলা যাচ্ছে না।

আরিয়া আর কিছু বলতে পারল না। ওখানেই মাথা ঘুড়ে পরে গেল। আর তখনি রাজ এসে ওকে ধরে নেয়। রাজ আরিয়ার জন্য একটা কেবিন বুক করে সেখানে ওকে শুইয়ে দেয়। ডক্টর চেক আপ করে জানায় অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারনে ওর এই অবস্থা হয়েছে।।।

আর কিছুক্ষন আরিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ইশাদের কথা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

তখনি সাদ আসে…..

সাদ: স্যার….

রাজ: হুমম…

সাদ: জানেন স্যার আরিয়া ইশাদের চিকিৎসার টাকা কোথা থেকে জোগাড় করেছে।

রাজ: মানে….

সাদ: স্যার আরিয়া মেম নিজের ফ্যাশন হাউসের নিজের নামের অংশটা বিক্রি করে দিয়েছে। যেহেতু অল্প সময়ে তাই জাস্ট ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছে।

রাজ: What…. [ বেশ অবাক হয়। কারন স্বপ্নময়ী ফ্যাশন হাউজ আরিয়ার সাধনা ছিল। যা রাজ খুব ভালো করেই জানে ]

সাদ: জি স্যার… আর তার অর্ধেকটা কিছুদিন আগেই ইশাদের নামে রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। আর সেটা আরিয়াই করেছে….

কথাটা শুনে রাজ আরিয়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকায়। এই রাগী ইগোষ্টিক চেহারার পিছনে যে আরিয়া আছে তাকে হয়ত রাজ চিনতে পারেনি। আর যাকে চিনেছে তাকে হয়ত পাওয়া অসম্ভব……

সাদ: স্যার। আমার মনে হয়…… [ মাথা নিচু করে ]

রাজ: আমার কোনো ভুল হয়েছে কিনা তাইত…..

সাদ: না মানে স্যার…..

রাজ: এই প্রথম আমার হিসেবে গড়মিল হয়ে গেল। ভুল হয়ে গেলাম আমি।

সাদ:……

রাজ: সত্যি কি আমি কোনো ভুল করে ফেললাম……
,
,
,
,
,

,
,
,
,
,
,
,
ঠিক তখনি আরিয়া ইশাদের নাম ধরে চিৎকার করে উঠে…..

আরিয়া: আমি ইশাদের কাছে যাব। বলে বেড থেকে বেড়িয়ে যেতে নেয়। [ আরিয়া অনেকটা উইক তাই রাজ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পারে না। আরিয়া চলে যায়। ইশাদকে আলাদা কেবিনে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাউকে ডুকতে দেওয়া নিষেধ তাই আরিয়া ওখানে দরজার কাছে বসে আছে.।।।

রাজ: হয়ত আমার #প্রেমাধিকার💝 টাই ভুল। কিন্তু এখন কি সত্যি কিছু করার আছে। ভুল কি সঠিক জানিনা আর না জানতে চাই। শুধু জানি তোমাকে চাই। হয়ত ইশাদের প্রতি তোমার ভালোবাসা আমাকে বাধ্য করছে তোমাকে আরো ভালোবাসতে। কিন্তু তুমি এতকিছুর পর আদো কি আমার হবে আরিয়া। তোমরা যদি একে অপরকে চাও তবে আমিও যে তোমাকে চাই….. [ চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে রাজের….. ]

,
,
,

,
,
,
,ওদের ৩ জনের কাহিনী দেখে সাদ নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না। না কাউকে দোষ দিতে পারছে…..

সাদ: স্যার না আরিয়া মেমকে আপনার চাওয়াটা ভুল। কারন মানুষ যেকোনো কাউকে ভালোবাসতে পারে৷ সেটা কারো জন্য বাধ্য নয়। তবে আরিয়া আর ইশাদের ও এতে দোষ নেই। কারন ওদের ভালোবাসা তো তৈরি করা নয়। জানিনা আপনাদের জিবনে কি আছে……

😑😑😑😑😑😑😑😑😑😑

সাদ: যার সাথে বিয়ের স্বপ্ন বুনেছিলেন বউ সেজে বসে আছেন তার অর্ধমৃত কেবিনের পাশে কিন্তু অন্যকারো বউ হয়ে…… হায়রে অদ্ভুত নিয়তি…… একজনের সাথে সম্পর্কের জালে আবদ্ধ হয়ে আরেকজনের মায়ায় বেধে গেছে….. যেখানে #প্রেমাধিকার💝 ৩ জনের সমান কিন্তু দেওয়ার কথায় একজনকে দিতে গেলে আরেকজনকে ঠকানো…… হয়ত আমিও ঠিক করতে পারতাম না কোনটা ঠিক………

,
,
,

,
,
,
,
,
,
[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here