প্রেমাধিকার পর্ব ১৩

#প্রেমাধিকার💝[ The_Egoistic_Love ]
#Written By: Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr[ Mêhèr ]
Part: 13…….

সকালে……

আরিয়া এভাবেই ইশাদের কেবিনের পাশে বসে থাকে। কখন চোখ লেগেছিল জানা নেই। রাজ দুরে দাঁড়িয়ে আরিয়াকে দেখতে থাকে। কাছে গিয়ে কিছু বলার অধিকারবোধ ওর আসছে না।। তখন আনজুম আরিয়ার কাছে গিয়ে ওর ঘাড়ে হাত দেয়। আরিয়ার ঘুম ভেঙে যায়।

আরিয়া: আনজুম ভাইয়া….. ইশাদ…. [ আতংকিত হয়ে ] ইশাদের কিছু হয়েছে।

আনজুম: শান্ত হও বনু ইশাদের কিছু হয়নি।

আরিয়া: তাহলে…..

আনজুম: কাল রাত থেকে অনেক পরিশ্রম করেছ। এখন বাসায় গিয়ে বিশ্রাম কর। আমি এখানে ওর সাথে আছি।

আরিয়া: আমি ঠিক আছি। তুমি বরং যান।

আনজুম: নিজেকে দেখেছ একদিনে কেমন হয়ে গেছ….. বাসায় গিয়ে রেস্ট নেও।

আরিয়া: ইশাদকে এভাবে ফেলে রেখে….. নাহহহ… ও সুস্থ হলে।

এবার আনজুম কেদে দেয়।

আনজুম: বনু ইশাদ এত তাড়াতাড়ি ঠিক হবে না। তাই এখানে থেকে লাভ নেই।

আরিয়া: আঞ্জুম ভাইয়া… [ কান্নার কন্ঠে ]

আঞ্জুম: হুমম বনু। কিন্তু তোমাকে শক্ত হতে হবে। ইশাদের পুরো দায়িত্ব এখন তোমার। তুমি যদি নিজেকে ঠিক না রেখে অসুস্থ হয়ে পরো তাহলে ইশাদের কি হবে। ওকে কে দেখবে???

আরিয়া: কিন্তু…….

মা: আরিয়া এভাবে থাকলে তুই অসুস্থ হয়ে যাবি। আর তাতে কি ইশাদ সুস্থ হবে তাই বলছি চল তুই….

আঞ্জুম: হ্যা বনু…..

আরিয়া আর কিছু বলতে পারল না। সত্যি তো ওকে এখন অসুস্থ হলে হবে না। কারন ও ছাড়া ইশাদের কেউ নেই। ওর কিছু হলে ইশাদের কি হবে? ওকে কে দেখবে? তাই বাধ্য হয়েই ওদের সাথে যায়।
,
,
,

,

,
,
,
,
,
,
বাসায় গিয়ে আরিয়া ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর বিছানায় নিজের শরীর এলিয়ে দেয়। সারারাতের ক্লান্তিতে চেয়েও আরিয়া নিজের চোখ খোলা রাখতে পারে না। তলিয়ে যায় ঘুমের মাঝে ……. বিকেলের দিকে আরিয়ার ঘুম ভাঙে। ও হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নেয়। কিন্তু নিচে নেমে ওর মেজাজ গরম হয়ে যায় কারন রাজ ওর বাবার সাথে কথা বলছে….

আরিয়া: ওনি এখানে কি করছে বাবা😡😡

বাবা: এটা কি ধরনের কথা আরিয়া। ওনি তোমার হাসবেন্ড…..

আরিয়া: কিসের হাসবেন্ড?? আমি না ওনাকে নিজের হাসবেন্ড হিসেবে মানি আর না এই বিয়েটা। 😡😡

বাবা: তুমি ভুলে যাচ্ছ ওনি নিজে থেকে তোমাকে বিয়েটা করেনি আমি অনুরোধ করেছিলাম বলেই…..

আরিয়া: আমি এসব শুনতে চাই না। 😡😡

বাবা: আরিয়া তুমি…. 😡😡

রাজ: প্লিজ আংকেল ছেড়ে দিন। আমি আরিয়ার উপর কোনোরুপ ফোর্স করতে চাই না।

বাবা: কিন্তু…

রাজ: কোনো কিন্তু না। যেতে দিন।

আরিয়া ওদের কথায় কান না দিয়েই হাসপাতালে চলে যায়। হাসপাতালে গিয়ে দেখে আঞ্জুম ওর কাছে আছে।

আরিয়া: ভাইয়া তুমি যাও আমি এসেছি।

আঞ্জুম: ঠিক আছে বনু তুমি থাক আমি আসছি।

আরিয়া কেবিনে যায় ইশাদের পাশে গিয়ে বসে।

আরিয়া: খুব নিঃচিন্তে শুয়ে আছ তাই না। যখন তোমাকে আমার দরকার তখন আমাকে ছেড়ে একা একা পরে আছ। এই তোমার ভালোবাসা এই তোমার ফ্রেন্ডশিপ। [ ইশাদের হাত ধরে ঢুকরে কেদে উঠে আরিয়া। ]

,
,
,
,

,
,
,
,
,

,
,
এভাবেই কেটে যায় প্রায় ৪ মাস। ইশাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আরিয়া নিজের সব কাজ শেষ করে বাকি সময় ইশাদকে দেয়। যেহেতু নিজের নামের অংশটা বিক্রি করে দিয়েছে। সেই টাকা দিয়েই ইশাদের চিকিৎসা চলছে।যদিও ইশাদের নামের অংশটা ওর তবুও ও ইশাদের নামেই সেখান থেকে বিজনেস আগাচ্ছে। কারন অনেক ঠকেছে ছেলেটা আর না।

ওদিকে রাজ এতদিনে একবারের জন্য আরিয়ার সাথে কথা বলতে পারেনি। আরিয়া একবারের জন্য এলাও করেনি। যতবার আরিয়ার কাছে গেছে ততবার আরিয়া ওকে খুব জঘন্যভাবে অপমান করেছে। কিন্তু তবুও ও আরিয়ার কাছে গেছে না অধিকার আদায়ের জন্য নয় ক্ষমা চাইতে। কিন্তু একবারের জন্য সেই সুযোগটা আরিয়া ওকে দেয়নি………

,
,
,
,
,

,
,
রাজ নিজের অফিসে পকেটে দুহাত গুজে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। তখনি সাদ এসে রাজের পাশে দাঁড়ায়। কারন ওই রাজের লাইফের একমাত্র ছায়া সঙ্গী যে চাইলেও রাজকে ছাড়বে না……

সাদ: কি ভাবছেন স্যার….

রাজ:……..

সাদ: অনেক তো হলো আর কত???

রাজ:…….

সাদ: এবার স্যার আপনাকে একটা ডিসিশন নিতে হবে। কি করতে চান আপনি??? কারন এই ৪ মাসে এতটুকু বুঝতে পেরেছি যাই হোক আরিয়া মেম আপনাকে মেনে নিবে না। আর মেনে কি নেবে সে তো আপনাকে সহ্য করতেই পারে না।

রাজ: জানিনা। কিছু ভাবতে পারছি না।

সাদ: স্যার এভাবে থাকলে তো….

রাজ: ভুল যখন করেছি ক্ষমা তো চাইতেই হবে। অধিকার পাওয়ার ইচ্ছেটা আর এখন নেই ক্ষমাটাই পেতে চাই। তাতে যদি……. [ গভীর নিশ্বাস নিয়ে ]

সাদ: স্যার আপনি কি…..

রাজ: জানিনা। তবে দরকার হলে তাই….

সাদ: হয়ত এটাই ঠিক হবে। [ মুক্তি পাবেন এই যন্ত্রনা থেকে ]

রাজ: আমি আজ আরিয়ার সাথে দেখা করতে যাব।

সাদ: এসব কি বলছেন??? আপনি খুব ভালো করেই জানেন আরিয়া মেমের কাছে যাওয়া মানে…..

রাজ: অন্যায় যখন করেছি শাস্তি তো পেতেই হবে। তবে এর শাস্তি যদি এটা হয় তবে তাই।

সাদ: কিন্তু স্যার…..

রাজ আর কোনো কথা শুনল না। আরিয়ার ফ্যাশন হাউসের দিকে যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পরল। আর সাদ ওর পিছে পিছে চলে এলো। ফ্যাশন হাউসে গিয়ে রাজ একটু অবাক হলো কারন পুরো হাউসে মানুশ ভরা। যা ভাবতে পারেনি। এই সময়ে এমন কিছু আশা করেনি। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে কারনটা হলো আরিয়া।

আরিয়া ওখানে ডিজাইন নিয়ে ডিসকাস করছিল। রাজকে দেখে একটু থমকে যায়। তারপর রাজকে দেখে বাকা ঠোঁটে এসে ওর সামনে এগিয়ে যায়…… আরিয়ার এমন স্বভাবে রাজ একটু অপ্রস্তুত হয়। কারন এখানে কম বেশি সবাই রাজ আহমেদকে চেনে। সবাই রাজকে দেখে বেশ কোতুহলী হয়ে আছে। রাজ আহমেদকে দেখবে তা হয়ত ভাবেনি। আর তাই এখানে রাজকে কিছু বলা মানে……

সাদ কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। কি হতে চলেছে। কারন এতদিন যেটা আড়ালে হত এখন সেটা পাবলিক প্লেসে হবে। সাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই……

আরিয়া: আরে AAR Group & Company এর মালিক রাজ আহমেদ না। [ বাকা হেশে ] আপনি কেন কষ্ট করে আসতে গেলেন আমাকে বলতেন আমি নিজে চলে যেতাম। [ কিছুটা ব্যাঙ্গ করে ]

রাজ:…… [ আরিয়ার কথায় রাজের মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ]

আরিয়া: কিহল বলছেন না যে… [ কিছুটা সিরিয়াস হয়ে ]

সাদ: মেম……

আরিয়া: তোমার স্যার আজকাল নিজের কথার আরেকজনকে দিয়ে বলায় নাকি….

সাদ:…… [ সাদ চেয়েও কিছু বলতে পারল না। খুব বাজে একটা সিচুয়েশন ক্রিয়েট হবে বুঝতেই পারল ]

আরিয়া: কিহল মি. রাজ কিছু বলছেন না যে….

রাজ: আরিয়া আমি…….. [ মাথা নিচু করে কি বলবে বুঝতে পারছে না। কোনোরুপ সিনক্রিয়েট রাজ চায় না। এতে ওদের দুজনের অসন্মান হবে। ]

আরিয়া: কি করছেন আপনি এখানে। 😡😡

রাজ: আরিয়া প্লিজ……

রাজকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না আরিয়া সবার সামনে খুব জোরেই একটা চড় বসিয়ে দিল রাজের গালে। রাজ ব্যালেন্স নিতে না পেরে কিছুটা পিছিয়ে যায়। সাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাজ ওকে হাত দিয়ে ইশারায় না করে দেয়। ]

সবার ফোকাস এখন রাজের দিকে…… সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ী করছে। রাজ মাথা নিচু করে আছে।

আরিয়া: আপনার সাহস কি করে হয় মি. রাজ এখানে আসার। সামান্য টুকু সেইম নেই আপনার। এতটা বেহায়া কেউ কিভাবে হয়।

রাজ:…….

আরিয়া: তবে আপনার থেকে এসব ভাবাও বোকামি। [ এবার ও সবার দিকে তাকায় ] ও সরি গাইস আপনাদের ডিস্টার্ব হল। আপনারা নিজেদের কাজ করুন। এসব বেকার জিনিস দেখতে হবেনা আপনাদের।

তখনি একজন মেয়ে বলে….

মেয়ে: আপনি রাজ আহমেদের গায়ে হাত তুললেন….

আরিয়া: নাতো…. কে বলল??? [ অট্টহাসি দিয়ে ] আমি তো আমার So called Hasband কে মেরেছি…..

মেয়েটি: নিজের মানে হাসবেন্ড [ বেশ অবাক হয়ে ] যাকে দেখার জন্য সবাই লাইন ধরে সেই রাজ আপনার হাসবেন্ড। ওনি আপনার হাসবেন্ড আর আপনি ওনাকে….

আরিয়া: কিসের হাসবেন্ড। [ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ] কিছু কিছু মানুষ আছে না যাদের অনেক ফ্যান থাকে। কিন্তু আসলে তাদের কোনো যোগ্যতা থাকে না আরেকজনের হাসবেন্ড হওয়ার ওনি তাদের দলেই পরে।

মেয়েটি: মানে…..

আরিয়া: একটা জঘন্য নিকৃষ্ট প্রানী। আর যাই হোক নিম্নশ্রেণীর কোনো প্রানীর সাথে মানুষ হয়ে সংসার করা যায় না। আর যদি তা এরকম হয় তাহলে তো…..

রাজ:…….

আরিয়া: কি হল মি. রাজ কিছু বলবেন। জানেন তো কারো জীবন সাথি হওয়ার জন্য কিছু যোগ্যতা লাগে যা আপনার নেই।

রাজ:….. [ রাজের চোখের কোনো একটু পানি জমেছে ]

আরিয়া: হে গাইস নিজেদের কাজ করুন।

সবাই নিজেদের মত কানা ঘোষা করছে। আরিয়া এটাই চেয়েছে। এর চেয়ে অপমান হয়ত রাজের জন্য হতে পারে না।

আরিয়া: এখনো কি নির্লজ্জের মত দাড়িয়ে থাকবেন। নাকি চলে যাবেন। তবে না গেলেও সমস্যা নেই গেটে দারোয়ান আছে। আপনাকে কষ্ট করে যেতে হবে না সেই ঘাড় ধরে বের করে দিবে।

রাজ মাথা নিচু করে চোখের পানিটা আড়াল করতে চাইল।

আরিয়া: ও তারমানে যাবেন না তাইত…. 😡😡 গার্ড……

গার্ড: ইয়েস মেম…..

আরিয়া: আমি এখানে কোনো আবর্জনা দেখতে চাই না। যদি বেহায়া পনা না ছাড়ে তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে বাইরে বের করে দেও…..

গার্ড রাজের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে রইল।

এবার আর সাদ চুপ থাকতে পারল না।

সাদ: তার কোনো দরকার হবে না মেম। চলে যাচ্ছি… চলুন স্যার আপনি থাকতে চাইলেও আমি দেব না।

রাজ আর কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে আসে ওখান থেকে….. রাজ বাইরে এসে নিজের চোখটা মুছে নেয়। আজ কতবছর পর ওর চোখে পানি এসেছে তা হয়ত জানেনা।

,
,
,
,

,
,
,
ওদিকে আরিয়া নিজের কেবিনে ঢুকে এক গ্লাস পানি খায়। রাগে গা জলে যাচ্ছে ওর। তখনি সাদ রুমে ঢোকে…..

সাদ: আজকে এরকম কাজটা না করলেও পারতেন। মানছি স্যার অন্যায় করেছে কিন্তু আপনাকে কোনোদিন কোনভাবে অপমান তো করেনি।

আরিয়া: আমি ওই লোকটার কোনো সাফাই শুনতে চাই না।

সাদ: আমি আপনাকে তা দিচ্ছিও না। আজ আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষনে তার জিবনটাই হয়ত থাকত না। কিন্তু আপনাকে কিছুই বলল না। আর না আমাকে দিল। নাহলে আজ…..

আরিয়া: সাদ….. [ চিতকার করে ]

সাদ: চিতকার করবেন না। আপনি যেমন ইশাদকে ভালোবাসেন আমিও স্যারকে। ওনি আমার সব। ইশাদের এই অবস্থা স্যার ইচ্ছে করে করেনি। জানি স্যার দোষী। সে তা অস্বীকার করেনি। আর না আপনার সাথে কোনো জোর করেছে। সে যদি চাইত আপনার সাথে কি হতে পারত তার কোনো আইডিয়া নেই।

আরিয়া: যে যেমন তার সাথে ঠিক তেমন টাই হওয়া উচিত।

সাদ: ঠিকি বলেছেন। আর এই কথাটা মনে রেখে দেবেন। স্যার যেটা করেছে তার শাস্তি সে পাচ্ছে কিন্তু ওনাকে এভাবে অপমান করে আপনি যে অন্যায় করেছেন তার শাস্তিও আপনাকে হয়ত কোনোদিন পেতে না হয়। কারন স্যার আপনার কাছে এখন শুধু ক্ষমা চাইতে আসে। আর অন্য কিছুর জন্য নয়……..

আরিয়া: ক্ষমা…. [ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ]

সাদ: স্যারের কি অবস্তা সেটা আমি জানি। তাই কথা বাড়াব না।

আরিয়া: তুমি যদি মনে কর এসব কথায় আমি গলে যাব ভুল ভাবছ। তোমার স্যার যদি আমার সামনে এসে ছটফট করে মরেও যায় মানুষ হিসেবেও আমার আফসোস হবে না। বরং সেদিন আমি খুশি হব এটা ভেবে আমার লাইফের সবচেয়ে জঘন্য ব্যাক্তি শেষ হয়েছে…….

সাদ: সরি আপনার হয়ত সেই খুশিটা পাওয়া হবে না। কারন আমি সেটা হতে দিব না।

আরিয়া: আমি তো আসতে বলিনি সে যেন তার মুখটা না দেখায় আমাকে। যে যা করেছে তার পাপ্য পেয়েছে…. 😡😡😡

সাদ আর কোনো কথা বাড়ায় না। চলে যায়। আর শাদের কথা শুনে আরিয়ার খারাপ না বরং রাগ লাগছে। যার কিছু ভাবতে পারছে না ওওও……..
,
,
,
,

,
,
,

,
,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here