প্রেমাধিকার পর্ব ১১

#প্রেমাধিকার💝[ The_Egoistic_Love ]
#Written By: Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr[ Mêhèr ]
Part: 11…….

আনজুম: আরিয়া বনু ইশাদ চলে গেছে। আর যাওয়ার সময় একটা চিঠিতে লিখে দিয়ে গেছে ও তোমাকে বিয়ে করবে না। আমি অনেক খুজেছি ইশাদকে কিন্তু পাইনি…. [ কান্না করে হোসাতে হোসাতে ]

আরিয়া: মা—-ন—নে….. আপনি ভুল বুঝছেন ইশাদ এমনটা করতে পারে না। [ আটকে আসা গলায়। ইশাদ চলে গেছে কথাটা শুনেই আরিয়ার দুনিয়া উলট পালট হয়ে গেছে ] ইশাদ আরিয়াকে ছেড়ে কখনো যেতে পারে না।

আনজুম: আমিও বুঝতে পারছি না। কিন্তু এটাই সত্যি ইশাদকে আমি অনেক খুজেও পায়নি। ও চলে গেছে…..

বাবা: ইশাদ চলে গেছে মানে…..

আরিয়া পাগলের মত নিজের ফোনটা নিয়ে কল করতে থাকে। কিন্তু ইশাদের নাম্বার বার বার সুইচড অফ বলছে। কিন্তু ও অনবরত কল করেই যাচ্ছে….

আনজুম: কোনো লাভ নেই বনু আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ওর নাম্বার বন্ধ বলছে। ওর কোনো খবর পাইনি.।।।।

আরিয়া:……. [ কল করতে থাকে ]

আনজুম: আসলে আংকেল….

বাবা: কি বলবে তুমি। আর আরিয়া তুমি বা কথা বলছ না কেন???

আরিয়া: ইশাদ আমাকে ছেড়ে কোথায় যেতে পারে না। [ আনজুমকে ঝাকিয়ে পাগলের মত করে ]

আনজুম: শান্ত হো বনু সত্যি ইশাদ নেই। আমি ওকে অনেক খুজেছি কিন্তু কোথাও ওর চিহ্ন টুকু পাইনি। [ আরিয়াকে ঝাকিয়ে ]

মা: কিন্তু ইশাদ এরকম কেন করবে??? ও তো সবসময় আরিয়াকে বিয়ে করতে চাইত।

বাবা: বুঝতে পারছ না। এসব ছেলেদের আমি এইজন্য দেখতে পারিনা। আর তাই ইশাদের সাথে আরিয়ার বিয়ে দিতে চাইনি। কিন্তু তোমার মেয়ে……

মা: চুপ করো তুমি প্লিজ…… আগে মেয়েটাকে সামলাও….

আরিয়া তখনি ধপ করে মাটিতে বসে পরে। ওর মাথায় কিছু কাজ করছে না। সবটা ওর কাছে গুলিয়ে গেছে। কি হচ্ছে কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না আরিয়া। চোখ দিয়ে অঝোর স্রোত বইছে। এতদিন সেটা রাগের কারনে হলেও এখন সেটা রাগ নয় কষ্টে ছোয়া ফুটিয়ে তুলছে……

বাবা: এখন আমি কি করব??? আমি শুধু নিজের সন্মান না আমার মেয়ের জিবনটাকেও……

তখনি আরিয়া উঠে দাঁড়ায়…… তারপর গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে যেতে ধরে। তখনি ওর মা ওর সামনে আসে….

মা: কোথায় যাচ্ছিস তুই…. 😡😡

আরিয়া: ইশাদকে নিয়ে আসতে… আমি জানি ইশাদ ইচ্ছে করে যায়নি ও নিশ্চয়ই কোনো বিপদে পরেছে।

বাবা: ছেলেটা তোকে কি পট্টি পরিয়েছে যে তুই ওই ছেলেটা ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবতে পারছিস না।

আরিয়া: আমাকে যেকোরেই হোক ইশাদের কাছে যেতে হবে। আমি জানি ইশাদ নিজে থেকে আমাকে ছেড়ে যায়নি। ও ঠিক আসবে….. আমি ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব।।।

বাবা: কোথায় যাবি না তুই…. আজকে এখান থেকে একপাও নড়বি না।

আরিয়া: আমাকে বাধা দিও না বাবা আমাকে যেতে দেও….. [ বলে আরিয়া বেড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু তার আগেই ওর বাবা ওর হাত ধরে নেয়। ]

বাবা: কোথাও যাবে না তুমি [ রেগে গিয়ে ]

আরিয়া: আমাকে যেতে হবে [ বাবার হাত ছাড়াতে ছাড়াতে ]

তখনি আরিয়ার বাবা ওকে খুব জোরে একটা চড় মারে ।

আরিয়া: বাবা তুমি আমাকে মারলে [ অবাক হয়ে ]

বাবা: হ্যা মারলাম বাধ্য হয়ে মারলাম । অনেক যত্নে তোমাকে মানুষ করেছি। সারাজীবন তোমার চাওয়া পাওয়ার মূল্য দিয়েছি । যা চেয়েছ তাই দিয়েছি । কোনোদিন কোনো কিছুর জন্য মানা করিনি। না চাওয়া সত্বেও ওই ছেলেটার সাথে তোমার বিয়ে দিতে রাজি হয়েছি….

আরিয়া:….. [ শুধু কাদছে ]

বাবা: তোমার মন রাখতে নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আর তার জন্য পুরো সোসাইটির সামনে আমাকে হেনস্তা হতে হচ্ছে। আর কি চাই যখন সবাই জানতে পারবে কি হবে ভাবতে পারছ।

আরিয়া:……

বাবা: কোনোদিন তোমার থেকে কিছু চাইনি। আজ নিজের সন্মানটা তোমার কাছে ভিক্ষা চাইছি। দয়া করে নষ্ট করো না। আর হেনস্তা করো না আমাকে সবার সামনে। সন্তান হওয়ার কোনো কর্তব্য পুরন করতে না পারো আর অসন্মান করে না। যাতে আমাকে মর‍তে হয়…..

আরিয়া: বাবা…..

বাবা: আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা। তোমার মন আমি রেখেছি। এবার আমার সন্মান রাখার দায়িত্ব তোমার……..

আরিয়া: বাবা তুমি বিশ্বাস করো ইশাদ এমন কিছুই করতে পারে না। ও ঠিক ফিরে আসবে। ও আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবে না। [ কাদতে কাদতে ]

বাবা: চুপ একদম চুপ। আমি তোমার সুখের কথা ভেবে ওকে মেনে নিয়েছিলাম। তুমি আমার সন্তান আমার দুর্বলতা তোমার উপরে কিছু নেই। কিন্তু আমি তোমার জন্য নিজের সন্মান নষ্ট হতে দিব না।

আরিয়া: বাবা প্লিজ……

বাবা: আমি তোমার হাত জোর করে নিজের সন্মানটা ভিক্ষা করছি। সব সময় তোমার চাওয়াটা পুরন করেছি এবার আমার চাওয়াটা রাখ……

আরিয়া: বাবা নাহহহহ…..

বাবা: হয় তুমি আজ সন্তান হওয়ার কর্তব্য পুরন করবে নয়ত আমার মরার কারন যেটা তোমার ইচ্ছে…..

আরিয়া:……

বাবা: কোনটা চাও তুমি……

আরিয়া: আমি তোমার সব কথা শুনব কিন্তু তুমি শুধু একবার আমার কথা রাখ….

বাবা: অনেক রেখেছি আর না….

আরিয়ার বাবা আরিয়ার হাত ধরে বাইরে নিয়ে যায়।

আরিয়া: বাবা কই নিয়ে যাচ্ছ.….

আরিয়ার বাবা আরিয়াকে রাজের সামনে নিয়ে যায়। রাজ ওইপাশেই ছিল। হঠাৎ এরকম হওয়ার কারনে রাজ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়….

আরিয়া: এখানে ওনার কাছে কেন নিয়ে এলে….

বাবা: আপনি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তাই না। এখন যদি আপনাকে বিয়ের জন্য বলা হয় তাহলে আপনি দয়া করে না করবেন না। আমার সন্মান এখন আপনার হাতে.।।। [ রাজের হাত ধরে ]

রাজ: এ কি করছেন??? আমি আরিয়াকে বিয়ে করতে চাই। আর ওকে বিয়ে করতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার মেয়ে কি রাজি হবে.।।।

আরিয়া: কখনো না…..

বাবা: আরিয়া….. [ ধমক দিয়ে ]

আরিয়া: কিছুতেই না।

বাবা: ঠিক আছে…..

[ আরিয়ার বাবা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আরিয়া সহ সবাই দরজা ধাক্কাতে থাকে কিন্তু খোলে না।

আরিয়া: প্লিজ দরজা খোলো বাবা।

বাবা: তোমার কাছে যদি আমার দাম না থাকে তাহলে আমার বেচে থেকে লাভ নেই…. [ একটা বন্ধুক বের করে নিজের মাথায় সুট করতে নেয়। ঠিক তখনি রাজ দরজা ভেঙে ফেলে….

আরিয়া: নাহহহ….

বাবা: একদম না…. তোমাকে আমার কোনো কথাই শুনতে হবে না। [ টিগারে আঙুল দিয়ে ]

আরিয়া: নাহহহ করব.।।। আমি রাজকে বিয়ে করব….

বাবা: স— ত্যি……

আরিয়া মাথা নাড়ে…..

বাবা: তাহলে রাজের সাথে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হো.।।।

আরিয়া: হুমম তবে আমি আগে রাজের সাথে কথা বলতে চাই.।।।।

বাবা: ঠিক আছে….. তোমরা কথা বলো আমরা আসছি…..

আরিয়া কোনো কথা না বলে রাজের হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

রাজ: কি বলবে।।।

আরিয়া: কি করেছেন ইশাদকে আপনি….

রাজ: Excuse me….. তোমার প্রেমিক কই সেটা জানার কথা তোমার আমার না।

আরিয়া গিয়ে রাজের শার্টের কলার ধরে….

আরিয়া: আমি খুব ভালো করেই জানি ইশাদের খবর আপনি জানেন। ও মরে যাবে কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাবে না।

রাজ: হতে পারে। কিন্তু সেটা জানার বিষয় আমার না।

[ আরিয়ার থেকে শার্টের কলার ছাড়িয়ে নেয়৷ যার কারনে আরিয়া ছিটকে পরে যায়। কিছু একটার সাথে বেধে হাতটা ছুলে যায় ]

রাজ: তোমার বাবা আমাকে তোমাকে বিয়ে করতে অনুরোধ করেছে আর তুমি কিনা নিজের পালিয়ে যাওয়া প্রেমিকের কথা আমাকে জিজ্ঞেস করছ…..

আরিয়া: মি. রাজ.।।। [ রাজকে থাপ্পড় মারতে যায়। আর রাজ আরিয়ার হাতটা ধরে নেয়৷ ]

রাজ: একদম না আরিয়া…. এই কাজটা করার ভুল করো না। এর জন্য যে মাসুল তোমাকে দিতে হতে পারে তার কোনো ধারনা নেই তোমার…..[ হাত ধরে কাছে টেনে ]

আরিয়া: আপনি……

রাজ: বিয়ে করবে কিনা বলো। কারন আমাকে বিয়ে না করলে….

আরিয়া: বিয়ে আমি আপনাকে করব। কিন্তু শপথ করে বলছি মি. রাজ ইশাদের চলে যাওয়ার কারন যদি আপনি হন তাহলে আপনাকে তার মাসুল দিতে হবে সারাজীবন।

রাজ:…….

আরিয়া: কারন ইশাদ শুধু আমার ভালোবাসা না আমার নিশ্বাসের একটা অংশ…….

রাজ: সেই নিশ্বাসটাকেই আমি বিশিয়ে দিব। আর এখন তোমার কাছে একটাই অপশন আমাকে বিয়ে করা যদি নিজের বাবাকে বাচাতে চাও….. [ আরিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায় ]

আরিয়া: ইশাদ কই তুই….. [ হাটু গেড়ে নিচে বসে পরে কান্না করতে থাকে ]

,
,
,
,
,
,
,

,
,
,
,
,
,
,
কিছুক্ষন পর বিয়ের সমস্ত আয়োজন হয়ে যায়। রাজ আর আরিয়ার বিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আরিয়া এখনো একবুক আশা নিয়ে বার বার গেটের দিকে তাকাচ্ছে। এই বুঝি ইশাদ এলো কিন্তু না। ওর আশায় হতাশায় পরিনত হলো কিন্তু ইশাদ এলোনা। ধীরে ধীরে আরিয়া অনুভুতি শুন্য হয়ে যাচ্ছে। ও মানতেই পারছে না ওর বিয়ে অন্য কারো সাথে হচ্ছে…….

কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। আরিয়ার মুখ থেকে কবুল বেড়নোর সাথে সাথে সবটা শেষ হয়ে গেল। ওদের বিয়ের মোনাজাত শেষ হওয়া মাত্রই খুব চিতকার করে কারো গলা শোনা গেল…… সে আর অন্য কেউ নয় স্বয়ং ইশাদের……….

ইশাদ: আরিয়া…………..

ইশাদকে দেখে সবাই থমকে গেল….. আরিয়া ওকে দেখে পাথরের মুর্তি হয়ে দাড়িয়ে গেল। সেখানের সবাই দাঁড়িয়ে গেছে।

শুধুমাত্র ইশাদ দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। ও আরিয়া নাম করেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ইশাদের শরীরের রক্তে সেখানের মাটি সম্পুর্ন ভিজে একাকার হয়ে গেল। আরিয়া কি করবে বুঝতে পারছে না। ইশাদ হাত বাড়িয়ে শুধু একবার আরিয়ার দিকে তাকাতে আরিয়া বিয়ের স্টেজ থেকে নেমে দৌড়ে ইশাদের কাছে গিয়ে ওর রক্তমাখা মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে….. কিন্তু ইশাদ তার আগেই ন্সেসলেস হয়ে যায়…..

আরিয়া: ইশাদ…. এই ইশাদ… প্লিজ উঠ…. আজ না আমাদের বিয়ে ছিল। এই ইশাদ…. [ আরিয়া অনবরত ইশাদকে ডাকতে লাগল কিন্তু কোনো সাড়া পেল না। ]

আনজুম: বনু ওকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে নাইলে বাচবে না। ওর অবস্থা খুব খারাপ.।।।।

আরিয়া: ইশাদদদ….. [ খুব জোরে একটা চিতকার করে ]

,
,

,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
[বাকিটা পরের পর্বে জানবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here