#প্রেমাসক্তি
#পর্ব__০৭
#অদ্রিতা_জান্নাত
ইশান অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ আর ইশিতা ওকে জড়িয়ে ধরে ক্রমশ কেঁদেই যাচ্ছে ৷ ইশান বুঝতে পারছে না যে হঠাৎ কীসের জন্য কাঁদছে ও ৷ কাঁদতে কাঁদতে ও আবার তুমি করে বলছে ইশানকে ৷ সেটাতে আরো অবাক হলো ইশান ৷ নিজেকে সামলিয়ে ইশিতাকে ছাড়াতে গেলে ও আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ৷ যেন ছেড়ে দিলেই চলে যাবে ৷ সেটা দেখে ইশান বললো,,,,,,,,
ইশান : ইশিতা কি হয়েছে? ছাড়ো আমাকে আর বলো প্লিজ ৷ নাহলে বুঝবো কিভাবে? কান্না থামাও ইশিতা ৷
ইশিতা একই ভাবে চুপ করে রইল ৷ এদিকে চিন্তায় ইশান নিজেকে সামলাতে পারছে না ৷ জোর করে ইশিতার মুখ তুলে ওর গালে দুহাত রেখে বলতে লাগল,,,,,,,
ইশান : কি হয়েছে বলো আমায়?
ইশিতা হেচকি তুলে মাথা নাড়িয়ে বললো,,,,
ইশিতা : ককিছু না ৷
ইশিতার চোখের পানি মুছে দিয়ে ইশান বললো,,,,,,
ইশান : তো কাঁদছিলে কেন?
ইশিতা : এমনি ৷
বলেই আবার ইশানকে জড়িয়ে ধরলো ৷ ইশান হালকা হেসে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগল,,,,,,,
ইশান : এভাবে কেন ডাকলে আমায়? জানো কতটা ভয় আর চিন্তা নিয়ে তাড়াতাড়ি করে এসেছি আমি? বাড়িতেও কাউকে বলে আসার সুযোগ পাই নি ৷
ইশিতা আস্তে করে বললো,,,,,, “সরি!”
ইশান : তো কেন ডেকেছো? সেটা তো বলো? আর তুমি আমাকে ‘তুমি’ করে বলছো?
ইশিতা : কেন বলতে পারবো না নাকি?
ইশান : সেটা না হঠাৎ কেন বলবে?
ইশিতা : সেটা আমার ইচ্ছা ৷
ইশান : তো ছাড়ো আমাকে ৷ বাড়িতে তো আবার ফিরে যেতে হবে নাকি?
ইশিতা মুখ তুলে ধমকের সূরে বলতে লাগল,,,,,,,
ইশিতা : তুমি আমাকে রেখে চলে যাবে মানে কি? আবার আমাকে ছাড়তে বলছো? আমাকে একা রেখে তুমি বাড়ি চলে যাবে?
ইশান : তো কীসের জন্য বসে থাকবো আমি? তুমি তো ভালোবাসোই না আমাকে ৷
ইশিতা মাথা নিচু করে ঠোঁট উল্টে মিনমিন করে বলতে লাগল,,,,,,,
ইশিতা : সেটা আমি কখন বলেছি? একটুও কি বোঝো নি আমাকে?
ইশান : কি বুঝবো?
ইশিতা : বুঝেও না বোঝার ভান কেন করছো? আমাকে কেন মুখে বলতে হবে? একটু বুঝে নাও ৷
ইশান : উহু ৷ মুখে বলো ৷
ইশিতা : পারবো না ৷
বলেই ইশিতা চলে যেতে নিলে ইশান ইশিতার হাত ধরে টেনে এনে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল,,,,,,
ইশান : ভালোবাসো সেটা বলতে এতো বাঁধা কীসের?
ইশিতা চুপ করে রইল ৷ ইশান ওকে আরো শক্ত করে ধরে বলতে লাগল,,,,,,,
ইশান : মুখ ফুটে বলতে সমস্যা কি?
ইশিতা : ছাড়ো আমায় ৷
ইশান : কেন? এখন কেন আমি ছাড়বো? এতক্ষন তো আমি তোমাকে ছাড়তে বলেছিলাম ৷ ছেড়েছিলে কি? ছাড়ো নি বরং আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিলে ৷ পারো না আমার বুকের ভিতর আরো ঢুকে যাও ৷
ইশান কথাগুলো বলে ইশিতার দিকে তাকালো ৷ লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলেছে ও ৷ চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে ৷ ইশান ইশিতাকে এই রূপে দেখে আবারও ওর প্রেমে পরলো ৷ ইশিতাকে ছেড়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ইশান বলতে লাগল,,,,,,,
ইশান : এতো লজ্জার কি হলো? তেমন কিছুই তো বলি নি আমি ৷ এখন এমন করলে বিয়ের পর…
ইশিতা ইশানের মুখে হাত রেখে বললো,,,,,,
ইশিতা : পরেরটা পরে ৷ এখন কেন বলছো এসব?
ইশান : কি বললাম?
ইশিতা ইশানকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল,,,,,,,,,
ইশিতা : জানি না ৷ কিছুই জানি না আমি ৷ শুধু এটুকুই জানি আমি ভালোবাসি তোমাকে ৷ কীভাবে বেসেছি সেটাও জানি না ৷ শুধু জানি ভালোবেসেছি আর বাসি ৷ হয়তো তোমার থেকে বেশি পারবো না ৷ তবে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমায় ৷ তোমার থেকে দূরেও থাকতে পারবো না আমি ৷ তুমি যাওয়ার পর নিজেকে পাগল পাগল লেগেছিল ৷ ইচ্ছা করছিল ছুটে চলে যাই ৷ তবে সেটা তো সম্ভব না ৷ তাই তোমায় আসতে বলেছি ৷ প্লিজ ইশান আমাকে কখনো ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিও না প্লিজ ৷
ইশান : কখনোই না ৷ সব সময় নিজের কাছে আগলে রাখবো তোমায় ৷ নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোমাকে দূরে যেতে দিব না আমি ৷ বিশ্বাস আছে না আমার উপর?
ইশিতা : নিজের থেকেও বেশি ৷
বলেই ওরা দুজন কিছুক্ষন চুপ করে রইল ৷ কিছুক্ষন চুপ থেকে ইশান বলতে লাগল,,,,,,,
ইশান : ইশুপাখি!
ইশিতা মুখ তুলে অবাক হয়ে বললো,,,,,,
ইশিতা : এটা আবার কেমন নাম?
ইশান ইশিতার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,,,,,,,
ইশান : ভালোবাসার ডাকনাম ৷
বলেই হাসলো ও ৷ ইশিতাও ওর হাসি দেখে হেসে দিল ৷ ইশান আবার বলতে লাগল,,,,,,,,,
ইশান : বাড়িতে না বলেই চলে এসেছি ৷ তাদের তো জানাতে হবে ৷ আর কাল ঢাকা ব্যাক করবো ৷ তুমিও যাবে আমার সাথে ওকে?
ঢাকা যাওয়ার কথা শুনে ইশিতার মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল ৷ ঢাকা যাওয়া তো ওর পক্ষে সম্ভব না তাহলে কীভাবে যাবে ও? তাহলে কি ওকে একা এখানেই থাকতে হবে? ভেবেই ওর চোখ ছলছল করে উঠলো ৷ ইশান ইশিতাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো,,,,,,
ইশান : কি হয়েছে? ঠিক আছো তো তুমি?
ইশিতা মাথা নাড়িয়ে বললো,,,,,,,
ইশিতা : হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছি ৷ কিন্তু ইশান তোমার ঢাকা না গেলে হয় না?
ইশান : এটা কি রকম কথা বলো? নিজের বাড়ি নিজেই যাবো না?
ইশিতা : হুম সেটা ঠিক ৷ তাহলে তুমি চলে যাও ৷
বলেই চলে যেতে নিলে ইশান আমার হাত ধরে আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে বললো,,,,,,,
ইশান : আমি যাবো? তুমি যাবে না?
ইশিতা : না ৷
ইশান : মানে? তুমি কেন যাবে না? এখানে থেকে কি করবে? তার থেকে ভালো দুজনেই চলে যাই ৷
ইশিতা : না আমার পক্ষে ঢাকা যাওয়া সম্ভব না ৷ তুমি তো জানোই আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি ৷ আর এটাও জানো যে আমার ছবি পেপারে দেয়া হয়েছে ৷ বাপি লোক লাগিয়ে সব জায়গায় খুঁজছে আমাকে ৷ তারপরেও এতোটা রিস্ক নিয়ে কীভাবে আবার ঢাকা ব্যাক করবো আমি ইশান?
ইশান : এতোটা চিন্তা কেন করছো? এসব কিছুই হবে না ৷ আমরা সোজা আমার বাড়িতে যাবো ৷ আর যাওয়ার পথে মুখ ঢেকে রেখো তুমি তাতে কেউ চিনবে না তোমায় ৷ কিন্তু আমি তোমাকে এখানে একা রেখে যেত পারবো না ৷
ইশিতা : যতোটা সহজ ভাবছো ততোটা সহজ নয় ইশান ৷ আমার বাপিকে চিনো না তুমি ৷ সে সব করতে পারে ৷ আমাকে তোমার সাথে দেখলে বাপি তোমাকে মারতে দুবারও ভাববে না ৷ ইশান আমি নিজেকে নিয়ে ভয় পাচ্ছি না ৷ আমার ভয় হচ্ছে তোমাকে নিয়ে ৷ তোমার কিছু হলে শেষ হয়ে যাবো আমি ৷ প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো ৷
এসব বলতে বলতে ইশিতা কেঁদে দিল ৷ ইশান ইশিতাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল,,,,,,,
ইশান : ইশুপাখি কান্না থামাও প্লিজ ৷ দেখো সে রকম কিছুই হবে না ৷ আমরা সোজা প্রথমে বাড়ি যাবো ৷ তারপর সেখানে গিয়ে আমি পাপাকে আমাদের কথা বলবো ৷ আমি জানি পাপা কখনো অমত করবে না ৷ তারপর খুব শীঘ্রই বিয়ে করে তারপর তোমার বাপির কাছে যাবো ৷ দেখো সে আমাদের ঠিক মেনে নিবে তখন ৷
ইশিতা : মানবে না ৷ বাপি কখনোই মানবে না তোমাকে ৷ বাপি কখনো কারও কথা শুনে কাজ করে না ৷ নিজের যা মনে হয় তাই-ই করে ৷ আমি এতো বড় ভুল করতে পারবো না ৷ আপু বারবার করে বলে দিয়েছে ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত যেন ভুলেও না নেই ৷ এখন যদি আপুর কথা না শুনেই চলে যাই তাহলে অনেক বড় ভুল হয়ে যাবে আমার ৷
ইশান : বান্দরবানে থাকলে যে এরকমটা হবে না সেটা কি করে ভাবছো?
ইশিতা : মানে?
ইশান : ওই দিন ওই ছেলেগুলো তোমার ছবি পেপারে দেখে তোমাকে ধরে নিতে এসেছিল না? তো ওরা যে আবার তোমাকে ধরে নিতে আসবে না সেটা কি করে ভাবলে? টাকার জন্য তো ওরা আবার তোমাকে ধরে নিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে পারে তাই না? তো সেখানে ঢাকায় গেলে কি? আবার এখানে থাকলেও বা কি? সব জায়গাই তো রিস্কি তোমার জন্য ৷
ইশান তো কিছু ভুল বলে নি ৷ তাহলে কি করবো আমি? ঢাকায় যাবো? না মন চাইছে না ৷ আমার জন্য ইশানকে বিপদে ফেলতে পারবো না আমি ৷ এখানে তো আমি একা থাকবো ৷ ইশান তো থাকবে না ৷ আমাকে ধরলেও একা ধরবে কিন্তু ঢাকায় তো ইশানও সাথে থাকবে আমার ৷ আমার ভাবনার মাঝেই ইশান আমাকে বলতে লাগলো,,,,,,
ইশান : কি ভাবছো তুমি? তুমি কিন্তু কাল যাবে আমার সাথে ৷
ইশিতা : তুমি কেন বুঝতে চাইছো না ৷ আমি…
ইশান : আর কোনো কথা না তুমি যাবে মানে যাবে ৷ লাগলে জোর করে নিয়ে যাবো তোমায় ৷
ইশিতা : আচ্ছা যাবো তার আগে আপুর সাথে কথা বলে নি ৷
বলেই ফোন দিতে গেলে ইশান আমাকে আটকে দিয়ে বললো,,,,,,,
ইশান : ফোন দেয়ার দরকার নেই কোনো ৷
ইশিতা : কিন্তু কেন?
ইশান : দেখো তুমি যদি তোমার বোনকে বলো তো সে তো কাউকে মুখ ফসকেও বলে দিতে পারে,,, না?? আবার তোমাদের ফোনে বলা কথাগুলোও তো কেউ আড়াল থেকে শুনে ফেলতে পারে তখন?
ইশিতা : কিন্তু ইশান? যদি আমি না বলি তো আপু জানবে না ৷ আর আমরাও জানতে পারবো না বাপি কি করছে, না করছে ৷ আমাদের ব্যাপারে জানে নাকি সেটাও তো জানতে পারবো না ৷ আপুকে বললে তো সেসব খবরও পাওয়া যাবে ৷ বাপি কোথায় যাচ্ছে, কি করছে সেটাও তো জানা যাবে ৷
ইশান : কোনো টেনশান নিও না প্লিজ ৷ তোমাকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না ৷ আমি আছি তো ৷ আমাদের সুরক্ষার জন্য আমি আরো গার্ড এর ব্যবস্থা করে রাখবো ৷ তুমি নাহয় ঢাকায় যাওয়ার পর তোমার আপুকে বলো যে তুমি ঢাকায় এসেছো ৷ আমরা বাড়িতে উঠে পরলে আর তেমন সমস্যা হবে না ৷ যাওয়ার পথে রাস্তায়ও যেন আর কোনো সমস্যা না হয় সেটাও তো দেখতে হবে নাকি ৷ বিশ্বাস রাখো ৷ দেখো তেমন কিচ্ছু হবে না ৷
ইশিতা : আমার ভয় করছে ইশান ৷ অনেক ভয় হচ্ছে ৷ তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় হচ্ছে আমার ৷
ইশান ইশিতাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,,,,
ইশান : কিচ্ছু হবে না ৷ দূরে যেতে কখনোই দিব না আমি তোমাকে ৷ এসব কিছু ভেবে নিজের শরীর খারাপ করো না প্লিজ ৷
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,