প্রেমাসক্তি পর্ব ২০

#প্রেমাসক্তি
#পর্ব__২০
#অদ্রিতা_জান্নাত

ইশিতা বাইক থেকে নেমে ইশানকে নিজের থেকে সরিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,

ইশিতা : তোমার যাওয়ার দরকার ৷ তুমি যাও প্লিজ ৷

ইশান : কিন্তু তুমি…

ইশিতা : ইশান আগে তুমি তোমার বাবার কাছে যাও ৷ কিছু হবে না প্লিজ যাও ৷ আমিও ঠিক আছি ৷ অপেক্ষা করবো তোমার জন্য আমি অাবার এই খানেই ৷ তুমি তোমার বাবা কাছে যাও ৷ তাকে সুস্থ করে তারপর নাহয় ভাবা যাবে ৷ তুমি যাও ৷

ইশান করুন চোখে তাকালো ইশিতার দিকে ৷ ও চোখ মুছে ইশিতার গালে দুহাত রেখে বললো,,,,,,,,,,

ইশান : চিন্তা করো না ৷ আমি আবার আসবো ৷ কাল এই জায়গাটায় চলে এসো তুমি ৷ কালই চলে যাবো আমরা ৷

ইশিতা হালকা মাথা ঝুলালো ৷ ইশান বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল ৷ ইশিতা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,

ইশিতা : আর যাওয়া হবে না আমার ইশান ৷ আর হয়তো দেখাও হবে না আমাদের ৷ কথাও হবে না আমাদের ৷ তুমি তোমার বাবার কাছে ছুটে চলে গেলে ৷ আমাকেও বাড়ি চলে যেতে হবে ৷ আমার জন্য তোমার ক্ষতি করতে পারবো না আমি ৷ পারলে ক্ষমা করে দিও আমায় শেষবারের মতো ৷

বলেই চোখ মুছে পিছন ঘুরে রাস্তা দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলো ইশিতা ৷

__________________

মাঝখান দিয়ে কেটে গেছে আরো একটি দিন ৷ আজ চৌধুরি বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷ চারপাশে হলুদ ফুল আর হলুদ রঙের নেট দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে ৷ মানুষ জনে ভরে গেছে চারপাশ ৷ সবাই সবার খুশি মতো কাজ করছে ৷ আরমান চৌধুরির মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠেছে ৷ এদিক ওদিক দেখছে আর সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছে ৷

ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইশিতা ৷ ওর মনে আজকের জন্য নেই কোনো অনুভূতি ৷ শুধু শান্ত চোখে আর মলিন মুখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ওর গাঁয়ে একটা কাঁচা হলুদ রঙের ভারি লেহেঙ্গা ৷ হাতে, পায়ে, গলায়, মাথায়, কানে হলুদের সব ফুলের গহনা ৷ আর মুখে রয়েছে হালকা মেকআপ ৷ সেই মেকআপের উপরে দুই গালের হলুদ চিকচিক করছে হালকা রোদের আলোয় ৷ নিজেকে খুব অসহায় লাগছে ৷ আজ ওর গাঁয়ে হলুদ হলো একটু আগে ৷ কিন্তু ওর ভালোবাসার মানুষের সাথে নয় একটা অচেনা মানুষের সাথে ৷ কাল ওর বিয়ে ৷ একটা অচেনা মানুষের সঙ্গে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে ও ৷ কালই চলে যাবে এই বাড়ি ছেড়ে ৷ এই বাড়ির সবাইকে পর করে দিয়ে ৷ অনেক দূরে চলে যাবে সবাইকে মুক্ত করে দিয়ে ৷ চোখের পানি গুলোও অাজ শত্রুতা করছে ৷ কাঁদতে কাঁদতে যেনও এরাও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে ৷

জোরে একটা শ্বাস টেনে নিলাম ভিতরে ৷ বেঁচে থাকাটাও যেন আমার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ এতো খুশির মাঝে আমিই একা ৷ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশের দিকে তাকালাম ৷ হলুদ পায়জামা পাঞ্জাবি পরে সাফি দাঁড়িয়ে আছে ৷ তার মুখেও হালকা হলুদের ছোঁয়া ৷ ইশানকে এভাবে দেখতে আরো সুন্দর লাগতো ৷ চোখ ফিরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম ৷ পাশে থেকে সাফি বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,

সাফি : আপনার কি ভালো লাগছে না? আপনি কি এই বিয়েতে রাজি নন?

ইশিতা অবাক হয়ে তাকালো ৷ চোখ ফিরিয়ে আবার চুপ করে রইল ৷ ছেলেটা আবার বললো,,,,,,,,,,,

সাফি : আমাকে ভালো ভাবে চিনেন না দেখে এরকম করছেন না? আমরা ততোটাও পরিচিত নই তবে হয়ে নিবো সমস্যা নেই ৷ আপনার যদি আমার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে ৷ তাতে অসুবিধা কি? সময় লাগতেই পারে ৷ যতো সময় লাগে নিতে পারেন ৷

ইশিতা : সেই জন্য না ৷

সাফি : তাহলে?

ইশিতা সাফির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

ইশিতা : কিসের জন্য রাজি হয়েছেন এই বিয়েতে? আমি তো আপনাদের সঙ্গে অনেক খারাপ বিহেভ করেছি না? তাহলে কেন রাজি হলেন?

সাফি : কিছু কিছু মানুষের আচরণ এমনিতেই ভালো লাগে ৷ হোক সেটা খারাপ ৷ ভালো লাগাই একটা অন্যরকম ব্যাপার ৷

ইশিতা : কিন্তু আমি তো ভালো লাগার মতো কিছুই করি নি ৷

সাফি : হুম কিন্তু আমার ভালো লেগেছে ৷ অনেক ভালো লেগেছে ৷

ইশিতা সামনের দিকে তাকালো ৷ কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না ও ৷ গতকাল ও ইশানের সাথে দেখা করতে যায় নি ৷ কোনো কথাও বলে নি ওর সাথে ৷ সারাদিন ফোন বন্ধ করে রেখেছিল ৷ ইশান পাগলের মতো খুঁজেছে ওকে ৷ ফোন করেছে একটুখানি কথা বলার জন্য কিন্তু ইশিতা পারে নি ৷ ইশান ওর বাড়িতেও চলে এসেছিল ৷ কিন্তু ইশিতা ইশানের সামনে যেতে পারে নি ৷ ওর বাবা নিষেধ করে দিয়েছিল ওকে ৷ গেলে সেদিনই মেরে ফেলতো ইশানকে ৷ তাই যায় নি ৷ পাগলের মতো কান্না করেছে দুজনে দুদিকে ৷ তবুও কেউ কারো কাছে যেতে পারে নি ৷ সাফি ইশিতাকে ডাকলে ৷ প্রথমে সারা দিল না ইশিতা ৷ ও তো ইশানকে নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত ৷ হঠাৎ জোরে করে ডাকায় চমকে উঠলো ও ৷ সাফি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,,,,,,,,, “কি হয়েছে?”

ইশিতা মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বললো ৷ তারপর দৌঁড়ে ছাদ থেকে নেমে চলে গেলো ৷ নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো ৷ হাতের আংটিটার দিকে তাকিয়ে সেটা বুকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,,,,,,,,,,,

ইশিতা : ইশান? কোথায় তুমি ইশান? নিয়ে যাও আমাকে প্লিজ ৷ ইশান কোথায় তুমি? আমার কাছে একটু আসো না ৷ মরতে ইচ্ছা করছে আমার ৷ মরে যাবো আমি ৷ মরে যাবো ৷

বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো ৷ ইশিতার কান্নার শব্দ শুনে বাড়ির সবাই ওর রুমের কাছে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলো ৷ ডাকতে লাগলো ইশিতাকে ৷ কিন্তু ইশিতার কোনো সাড়াশব্দ নেই ৷ ইতি বাড়ির পিছনে গিয়ে মই দিয়ে ইশিতার রুমের ব্যালকনি দিয়ে রুমে ঢুকলো ৷ রুমে এসে ইশিতাকে রক্তাত্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেখে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো ৷ সেই চিৎকারে পুরো বাড়িটা কেঁপে উঠলো ৷

দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো ৷ সবাই হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকলো ৷ ইশিতার গায়ের হলুদ লেহেঙ্গা পুরো রক্তে ভিজে লাল হয়ে গিয়েছে ৷ ডান হাতে কয়েকটা আছড়ের দাগ রয়েছে ৷ সেখান থেকেই ফিনকি দিয়ে রক্ত পরছে ৷ পাশে একটা ব্লেট পরে আছে ৷ ইশিতার মা ওর কাছে গিয়ে ওকে ধরে ডুকরে কেঁদে দিলো ৷ বিয়ে বাড়িতে মূহুর্তেই কান্নার রোল পরে গেল ৷ ডাক্তার এসে ইশিতার চেকআপ করিয়ে দিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল ৷ ইনফ্যাকশান যেন না হয় তার জন্য একটা ইনজ্যাকশানও দিয়ে দিলো ৷ কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে চলে গেল সে ৷

আরমান চৌধুরি রেগে গেলেন ইশিতার উপর ৷ এসব করার মানে কি? সবাইকে কি জানাতে চাচ্ছে ওকে জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে? বাড়ির মেহমানরা একেকজন একেক রকমের কথা কানাঘুষা করছে ৷ কেউ আফসুস করছে তো কেউ তাচ্ছিল্য করছে ৷ সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো এক এক করে ৷ শুধু রয়ে গেল তিন জন মানুষ ৷ ইশিতার মা ইশিতার হাত ধরে কেঁদে যাচ্ছে ৷ ইশিতার ফুপ্পি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ৷ ইতি সোফায় বসে আছে আর চেয়ে আছে ইশিতার শুকিয়ে যাওয়া মুখটার দিকে ৷ কষ্ট হচ্ছে ওর ৷ ইচ্ছা করছে ওই লোকটাকে নিজের হাতে কুপিয়ে মারতে ৷ ঠোঁট চেপে ধরে বসে আছে ও ৷ না সইতে পারছে! না দেখতে পারছে! আর না কিছু বলতে পারছে!

বেশ কিছুক্ষন পর ইশিতার সেন্স ফিরলো ৷ ওর মা ওকে ধরে উঠে বসিয়ে খাটের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসালো ৷ ইশিতা মাথা নিচু করে চুপ করে আছে ৷ ওর মা বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

—- ইশিতা? কি করেছিস তুই এগুলা? কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস?

—- ইশু বল না ৷ শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ বল তো? কেন এরকম করছিস মা?

রিফা বললো ৷ ইশিতা চুপ করে একই ভাবে বসে আছে ৷ পাশ থেকে ওর মা আবার বললো,,,,,,,,,,

—- তুই জানিস? তোর বাবা আরো রেগে গেছে এতে ৷ কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস মা? চলে যা ৷

বলেই তিনি ইশিতার মাথা তাঁর বুকে চেপে ধরলো ৷ ইশিতা কোনো নড়াচড়া না করে শান্ত ভঙ্গিতেই বললো,,,,,,,,,

ইশিতা : আমি তো অনেক আগেই মরে গেছি আম্মু ৷ শুধু আমার শরীরটা বেঁচে আছে ৷ আমি তো অনেক আগেই মরে গেছি ৷ বাঁচতে ইচ্ছা করে না আমার আম্মু ৷ বাঁচতে ইচ্ছা করছে না ৷

ওর মা ধমকের সূরে বললো,,,,,,,,,,,

—- ইশিতা? চুপ কর মা ৷ চুপ কর ৷ আর কিছু বলিস না৷

ইশিতা একটু চুপ করে থেকে আবার বললো,,,,,,,,,

ইশিতা : আমাকে একটু একা থাকতে দিবে প্লিজ ৷

ইশিতার মা করুন চোখে তাকালো তার মেয়ের দিকে ৷ ওর ফুপ্পি চোখ মুছে বললো,,,,,,,,,,,,,

—- ভাবি চলো ৷ ও যেটা বলছে সেটা করি ৷ ওর একটু একা থাকা প্রয়োজন ৷ চলো তোমরা ৷ ইশু তুই উল্টাপাল্টা কিছু করিস না ৷

ইশিতা কিছু বললো না ৷ মাথা নিচু করে বসে রইলো ৷ ওরা সবাই একে একে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ ইশিতা একপলক ওদিকে তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইল ৷ আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে ব্যালকনির দিকে চলে গেল ৷ ব্যালকনিতে গিয়ে এক কোনায় ফ্লোরে বসে পরলো ইশিতা ৷ দুই হাঁটু মুড়ে হাঁটুর উপর মাথা রাখলো ৷ চোখের কার্নিশ বেয়ে নিঃশব্দে পানি পরছে ৷ সামনের আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

ইশিতা : ইশান? কাল আমার বিয়ে ৷ সেটা কি জানো তুমি? জানলে হয়তো ছুটে চলে আসতে ৷ কিন্তু তোমাকে তো বলিই নি আমি ৷ কাল থেকে আমি অন্যকারোর হয়ে যাবো ৷ অন্যকারোর ঘরের বউ ৷ অন্যকারোর স্ত্রী ৷ তুমি মুক্ত ইশান ৷ কাল থেকে তুমি মুক্ত ৷ এই বাড়ির সবাই ইশিতা নামক প্যারা থেকে মুক্ত ৷ তোমার ইশুপাখিকে পারলে ক্ষমা করে দিও ৷

বলেই হাঁটুতে মুখ গুজে কাঁদতে লাগলো ইশিতা ৷

_______________________

লাল রঙের বেনারসি পরে আয়নার সামনে বসে আছে ইশিতা ৷ হাতে, গলায়, মাথায় ভারী গহনা ৷ মুখে হালকা মেকআপ ৷ মাথার চুলগুলো খোপা করে তার চারপাশে ফুল লাগিয়ে খুব সুন্দর করে বাঁধা হয়েছে ৷ চুপচাপ বসে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে ইশিতা ৷ নিজেকে খুটিয়েখুটিয়ে দেখছে ৷ অন্যকারোর জন্য আজ সেজেছে ও ৷ ওর ভালোবাসার মানুষটার জন্য নয় ৷

পেছন থেকে একটা মেয়ে ইশিতার মাথায় একটা লাল রঙের পাতলা ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে দিলো ৷ তারপর ইশিতার সামনে এসে ওর ডান হাতে একটা আংটি পরিয়ে দিতে দিতে মুচকি হেসে বললো,,,,,,,,,,

—- ম্যাম আপনার হাতের মেহেদির রঙ খুব সুন্দর লাল হয়েছে তো ৷ স্যার তাহলে আপনাকে অনেক ভালোবাসবেন ৷

ইশিতা একপলক মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ওর হাতের দিকে তাকালো ৷ মেয়েটা ওর হাতে আংটি পরিয়ে দিয়ে চলে গেল ৷ ইশিতা ওর দুহাত সামনে এনে মেলে ধরলো ৷ গতকাল রাতে ঘুমের ঘোরেই ওর বাবা মেহেন্দি আর্টটিস্টদের এনে ওর হাতে মেহেদি পরিয়ে দিয়েছে ৷ বেশ লাল হয়েছে ৷ তবে সেটা কিসের জন্য জানা নেই ওর ৷ ওর হাতের ঠিক মাঝখানে সাফির নাম লেখা আছে ৷

হাত দুটো নামিয়ে আয়নার দিকে তাকালো ৷ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির উপর হাত রেখে বললো,,,,,,,,

ইশিতা : আমি আজ আবার কনের সাজে সেজেছি ইশান ৷ তবে সেটা তোমার জন্য নয় আমার হবু বরের জন্য ৷ ভালো থেকো, ভালো রেখো!

বলেই হালকা হাসলো ইশিতা ৷ তখনি নিচ থেকে সবার বলা আনন্দের এক চিৎকার ভেসে এলো ওর কানে,,,,,,, “বর এসেছে! বর এসেছে!”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here