প্রেমাসক্তি পর্ব শেষ

#প্রেমাসক্তি
#পর্ব__২২ (অন্তিম পর্ব)
#অদ্রিতা_জান্নাত

|
|

অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুই পরিবারের মানুষ ৷ ইশান আর ইশিতার পরিবারের সবাই আছে এখানে কিন্তু ইশিতার বাবা নেই ৷ দুই ঘন্টার মতো হয়ে গেল ইশান আর ইশিতা ওটির ভিতরে ৷ ডাক্তার একবারের জন্যও বের হলো না ৷ কয়েকটা নার্স বের হয়েছে বাট কোনো কথাই বলে নি তারা ৷ ওটির সামনে দাঁড়িয়ে সবাই কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করছে ৷ কারো জানা নেই কি হতে পারে বা হবে?

আরো এক ঘন্টা পর ডক্টর বেরিয়ে আসতেই ইশিতার মা ছুটে চলে গেলেন তার কাছে আর বলতে লাগলেন,,,,,,,,,

—- আমার মেয়ে? আমার মেয়ে কেমন আছে?

ডক্টর তার হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে বললেন,,,,,,,,,,

—- গুলিটা আমরা বের করতে পেরেছি ৷ তবে পেসেন্টের অবস্থা ততোটাও ভালো নয় ৷ ওনার শরীর প্রচুর দুর্বল ৷ কয়েকদিন যাবত হয়তো উনি অনেক ডিপ্রেসড ছিলেন ৷ তাই সব মিলিয়ে উনি অনেক দুর্বল ৷ শ্বাস প্রশ্বাস অনেক হালকা ৷ তবুও আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করছি ৷ চিন্তা করবেন না ৷ এখন আপাততো ঠিক আছেন ৷ তবে পরে কি হতে পারে বলতে পারছি না ৷ excuse me.

বলেই চলে গেলেন তিনি ৷ ইশিতার মা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলেন ৷ পাশ থেকে ইশিতার ফুপ্পি তাকে ধরে বললেন,,,,,,,,,

—- নিজেকে সামলাও ভাবি ৷ ইশুকেও তো সামলাতে হবে ৷ ওর কিছু তো হয় নি না? আর দেখো ওর কিছু হবেও না ৷

—- খুব কষ্ট পাচ্ছে রে আমার মেয়েটা ৷ ওই লোকটার একটা ব্যবস্থা করবো আমি আজ ৷ আর নাহ ৷

বলেই চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালেন ৷ রিফা ওনার হাত ধরে বললো,,,,,,,

—- কোথায় যাবে? তাও ইশুকে এভাবে ফেলে?

—- যার জন্য আমার মেয়েটার আজ এই অবস্থা তার কাছেই যাবো আমি ৷ আমার মেয়ের কষ্টের শাস্তি আজ আমি নিজ হাতে দিব ৷

—- তুমি…

—- রিফা? না করিস না ৷ তুই আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিস ৷ রাখবি তো?

—- অবশ্যই ৷ তুমি ইতিকে নিয়ে যাও ৷ আমি আছি এখানে ৷

ইশিতার মা ওটির দিকে একবার তাকিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন ৷ ইতি যেতে বললো,,,,,,,,

—- ফুপ্পি আমার বোনটাকে দেখে রেখো ৷

—- হুম সাবধানে যাস তোরা ৷ তোর মাকে দেখিস ৷

ইতি মাথা নাড়িয়ে চলে গেল ৷ রিফা ইশিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

—- ইশু তুই ঠিক হয়ে যা তাড়াতাড়ি ৷

বলেই বিপরীত দিকে তাকালেন ৷ যেখানে ইশানের বাবা আর ভাইয়া বসে আছে ৷ ইশানের বাবাকে দেখে রিফার ভেতরটা মুচর দিয়ে উঠলো ৷ চোখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,,,,,,,

—- আল্লাহ! ইইশানের বাবা এখানে ৷ কি করবো আমি? ওর কি অবস্থা সেটা তো জানতেও পারবো না ৷ নাহ কোনো অশান্তি করা যাবে না ৷ ইশুর কাছেই থাকতে হবে আমায় ৷ কিন্তু ইশানের যেন কিছু না হয় ৷

মনে মনে হাজারও প্রার্থনা জুড়ে দিলেন তিনি ৷

___________________

ইশিতাকে কিছুক্ষন আগে কেবিনে শিফট করা হয়েছে ৷ অবস্থার উন্নতি হচ্ছে আস্তে আস্তে তাই ৷ কিন্তু ইশানের খবর এখন জানে না কেউ ৷ ডাক্তার ওটির ভিতরেই ৷ কিছু বলে নি এখনো ৷

আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিজেকে একটা অচেনা জায়গায় অন্যরকম ভাবে পেলাম ৷ দেখে মনে হচ্ছে হাসপাতালের কোনো কেবিন ৷ বাট আমি হাসপাতালে কেন? মাথায় একটু চাপ দিতেই সকালের ঘটনাগুলো মনে পরে গেলো ৷ মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ছুড়ে ফেলে দিলাম ৷ উঠে বসতে নিলেই পেটে হাত দিয়ে ব্যথায় ‘আহ’ করে উঠলাম ৷ একজন নার্স হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে এসে বলতে লাগলেন,,,,,,

—- ম্যাম কি হয়েছে আপনার? ঠিক আছেন আপনি?

বলেই আমাকে শুইয়ে দিলেন ৷ অামি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,,,,,,,

ইশিতা : আমি ঠিক আছি ৷ ইশান কোথায়? ইশান?

—- ম্যাম কার কথা বলছেন আপনি?

ইশিতা : ইশান! ওর ওর বুকে গুলি লেগেছিল, হ্যাঁ ৷ ঠিক আছে ও? কোথায় আছে ও? একটু ডেকে দিবেন প্লিজ? ইশান? ইশান?

বলেই চিৎকার করতে লাগলো ইশিতা ৷ ইশিতার গলা শুনে ইশিতার ফুপ্পি ওর কাছে দৌঁড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

—- তুই ঠিক আছিস মা? কোথাও কষ্ট হচ্ছে না তো? এতো টা হাইপার হোস না ৷ এটা তোর শরীরের জন্য ভালো না মা ৷ একটু শান্ত হ ৷

ইশিতা : ফুপ্পি? ইশান কোথায়? ও ঠিক আছে? আমাকে একবার নিয়ে চলো না ওর কাছে প্লিজ ফুপ্পি? ফুপ্পি কিছু বলো প্লিজ ৷

রিফা চুপ করে রইলো ৷ ইশিতা রিফাকে ওর কাছ থেকে সরিয়ে হাতের ক্যানেল গুলো টান দিয়ে খুলে নামতে গেলেই রিফা বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

—- কি করছিস ইশু? নামছিস কেন? ইশু?

ইশিতা : ইশানের কাছে যাবো আমি ৷ ফুপ্পি প্লিজ না করো না ৷ আমাকে ওর কাছে নিয়ে চলো প্লিজ ৷

—- কিন্তু তুই…

ইশিতা : প্লিজ ফুপ্পি না করো না ৷ ওর কাছে নিয়ে চলো আমায় প্লিজ ৷

—- আচ্ছা তুই একটু বস ৷ উঠিস না ৷ পেটে ব্যথা পাবি নইলে ৷ আমি আসছি ৷

বলেই রিফা দৌঁড়ে চলে গেল ৷ ইশিতা কিছুটা পিছনে হেলে বসে রইলো ৷ রিফা একটা হুইল চেয়ার নিয়ে এসে সেখানে ইশিতাকে বসালো ৷ কারন হেঁটে গেলে ওর পেটে চাপ পরবে ৷ এর ফলে রক্তও ঝড়তে পারে ৷ নতুন নতুন অপারেশন করে এতোটা চাপ দেয়া ঠিক হবে না ৷ ইশিতার ফু্প্পি ওকে ইশানের কেবিনের দিকে নিয়ে গেল ৷ কিন্তু ভিতরে যেতে পারলো না ও ৷ ইশানের বাবা ওকে ভিতরে ঢুকতে দিল না ৷ ইশিতা ইশানের বাবার হাত জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

ইশিতা : আঙ্কেল? আপনি আমার বাবার শাস্তি আমাকে দিবেন না প্লিজ ৷ আমি জানি আপনি আমাদের উপর রাগ করে আছেন ৷ কিন্তু সেখানে তো আমাদের কোনো দোষ নেই ৷ প্লিজ আঙ্কেল ইশানের থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দিবেন না ৷ আঙ্কেল প্লিজ ওকে একটুখানি দেখতে চাই আমি ৷ প্লিজ আঙ্কেল ৷

পাশ থেকে রোহান বলে উঠলো,,,,,,,,,

রোহান : পাপা তুমি কেন এরকম করছো বলো তো? ওরা তো দুজন দুজনকে ভালোবাসে ৷ কম কষ্ট তো পায় নি ৷ আর কত? তুমিও তো বুঝো ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টটা ৷ তাহলে সেই কষ্টটা কেন আবার নিজের ছেলেকেই দিচ্ছো পাপা?

ওর বাবা কিছু বললেন না ৷ রোহান আবার বললো,,,,,,,,,,

রোহান : পাপা প্লিজ মেনে নাও ৷ তোমার ছেলে তো কম কষ্ট পাচ্ছে না ৷ অন্য কাউকে কষ্ট দিতে চাইলেও সেই কষ্টটা তো তোমার ছেলেই পাচ্ছে বলো? ইশানকে আর কষ্ট দিও না পাপা ৷ একটু বোঝার চেষ্টা করো ৷

—- আচ্ছা বেশি না অল্প কিছুক্ষনের জন্য দেখা করতে যাও তুমি ৷

ইশিতাকে বলে ইশানের বাবা চলে গেলেন অন্যদিকে ৷ ইশিতা বললো,,,,,,,,

ইশিতা : থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া ৷ ইশান কেমন আছে?

রোহান : ডাক্তার বলেছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইশানের জ্ঞান না ফিরলে কিছু বলা সম্ভব না ৷ গুলিটা বেশ ভালোভাবেই লেগেছে ৷ তবে বিশেষ কোনো ক্ষতি হয়নি ৷ রক্ত ঝড়েছে অনেকটা বেশ গভীর ক্ষতটা ৷ ঠিক হতে সময় লাগবে ৷ কিন্তু ইশানের এখনো জ্ঞান ফিরে নি ৷ জানি না কি হবে ৷

বলেই রোহান পাশের চেয়ারে বসে পরলো ৷ ইশিতা আস্তে আস্তে হাত ঘুরিয়ে একাই সামনে চলে গেল ৷ ইশানের কাছে এসে আস্তে করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ইশিতা ৷ আস্তে আস্তে ইশানের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

ইশিতা : ইশান প্লিজ তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও ৷ আমি জানি তোমার কিচ্ছু হয় নি আর হবেও না ৷ আমি বেঁচে থাকলে তুমি কেন বাঁচবে না? চোখ খুলো না ৷ আমার ভালো লাগছে না তোমাকে এভাবে দেখতে ৷ ইশান!

ইশানের বুকে মাথা রেখে ইশিতা ইশানের হৃদস্পন্দন শোনার চেষ্টা করছে ৷ খুব হালকা সেই শব্দ ৷ তবে ও প্রত্যেকটা শব্দ আগের মতোই অনুভব করছে ৷

_________________________

ভোরের রোদের আলো ইশানের মুখের উপর পরতেই চোখ মুখ কুচকে আস্তে আস্তে তাকালো ৷ নিজের উপর ভারি কিছু একটা অনুভব হতেই চোখ মেলে তাকালো ৷ তাকাতেই ইশিতার ঘুমন্ত চেহারায় চোখ আটকে গেল ৷ হাত দিয়ে ইশিতার মুখের উপর পড়ন্ত চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিলো ৷ তারপর হাত দিয়ে নিজের অক্সিজেন মাস্ক খুলে বাহিরের অক্সিজেনটা ভিতরে টেনে নিলো ইশাম ৷ মুখটা একটু নিচু করে ইশিতার কপালে একটা চুমু দিয়ে হালকা হাসলো ও ৷ নিচু হতে গিয়ে ওর বুকে একটু টান লেগেছে ৷ তবে ইশিতাকে কাছে পেয়ে এই ব্যথাও ওর কাছে যেনো তুচ্ছ ৷ ইশিতা হালকা নড়েচড়ে আবার গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো ৷ ইশান এক হাতে আগলে নিলো ওকে ৷

ইশান ইশিতার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,,,,,,,,,

ইশান : ইশুপাখি ওঠো ৷

ইশিতা ঘুমের ঘোরেই বললো,,,,,,,

ইশিতা : হু?

ইশান : আরে বাবা ওঠো ৷ সারা রাত এভাবে ছিলে? ইশিতা?

ইশিতা চোখ মুখ খিচে বললো,,,,,,,,,,

ইশিতা : হুম শুনছি তো? কি হয়েছে?

ইশান : এদিক তাকা রে বাবা!!

ইশিতা মুখ তুলে ইশানের দিকে তাকালো ৷ কিছু একটা মনে পরতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো ৷ হঠাৎ এরকম করায় ইশিতা পেটে হাত দিয়ে ‘আউচ’ করে উঠলো ৷ ইশান বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

ইশান : এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছো? এভাবে কেউ উঠে বসে? দেখি কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?

ইশান ইশিতার পেটে হাত দিতে গেলে ইশিতা ইশানের হাত ধরে ফেললো ৷ ওর গালে হাত রেখে বললো,,,,,,,,

ইশিতা : জ্ঞান ফিরেছে তোমার? তুমি ঠিক আছো? কষ্ট হচ্ছে না তো তোমার?

বলেই ইশানের বুকে হাত দিয়ে বললো,,,,,,,,

ইশিতা : ব্যথা করছে না? খুব ব্যথা করছে?

ইশান ইশিতার হাত ওর বুকে ধরে বললো,,,,,,,,,

ইশান : উহু একটুও না ৷

ইশিতা : অনেক খারাপ তুমি ৷ কেন বাড়িতে এলে বলো তো? যদি তোমার কিছু হয়ে যেত?

ইশান : তুমি আমাকে বললেও না যে তোমার বিয়ে ছিল ৷ কেন বললে না ইশুপাখি?

ইশিতা : তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যেতাম ইশান ৷ বাপি আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেছিল ৷

ইশান : তাই বলে তুমি…?

ইশিতা : ওসব ছাড়ো ৷ যা হবার হয়ে গেছে ৷ আমি ডাক্তার ডেকে আনছি ৷ তোমার চেকআপ করাতে হবে৷

ইশান : তোমারও করা লাগবে ৷

বলেই ইশান নার্সকে ডেকে ডাক্তার ডাকতে বললো ৷ ডাক্তার এসে ওদের দুজনকেই চেকআপ করিয়ে দিল ৷ কয়েকদিন সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে বলেছে ওদের ৷

____________________

কেটে গেছে দুইমাস ৷ এই দুইমাসে বদলে গেছে অনেক কিছু ৷ ইশান আর ইশিতা এই দুইমাসে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ না হলেও বেশ অনেকটাই সুস্থ ৷ তবুও নিয়ম করে ডাক্তার দেখাতে হয় ওদের ৷ এই দুই মাস ওরা আলাদা ছিল ৷ নিজেদের বাড়িতেই ছিল ৷ ইশিতা ওই বিষাক্ত বাড়িটা বেঁচে দিয়েছে ৷ চলে এসেছে অন্য একটা বাড়িতে ৷ এখন ওরা যেই বাড়িতে থাকে সেটা ইশিতার বাবা ইশিতার নামে রেখেছিল ৷ আর আগের বাড়িটা ছিল ইতির নামে ৷ ইতির পার্মিশান নিয়েই ইশিতা এমনটা করেছে ৷

নতুন বাড়িতে উঠেছে একমাস হলো ৷ সেখানে ইশিতা, ওর আম্মু আর রিফা থাকে ৷ ইতি ওর শ্বশুড়বাড়িতে শুভর সাথে থাকে ৷ শুভ নিজের ভুল বুঝতে পেরে ওকে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়েছে ৷ আগের থেকে ওদের মধ্যকার সম্পর্কটা আরো গাঢ় হয়ে উঠেছে ৷ কিন্তু ইতির মনের এক কোনায় ওর প্রথম অসমাপ্ত ভালোবাসাটা রয়েই গেছে ৷ দূর থেকে শুধু দোয়া করে দিবে যাতে ওর ভালেবাসার মানুষটা ভালো থাকে অন্তত ৷ ইতিও ভালো থাকার চেষ্টা করে ৷

ইশানের বাবা ইশিতাকে মেনে নিয়েছে ৷ তিনি মুখ ফুটে কখনো বলেন নি তবে তার কাজ কর্মে সব বোঝাই যায় ৷ একদম প্রথম দিনের মতো হেসে হেসে মজা করে কথা বলে ইশিতার সাথে ৷ প্রত্যেকদিন দেখা করা নয়তো ফোনে কথা বলা ইশান আর ইশিতাক কাছে রুলস হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷

ওই দিন ইশিতার মা ওনার স্বামীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন ৷ সাক্ষী হিসেবে থাকে ইশান আর ইশিতার পরিবার সঙ্গে বিয়ের দিন উপস্থিত সবাই ৷ ইশিতার বাবা যে ওদের দুজনকে গুলি করে সেটা একজন ক্যামেরাম্যান রের্কড করে রেখেছিল ৷ সেটাই প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগে ৷ ইশিতার বাবা কোনো কিছুই অস্বীকার করেন নি ৷ সব স্বীকার করেছেন ৷ নিজের সবচেয়ে বড় ভুল গুলো বুঝতে পেরেছেন ৷ তিন বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে তাকে ৷ নিজের ভুল বুঝতে পারার জন্য সাজাটা অন্যদের থেকে কম ৷ তবে তিন বছর সময়টা কতটা দীর্ঘ সেটা সেই বুঝতে পারে যার কাছে প্রত্যেকটা সেকেন্ড তিক্ত লাগে ৷

পুরো পরিবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তার থেকে ৷ এই দুই মাসে তার সাথে দেখা করতে আসে নি কেউ ৷ কিন্তু যাকে কষ্টটা বেশি দিয়েছেন তিনি, সে আজ এসে দেখে গিয়েছে তাকে ৷

ইশিতা ওর বাবাকে দেখতে এসেছিল দুই মাস পর সঙ্গে করে ইশানকেও নিয়ে এসেছিল ৷ ইশিতার বাবা ক্ষমা চেয়েছে ওদের কাছে ৷ ওইদিন ইশানের বুকে গুলিটা তার হাত থেকে ভুলবশত হাত ফসকে লেগে গিয়েছিল ৷ ইশান প্রথমে রাগ করে থাকলেও ইশিতার দিকে তাকিয়ে সবটা ভুলে গিয়েছে ৷ হয়তো এরকমটা হওয়ারই ছিল ৷ তাই বলে এখন দোষ দিয়ে কি বা হবে? অতীতকে ভুলে বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা তো সবার করতেই হবে ৷

একটা ব্রিজের উপর দিয়ে ইশান আর ইশিতা হেঁটে যাচ্ছে ৷ আর ইশিতা ক্রমশ বকবক করেই যাচ্ছে ৷ ইশান শুধু দেখছে ওকে ৷ ইশিতা হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা সামনে চলে গেলে ওর মনে হলো ওর পাশে ইশান নেই ৷ সঙ্গে সঙ্গে পিছনে ফিরে দেখে ইশান হাতে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে ৷ তবে ওর থেকে অনেকটা দূরে ৷ ইশিতা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,,,,,,,,

ইশিতা : ইশান? ওখানে কি করছো? এদিকে এসো ৷

ইশান নড়লো না ৷ ইশিতা ওর কাছে এগিয়ে গেল ৷ ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,,,,,,,

ইশিতা : এই যে মি: এভাবে কি দেখছেন? আমি তো আরেকটু হলেই হারিয়ে ফেলতাম তোমায় ৷

ইশান : এতোই সহজ নাকি? মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে এসেছি আমরা ৷ আবার দূরে যেতে দিব বুঝি?

ইশিতা : কে দূরে যাবে? আমি তো আর যাবো না ৷ সো এসব কথা আর বলো না ৷ চলো তো এবার ৷

ইশান ইশিতার হাত ধরে টেনে ওর কোমড় চেপে ধরে বললো,,,,,,

ইশান : কোথায় যাবো ইশুপাখি?

ইশিতা ইশানের গলায় ওর দুই হাত বেঁধে বললো,,,,,

ইশিতা : অনেক দূরে যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকবো ৷

ইশান : তাই?

ইশিতা : জ্বী! এবার ছাড়ো ৷ আমরা বাড়ির বাহিরে ৷

ইশান : তো?

ইশিতা : তো মানে? রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব কি করছো? ছাড়ো!

ইশান : উহু ৷

ইশান ইশিতার দিকে হালকা ঝুঁকতেই ইশিতা ইশানের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো,,,,,,,

ইশিতা : না ইশান এখন না ৷ বিয়ের পর প্লিজ ৷

ইশান : সেই বিয়েটা হবে কবে?

ইশিতা : আমার বাপিকে মাফ করেছো তুমি?

ইশান : হ্যাঁ ৷

ইশিতা : তাহলে একটু ওয়েট করো ৷ বাপিকে ছেড়ে দিলেই আমরা বিয়ে করবো ৷ বিশ্বাস রাখো আর তেমন কিছুই হবে না ৷

ইশান ইশিতাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,,,,,,

ইশান : বিশ্বাস আছে আমার তোমার উপর ৷ কিন্তু…

ইশিতা মাথা তুলে বললো,,,,,,,,

ইশিতা : কিন্তু কি?

ইশান : কিন্তু আমাকে আরো তিন বছর ওয়েট করতে হবে ৷ তিন বছর বুঝতে পারছো ইশিতা?

ইশিতা ইশানের বুকে একটা চিমটি দিয়ে বললো,,,,,,,,

ইশিতা : পাগল তুমি?

ইশান বুকে হাত দিয়ে শব্দ করে হেসে বললো,,,,,,,,

ইশান : এই পাগলির পাগল ৷

ইশিতা চুপ করে শুধু হাসলো ৷ ইশান ইশিতাকে খেপানোর জন্য বললো,,,,,,

ইশান : তো এই তিন বছর কি করা যায় বলো তো?

ইশিতা মুখ তুলে বললো,,,,,,

ইশিতা : কি করা যায় মানে?

ইশান : মানে তিন বছর বউ ছাড়া থাকবো কীভাবে আমি?

ইশিতা : মজা করছো আমার সাথে?

ইশান : নো আই এম সিরিয়াস ৷

ইশিতা : তো থাকো তুমি তোমার সিরিয়াস নিয়ে ৷

ইশান : আরে রেগে যাচ্ছো কেন?

ইশিতা : তো কি হাসবো? যাও বিয়ে করে বউ নিয়ে থাকো এই তিন বছর ৷

ইশান : একটাকেই সামলাতে পারি না আবার আরেকটা! (বিড়বিড় করে)

ইশিতা : কি বললে? তো যাও ৷ একদম আমার ধারে কাছেও আসবা না ৷

ইশিতা ইশানকে ছাড়িয়ে সামনের দিকে চলে যায় ৷ ইশান ওর পিছু পিছু যেতে যেতে বললো,,,,,,,,

ইশান : ইশুপাখি যাচ্ছো কোথায় আমায় ফেলে?

বলেই ওর হাত ধরে টেনে সামনে দাঁড় করালো ৷ ইশিতা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো ৷ ইশান ইশিতার মুখ ওর দিকে ঘুরিয়ে দেখে ওর চোখে পানি এসে পরেছে ৷ ইশিতাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,,,,,

ইশান : কাঁদছো কেন? আমি তো জাস্ট দেখছিলাম কি করো তুমি? তাই বলে কেঁদে দিতে হবে তোমার?

ইশিতা নাক টেনে টেনে কাঁদছে আর চুপ করে আছে ৷ ইশান আবার বললো,,,,,,,,

ইশান : বাচ্চাদের মতো কি নাক টেনে কাঁদছো বলো তো? তোমার এই বাচ্চামো স্বভাব গুলো যাবে না কোনো দিন?

ইশিতা : না আমাকে ভালো না লাগলে নাই ৷ অন্য কারো কাছে যাও ৷

ইশান : সেটার তো কোনো প্রশ্নই আসে না ৷ তবে তুমি বললে যেতে পারি আমি ৷

ইশিতা : কি বললে?

ইশান ইশিতার নাক টেনে দিয়ে বললো,,,,,,,,,,,

ইশান : বলেছি তুমি কান্না করলে তোমাকে অনেক হহহহহহ…

ইশিতা ইশানের মুখে হাত দিয়ে বললো,,,,,,,

ইশিতা : মুখ সামলে কথা বলো ৷

ইশান ইশিতার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,,,,,,,,,,

ইশান : তুমি সামলে নিও ৷

ইশিতা : তুমি না অনেক খারাপ ৷

ইশান : কিছু করার নেই ৷ সারাজীবন আমার খারাপ কাজ গুলোই সহ্য করে নিতে হবে ৷

ইশিতা হাসলো হালকা ৷ ইশান আবার বললো,,,,,,

ইশান : কি পারবে না?

ইশিতা কিছু না বলে ইশানকে জড়িয়ে ধরলো ৷ ইশান ওকে আগলে নিয়ে হালকা হেসে অস্ফূট স্বরে বললো,,,,,

“My Angry Bird❤”

____________________সমাপ্ত____________________

(জানিনা কেমন হয়েছে গল্পটা ৷ তবে ভালো ভাবে লেখার চেষ্টা করেছি ৷ কতটুকু পেরেছি সেটাও জানা নেই ৷ গল্পটার ইন্ডিং নিয়ে সবাই আমাকে অনেক কিছু বলেছেন ৷ তবে গল্পটা শুরু থেকেই হ্যাপি এন্ডিং- ই ভেবে রেখেছিলাম আমি ৷ কিন্তু আপনাদের কমেন্ট দেখে স্যাড দিতে খুব ইচ্ছা করছিল ৷ তবুও দেই নি ৷ দিলে না জানি আমার কি হতো!! যাইহোক যারা যারা প্রথম থেকে গল্পটা শেষ পর্যন্ত পরেছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ৷ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবার কাছে কেমন লেগেছে সবাই বলবেন প্লিজ ৷ সাইলেন্ট রিডার্সরাও সাড়া দিবেন প্লিজ ৷ সেটাই আশা করছি ৷ নতুন গল্প নিয়ে আবার ফিরে আসবো সবার মাঝে ৷ ততোদিন ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ৷ আলাহ হাফেজ♥)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here