প্রেমের রঙ পর্ব -০৯

#প্রেমের_রঙ
#পর্ব_০৯
#মোহনা_হক

‘ইজহানের এমন কার্যকলাপে পদ্ম লজ্জা পেলো। ইদানীং ইজহান তাকে বড্ড বেশি লজ্জা দেয়। পদ্মের মুখে লাল আভা ফুটে উঠেছে। সে এখন কি করবে? মন চায় মাটি খুঁড়ে গর্ত বানিয়ে সেটাতে ঢুকে যেতে। ছিহ্ তার এমন লাগছে কেনো। আর ইজহানকে দেখো সে একদম স্বাভাবিক ভাবেই আছে। যেনো কিছুই হয়নি। আর এইদিকে পদ্ম তো লজ্জায় শেষ। বেশি চিন্তা-ভাবনা না করে ইজহানকে জড়িয়ে ধরলো কারণ সেই বলেছে লজ্জা পেলে, কষ্ট হলে তার বক্ষে মাথা রাখতে। এখন একটু শান্তি লাগছে।’

(*)

‘দিন দিন ইজহান আর পদ্ম দু’জনের সম্পর্ক স্বাভাবিক ভাবেই এগুচ্ছে। তাদের মনে হয় প্রতিদিন খুনসুটি লেগেই থাকে। মুলত ইজহান পদ্মকে খুব রাগায় আর পদ্ম মুখটা ফোটকা মাছের মতো ফুলিয়ে রাখে বিষয়টা ইজহানের বেশ ভালো লাগে।আবার রাগ ও করে কিছুক্ষণ কথা বলে না পদ্মের এসব ছোট্ট ছোট্ট খুনসুটি তাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবেই চলছে তাদের চড়ুইভাতির মতো সংসার। ইজহান আজ পদ্ম কে মেধার কাছে দিয়ে সে হসপিটালের কাজে দূরে কোথাও গেলো। আবার আজই এসে পড়বে। পদ্ম এখন মেধার কাছে।মেধা পদ্মকে খুব ভালোবাসে ঠিক তার বোনের মতোই।’

‘মেধা পদ্মের মাথা নিজের কোলে রেখেছে। হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো-‘
“পড়াশোনা করবা না আর?”

‘পদ্ম মাথা তুলে মেধার দিকে তাকালো-‘
“করবো ওনি আমার মায়ের সাথে কথা বলেছে।”

“হ্যাঁ মেয়েদের পড়াশোনা করা উচিৎ। নিজের পায়ে দাঁড়ানো দরকার প্রতিটি নারীকে, তাদের পায়ের নিচের মাটিকে শক্ত করা দরকার।”

‘পদ্ম খুব মনোযোগ দিয়ে কথাটা শুনলো।’
“জ্বী আপু।”

“তোমাকে যে আমি আরও বলি ইজহানের সাথে স্বাভাবিক হও তার কি খবর?”

“সব তো ঠিকই আছে।”

‘মেধা বিশ্বাস করলো না কারণ মেধা একজন মেয়ে হয়ে পদ্ম তার সাথে কথা বলতো না ঠিকমতো, আর সেই জায়গা থেকে ইজহান তো একটা ছেলে।’
“শুনো পরে দেখবা তোমার জামাই কে অন্য কেউ নিয়ে গিয়েছে যে অবস্থা তোমাদের সম্পর্কের।”

‘পদ্মের বুকটা যেনো আঁতকে উঠল-‘
“মানে?”

“মানে মানে করো না বেশি। এখন তো ইজহান তার সব ধৈর্য তোমাকে দিয়ে রেখেছে শুধু একবার তোমার থেকে একটা ভালো,সুন্দর মেয়ে দেখুক, দেখবে তোমাকে আর ভালো লাগবে না। কারণ তুমি তো সেভাবে তাকে কোনো গুরুত্বও দাও না। ১৫ বছরের মেয়েদের কি বিয়ে হয়নি? তারা সংসার করেনি? শুধু একা তোমারই হয়েছে? আমারও তো বিয়ে হয়েছিলো তাড়াতাড়ি, আমি কি আমার বরের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখিনি? সে আমাকে পড়াশোনা করিয়েছে মুলত তার জন্যই আমি ডাক্তার হতে পেরেছি। তার সাথে কি আমার সম্পর্ক স্বাভাবিক দম্পতিদের মতো না? তাহলে তুমি কেনো পারছো না এসব বাদ দিয়ে সবকিছু ঠিক করো।”

‘মেধা পদ্মকে বোঝানোর জন্য ইজহানের নামে এগুলো বলেছে। ইজহান ভালোই ছেলে তবে পদ্মের এসব আচরণ কখনো একটা ছেলে সহ্য করবে না। মেধার কথা শুনে পদ্মের কেমন সব খালি খালি লাগছে, কথাগুলো সহ্য করতে পারছে না।’

“আপু সত্যিই কি ওনি অন্য মেয়ের দিকে তাকাবেন?”

‘মেধা যেনো খুশি হলো,পদ্মের মনের ভিতর এরকম একটা কথা ঢুকাতে পেরে।’
“হ্যাঁ তাকাবেই তো তাকানো উচিৎ, তুমি তো তাকে বর হিসেবে মানো না।”

‘মেধার কথা শুনে পদ্মের এবার কান্না চলে আসলো।’
“এভাবে বলছেন আপু?”

“শুনো তোমার এসব কান্না দিয়ে কিছুই হবে না। সব কিছু মেনে নাও দেখবে তুমিও ঠিক সেও ঠিক।”

‘পদ্ম মাথা নাড়ালো।’
“জ্বী আপু আমি চেষ্টা করবো।”

“আর কতো চেষ্টা করবে, তোমার বিরক্ত লাগে না এই কথা বারবার বলতে? তুমি বলবে যে আমার বরকে আমি কাউকে হতে দিবো না। যে আমার বরের দিকে তাকাবে তার চোখ উপড়ে দিবো। আর আমার বর যদি অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকায় তার চৌদ্দটা বাজিয়ে দিবো।”

‘পদ্ম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেধা এসব কি বলছে।’
” ঠিক আছে আপনি যা বলেছেন সেটাই হবে।”

“হু তুমি বসো আমি আসছি।”

‘মেধা গেলো পদ্মের জন্য আইসক্রিম আনতে এতোক্ষণ যতো কিছু বলেছে পদ্মকে, নিশ্চয়ই তার মনটা গরম হয়ে আছে মনে তো আর পানি দেওয়া যায় না তাই আইসক্রিম খেয়ে ঠান্ডা করুক মনটা কে। মেধা পদ্মকে আইসক্রিম দিয়ে বললো-‘
“নেও এটা খেয়ে মনটা কে ঠান্ডা করো।”

” আচ্ছা আপু এখন কি করা লাগবে?”

” কি করতে চাও তুমি?”

” আমাদের সম্পর্ক আশেপাশের দম্পতিদের মতো হবে কিভাবে?”

” আচ্ছা ইজহান তোমাকে চু’মু দেয়?”

‘মেধার কথায় পদ্ম লজ্জা পেলো। এই কথা উত্তর কিভাবে বলবে সে? এসব কথা না বললেও পারতো। আরও কতোকিছুই তো বলার আছে।’

” শুনো এতো লজ্জা পেলে হবে না যা জিগ্যেস করছি তা বলো।”

” হ্যাঁ মাঝে মাঝে।”

‘মেধা হঠাৎ হাতে তালি দিলো।’
” তোমাকে যদি একটা দেয় তুমি দু’টো দিবে। আবার তার জন্য শাড়ি পড়বে বলবে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যান, এটা সেটার আবদার করবে যেমন, ও হসপিটালে আসার সময় বলবে চকলেট নিয়ে আসবেন, ফুল, বই নিয়ে তারপর বাসায় আসবেন। আবার ধমকও দিবে যদি তোমার কথা না শুনে।’

‘পদ্ম নিজের মাথা স্থির করলো। মেধা যা যা বলেছে তাই করবে। মেধা তাকিয়ে আছে পদ্মের দিকে। পদ্ম আইসক্রিমের চামচ নাড়ছে।’
“আচ্ছা আমি আপনার কথা শুনবো।”

‘রাত ৮টায় পদ্মকে মেধায় বাসা থেকে নিয়ে এসেছে ইজহান। মেধা বলেছিলো পদ্ম আর ও আজ থাকতে তার বাসায় কিন্তু ইজহান পদ্মকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছে। ইজহান কথা বলছে বেডে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে। পদ্ম ইজহানের পাশে পাশে ঘুরঘুর করছে। কখন ইজহানের কথা শেষ হবে তার অপেক্ষায় সে অধীর আগ্রহে বসে আছে এমন অবস্থা। ইজহান কথা বলা শেষে পদ্মকে বললো তার পাশে বসতে। পদ্মও তাই করলো গুটিসুটি হয়ে ইজহানের পাশে বসেছে।’

“এতোক্ষণ কি করছিলে তুমি?”

‘ইজহান এমন ছোট ছোট চোখে প্রশ্ন করলে পদ্ম ভয় পায়।’
“কোথায় কিছু করছিলাম না তো।”

“তাই বুঝি?”

“হ্যাঁ। ”

‘ইজহান কিছু না বলে পদ্মের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। তার মনে হলো একটু মানসিক শান্তির দরকার তাই সে কাজটা করলো। পদ্মের কোলে মাথা রেখে ইজহান রাজ্যের চিন্তা করতে লাগলো।’

“একটু পর জামা-কাপড় গোছাবে।”

“কেনো?”

“কাল আমরা গেট টুগেদারে যাচ্ছি তোমাকেও সাথে নিবো।”

“আচ্ছা। কিন্তু আপনারা যাবেন কোথায়?”

“সাজেক। তুমি চিনো জায়গাটা, নাম শুনেছো।”

‘পদ্ম ঠোঁট কামড়ে ভাবলো সে তো এমন অদ্ভুত নাম কখনো শুনেনি। এটা আসলে কোথায়?’
“না তো এমন জায়গার নাম কখনো শুনিনি। কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত নাম সব আপনার কাছেই থাকে।”

‘ইজহান হাসলো বোকা মেয়ের বোকা-সোকা কথাবার্তা।’
“অনেক সুন্দর জায়গা তোমার গেলে আসতে মন চাইবে না।”

“দেখা যাবে কেমন সুন্দর জায়গা হুহ।”

‘ইজহান চোখ বুজে থাকলো কিছুক্ষণ, চোখ খুলে দেখলো পদ্ম নখ কামড়াচ্ছে। এই জিনিসটা প্রচন্ড বিরক্ত লাগে ইজহানের। নখে কতো ময়লা থাকে সে কি এটা জানে না! এতোই বাচ্চা সে।’

‘ইজহান পদ্মের হাতটা সরিয়ে দিলো মুখ থেকে।’
“নখ মুখে দাও কেনো? পরে তো পেটে ব্যাথা করবে। তুমি জানো না নখে ময়লা থাকে?

‘পদ্ম তার নখ গুলো ইজহান কে দেখালো।’
” দেখুন কোনো রকম ময়লা নেই।”

“দেখেছি তবে এগুলো মুখে দেওয়া ভালো না।”

“আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।”

“মাইর দিয়ে অভ্যাস ঠিক করাবো।”

‘ইজহান উঠে তার কিছু শার্ট, টি-শার্ট পদ্মকে দিয়ে গিয়েছে গোছাতে। আবার বলেও গিয়েছে পদ্ম যেনো তার জামা-কাপড় গুলোও গুছিয়ে নেয়। পদ্ম সেগুলো গুছিয়ে ট্রলিতে রাখছে। ইজহান সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে। পদ্মের কাজ শেষ হলে সে বারান্দায় যায়। মনটা একেবারে বিষাদে ছেয়ে গিয়েছে এমন মনে হচ্ছে তার। মন খারাপ হচ্ছে ভিষণ। কারও সাথে মন খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। এই ঢাকা শহরে একমাত্র মেধা ছাড়া আর কারও সাথে মন খুলে কথা বলতে পারেনি। মেধাই একমাত্র মানুষ যার সাথে মিশেছে, কথা বলেছে। আবার মেধার সকালের কথাগুলোও ভাবছে মনে মনে। তার মুলত এখন ভালোই লাগছে না। এই ইজহানের সাথেও বেশি কথা বলা যায়না কারণ তার বেশি কথা বলা পছন্দ না। হঠাৎ রুমে ইজহানের আগমন ঘটলো। রুমে পদ্ম নেই সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে গ্রিল ধরে। যেনো মনেহচ্ছে কেউ তাকে বন্দী করে রেখেছে। ইজহান সেখানেই গেলো।’

‘পদ্মকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ এটা হওয়াতে পদ্ম কেঁপে উঠলো। ইজহান তার দাড়িযুক্ত গাল পদ্মের গালের সাথে লাগালো। ইজহানের খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো যেনো পদ্মের গাল ইচ্ছে করে স্পর্শ করছে।’

‘ইজহান নরম কন্ঠে বললো-‘
“কি হয়েছে ম্যাডাম? মন খারাপ কি বেশি হয়েছে আপনার?”

‘পদ্ম পরপর কেঁপে উঠছে।’
“জ্বী।”

‘ইজহানের যে হাতটা পদ্মের হাতের উপর ছিলো পদ্ম আরেক হাত দিতে সেটা চেপে ধরলো।’
“কথা এমন শোনাচ্ছে কেনো পদ্মফুল?”

‘ইশশ পদ্মফুল,পদ্ম মুগ্ধ হয়ে আছে ইজহানের উপর।’

“আপনি এভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন কথা এমন শোনাবে না কেনো?”

‘ইজহানে এ কথাকে বেশি পাত্তা দিলো। কারণ সে জানে এই পদ্ম তাকে এটা বলবেই।’
“মন খারাপ?”

‘পদ্ম মাথা নাড়লো। ইজহান পদ্মের গালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বললো-‘
“তোমাকে একটা বাবু উপহার দিবো জলদি। তারপর আর মন খারাপ হবে না,সারাদিন তাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে, ঠিক আছে পদ্মফুল?”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here