প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব -১২+১৩

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:১২
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

হসপিটাল থেকে প্রণয় কে ডিসচার্জ করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে চারদিন পরেই।কিন্তু জান্নাত তারপর থেকে প্রণয়ের সাথে কথা বলছে না।কথা বলা তো দূরে থাক।চোখের সামনে ও আসছে না।পাচঁ দিন হয়ে গেলো প্রণয় জান্নাত কে দেখছে না।এতেই যেন তার হাসফাস শুরু হয়ে গেলো।

অভ্যাস রত আগে যেই সময় বেলকনিতে গিয়ে জান্নাতের সাথে কথা বলতো এখন সেই সময়ের দুই ঘন্টা আগেও গিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসে থাকে একবার জান্নাত কে চোখের দেখা দেখবে বলে।কিন্তু জান্নাত তার নজর মাড়ায় না।

একদিকে জান্নাত কে না দেখতে পাওয়া অন্যদিকে নির্বাচন প্রচারণার কাজ এবং ব্যবসা সব কিছু নিয়ে প্রণয় এর যেন এক ভীতিগ্রস্ত অবস্থা। জান্নাত তার সামনে আসছে না কেন?সে কি কোনো দোষ করেছে?খুঁজে পায় না প্রশ্নের উত্তর প্রণয়।

🌸🌸

বিছানায় বসে বিড়াল নিয়ে দু’ষ্টামি করছে জান্নাত। দুই দিন আগেই বিড়াল টাকে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলো।বিড়াল হচ্ছে আদর প্রিয়।এই যে দুই দিন আগে জান্নাত এনেছে তাকে।কিন্তু এমন ভাব হয়েছে জান্নাতের সাথে যেন জন্ম জন্মান্তর এর পরিচিত।

জান্নাত পার্শিয়া কে নিয়েই সময় কাটায়।বেলকনিতে যায় না।পাশের বেলকনির মানুষ টাকে সে ভুলতে চায়।অল্প কিছুদিন এর পরিচয়ে মানুষ টা যেন মাথায় গেঁথে গেছে।চাইলে ও ভুলতে পারছে না

—আপু প্রান্তিক ভাইয়া আর ইশি আপু এসেছে।

জুরাইন এর কথায় জান্নাত তাকায় তার দিকে।জুরাইন কে বলে,

—ওদের কে বল আমার রুমে আসতে।

—আচ্ছা।

বলেই জুরাইন ছুটে যায় নিচে।প্রান্তিক আর ইশি রাহেলার সাথে কথা বলছিলো ড্রয়িংরুমে।জুরাইন গিয়ে তাদের বলে জান্নাতের রুমে যেতে।

ইশি আর প্রান্তিক জান্নাতের রুমে আসে।দুই জনে রুমে গিয়ে দেখে জান্নাত পার্শিয়া কে কোলে নিয়ে বেলকনির দরজার সামনে ফ্লোরে বসে প্রণয়ের বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে অনিমেষনেত্রে। লোকটা কে আজকাল বড্ড বেশি মনে পড়ছে। সে ও তো আজ পাচঁ টা দিন লোকটা কে একটা নজর দেখেনি।কিন্তু বাস্তবতার কাছে যে তার হাত পা বাধাঁ।

—ভাইয়ার কথা যখন এতই মনে পড়ে তাহলে কথা বলিস না কেন ভাইয়ার সাথে?

কর্ণকুহরে কারো কথা পৌছাতেই জান্নাত আলগোছে সেই চোখের চিকচিক করা পানি টুকু মুছে নেয়।মুখ ফিরিয়ে তাকায় রুমের দরজার দিকে।ইশি আর প্রান্তিক দাঁড়িয়ে আছে।জান্নাত পার্শিয়া কে রেখে উঠা আসে।দুই জনের উদ্দেশ্যে বলে,

—আয়!বস।

জান্নাতের কথাকে পাত্তা না দিয়ে ইশি এবার বলে উঠে,

—কিরে প্রান্তিক কি জিজ্ঞেস করেছে বলছিস না কেন?তোর হঠাৎ হলো কি?প্রণয় ভাইয়ার সাথে কথা বলছিস না উনাকে দেখা দিচ্ছিস না কেন?

—উনার সাথে কথা বলা টি কি আমার জন্য বাধ্যতা মূলক ছিলো নাকি?

জান্নাতের এহেন প্রশ্নে চুপ করে যায় ইশি প্রান্তিক দুইজনে। এই কথার বিপরীতে যে কিছুই বলার নেই তাদের।কিন্তু এভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না।এক জায়গা থেকে প্রণয় কষ্ট পাচ্ছে অন্য জায়গা থেকে জান্নাত কষ্ট পাচ্ছে। যতই দুই জনে নিজেদের কষ্ট গুলো লুকানোর চেষ্টা করুক না কেন.তবুও সেটা ইশি আর প্রান্তিক এর চোখ এড়িয়ে যেতে পারেনি। যা করতে হবে তাদের- ই করতে হবে এবার।

🌸🌸

পার্টি অফিসে বসে কাজ করছে প্রণয়। নির্বাচন এর আর বেশি দিন বাকি নেই।মাঝে দিয়ে হসপিটালে থাকায় প্রচারণার সব কাজ জমে রয়েছে।বাহিরের কাজ গুলো তো রিফাত,সজীব,সুজন সামলিয়েছে।

প্রণয়ের থেকে কিছুটা দূরেই একটা চেয়ারে আফজাল সাহেব বসে আছে।মূলত তিনি প্রণয় দের হেড।নির্বাচন ভিত্তিক আলোচনা বা কাজ প্রণয় কে সাজেস্ট করেন তিনি।প্রণয় কে খুবই ভালো বাসেন তিনি।প্রণয় নিজ কাজে ব্যস্ত। তিনি ও কাজে ব্যস্ত। হুট করেই নিরবতার উপসংহার ঘটিয়ে আফজাল সাহেব প্রণয় কে বলে,

—কাজ কতটুকু হয়েছে প্রণয়?

—এই তো স্যার। এখনো আছে বাকি।

—এগুলো নাহয় পরে এসে করিও রাত বারোটা বাজে। বাড়ি চলে যাও।

প্রণয় ঘড়ির দিকে তাকায় একবার। রাত বারোটা পনেরো বাজে।প্রণয় আফজাল সাহেব এর উদ্দেশ্যে স্বগতোক্তি করে বলে,

—স্যার আমি কাজ ফেলে রাখতে চাই না।নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকি নেই।প্রচারণার কাজ গুলো এখনো পুরোপুরিভাবে শেষ হয়নি।তাই কাজ শেষ হলেই যাবো।

—আচ্ছা। তা প্রচারণার ব্যানার বা মাইকিং করবে কি?

—নাহ স্যার। আমি কোনো প্রকার শব্দ দূষণ বা পরিবেশ দূষিত হোক চাই না।ভাগ্যে থাকলে ইনশাল্লাহ জিতে যাবো মানুষের ভালোবাসায়।নিজের মতো চেষ্টা করে যায়।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

—আচ্ছা।দোয়া রইলো তোমার জন্য।

রাত দুই টায় প্রণয় সব কাজ শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য পার্টি অফিস থেকে বের হয়।গাড়ির কাছে যেতেই দেখে রিফাত,সজীব,সুজন দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রণয় ভ্রুকুঞ্চন করে তাকায় তাদের দিকে।অবাক নেত্র এর পলক পালায় পর পর। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

—তোরা এখনো বাড়ি যাসনি কেন?আমি না বলছি বাড়ি ফিরে যেতে তোদের।

প্রণয়ের কথায় তিন জনে এক গাল হাসি।দেয়।সজীব বলে,

—প্রণয় ভাই সারাদিন কাজ করে এই ক্লান্ত শরীর নিয়ে আপনি আবার ড্রাইভ করে বাসায় যাবেন? তা আমরা মেনে নিই কিভাবে?

—তাছাড়া আপনি এখানে নির্বাচন এর কাজ নিয়ে কষ্ট করবেন।আর আমরা বাড়িতে গিয়ে ঘুমাবো?

রিফাতের কথার পরেই সুজন বলে উঠে,

—আপনি যতক্ষণ পার্টি অফিসে থাকবেন। আমরা ও থাকবো আপনার সাথে।কোনো হের ফের হবে না কথার।

এদের তিন জনের কথায় প্রণয় হেসে দেয়।তিন জনের উদ্দেশ্যে এই স্বগতোক্তি করে বলে,

—বিয়ের রাতে ও কি আমার জন্য এভাবে বসে থাকবি নাকি বউয়ের কাছে যাবি?

প্রণয়ের কথায় তিন জনের হাসি থেমে মুখটা চুপসে যায়।প্রণয় ভাই তাদের লজ্জা দিলো?প্রণয় তিন জনের মুখের দিকে তাকিয়েই হেসে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।প্রণয়ের সাথে গিয়ে রিফাত বসে সজীব ড্রাইভিং সিটে।সুজন তার পাশের সিটে বসে।কথা বার্তায় তিন জনে গন্তব্যে পৌছে।

🌸🌸

রাত তিনটা পাচঁ বাজে।প্রণয় বেলকনিতে বসে মস্ত বড় আকাশ টার দিকে তাকিয়ে আছে।যেন নিরবে আল্লাহর কাছে তার হাজার কথা জানিয়ে দিচ্ছে।আকাশে তারার মেলা।কিন্তু চাঁদ নেই।আকাশে যেমন চাঁদ নেই।ঠিক তেমনি পাশের বেলকনিতে থাকা মানুষ টা ও নেই।আজ ছয় দিন হয়ে গেলো মানুষ টিকে চোখের দেখা দেখতে পাচ্ছে না প্রণয়।

প্রণয় ভাবতে থাকে।কেন জান্নাত তার সাথে এই লুকোচু’রি খেলা খেলছে?তার রাজনীতি এর জন্য?জান্নাত রাজনীতি অপছন্দ করে নাকি রাজনীতি বিদ দের?জানা নেই কিছু জানা নেই তার

প্রণয় আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পাশের বেলকনির দিকে তাকায়।তপ্ত নিশ্বাস ফেলে।উদাস গলায় সুধায়,

—‘‘আপনি আমার মন টাকে বড্ড বেশি পু’ড়াচ্ছেন জানেমান। বেশি পু’ড়িয়ে গেলে যে আপনার নামটা ও এই মন থেকে পু’ড়ে যাবে,সরে যাবে,ভুলে যাবে।দয়া করে আর পু’ড়াবেন না।আপনার নাম টা যে আমি মন থেকে পু’ড়তে,সরে যেতে দিতে চাইনা ‘‘জানেমান ’’।”

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:১৩
#ফাতেমা_জান্নাত(লেখনীতে)

জান্নাত,ইশি,প্রান্তিক তিনজনে ভার্সিটি থেকে মাত্র বের হয়েছে।বাসার পথেই হাটছে তিন জনে।কিছুদূর গেলেই ইশি আলাদা হয়ে যাবে অন্য রাস্তায়। গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ রোদে যাচ্ছে তাই অবস্থা। ভ্যাপসা গরমে পুরো শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। ভার্সিটির থেকে অল্প কিছু দূর রাস্তা পাচঁ মিনিটের পথে একটা রেস্টুরেন্ট আছে।প্রান্তিক রেস্টুরেন্ট এর সামনে এসেই জান্নাত আর ইশি কে উদ্দেশ্য করে বলে,

—দোস্ত গরমে পুরো সিদ্ধ হয়ে গেছি।চল লাচ্ছি খেয়ে আসি ঠান্ডা ঠান্ডা।

—যাবো। তবে বিল তুই দিতে হবে।আমি আবার গরীব শরীব মানুষ।

ইশির কথায় প্রান্তিক ভ্রু কুচকে তাকায়।নাক মুখ কুঁচকে ফেলে।যেন পৃথিবীর সব থেকে বিশ্রী কথা বলেছে ইশি।প্রান্তিক বলে,

—তুই তো কিপ্টাই।এক টাকার চকলেট কিনে খাওয়াতে বললেও তুই দোকান দার কে জিজ্ঞেস করছ ” মামা আট আনার চকলেট আছে?”ভাগ্যিস আমি উদার দার মানুষ। নাহলে আল্লাহ জানে ভবিষ্যৎ এ যে তোর কি হতো?

প্রান্তিক এর কথা শেষ হতেই জান্নাত বলে উঠে,

—তা প্রান্তিক, ইশির ভবিষ্যৎ এর সাথে তোর কি সম্পর্ক?একটু বুঝিয়ে বলতো।

প্রান্তিক থতমত খেয়ে যায় জান্নাতের কথায়।আমতা আমতা করে বলে,

—ওই সব তুই বুঝবি না।বুঝার বয়স তোর এখনো হয় নাই চুপ থাক।

জান্নাত এবার তেঁতে উঠে কি পেয়েছি কি সবাই তাকে।সবাই বলে তার এখনো বুঝার বয়স হয় নাই।তা কত বছরে বুঝার বয়স হবে
জান্নাত রুঢ় ভাবে বলে,

—একদম এই কথা বলবি না।অস’ভ্য পোলা।সবাই পাইচত কি আমারে।তোর ভাই কে ও কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে আমার এখনো বুঝার বয়স হয় নাই।দশ বছরের জুরাইন ও বলে আমার এখনো বুঝার বয়স হয় নাই।সবাই প্রেম সম্পর্কে সব জান্তা।আমি জিজ্ঞেস করলেই বলবে আমার বুঝার বয়স হয় নাই।

জান্নাতের কথা শুনে ইশি,প্রান্তিক মুখ চেপে হাসে।ইশি হাসি থামিয়ে বলে,

—তা প্রণয় ভাইয়া কে কি জিজ্ঞেস করেছিস? আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন? এটাই কি জিজ্ঞেস করেছিস নাকি আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে?এটা জিজ্ঞেস করেছিস।

—ব্যদ্দপ মাইয়া।কথা কবি না তুই আমার সাথে।তোরা দুই টাই বন্ধু নামের শত্রু যা।তোদের থেকে ও আমার পার্শিয়া অনেক ভালো।

বলেই জান্নাত চেতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।ইশি আর প্রান্তিক পিছনে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে।ভেজায় চটে গেছে জান্নাতি। প্রান্তিক পিছন থেকে কয়েকবার চেঁচিয়ে বলছে,

—এই জান্নাতি দাড়াঁ। ভাইয়া করে ফোন করি।বলি তুই ভাইয়ার নামে আমাদের কাছে বদনাম করেছিস।

জান্নাত দাঁড়ায় যায়।প্রান্তিক কথা শুনে। জান্নাত ঘুরে দাঁড়ায় প্রান্তিক এর দিকে।কাঠ কাঠ গলায় বলে উঠে,

—তুই যদি তোর ভাইরে কিছু কইচত তোর হাত ভাঙ্গি দিবো আমি।সব দাঁত থাবড়া দিয়ে পালাই আমার পার্শিয়া খেলতে দিবো। অস’ভ্য পোলা।

বলেই জান্নাত রেস্টুরেন্ট এ না গিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরে।এই দুপুর সময়ে খুব কম সংখ্যক গাড়ি পাওয়া যায়।পাওয়া যায় ন। বললেই চলে।

জান্নাত রা’গে গজগজ করতে করতে যাচ্ছিলো। পিছনে ইশি আর প্রান্তিক ও আসছে হেটে। সামনের মোড় থেকেই ইশি গাড়ি নিয়েই তার বাসার পথে যাবে।হঠাৎ জান্নাতের সামনে একটা গাড়ি থামতেই জান্নাত পা চালানো থামিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।গাড়ি টার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আ হে।কোন বেআক্কেল এভাবে গাড়ি থামিয়েছে।একবার গাড়ি থেকে বের হোক আক্কেল শিখায় দিবো।এমনি পণ করে রেখেছে জান্নাত।

গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে রাফসান মির্জা।জান্নাতের দিকে তাকিয়েই বত্রিশ টা দাঁত দেখিয়ে হেসে দেয়।জান্নাতের সামনে এসে দাঁড়ায়।জান্নাতের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয় আবার।জান্নাত কে বলে উঠে,

—তোমার নাম জান্নাত আজমী তাই না?

জান্নাত অ’বাক হয়।সে তো এই লোকটা কে নিজের নাম বলেনি। তাহলে জানলো কি ভাবে?জান্নাত কে ভাবতে দেখে রাফসান মির্জা হেসে উঠে বলে,

—কি ভাবছো?আমি তোমার নাম কি ভাবে জানতে পেরেছি?আরে এসব তো আমার বা হাতের ব্যাপার।

জান্নাত শান্ত স্বরে মুচকি হেসে বলে,

—মানুষ বা হাত কখন কাজে লাগায় জানেন? ডান হাত অকেজো হয়ে গেলে বা হাত কাজে লাগায়।আপনার ক্ষেত্রে ও ঠিক তাই।ডান হাত তো থেকে ও নেই বোধ হয় আপনার।তাই তো বা হাতের খেল সব আপনার।

আজকের অপমানে রাফসান মির্জা ক্ষুব্ধ হলেও।তা জান্নাতের সামনে প্রকাশ করেনি।তাই আবার বলে উঠে,

—বাই দ্যা ওয়ে তোমার বাবা আগে রাজনীতি করতো তাই না?জুনায়েদ আজমী। আমাদের প্রতিনিধি ছিলো। বিপক্ষ পার্টি।

—ও আচ্ছা।তা রাজনীতি তে প্রতিনিধি দল হিসেবে প্রতিবার দাঁড়ান। তো মানুষের কত টুকু সাহায্য করেন।নির্বাচন এর সময় তো পারলে গরীব দের মুখে ভাত তুলে দেন নিজ হাতে।কিন্তু নির্বাচন শেষ হলেই সেই গরীব মানুষ গুলো এক পয়সার জন্য আপনাদের সামনে দাঁড়ালে তাদের লা’থি উপহার হিসেবে দেন।মানুষ মা’রতে দ্বিধা বোধ করেন না।আপনারা সব গুলো রাজনীতি বিদ – ই এক।

—আরে তুমি রে…

জান্নাত রাফসান আজমী কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে থামিয়ে দেয়।আবারো শান্ত কণ্ঠে বলে,

—লোক মুখে শুনেছি কু’কুরের লেজ বারো বছর চুঙ্গায় ভরে রাখলে ও সোজা হয় না।আপনাকে দেখে সেটার প্রমাণ পেলাম।

কু’কুরের সাথে নিজেকে তুলনা করায় রাফসান মির্জা চটে যায়।রে’গে উঠে বলে,

—কি বুঝাতে চাইছো তুমি?

—এই টাই বুঝাতে চাইছি যে,আমি বার বার বারণ করার পর ও আপনি আমাকে ‘তুমি ‘ সম্বোধন করছেন। যার রাইট আপনাকে আমি দিই নাই।সত্যিই কু’কুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।

প্রান্তিক রিক্সা নিয়ে আসতেই জান্নাত রিক্সায় উঠে যায়।রাফসান মির্জা প্রান্তিক কে খেয়াল করেনি।ইশি কে ও প্রান্তিক রিক্সায় করে তার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।

🌸🌸

বিকেল চারটা বাজে।জান্নাত আসরের নামাজ পড়ে বসে মোবাইল ঘাটছে।হঠাৎ ফোন আসলে জান্নাত দেখে ইশি ফোন করেছে ফোনটা তুলে কানে নিতেই ইশি বলে,

—জানু শুন!

—হুম বল।

—এক্ষুনি প্রান্তিক এর বাসায় চলে আয়।

—কেন?

—আমি প্রান্তিক এর বাসায়।তাড়াতাড়ি আয়।তিনজনে মিলে আড্ডা দিবো কিছুক্ষণ।

—কিন্তু…

—কোনো কিন্তু না।তাড়াতাড়ি আয়।

—আগে বল,প্রান্তিক এর ভাই বাসায় আছে?

—নাহ।ভাইয়া নাকি রাতের বারোটা বাজবে আসতে আসতে।নির্বাচন তো সামনে।

—ওহ।কোন জায়গায় বসে কাকে মা’রতাছে।যা গিয়ে দেখ।

—চুপ করবি তুই?কয়বার বলছি সব রাজনীতি বিদ এক না।প্রণয় ভাইয়া যথেষ্ট ভালো।

—তোকে বলেছে আমার কাছে তার সুনাম গাওয়ার জন্য?

—তোর সাথে কথা বলা টাই ভুল।তাড়াতাড়ি আয় এই বাসায়।

—ঠিক আছে।

জান্নাত ফোন কে’টে মাথায় ওড়না চাপিয়ে নিচে চলে যায়।আহ্লাদী বসে বসে সিরিয়াল দেখছে। জুরাইন খেলতে গেছে।জুনায়েদ আজমী অফিসে। রাহেলা রান্না ঘরে কিছু একটা করছে

জান্নাত রাহেলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।রাহেলা মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে বলে,

—কিছু বলবি?

—মা আমি একটু প্রান্তিক এর বাসা থেকে আসছি।ইশি ও আসছে ওই বাসায়।

—ঠিক আছে।তাহলে এক মিনিট দাড়াঁ। আমিও যাবো একটু। রোকসানার সাথে কথা আছে আর এই পিঠা গুলো নিয়ে যাবো।

একটা বক্সে রাহেলা পিঠা সাজিয়ে নিয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই রাহেলা আহ্লাদী কে দরজা আটকাতে বলে বেরিয়ে যায় শাহরিয়ার পাবেল এর বাসার উদ্দেশ্যে। জান্নাত আর রাহেলা বাসার গেইট পার হয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখে কালো পোশাক পরিহিত কত গুলো বলিয়ান পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে।সবার হাতেই একটা একটা গু’লি। হয়তো গার্ড এরা।

প্রণয়ের বাসার কলিং বেল দিতেই প্রান্তিক এসে দরজা খুলে দেয়।রোকসানা বেগম আর রাহেলা বসে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে।ইশি আর জান্নাত প্রান্তিক এর রুমে চলে গিয়েছে।
তিন জনে বসেই কথা বলছে।

নিচ থেকে রোকসানা ঢাকতেই জান্নাত নিচে চলে যায়।ইশি দৌড়ে গিয়ে দরজা পাশে দাঁড়ায়।প্রান্তিক প্রণয় কে ফোন দেয়।দুই বার ফোন দিয়েছে কিন্তু প্রণয় ফোন তুলেনি।তৃতীয় বারের সময় প্রণয় ফোন ধরে উৎকণ্ঠিত ভাবে বলে,

—হ্যাঁ প্রান্তিক বল।পার্টি অফিসে আছি।

—ভাইয়া, জান্নাত..

এত টুকু বলেই প্রান্তিক ফোন কেটে দেয়।ইশি,প্রান্তিক দুই জনে হাসতে থাকে।

অন্যদিকে প্রান্তিক এর এমন অর্ধেক কথা বলে ফোন কে’টে দেওয়াতে প্রণয়ের অন্তর আত্না কেপেঁ উঠে যেন।কি হয়েছে জান্নাতের? জান্নাত বলে ফোন কে’টে দিলো কেন প্রান্তিক?

প্রণয় দ্রুত পার্টি অফিস থেকে বের হয়ে নিজে ড্রাইভ করে জান্নাতের বাসার দিকে যায়।এই প্রথম জান্নাতের বাসায় আসা তার।জান্নাতের বাসার কলিং বেল বাজাতেই আহ্লাদী এসে দরজা খুলে দেয়।প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

—খালাম্মা বাসায় নাই প্রণয় ভাই!

প্রণয় পাঞ্জাবীর হাতা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বলে,

—জান্নাত আছে?ওর কি হয়েছে?

প্রণয়ের কথায় আহ্লাদী অ’বাক হয়।আপামণির আবার কি হইবো। আহ্লাদী বলে,

—আপামণি আর খালাম্মা তো আপনাগো বাসায় গেছে ভাই।

—আচ্ছা।

বলেই প্রণয় আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে নিজের বাসার দিকে যায়।সারা শরীর ঘেমে চুপচুপে হয়ে গেছে তার।শুভ্র পাঞ্জাবী টা অ শরীর এর সাথে ঘামে চিপকে গেছে।চোখের রিমলেস চশমার আড়ালে ঘামের ফোটা।কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।মনের ভিতরে অজানা ভ’য়।এক সপ্তাহ মেয়ে টাকে দেখে না।কি হয়েছে।আল্লাহ জানে।আল্লাহ যাতে ঠিক রাখে।

প্রণয় দরজার কলিং বেল দিতেই জান্নাত এসে দরজা খুলে।রোকসানা আর রাহেলা রান্না ঘরে।প্রান্তিক, ইশি উপরে থাকায় জান্নাত এসেছে দরজা খুলতে। কিন্তু দরজা খুলে যে এই মানুষ টা কে সে ভাবেনি।ইশি তো বলেছে মিঃ ভালোবাসা রাত বারো টায় আসবে।তবে এত তাড়াতাড়ি আসলো যে?

দীর্ঘ সাত দিন পর জান্নাত কে চোখের সামনে সুস্থ অবস্থায় দেখে কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত প্রণয় সেটা ভুলে গেছে।ইচ্ছে করছে এক সেকেন্ড এর জন্য হলেও জান্নাত কে জড়িয়ে ধরতে।জিজ্ঞেস করতে তার কি ভুল ছিলো যে তাকে দেখা দেয় না জান্নাত। কিন্তু নিজেকে সংযত করেছে প্রণয় আর যাই হোক বিয়ের আগে এসব করা যাবে না।

—কে এসেছে জান্নাত মা??

রোকসানার কথায় জান্নাত সম্বিৎ ফিরে আসে।ড্রয়িংরুম এর দিকে রাহেলা আর রোকসানা আসতে আসতেই রোকসানা কথা টা বলেছে।

জান্নাত দরজা থেকে সরে প্রণয় কে ভিতরে ঢুকতে জায়গা করে দেয়।রোকসানার উদ্দেশ্যে বলে,

—মিঃ প্রণয় এসেছে আন্টি।

রোকসানা রান্না ঘর থেকে লেবুর শরবত এনে প্রণয় এর হাতে দেয়।প্রণয় জান্নাতের দিকে তাকিয়ে শরবতের গ্লাস নিয়ে সোফায় বসে জান্নাতের কথায় রাহেলা তেঁতে উঠে বলে,

—বে’য়াদব মেয়ে।প্রণয় তোর বড় না?ভাইয়া বলে ডাকতে পারিস না?ভাইয়া বলে ডাকবি।

রাহেলার কথায় প্রণয়ের গলায় শরবত আটকে কাশতে শুরু হয়ে গেছে।জান্নাত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।উপর থেকে প্রান্তিক আর ইশি সব দাঁড়িয়ে দেখে কপাল চাপড়াচ্ছে।শেষে কিনা ভাইয়া বানিয়ে দিলো? তাদের এত কষ্টের প্ল্যান জান্নাত আর প্রণয় কএ একসাথ করার।প্রান্তিক ইশির কাঁধে হাত রেখে বলে,

—বুঝলি শিশি এত কষ্টের ফল দেখার পরে বলতে ইচ্ছে করে,

‘‘ভোরে ঢাকে কাক,
আমি তো অবাক’’!..

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

[ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেক করেনি]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here