#প্রেম__প্রিয়জন🌸
#Writer_Sumaiya_Karim
~নবম পর্ব~
পরি কে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি তে নিয়ে আসে তার জেঠা। পরি বার বার না করেছিলো সে আসবে না কিন্তু উনি শুনলেন না। অজানা এক ভয়ে বুক দুরুদুরু করছে পরি। নিরা ও কি করবে ভেবে পেলো না। বাড়ি টা আসার পর পর সব ক্লিয়ার হয়ে যেতে থাকলো। জেঠি পরি কে দেখে মুখ চওড়া করে এমটা ভূবন ভুলানো হাসি দিলেন। তাদের দুজনার দিকেই এগিয়ে আসলেন উনি।
–‘পরি মা তুই এসেছিস?’
–‘হ্যাঁ কিন্তু আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসা হয়েছে জানতে পারি জেঠি? জেঠা কে সেই তখন থেকে জিঙ্গেস করছি কিন্তু উনি আমাকে কিছুই বলছেন না!’
–‘থাক না ওসব কথা তুই আমার সাথে আয়!’
হঠাৎ করে জল্লাদ মহিলা এতো ভালো আচরণ করছেন মোটেও ঠিক লাগলো না পরির। সে বললো,
–‘না আমি ভেতরে যাবো না। আগে আমাকে বলুন আমাকে কেন এখানে নিয়ে আসা হয়েছে?’
–‘জেদ করিস না মা। তোর তো আর কেউ ই নেই তাই না আমরা ই তো তোর আপনজন প্রিয়জন।’
–‘মানে?’
–‘কিছু বুঝলি না তো। ভেতরে চল পরে বুঝিয়ে বলবো!’
পরি ভেতরে যায়। বাড়ি তে মনে হচ্ছে উনারা ছাড়া নাই কিন্তু সেটা পরি বুঝতে পারলো না। সে গিয়ে জেঠির কথামতো ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। ক্ষুধা পেয়েছিলো সত্যি ই! জেঠি তার দিকে এগিয়ে আসে!
–‘খেয়ে নে মা!’
জেঠি মা সযত্নে খাবার এনে টেবিলে সাজিয়ে দেন।
–‘কি হয়েছে খা!’
পরি তার জেঠির দিকে গাড়ো করে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করলো কিন্তু বুঝতে পারলো না।
–‘কেন এমন করছেন জেঠি?’
তিনি ন্যাকা কান্না শুরু করলেন কেননা জেঠি এবার পরির সন্দেহ করায় এটাই একটা উপায় পেলেন পরি কে বিশ্বাস করাতে যে এসব সত্যি! কোনো নাটক নয়! পরি চুপচাপ খেতে বসে। মনে মনে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে খাবারে কিছু নাই তো? জেঠির হাতের পায়েশ টা পরির বরাবর ই খুব পছন্দ তাই সে আয়েশ করেই খেলো। কারণ আগে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করা জরুরি পরের এসব নিয়ে ভাবা যাবে!
–‘তাহলে এবার তুই উপরে যা বিশ্রাম নে পরি!’
–‘আচ্ছা!’
পরি নিজের রুমে গিয়ে এবার চিন্তার ঝুলি খুলে বসলো। ঘরের এপাশ ওপাশ পায়চারী করতে লাগলো কি হচ্ছে এসব ভাবতে লাগলো! চোখ টা হঠাৎ ই লেগে আসায় পরি বিছানায় শুয়ে পড়ে। আর ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়।
তার ঘুম ভাঙ্গে বিকালে। রুম টায় মৌ মৌ করছে সুস্বাদু খাবারের গন্ধে। পরি উঠে দাঁড়িয়ে যায়। মাথা টা ঘুরে উঠলো। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে নিচে আসে। রান্নাঘরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখে তার জেঠি আর দুজন মহিলা হরেক রকম রান্নাবান্না করছে! ব্যাপার টা মাথায় ঢুকলো না একটু ও! কি হচ্ছে কি ওসব? পরি কে দেখে জেঠি হেসে তার দিকে এগিয়ে আসে।
–‘কিরে তোর ঘুম কেমন হলো?’
–‘আমি ঘুমিয়ে পড়লাম কিভাবে?’
–‘কতদূর থেকে এসেছিস ক্লান্ত ছিলি তো তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলি!’
–‘ওহ কিন্তু জেঠি বাড়িতে কি হচ্ছে এসব? কোনো অনুষ্ঠান আছে?’
–‘হ্যাঁ রে কিছু মেহমান আসবে পূর্ণ তাদের ইনভাইট করেছে!’
–‘ওহ! আমি কি তোমাদের সাহায্য করবো?’
–‘না না আমরা পারবো তুই বিশ্রাম কর!’
–‘কিন্তু..!’
–‘কোন কিন্তু নয় যা বলছি!’
–‘আচ্ছা!’
পরি বোকার মতো তা বিশ্বাস করে নেয়। অথচ সে ঘুনাক্ষরেও ভাবে নি যে পুষ্পা বা পূর্ণ কেউ ই এই বাড়ি তে নেই।
সন্ধ্যা হতেই তোড়জোড় ও বেড়ে যায়। জেঠি পরির রুমে এগিয়ে যান। হাতে সুন্দর লাল রঙের জামদানী শাড়ি। এই শাড়ি তে পরি কে মানাবে ভালো! পরি জেঠির হাতের শাড়ি দেখে অবাক!
–‘এসব কি জেঠি? শাড়ি কেন?’
–‘এটা পড়ে সুন্দর করে রেডি হয়ে নে!’
–‘মানে কি এসবের? আজ আবার আমাকে দেখতে আসছে তাই না? তার মানে তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছিলে তখন যে পূর্ণ ভাইয়ের অফিসের রিলেটিভ রা আসবে!’
–‘ঠিক ধরেছিস। এখন কোনো কথা না বলে চুপচাপ রেডি হয়ে নে।’
পরি হালকা চিৎকার দিয়ে বলে,
–‘না….. আমি এখন বিয়ে চাই না!’
–‘সোনা মা আমার জোড়াজুড়ি করো না তাহলে কাহিনী টা ভালো দেখাবে না। তাই যা বলছি করো!’ [ঠোঁটে সয়তানি হাসি তে ভরপুর]
–‘আমি এক্ষুনি চলে যাবো হোস্টেলে!’
বলেই পরি যেই না রুম থেকে বের হতে নিবে জেঠি তার হাত টেনে ধরে পেছন থেকে।
–‘শোন মেয়ে কথা বাড়াস না। বাড়াবাড়ি ভালো হবে না!’
–‘তোমরা আমার মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দিতে পারো না আমাকে!’
ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেন জেঠি। রাগ তার মাথায় উঠেছে। দাঁতে দাঁত কটমট করে বললেন,
–‘আসার পর থেকে অনেক আদর যত্ন করেছি। ভালো কথা তোর হজম হয় না তাই না? আবারো বলছি চুপটি করে লক্ষী মেয়ের মতো রেডি হয়ে নে! নাহলে একদম মেরে কবর দিয়ে দিবো। কেউ জানতেও পারবে না! চিনিস না এখনো তুই আমাকে!’
হনহনিয়ে চলে যান তিনি। পরির পা দুটো আসাঢ় হয়ে গেলো। গালে হাত দিয়ে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সেদিকে।
জেদ করে সেও রেডি না হয়ে ভাবতে থাকে কি করা যায় এখন! দরজা খোলার চেষ্টা করে কিন্তু দরজা তো খোলে না। ওপাশ থেকে বন্ধ। আধঘন্টা পর খট করে দরজা খোলার শব্দ হয়। পরি সে দিকে তাকালো না!
–‘এখনো রেডি হসনি তুই হ্যাঁ?’
চেঁচিয়ে কথা টা বললেন তিনি। ভয়ে কুঁকড়ে উঠে পরি। জোড় করেই জেঠি তাকে রেডি করায়। না করলে চড় তো ফ্রি তে আছেই। পরি হঠাৎ ই রাগ করে চিৎকার দিয়ে বলে,
–‘আমি বলছি তো আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত না। কেন শুনো না তোমরা আমার কথা? কেন এমন করছো আমার সাথে? আমি কি মানুষ না?’
জেঠি আচমকা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে পরির গলা চেপে ধরে। পরির চোখ বড় বড় হয়ে যায়। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে পরির। ভীষণ কষ্ট! এই বুঝি প্রাণ পাখি টা উড়ে গেলো!
(চলবে)