প্রেয়সী
১২|
সময় নিয়ে কল ধরলাম। তার মন তো আবার পাথরের। একদম শক্ত। দেখা যাবে আমাকেই কথা শোনাচ্ছেন। সুমনার দোষ দেখবেন না। উল্টো আমাকে আরও কষ্ট দিয়ে, কল কেটে রফাদফা হবেন।
ভাঙ্গা কন্ঠে বললাম,
‘ হ্যালো? ‘
‘ খেয়েছিস? ‘
‘ উঁহু। ‘
‘ কেন? এতটুকু কারণে এভাবে ঘর আটকে, না খেয়ে থাকতে হবে কেন? ‘
‘ এতটুকু কারণ? ‘
বলতে বলতে আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম। সে ধমক দিলেন,
‘ সামনে থাকলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিতাম।
ও কে? ওর কথায় কাঁদতে হবে কেন? ‘
‘ সকলের সামনে বলেছে কলেজের। আমি নাকি বাজে। ছ..ছেলেদের সাথে মেলামেশা করি। অনেকের সাথে ফ..ফিজিক্যাল করেছি। ‘
কথা শেষ করতেই পারছিলাম। কি জঘন্য ল্যাংগুয়েজ। এইসব কথা কি কাউকে বলা যায়? ভাববে যে সত্যি হয়তো মেয়েটা এমন। তন্ময় ভাই রেগে, তা তার কন্ঠে স্পষ্ট। এবার তো আমি তীব্র শব্দ পেলাম ওপাশে। কান থেকে ফোন সরালাম। কিছুক্ষণের পর তার কন্ঠ,
‘ কি খাবি? বিরিয়ানি? ‘
‘ এতো রাত্রে? ‘
‘ আলি আসবে দিতে। সর্বপ্রথম খেয়ে নিবি। ‘
‘ হু। ‘
সে কল কেটে দিলেন। এই শেষ তার কথা। একটু সুন্দর ভাবে কথা বলতেও জানেন না। রসিকতা নেই মনে একদম। মানুষটা এমন কেন?
কলেজ থেকে ফিরে, কাপড়ও পরিবর্তন করিনি। গোসল খাওয়া দাওয়া তো দূরের বিষয়। দ্রুত গোসলে ঢুকলাম। গোসল শেষে চুল শোঁকালাম। পরপরই কলিং বেল বাজছে। আমি দ্রুত নিচে নামলাম। দরজা খুলে দেখলাম দারোয়ান নানা। সে হেসে বললেন,
‘ মোল্লা হোটেল থেকা আইছে৷ কইলো তন্ময় বাবা পাঠাইতে
কইছে। ‘
‘ হ্যাঁ। ধন্যবাদ নানা৷ ‘
‘ আইচ্ছা। ‘
দরজা আটকে রুমে দৌঁড় লাগালাম। মোল্লা হোটেল পরে আমাদের কলেজে যাবার রাস্তায়৷ সাধারণত তাদের হোটেল মিডনাইট পর্যন্ত ওপেন থাকে। সেদিন রেস্টুরেন্ট হতে, ফেরবার পথে দেখেছিলাম তখনও ওপেন ছিলো । আর তন্ময় ভাই তো সবাইকে চেনেন। তার তো এ জীবনে কোনো সমস্যা হবার কথাই না।
আগে খেলাম। খিদে পেয়েছে প্রচন্ড। সারাদিন খাওয়া হয়নি। উফ।
ভাগ্যিস তার সাথে কথা হয়েছে। নাহলে না খেয়েই ঘুমাতে হতো।
ভাবতেই হাসি পেল। সে খুবই অদ্ভুত।
ঘুম আসছে না। বিরক্ত লাগছে। ছাঁদে যেতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা। কি করা যায়? তন্ময় ভাইকে ম্যাসেজ দেওয়া যায়, তাই না? তাকে তো জিজ্ঞেস করা হলো না, সে খেয়েছে কীনা? বা কি করছে? কিছুক্ষণ ভেবে টেক্সট করলাম।
‘ খেয়েছেন? ‘
তার টেক্সটস আসলো না। বরং কিছুক্ষণ পর কল করলেন। অদ্ভুত স্বরে বললেন,
‘ খাওয়া হয়েছে? ‘
‘ হু। আপনি খেয়েছেন। ‘
সে থেমে থেমে জবাব দিলেন। যেমন ভাবছেন,
‘ না৷ ‘
‘ কেন? কেন খাননি? ‘
‘ এভাবেই। ‘
‘ কি হয়েছে? এভাবে কথা বলছেন কেন? ‘
তার কথা থেমে থেমে আসছে৷ একটু বলে, থেমে যাচ্ছেন।
সে এবার খুব ধীরে প্রশ্ন করলেন,
‘ কিভাবে অরু? ‘
হার্টবিট দীর্ঘ সময়ের জন্য স্তব্দ হয়ে গেলো যেন। সে সদা আমার নাম ডাকেন না। মাসে একবার হবে এমন। সে নিশ্চয়ই ড্রাংক। খেয়েছেন। সেদিন জন্মদিন থেকে ফেরবার পথেও, এভাবে কথা বলছিলেন।
‘ আপনি হাবিজাবি গুলো আবার খেয়েছেন? ‘
‘ তো? তোকে খাব? ‘
আমার ফেইস গরম হয়ে উঠছে। সে কখনও এভাবে কথা বললেনি। হঠাৎ এধরনের ব্যবহার আমার ঠিক হজম হচ্ছেনা। পেট মুচড়ে আসছে। কি হয়েছে তার?
‘ খেতে দিবি তোকে? ‘
লজ্জায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে আছি। এগুলো খেলে নাকি মানুষের মাথা ঠিক থাকে না, তা শুধু শুনেছিলাম। আজ তা সরাসরি শুনছি৷ সে সত্যি আর হুঁশে নেই। মাথা ঠিক নেই তার। থাকলে নিশ্চয়ই এগুলো বলতেন না।
‘ তুই তো দিবিনা। তুই পারিস, আমার থেকে ভাগতে। কাছেই আসতে চাস না। ‘
মনে হচ্ছে, আমার সামনে এক নতুন তন্ময় ভাই। যাকে আমি আগে কখনও এভাবে দেখিনি। আচ্ছা, সে কী সারাজীবন এমন মাতাল থাকতে পারবে? সে এমনই থাকুক। দুষ্টু থাকুক। গোমড়ামুখো থাকার প্রয়োজন নেই।
এখন ভয়ংকর এক ইচ্ছে জাগছে। সেটা হচ্ছে তাকে দেখার। এই মুহুর্তে তাকে কেমন দেখতে লাগবে? নিশ্চয়ই অদ্ভুত সুন্দর? খুবই কিউট ? সে তো এভাবেই মারাত্মক দেখতে। এখন নিশ্চয়ই কাউকে পাগল করার মতো, দেখতে লাগছেন৷
এই মুহুর্তে তাকে দেখতে চাই। খুব করে চাই।
সে ডাকলেন,
‘ অরু? ‘
মুখ দিয়ে যেন, আনমনে চলছে ,
‘ হু? ‘
‘ আমাকে কেমন লাগে তোর? ভালো লাগে? ‘
বুকে তীব্র স্রোত বইছে। এই স্রোত থামবে বলে মনে হয়না।
কি বলব? আমার তো তাকে ভালো লাগে? না মানে। কেমন লাগে? আহ। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ধুকপুক বেড়ে চলেছে ক্রমাগত। সে কি আমাকে আজ মারার প্ল্যান করেছে?
‘ অবশ্যই আমাকে তোর ভালো লাগে৷ লাগবেনা কেন? না লাগলেও লাগাতে হবে। এই পৃথিবীতে তোর জন্য শুধু আমি। তাই না? হ্যাঁ। ‘
আর কিছুক্ষন হলে আমি মারা যাব। দ্রুত বললাম,
‘ আপনি কোথায়? ‘
‘ রুমে। ‘
‘ ঘুমিয়ে পড়ুন। গুড নাইট। ‘
সে মিনমিনিয়ে ডাকলেন,
‘ অরু। ‘
‘ জ..জ্বি। ‘
তার জবাব নেই৷ নেই কোনো আওয়াজ। শুধু তার শ্বাস নেওয়ার শব্দ। সে কি ঘুমিয়ে পড়েছেন? আমি ডাকলাম,
‘ হ্যালো? ‘
কথা নেই। ঘুমিয়ে পড়েছেন হয়তো। ফোন বুকে চেপে বসে রইলাম৷ তীব্র শ্বাস নেওয়ার প্রচেষ্টার মাঝে, ঠোঁটে আমার বড় হাসি। মন এখনও শান্ত হয়নি, খুবই আওয়াজ করছে। বালিশে মুখ গুঁজে ফেললাম।
‘ সে আমাকে সত্যি পছন্দ করেন। আমাকে নিয়ে ভাবেন। তন্ময় ভাই এই বোকা অরুকে পছন্দ করেন। আমাকে পছন্দ করেন। ‘
ভাবতেই বুকের স্রোত দ্বিগুণ বেগে বইছে।
ভোরবেলা বড় মা’র ডাকে ঘুম ভাঙলো। চারপাশে চোখ বোলালাম।
বড় মা তাড়া লাগালেন,
‘ যা মুখ ধুয়ে আয়। তোর পছন্দের বড় চিংড়ি রান্না করেছি। নিজে হাতে খাইয়ে দিব। ‘
আমি দ্রুত ফ্রেস হলাম। চিংড়ি আর বড় মা’র হাত। একদমই মিস দেওয়া যাবেনা৷ বড় মা খাওয়াতে বসে পড়লেন। আসলেই তার রাঁধার কোনো জবাব নেই। খুবই সুন্দর রাঁধতে জানেন সে৷
‘ দারুণ হয়েছে? ‘
‘ তাই? সব দারুণ লাগে? ‘
‘ তুমি মানুষটাই দারুণ। ‘
‘ হয়েছে রসিকতা। তাড়াতাড়ি শেষ কর। কাজে আছে বহুত।’
খাওয়া শেষ হতেই, বড় মা আমার মাথা ছুঁয়ে দিলেন। মিষ্টি কন্ঠে বললেন,
‘ মন খারাপ করবিনা। হু? সুমনা যা বলেছে, তা তো আর সত্যি হয়ে যাচ্ছেনা। তুই আমাদের মেয়ে। আমরা জানি আমাদের মেয়ে কেমন।
ঠিকাছে? ‘,
আমি হাসলাম,
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ লক্ষি একদম। যাচ্ছি আমি। ‘
বড় মা চলে গেলেন। আমি দ্রুত ফোন ধরলাম কাল রাত্রের সব তাহলে সত্যি। ভালোলাগায় শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। অনেক সকাল। এখনও নিশ্চয়ই তন্ময় ভাই ঘুমিয়ে। সে’তো আটটার আগে উঠবেন না৷ একদম সময় মতো বিছানা ছাড়বেন।
দীপ্ত এসেছে। হাতে ড্রয়িং বুক।
‘ আজ এমন পিকচার আর্ট করেছি, তুমি দেখলে, এখান থেকে লাফ মেরে বুড়িগঙ্গায় চলে যাবে। ‘
এহ? এটা কোনো কথা? আমি বললাম,
‘ তাই নাকি? দেখি। ‘
ও বাঁকা হাসলো। আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখালো। সাথে সাথে আমার চেহরা লালে পরিবর্তন হয়ে গেলো । এই ফাজিল ছেলে।
ও সেই রেস্টুরেন্টের ছবিটি এঁকেছে। যেটা তন্ময় ভাইয়ের লকস্ক্রিনে৷
‘ দীপ্তর বাচ্চা। এটা আমাকে দে। ‘
‘ উঁহু। সবাইকে দেখাব৷ ‘
‘ ভালো হচ্ছেনা কিন্তু। ‘
ভেঙিয়ে ছবিটা নিয়ে নিচে চলে যাচ্ছে। ও যদি সত্যিই দেখায় কি হবে? ছেলেটা তো আস্ত অবাস্তবিক।
প্রেয়সী
১৩|
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিবেচনা করে, এবার একটা টেক্সট তন্ময় ভাই’কে সেন্ড করেই ফেললাম। রাত্রে ড্রাংক ছিলেন। সে ঠিকাছে কিনা। চিন্তা হচ্ছে খুব। অবশ্য সাথে তার বন্ধুরা আছেন। একেকজন একেকজনের জন্য, জান-প্রান দিয়ে দেন। তারপরও। আমিতো আমিই। কিছু মাথায় গাঁথলে সেটা দ্রুত বের করা অসম্ভব। অতিরিক্ত বাড়তি স্ট্রেস নিয়ে ফেলি। যেটা কখনও হবেনা, সেটা নিয়েও ভাবতে বসে পড়ি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তার জবাব নেই। সে কী ব্যস্ত? হয়তো। নাহলে নিশ্চয়ই জবাব দিতেন। ভাবতে ভাবতে নিচে নামলাম। টিভি দেখতে মাত্র বসেছিলাম। তখনই বাড়ির কলিং বেল বাজছে। দীপ্ত লাফিয়ে গেইট খুলতে গেলো। বড় মামা, বড় মামী, ছোট মামী আর সুমনা এসেছে।
আমি সোফায় শক্ত হয়ে বসে। বড় নিশ্বাস ফেলে উঠলাম। মামা মাথায় হাত রাখলেন,
‘ কী অবস্থা আম্মার? ‘
‘ ভালো। বসো। ‘
বড় মামীও কথা বললেন। ছোট মামীর সাথে হালকা কথা বলে উপরে চলে এলাম। ওই মেয়ের মুখও দেখতাম না। জঘন্য কালসাপিনী।
পরপরই মা আসলেন,
‘ এগুলো কেমন অভদ্রতা অরু? দেখলি ভাই ভাবীরা এসেছেন। তুই কীভাবে ধপধপ পায়ে চলে এলি? ‘
‘ তো কি করব? তাদের মাঝে, ‘
কথা শেষ হয়নি। তখনই কালসাপিনী হাজির।
‘ ফুপি অরু হয়ে যাচ্ছে, একদম ডিপ্রেসড। কোনো কথা পুরো শুনবেই না। ‘
রাগে আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে। কতটা বেহায়া এই মেয়ে। মা ইশারা করলেন আমাকে চুপ থাকতে।
আমি পারলাম না। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
‘ আই ডু নোট ওয়ান্ট টু হেয়ার এনিথিং ফ্রম দ্যাট মাউথ অফ ইওর’স সুমনা। আমি বাজে ব্যবহার করার আগে, গেইট আউট ফ্রম মাই রুম প্লিজ। ‘
সুমনা অবাক কন্ঠে মা’কে উদ্দেশ্য করলো,
‘ দেখলে ফুপি। ‘
‘ মা এটাকে বেরোতে বলো। ‘
এবার ও নিজেই শব্দ করে বেরিয়ে গেলো। মা আওয়াজ তুললেন,
‘ কি ধরনের বেয়াদবি অরু? কি হচ্ছে এগুলো? ‘
‘ কি হচ্ছে মানে? ভাইয়ের মেয়ে, ভাই কি ভাববে তা নিয়ে চিন্তা শুধু? আর আমি? তোমার মেয়ে? কলেজের সকলের সামনে আমাকে উজাড় করে দাঁড় করিয়েছে। সকলের কাছে বলে বেরিয়েছে, আমি রাস্তার মেয়ে। ছেলে ধরে টাকা খাই। ছেলেদের সাথে রুমড্যাটে যাই। এগুলো শোনার পর, তুমি এই মেয়েকে বাড়িতে কিভাবে ঢুক-তে দাও? তাও আমার রুমে? ‘
‘ ছোট মানুষ বলে ফেলেছে। সেটার জন্য মাফ চাইতে এসেছে তো।
আর ও তো বলছে, এমন কিছুই নাকি বলেনি। ‘
‘ ও বলেনি? আমি কোথার থেকে শুনলাম? তুমি তোমার ভাই, ভাইয়ের মেয়ে ছাড়া কিচ্ছু দেখছ না। তুমি সবসময় এমন করো। সবসময়। কয়েকদিন পর দেখা যাবে, তোমার ভাইয়ের পরিবারের জন্য, আমাকে জবাই দিয়ে.. ‘
কথা শেষ না হতেই মা গালে থাপ্পড় মারলেন। আমি হতভম্ব হয়ে তার দিক চেয়ে। সে এর আগেও হাত তুলেছেন। ওই মেয়ের জন্য। তার ভাইয়ের মেয়ের জন্য। চোখের জল যেন নিজ স্বেচ্ছায় গড়িয়ে পরছে। আমি মাথা দোলালাম,
‘ হু। থাকো ভাই আর ভাইয়ের মেয়ে নিয়ে। ‘
বলতে দেরি আমার রুম থেকে বেরোতে দেরি হয়নি। মা পেছন হতে ডাকছেন। শুনলাম না। ভাই আর ভাইয়ের মেয়ে। দোষ করলেও সদা আমাকে বোঝাতে আসবে। আমাকে ভুল প্রমানিত করবে। ব্যস। দ্রুত গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। পেছন থেকে বড় চাচ্চু, বড় মা চেঁচিয়ে পিছু আসছেন। তাদের থেকে আমার চলার বেগ দ্রুত। মেইনগেইটে দারোয়ান নানা প্রশ্ন করছেন,
‘ কই যাবা মহামুনি? ‘
আমি মিথ্যে বললাম,
‘ নোটস আনতে। গেইট খোলো। ‘
সে খুলতেই চলে এলাম। পেছন থেকে বড় চাচ্চু চেঁচামেচি করছেন। গেইট না খোলার জন্য।
থাকব না এই বাড়িতে । থাকুক সে তার ভাইয়ের মেয়ে নিয়ে। এক সস্তা মেয়ে। সদা অপমান করে উল্টা বুঝিয়ে দিবে। সবাই তাই বুঝবে। আমিও তো ওর কথাই বিশ্বাস করতাম। এখন যখন চোখের সামনে সব ক্লিয়ার, ওর কথা শোনার প্রশ্নই আসেনা।
হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এসেছি। অনেকদূর হলেও এলাকার ভেতর। এলাকার বাহিরে যাবার সাহস আমার নেই। আজকাল যা অবস্থা পৃথিবীর । তারপরও ভয় হচ্ছে। আপাতত মানুষ রয়েছে। রাতের আঁধার নামলে কি হবে? কই যাব? বাড়িতে একদমই ফিরতে চাইনা।
ঠান্ডা বাতাস বইছে। বিকেলের আবহাওয়ায় আকাশ চমৎকার। চারপাশে ঘুরাঘুরির পর সেই চেনা পার্কটি পেলাম। আমি আবার রাস্তা ভুলাক্কার। মনে থাকেনা রাস্তাঘাট। চারপাশে চোখ বোলালাম। গাছের নিবিড় পরিচর্যায় আশপাশ আকর্ষণীয়। এই এরিয়ায় একটাই পার্ক। মারাত্মক সুন্দর এবং বড়। সবসময় মোটামুটি মানুষ থাকে। বাচ্চা, বুড়ো, প্রেমিক-প্রেমিকা। সবরকম মানুষ দেখা যায়।
আলাদা ভাবে, এক পাশের ব্যাঞ্চে বসলাম। চোখ দুটো আবারও ভিজে আসছে। বাড়ি থেকে রেগে বেরোনো আমার এই প্রথম। আগে রেগে শুধু দরজা আটকে ছিলাম। বাড়ি ছাড়াটা বড্ড নতুন। কি থেকে কি করব, বুঝতেই পারছিনা। হঠাৎ মনে পড়লো তন্ময় ভাইয়ের কথা। নিশ্চয়ই সে খবর পেয়েছে। এখন আমাকে পেলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবেন। প্রচন্ড রাগবেন। বাবাও হয়তো খুবই রেগে আছেন। রাগুক। যা ইচ্ছে করুক। তাও আর যাবো না ওই বাড়ি। সে থাকুক তার ভাই, ভাইয়ের মেয়ে নিয়ে।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। ঝলমলে আকাশে আঁধার ছেয়ে যাচ্ছে৷ পার্কের মানুষজনও এক-এক করে নেই৷ শুধু কয়েক জোড়া দেখা যাচ্ছে।
উহ। কি হবে আমার? ভয়ে শরীর কাঁপছে। কোথায় যাবো? রাত গভীর হলে কি করব? মারজির বাসায় যাবো? কিন্তু ওর আম্মু, নির্ঘাত বাড়িতে ফোন করে দিবে। আর কারও? বাকি রিলেটিভ’স গুলো সব দূরে দূরে৷ সেখানে যাবার জন্য প্রয়োজন টাকা৷ আর আমার কাছে চার আনাও নেই৷
ঘুমে চোখ বুঝে যাচ্ছে৷ একটু দাঁড়ালাম । তারপর আবারও বসলাম।
হঠাৎ কোথা হতে, এহসান এসে দাঁড়ালো। অবাক স্বরে বলল,
‘ তুই এখানে কি করছিস? ‘
ভয়ে ভয়ে আশপাশে নজর দিলাম। আবার তন্ময় ভাইকে সাথে নিয়ে এসেছে নাকি। না নেই। আমি অসহায় চোখে ওর দিক তাকালাম,
‘ বাড়ি থেকে চলে এসেছি। আর যাবো না। ‘।
এহসান শব্দ করে হাসছে। মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
‘ যাবিনা? তন্ময় ভাই তোর হাত-পা ভেঙে ফেলবে। ‘
আবারও ভয়ে জড়সড়ভাব চলে এলো। এই কুলাঙ্গার ছেলে।
‘ জালিম। অমানুষিক কথাবার্তা বলিস না। তুই কি করিস
এখানে? ‘
ও হাফ ছাড়া ভাবে, পাশে বসলো। কিছুটা দূরে থাকা এক জোড়া’দের ইশারা করলো,
‘ আমার বন্ধু। আর তার গার্লফ্রেন্ড। পাহারাদারী করছিলাম। মারজি একটু আগে তোদের বাড়ি গেলো। ‘
‘ কেন? ‘
‘ সকালে তোর জন্য খারাপ লেগেছে। তাই একটু আগে ড্রাইভার নিয়ে বেরিয়েছে। বাড়িতে আমাকে আর মা’কে শান্তি একদমই দেয়নি। একটু পরপর তোর ওই নাগিনী বোনের চমৎকার আইডেন্টিটি প্রকাশ করছিল। ‘
সুমনা? নামটাও তেতো মনে হচ্ছে। অস্বাভাবিক মেয়ে। কি দিয়ে তৈরি মেয়েটা? আমার বাড়িতে গিয়ে শাসন চালাচ্ছে। একদিন পেয়ে নেই। এমন শিক্ষা দিবোনা।
‘ চল দিয়ে আসি তোকে। ‘
চেঁচালাম,
‘একদমই না। ইম্পসিবল।
‘ রাত গভীর হচ্ছে। কতক্ষন থাকবি? ‘
চিন্তিত স্বরে বললাম,
‘ জানিনা। তাও বাড়ি যাচ্ছি না। ‘
এহসান অনেকক্ষণ যাবত আমার সাথে কথা বলছে ।
ছেলেটা মারাত্মক ভালো। মারজির পাঁচ মিনিটের বড় ভাই। হ্যাঁ, দুজন টুইনস। যেকোনো পরিস্থিতিতে দুজনের চেহারা, অদলবদল করা যাবে।
ওদের আচার-আচরণ ও অনেকটা একই। কথা বলার ধরন আর গালের টোল টাও দুজনের সেইম। শুধু তফাত ছেলে আর মেয়ে।
ও টুপ আওয়াজ করলো,
‘ আমাদের বাড়িতে তো যেতে সমস্যা নেই, তাই না? ‘
উশখুশ করছে মন। এদের ভরসা নেই। কিন্তু রাস্তা ও তো নেই। রাত গভীর হচ্ছে। কই যাব আর?
ডিসিশন নিলাম এহসানের সাথে যাবো। ভয়ে আঁকুপাঁকু মন নিয়ে যাচ্ছি ওদের বাড়ির দিক। মন আনচান করছে। কেমন সায় দিচ্ছে না যাবার জন্য। দূর থেকে চেনা একজনের ছায়া দেখতে পেয়েই, আমার আত্মা লাফিয়ে উঠলো। বড়সড় চোখ করে এহসানের দিক তাকালাম। ও হাত উঁচু করলো,
‘ তন্ময় ভাই ফোন করেছিলেন। বললেন আমাদের বাড়ির আশেপাশে দেখতে। তো তোকে পেয়ে গেলাম। ‘
‘ জাহিলের বাচ্চা। ‘
তন্ময় ভাই এদিকে আসছেন। লাইটের আলোয় তার ফরসা চেহারা লাল হয়ে আছে। বাঁচার সম্ভাবনা নাই একদম।
চলবে
® নাবিলা ইষ্ক
চলবে
® নাবিলা ইষ্ক।
প্রতিদিন দিচ্ছি। সে হিসেবে ছোট তো হবেই।