প্রেয়সী পর্ব ১০+১১

প্রেয়সী

১০|
কপালটা শেষ। এতো তাড়াহুড়ো করতে কে বলেছে আমাকে? গাড়িতে দ্রুত বসতে গিয়ে, কপালটা শেষ করে দিলাম। কি যন্ত্রণা।
চিনচিন ব্যথায় অচেতন হবার জোগাড়। কখন না আবার তন্ময় ভাই ধমকে দেন। সেই ভয়ে কপাল ও ঘষছি না। চুপচাপ বসে। অবশ্য, ব্যথাটা এক পর্যায়ে কমেছে। সেই তীব্র চিনচিন ব্যথাটা আর নেই। আঁড়চোখে তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকালাম। সে ড্রাইভিং করতে মনোযোগী। সোজা তাকিয়ে আছে। নেই তার কোনো নড়চড়। নেই কোনো শব্দ। মনে হচ্ছে আমি একা একটি গাড়িতে বসে। আমার পাশে যে একজন ব্যক্তি রয়েছে, তা বোঝার প্রশ্ন-ই আসছে না।
থাক। তার মুখ না খোলা’টা শ্রেয়। সে মুখ খুললে শুধু কথা শোনান। ভালো কিছু তো আদৌ বলেননা। তার ফোন বেজে উঠছে। সে কী শ্রবণশক্তির ক্ষতিগ্রস্ত? শোনেন না তার ফোন বাজছে? এভাবেই মানুষদের হয়রানি করেন বুঝি? হঠাৎ সে তার বাজতে থাকা সেলফোন আমার দিক এগিয়ে দিলেন,
-‘ কল রিসিভ কর। ‘
-‘ আমি? ‘
সে জবাব দিচ্ছেন না। এর আবার কী সমস্যা হচ্ছে। আমাকে হেনোস্তা না করলে কী দিন কাটে না?
-‘ আপনার কল আমি রিসিভ করব? ‘
তার চোখের চাহনি দেখে ফোন নিলাম হাতে। কলার আইডির নাম সেইভ করা না। তারমানে আননোওন? রিসিভ করলাম। এক মেয়েলী কন্ঠ। সালাম জানালাম,
-‘ আসসালামু আলাইকুম। ‘
ওপাশ থেক জবাব,
-‘ হু আর ইউ? ‘
মেয়ের ধমক শুনে বড়সড় চোখ করে, তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকালাম। সে গাড়ি ড্রাইভিংএ ব্যস্ত। কি কথা বলব? কি বলব?
-‘ আমি? তন্ময় ভাইয়ের ব..’
বোন বলতে গিয়ে থেমে গেলাম। তন্ময় ভাই গাড়ি থামিয়ে দিয়েছেন। তারপর সিটে হাত দ্বারা ভর দিয়ে, আমার দিক ফিরলেন। এবার কথা বলার ক্ষমতা জিরো পার্সেন্ট আমার। সে শান্ত স্বরে বললেন,
-‘ ডিস্টার্ব করে৷ টক টু হার লাইক ইউ আর মাই ফিয়ান্সে। ‘
মাথাটা সম্পুর্ন খালি হয়ে গেলো। বুকের তীব্র ধুকপুক, হয়তো সেও শুনতে পাচ্ছে। কি বললেন? তার ফিয়ান্সে? ফিয়ান্সে হয়ে কথা বলতাম? গলাটা শুঁকিয়ে আসছে। পানি আপাতত খুবই জরুরি ভুমিকা পালন করছে। ফোনের মেয়েটা চেঁচাচ্ছে। এই মেয়েকে তো আমি এক মিনিটে রফাদফা করে দিতাম। যদি তন্ময় ভাই না থাকতেন। কিন্তু, তার সামনে শব্দই বের হচ্ছে না। গলা আঁটকে আছে। সাহস সঞ্চয় করলাম,
-‘ আপনি কে? ‘
-‘ সেটা তোমার ব্যাপার না। তন্ময় কোথায়? ‘
-‘ রাতবিরেত ছেলেদের ডিস্টার্ব করা হচ্ছে? ঘরে ভাই নেই? ‘
-‘ হু দ্য হ্যাল আর ইউ বিচ? আর ইউ ফাকিং ইনসেন? ‘
চোখ বড়সড় করে ভাইয়ের দিক তাকালাম। কি বিয়াদপ মেয়ে। একে তো। রাগে আমার মাথাটা ধরে আসছে। গালি আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ দেয়নি। আর এই মেয়ের সাহস কি করে হয়? আমি ফোন নিয়ে জানালার দিক মুখ করলাম।
আজকে তো একে আমি।
-‘ বেশরম, লজ্জাহীন মেয়ে। আমি তন্ম..’
গলা পরিষ্কার করে নিলাম। ভয় আর রাগে মিশ্রিত আমার কন্ঠ অদ্ভুত।
-‘ আমি তন্ময়ের ফিয়ান্সে। তার দিক নজর দিলে, চোখের এন্ট্যানা টেনে তুলে ফেলব। আরেকদিন যদি দেখি তাকে ডিস্টার্ব করা হচ্ছে।
যেথায় থাকবেন সেখানে গিয়ে চোখ আর মুখ তুলে নিয়ে আসবো। আবর্জনা। ‘
কল কেটে আমি বড় শ্বাস ফেললাম এমন ঝগড়া আমি কখনও করিনি। ক্লাসে করেছি, সেগুলো টুকটাক। এমন রেগে ঝগড়া তাও যাকে চিনি না তার সাথে। ব্যাপারটা একদম প্রথম এবং নতুন।
ধীরে সোজা হয়ে বসলাম। ফোনে লকস্ক্রিন ভেসে। বুকের সাথে আমারও হাত ও কাঁপছে। দ্রুত ফোন তার সাইডে রেখে দিলাম,
-‘ গা..গালি দিচ্ছিলো। তাই আরকি। ‘
সে হাসছেন। শব্দ করে হাসছেন। আমি আঁড়চোখে তাকিয়ে আর চোখই ফেরাতে পারলাম। হয়তো সে এইজন্যই কম হাসেন। সে হাসলে আশপাশের কেউ তার হতে, চোখ ফেরাতে অক্ষম হয়ে যাবেন। হাসতে হাসতে হঠাৎ আমার মুখ ধরলেন।
দু’হাতে গাল চেপে তার ঠোঁট কপালে ছোঁয়ালেন। শ্বাস আঁটকে আমি শক্ত হয়ে বসে৷ বুকের ধুকপুক তীব্র হচ্ছে। শরীর কাঁপছে। সে বললেন,
-‘ ঠিকাছে। ঘুমা। ‘
আমার মাথা ঢেলে তার কাঁধে শুইয়ে দিলেন। আর সে আবারও গাড়িতে মনোযোগী হলেন। এই অনুভূতি? অনুভূতি শরীরে ক্রমাগত স্রোত চালাচ্ছে। ভেতরের সবকিছু তীব্র কাজ করছে।
তার শরীরের চেনা পারফিউম। ঘ্রাণ শুঁকতেই মাথা আওলে আসছে। মাতাল মনে হচ্ছে নিজেকে। চোখ বুঝে আসছে অনুভূতি’তে। এক অদ্ভুত অনুভূতি। লাগাতার শ্বাস নিতে হচ্ছে আমাকে। তার কাঁধ হতে উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আবার তার কাঁধে শ্বাস নিতে পারছিনা। দোটানায় আমি, শ্বাসকষ্টে মারা যেতে প্রস্তুত। তাও উঠতে রাজি নই।
চোখ বুঝে আসছে। শরীর ছেড়ে দিচ্ছে। তার এই মাতাল করা ঘ্রাণ। তার কাঁধ।

সকালের তীব্র রৌদ্রজ্বলে ঘুম ভাঙলো। জানালা দ্বারা ঝলমলে রোদ প্রবেশ করছে কামরায়। মাথাটা ধরে উঠে বসলাম। ধীরে ধীরে সব মনে আসতে লাগলো। আমি লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়লাম। এখানে কীভাবে? গাড়িতে না ছিলাম? কখন ফিরলাম বাড়ি? ঘরে পৌঁছালাম কিভাবে? এখনও রাত্রের পোশাকে রয়েছি। মেক-আপ রিমুভ করা। চুল ঝুটি করা। বিছানায় ধ্রম করে বসে পড়লাম। মাথা ধরছে। গোসল নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব ছেড়ে আগে গোসল নিলাম। তৈরি হয়ে আগে রুবি আপুর কামরায় দৌঁড় লাগালাম। সে নিশ্চয়ই জানবে হয়েছে কি। রুবি আপু কথা বলছেন। আমায় দেখে ঢুকতে ইশারা করলেন। বিছানায় বসে দ্রুত ফোন রাখতে বললাম তাকে। কিছুক্ষণের মাঝে ফোন কাটলেন,
-‘ হয়েছে কী? ‘
-‘ আমরা বাড়ি কখন পৌঁছেছি? আমি ঘরে কিভাবে পৌঁছালাম। ‘
রুবি আপু দুষ্টু হাসলেন। গাল টেনে বললেন,
-‘ কোলে চড়ে। ‘
চোখ বড়সড় হয়ে গেলো,
-‘ কার? ‘
-‘ তন্ময়ের। তুই তো ওর শার্ট দু’হাতে ধরে রেখেছিলি। ছাড়ছিলিই না। বিছানায় রাখবে যখন তখনও ধরে রেখেছিলি। তন্ময় তো ধীরে ধীরে ছাড়িয়েছে৷ তোর চুলও বেঁধে দিয়েছে। মেক-আপ ও তুলে দিতেছিল যাতে অস্বস্তি না হয় তোর৷ ‘
আমি শুধু শুনছি। বিশ্বাস করতে আর মাথায় গাঁথতে সময় লাগলো। রুবি আপু আবারও বললেন,
-‘ তুই কতটা ভাগ্যবান, তা বুঝতেই পারছিস না। তন্ময় তোকে অনেক ভালবাসে। অনেক। তোর কল্পনার বাহিরে। ‘
ভালবাসেন আমাকে? তন্ময় ভাই আমাকে ভালবাসেন?যাকে সবাই চায়, সে আমাকে চান? আমার মন কেমন অস্বস্তিতে।
-‘ হয়েছে। চাপ নিস না। আজ তো সকলের স্কুল, কলেজ বাতিল গেলো। চাচ্চু ছুটির জন্য ফোন করে বলে দিয়েছেন। তাই কোনো চিন্তা নেই। আরাম আর আরাম। ‘
ব্রেকফাস্ট করতে বসে আমি আশপাশে তাকাতে ব্যস্ত।
তন্ময় ভাই আসেনি এখনও। দীপ্ত এসে আমার পাশে বসলো। শুরু হলো ওর কথা,-‘ তোমাকে তো বেঁচে দিলেও, তোমার খবর পাওয়া যাবেনা। এভাবে মরার মতো কিভাবে ঘুমাতে পারলে? ‘
ছোট চাচী হাসতে লাগলেন। খাবার প্লেটে দিচ্ছেন আর বলছেন,
-‘ আমাদের অরু হচ্ছে, ঘুমের রাজকন্যা। ঘুমালে পৃথিবীর খবর আর ওর থাকেনা।’
দীপ্ত বলছে,
-‘ এতো গভীর ঘুমে, কি স্বপ্ন দেখা হলো? আমাদের ও বলো। ‘
আমি ধমক দিতে নিয়েও থেমে গেলাম। তন্ময় ভাই এসেছেন। সে রবিন ভাইয়ের পাশে বসলেন। আমার দিক তাকাতেই আমি নিচে তাকালাম। মা প্রশ্ন করলেন,
-‘ সুমনা কি এখনও ঘুমোচ্ছে? ‘
রুবি আপুর জবাব,
-‘ হ্যাঁ। ‘
খেতে খেতে সকলেই কথা বলছে। শুধু তন্ময় ভাই চুপ। মাথা নিচু হয়ে খাচ্ছেন। আজ আমার সকল ধ্যান শুধু তার দিক ছিলো। চোখ সরাতে ব্যর্থ হচ্ছিলাম। সে খাওয়া শেষ করে, বড় চাচ্চুর উদ্দেশ্যে বললেন,
-‘ মা’কে নিয়ে আসিয়। ‘
বড় চাচ্চুর জবাব নেই। ভাইয়া চলে যাচ্ছেন। আমি তখনও পিছু হতে তাকেই দেখছি৷

পড়তে বসেছি৷ মাথাটা ব্যথা করছে। চা হলে মন্দ হয়না। মা’কে বলতে হয়, এককাপ চায়ের কথা। তখনই সুমনা হাজির। মুখ দেখে মনে হচ্ছে রেগে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখাতে লাগলো,
-‘ কি হয়েছে? ‘
-‘ ঢং কম কর। ‘
-‘ হয়েছে কি? ‘
-‘ কিছুই বুঝতে পারছিস না? একদম না বোঝার অভিনয়
করবি না। ‘
-‘ আওয়াজ নামিয়ে কথা বল। ‘
-‘ তুই রাত্রে কিভাবে পারলি এমন করতে? কতবার করে বললাম, তন্ময় ভাইয়ের সাথে বসার ব্যবস্থা করে দে। অথচ তুই কি করলি? নিজে বসলি তার সাথে। আবার ঘুমের ভান করে, কোলেও চড়ে নিলি। ‘
মেয়েটা এমন বেশরম হচ্ছে কেন?
-‘ তোর মনে হচ্ছেনা তুই বেশি করছিস? ‘
-‘ বেশি আর আমি? করতে দিলি কই? এটা বল আমাকে,
তুই কি তন্ময় ভাইকে পছন্দ করিস? আমি খেয়াল করেছি। তুই তার দিক তাকিয়ে থাকিস। এইসব নোংরামি বাদ দে। তুই জানিস আমি তাকে ভালবাসি। সেই ক্লাস এঈট থেকে। ‘
-‘ শোন সুমনা। তুই নিজের রাস্তা অতিক্রম করছিস। এমন আচরণ তুই কিভাবে করিস? তাও আমার সাথে। আমার ঘরে দাঁড়িয়ে।
আর কোলে চড়ার জন্য আমি ভান কেন করবো? সে আমার কাজিন সাহায্যের জন্য নিতেই পারে। তোর এমন রিয়েকশনের কোনো অধিকার নেই। আর হ্যাঁ, তন্ময় ভাই তোকে সেভাবে দেখেন না৷ শুধু শুধু কাহিনী বানাচ্ছিস। এখন যা রুম থেকে বেরো। ‘
সুমনা আমাকে ঘুরালো ওর দিক।
-‘ কথা শেষ হয়নি আমার। তুই তার দিক নজর দিবিনা। আর দিলেও কি, সে তো তোক বোন ছাড়া অন্য কিছু ভাবেনা।
আমার তো মনে হয় তোকে দেখতেই পারে না। ‘
-‘ হ্যাঁ পারেনা। রুম থেকে বেরো। এরপর নক ছাড়া কখনও প্রবেশ করবিনা। যা৷ ‘
এই সেই সুমনা? প্রচন্ড অপরিচিত লাগছে। আমার ছোটবেলার সঙ্গী? আচরণ কতটা জঘন্য হয়েছে। কিভাবে বলল, আমি ঘুমের ভান করেছি। এতটা নোংরা ভাবে আমাকে?
প্রেয়সী

১১|
ইচ্ছে করছে ওর চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলি। এতটা রাগ লাগছে। উফ। কীভাবে পারলো মেয়েটা? কীভাবে পারলো আমাকে এগুলো বলতে? বেশরম। নিজেই তো তন্ময় ভাইয়ের পিছু ঘুরঘুর করে।
কোন মুখে আমাকে কথা শোনাতে আসে?
আমার সুন্দর ফুরফুরে মনটা। গুড়িয়ে দিয়ে গেলো। তোর মনও গুড়িয়ে যাবে। দেখিস। টুকরো টুকরো করে গুড়িয়ে যাবে।
দুপুর পর্যন্ত ঘরে আটকে ছিলাম। একদমই বেরোলাম না। কি করতে বেরোবো? সুমনা চুন্নির মুখ দেখতে? ন্যভার এ্যভার। যতক্ষণ না এই মেয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ বেরোবো না। আজকের পর থেকে ও আমার কিচ্ছু লাগেনা। কিচ্ছু না।
দীপ্ত আর রুবি আপু এসেছে। রুবি আপু পাশাপাশি বসলো,
‘ আশ্চর্য। তুই কী দিনদুনিয়ার খবর রাখবি না? হুঁ? ‘
‘ কি হয়েছে? ‘
দীপ্ত ধীরে বলল,
‘ কি হয়নি বলো। তন্ময় ভাই ছাঁদে। এখন সুমনা আপুও গিয়েছে সেখানে। পাঁচমিনিটের বেশি হচ্ছে। আর নামেনি ছাঁদ হতে। ‘
আমি বই বন্ধ করে দৌঁড় লাগালাম। দরজা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেলাম। জিহ্বা কামড়ে, গলা পরিষ্কার করলাম। ধুর। আমি কেন দৌঁড়ঝাপের প্রতিযোগিতা শুরু করলাম। যেটা ইচ্ছে করুক আমার কী। রুবি আপু হাসছে,
‘ এখনই হিংসে হচ্ছে। হিহিহিহি। আর তো দিন পড়েই আছে।’
দীপ্ত হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়ালো। রোবটের অভিনয় করে বলল,
‘ চলো। আমরাও যাবো ছাঁদে। লেটস গো। ‘
একপ্রকার টেনেটুনে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। ওই সয়তান মেয়েকে আবারও দেখতে হবে। ভাবতেই মাথাটা ধরে আসছে।
ছাঁদ বরাবর আসতেই বুক কাঁপছে। রাতের ঘটনা চোখে ভাসছে। সে কপালে চুমু খেয়েছিলেন। হেসেছিলেন। শান্ত, মিষ্টি আওয়াজে কথা বলেছেন। লজ্জায় মুখ গরম হয়ে উঠছে। ইশ। কিভাবে তার সামনে যাব?
ছাঁদে উঠতেই চোখে পরলো, সুমনা পা ধরে নিচে বসে। তন্ময় ভাই ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে। তার পড়নে হাফপ্যান্ট, টি-শার্ট। সে বলছে,
‘ স্ট্রেন্থ নেই শরীরে? সমান প্লেসে কিভাবে পড়ে যাও?’
আমাদের দেখতেই সে, রুবি আপুকে বললেন,
‘ রুবি ও ব্যাথা পেয়েছে। দেখ তো। ‘
সে আবারও কোণে চলে গেলেন। খুবই গম্ভীরমুখে কথা বলছেন ফোনে। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে।
এদিকে সুমনার চেহরা দেখার মতো ছিলো। ফাজিল মেয়ে। নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে করেছে। যেন ভাইয়ার কোলে চড়তে পারে। উহ। এতই সোজা?
রুবি আপু গিয়ে পায়ে দেখতে লাগলো,
‘ কোথায় লেগেছে?’
সুমনার জবাব,
‘ ইটস ওকে৷ অতটা গুরুতর নয়। ‘
এখন গুরুতর নয়। একে এখন আমার সহ্যই হচ্ছে না। আমার সহ্যশক্তি প্রয়োজন। প্রচন্ড।
দোলনায় বসে আশপাশে চোখ বোলালাম। ছাঁদে দোলনা, আর ছোট ছোট ফুলের প্ল্যান্ট ছাড়া কিছুই নি। পরিষ্কার ভাবে গোছানো। কোথাও একটু আবর্জনা নেই।
দীপ্ত পেছন হতে, দোলনা দোলাতে লাগলো। হাসতে হাসতে বললাম,
‘ দোলাতে হবেনা। থাম। ‘
কথা শুনলো না। সেই দোলাচ্ছেই। আমিও চুপচাপ চোখ বুঝে রইলাম। হঠাৎ শব্দে চোখ খুললাম। তন্ময় ভাই নেমে যাচ্ছেন। সাথে সয়তান সুমনাও নামছে। অবাস্তবিক মেয়ে। এ আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছে। রুবি আপু আশ্চর্য কন্ঠে বলল,
‘ এ কোন দেশের বেহায়া। ‘
সত্যিই। মেয়েটা আসলেই অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে। ও কি এমন অদ্ভুত ছিলো? নাকি আমারই চোখ আজ খুলল?

দুপুরে খেতে বসলাম। তখন তন্ময় ভাই জানালেন,
‘ বিকেলে চলে যাচ্ছি৷ ‘
বড় চাচ্চু বললেন,
‘ আর ক’টাদিন থেকে না হয় যেতে। ‘
তার জবাব,
‘ গুরুত্বপূর্ণ। যেতে হবে। ‘
‘ আচ্ছা। কিছু লাগবে? ‘
‘ উঁহু। আম ফাইন৷ ‘
বিকেলে তন্ময় ভাই চলে যাবেন। আমার খারাপ লাগতে শুরু করলো। সে গেলে মাস ছাড়া আসেননা৷ এবার কয়মাস পর আসবেন? কামরায় গিয়ে ভাবনায় হারিয়ে গেলাম।
ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে আসলো, জানা নেই।
ঘুম ভাঙতেই, সময় দেখলাম। ছয়টা বিশ। দৌঁড়ে নিচে নামলাম।
গিয়ে শুনলাম, তন্ময় ভাই চলে গেছেন।
চোখ জলে চিকচিক করছে। যাবার সময় দেখাও হলো না?
ঘুম আসার সময় পায়নি? এতো রাগ লাগছে নিজের প্রতি। বলার বাহিরে। চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
সেদিন রাতটা শুধু তার কথা ভেবেই শেষ করেছি। এতদিনের মুহুর্ত গুলো, কাঁটা গায়ে নুনের ছিঁটে দিতে লাগলো। ভিষণ জ্বলছে। আবার কবে দেখব তাকে? সে’তো গেলে আর আসার নামই নেন না।
মাসের পর মাস চলে যায়। তার নামগন্ধ থাকেনা। এখন তো তার দ্রুত ফেরা প্রয়োজন তাইনা? মাসের মাঝে দু’তিনবার তো এসে থাকা যায়।

কলেজ গিয়ে লেগেছে সুমনার সাথে। এভোয়েড করছি, তাও ও ইঙ্গিত মেরে কথা বলছে। ওর বন্ধুদের নিয়ে আমাকে অপদস্ত করলো। ব্যস। আমিও জবাব দিয়েছি। আমাকে যেভাবে বলেছে, সেভাবে ওকেও বলেছি।
ঝগড়াঝাটির জন্য আরও জানতে পারলাম, ও সকলের কাছে আমার নামে অভিযোগ করতো। আমি নাকি ভালো না। অনেক ছেলেদের সাথে মেলামেশা আছে। ছেলেদের টাকা খাই, তাদের পিছু ঘুরাই। তাদের সাথে ঘুরতে যাই। ফ্যিজিকাল কতো করেছি, তার গুনুন হবেনা। আমাকে নাকি ও প্রায়ই দেখতো ছেলেদের সাথে। মারজি থেকে এগুলো শুনে, আমি কেঁদে ফেললাম। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গেছে। ও আমাকে এতো খারাপ ভাবে? এতটা?
কলেজে সারাক্ষণ মাথা নিচু করেছিলাম। লজ্জায় মরতে ইচ্ছে হচ্ছে। এখন সবাই এগুলো ভাববে আমাকে নিয়ে?
টিফিন টাইমে মারজি আমাকে না জানিয়ে বাড়িতে কল দিয়েছে। রুবি আপু কল ধরায় সে তখনই গাড়ি নিয়ে কলেজ হাজির। সে ভয়ানকভাবে সুমনা’কে বলে দিয়েছে,
‘ আমাদের বাড়ির আশেপাশে দেখলে, পা কেটে হাতে ধরাই দিব। আর অরুর আশেপাশে যদি আরও আগে না দেখি।
সস্তা মেয়ে। ‘
কলেজে বাকি ছিলো তিন ক্লাস৷ আপু ছুটি নিয়েছেন। বাড়ি ফিরে আমি কামরায় আটকে।
যে আমার বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলো। যার সাথে সব শেয়ার করতাম।
সকল কিছুর ভাগ দিতাম। সে কিনা পেছন পেছন আমাকে নষ্টা পরিচয় করাচ্ছিল? ভাবতেই চোখ ভিজে আসছে।
সেদিন আমি আর ঘর থেকে বেরোই নি। মা, বড় মা, চাচ্চু, বাবা সকলেই ডেকেছেন। আমিই বের হইনি। এতো বড় ধাক্কা একদম নিতে পারছিলাম না। সুমনা এমন করেছে? সেই আমার ছোট বেলার খেলার সাথী সুমনা? একসাথে খেলার সঙ্গি। বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। কিভাবে পারলো?

কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। ঘুম ভেঙেছে ফোনের রিংটোনে। ঘড়িতে দেখলাম রাত বারোটা পঁয়তাল্লিশ। আমি উঠে বসলাম।
স্ক্রিনে দেখাচ্ছে, তন্ময় ভাই।
রিসিভ কী করব? নিশ্চয়ই সব তার কানে গিয়েছে। বকা দিবে আমাকে? কিন্তু আমি কিছুই করিনি। করলো তো সুমনা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here