#ফোটা_শিউলি_ফুল_একবারই_শিশিরে_ভেজে
#Writer_NE_EL(Noor)
#Neel
২.
ফজরের আযানের ধ্বনি শুন ে শিউলির ঘুম ভেঙ্গে।পাশে তাকাতেই দেখে দিনা শুয়ে আছে।দিনা কে দেখে শিউলির কালকের ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। মূহুর্তে ই দু চোখ ভর্তি অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। বেড থেকে নামতেই চোখ পড়ল শিশিরের উপর। কি সুন্দর সোফায় ঘুমিয়ে আছে। শিউলি ভাবতে পারছে না, শিশির এটা করেছে, শিশির প্রতারনা করেছে। শিশির এমনটা করে কী ভাবে শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে। শিশিরের কী শিউলির কথা মনে পড়ে নাই। মনে পড়ে নাই, তাদের ভালোবাসার কথা, মনে পড়ে নাই,তাকে দেওয়া প্রমিসের কথা।
শিউলি আর ভাবতে পারছে না।এই রুমটা তে কাল রাত পর্যন্ত তার আর শিশিরের ছিল, কিন্তু আজ অন্য একজন ও ভাগ বসিয়েছে। আর যাই হোক, শিউলি এই ভাগের অংশিদার হবে না। নাহ। মুখ চেপে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। অশ্রু হাতের উল্টো পিঠে মুছে গেস্ট রুম এ ঢুকলো। নামাজের সময় এখন ও পার হয় নাই। নামাজ পড়ে নিল। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল।মনের দুঃখ সব আল্লাহর কাছে প্রকাশ করল। শিউলির এখন নিজেকে অনেকটাই হালকা লাগছে।
নামাজে বসে শিউলি অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলো। নামাজিটা রেখে কাউকে কল দিলো, সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। অপর পাশের ব্যক্তিটি কিছু বললো। তারপর শিউলি বলল – আটটার আগেই আমার চাই।
মোবাইল ফোন টা কাটতেই কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে। শিউলি শরীরের ঘ্রানটা পেতেই বুঝে যায় ব্যক্তিটি শিশির।
শিশির – বউ তুমি এই রুমে কী করছো? আমাদের রুমে ও তো জায়নামাজ ছিল, ওখানে নামাজ পড়ে নিতে, সাথে আমাকে আর দিনা কে ও জাগিয়ে দিতে।দিনার এখন নামাজ রোজা করা দরকার। তুমি শিখিয়ে দিবে কিন্তু।
শিউলির বুক ফেটে যাচ্ছে। একদিন আগে যেই স্বামীর মুখে তার নামের কি ফুটতো আজ স্বামীর মুখে অন্য একজনের নাম।যে তার সতিন।কোন মেয়েই এ সহ্য করতে পারে না। শিউলি পিছন ফিরে ধাক্কা দিয়ে শিশির কে নিজে থেকে দূরে সরিয়ে, চিৎকার করে বললাম – দূরে থাকুন আমার থেকে মি. শিশির খান। আমাকে ছুঁবেন না, আমার ঘৃনা করে আপনাকে। কোন অধিকারে আমাকে ছুঁয়েছেন।
শিশির রেগে গেল শিউলির কথায়। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে শিউলির মুখে চেপে ধরল।বলল- আমি তোর স্বামী। তোকে আমি ছুঁয়ে দেখব না তো কে দেখবে। আমি ছাড়া তোকে কেউ ছুঁতে পারবে না। আমি কী দোষ করেছি, শুধু আরেকটা বিয়েই করেছি, ইসলামে চারটা বিয়ে করা জায়েয।তাহলে তুই মেনে নিতে পারবি না কেন। মেনে নে ,এটাই তোর জন্য মঙ্গল।
ডুকরে কেঁদে উঠলো শিউলি। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো শিশির কে। শিশিরের সামনে এগিয়ে গিয়ে ঠাস করে একটা চড় দিলো। রাগে চিৎকার করে বলল- ৪টা বিয়ে জায়েজ। তাহলে বিধবা কে করতি।ডিভোর্সিদের করতি। বয়সের বড় কাউকে করতি। আমি মেনে নিতাম। তুই রংঢং করে ইয়ং মেয়ে কে বিয়ে করবি আমি মেনে নিব। কখনো না। আমি কি তোকে বিয়ের পারমিশন দিয়েছিলাম।(রাইটার -নীল নূর)
শিশির দাঁত মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে। শিউলি ঠিক কথাই বলছে। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে ও এই কাজ টা করে নাই।সে ফেঁসে গেছে। কিন্তু এখন তার এগুলো সামাল দিতে হবে।
শিশির কিছু বলবে তার আগেই রাহেলা বেগম আর শায়মা রুমে এলো।মা আর বোন কে দেখে শিশির কিছু বলল না,রাগী চোখে শিউলির দিকে তাকিয়ে হন হন করে চলে গেল।
শিশির যেতেই শিউলি খাটে ধপ করে বসে পড়লো। শায়মা আর রাহেলা বেগম এগিয়ে এলো।পরম যত্নে শিউলিকে আগলিয়ে নিল।দিনা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এই কান্ড দেখলো, মুখে তিপ্তির হাসি নিয়ে চলে গেল।
দশ পনেরো মিনিট পর শিউলি মাথা উঠিয়ে বলল – আমি আপনাদের থেকে কিছু চাই। দিবেন আমাকে। বিশ্বাস করুন মা আমি আর কখনো চাইবো না।
রাহেলা বেগম এর বুক ধক করে উঠল।মায়ের মন বলে কথা। বলল – বলো , তুই যা চাইবি তাই হবে।
শিউলি রাহেলা বেগম আর শায়মার হাত টেনে তার পেটে ছোঁয়ালো।বলল – এই পেটে আপনাদের বংশধর।(শায়মা চমকে উঠে, কিন্তু রাহেলা বেগম নয়,কারন সে আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল)
শিউলি বলল – আপনাদের এই অনাগত সন্তানের কসম , আপনারা আমাকে শিশির থেকে ডিভোর্স নিয়ে দিবেন।
কথাটা বলতেই রাহেলা বেগম আর শায়মা নিজেদের হাত টান দিয়ে নিয়ে নিল।
রাহেলা – আমি পারব না, তুমি এ কী বলছো, ভাবতে পারছো?
শিউলি – হুম ভেবে বলছি। আমি অনেক ভেবেছি।এই বাড়িতে থাকলে আমি মারা যাব মা।(রাহেলা বেগম কিছু টা কেঁপে উঠলো) আমি নিজেকে শেষ করে ফেলবো। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি,এই সন্তান আমি বাঁচিয়ে রাখবো। তবে আপনাদের আমাকে সাহায্য করতে ই হবে।
____
শিউলির কাছে তার কাগজটা পৌঁছে গেছে। শিশির, দিনা, রাহেলা, শায়মা খেতে বসেছে। শিশির বারবার আড় চোখে তাকাচ্ছে আশে পাশে, তবে শিউলির দেখা নেই।দিনা সহ সবাই বুঝতে পারছে।
শায়মা – ভাইয়া,তোকে কিছু বলতে চাই।
শিশির চমকে উঠে। থমথমে গলায় বলল – ব বল।(রাইটার -নীল নূর)
শায়মা – কলেজের কিছু কাগজপত্রে তোর সিগনেচার লাগবে (কাঁপা কাঁপা গলায়)আজ ই। গুরুত্বপূর্ণ। সিগনেচার দিয়ে দে।
শায়মা ভয়ে আছে।যদি ভাইয়া পড়ে বা খেয়াল করে তাহলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে।শিশির শিউলিকে না দেখতে পেয়ে চিন্তায় আছে,তাই কাগজপত্র না দেখেই সিগনেচার করে দিল।
শায়মা কাগজ পেয়ে আর টেবিলে বসে থাকল না।দ্রুত উপরে চলে গেল।দিনা আর শিশির একই অফিসে চাকরি করে,তাই সময় হয়ে গেছে, অফিসে রওনা হলো। শিশির বার বার উপরে তাকাচ্ছে, শিউলি কে দেখবে এ আশায়। কিন্তু আশাহত অবস্থায় চলে গেল অফিসে।
শিশির যেতেই শিউলি ঘর থেকে বের হলো। শায়মার দেওয়া ডিভোর্স কাগজটা হাতে নিল,নিজেও সিগনেচার করলো, রাহেলা বেগম আর শায়মার দিকে মলিন হাসি দিয়ে বলল- আমি আসছি। শায়মা আমি যেতেই আমার রুমে যেও।
এই বলে সে ও ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। রাহেলা বেগম ভাবছে,এক কাপড়ে কোথায় যাবে, শিউলির জিনিস পত্র নিতে তো আসবেই। শিউলি যেতেই শায়মা শিউলির রুমে গেল, মিনিট এক এর পর চিৎকার করে মা বলে বের হলো, হাতে দুটো কাগজ….
চলবে…
/