ফোটা শিউলি ফুল একবারই শিশিরে ভেজে পর্ব -০৩

#ফোটা_শিউলি_ফুল_একবারই_শিশিরে_ভেজে
#Writer_NE_EL(Noor)
#Neel

৩.

এই বলে সে ও ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। রাহেলা বেগম ভাবছে,এক কাপড়ে কোথায় যাবে, শিউলির জিনিস পত্র নিতে তো আসবেই। শিউলি যেতেই শায়মা শিউলির রুমে গেল, মিনিট এক এর পর চিৎকার করে মা বলে বের হলো, হাতে দুটো কাগজ ।

রাহেলা বেগম চমকে শায়মার দিকে তাকালো।তার কলিজা টা ধক করে উঠলো।সে যে বড্ড বেশি শিউলি কে ভালোবাসে। হয়তো শায়মার থেকে ও বেশি।

শায়মা – মা,ভাবি চলে গেছে।মা, তুমি শুনছো অভাগী চলে গেছে। আমার ভাইটা এমন কী করে করতে পারলো মা, মেয়েটা আমাদের বাড়িতে দুমুঠো সুখের আশায়,কী না করেছে ‌।আর এখন সুখ ধরা দিয়ে ও , দুঃখ নিয়ে চলে গেল। আচ্ছা মা, ভাবির ভাগ্যটা এরকম কেন? একটু কি সুখ থাকলে খুব বেশি ই বাড়াবাড়ি হয়ে যেত?(রাইটার -নীল নূর)

রাহেলা বেগম কাগজ টা নিল। কাগজটা খুলে দেখল, শিউলির আঁকা বাঁকা হাতের লেখা।এই তো সেই লেখা,যা সে শিখিয়ে ছিলো। কাগজটা তে লেখা আছে – আমাকে মাফ করে দিও মা।চলে যাচ্ছি। তুমি হয়তো আশা করো নাই আমি চলে যাব এভাবে, কিন্তু যাচ্ছি। ভালো থেকো মা।

রাহেলা বেগম কাগজ টা বুকে চেপে ধরে সেখানে ই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শায়মা মায়ের জ্ঞান হারাতে দেখে চিৎকার করে উঠলো। কি করবে, সাথে সাথে শিশির কে কল দিল। শিশির কে মায়ের কথা জানিয়ে কল কেটে দিলো। শায়মা মায়ের মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো। রাহেলা বেগমের জ্ঞান ফিরতেই, শিউলির নাম ঝপতে লাগলো।

___

শিশির হন্তদন্ত করে বাড়ি ফিরল। তার সাথে দিনা ও। শিশির দ্রুত মায়ের রুমে গেল। দেখে তার মা বিছানায় শুইয়ে আছে। শিশির দ্রুত মায়ের কাছে গেল। শিশিরের পিছন পিছন দিনা ও।

দিনাকে দেখে রাহেলা বেগম দাঁত চেপে বলল- শিশির এই মেয়েকে আমার রুম থেকে বের কর।না হয় , আমি খারাপ কিছু করে ফেলবো।

দিনা রেগে গেল। চোখ মুখ কুঁচকে সেখান থেকে চলে গেল।দিনা যেতেই শায়মা রুমে এলো।ভাইকে দেখে ও না দেখার মতো ই দাঁড়িয়ে রইল।

শিশির শায়মা কে দেখল, আশেপাশে তাকালো, কিন্তু শিউলির কোন সাড়াশব্দ নেই।
শিশির – শিউলি কোথায়? দেখছি না যে।ও তো মায়ের কিছু হলে ঠিক থাকতে পারে না,তা আজ কোথায়?

রাহেলা বেগম তাচ্ছিল্য হেসে বলল- যে থাকার সে তো আছে, শিউলি না থাকলে কী হবে?

শিশির – উফ্ মা, তুমি এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলছো কেন।

শায়মা – ভাবি নেই।তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে ভাইয়া।এই নে (একটা কাগজ দিল,যেটা শিউলি রেখে গেছিল)

শিশির ভুরু কুঁচকে কাগজ টা খুলতেই ঝটকা খেল।এতো শিউলির হাতের লেখা।আকা বাকা।লিখা আছে –

প্রিয় শিশির,

আমার দুঃখ ভরা জীবন টা তে, আপনি কয়েক বছরের দুমুঠো সুখ দিয়েছিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে। আমি চলে যাচ্ছি,দিনা কে নিয়ে সুখে থাকবেন। কাল হয়তো আমাদের তালাক নামা আসবে।আমরা মুক্ত হয়ে যাব। আপনার খুব মূল্যবান জিনিস আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি।ওটাই আমার দেনমোহর। ভালো থাকবেন সবাই কে নিয়ে।

শিশির চিৎকার করে উঠলো। নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। এলোমেলো লাগছে। কেননা দুনিয়ার যা কিছু ই হয়ে যাক না কেন, শিশির শিউলিকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না।সে ভুল করেছে। অনেক বড় ভুল করেছে।তার উচিত ছিল শিউলি কে আগে থেকেই সব জানানো। এখন সে কি করবে।(রাইটার -নীল নূর)

পুরো বাড়ি সে খুঁজে এলো। শিউলির দেখা নেই। দেখা হবে কী করে শিউলি তো নেই।যে নেই তাকে কি খুঁজে পাওয়া যায়। একটা কথা আছে না, হারিয়ে যাওয়া জিনিস কোন না কোন দিন পাওয়া যায়, তবে কেউ ইচ্ছে করে হারিয়ে গেলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

রাহেলা বেগম, শায়মা,দিনা, শিশির একসাথে সোফায় বসে আছে। দিনা দৌড়ে রাহেলা বেগম এর পা জড়িয়ে ধরলো। বলল-কাকি ,কাকি গো। আমার দোষে এ সব হয়েছে গো। আমার উচিত ছিল জানানোর। আমি চেষ্টা ও করেছি, তবে শিশিরের জন্য পারিনি। আমি আমার বয়ফ্রেন্ড দ্বারা ধর্ষিত হয়েছি।তার সন্তান আমার গর্ভে।কাকি, আমি এই মুখ সমাজে কী করে দেখাবো গো চাচি।তাই আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। তবে, সেদিন শিশির দেখে ফেলে। আমি শিশির কে বলতে চাই নাই। কিন্তু ও আমার ছোটবেলার বন্ধু, বাধ্য হয়ে বলে দিয়েছি। আমি যদি জানতাম কাকি, আমি জীবনে ও এরকম করতাম না।

শিশির – মা,(রাহেলা বেগম এর পায়ে ধরে)ও মা, আমি শিউলি কে ছাড়া বাঁচব না।মা, আমার শিউলি ফুল কে আমার কাছে এনে দাও। মা, মা আমি দিনাকে কাগজে কলমে বিয়ে করেছি, শুধু মাত্র বাচ্চা টার জন্য। আমার আর শিউলির বাচ্চা হয় না,কতো কিছু ই না করলাম।তাই ভাবলাম,দিনার বাচ্চাটার লিগালি পেরেন্টস আমি আর শিউলি হতাম।দিনার যেন সমাজে সম্মান নষ্ট না হয়,তাই মা এটা করেছি।দিনা বাচ্চা হওয়ার পর দেশ থেকে চলে যেত। আমি ভুল করে ফেলেছি, মা।ও মা (কান্নায় ভেঙে পড়ে)

শায়মা – কীহ, এগুলো কি বলছো তোমরা। বাচ্চা,আরে শিউলি ভাবি তো প্রেগন্যান্ট।

শিশির চমকে উঠল।মায়ের দিকে তাকায়। রাহেলা বেগম মুখ চেপে কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করে। শায়মা হাতে থাকা প্রেগনেন্সির কিট টা দেয়।

রাহেলা – সেদিন, শিউলি এটা পরীক্ষা করছিল। আমি দেখছি, কিন্তু একটু অপেক্ষা করছি। তারপর লক্ষন আর ডাক্তার এর কথা আর আজ শিউলির কথায় বুঝতে পেরেছি , শিউলি মা হতে চলেছে।(কান্না করতে করতে)

শিশির – আমি বাবা হতে চলেছি।আল্লাহ মুখ তুলে চেয়েছে।আমিন। শুকরিয়া মাবুদ শুকরিয়া।মা, শিউলি কোথায়?তোমরা নিশ্চয়ই সত্যি জানার জন্য আমার সাথে এরকম প্লান করছো ,তাই না?

শায়মা দৌড়ে ভাই কে জড়িয়ে ধরল।বলল – ভাইয়া সরি , আমরা সরি‌।ভুল করে ফেলেছি।(শায়মা সব কিছু খুলে বলল)

শিশির ধপ করে সোফায় বসে পড়লো।

_____

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে।খালি হাতে শিউলি ঘর থেকে বেরিয়েছে শিউলি। পেটে খুব খুদা। সেই রাত থেকে না খাওয়া। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে তার উকিলের কাছে পেপার টা দিয়ে এসেছে।কাল শিশিরের কাছে পেপারের এক কপি চলে যাবে। শিউলির তার শিশিরের সাথে থাকা সুন্দর সুন্দর মূহুর্তে গুলো মনে পড়ছে। মনে পড়ছে সেই দিন গুলোর কথা। শিউলি এক অনাথ আশ্রম এ বড় হয়েছে। শিউলি জন্ম থেকে এই পর্যন্ত জানে না,তার মা বাবা কে। শুধু এটুকু ই জানে সে এতিম, হয়তো কোন প্রেমিকার নাজায়েজ সন্তান।না হলে কেন ,কোন মা কেন তার সন্তান কে অনাথ আশ্রম এ ফেলে যাবে।এই অনাথ আশ্রম এ তার এক শুভাকাঙ্খী আছে,যার কারনে ই এতো তাড়াতাড়ি শিশির কে সে ডিভোর্স পেপার দিতে পারছে।

চোখে মুখে কিছু দেখতে পারছে না। মাথা ঘুরছে। হাঁটতে পারছে না।সে এখন কোথায় আছে নিজেও জানে না। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই বেড়িয়ে গেছে।হাতে টাকা নেই,আপন কেউ নেই, কোথায় যাবে সে। হঠাৎ সামনে একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে, শিউলি দেখতে পাচ্ছে , তবে আবছা আবছা, এখান থেকে যে দ্রুত সরে যাবে,তাও পারছে না। মূহুর্তে ই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো, গাড়ি ও কাছে এসে পড়েছে,হন দিচ্ছে,এর মধ্যেই….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here