ফোটা শিউলি ফুল একবারই শিশিরে ভেজে পর্ব -০৪

#ফোটা_শিউলি_ফুল_একবারই_শিশিরে_ভেজে
#Writer_NE_EL(Noor)
#Neel

৪.

চোখে মুখে কিছু দেখতে পারছে না। মাথা ঘুরছে। হাঁটতে পারছে না।সে এখন কোথায় আছে নিজে ও জানে না। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে ই বেড়িয়ে গেছে।হাতে টাকা নেই,আপন কেউ নেই, কোথায় যাবে সে। হঠাৎ সামনে একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে, শিউলি দেখতে পাচ্ছে , তবে আবছা আবছা, এখান থেকে যে দ্রুত সরে যাবে,তাও পারছে না। মূহুর্তে ই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো, গাড়ি ও কাছে এসে পড়েছে,হন দিচ্ছে,এর মধ্যেই শিউলি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল।

____

অন্যদিকে দিনা রুমে এসে খুশিতে আত্মহারা। শিশির রুমে ঢুকতেই শিশির কে জড়িয়ে ধরে। ঠোঁট এ ঠোঁট স্পর্শ করে বলল – ধন্যবাদ বেবি। আমরা সফল হয়েছি। শিউলি চলে গেছে। গ্রাম্য , অশিক্ষিত, মূর্খ মেয়ে চলে গেছে। আমার কী যে খুশি লাগছে না, তোমাকে বুঝাতে পারবো না।

শিশির ভুরু কুঁচকে তাকালো দিনার দিকে,বলল – কিন্তু শিউলি প্রেগন্যান্ট। আমার বেবি ওর গর্ভে। হাজার হোক আমি শিউলি কে একদিন ভালোবেসে ছিলাম।ওর অভ্যাসে আমি আসক্ত। তোমাকে বিয়ে করার আগেও বলেছি আমি তোমাদের দুজনকেই সমান অধিকার আর ভালোবাসব। তাহলে শিউলি কে নিয়ে এতো কথা কেন বলছো? আমার শিউলি কে খুঁজতে হবে।

হঠাৎ দিনা ন্যাকা কান্না জুড়ে দিল।বলল – তুমি ৩বছরের সংসারের জন্য আমার ভালোবাসা ভুলে যাচ্ছ। আমি তোমাকে ভালোবাসি শিশির সেই ছোটবেলা থেকেই।কি করিনি তোর জন্য। তুই সেদিন আমার কাছে এসেছিলি, বাবুর জন্য, তাইতো আমি নিজেকে তোর কাছে সঁপে দিয়েছি। আমার গর্ভে ও তো বাচ্চা আছে,যেটা তোর আর আমার। তোর জন্য আমি তোর মা আর বোনের সামনে নিজেকে ধর্ষিতা প্রমান করছি।তাও শিউলি।ঠিক আছে যা তুই শিউলির কাছে, আমি রাখবো না আমার জীবন।(রাইটার -নীল নূর)

শিশিরের প্রথম ভালোবাসা দিনা। কিন্তু মাঝ দিয়ে দিনা শিশির কে ফেলে চলে যায় অন্য কোথায়। কোথায় শিশির জানে না। ভেঙে পড়ে শিশির। তখন ই রাহেলা বেগম শিউলির সাথে শিশিরের বিয়ে দেয়। শিশির রাজি ছিল না, এক প্রকার বাধ্য করা হয় শিশির কে।প্রথম প্রথম শিশির শিউলিকে দেখতে পারতো না। তবে আস্তে আস্তে শিশির দিনাকে ভুলে, মায়াবী শিউলি তবে মত্ত হয়। শিউলি স্বভাবগত একটু নরম, কোমল শিউলি ফুলের মতো।

____

কেটে গেল আরো ৪টা বছর। শিশির আর দিনা এসেছে হাসপাতালে।ডাক্তার মেহেদীর সাথে দেখা করতে।দিনার মিসক্রেরেজ হওয়ার পর থেকে আর বেবি হচ্ছে না। শিশির আর দিনা এখন কেবিনে বসে আছে। ডাক্তার মেহেদী ফাইল টা দেখছে। গম্ভীর হয়ে দেখছে।

মেহেদী – আপনাদের তো সবকিছু ই ঠিক আছে। তবে মিসেস শিশির কেন যে কনসিভ করছে না। বুঝতে পারছি না। একটু জটিল বটে। আচ্ছা মিসেস শিশির…

এর আগেই কেবিনে, ৩ বছর বয়সী একটা মেয়ে হন্তদন্ত করে ঢুকে। ছোট ছোট হাত পা, সদ্য ফোটা মুখের বুলি, শিশিরের মনে উথাল পাতাল করে দিচ্ছে। বাচ্চাটার চেহারা কিছুটা শিউলির মতো দেখতে। আজ বহুদিন পর তার আবার শিউলি নামক রমনীর দেখা পাওয়ার তৃষ্ণা লাগছে।

বাচ্চা মেয়ে টি আধো আধো বুলিতে বাবাই, বাবাই বলে দৌড়ে ডাক্তার মেহেদী কে জরিয়ে ধরলো। ডাক্তার মেহেদী নিজের মেয়েকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। বাবুকে এদিক সেদিক চুমুতে ভরিয়ে দিল।
বলল-সরি,বাবুই। অনেক বিজি ছিলাম তাই বাসায় যেতে পারিনি।তা আম্মু কি আসছে?

বাচ্চা টি – আম্মু বাবু পেটে আস্তে আস্তে আসছে।(সদ্য ফোটা মুখের বুলি তে মেহেদী হেসে উঠলো, শিশিরের চোখ ভরে উঠলো অশ্রুতে,কেন যেন মেয়েটির থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না)

মেহেদী – আচ্ছা। আমি সরি মিস্টার শিশির এন্ড মিসেস শিশির। আমি আপনাদের ফাইল টা ডাক্তার জুলি কে হেন্ডওভার করে দিচ্ছি।ওনি গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।

এর মধ্যেই ভরা পেট নিয়ে একটি শাড়ি পরিহিত মহিলা ভেতরে এলো। প্রেগনেন্সির লক্ষনে আরো সুন্দর লাগছে।গলুমলু টাইপের। খুব ই আদুরে আর মায়াবী।
মেহেদীর কোল থেকে বাবুটাকে মাম্মা বলে উঠলো। শিশির হন্তদন্ত হয়ে পিছনে তাকালো, সাথে দিনা ও। মেহেদী ও সামনে তাকালো।

শিশির এবং দিনার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।কারন সামনে আর কেউ নয় শিউলি দাঁড়িয়ে আছে। শিশির অস্ফুট স্বরে বলল- শি শিউলি!!

শিউলি শিশিরকে দেখে সেখানে ই থমকে গেল। পুরোনো স্মৃতি আবার ও চোখের সামনে ভেসে উঠলো।সেই দুঃখ কষ্ট সব একসাথে জমা হলো। কিন্তু আজব,আজ শিউলির চোখ থেকে কোন অশ্রু গড়িয়ে পড়লো না, বরং শিশিরের প্রতি কোন খারাপ লাগা এরকম ফিল ও হচ্ছে না।

শিউলি শিশির আর দিনা কে ইগনোর করে ভরা পেট নিয়ে আস্তে আস্তে হেটে মেয়ে আর মেহেদীর কাছে গেল। মুখ ফুলিয়ে বলল – আমি খুব কষ্ট পেয়েছি ডাক্তার সাহেব। খুবই। আপনাকে দেখার তৃষ্ণা মেটাতে আমি এখান পর্যন্ত চলে এসেছি। আমি আজ মায়া আপুর কাছে এসব কথা বলে দিব।আড়ি আপনার সাথে।

শিশির শিউলির এতো বড় পরিবর্তন মেনে নিতে পারলো না।এর মধ্যেই মেয়েটা খিলখিল করে হাসতে লাগলো। মেয়েটি কে দেখে শিশির দ্রুত মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরল। কপালে,গালে সব জায়গায় চুমু দিতে লাগল।
শিউলির মনে অজানা ভয় লাড়া দিয়ে উঠলো। শিশির কে ধাক্কা দিল। বলল – আপনার সাহস কি করে হয় আমার মেয়েকে ছোঁয়ার। ফুল (মেয়েটির নাম)যাও, গাড়িতে গিয়ে বসো আমি আর বাবাই আসছি।

মেয়েটি শিশির কে দেখে ভয় পাচ্ছে। হঠাৎ এরকম ব্যাবহার এ মেয়েটি ভিতু গলায় বলল – আ আচ্ছা মা ম্মাই।(দৌড়ে চলে গেল)

মেহেদী, শিউলি কে নিজের বুকে চেপে ধরল।বলল – কাম ডাউন বউ। হাইপার হইয়ো না, ওনাদের বেবি হয় না,তাই আবেগে আপ্লুত হয়ে….(শিউলি মেহেদীর বুক থেকে মাথা উঠিয়ে)

দিনা দ্রুত এগিয়ে এলো। শিউলির হাত চেপে ধরে বলল – এটা শিশিরের মেয়ে তাই না। খুব সুন্দর তো। তুমি প্রেগন্যান্ট। আবার ও মা হতে যাচ্ছ এই ডাক্তারের। তাহলে ঐ বাবু টা কে আমাদের দত্তক….

আর কিছু বলার আগেই দিনার গালে শিউলি ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল।বলল – দূরে থাক আমার মেয়ে থেকে। আমি আর নরম ,কোমল শিউলি নেই।যে সবকিছু ছেড়ে দিবে। আমি এখন মিসেস মেহেদী সো…

মেহেদী – শিউলি,(খুব করে মিলিয়ে নিল)থাম।
সিকিউরিটি,(সাথে সাথে দুজন গার্ড এলো) এদের বাহিরে নিয়ে যান, আমার কেবিনের থেকে।নার্স সেলিনা কে এই ফাইলটি দিয়েন।

ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও শিশির আর দিনা কে জোরপূর্বক ভাবে কেবিন থেকে বাহিরে নিয়ে গেল।

শিউলি কান্না করে দিল। মেহেদী কান্না মুছে দিয়ে বলল – এরা কি সেই!! শিশির আর দিনা?
শিউলি ইশারায় হা বোধক মাথা নাড়ল।

চলবে….

(/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here