________ #বউ_কিডন্যাপ ________
লেখক: ShoheL Rana
__________ #পর্বঃ০৬ ___________
আন্টি নিজেকে সামলিয়ে বললেন, ‘ওকে তুমি সাইজ সাইজ করতেছো কেন? ও কি খুব বেশি মোটা?’
আমি বললাম, ‘না আন্টি, মোটা কই? একদম পারফেক্ট সাইজ।’
আন্টি এবং মোটকু উঠে দাঁড়ালো। আমরা বাংলোর ভেতরে গেলাম। তখন বাহির থেকে এলো কামাল, সুজন, সাদ্দাম। তারা তিনজন কাশেমকে ধরে নিয়ে এসেছে। আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকাতেই, সুজন বললো, ‘এই বেটা পালিয়ে যাচ্ছিলো, ধরে নিয়ে আসলাম।’
আমি বললাম, ‘ছেড়ে দে ওকে। আমি কথা বলি ওর সাথে।’
ওরা কাশেমকে ছেড়ে দিলো, তারপর আমি কাশেমকে বললাম, ‘কিরে বেটা পালাচ্ছি কেন? তোকে তো পাঠায়ছিলাম খাবার নিয়ে আসতে। আর তুই খাবারের টাকা নিয়ে সটকে পড়তে চাইলি?’
কাশেম অবাক হয়ে বললো, ‘কে ভাই আপনি? আপনাকে তো আমি চিনিনা। এই প্রথম দেখলাম আপনাদের সবাইকে। আপনারা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছেন কেন আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।’
কাশেমের গালে একটা সজোরে চড় মেরে বললাম, ‘কিছুই বুঝতে পারছিস না তাইনা? টাকাগুলো দে।’
কাশেম আরো বেশি অবাক হয়ে বললো, ‘কিসের টাকা? আর আমাকে মারছেন কেন? দেখুন, আমার নাম হাশেম। আমি অনেকদিন পর দেশে এসেছি বিয়ে করার জন্য। আজ একটা পাত্রী দেখতে যাওয়ার কথা, আর আপনারা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছেন। আমার আর বিয়ে করা হবেনা।’ বলেই বোকার মতো কেঁদে দিলো কাশেম।
এতক্ষণেই আমার খেয়াল হলো কাশের গায়ের জামা আগেরটা নেই। এখন আরেকটা জামা তার গায়ে। আমি এবার তার গালে আরেকটা কষে চড় বসিয়ে বললাম, ‘নিজেকে কাশেম থেকে হাশেম বানানোর জন্য গায়ের জামা চেঞ্জ করে বিদেশি সাজিস?’
কাশেম কেঁদে দিয়ে বললো, ‘ভাই সত্যি বলছি আমি কাশেম না, আমি হাশেম।’
আমার পাশ থেকে বিজয় এবার কাশেমের অন্যগালে চড় বসালো। কাশেম বাচ্চার মতো কাঁদতে শুরু করলো। বিজয় বললো, ‘বাংলা সিনেমোর এক্টিং শুরু করেছিস? ডাবল এক্টিং?’
বেচারা কাশেম এত মার সহ্য করতে না পেরে বললো, ‘ভাই, আর মারবেননা প্লিজ, আমিই কাশেম।’
-তাহলে এতক্ষণ হাশেম হাশেম করলি কেন?’ বলেই আরেকটা চড় মারতে গেলাম কাশেমের গালে। সে পায়ে পড়ে মাফ চেয়ে বললো, ‘ভুল হয়ে গেছে ভাই, আর বলবোনা। আমি হাশেম না, কাশেম।’
-খাবারের টাকাগুলো কই?’ বলেই কাশেমের পকেটে হাত দিলাম। একটা ৫০০ টাকার নোট পেলাম। ওটা নিয়ে বললাম, ‘বাহ! চলবে এটাতে….. টাকা নিয়ে চলে যেতে চাইলি, তাই পুরোটা নিয়ে নিলাম।’
বেচারা কাশেম ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ টাকাটার দিকে। টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে নিতেই ওর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। তারদিক থেকে মুখ সরিয়ে সাদ্দামকে বললাম, ‘হ্যাঁ সাদ্দাম এবার বল, কী খবর আনলি?’
সাদ্দাম বললো, ‘কোনো খোঁজ পাইনি স্নেহার। রফিক সাহেব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে উনার স্ত্রী আর মেয়ে কিডন্যাপ এর ব্যাপারে, এই দেখ পত্রিকা।’
বিজয় একটা পত্রিকা খুলে দেখালো আমাকে। শিরোনামে লেখা আছে ‘একই রাতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও মেয়ে কিডন্যাপ’
বিস্তারিত পড়তে গিয়ে দেখলাম, রফিক সাহেব পুরস্কার ঘোষণা করেছে, যারা তার স্ত্রী আর মেয়েকে এনে দিতে পারবেন তাকে ৫ লক্ষ টাকা দেবেন।’
টাকার অঙ্কটা শুনে পাশ পেছন থেকে মোটকু বেটা বেহুশ হয়ে পড়ে গেলো। স্নেহার আম্মু তখন ব্যস্ত হয়ে পড়লো মোটকুকে নিয়ে। উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘সেলিম, আমার সেলিম, কী হলো তোমার? সেলিম উঠো, চোখ খুলো। সেলিম….সেলিম……’
আন্টির ডাকে কাজ হলোনা। মোটকুকে হুশে ফেরাতে অনেক্ষণ পানি ঢালতে হলো মাথায়। হুশে ফিরেই মোটকু বললো, ‘আমি এখন কোথায়?’
স্নেহার আম্মু বললো, ‘সেলিম তুমি আমার পাশে। ঠিক আছো তুমি?’
মোটকু বললো, ‘কে আপা তুমি?’
আন্টি বললো, ‘আমাকে চিনতে পারছোনা? আমি তোমার চড়ুই পাখি। তুমি আমাকে কতো মধুর করে চড়ুইপাখি বলে ডাকতে। দেখো আমাকে, আমার মুখে চেয়ে দেখো?’
মোটকু অনেক্ষণ আন্টির মুখের দিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো, যেন আন্টির চেহারা নিয়ে বিশেষ কোনো গবেষণা করছে সে। আন্টিও নিজের মুখটা মোটকুর আরো কাছে নিয়ে গেলো যাতে মোটকুর সুবিধা হয় দেখতে। অনেক্ষণ খুঁটিয়ে দেখার পর মোটকু আন্টিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘চড়ুই পাখি কী? ওটা দেখতে কেমন?’
আন্টি ভেবেছিলো মোটকু হয়তো উনাকে চিনতে পারবে। কিন্তু মোটকুর এমন প্রশ্ন শুনে আন্টি নিজে বেহুশ হয়ে গেলো এবার।
সবাই মিলে এবার আন্টির মাথায় পানি ঢেলে উনার হুশ ফেরালাম। কিন্তু হুশ ফিরে পেয়ে আন্টি কোনো পাগলামি করলেন না। আবারো চেষ্টা করতে লাগলেন মোটকুর স্মৃতি ফেরাতে।
.
.
এদিকে আমরা সবাই মোটকুকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, অন্যদিকে কাশেম চুপিচুপি আমার পকেটে হাত দিলো তার ৫০০ টাকাটা নেয়ার জন্য, কিন্তু আমি ঠের পেয়ে গেলাম। তার হাতটা ধরে ফেললাম, আর টাকাটা নিচে পড়ে গেলো তার হাত থেকে। টাকাটা দেখেই মোটকুর স্মৃতি ফিরে এলো। মোটকু ঝাপিয়ে পড়লো টাকাটার দিকে, কিন্তু নিতে পারলো না, আমি নিয়েই টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলাম, আর সজোরে আরেক দফা চড় চালালাম কাশেমের দুই গালে……
.
.
(চলবে…….)
.
.